Women’s role in Christian society | খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান

Sharing Is Caring:
Women's role in Christian society

খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান – জয়ন্ত কুমার সরকার [Women’s role in Christian society]

বাইবেলে যীশুর জন্মের কোন তারিখ লেখা নেই। অথচ ইতিহাস বলছে ২৫শে ডিসেম্বর বেথেলহেম নগরের এক গোশালায় কুমারী মা মেরির কোলে জন্ম নিয়েছিলেন মানব ত্রাতা ‍যীশু। মানুষের মনে ভালবাসা সৌভ্রাতৃত্ব, ঈশ্বর প্রেম জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে এই ঈশ্বর পুত্রের আবির্ভাব। মানব সমৃদ্ধ করতে বহু মহামানব পৃথিবীতে এসেছেন, কিন্তু কোন মহামানবের জন্মদিন এভাবে দেশে বিদেশে মিলেমিশে একাকার হয়নি । বিদেশে জন্মালেও যীশুখ্রীষ্ট ভারতেও সমাদৃত। খ্রিস্টমাস ডে‘র আগে তাই বাড়িঘর সেজে ওঠে খ্রিস্টমাস ট্রি আর রঙীন আলোয়। সাড়ম্বরে মহামানবের জন্মদিন পালিত হয় কেক কেটে, চলে অতিথি আপ্যায়ন। রকমারি পাম কেক, পেস্ট্রি, কুকিজের গন্ধে ভরে ওঠে বড়দিনের পার্টি। যীশু ক্রশ বিদ্ধ হয়ে প্রাণ ত্যাগের পর তার অনুগামীরা সমাজে খ্রীস্টীন হিসাবে পরিচিত হন। তবে কথিত আছে খ্রীস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই রোমের প্রথম সম্রাটের আমল থেকে ২৫শে ডিসেম্বর তারিখে বড়দিন হিসাবে উদযাপন শুরু হয়। পরে পোপ জুলিয়ান ২৫শে ডিসেম্বর তারিখকেই যীশুর জন্মদিন হিসাবে ঘোষণা করেন। সারা বিশ্বের বড়দিন পালন হয়ে আসছে তখন থেকেই । রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটাস্ট্যান্ট, খ্রীষ্ট ধর্মের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে কেকের মতই সান্তাক্লসের নামটি জড়িয়ে আছে বহুদিন থেকেই। বড়দিনে কেক আর সান্টাক্লস ছাড়া বড়দিন উদযাপন সম্পূর্ণ হয় না। এই সান্টাক্লস কে, কিভাবে এলো, তার ইতিহাস প্রচলিত তথ্য ও গল্প অনুযায়ী জানা যায় যে, চতুর্থ শতাব্দীতে এশিয়া মাইনর অঞ্চলে সেন্ট নিকোলাস নামে ভীষণ দয়ালু এক ধনী ব্যক্তি বাস করতেন । গরীবদের দুঃখে তিনি বিগলিত হতেন এবং প্রয়োজন মতো অর্থ সাহায্য করতেন। এরকমই এক পরিবারে একটি মেয়ের অর্থের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না শুনে সকলের অজান্তে তাদের বাড়িতে সোনায় ভরা ব্যাগ রেখে আসেন। এই উপহার দেওয়ার গল্প ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সের্ট নিকোলাস হয়ে ওঠেন সান্টাক্লস। বড়দিনে মোজায় ভরে সান্টাক্লস বাচ্চাদের উপহার দিতে আসেন, এই রকম কাহিনীই অনেকটা বড়দিন উদযাপনের অন্যতম অঙ্গ।

খ্রীষ্ট ধর্মগ্রন্থ বাইবেল অনুযায়ী মনে করা হয় ঈশ্বর তার নিজস্ব প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। প্রথম দম্পতিকে ঈশ্বর পৃথিবীতে সমান ভূমিকায় অংশীদার করে তৈরী করেছিলেন। রক্ষণশীল ধর্মতাত্ত্বিকদের মতে ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং তারও পরে ঈশ্বরের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পুরুষরা নারীদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে, যাকে পাপ নামে অভিহিত করা হয়। যীশু ওল্ড টেস্টামেন্টের সীমা রঙ্গন করে মর্যাদার দিক থেকে লিঙ্গের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করার মত প্রতিষ্ঠা করেছেন। খ্রীষ্ট-ধর্ম বিবাহপ্রথা এবং পরিবারকে খ্রীষ্টান সমাজের কেন্দ্রীয় একক হিসাবে মর্যাদা দিলেও পুরুষ ও নারীর সম মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বাইবেলে পুরুষকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র পুরুষই চার্চের পুরোহিত হতে পারতেন, মহিলা নয়। খ্রীষ্ট ধর্মের প্রথম দিকে নারীরা জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। কিছু অভিজাত ও শিক্ষিত মহিলা গির্জার অধীনে অনুশীলন করতেন। এঁদের মধ্যে সেন্ট প্রিথিলা নামে একজন বিদুষী মহিলা ছিলেন যিনি ইহুদী ধর্ম অধ্যয়ন করতেন এবং তার স্বামীর সঙ্গে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়কে মর্যাদার আসনে উন্নীত করতে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। সে যুগের উল্লেখযোগ্য মহিলা ইহুদী বংশের কন্যা ইস্টার পারস্যের রানী হয়েছিলেন, তার অনুরোধেই পার্সিয়ান বাজা অনেক ইসরায়েলীর জীবন রক্ষা করেছিলেন। মধ্যযুগের পোপের প্রতিনিধিত্বকারী পিতৃতন্ত্র ইউরোপের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত । ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক মহিলারা গির্জায় সন্ন্যাস গ্রহণ করতেন এবং সারাজীবনবিবাহ না করে ব্রহ্মচর্য পালন করতেন। কিছু সন্ন্যাসী নারী চিকিৎসা ও ওষুধ তৈরীর পারদর্শী ছিলেন যা ক্যাথলিক চার্চের মান বিশেষ উন্নত পর্যায়ের নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। বেলজিয়ামের এক সন্ন্যাসিনী সের্ট জুলিয়ানা খ্রীষ্টের মৃত্যু দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্যে বিশেষ ভোজসভার আয়োজন করেছিলেন, যা খ্রীষ্টীয় বিশ্বে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সিক্যান আন্দোলনে সেন্ট ক্লেয়ার নামে ধর্মীয় সন্ন্যাসিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, পরে ‘জোয়ান অফ্ আর্ক তলোয়ার’ বহন করে বির্তকে জড়িয়ে পড়েন। বিচারসভায় তাকে ডাইনী ও বিধর্মী আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে গির্জা সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মধ্যযুগে গির্জার জীবনে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী মহিলারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। সেই মহিলাদের মধ্যে ভার্জিন মেরি এবং মেরি ম্যাগডালিন গির্জায় খুব উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। গির্জায় তাদের প্রার্থনার কাজ পরিচালনা খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল। মেরি ম্যাগডালিন চিত্রকর্মে অন্যান্য নারীদের উৎসাহিত করতেন এবং এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে একজন মহিলা সন্ন্যাসী পোপ হিসাবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। ধর্মতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছাড়াও নারীদের বিবাহ ও সন্তান লালন পালনের জন্য গ্রেট ইউরোপীয় ইনস্টিটিউশন নামে গড়ে ওঠা এক বিখ্যাত কেন্দ্র অন্যতম প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছিল। সেই যুগে জাদউইগা নাম্নী একজন মহিলা খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে রাশিয়ান শাসকও হয়েছিলেন। ক্যাথলিক চার্চের পরিচালক, পোলাণ্ডের শাসক রানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন এবং সম্মিলিত ইউরোপের বিশেষ সম্মান লাভ করেছিলেন। হাঙ্গেরির গির্জার মহিলা সেন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই মহীয়সী নারী নিজের অর্থ দিয়ে দরিদ্রদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে খ্রীষ্ট প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। পোপ দ্বিতীয় জন পল এইসব খ্রীষ্টান সন্ন্যাসিনীদের মহিলাদের বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। যীশুর শিক্ষার উপর ভিত্তি করে খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে পুরুষ ও মহিলা অধিকার সমান সমান মর্যাদা দেওয়া হত। ঐতিহাসিকদের মতে নারীর সম্মান এবং মর্যাদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ছিল মাতা মেরীকে বিশেষ সম্মান দেওয়া। খ্রীষ্টান মতাবলম্বীদের কাছে র্গিজা হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মারিয়ামেট মতাদর্শ ধর্মতত্ত্বের একটি শাখা। যেখানে খ্রীষ্টীয় ধর্মবিশ্বাসে ভার্জিন মেরীর ভূমিকা অধ্যয়ন করা হত । গির্জায় ভার্জিন মেরীর প্রতিচ্ছবি শিল্পীদের প্রভাবিত করত। মা মেরীর প্রতিচ্ছবি খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীরা অসম্ভব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করত এবং পশ্চিমা শিল্প সঙ্গীত, পরিবারে মাতৃত্বের বিষয় এবং পরিবারের মূল আর্দশ চরিত্র হিসাবে মেনে চলত ও শ্রদ্ধা করত। তখন খ্রীষ্টান ধর্মীয় ইতিহাসে সম্রাট কনস্টান্টাইনের মা সেন্ট হেলনা, সেন্ট অগাষ্টাইনের মা সেন্ট মনিকা প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন। সেন্ট ক্লারা, সেন্ট জেয়ান অফ্ আর্ক, ইংল্যাণ্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথ, বাইজান্টাইন সম্রাজ্ঞী থিওডোরা প্রোটাস্টান্ট সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন । বিংশ শতাব্দীতে ক্যাথলিক ইউনিভারশাল চার্চের পক্ষ থেকে তিনজন মহিলাকে বিশেষ উপাধি দিয়েছিলেন। মাদার টেরেসা, যিনি সামাজিক ন্যায় বিচার, মানুষের সেবার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন।

BENGALI ARTICLE

উপরের আলোচনায় খ্রীষ্টান ধর্মে প্রথম দিকে সমাজে এগিয়ে থাকা, শিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের মুষ্টিমেয় মহিলা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হলেও সার্বিকভাবে নারীরা খ্রীষ্টীয় সমাজে পুরুষের সমান অধিকার ও সম্মান পান নি বরং নারীকে সমাজের চরম নিম্নতম অবস্থানে নিমজ্জিত করা হয়েছে। খ্রীষ্ট ধর্মমতে মানবজাতির স্বর্গ হতে নরকের দুনিয়ার পদস্খলনের জন্য নারীই দায়ী। ঈশ্বরের আনুগত্য লঙ্ঘনের মত জঘন্যতম পাপ কাজ ইভের মাধ্যমেই হয়েছিল, তাই খ্রীষ্ট ধর্মমতে নারীরাই হচ্ছে শয়তানের বাহন এবং নরকের দরজা। পুরুষদের দংশন করে নরকের দরজায় পোঁছাতে পারে নারীই। নারীকে শয়তানের থেকেও অধিক ধিক্কৃত করা হত, প্রকাশ্যে নারীকে কেনাবেচা করা হত। ঘরের কাজকর্ম, সন্তান ধারণ, লালন-পালন করা ছাড়া অন্য কোন মানবিক অধিকার নারীদের ছিল না। প্রত্যেক পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারতো এবং পুরুষদের যৌন চাহিদা পূরণ করতে বাধ্য থাকত। সুদীর্ঘ সময় ধরে সমাজে নারীদের এরকম অবস্থান চলার পর ৫৮৬ সালে প্রথম ফ্রান্সের গবেষক ও পণ্ডিতদের সভায় বহু চিন্তাভাবনা ও তর্কের পর তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে নারী জন্তু নয়, নারী মানুষ ; তবে পুরুষের সেবার কাজে নিরন্তর সেবারত হয়ে থাকাই তার কর্তব্য। ১৮০৫ সাল পর্যন্ত ইংরেজদের আইন ছিল পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রি করতে পারে । অষ্টাদশ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে ফরাসী পার্লামেন্টে দাস প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাস হলেও নারীকে এর মধ্যে গণ্য করা হয় নি। অর্থাৎ খ্রীষ্টানদের মধ্যে নারীদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বলে কোন ভাবনাই ছিল না।

এখন দিন বদলের সাথে সাথে গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর সব কিছুই পাল্টেছে । মানুষ এখন অনেক বেশী চিন্তাশীল । বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধর্মীয় গোঁড়ামি এখন অনেক কমেছে। পুরাতন আবেগ সর্বস্ব ঈশ্বর বিশ্বাসের ধারণা ও যুক্তি অপেক্ষা উদার চিন্তায় সমৃদ্ধ দার্শনিক মতবাদ অনেক বেশী গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে । খ্রীষ্টীয় মনোজগতে এবং ধর্মীয় দৃষ্টিতে নারীর অবস্থান আগের চেয়ে অনেক উন্নত এবং যুক্তিগ্রাহ্য । যদিও ধর্ম নিয়ে নারী-পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য বেশ ভালভাবেই বিদ্যমান । পুরুষ যে দৃষ্টিতে ধর্মকে দেখে, তার মধ্যে যে ধর্মবোধ কাজ করে নারীর ধর্মচেতনা তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রকৃতপক্ষে সেই আদিম যুগ থেকেই পুরুষের জন্য ধর্ম ব্যাপারটাই পৌরুষত্ব ফলানোর প্রকৃষ্ট উর্বরক্ষেত্র। পুরুষের পেশীকে ধর্মের নামে কাজে লাগানো হয়। গির্জা, মন্দির মসজিদ সব ক্ষেত্রই পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। শুধু খ্রীষ্ট ধর্মে নয়, প্রায় সব ধর্মেই পুরুষের একচেটিয়া আধিপত্য চলে আসছে । অন্যদিকে নারীর আরাধনা ঈশ্বরভক্তির মধ্যে এক রোমান্টিক ভাব জড়িয়ে থাকে, তাই নারীর ধর্মে আসক্তি পুরুষের তুলনায় অনেক বেশী দেখা যায় ভারতেই উত্তর দক্ষিণ পশ্চিম পূর্ব সব জায়গাতেই মহিলারা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশী ধর্মপ্রাণা।

বর্তমান কালে পাশ্চাত্য দেশগুলোতে মানুষ ধর্ম নিয়ে খুব বেশী মাথা ঘামায় না। মানুষের ধর্ম বিশ্বাস কমে যাওয়ায় চার্চে উপস্থিতি অত্যন্ত কম, যেটুকু উপস্থিতি তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী । আবার তাদের মধ্যে সমাজে পিছিয়ে পড়া, নিগৃহীত, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল, শিক্ষায় যারা পিছনের সারিতে সেই সব নারী, আফ্রিকান কালো মহিলাদের উপস্থিতিই বেশী। সারা পৃথিবীব্যাপী খ্রীষ্টধর্মের যে বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তাতে নারীরা এখনও সমাজের সেই পিছনের সারিতেই অবস্থান করে। সমাজে জন্মের পর একটি মেয়ে শিশুকে কিভাবে ভালবাসতে হয়, প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রকাশ করে যেতে শেখায়। পুরুষের বশ্যতা স্বীকার করাই নারীর ধর্ম, এই সহজ সত্যটাকে এমনভাবে মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে পুরুষকে বেগ পেতে হয় না, কারণ তাকে আজন্ম বোঝানো হয় যে, ঈশ্বরের চোথে তার স্থান শুধুমাত্র পুরুষের আনন্দদান করা, পুরুষের সেবা করা, সন্তান জন্ম দেওয়া, প্রতিপালন করা, গেরস্থালী রক্ষায় করায় নিয়োজিত তার প্রাণ। সে অনুগত, পুরুষ তার ত্রাতা। তাকে মান্য করেই তাকে জীবনধারণ করতে হবে । পুরুষ ছাড়া তার জীবনের কোন মূল্য নেই। তার জীবনে পুরুষ যেন দ্বিতীয় ঈশ্বর। ঈশ্বরের আনুকূল্য পেতে হলে ঘরের পুরুষ দ্বিতীয় ঈশ্বরকেই তোয়াজ করতে হবে, তাকে তুষ্ট রাখতে হবে। নারীরবোধকে চিরতরে বোবা করে রাখতে ধর্মের দোহাই দিয়ে পুরুষকে নারীর প্রভু করে রাখা হয়েছে । পুরুষ সর্বদাই উৎকৃষ্ট উত্তম, নারী অধস্তন আজ্ঞাবহ, নিম্নমানের এক প্রজাতির মানুষ।

খ্রীষ্টান চার্চে তাই নারীর জন্য সেবার কাজই বরাদ্দ থাকত। অথচ মজার ব্যাপার এখন চার্চ যত পুরুষ শূন্য হচ্ছে নারীদের সংখ্যা ততই বাড়ছে, চার্চের সব কাজ নারীরাই করছে। পুরুষদের প্রভুত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসাবে নারীদের কাজে লাগাচ্ছে উর্বর মস্তিস্কের অধিকারী পুরুষ সমাজ। বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীরাই মূলত চার্চগুলো টিকিয়ে রাখলেও চার্চতন্ত্রে উচ্চ ধাপে নারীর স্থান এখনও নেই । লেখক ও শিল্পীরাও খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান নির্ণয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। ধর্মের নামে অতি সুকৌশলে নারীর ইতিবাচক ভাবমূর্তি মা মেরীকে এবং নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরীতে ইভকে বেছে নেওয়া হয়েছে। মাদাম মেরী‘র সব ভাল, ইভের সবই খারাপ । মাদাম মেরী জেসাস-এর কুমারী মা, যিনি ‘হোলি স্পিরিট’ দ্বারা গর্ভবতী হন। মেরী তাই আপাদমস্তক কাপড়ে আবৃত হয়ে শিশু জেসাসকে দুইহাতে ধরে থাকেন, বহুল প্রচলিত এই ছবি খ্রীষ্টানদের কাছে খুবই পবিত্র এবং জনপ্রিয়। অন্যদিকে পৃথিবীর প্রথম নারী ইভ সম্পূর্ণ নগ্ন, ইভ যৌনতার প্রতীক, লোভী এক সুন্দরী নারীর চরিত্র হিসাবে ইভকে দেখানো হয়েছে। মা মেরী নম্রতার প্রতীক নি:শব্দে কোলে বাচ্চাকে নিয়ে থাকেন আর ইভের প্ররোচনায় আদম জ্ঞানবৃক্ষের ফল ভক্ষণ করে প্রথম পাপ করেন। তাই ইভ অর্থাৎ নারী পাপেরও প্রতীক । অন্যদিকে নিউ টেস্টামেন্ট অনুযায়ী নারীর জন্য ভালো অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে চার্চ পুরুষদের কব্জায় থাকায় নারী প্রাপ্য মর্যাদা পায়নি বলে ধারণা করেন অনেকে। তৎকালীন সমাজে এবং ধর্মে নারীর প্রতি প্রচলিত বৈষম্য জেসাস সমর্থন করতেন না; তিনি ইহুদী সমাজের প্রচলিত চিত্র বদলাতে সচেষ্ট ছিলেন । নারীবাদী বিদুষী এলিজাবেথ তার বই ‘‘ডিসিপলশিপ অফ্ ইকুয়্যাল”-এ দেখিয়েছিলেন খ্রীষ্টীয় প্রাথমিক যুগে নরীর ভূমিকা পুরুষের সমান ছিল। খ্রীষ্টীয় ধর্মে নারীর স্থানচ্যুতি ঘটে আরও পরে ।

আপাদমস্তক পুরুষতান্ত্রিক অবস্থার মধ্যে জন্ম বেড়ে ওঠা এবং প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন ধর্মে পুরুষরাই অতি সযত্নে নারীর মনোজগতে পুরুষের অধীনে থাকার চিন্তাধারা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারী যতই প্রগতিশীল হোক ধর্মের শিকল ছিঁড়ে বেরুতে পারে না । আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে মধ্যযুগের ধ্যানধারণা আঁকড়ে থাকা নারী বেশিদূর এগোতে চায় না। বিভিন্ন ধর্মের নারীবাদীরা নারীর অধিকার আদায় করতে আগ্রহী হন সেই পুরুষতন্ত্রের কাছেই। এ একধরণের আবেগপ্রবণতা, নিজেকে নিজেই আশ্বস্ত করা যায় হয়তো। কিন্তু আদৌ কাজের কাজ কিছু হয় না। তাই নারীর ঈশ্বরভক্তির আবেগপ্রবণতা ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ভেসে চলা পিছিয়ে পড়া বঞ্চিত নারীদেরই শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ভীত শক্ত করার জন্য।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

Bengali Article 2023 | চিরায়ত ধর্মমঙ্গলের স্বাতন্ত্র্য | প্রবন্ধ ২০২৩

Bengali Article 2023 | শ্রমিক আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র বসু | প্রবন্ধ ২০২৩

Bengali Poetry 2023 | মোঃ ওয়াসিউর রহমান | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩

Bengali Article 2023 | আশা নিরাশার দোলাচলে বাঁকুড়া জেলার কাঁসা শিল্প

Women’s role in Christian society | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Women’s role in Christian society – new article | New article – Women’s role in Christian society | 2023 article – Women’s role in Christian society | Women’s role in Christian society 2023 article | New Journal – Women’s role in Christian society | Read new journal – Women’s role in Christian society | Save article – Women’s role in Christian society | download pdf – Women’s role in Christian society | Trending article – Women’s role in Christian society | Recent article – Women’s role in Christian society | viral article – Women’s role in Christian society | top best article – Women’s role in Christian society | best 2023 article – Women’s role in Christian society | Women’s role in Christian society – pdf article | Women’s role in Christian society 2023 | Women’s role in Christian society – trend article | Top Women’s role in Christian society | popular article – Women’s role in Christian society

খ্রীষ্টীয় সমাজে নারীর অবস্থান | সমাজে নারীর অবস্থান | খ্রীষ্টধর্মে নারী এবং খ্রীষ্টিয়ান নারীবাদী | ভারতে নারী – উইকিপিডিয়া | নারী – বাংলাপিডিয়া | সমাজে মেয়েদের অবস্থা | ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান | প্রাচীন থেকে আধুনিক ভারতে নারী | প্রাচীন ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান | বৈদিক সমাজে নারীর অবস্থান | প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ | বর্তমান ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান রচনা | এথেনীয় সমাজে নারীদের অবস্থান মূল্যায়ন কর | মধ্যযুগে নারীর অবস্থান | মধ্য যুগে নারীর অবস্থান ও মর্যাদা | বৈদিক সমাজে নারীর স্থান | নারী প্রগতির ধারা | খ্রীষ্টীয় নারীরা সম্মান ও শ্রদ্ধা | খ্রীষ্ট ধর্মে নারীর মর্যাদা ও অবস্থান | মুঘল সমাজে নারীদের অবস্থান | উন্নয়ন ও নারীর সামাজিক অবস্থান | আমাদের সমাজে নারীরা | বাংলাদেশের নারী | নারী উন্নয়ন | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Leave a Comment