পুনম মায়মুনী – সূচিপত্র [Bengali Article]
শ্রমিক দিবস – পুনম মায়মুনী [Shramik Divas 2023]
১৮৮৬ সালে পয়লা মে আমেরিকায় প্রথম পালিত হয়েছিল ‘শ্রমিক দিবস’। সেদিন আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকেরা জমায়েত হয়ে অতিরিক্ত শ্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে, তাঁদের অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য শুরু করে শ্রমিক আন্দোলন। শ্রমিকদের অধিকারের জন্য সংগঠিত এই আন্দোলনকে সম্মান জানাতে এবং সব শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর মে মাসের এক তারিখে পালিত হয়, ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’।
এই দিনে দেশের প্রতিটি বিভাগের শ্রমিকেরা সম্মানিত হয়, তাঁদের অবদান স্বীকার করা হয়। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাসে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিকদের কাছে এক গৌরবময় বা উজ্জ্বল দিন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের উদযাপন দিবস।
উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো । প্রতিদিন গড়ে প্রায় দশ থেকে বার ঘণ্টা আর সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতে হতো এক একজন শ্রমিককে। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁদের বেতন ছিল অতি নগণ্য যা তাঁদের জীবন ধারণের জন্যে ছিল খুবই কষ্টকর ফলে তাঁরা মানবেতর জীবনযাপনে কাটাতো, ক্ষেত্রবিশেষে তা ছিল দাসবৃত্তি পর্যায়ের। এ নিয়ে এক পর্যায়ে শ্রমিকদের মনে ধীরে ধীরে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। এই আন্দোলনই ছিল সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের পয়লা মে। কিন্তু কারখানার মালিকগণ এ দাবী মেনে নিতে চাইলো না। অতঃপর ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিকদের বিশাল জমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিল হয় । তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়টের রূপ নেয়। আন্দোলনরত শ্রমিকদের রুখতে পুলিশ সেখানে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন শ্রমিক এবং অনেকে আহত হয় এছাড়া অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়। পুলিশ হত্যা মামলায় শ্রমিক নেতা আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করে এবং অন্য একজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, “আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে”। ২৬শে জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্নর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা করেন এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে । আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় কখনোই প্রকাশ পায়নি। তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় সরকার। শ্রমিকদের এই বলিদান বিফলে যায়নি। এর তিন বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা দিনে আট ঘণ্টা করে দেওয়া হয় এবং পয়লা মে-কে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এই দিনে ছুটিও ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে আজও মে মাসের প্রথম দিনটিকে ‘শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়, একমাত্র এই সম্মেলনেই কার্ল মার্ক্স উপস্থিত ছিলেন। তবে শ্রমিকদের এই দাবি কিন্তু একদিনেই পূরণ হয়নি, আন্দোলন সফল হতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল এবং প্রতিবাদে প্রচুর রক্তক্ষয়ও হয়েছিল। এটি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, পাশাপাশি জার্মানি, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সেও ঘটেছিল ।
এরপর আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে চিন, রাশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে মে দিবসের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস” বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস”। সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হওয়ায় বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য। শ্রমিকদের বৈষম্য এখনও পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন। বাংলাদেশে মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনগুলো দিনটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ নানারকম কর্মসূচি পালন করে থাকে । প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে মে দিবস উদযাপন করা হয়। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় হল –
“শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি”।
এ কথা সত্যি মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নয়ন ঘটলেও আমাদের দেশের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনো শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কর্মঘণ্টা ও নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য আন্দোলন করতে হয়। সমকাজে নারী ও পুরুষের মজুরি-বৈষম্য এখনো বিরাজমান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র ছুটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না এবং যৌন হয়রানিসহ অনেক সমস্যা তাঁদের প্রতিনিয়ত ভোগ করতে হয়। তাই আমাদের করণীয়- সুখী,সুন্দর ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাইকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, তবেই “শ্রমিক আন্দোলন” সার্থক হবে। জয় হোক; সার্থক হোক মেহনতি মানুষের।
পুনম মায়মুনী | Punom Mymoni
Women’s role in Christian society | খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান
Tahiya lagi besha | তাহিয়া লাগি বেশ | অভিজিৎ পাল
Gaja-Uddharana besha | গজ-উদ্ধারণ বেশ | অভিজিৎ পাল
Padma besha | পদ্ম বেশ | অভিজিৎ পাল
বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shramik Divas 2023 | Article Shramik Divas 2023 | Bengali article – Shramik Divas 2023 | New article – Shramik Divas 2023 | Trending topic – Shramik Divas 2023 | Shramik Divas 2023 pdf | Shramik Divas 2023 India | Shramik Divas 2023 USA | Shramik Divas 2023 Bangladesh