Gaja-Uddharana besha | গজ-উদ্ধারণ বেশ | অভিজিৎ পাল

Sharing Is Caring:
Gaja-Uddharana Besha

গজ-উদ্ধারণ বেশ | Gaja-Uddharana besha

শ্রীপুরুষোত্তমধামের মহাবাহু জগন্নাথের পরিত্রাতা রূপটি সর্বজনবিদিত। যে ব্যক্তি জীবনের চরম অসময়ে মাত্র একবারও কায়মনোবাক্যে জগন্নাথের নামস্মরণ করেন, তাতেই তাঁর সংকটের কালো মেঘ কেটে যায়। জগন্নাথের সর্ব আর্তি হরণকারী রূপ তাঁর অনন্য গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারে ধরা পড়ে। ওড়িশায় জনে জনে বিশ্বাস রয়েছে, জগন্নাথ মহাপ্রভুর গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) দর্শন করলে ও গজেন্দ্র মোক্ষ লীলা শ্রবণ করলে ভক্তের ঐহিক ও পারৈহিক বিপদ সম্পূর্ণ কেটে যায়। জগন্নাথের গজ উদ্ধারণ বেশের (Gaja-Uddharana besha) সূচনার পিছনের কাহিনিটি শ্রীমদ্ভাগবতে রয়েছে। জগন্নাথের এই অনন্য বেশে জগন্নাথ শ্রীহরি নারায়ণ রূপে প্রকাশিত হন।

ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতির মৌখিক কথা ও কাহিনী অনুযায়ী গজেন্দ্র মোক্ষ কাহিনিতে রয়েছে, এক সময় অযুত যোজন সমান উচ্চতার ত্রিকূট পর্বত ও তার সন্নিহিত অঞ্চল অতিশয় মনোমুগ্ধকর স্থান। এই সুউচ্চ ত্রিকূট পর্বতের একটি গভীর অরণ্যে একদল বিশাল আকারের হাতি শান্তিতে বসবাস করত। ত্রিকূট পর্বতের বনে বনান্তরে খাদ্যের অভাব ছিল না। বনের হিংস্র পশুর সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক অনেক কম। ত্রিকূট পর্বতের অরণ্যে বসবাসকারী হাতি বা গজের দলের দলপতি বা রাজা ছিল গজেন্দ্র। তাকে তার বিশাল হস্তিবাহিনীর প্রত্যেকেই প্রধান হাতির সম্মান দিত। সেই হাতিই ক্রমে হয়ে উঠেছিল সমগ্র গজসমাজের গজের রাজা। এই গজেন্দ্র ছিল পূর্বজন্মের অভিশপ্ত। মুনির অভিশাপে গজেন্দ্র পূর্বজন্মের সমস্ত স্মৃতি ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু পূর্বজন্মের রাজাসম সংস্কার ও ভগবানের প্রতি ভক্তি তার এই গজজন্মেও বর্তমান ছিল। পূর্বজন্মের ভালো ও মন্দ উভয় প্রকারের সংস্কারই ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া বিনা তপস্যায় সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয় না।

গজদলপতি গজেন্দ্র পূর্বজন্মে ছিল দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় অঞ্চলের একজন উচ্চ বংশীয় প্রজাপালক মহারাজা। পূর্বজন্মে গজেন্দ্রর নাম ছিল ইন্দ্রদ্যুম্ন। একবার দ্রাবিড়ের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন নিজের মাতৃভূমি তথা রাজ্য ত্যাগ করে এসে কিছুকালের জন্য মলয় পর্বতে বাস করছিলেন। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান শ্রীমৎ নারায়ণের উত্তম ভক্ত ও মর্তলোকে তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাসক। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিত্তে যশস্বী পুরুষ ছিলেন। তিনি পার্থিব, অপার্থিব অতুল ঐশ্বর্য ও সম্পদের অধিকারী হয়েও তাঁর আরাধ্য দেবতার প্রতিদিন স্মরণ, মনন, পূজা, যজ্ঞ, জপ, ধ্যান করতেন।

রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন দ্রাবিড় দেশ থেকে মলয় পর্বতে এসে বসবাসকালে তিনি বনবাসী তপস্বীগণের মতোই কষায় রঙের বসন ও শিরে জটা ধারণ করেছিলেন। এই সময়ে তাঁকে ঠিক বনচারী সাধু-ব্রহ্মচারী তপস্বীর মতোই দেখতে লাগত। তাঁর বনবাসী জীবন শান্তিতে ঈশ্বরের নিরন্তর চিন্তায় অতিবাহিত হচ্ছিল। এমনই একদিন যখন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রভাতী স্নান করে সেদিনের মতো নিশ্ছিদ্র মৌনব্রত ধারণ করে গভীর তপস্যার সংকল্প নিয়ে একাগ্রচিত্তে শ্রীবিষ্ণু ভগবানের নিত্যপূজা করতে বসেছিলেন ঠিক তখনই সেখানে দৈবের দোষে ভারতের মধ্যভাগে বিরাজমান মহাযশস্বী তপস্বীসম্রাট অগস্ত্য মহামুনির তাঁর শিষ্যপরিকর সমেত আগমন করেছিলেন। তিনি ছিলেন মধ্যভারতের সবচেয়ে প্রতাপশালী মুনি। মহামুনি অগস্ত্য রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর সামনে এসে তাঁকে সম্ভাষণ করলেও মৌনব্রতে ব্রতী রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সম্পূর্ণ চুপ করে রইলেন।
মৌনতা অবলম্বন করে বিরাজমান রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের এই ধরনের আচরণ মহামুনি অগস্ত্যকে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর প্রতি ক্রোধান্বিত করে তুলতে থাকল। মহামুনি অগস্ত্য মলয় পর্বতে সশিষ্য এসেছিলেন। শিষ্যদের সামনে তাঁর এই নিরুত্তর অনাদর তিনি মেনে নিতে পারলেন না। মহামুনি অগস্ত্যর ক্রোধ রিপু চরমে উঠতে থাকায় তিনি রাজার সামনে থেকে গমনকালে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন অভিশাপ দিলেন। মহামুনি রাজাকে অভিশাপ দিলেন, সামাজিক রীতিনীতির, শিষ্টাচার ও যথার্থ সুশিক্ষার অভাবে অহংকারী রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ক্ষত্রিয় বর্ণের রাজা হিসেবে মুনিঋষিগণের প্রতি নিজের কর্তব্য ভুলে গিয়ে অজস্র তপস্বীগণের সামনে তপস্বী ব্রাহ্মণ অগ্যস্তকে অপমান করেছে। রাজার এই আচরণ তাঁর মূর্খ হস্তীসম জড়বুদ্ধির পরিচয় বহন করে। তাই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন মনুষ্য জীবন ত্যাগ করে সেই ঘোর অন্ধকারময় হস্তীযোনিতেই গমন করুক ও আগামী জীবন হস্তির জীবন কাটাক। বিনা অপরাধে দ্রাবিড়ের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের অভিশপ্ত হস্তীজন্ম প্রাপ্ত হয়েছিল কিন্তু আগের মনুষ্যজন্মে শ্রীবিষ্ণু ভগবানের নিত্যদিন পূজা-যজ্ঞ-আরাধনার প্রভাবে অভিশপ্ত জড়বুদ্ধিমান গজজীবনেও রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর চিন্তা চেতনায় শ্রীবিষ্ণু ভগবানের পূজার্চনার পূর্বের শুভস্মৃতি অক্ষয় হয়ে বজায় ছিল।

ত্রিকূট পর্বতে বসন্ত সমাপ্ত হয়ে গ্রীষ্ম এলো। পর্বতের অরণ্যে বসবাসকারী হস্তিরাও রোদের প্রচণ্ড তাপে বিহ্বল হয়ে উঠতে থাকলো। অরণ্যে বসবাসকালে একদিন গজেন্দ্র তাঁর অনুগামী হস্তীবাহিনী নিয়ে অরণ্যের সর্ববৃহৎ সরোবরে যাচ্ছিল সুস্বাদু জল পান ও ঠাণ্ডা জলে স্নানের আকাঙ্ক্ষায়। গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণার্ত হস্তীবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গজেন্দ্র যখন বনপথে চলেছিল তখন শেষ বসন্তের ও গ্রীষ্মের প্রারম্ভের ফুলগুলি সুগন্ধি বাতাসে বনের পথ ভরিয়ে তুলেছিল। প্রকৃতির সুরভিত বাতাসে প্রায় মদবিহ্বল নয়নে হস্তিবাহিনীর দলপতি গজেন্দ্র অনেক দূর থেকে পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্মরেণুর সুগন্ধবাহী বাতাসের আঘ্রাণ লাভ করে সেই বিরাট সরোবরের তীরে দ্রুতগতিতে সদলবলে উপস্থিত হলো।

স্বর্ণকমল, শ্বেতকমল, পীতকমল, নীলকমল ও রক্তকমলের সুবাসে সুরভিত মধুর নির্মল জলের বিরাট সরোবরে গজেন্দ্র প্রথমে অবতরণ করল আর নিজের শুড় দিয়ে সেই সরোবরের সুস্বাদু মিষ্টি জল পান করতে লাগল। অবশেষে গজেন্দ্র সরোবরের জলে নেমে স্নানও করল। এতে গজেন্দ্র খুবই আমোদ পেল। এই জলবিহার বিনোদনে গজেন্দ্র তার অন্য হস্তীবাহিনী সদস্যদেরও সরোবরের ঠাণ্ডা জলে স্নান করিয়ে দিল ও ঠাণ্ডা মিষ্টি জল পান করিয়ে তৃপ্ত করতে সক্ষম হলো। এই বৃহৎ সরোবরটি ছিল দিকপাল বরুণদেবের। সুরভিত বাতাস ও গ্রীষ্মের দিনে এমন ঠাণ্ডা জলে সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রইল গজেন্দ্র। ক্রমে এতে মোহিত হয়ে গজেন্দ্র সরোবরের মাঝেই উন্মত্তের মতো আচার আচরণ করতে শুরু করল। যেখানে জীব প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে বিলাসে ডুবে যায়, সেখানেই বিপদ তাকে আক্রমণ করে। গজেন্দ্রও আমোদে বুঁদ হয়ে ভুলেই গিয়েছিল যে তারা সকলে তৃষ্ণনিবারণের জন্য সরোবরে এসেছে, জলবিলাসের জন্য নয়। কিন্তু ভোগের ভ্রমে অন্ধ হয়ে থাকা গজেন্দ্র বুঝতেও পারছিল না এক বড় বিপদ তার এত সন্নিকটে আসছে। ফলে আসন্ন বিপদের বিষয়ে গজেন্দ্র প্রস্তুতও ছিল না।

গজেন্দ্র যখন অরণ্যের সরোবরে উন্মত্তের মতো আচরণ করছিল তখন দৈবপ্রেরিত হয়ে এক বলবান কুমীর নিজের করার দাঁতে দৃঢ়ভাবে গজেন্দ্রর একটি পা কামড়ে ধরল। এই কুমীর পূর্বজন্মে ‘হূহূ’ নামে এক শ্রেষ্ঠ গর্ন্ধব ছিল। মহান ঋষি দেবলের অভিশাপে সেই গন্ধর্বরাজ কুমীরের দেহ ধারণ করে এই সরোবরেই বহুদিন ধরে বসবাস করছিল। গজেন্দ্রর প্রমত্তের মতো আচার আচরণে তার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছিল। তাই কুমীররূপী যক্ষ গজেন্দ্রর পায়ে ভীষণ আঘাত করে। কুমীর করার দাঁতে গজেন্দ্রর পায়ে কামড় বসানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গজেন্দ্র সচেতন হয়ে ওঠে। অতি বলবান গজেন্দ্র নিজের সমস্ত দৈহিক শক্তি একত্রিত করে নিজেকে কুমীরের ভীষণ কামড় থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করতে শুরু করল। কিন্তু কুমীরের দাঁতের ভীষণ আঘাত থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারল না। বরং সে যত ছটফট করতে লাগল ততই কুমীরের দাঁতারও দৃঢ় হয়ে তার পায়ে বসে যেতে লাগল। গজেন্দ্র এই অবস্থার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিল না। ফলে গজেন্দ্র সরোবরে দিশেহারা হয়ে পড়ল। জলে কুমীর বলবান, স্থলে গজের দল। গজেন্দ্র অনায়াসে বুঝতে পারল জলে কুমীরের সঙ্গে লড়াই করা যথেষ্ট কঠিন। অথচ কুমীরও এত শক্তিশালী যে গজেন্দ্র তাকে স্থলে টেনে তুলতে অক্ষম। গজেন্দ্র ও কুমীরের মধ্যে ভীষণ জীবন-মরণ যুদ্ধ শুরু হলো। গজেন্দ্রর সঙ্গে আসা তার বিরাট হস্তীবাহিনীও নিজেদের সমস্ত বল প্রয়োগ করেও নিজেদের প্রিয় দলপতি গজেন্দ্রকে কুমীরের ভীষণ কামড় থেকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হল না। এই ভীষণ যুদ্ধে গজেন্দ্র ও কুমীর উভয়েই নিজ নিজ পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রয়োগ করেছিল। তাছাড়া গজেন্দ্র ও কুমীর উভয় পক্ষই সমান শক্তিশালী হওয়ায় সরোবরের জলে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন টানাটানি চলতেই থাকল। গজেন্দ্রর নিজের বাহুবলের ওপর গর্বও ছিল।

এভাবে অনেক দিন, অনেক মাস, অনেক বছর অতিক্রান্ত যেতে থাকল। এই যুদ্ধ দেবতাদেরও আশ্চর্য করল । অবশেষে দেখা গেল যে প্রবল পরাক্রমশালী গজেন্দ্র শারীরিক ও মানসিক শক্তি হারিয়ে অবসন্ন হয়ে পড়তে শুরু করল। গজেন্দ্র যতই অবসন্ন হয়ে পড়তে লাগল ততই বলবান হয়ে ওঠতে লাগল কুমীর। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসা গজেন্দ্রকে দেখে তার সঙ্গীসাথীরা তাকে ফেলে রেখে স্বস্থানে গমনে উদ্যত হলো। গজেন্দ্র দেখল এই বিপদের সময়ে একমাত্র সে-ই কুমীরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত, তার সঙ্গীগণ যাদের সে এতদিন আপন ভাবত তারা কেউই তার পাশে নেই। তাকে মরণাপন্ন দেখে একে একে সবাই তাকে ত্যাগ করে চলেছে। এমনকি তার সঙ্গে প্রণয়বদ্ধ তার প্রধান স্ত্রী হস্তিনীও তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে গজেন্দ্র সম্পূর্ণ একা লড়াই করে চলেছে। গজেন্দ্রর মনে বৈরাগ্য এলো। গজেন্দ্র বুঝতে পারল জগতে কেউ কারও নয়। সংসার অসার। ঈশ্বরের প্রতি প্রেমই একমাত্র নিঃস্বার্থ। আর সমস্ত সম্পর্কে স্বার্থ রয়েছে। এখন গজেন্দ্রর সঙ্গে সবার সব স্বার্থ ফুরিয়েছে। এখন গজেন্দ্রকে ত্যাগ করতেও এরা পিছুটান অনুভব করেনি। অথচ গজেন্দ্র এই পরিস্থিতিতে পড়ার আগে এদের নিয়েই মত্ত হয়ে ছিল। গজেন্দ্রর নিজের ওপর ধিক্কার এলো। এই কঠিন পরিস্থিতিতে গজেন্দ্র ক্রমে বুঝতে পারল সরোবরে কুমীররূপে স্বয়ং কালই তাকে গ্রাস করতে বসেছে। আর এই পরিস্থিতিতে তাকে মহাকালের হৃদয়নাথ শ্রীবিষ্ণু নারায়ণই তাকে রক্ষা করতে পারেন। ঈশ্বর ভিন্ন জীবের আপনজন আর কে আছে। যতক্ষণ আনন্দ আছে ততক্ষণ সবাই আছে। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তখন যার যার তার তার।
গজেন্দ্রর অন্তরে আত্মজ্ঞান জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজ বুদ্ধিতেই নিজের মনকে জাগতিক চিত্তভূমিতে সম্পূর্ণ স্থির ও শান্ত করে ঈশ্বরের ধ্যানে ডুবে গেলেন। এদিকে সরোবরের জলে কুমীর হয়ে উঠলো আরও হিংস্র। গজেন্দ্রর বাঁচার প্রচেষ্টা বন্ধ হয়েছে দেখে সেও প্রবল প্রতাপে গজেন্দ্রকে জলের মধ্যে টানার চেষ্টা করতে লাগল। গজেন্দ্র পূর্ব জন্মের সংস্কার তার মনের মধ্যে থেকে উত্থিত করতে লাগল একের পর এক বিষ্ণুস্তুতি। গজেন্দ্র বাঁচার ইচ্ছা ত্যাগ করেছে বুঝতে পেরে এবার কুমীরও খানিক আশ্চর্য হলো। কিন্তু গজেন্দ্রকে তখনও কুমীর জলে টানাটানি থেকে বিরত রইল না।

এদিকে বৈকুণ্ঠে বসে সশক্তিক শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ তাঁর ভক্ত গজেন্দ্রর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তখন ভক্তপ্রবর গজেন্দ্রকে এই ভীষণ যুদ্ধকালীন বিপদ থেকে রক্ষার জন্য বিষ্ণু প্রস্তুত হলেন। বৈকুণ্ঠে নারায়ণের সঙ্গে অবসর যাপনের লীলাখেলায় মেতে ছিলেন লক্ষ্মী দেবী। গজেন্দ্রর অন্তর থেকে উচ্চারিত প্রতিটি ধ্বনি বৈকুণ্ঠে দশগুণ হয়ে পৌঁছাতে লাগল।ভক্ত একভাগ ঈশ্বরভজনা করলে ভগবান নিজের গুণে ভক্তের সেই ভজনাকে দশগুণ বৃদ্ধি করে আহ্লাদন করেন। ভক্তবিলাসী ভগবান ভক্তকে নিজের আপনজন ভাবেন। গজেন্দ্রর স্তুতি বৈকুণ্ঠে পৌঁছালে ভগবতী লক্ষ্মী দেবী খেলা ছেড়ে গজেন্দ্রকে রক্ষার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ গরুড়কে বাহন করে ও ভগবতী লক্ষ্মী দেবীকে নিজের বামভাগে বসিয়ে সেই সরোবরের স্থানে উপস্থিত হলেন। স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ ভগবতী লক্ষ্মী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে গজেন্দ্রর সামনে স্বয়ং আবির্ভূত হয়েছেন দেখেই গজেন্দ্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল। জগদীশ্বর জগন্নাথ শ্রীহরি বিষ্ণু তাঁর ভক্ত গজেন্দ্রকে অতি কাতর অবস্থায় সরোবরে জীবনসংগ্রামের লিপ্ত দেখে এবং এই কঠোর পরিস্থিতিতও গজেন্দ্রর উচ্চারিত প্রতিটি স্তুব-স্তোত্র-স্তুতি শ্রবণ করে কষ্ট অনুভব করতে লাগলেন। এদিকে গজেন্দ্র নিজের জীবনসংশয়ের কথা ভুলে গেলেন গরুড়ে আরোহণ করে আসা তাঁর প্রভু চক্রপাণি শ্রীবিষ্ণুকে সশক্তিক আসতে দেখে গজেন্দ্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। আজ তার বহুজন্মের তপস্যা সার্থক হয়েছে। আজ সে নিজের আরাধ্য ঈশ্বরের সশক্তিক দর্শন পেয়েছে। অথচ নিজের আরাধ্যকে দেওয়ার মতো তার কাছে কিছুই নেই। গজেন্দ্র দুঃখে কাঁদতে লাগলো। তার আরাধ্য দেবতা তার কল্যাণে তার সামনে এসেছেন অথচ পূজা-সেবা-আরতির সুযোগ পর্যন্ত নেই। হয়তো আয়ুও ফুরিয়ে এসেছে তার।
গজেন্দ্র চারিদিকে চেয়ে দেখলেন সরোবরে অজস্র স্বর্ণকমল, শ্বেতকমল, পীতকমল, নীলকমল ও রক্তকমলের ফুটে রয়েছে। গজেন্দ্র চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের ধ্যান করে নিজের শুঁড় দিয়ে সরোবর থেকে একটি পদ্মফুলে তুলে সকাতর স্বরে নারায়ণের উদ্দেশ্যে বলল , “হে ভগবান বিষ্ণু, হে জগতের নাথ জগন্নাথ, হে ভাবগ্রাহী নারায়ণ, প্রভু আমার, প্রাণ আমার, আজ এতকাল পরে আমি আপনার দর্শন পেয়েছি। আপনি আমার আভূমি প্রণাম গ্রহণ করুন। আমি আপনার দর্শন পেয়েই ধন্য হয়ে গেছি। আমি এখন মরি বা বাঁচি কোনোকিছুতেই আমার আপত্তি নেই। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য আজ আপনার দর্শন মাত্রেই আমার পূরিত হয়েছে। ঈশ্বরলাভের পর আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই। আমি আপনার দর্শন পেয়েই পূর্ণ হয়ে গেছি। প্রভু, আমাকে গ্রহণ করুন।”

গজেন্দ্রর এমন আর্তি ভরা কথা শুনে শ্রীপতি নারায়ণ আর স্থির থাকতে পারলেন না। ভগবতী লক্ষ্মী দেবীর চোখেও জল দেখা দিল। নারায়ণ তাঁর বাহন গরুড়রাজ থেকে অতি দ্রুত নেমে এসে পরম করুণায় স্বয়ং সেই সরোবরের জলে নেমে গজরাজ গজেন্দ্রর সঙ্গে কুমীরকেও অনায়াসে টানতে টানতে সেই সরোবরের তীরে নিয়ে এসে তুললেন। নারায়ণকে সশক্তিক পৃথিবীতে অবতীর্ণ হতে দেখে ইতোমধ্যেই সেই সরোবরেই তীরে স্বর্গলোকের দেবতাগণও এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের সকলের সম্মুখেই ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর চক্রকে আজ্ঞা দিলেন, “হে চক্ররাজ সুদর্শন, যাও আমার ভক্ত গজেন্দ্রকে মুক্ত করো।” জগতের নাথের আজ্ঞা পাওয়া মাত্র সুদর্শন চক্র কুমীরের মুখ টুকরো টুকরো করে গজেন্দ্রকে মুক্ত করলেন। ভগবতী লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় গজেন্দ্রর পায়ের ক্ষত নিমেষে নিরাময় হয়ে গেল। শ্রীবিষ্ণু ও লক্ষ্মী দেবীর পরিত্রাতা রূপ দেখে আকাশ মার্গে দেবতাগণ অপূর্ব পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন। সকলে সমস্বরে গজেন্দ্রমোক্ষ স্তোত্র পাঠ করতে লাগলেন। জগতের নাথের চক্রের আঘাত লাভ করে অভিশপ্ত কুমীর জীবন সমাপ্ত করে যক্ষের দিব্য দেহ ধারণ করল। নারায়ণে কৃপায় গজেন্দ্রও তার অভিশপ্ত হস্তীজন্ম শেষ করে দিব্যদেহ ধারণ করল।

জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারে শোলা ও কাঠের নিপুণ কাজে জগন্নাথাদি ত্রিবিগ্রহ সাজানো হয়। এই অপূর্ব বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্র উভয়েই চতুর্ভুজ ধারণ করেন। এই শৃঙ্গারে জগন্নাথ কাঠের তৈরি পক্ষীরাজ গরুড় মহারাজের ওপরে বসেন। গরুড়ের কাঁধের দুই পাশে জগন্নাথের দুই পা ঝুলে থাকে। জগন্নাথের চার বাহুর ওপরের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে সুদর্শন চক্র ও শঙ্খ থাকে এবং তাঁর নিচের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে গদা ও পদ্মফুল শোভিত হয়। জগন্নাথের বাম কোলে বসেন সোনার শ্রীদেবী (লক্ষ্মী দেবী)। গরুড় মহারাজের ডানা দুটি দু’পাশে প্রসারিত অবস্থায় থাকে। গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারে বলভদ্রদেবও চতুর্বাহু ধারণ করে চারটি অস্ত্র ধারণ করেন। বলরামের চার বাহুর ওপরের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে সুদর্শন চক্র ও শঙ্খ থাকে এবং তাঁর নিচের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে মুষল ও হল (লাঙ্গল) শোভিত হয়। এই বেশে বলভদ্রদেবের দুই পদ দেখা যায়। গজ-উদ্ধারণ বেশের (Gaja-Uddharana besha) সময় বলভদ্রদেবের বামভাগে পূর্ণ মূর্তিতে থাকেন মহামতি সুভদ্রা দেবী। এই বেশ শৃঙ্গারে সুভদ্রা দেবীকে ত্রিভঙ্গ ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সুভদ্রা দেবীর দুই হাতে দেখা যায় পদ্মফুল। সন্ধ্যাকালে জগন্নাথের রত্নবেদীর নিচে একটি হাতি ও একটি কুমীরের মূর্তি রাখা হয়। এই দুটি মূর্তি পৌরাণিক কাহিনীর গজেন্দ্র ও কুমীরের ভাব বহন করে। আরেকটি হাতি দেখা যায় বলভদ্রদেবের দক্ষিণভাগে। এই হাতির শুঁড়ে একটি ফোটা পদ্মফুল থাকে। এই হাতিটি গজেন্দ্রর জগন্নাথের প্রতি শরণাগতির দ্যোতক। শ্রীমন্দিরে জগন্নাথের সেবায় নিয়োজিত নির্দিষ্ট সেবকগণই জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারের এই উপকরণগুলি তৈরি করেন। জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) তাঁর নারায়ণ রূপের ভাব বহন করে।

প্রতি বছর পবিত্র মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথ শ্রীক্ষেত্রে এই পৌরাণিক গজ উদ্ধারণ বেশে সজ্জিত হন। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের অষ্টম স্কন্দের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত গজরাজের আখ্যানের সঙ্গে শ্রীমৎ জগন্নাথ মহাপ্রভুর গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারের মিল পাওয়া যায়। রাজ্ঞী বকুল মহাদেবী জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশের (Gaja-Uddharana besha) পোশাকাদি প্রথম তৈরি করিয়েছিলেন। এরপর মাঝের কিছু বছর জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গার হয়নি। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে গজপতি রামচন্দ্র দেব পুনরায় জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশের (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারের বিধিব্যবস্থা করিয়েছিলেন। পরে এই বেশের ব্যয়ভার বহন করতে থাকে বাসুদেব মঠের অধ্যক্ষ বা মহন্ত মহারাজ। এখন জগন্নাথের এই বেশ শৃঙ্গারের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ পায় তাঁর ইচ্ছায় তাঁর ভক্তরা। ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথকে গজ-উদ্ধারণ বেশ (Gaja-Uddharana besha) শৃঙ্গারে দেখলে ও তাঁকে স্মরণ করে শুকদেব কথিত গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্র পাঠ করলে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সমস্ত সংকট জগন্নাথ নিজে এসে মোচন করে দিয়ে যান। ওড়িশার সাধারণ জনগণ যদি মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে এসে জগন্নাথদর্শনে সমর্থ না হন তবে তিনি যেখানে রয়েছেন সেখানেই জগন্নাথের নাম স্মরণ করে গজ-উদ্ধারণ বেশের (Gaja-Uddharana besha) ধ্যানে তৃপ্ত হন। ক্ষণমাহাত্ম্য অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে সূর্যাস্তের পর গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্র পাঠ করার প্রশস্ত কাল। এই পবিত্র তিথিতে ওড়িশার জনতার কেউ যদি গজেন্দ্রমোক্ষঃ পাঠের সুযোগ না পান, তবে শুধুমাত্র জগন্নাথের মহানাম স্মরণ করেই জগন্নাথের কৃপার সমান ভাগীদার হয়ে ওঠেন। শ্রীমদ্ভাবত পুরাণের অষ্টম স্কন্দের তৃতীয় অধ্যায় অনুযায়ী গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্রটি নিম্নরূপ :

শ্রীশুক উবাচ

এবং ব্যবসিতো বুদ্ধ্যা সমাধায় মনো হৃদি ।
জজাপ পরমং জাপ্যং প্রাগ্‌জন্মন্যনুশিক্ষিতম্ ॥ ১॥

গজেন্দ্র উবাচ

নমো ভগবতে তস্মৈ যত এতচ্চিদাত্মকম্।
পুরুষায়াদিবীজায় পরেশায়াভিধীমহি ॥ ২॥

যস্মিন্নিদং যতশ্চেদং যেনেদং য ইদং স্বয়ম্ ।
যোঽস্মাৎপরস্মাচ্চ পরস্তং প্রপদ্যে স্বয়ম্ভুবম্ ॥ ৩॥

যঃ স্বাত্মনীদং নিজমায়য়ার্পিতং
ক্বচিদ্বিভাতং ক্ব চ তত্তিরোহিতম্ ।
অবিদ্ধদৃক্ সাক্ষ্যুভয়ং তদীক্ষতে
স আত্মমূলোঽবতু মাং পরাৎপরঃ ॥ ৪॥

কালেন পঞ্চৎবমিতেষু কৃৎস্নশো
লোকেষু পালেষু চ সর্বহেতুষু ।
তমস্তদাঽঽসীদ্গহনং গভীরং
যস্তস্য পারেঽভিবিরাজতে বিভুঃ ॥ ৫॥

ন যস্যদেবা ঋষয়ঃপদং বিদু-
র্জন্তুঃ পুনঃ কোঽর্হতি গন্তুমীরিতুম্ ।
যথা নটস্যাকৃতিভির্বিচেষ্টতো
দুরত্যযানুক্রমণঃ স মাবতু ॥ ৬॥

দিদৃক্ষবো যস্য পদং সুমঙ্গলং
বিমুক্ত সঙ্গা মুনয়ঃ সুসাধবঃ ।
চরন্ত্যলোকব্রতমব্রণং বনে
ভূতাত্মভূতাঃ সুহৃদঃ স মে গতিঃ ॥ ৭॥

ন বিদ্যতে যস্য চ জন্ম কর্ম বা
ন নামরূপে গুণদোষ এব বা ।
তথাপি লোকাপ্যযসম্ভবায় যঃ
স্বমায়যা তান্যনুকালমৃচ্ছতি ॥ ৮॥

তস্মৈ নমঃ পরেশায় ব্রহ্মণেঽনন্তশক্তয়ে ।
অরূপায়োরুরূপায় নম আশ্চর্যকর্মণে ॥ ৯॥

নম আত্মপ্রদীপায় সাক্ষিণে পরমাত্মনে ।
নমো গিরাং বিদূরায় মনসশ্চেতসামপি ॥ ১০॥

সত্ত্বেন প্রতিলভ্যায় নৈষ্কর্ম্যেণ বিপশ্চিতা ।
নমঃ কৈবল্যনাথায় নির্বাণসুখসংবিদে ॥ ১১॥

নমঃ শান্তায় ঘোরায় মূঢায় গুণধর্মিণে ।
নির্বিশেষায় সাম্যায় নমো জ্ঞানঘনায় চ ॥ ১২॥

ক্ষেত্রজ্ঞায় নমস্তুভ্যং সর্বাধ্যক্ষায় সাক্ষিণে ।
পুরুষায়াত্মমূলায় মূলপ্রকৃতয়ে নমঃ ॥ ১৩॥

সর্বেন্দ্রিয়গুণদৃষ্টে সর্ব প্রত্যয হেতবে ।
অসতাচ্ছায়যোক্তায় সদাভাসায় তে নমঃ ॥ ১৪॥

নমো নমস্তেঽখিলকারণায়
নিষ্কারণায়াদ্ভুতকারণায় ।
সর্বাগমাম্নায়মহার্ণবায়
নমোঽপবর্গায় পরায়ণায় ॥ ১৫॥

গুণারণিচ্ছন্নচিদূষ্মপায়
তৎক্ষোভবিস্ফূর্জিতমানসায় ।
নৈষ্কর্ম্যভাবেন বিবর্জিতাগম-
স্বয়ংপ্রকাশায় নমস্করোমি ॥ ১৬॥

মাদৃক্প্রপন্নপশুপাশবিমোক্ষণায়
মুক্তায় ভূরিকরুণায় নমোঽলয়ায় ॥
স্বাংশেন সর্বতনুভৃন্মনসি প্রতীত-
প্রত্যগ্দৃশে ভগবতে বৃহতে নমস্তে ॥ ১৭॥

আত্মাঽঽত্মজাপ্তগৃহবিত্তজনেষু সক্তৈ-
র্দুষ্প্রাপণায় গুণসঙ্গবিবর্জিতায় ।
মুক্তাত্মভিঃ স্বহৃদয়ে পরিভাবিতায়
জ্ঞানাত্মনে ভগবতে নম ঈশ্বরায় ॥ ১৮॥

যং ধর্মকামার্থবিমুক্তিকামা
ভজন্ত ইষ্টাং গতিমাপ্নুবন্তি ।
কিং ৎবাশিষো রাত্যপি দেহমব্যযং
করোতু মেঽদভ্রদয়ো বিমোক্ষণম্ ॥ ১৯॥

একান্তিনো যস্য ন কঞ্চনার্থং
বাঞ্ছন্তি যে বৈ ভগবৎপ্রপন্নাঃ ।
অত্যদ্ভুতং তচ্চরিতং সুমঙ্গলং
গায়ন্ত আনন্দসমুদ্রমগ্নাঃ ॥ ২০॥

তমক্ষরম্ব্রহ্ম পরং পরেশ-
মব্যক্তমাধ্যাত্মিকয়োগগম্যম্ ।
অতীন্দ্রিয়ং সূক্ষ্মমিবাতিদূর-
মনন্তমাদ্যং পরিপূর্ণমীডে ॥ ২১॥

যস্য ব্রহ্মাদয়ো দেবা বেদা লোকাশ্চরাচরাঃ ।
নামরূপবিভেদেন ফল্গ্ব্যা চ কলয়া কৃতাঃ ॥ ২২॥

যথার্চিষোঽগ্নেঃ সবিতুর্গভস্তয়ো
নির্যান্তি সংয়ান্ত্যসকৃৎস্বরোচিষঃ ।
তথা যতোঽয়ং গুণসম্প্রবাহো
বুদ্ধির্মনঃ খানি শরীরসর্গাঃ ॥ ২৩॥

স বৈ ন দেবাসুরমর্ত্যতির্যঙ্
ন স্ত্রী ন ষণ্ডো ন পুমান্ন জন্তুঃ ।
নায়ং গুণঃ কর্ম ন সন্ন চাসন্
নিষেধশেষো জয়তাদশেষঃ ॥ ২৪॥

জিজীবিষে নাহমিহামুয়া কি-
মন্তর্বহিশ্চাবৃতয়েভয়োন্যা ।
ইচ্ছামি কালেন ন যস্য বিপ্লব-
স্তস্যাত্মলোকাবরণস্য মোক্ষম্ ॥ ২৫॥

সোঽহং বিশ্বসৃজং বিশ্বমবিশ্বং বিশ্ববেদসম্ ।
বিশ্বাত্মানমজং ব্রহ্ম প্রণতোঽস্মি পরং পদম্ ॥ ২৬॥

যোগরন্ধিতকর্মাণো হৃদি যোগবিভাবিতে ।
যোগিনো যং প্রপশ্যন্তি যোগেশং তং নতোঽস্ম্যহম্ ॥ ২৭॥

নমো নমস্তুভ্যমসহ্য বেগ-
শক্তিত্রয়ায়াখিলধীগুণায় ।
প্রপন্নপালায় দুরন্তশক্তয়ে
কদিন্দ্রিয়াণামনবাপ্যবর্ত্মনে ॥ ২৮॥

নায়ং বেদ স্বমাত্মানং যচ্ছক্ত্যাহন্ধিয়া হতম্ ।
তং দুরত্যযমাহাত্ম্যং ভগবন্তমিতোঽস্ম্যহম্ ॥ ২৯॥

অভিজিৎ পাল | Avijit Pal

New Bengali Story 2023 | তুতানের পৃথিবী | গল্পগুচ্ছ

Bengali Book | Bengali Book Fair | বাঙ্গালির বই ও বইমেলা

Bengali Story 2023 | ভবতোষ মাস্টার | গল্পগুচ্ছ ২০২৩

Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী

Gaja-Uddharana besha | Gaja-Uddharana besha article | Gaja-Uddharana besha trending video | Gaja-Uddharana besha article in pdf | Gaja-Uddharana besha – new article | read article – Gaja-Uddharana besha | top article – Gaja-Uddharana besha | download article – Gaja-Uddharana besha | Gaja-Uddharana besha article download | Gaja-Uddharana besha pdf journal | Gaja-Uddharana besha article trend | popular pdf – Gaja-Uddharana besha | pdf download – Gaja-Uddharana besha | viral trailer – Legend of Jagannath | video clip – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath video clip | new clip – Legend of Jagannath | top clip – Legend of Jagannath | best clip – Legend of Jagannath | short video – Legend of Jagannath | full video – Legend of Jagannath | news – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath web story | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine

Leave a Comment