Traveler Swami Vivekananda | পরিব্রাজক বিবেকানন্দ | 2023

Sharing Is Caring:

পরিব্রাজক বিবেকানন্দ – জয়ন্ত কুমার সরকার

বিশ্বের প্রথম ধর্ম মহাসম্মেলন, ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ সাল।‌ আমেরিকার শিকাগো শহরে সমগ্র বিশ্ব থেকে প্রতিনিধিরা এই ধর্ম মহাসম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি তরুণ সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ। ‘ব্রাদার্স এ্যাণ্ড সিস্টার্স অফ্ অ্যামেরিকা’ উদাত্ত ভরাট গলায় সম্বোধনে গোটা সভাগৃহ করতালিতে ফেটে পড়েছিল, প্রায় দু’মিনিট ধরে চলে করতালি। শিকাগোর ধর্ম মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়ার প্রবেশপত্র না থাকায় যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল তরুণ সন্ন্যাসী বিবেকানন্দকে। রামকৃষ্ণ পরমহংসের সংস্পর্শে আসার পরে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণের পর বিবেকানন্দ ভারতবর্ষ ভ্রমণে বের হন। তখন তিনি বিভিন্ন ছদ্মনামে পরিচিত হতে থাকেন। সেই সময় রাজস্থানে খেত্রীর রাজা অজিত সিংহের সঙ্গে পরিচিত হন ও তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেন। বিবেকানন্দের ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান ও প্রতিভায় মুগ্ধ হন রাজা। তিনিই তাঁকে ছদ্মনাম ছেড়ে ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ নাম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। রাজা অজিত সিংহ স্বামীজির খুব অনুরাগী হয়ে ওঠেন। আমেরিকা যাত্রার জন্য তিনিই স্বামীজীকে রাজ-সন্ন্যাসীর পোষাকে সজ্জিত করে দেন, অর্থও সাহায্য করেন; তার কিনে দেওয়া প্রথম শ্রেণীর টিকিটেই বোম্বাই থেকে পেনিনসুলার জাহাজে ১৮৯৩ সালের ৩১শে মে তারিখ আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে অন্যের দান সহায়তায় আমেরিকা আসা, সঙ্গে পুঁজি সামান্য, তাই খরচ কমানোর জন্য বিবেকানন্দ শিকাগো থেকে বস্টন চলে আসেন। বস্টন আসার পথে ট্রেনে আলাপ হয় মিস ক্যাথরিন স্যানবার্থ নাম্নী এক বিদুষী আমেরিকান মহিলার সাথে। বিবেকানন্দের সৌম্য দর্শন ও কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর খামারবাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন ওই মহিলা। আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ায় চিন্তা মুক্ত হন স্বামীজী। কিন্তু, তখনও স্থিরতা নেই ধর্ম মহাসম্মেলনে যোগ দেওয়ার। তিনি বস্টনে নানান সভায় বক্তৃতা দিতে থাকেন, কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। সাক্ষাৎ হয় হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের সঙ্গে। বিবেকানন্দের জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করে মুগ্ধ হন তিনি। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কে সঠিক চিনেছিলেন হাভার্ডের অভিজ্ঞ অধ্যাপক। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তরুণ সন্ন্যাসীকে ধর্ম মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। জন রাইট শংসাপত্রে লেখেন,” এই তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসীর পাণ্ডিত্য হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপকের পাণ্ডিত্যের সমষ্টির চেয়ে বেশী । এঁর পরিচয়পত্র দরকার হয় না।” স্বাগত সম্ভাষণে উদাত্ত গলায় আহ্বানে, তাঁর অনবদ্য ব্যারিটোনে, তাঁর ব্যক্তিত্বে, পাণ্ডিত্যে বাক্ পটুতায় মোহিত গোটা সভাগৃহ। স্বামীজী তাঁর বক্তৃতায় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন হিন্দুধর্মের অর্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন। হিন্দুধর্মের বেদান্ত, দর্শন, হিন্দুধর্মের ঈশ্বর, আত্মা, দেহ এবং মনের ধারণা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। শিকাগো ধর্ম মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ভারতের দারিদ্র‌্য নিরসনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করার লক্ষ্য থাকলেও তিনি তা করতে পারেন নি। তিনি হিন্দু ধর্মের সঙ্গে বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-মুসলিম ধর্মের সম্বন্ধ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারতীয়দের দারিদ্রের কথা বলেছিলেন। খ্রীস্টানদের ভারতীয়দের প্রতি দারিদ্র দূরীকরণে চরম অনীহার কথা উল্লেখ করেন; বৌদ্ধ ধর্মকে হিন্দুধর্মের পরিপূরক বলেছিলেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তি, বৌদ্ধধর্ম ও ব্রাহ্মধর্মের সম্পর্ক, বৌদ্ধধর্ম ও বেদের সম্পর্কের কথা বলেছেন । বক্তৃতার অন্তিম লগ্নে এই মহতী ধর্ম মহাসভায় আয়োজকদের ‘মহৎ আত্মা’ আখ্যা দিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। খ্রীষ্টান অধ্যুষিত আমেরিকায় দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে তিনি বলতে পেরেছিলেন, “পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা এবং দাতব্যতা কোন গির্জার একচেটিয়া সম্পত্তি হতে পারে না।”

যুগাবতার রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সুযোগ্য শিষ্য নরেন্দ্রনাথ দত্ত, ১৮৮৬ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন। আধ্যাত্মিককে এক অন্য পর্যায়ে উন্নীত করে স্বামীজী জীবনকে আলোর দিকে, নেতিবাচক ভাবনার অন্ধকার দিকটির পর্দা সরিয়ে যুব সমাজকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ‘জীবে প্রেম করে যেইজন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ এই শাশ্বত মন্ত্রই তার জীবনের দর্শন। ভারতবর্ষ যখন অশিক্ষা অন্ধকার হতাশায় ডুবে আছে, ব্রিটিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে চলছে হিংসা আর খুনোখুনি ; সাধারণ মানুষের জাতীয়তাবোধ, আত্মবিশ্বাস যখন তলানিতে, বিভ্রান্ত আর দিশেহারা ভারতবাসী, সেই দু:সময়ে ভারতবাসীকে পথ দেখাতে বিবেকানন্দ হাল ধরেন। তিনি শিকাগো ধর্ম-মহাসভায় তার পাণ্ডিত্য ও মেধা দিয়ে হিন্দুধর্ম তথা ভারতবর্ষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ব্রিটিশদের চোখে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের ভারতবর্ষকে এই তরুণ সন্ন্যাসী তার হৃদয়বত্তা, তেজস্বীতা, জেদ ও স্বাধীনচেতা চরিত্র দিয়ে বিশ্বের দরবারে অনন্যসাধারণ আসনে উন্নীত করতে সমর্থ হন। তিনি অজ্ঞ-কাতর-নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকে তাদের জীবনের মূল স্রোতে সামিল করানোর বিষয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন, ভগবান আকাশ থেকে আসেন না, মাটি ফুঁড়েও নয়, মানুষের মাঝেই তাঁর অবস্থান। তিনি চাইতেন জীবন্ত মানুষকে ভালবাসতে, তাদের সেবা করতে। অনুগামী, শিষ্যদের নির্দেশ দিতেন, “নি:স্বার্থ ভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে করতে শেষ করে ফেল নিজেকে, এই আমার আশীর্বাদ।” যুব সমাজকে শরীর চর্চায় অভ্যস্ত হতে, আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে, মনকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে ধ্যানযোগের উপর গুরুত্ব দিতেন। পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ হয়েছে, তার মূলে ছিল আত্মবোধ, আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস থেকেই আসে আস্তিকতা, যে নিজেকে বিশ্বাস করে না, সে-ই তো নাস্তিক। যারা দেবতা-বিগ্রহকে বিশ্বাস না করে নিজেকে বিশ্বাস করে, সে-ই আস্তিক। বিবেকানন্দ সর্বস্তরে মানুষের মনে স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে সর্বোচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছেন। অসীম সাহসী নরেন ভূত প্রেত দত্যি-দানো বিশ্বাস করতেন না। নিজের চোখে না দেখলে কিছু বিশ্বাস করতেন না। তাই তো প্রথম দর্শনে পরমহংসের কাছে ঈশ্বরের স্বরূপ জানতে চান। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণীর মূর্তির সামনে বাক্যহারা হয়ে নিজের শত অভাবের কথা বলতে পারেন নি, তিনি অর্থ সম্পদ চাইতে পারেন নি, পরিবর্তে শুদ্ধ জ্ঞান, চৈতন্য ও বৈরাগ্য চেয়েছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ-কায়েত-মুচি-চণ্ডাল ধনী-দরিদ্র এসবের ঊর্ধ্বে ছিলেন, মানবতাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। ভাঙ্গির দেওয়া হূকোর সঙ্গে রাজার দামী চুরুটের কোন পার্থক্য ছিল না। প্রকৃত ভারতবর্ষের চেহারা ঠিক কি তার অন্বেষণে ঘুরে বেড়িয়েছেন গোটা ভারতবর্ষ। কন্যাকুমারীর শিলাখণ্ডে অনাহারে অর্ধাহারে ধ্যানমগ্ন হয়ে খুঁজেছেন ভারতবাসীর উত্থানের পথ, দারিদ্র্যতার নিরসন। সন্ন্যাসী বিবেকানন্দের নিজস্ব কোন দেশ থাকার নয় সব দেশই তার দেশ। তিনি বিশ্ব নাগরিক। সকল মানুষের বিশ্ব নাগরিকতার পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। তাই তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন,আন্তর্জাতিক বিধান, আন্তর্জাতিক সংহতির বাস্তব রূপ চেয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠন তার ভাবনার রূপ পায় ; তিনি চেয়েছিলেন এরকমই একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। ধর্ম নিয়ে পৃথিবী আজ সন্ত্রস্ত। সর্বত্র মৌলবাদীদের আস্ফালন। বিবেকানন্দ স্পষ্ট জানান, ধর্ম তো মানুষের বন্ধু, স্বার্থের আদানপ্রদানে ধর্ম সঙ্কুচিত হয় না, ধর্ম বিবর্তনের পথে এগিয়ে চলে, ধর্ম সমাজের দায় বহন করে। নিরন্ন মানুষের অন্ন জোগায়, অসুস্থ-পীড়িতের সেবা, অনাথ-বিধবা মানুষের অশ্রুমোচনের দায় ধর্মকেই নিতে হয়। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশন সেই কাজই করে চলেছে শতাধিক বৎসর ধরে, এখনও।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

Prem Sadhanar Nayika | প্রেম সাধনার নায়িকা : নানা আঙ্গিকে | New Article 2023

Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল

100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

Nishim Prantare | নিঃসীম প্রান্তরে | শওকত নূর | 2023

স্বামী বিবেকানন্দ | পরিব্রাজক বিবেকানন্দ | পরিব্রাজক বাংলা বই | পরিব্রাজক বাংলা বই পিডিএফ ডাউনলোড | পরিব্রাজক গ্রন্থের রচয়িতা কে | পরিব্রাজক গ্রন্থের রচনাকাল | বিবেকানন্দের বাণী | স্বামী বিবেকানন্দ জন্মদিন | স্বামী বিবেকানন্দ কোন ধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন | স্বামী বিবেকানন্দের ছেলেবেলা | স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী | মহান পরিব্রাজক | পরিব্রাজক সন্ন্যাসী যুবক | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২৩ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | স্বামীজির প্রয়াণ দিবস

Traveler Swami Vivekananda – Read online | Paribrajak (Bengali) Paperback | Paribrajak | Book Fair 2023 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Bengali Article | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Article 2023 | Swami Vivekananda | Traveler Swami Vivekananda in pdf | Vivekananda | swami vivekananda on traveling | swami vivekananda story | swami vivekananda wife | why swami vivekananda is famous | Vivekananda’s journey | Swami Vivekananda the great traveler on a mission | Swami Vivekananda’s travels in India | Which country Vivekananda travels? | Why did Vivekananda travel to many countries? | Traveler Swami Vivekananda Essay | What is the wandering monk Vivekananda? | What was the journey of Vivekananda? | Who is the owner of Vivekananda travels? | Why did Vivekananda go to USA? | Why did Vivekananda died so early? | Where did Vivekananda died? | How many times Vivekananda visited America? | Was Vivekananda a Yogi? | Is Vivekananda a legend? | How did Vivekananda meditate? | Who sent Vivekananda to America? | Read Traveler Swami Vivekananda | How many languages did Vivekananda know? | What is Vivekananda famous for? | Why did Vivekananda go to West? | When did Vivekananda go to America? | Who wrote Parivrajak? | Did Gandhi ever met Vivekananda? | What did Vivekananda fight for? | What religion is Swami? | Which disease killed Vivekananda? | What disease did Vivekananda died? | What disease Vivekananda had? | | Shabdodweep Founder | Traveler Swami Vivekananda | Article – Traveler Swami Vivekananda | Traveler Swami Vivekananda in English | Pdf – Traveler Swami Vivekananda | Trending article – Traveler Swami Vivekananda | Best article – Traveler Swami Vivekananda | Traveler Swami Vivekananda in Article Library | Traveler Swami Vivekananda in Article Archive

1 thought on “Traveler Swami Vivekananda | পরিব্রাজক বিবেকানন্দ | 2023”

Leave a Comment