অভিজিৎ পাল – সূচিপত্র [Bengali Article]
পদ্ম বেশ | Padma besha
জগন্নাথের ভক্ত মনোহর দাস ছিলেন হিন্দিভাষী। তিনি আজ থেকে আনুমানিক তিন শতাব্দী আগে জগন্নাথের লীলাপ্রচারের অঙ্গ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভক্তিমান পুরুষ। জগন্নাথের প্রতি তাঁর একান্ত ভক্তি ও অচল বিশ্বাস ছিল। একবার মনোহর দাস জগন্নাথকে চোখ ভরে দেখার জন্য মনে মনে খুব ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মনের ভাব তিনি কাউকে বলতে পারছিলেন না। জগন্নাথের প্রতি তাঁর ব্যাকুলতা ক্রমে বাইরেও প্রকাশ পেতে থাকে। অবশেষে জগন্নাথের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠা মনোহর দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি নীলাচলে জগন্নাথ দর্শনে যাবেন। পার্থিব সমগ্র প্রতিবন্ধকতা তিনি পার করে যাবেন শুধুমাত্র জগন্নাথের মহানাম সম্বল করে। মনোহর দাসের যেমন সিদ্ধান্ত তেমনই কাজ।
একদিন ব্রহ্মমুহূর্তে জগন্নাথের নামস্মরণ করে ভক্তরত্ন মনোহর দাস রওনা হয়েছিলেন নীলাচলের দিকে। জগন্নাথের নাম গান করতে করতে তিনি পাহাড়-জঙ্গল, নদ-নদী, জনপদ পেরিয়ে পথ চলতে লাগলেন মনের আনন্দে। তিনি সারাদিন পথ চলতেন ও রাতে বিশ্রামের জন্য একটি আশ্রয়ের সন্ধান করতেন। যেদিন তাও মিলত না সেদিন তিনি পথেই জগন্নাথের নাম স্মরণ করে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন আবার চলতে শুরু করতেন নীলাচলের পথে।
নীলাচলের পথে পথ চলতে চলতে এভাবেই মনোহর দাসের দিন কেটে যাচ্ছিল। একটি করে দিন কাটে আর মনোহর দাস মনে মনে আনন্দ বোধ করেন এই ভেবে যে, তিনি নীলাচলের পথে আরও অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছেন। যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি জগন্নাথের দর্শনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। এমনই একদিন সকালবেলা তিনি তাঁর যাত্রা শুরু করে দুপুরবেলা পথে তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠলেন। সেই সময় তিনি কাছাকাছি কোনো গ্রাম বা মন্দির বা কোনো আশ্রয় দেখতে পেলেন না। এমনকি কাছাকাছি কোনো পানীয় জলের জলাশয় খুঁজে পেলেন না যেখানে একটু জল পান করে তৃষ্ণা শান্ত করা যায়। তবু তিনি পথে পথচলা থামালেন না। মনে মনে জগন্নাথের নাম সংকীর্তন করতে করতে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন। অনেক দূর আসার পর তিনি দেখতে পেলেন একটি সুন্দর পুকুর। তিনি সেই সুন্দর পুকুরে প্রথমে কিছুটা জল পান করে তারপর পুকুরে স্নানাদি সেরে নিলেন। পুকুরের মিষ্টি জলে তার তৃষ্ণা সম্পূর্ণ নিবারণ হয়ে গিয়েছিল। তৃপ্ত মনে তিনি পুকুরের দিকে চেয়ে দেখলেন অজস্র সুন্দর পদ্ম ফুল ফুটে রয়েছে। কিন্তু শীতের মরসুমে এমন দৃশ্য দেখে তিনি অবাকই হলেন। শীতে পদ্মফুল ফুটলেও তার শোভা কমে আসে। প্রাকৃতিক উপায়ে শীতে পদ্মফুল খুব কম ফোটে। সূর্যের তেজ পদ্ম ফুটতে সাহায্য করে। শীতকালে একসঙ্গে এত পদ্ম ফুল ফুটে থাকার এমন বিরল দৃশ্য দেখে মনোহর দাস খুবই আশ্চর্য হলেন। তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন জগন্নাথের সৃষ্ট পৃথিবীতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। জগন্নাথ সমস্ত নিয়ম তৈরি করেন আবার তিনিই নিয়ম ভাঙতে দাঁড়িয়ে থাকেন। জগন্নাথ মূককে সুবক্তা করান, পঙ্গুকে পাহাড় লঙ্ঘন করান। তাঁর সামান্যতম কৃপা কটাক্ষে অসাধ্য সাধন হয়। শীতে পদ্মফুল ফোটা আর কি এমন বড় ব্যাপার। তিনি পুকুরে নেমে সমস্ত পদ্মফুল তুলে নিলেন আর নিজের ছোট্ট কাপড়ে সমস্ত ফুল আঁটি করে নিজের কাঁধের কাপড়ে বেঁধে নিলেন। তিনি কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সেই পুকুরটিকে মিলিয়ে যেতে দেখলেন। এসব জগন্নাথেরই অশেষ কৃপায় ছবি বুঝতে পারলেন তিনি। মনোহর দাস মনে মনে হাসলেন।
এভাবে পথে চলতে চলতে মনোহর দাস অবশেষে মাঘ মাসের অমাবস্যার রাতে জগতের রাজা জগন্নাথের রাজধানী পুরীতে গিয়ে পৌঁছলেন। তাঁর বাঞ্ছিতধামে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন। তিনি আর দেরি করলেন না সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করলেন জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে। তিনি রত্ন সিংহাসনে বিরাজমান জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনকে দেখে বিমোহিত হয়ে গেলেন। আনন্দে মনের ভেতর থেকে তাঁর ‘জগন্নাথ’ ‘জগন্নাথ’ জয়ধ্বনি হতে লাগল। মনোহর দাসের দুই চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু বইতে লাগল। মহাবাহু জগন্নাথকে দেখে তাঁর ভেতরে একাধিক সাত্ত্বিক মহাভাবের প্রকাশ হলো। এ যে বড় আনন্দের দেখা ভগবানের সঙ্গে ভক্তের। ঠিকই এরপর মনোহর দাস বাহ্য চেতনা ফিরে পেতেই কয়েকদিন আগে সংগ্রহ করা সেই পদ্মফুলগুলি জগন্নাথকে নিবেদন করতে চাইলেন। জগন্নাথের প্রতি একান্ত অনুরাগে মনোহর দাস ভুলে গিয়েছিলেন যেদিন তিনি পুকুর থেকে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলগুলি সংগ্রহ করেছিলেন, সেদিনের পর অনেকগুলি দিন কেটে গেছে। ভাবের ঘোরে থাকা মনোহর দাসের মনেও ছিল না তাঁর সংগ্রহ করা পদ্মফুলগুলি এতদিনে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। তবু তাঁর ভক্তহৃদয় এতসব তুচ্ছ বিষয়ে ভাবতে চাইল না। তিনি যে এসব জগন্নাথের জন্যই এতদূর থেকে মাথায় বয়ে এনেছেন। মাঝে যদি এতগুলো দিন কেটে গিয়ে থাকে, তবে সেটাও তো জগন্নাথেরই ইচ্ছে। মনোহর দাস গ্রামে থাকতে এক কথকতার আসরে শুনেছিলেন, জগন্নাথের ইচ্ছা ছাড়া একটা ফুলের রেণুও খসে না, একটা গাছের পাতা নড়ে না।
পুরীর শ্রীমন্দিরে দাঁড়িয়ে মনোহর দাস তাঁর সংগ্রহ করে আনা শুকনো পদ্মফুলগুলি জগন্নাথের ভাবে ভাবিত হয়ে থাকা অবস্থায় নিবেদন করতে চাইলে পুরীর পাণ্ডারা তাঁর ওপর ক্রুদ্ধ হন। জগন্নাথের সেবক ও পাণ্ডারা মনোহর দাসকে বোঝান, জগন্নাথকে শুধুমাত্র টাটকা ফুলই নিবেদন করা উচিত। শুকনো ফুল দেবতাকে নিবেদন করা যায় না। মনোহর দাসের মনে খুব কষ্ট হলো। তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতার জন্য এতদিন ধরে মাথায় করে এত শত পদ্মফুল বহন করে আনলেন অথচ সেই ফুলই কিনা তাঁকে দিতে পারলেন না। মনোহর দাস মানসিক কষ্টে ‘জগন্নাথ’ ‘জগন্নাথ’ বলে কাঁদতে লাগলেন। তিনি মনে মনে খুব আহত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সংগ্রহ করে আনা ফুলগুলি সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথের শ্রীমন্দিরকে আশাহীন ভাব নিয়ে ছেড়ে বাইরে চলে এলেন। তখনও তিনি মনে মনে বিশ্বাস করে চলেছেন, জগন্নাথ স্বয়ং ভাবগ্রাহী জনার্দন। জগন্নাথ কি তাঁর ভক্তের এই কষ্ট বুঝবেন না? জগন্নাথই যদি এই পদ্মফুলগুলি না চান, তবে আর কীভাবে মনোহর দাস তা জগন্নাথকে দিতে পারে! শ্রীমন্দিরের থেকে একটু দূরে মনোহর দাস রাতের বিশ্রামের জন্য রইলেন। এদিকে শ্রীমন্দিরে জগন্নাথদেব তাঁর ভক্তের আনা ফুলের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। পাণ্ডাদের কৃতকর্মের জন্য জগন্নাথ অভিমানী হয়ে উঠলেন। তিনি সন্ধ্যাকালীন বড় শৃঙ্গার বেশে আর সাজতে চাইলেন না। যতবার জগন্নাথকে সাজানো হয় ততবারই সাজ খুলে পড়ে যায়। এমন ঘটনা বিরল। জগন্নাথের সেবকগণ ভয় পেয়ে গেলেন। প্রধান পুরোহিত ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই কোনো দিব্য মহাত্মার প্রতি অন্যায় হয়েছে শ্রীমন্দিরে। জগন্নাথ তাই রুষ্ট হয়েছেন সকলের ওপর। সেই অন্যায়ের যদি সংশোধন না করা হয় তবে জগন্নাথের সাজ কোনোভাবেই করা যাবে না।
ভাবগ্রাহী জনার্দন জগন্নাথ তাঁর ভক্ত মনোহর দাসের সেবা গ্রহণ করতে চান। তিনি যে ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু। তিনি কারও বাসনা অপূর্ণ রাখেন না, রাখতে পারেন না। মনোহর দাস আশা করে সেই শুকনো হয়ে আসা পদ্মফুলগুলি আগলে বসে থাকলেন। ক্রমে তিনি জগন্নাথের চিন্তা করতে করতে মহাভাবে মূর্ছিত হয়ে গেলেন। এদিকে জগন্নাথ মহাপ্রভু পুরীর গজপতি মহারাজের কাছে প্রত্যাদেশ দিলেন, “হে রাজা, আজ আমার এক প্রিয় ভক্ত শ্রীমন্দিরে আমার সেবার নিমিত্তে তোমার নিয়োজিত পাণ্ডা ও সেবকদের কাছে বিনা কারণে অপমানিত হয়ে ফিরে গেছে। আমার জন্য আমার ভক্ত অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর পদ্ম সংগ্রহ করে এনেছিল। সেগুলি তোমার নিয়োজিত পাণ্ডা ও সেবকদের কারণে সে আমাকে উপহার দিতে পারেনি। এখন সেই ভক্তই আমার চিন্তা করতে করতে মূর্ছিত হয়ে মন্দিরের বাইরে সিংহদ্বারের কাছে শুয়ে রয়েছে। সে মনের দুঃখে ব্যথিত হয়ে রয়েছে। আমি তোমাকে আদেশ করছি অনতিবিলম্বে আমার সেই ভক্তের কাছে যাও এবং তাঁর অতিকষ্টে সংগ্রহ করে আনা সেই পদ্মফুলগুলি যেখানে যে অবস্থায় পড়ে আছে সেই অবস্থায় দ্রুত নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। আজকের বড় শৃঙ্গার বেশে আমি মনোহর দাসের পদ্ম দিয়েই সাজতে চাই। আর এর সঙ্গে পদ্মচালের সুমিষ্ট ক্ষীর তৈরি করে আমাকে নিবেদন করে আমার ভক্তকে তা মহাপ্রসাদ রূপে উপহার দাও। আমার ভক্ত মনের দুঃখে অভুক্ত উদর নিয়ে রয়েছে। যাও রাজা, তাঁকে এখনই ফিরিয়ে আনো। আমি আমার ভক্তের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি।” একই সময়ে জগন্নাথের একই প্রত্যাদেশ পেলেন পুরীর শ্রীমন্দিরের প্রধান পূজারী। তিনি বুঝতে পারলেন আজ কত বড় ভুল হয়েছে শ্রীমন্দিরে। নিজেদের ক্রিয়াকাণ্ড ও অহংকারের জন্য প্রধান পুরোহিত লজ্জিত হলেন। জগন্নাথের শৃঙ্গার সাময়িকভাবে থামিয়ে মনোহর দাসের কথা চারিদিকে আলোচিত হতে লাগল। সকলেই উপলব্ধি করলেন বিধিপূজা কতটা বাহ্য বিষয়। ভক্ত যদি সভক্তি সামান্যতম কিছু প্রভুকে অর্পণ করেন তবে তা নিমেষে নিখাদ সোনার মতো বিশুদ্ধ হয়ে যায়। পরশপাথরের স্পর্শ পেলে লোহা কি আর লোহা থাকে? জগন্নাথের এই তো ধারা।
জগন্নাথের এমন অদ্ভুত প্রত্যাদেশ পেয়ে গজপতি মহারাজ আর একটুও দেরি করলেন না। ততক্ষণে শ্রীমন্দির থেকে রাজার কাছে খবর এসেছে জগন্নাথের বড় শৃঙ্গারে আজ বারবার অন্যথা হচ্ছে। জগন্নাথের শরীরে বড় শৃঙ্গারের কোনো উপকরণই ক্ষণমাত্র থাকছে না, শুধুই খসে যাচ্ছে। রাজা বুঝতে পারলেন যে, আসলে শ্রীমন্দিরে কি ঘটেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সিংহদ্বারের কাছে পৌঁছে গেলেন। ভক্ত মনোহর দাস তখনও বাহ্য চেতনা হারিয়ে সিংহদ্বারের কাছে পড়েছিলেন। তখনো তাঁর হাতের কাছে পদ্মফুলগুলি আঁটি করে বেঁধে রাখা ছিল। রাজা স্বয়ং মনোহর দাসের কাছ থেকে পরম শ্রদ্ধায় শুকনো পদ্মফুলগুলি সংগ্রহ করলেন। মনোহর দাসের কানে জগন্নাথের নাম শোনাতে শোনাতে তাঁরবাহ্য চেতনা ফিরে এলো। রাজা মহাপ্রভু জগন্নাথের সেবক ও পাণ্ডাদের নির্দেশ দিলেন আজ মনোহর দাসের আনা এই পদ্মফুলেই হবে জগন্নাথের বড় শৃঙ্গার বেশ। রাজার কথা শুনে সেবক ও পাণ্ডারা আশ্চর্য হলেন। প্রধান পুরোহিত বুঝলেন জগন্নাথ নিশ্চয়ই রাজাকেও প্রত্যাদেশ করেছেন। সবাই বুঝতে পারলেন, এটাই জগন্নাথের ইচ্ছা। মনোহর দাসের সংগ্রহ করে আনা সেই শুকনো পদ্মগুলি সুগন্ধি চন্দনে স্পর্শ করে জগন্নাথের শ্রীবিগ্রহে স্পর্শ করানো সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি সদ্য ফোটার পদ্মের মতো ফুটে উঠতে লাগল। একসঙ্গে এতগুলি পদ্মফুলের সৌরভে সমগ্র মন্দির দিব্যসুগন্ধে ভরে গেল। গজপতি মহারাজ ও শ্রীমন্দিরের সমস্ত জনতা এমন অদ্ভুত অপার্থিব দৃশ্য দেখে আনন্দে বিভোর হয়ে উঠলেন। সকলেই জগন্নাথ ও তাঁর মহান ভক্ত মনোহর দাসের নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন।
পুরীর শ্রীমন্দিরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল আনুমানিক তিন শতাব্দী আগে কোনো এক মাঘ মাসে। জগন্নাথের ভক্ত মনোহর দাসের এই কিংবদন্তি অনুযায়ী এখনও মাঘ মাসের অমাবস্যার পর থেকে শুক্লপক্ষের শ্রীপঞ্চমী তিথির (সরস্বতী পূজার তিথি) মধ্যবর্তী যে শনিবার বা বুধবার পড়ে সেই দিন জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শন পদ্মের সজ্জায় সজ্জিত হয়ে ওঠেন। শুধুমাত্র পুরীতে শ্রীমন্দিরেই নয় ওড়িশায় জগন্নাথ-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অজস্র মন্দিরে প্রধান দেবতাকে এখন পদ্ম বেশে (Padma besha) সজ্জিত করা হয়। প্রতি বছর শীতের মরসুমে পদ্মফুলের অভাব ঘটে। কিন্তু ঠিক কোনো না কোনো ভক্ত এই সময়ে জগন্নাথের জন্য অজস্র সুন্দর পদ্ম সংগ্রহ করে আনেন। এছাড়াও সাদা কাগজ ও সাদা শোলা দিয়ে পদ্ম তৈরি করা হয় জগন্নাথকে সাজানোর জন্য। পদ্ম বেশ (Padma besha) শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথ ও বলভদ্রের পায়ের কাছে কাগজ ও শোলার তৈরি রাজহংস দেখা যায়।
জগন্নাথের এই পদ্ম বেশ (Padma besha) সারারাত জগন্নাথের গায়ে থাকে। জগন্নাথের অন্য কোনো বিশেষ বেশেই জগন্নাথের শয়ন হয় না। পদ্ম বেশ (Padma besha) এক্ষেত্রে খুব ব্যতিক্রম। পরেরদিন ভোরে জগন্নাথের মঙ্গলারতির পরও কিছুক্ষণ জগন্নাথ পদ্ম বেশে (Padma besha) থাকেন। এমনকি সিংহদ্বারের পতিতপাবন বিগ্রহও একইভাবে সেজে থাকেন। মঙ্গলারতির পর এই বেশও খুলে নতুন সাজে জগন্নাথকে সাজানো হয়। জগন্নাথের পদ্ম বেশ (Padma besha) মনোহর দাসের ভক্তি ও বিশ্বাসের স্মারক। ভক্তের জন্য জগন্নাথ সবকিছু করতে পারেন। ভক্ত যদি জগন্নাথের জন্য সমস্ত নিয়ম ভেঙে জগন্নাথের প্রতি অনুরক্ত হন, তবে জগন্নাথও সমস্ত নিয়ম ভেঙে ভারতের কাছে ধরা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে পদ্ম একাধারে ভক্তের জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, অভীষ্ট, প্রেম, আনন্দ, লক্ষ্য, উৎসর্গ, সমর্পণ, প্রণিপাত, শুদ্ধতা, আবেগ, বৈরাগ্য, হৃদয়পদ্ম ও নিষ্কাম মনোবৃত্তির প্রতীক। পদ্ম বেশে (Padma besha) জগন্নাথ স্মরণ করিয়ে দেন, যে ভক্ত একবারও জগন্নাথের হওয়ার কল্পনাও করেছেন, জগন্নাথ সঙ্গে সঙ্গে সেই ভক্তের হয়ে বসে রয়েছেন। ভক্তের হৃদয়পদ্মই জগন্নাথের প্রকৃত আসন। এখানেই জগন্নাথের সর্বাধিক সেবা সম্ভব। এই হৃদয়পদ্মই জগন্নাথকে উৎসর্গ করতে হয়। তবেই ভক্তের সাধনার সার্থকতা।
অভিজিৎ পাল | Avijit Pal
New Bengali Story 2023 | রত্নগর্ভা মা | গল্প
New Bengali Article 2023 | পদ্য ও ছড়ায় শিশু-কিশোর
New Bengali Story 2023 | হৃদয় নিকেতন | সুভাষ নারায়ণ বসু
New Bengali Story 2023 | জন্মযোগ | বৃষ্টি রায়
Padma besha | Padma besha Article | Padma besha Bengali article | what is Padma besha? Padma besha meaning | Padma besha definition | Padma besha article pdf | Padma besha article download | trending article – Padma besha | viral trailer – Legend of Jagannath | video clip – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath video clip | new clip – Legend of Jagannath | top clip – Legend of Jagannath | best clip – Legend of Jagannath | short video – Legend of Jagannath | full video – Legend of Jagannath | news – Legend of Jagannath | Legend of Jagannath web story | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine