Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল

Sharing Is Caring:
Pralambasura badha besha of Jagannath

Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ

ত্রেতাযুগে জগতের নাথ নারায়ণ রামচন্দ্র রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর লীলাবর্ধনে জন্ম নিয়েছিলেন অনন্তনাগ লক্ষ্মণ রূপে। অনন্তনাগ নারায়ণের নিত্যসেবক। ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র তাঁর জীবনে অনেক এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে শেষাবধি রামচন্দ্র কষ্টে দুঃখে দীর্ণ হয়েছিলেন। রামচন্দ্রের জীবনের সর্বাবস্থায় লক্ষ্মণ তাঁর সহযোগী হয়েছিলেন। রামচন্দ্রের কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত ঠিক মনের মতো না হলেও লক্ষ্মণ রামচন্দ্রের কোনো কাজের বিরোধিতা করেননি। ভাতৃ-আজ্ঞাকে তিনি চিরকাল মাথায় বহন করেছেন। ত্রেতাযুগে লীলাবসানের পর অনন্তাবতার লক্ষ্মণ বৈকুণ্ঠে এসে নারায়ণের কাছে অভিযোগ করেন, ত্রেতাযুগে অনন্তনাগ রামচন্দ্রের অনুজ লক্ষ্মণ রূপে জন্মগ্রহণ করে চিরকাল রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ ছিলেন। অনুজ হওয়ার জন্য রামচন্দ্রের কোনো কাজ রামচন্দ্রেরই ক্ষতিসাধক হচ্ছে বুঝেও লক্ষ্মণকে চুপ থাকতে হয়েছে। তাই অনন্তনাগ বৈকুণ্ঠে নারায়ণকে সশক্তিক দেখে অনুরোধ করেন, আগামী অবতারে তিনি নারায়ণের অনুজ হয়ে নয়, বরং অগ্রজ হয়ে জন্ম নিতে চান। যাতে প্রয়োজনে লোকাচার মেনে নিজের শাসনে তিনি নারায়ণকে সঙ্কট থেকে আগলে রাখতে পারেন। অনন্তনাগের মনের ভাব বুঝতে পেরে নারায়ণ তাতে সম্মতি দেন। দ্বাপর যুগে জগন্নাথ নারায়ণ কংসের অত্যাচার থেকে ভূদেবীকে রক্ষা করতে ধরাধামে কৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হন। কৃষ্ণের জন্মের কিছুকাল আগে তাঁর অগ্রজ বলরাম রূপে আবির্ভূত হন অনন্তনাগ। বলরাম জন্মগ্রহণ করেন বৃন্দাবনের নন্দরাজগৃহে মাতা রোহিনী দেবীর গর্ভে ও কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন মধুরা নগরীতে রাজা কংসের কারাগারে মাতা দেবকীর গর্ভে। অষ্টমীর গভীর রাত্রে কৃষ্ণের জন্মের পর দৈবের সহায়তায় যাদবরাজ বসুদেব নিজের সন্তানকে তাঁর বিশ্বাসভাজন মিত্র নন্দরাজের গৃহে সুরক্ষিত রাখার বন্দোবস্ত করে মথুরায় ফিরে আসেন। কৃষ্ণ-বলরামের লীলাবিলাসে বৃন্দাবনধাম হয়ে ওঠে দ্বাপরের বৈকুণ্ঠপুর। দ্বাপর যুগে জগন্নাথ ও বলভদ্র তাঁদের বাল্যলীলায় সমগ্র বৃন্দাবনের ভূমি মাতিয়ে তুলেছিলেন। জগন্নাথ-কৃষ্ণ ও অনন্ত-বলরামের বৃন্দাবনলীলায় বৈষ্ণবীয় পঞ্চরসের প্রতিটি পর্বেরই নিদর্শন উন্মোচিত হয়েছে।

মথুরার রাজা কংস দৈববাণী শুনেছিলেন তার ভগিনী দেবকীর গর্ভজাত অষ্টম সন্তান তার বিনাশ করবে। দেবকীর গর্ভজাত অষ্টম সন্তান কংসের বিনাশ করবে জেনেও অত্যাচারী কংস দেবকীর পরপর ছয়টি সন্তানকে জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করে। দেবকীর সপ্তম সন্তান তাঁর গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে দেবকীর গর্ভে স্বয়ং ভগবান জন্ম গ্রহণ করেন। বসুদেব তাঁদের অষ্টম সন্তানকে রক্ষা করতে সমর্থ হলেও দেবকী দীর্ঘদিন সেই সংবাদ জানতে পারেননি। অবশেষে দেবকীর অষ্টম সন্তান কৃষ্ণের মহিমার কথা বৃন্দাবন ছাপিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে মথুরায় কংস ভীত হয়ে ওঠেন। প্রাণভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত কংস দৈববাণীর কথা ভুলে যেতে পারেননি। তিনি শিশু কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তার অনুগামী অসুর ও রাক্ষসদের একে একে বৃন্দাবনে কৃষ্ণ ও বলরামকে হত্যার জন্য পাঠাতে থাকেন। কিন্তু যিনি পূর্ণব্রহ্ম জগন্নাথের বিনাশ তিনি না চাইলে আর কে ঘটাবে! বাল্যাবস্থা থেকেই কৃষ্ণ ও বলরাম কংসের প্রেরিত সমস্ত দুষ্টজনকে অবলীলায় সংহারে সমর্থ হন।
মথুরারাজ কংসের আজ্ঞাবহ হয়ে প্রতাপশালী বহুরূপধর অসুর প্রলম্ব কংসের কালরূপ কৃষ্ণের সন্ধানে যমুনার তীরবর্তী বৃন্দাবনে গিয়েছিলেন। প্রলম্বাসুর কৃষ্ণকে চিনত না, আগে সে কোনোদিন কৃষ্ণকে দেখেওনি। বৃন্দাবনে গিয়ে প্রলম্বাসুর নিজের বিকট রূপ মায়ায় আবৃত করে একজন শিশুর রূপ ধারণ করে। প্রলম্বাসুরের ইচ্ছা ছিল বন্ধুর বেশে কৃষ্ণের সঙ্গে মিশে কৃষ্ণের বিনাশ সাধন করে তার প্রভু কংসের সাহায্য করা। মায়ায় শিশুর ছদ্মবেশে প্রলম্বাসুর অনায়াসে গোপবালক দলের মধ্যে মিশে যেতে সমর্থ হন। শিশুরা সরলমতি তারা কেউই বুঝতে পারেনি এই নব্যাগত শিশুটি তাদের মধ্যে কারও একজনের ক্ষতিসাধন করতে এসেছে।

বৃন্দাবনের মূলধন গাভীদের তৃণভূমিতে চড়তে দিয়ে গোপবালকগণ ও কৃষ্ণ-বলরাম নিজেদের নিত্যনতুন খেলায় মেতে উঠলেন। শিশুর ছদ্মবেশে আসা প্রলম্ব অসুর এক নতুন খেলার পরামর্শ দেয়। বালকেরা দুদিকে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলবে। খেলার শেষে যে দল হারবে সেই দল অন্য দলকে কাঁধে করে এক প্রান্ত অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বহন করবে। এই খেলার পরামর্শে সকলেই রাজি হয়। কিন্তু দুইটি দলের মধ্যে যে দলপতি দরকার। কৃষ্ণ ও বলরাম দুই জনে যে দলে থাকবে সেই দলকে হারায় কার সাধ্যি! অতএব কৃষ্ণ ও বলরাম দুই দলের দলপতি হলেন। খেলা হলো সমানে সমানে। এই খেলায় কৃষ্ণের দলকে হারিয়ে জয়ী হলো বলরামের দল। বলরামের দলে হৈ হৈ করে আনন্দ হলো। শর্ত মতো কৃষ্ণের দলের শিশুরা বলরামের দলের শিশুদের কাঁধে তুলে অন্য প্রান্তের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করল‌। এই সুযোগে শিশুর ছদ্মবেশী প্রলম্বাসুর বলরামকে কাঁধে তুলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে দিল। প্রলম্বাসুর বলরামকে কৃষ্ণ ভেবে ভুল করেছিল। প্রলম্বাসুর বলরামকে কাঁধে নিয়ে যত এগায় ততই শিশু বলরামের ভার বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে বলরাম স্বয়ং বিশ্বম্ভর ভগবানের অংশ তাঁর ভার বহন করা সামান্য কথা নাকি! যথারীতি শিশুর ছদ্মবেশে থাকা প্রলম্বাসুর দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। একপ্রকার বাধ্য হয়ে শেষে প্রলম্বাসুর নিজের আসল বিকট মূর্তি ধারণ করল। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হতচকিত হয়ে গেল সমস্ত গোপবালক। ভয়ে তারা অন্যত্র গমন করল। এই সুযোগে কৃষ্ণ ও বলরাম নিজের আত্মশক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে প্রলম্বাসুরকে সংযত করলেন। বলরাম ভীষণ আঘাতে আঘাতে প্রলম্বাসুরকে মুক্তি দানে ধন্য করলেন। প্রলম্বাসুর বলরামের হাতে মৃত্যুলাভ করে বিষ্ণুলোকে গমন করল।

শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে প্রলম্বাসুর বধ বেশে (Pralambasura badha besha) সুসজ্জিত হন। এই বেশে মূলত বলভদ্রদেবের পোশাকেই বৈচিত্র্য বেশি থাকে। জগন্নাথ ও সুভদ্রা আষাঢ়ের রথযাত্রা পরবর্তী স্বর্ণ বেশ বা সোনা বেশের (সুনা বেশ বা Suna besh) অনুরূপ সজ্জায় সজ্জিত হন। প্রলম্বাসুর বধ বেশ (Pralambasura badha besha) শৃঙ্গারে জগন্নাথদেব অজস্র সোনার অলংকারে সজ্জিত হন। জগন্নাথ বিগ্রহে দুটি হাত সংযুক্ত করা হয়। জগন্নাথের দুই হাতের মধ্যে দক্ষিণ হাতে সুদর্শন চক্র ও বাম হাতে পাঞ্চজন্য শঙ্খ শোভা পায়। এই বেশে জগন্নাথের দুই পা দেখা যায়। দেখে মনে হয় জগন্নাথ রত্নবেদীতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই বেশের সময়ে জগন্নাথকে মূলত পীতাম্বরে সাজানো হয়। জগন্নাথের দুই পাশে ভূদেবী ও শ্রীদেবী থাকেন। সুভদ্রা দেবীর পোশাকে বৈচিত্র্য দেখা যায় না। সোনা বেশের মতো অজস্র অলংকারেই মূলত এই বেশে সুভদ্রা দেবীর শৃঙ্গার হয়। সুভদ্রা দেবী রক্তাম্বরে সাজেন। প্রলম্বাসুর বধ বেশ (Pralambasura badha besha) শৃঙ্গারে সবচেয়ে বৈচিত্র্য দেখা যায় বলরাম বিগ্রহে। বলভদ্রদেবের ঠিক সামনে দুই হাত দুপাশে প্রসারিত সশস্ত্র প্রলম্বাসুরকে দেখা যায়। প্রায় চার ফুট উচ্চতার কাঠের তৈরি সবুজ রঙের ভীষণ দর্শন প্রলম্বাসুরের কাঁধ বেষ্টিত অবস্থায় বলরামের দুই পা দেখা যায়। বলরাম বিগ্রহেও সংযোজন করা হয় দুটি হাত। বলরাম তাঁর দুই হাতের মধ্যে দক্ষিণ হাতে মুষল ও বাম হাতে হল শোভিত হয়। প্রলম্বাসুর বধ বেশ (Pralambasura badha besha) শৃঙ্গারের সময়ে বলরামকে নীলাম্বরে সজ্জিত করা হয়। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে প্রলম্বাসুর বধ বেশ (Pralambasura badha besha) শৃঙ্গার অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথের মধ্যাহ্ন ধূপা (মধ্যাহ্নকালীন ভোগরাগ) অনুষ্ঠানের পর। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহগুলি শোলা, রঙিন কাগজ, চকচকে জরি ও অজস্র ফুলের সাজে সাজানো হয়। সমগ্র সজ্জা সাজাতে প্রায় চার ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

জগন্নাথ ও বলভদ্র ভগবানের প্রলম্বাসুর বধ বেশ শৃঙ্গারের মধ্যে দিয়ে বার্তা পাওয়া যায়, ভগবানকে আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই পাই। প্রলম্বাসুর জগন্নাথ-বলরামের সঙ্গে যতক্ষণ সখ্যভাবে আনন্দ করেছিল, ততক্ষণ ভগবানও তার সঙ্গে সখ্যভাব বজায় রেখেছেন। কিন্তু যখনই প্রলম্বাসুর বৈরীভাবে প্রভুর কৃপাদৃষ্টি থেকে সরে যেতে ইচ্ছুক হলো তখন বলভদ্রদেবের রোষানলে তার মৃত্যু নেমে এলো। জগন্নাথ কল্পতরু। তাঁর কাছে যে যে-ভাব নিয়ে আসে সে সে-ভাবেই প্রভুকে পায়। জগন্নাথকে প্রাণে মনে ভালবাসলে জগন্নাথ তাঁর ভক্তের জন্য ভালোবাসার দুইহাত বাড়িয়ে দেন। ভক্তবিলাসী জগন্নাথ জগতের নাথ হয়েও বিশুদ্ধ ভক্তের নিষ্কাম বিশুদ্ধ ভালবাসার কাঙাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

অভিজিৎ পাল | Avijit Pal

Aloukik Pendrive | অলৌকিক পেনড্রাইভ | New Bengali Story 2023

Parijayi 2023 | New Bengali Story | পরিযায়ী | জয়নাল আবেদিন

Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল

Shree Jagannath Bijay Kabya | ‘শ্রীজগন্নাথবিজয়’ কাব্য প্রসঙ্গে | 2023

Pralambasura badha besha of Jagannath | Pralambasura badha besha of Jagannath pdf download | Pralambasura badha besha of Jagannath article | new article – Pralambasura badha besha of Jagannath | trending article – Pralambasura badha besha of Jagannath | Pralambasura badha besha of Jagannath article in pdf | bengali article – Pralambasura badha besha of Jagannath | Pralambasura badha besha of Jagannath article journal | Pralambasura badha besha of Jagannath research paper | Pralambasura badha besha of Jagannath – new article | read article – Pralambasura badha besha of Jagannath | Time Table – Pralambasura badha besha of Jagannath | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Article | Shabdodweep Writer

Leave a Comment