Famous Poetry in Bengali – Ashish Hajra
বিশ্বায়ন চলছে – আশীষ হাজরা
বোবা পাখি গান গায়
ভাঙ্গা বাঁশি সুর তুলে
অযোগ্য অপদার্থ প্রেমে পড়ে
টাকার বিছানায় রাত কাটায়
ক্ষমতার লোভ অর্থের লোভ
শুধুমাত্র বাঁচবার লোভ
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে,
নব বিশ্বায়নের বাজনা বাজে
অভুক্ত নিরন্নর নাই কোন ক্ষোভ
বস্ত্রহীন রাত চলে যায়
ফুটপাত পর্ণ কুটির বারান্দায়।
এ রাত্রির একদিন ভোর হবে
দুঃস্বপ্নের আঁধার কেটে যাবে
জনতার শক্তি কোনদিন
আনবে ছিনিয়ে নয়া দিন।
ধারা – আশীষ হাজরা
দেখ না চেয়ে কেমন ধারা
জ্বলছে লোকে অভাব দুখে
দেখতে শুধু মানুষ পারা
ভাত জুটে না দিন কাটে না
নেই তো হেথা কাজের কথা
বালাই ষাট মানছি ঘাট
শরম কথা জাগছে ব্যথা
কেমন চলে রাজ্যের পাট
কি অনাচার শুধু ধিক্কার
দেশটা জুড়ে মানুষ পুড়ে
রাজনীতির বিষ পাথরে
কাঁদে ব্যথায় যাবে কোথায়।
আবার কভু দাঁড়াবে ঘুরে
জিতবে তারা মাটির পরে
নতুন দেশ গড়বে সবে
দুঃখ বেদন রাখবে দূরে।।
না – আশীষ হাজরা
তুমি চাইলে আমি সাগর
হতে পারি
তুমি চাইলে আমি নদী
হতে পারি
তুমি চাইলে গভীর বনে
রাত জাগতে পারি
তুমি চাইলে পাহাড় চূড়ে
বাস করি
তুমি চাইলে আমি বাতাসে
ভাসতে পারি
তুমি চাইলে আকাশ ছুঁয়ে
গান করতে পারি,
কিন্তু তুমি চাইলেও দাসত্ব
নিতে পারিনা।
জাতি ধর্ম – আশীষ হাজরা
ক্ষুধার কোন জাত নেই
বানভাসির ধর্ম নেই
নির্যাতিত মানুষের
কোন রঙ নেই,
যুদ্ধের কোন দেশ নেই
রক্তের কোন ধর্ম নেই
মালিকের কোন জাত নেই
শ্রমিকের শুধু ভাত নেই,
শোষকের কোন ধর্ম নেই
শোষিতের কোন জাত নেই
অত্যাচারীর কোন ধর্ম নেই
নিপীড়িতের কোন জাত নেই
মানুষের কোন জাত নেই
মানবধর্ম ছাড়া কোন ধর্ম নেই।।
নবজন্ম – আশীষ হাজরা
হয়ত নতুন কিছু
জন্ম নেবে
এই দ্রোহ কালে
উঠেছে বোল মত্ত মাদলে
শকুনি গৃধিনী উড়ে
নীলাকাশে
অঙ্গের বসন
পুড়ে যায় বিপন্ন বাতাসে,
শত কণ্ঠ গর্জে উঠে
ঢাক ঢোল
করতাল বাজে
জনতা সেজেছে রণসাজে
বিদ্রোহী জনতার
অগ্নুৎপাতে
নবজন্ম হবে
নিভন্ত চিতায় স্বাক্ষর রবে ।
আবার হাসবে সবে
মুক্ত করে
সমাজের পাপ
অপরাধী পাবে নাকো মাফ।।
জাগাও – আশীষ হাজরা
ঘুমায়ো না কবি
দিগন্তে ঝড় উঠেছে
আকাশ চেয়েছে কালো মেঘে
এখনি বৃষ্টি নামবে
ধরিত্রী ভিজবে,
তোমার কলম তুলে নাও
লিখ ঝড়ের কবিতা
লিখ এক দুরন্ত মেঘের কবিতা,
পৃথিবীর কোণে কোণে
জাগিয়ে তোলো
সেই তাদের
যে মানুষ এখনো উদাস
বিপদের বার্তা জানাও
তাদের আগাম সাবধান কর
ঝড় আসছে
বৃষ্টিটা রক্ত হয়ে ঝরবে।।
মকর পরব – আশীষ হাজরা
নতুন ধানের গড়গড়্যা পিঠা
খেজুর গুড়ের বাস
তোর সাথে সই দেখা হলেই
মিটবে মনের আশ
মরদ আমার মাদল নিবে
নাচবো যত সই মিলে
মকর দিনে টুসুর সঙ্গে
খেলবো রে কাঁসাই জলে,
পরের ঘরে সমবছরই
আছি তো সই সব ভুলে
এই তিনদিন মনের সুখে
গাইবো রে গান বুক ভরে।
ফেটি বাঁধা – আশীষ হাজরা
সবাই ছুটছে
রাজা উজির মন্ত্রী সান্ত্রী
আম জনতা কে নেই
ছোট বড় মেজ সেজ সবাই ছুটছে,
কেউ টাকার বস্তা নিয়ে
কেউ ঘটি বাটি বাস্তু জমির
শেষ সম্বল নিয়ে
কেউ তো ঠিকানা জানে না
কেবল এলোমেলো দৌড়াচ্ছে,
যার কাছে গিয়ে পৌঁছালো
তার তো কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা
দেখতেই পায় না
শুধু শুনতে জানে আর গুনতে জানে।
অপেক্ষা – আশীষ হাজরা
সুন্দর একটা সোনালী সূর্য দেখার জন্য
আমি সারারাত জেগেছি, রক্তচক্ষু হয়েছি,
নিশ্চিন্ত নিরুপদ্রব একটা নিদ্রার জন্য
সারারাত চোখের জলে ভেসেছি।
শুধু উদ্বেগহীন প্রেমময় শান্তির জন্য
আমি চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছি
একটা স্বস্তি ঝরা অনাবিল ভোরের জন্য
অনেক রাত বিনিদ্র কাটিয়েছি,
শিশুদের স্বর্গীয় হাসির জন্য কতদিন
কত বছর আমি পথ চেয়ে বসে রয়েছি।
মানুষকে মানুষ রূপে দেখার জন্য
কত যুগ আমি অপেক্ষায় আছি।
হুঁশিয়ার – আশীষ হাজরা
কেউ ভাবে পার পাবে
এতদিন যেই ভাবে
ঢেকে যত কেরামতি
চলেছিলো অপরাধী,
এইবার নেই পার
রোষানল জনতার
সীমাহীন দুর্নিবার
অপরাধী হুঁশিয়ার,
কন্যা হারা জনতার
হাঁক উঠে বারবার
ন্যায় দাও দ্রুততার
যেন হয় শেষবার।
দোষ কর বার বার
ক্ষমা নাই এইবার।।
নবজন্ম – আশীষ হাজরা
পথঘাট জনশূন্য
নীরব নিথর
অন্ধকার রাত কাঁদে
পায় না আদর
শেষ খেয়া চলে গেছে
ফিরিবে আবার
সূর্য উঠে ডাক দেবে
ওপারে যাবার
মানুষ চলেছে কোথা
নাই দিক দিশা
নিরালার বালুচরে
কাটায়েছে নিশা,
পাবে যে পথের শেষে
সোনার কিরণ
খুশির পৃথিবী মাঝে
নবীন বরণ
অন্ধকার রাত শেষে
নবজন্ম হবে
নতুন ঊষার আলো
আঁধার ঘোচাবে।।
পথ ভেসে গেল – আশীষ হাজরা
তারা আলো জ্বেলে ছিল
শুক জেগেছিল
অন্ধকার মুছে
রাজপথ আলোকিত হলো,
যত ভয় মনে ছিল
দূর করে দিল
পথ খুঁজে নিল
পথে নেমে সবে -ডাক দিল
অধিকার ছিনে নিল
আলোর মশালে
রাত ভোর হোল
ন্যায় চেয়ে পথ ভরে গেল।
অবরোধ ভেঙ্গে দিল
প্রতিবাদ করে
পথে নেমে এল
রাজপথ লোকে ভেসে গেল।।
বিচার চাই – আশীষ হাজরা
লক্ষ মশাল জ্বলছে ভাই
দেশ বিদেশে উঠছে তাই
বাঁধ মানে না আজ লড়াই
তিলোত্তমার বিচার চাই।
অত্যাচারীর বুক কাঁপিয়ে
চলছে মানুষ দৃপ্ত পায়ে
চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে
বাধার প্রাচীর চূর্ণ করে
রাজপথকে দখল করে
কোন বাধায় যায় না সরে
অন্ধকারের বুকটা চিরে
আলোর মশাল ঊর্ধ্বে ধরে,
তিলোত্তমা জাগিয়ে গেল
তাই লক্ষ কণ্ঠ শক্তি পেল
তার কান্না ঘাম রক্তধারা
পথের মাঝে নামিয়ে দিল।।
ভাল মন্দ – আশীষ হাজরা
বদ্ধ জলে পানসী ভাষাই
মুক্তি ভাবছে এটাই
টবের ফুল গন্ধ ছড়ায়
বাঁধবো কোন দড়ায়,
সাত রাজার মানিক খুঁজে
আমি তেপান্তরে হাঁটি
দেখা না পাই মাঠের মাঝে
আছে কোথায় ঘাঁটি,
আমার মত লক্ষ মানুষ
তারা ছুটছে এলোমেলো
কার কপালে কি সব আছে
ডাকছে আঁধার কালো
ভালো মন্দ ঘুরছে পাশেই
হাতটা বাড়াও ভাই
সঠিকটাকে ধরতে হবে
নইলে তো তুমি নাই।।
পালিয়ে যেও না – আশীষ হাজরা
আর যাই হোক তুমি পালিয়ে যেও না
ঝড়ে তাণ্ডব দীর্ঘস্থায়ী নয়
দাবানল ক্ষণস্থায়ী
বন্যা কখনো কখনো আসে
তাই দেখে তুমি যেন ভীত হয়ে
পালিয়ে যেও না।
ঝড়ের মাঝখানে তোমাকে শক্ত হাতে
হাল ধরে পারাপারি যেতে হবে
বিপদের মাঝখানে
আজ তোমার শক্তি পরীক্ষা
তোমার দুর্বল হওয়া সাজে না
থমকে যেও না।
দুনিয়ার বুকে মানুষ বড় কাঁদছে
অসহায় মানুষের পাশে যাও
নোংরা খেলা বন্ধ কর
আর্ত মানুষ তোমাকে চায়
অন্যায় অত্যাচার দেখে কখনো
দাঁড়িয়ে থেকো না।।
বাঁধভাঙ্গা আবেগ – আশীষ হাজরা
উন্মত্ত আবেগ ভালবাসা নিজ গৃহ
ব্লাউজের টিপকল শার্টের বোতাম
একদিন একসাথে যেন স্বর্ণমৃগ
সেথা ঝড় ওঠে রাত্রি আলোকিত হয়
লক্ষ লক্ষ তৈল দীপ জ্বলে আর নেভে
মলয় বাতাস শুধু মৃদুমন্দ বয়
গনগনে আঁচে পিঠের আসর বসে
চতুর্দিকে কলরব স্তব্ধ হয়ে যায়
ভাপা পিঠে গুলি উঠে ডুবে লোনা রসে
নিলাজ বেহায়া বাঁশী তারস্বরে বাজে
আকাশে বাতাসে মদিনার গন্ধ ভাসে
কোনদিন কিষাণী বৌ নবরূপে সাজে
নীরবতা ভেঙ্গে চুরে আসে একদিন
দুরন্ত মশালের আগুন জ্বলে উঠে
ছারখার হয়ে যায় শ্বাপদের বীণ
মিটিমিটি তারাগুলো করে যে উল্লাস
বাঁধভাঙ্গা বন্যা এসে ভেঙে দেয় ত্রাস
আবার নতুন করে নেয় বুকে শ্বাস।।
সাধনা – আশীষ হাজরা
প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছি
চোখের সামনে নারকীয় হিংসা
এত মানুষের কান্না মেশা
অন্ধকার মাঝে খুঁজে দিশা
আদিম গুহায় ফিরে যাচ্ছি।
জল পরে পাতা নড়ে মানুষ ঘর বাঁধে
দুখের মাঝে সুখকে কত সাধে
যন্ত্রণার কান্নাটাকে চেপে
ভাত খুঁজে পথে পথে ঘুরে
দিনগুলো যায় শুধু কাঁদে।
সেখানে সুখের বাতাসে ঝরে যায় সোনা
শীতল সমীরণে সিক্ত করে
সেথা ভুখ নাই নাই কান্না
দুখের সেখানে যেতে মানা
সেথা শুধু সুখের সাধনা।।
আমি মানবী – আশীষ হাজরা
যতদিন চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা আছে
ততদিন আমি নারীই থাকতে চাই
আমার সগর্ব মহিমা আলোকে
মাথা উঁচু করে
আমি নারী হতে চাই
আমি মানবী হতে চাই,
ভয় আর দাসত্বের শৃঙ্খল বন্ধন
আমার অঙ্গের ভূষণ হবে না
আমি কারো ভয়ে মুখ লুকিয়ে
একা কাঁদবো না
আমি নারীত্বের গৌরবে জ্বলি
আমি সমাজের বুকে পদসঞ্চারে বলি
আমি নারী আমি শুধু নারী
এ ধরণীতে আমি যে মানবী।।
শাস্তি চাই – আশীষ হাজরা
কেউ ভাবে পার পাবে এতদিন যেই ভাবে
খুন করে লুট করে সাধু সেজে দিন যাবে
এইবার নেই পার হয়ে গেছে শতবার
ন্যায় চেয়ে সব পথে আজ নয় ক্ষমা আর
রাত মাঝে নারী নামে ঘুম সব গেছে ছুটে
দেশে দেশে ডাক ছাড়ে ন্যায় চেয়ে মাথা কুটে
দোষী যারা করে পাপ ধরো তার মুণ্ডু মাথা
জেলে ভরে শাস্তি দাও ঠাণ্ডা তবে হবে ব্যথা,
জেগে গেছে দেশবাসী যাবে কোথা হবে ফাঁসি
ধরা পড়ে টানো ঘানি বাঁচাবে না কোন মাসি,
ভাবে ওরা খুব মজা খাবে শুধু খাজা গজা
দেশবাসী বোকা হাঁদা বুঝবেনা বাঁকা সোজা,
এইবার নেই পার দোষী দের দাও সাজা
দাবি উঠে দেশে দেশে সাফ করো দুষ্ট বোঝা।।
কত দিনে – আশীষ হাজরা
কতদিনে কালো রাত
রাত কেটে ভোর হবে
অপরাধী অত্যাচারী
কত দিনের শেষ হবে
কত দিনে দিশা হবে
তিলোত্তমা ন্যায় পাবে
এই দেশে এ মাটিতে
কত দিনে মা বোনেরা
প্রাণ খুলে মন ভরে
মুক্ত বায়ু শ্বাস নেবে
কত দিনে ভয় ছেড়ে
খোলা মনে পথ পাবে
ঘর ছাড়া পাখি সব
কত দিনে নীড় পাবে।।
পর আপন – আশীষ হাজরা
আপন মানুষ রইল দূরে
পরকে রাখছি আপন করে
পথটা রইল পথের মাঝে
চলছি একাই পাগল সাজে
বুঝলাম নাতো আপন পরে
রইলাম পড়ে নদীর পারে
ঘরের ভিতর কি বা বাহার
তিন কুঠরি ঘর যে আমার
জানলা দরজা সবই খোলা
দখিনা বাতাস দেয় যে দোলা
পশুপাখি দল খেলছে এসে
কুলায় ফিরছে দিনের শেষে।
নেশায় পাগল দিশা যে নাই
হেথায় সেথায় ঘুরি সদাই
প্রাণের মানুষ খুঁজে বেড়ায়
দিন গুজরান চলে বৃথায়।
অবশেষে – আশীষ হাজরা
সব কথাগুলো
আমার শেষ হয়নি
তার মাঝেই রাতটা
কখন শেষ হয়ে গেল,
পারে পৌঁছানোর আগেই
নৌকাটা কেমন করে
হঠাৎ ডুবে গেল,
ঝড় বৃষ্টির মাঝে পড়ে
আমি পথ হারিয়ে গেলাম
আমার অব্যক্ত বেদনার
ক্ষতস্থান থেকে
শুধু রক্তই ঝরে যাচ্ছিল
কখন শেষ রক্তবিন্দু
ঝরে পড়েছিল- জানিনা,
অবশেষে একদিন
কেমন শব হয়ে গেলাম।।
নবীন পথে – আশীষ হাজরা
দূরে যেতে গিয়ে আজ মন ফিরে চায়
ছোট সেই মাঠ কোঠা পূব জানালায়
ভোরের শিউলি আর পাখি কলতান
মনে ভাসে ফেলে আসা নিকানো উঠান
লাল মেঠো পথ খানি কত আঁকাবাঁকা
সবুজেতে চারিদিক যেন ছবি আঁকা
শুকনো নদীর চর কেমন উদাস
নিদাঘের খরতাপে বহিছে বাতাস
মনে বাজে সন্ধ্যাদীপ বাজে শঙ্খধ্বনি
আটচালা চন্ডীতলা কত শত গুণী,
রাত্রি নামে পাখিদল কলরব শেষে
কুলায় ফিরে গেছে ক্লান্ত অবশেষে,
সেদিন হারিয়ে গেছে ইঁট কাঠ মাঝে
জীবন গড়িয়ে চলে নব নব সাজে
আসিয়াছে নব রূপে নব দিনগুলি
বৃথাই খুঁজিয়া ফিরি পুরাতন গলি।।
জিজ্ঞাসা – আশীষ হাজরা
আমি সুন্দরকে প্রশ্ন করেছিলাম
তুমি এত সুন্দর কেন
বলেছিল অসুন্দরের মাঝে আছি বলে,
আমি ভালো কে প্রশ্ন করেছিলাম
তুমি এত ভালো কেন
উত্তর এসেছিল মন্দের বুকে আছি বলে
আমি সত্যকে জিজ্ঞেস করেছিলাম
তুমি চিরসত্য কেন
জবাব পেয়েছিলাম মিথ্যার বিপরীতে আছি বলে আমি সংগ্রামকে প্রশ্ন করেছিলাম
তুমি এত সংগ্রামী কেন
উত্তর পেয়েছিলাম পরাজয়ের বিরুদ্ধে লড়ছি বলে
আমি জীবনকে প্রশ্ন করেছিলাম
তুমি এত সুন্দর কেন
বলেছিল মরণের এপারে দাঁড়িয়ে আছি বলে।।
আমি আছি – আশীষ হাজরা
নদী আছে কিন্তু
আমি নদীর কাছে নেই
বন আছে কিন্তু
আমি বনের থেকে দূরে
পাহাড় তো আছে
আমি পাহাড়ে উঠতে জানি না
আকাশটা আছে
আমি আকাশে ভাসতে পারি না
বাতাস আছে তো
এ বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
মাটি তো আছে
যে মাটি দিবারাত্র ধর্ষিতা হচ্ছে
জল আছে কিন্তু
প্রতিদিন তাকে বিষাক্ত হতে হচ্ছে,
মানুষেরা আছে
আমি মানুষকে বুঝতে পারি না
তবুও এখনো সেই
ওদের মধ্যে আমিও আছি।।
ফাঁকি – আশীষ হাজরা
স্বাধীন করার স্বপ্ন বুকে
শহীদ হলো মরণ সুখে
এখন আমি স্বাধীন ভাই
স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই,
রাষ্ট্রনীতির কঠিন জালে
দেশটা যে যায় রসাতলে।
লুটেরা দল লুটছে সুখে
গরীব মরে শুকনো মুখে
বেকার ঘুরে পথের মাঝে
বুকের মাঝে পাষাণ বাজে
কোটি মানুষ পায় না খেতে
শিশুর দল শ্রমের পথে
ধর্ষিতা বোন মুখটি ডাকে
সাতটা দশক গেল ফাঁকে।
স্বপ্ন – আশীষ হাজরা
আমারও স্বপ্ন দেখতে মন চায়
এক মুঠো সাদা গরম ভাতের
বুকটা ভরা গাঢ় ভালোবাসার।
আমারও মনে এক আশা জাগায়
এক নির্মল চিন্তা মুক্ত জীবন
ভয় ভীতি আতঙ্ক মুক্ত যাপন।
চিন্তার জগতে শুধু টাল খায়
দুশ্চিন্তা থেকে বের হবার পথ
সংশয় থেকে মুক্ত হবার মত,
আমার ভাবনায় তাল মেলায়
একটা সুন্দর সোনালী সকাল
প্রীতির গাঢ় বন্ধন আশায়
আশায় আশায় দিনগুলি যায়
এক মুঠো ভাত মুক্ত ভালোবাসা
এক বুক প্রেম ছোট্ট এক বাসা
শুদ্ধ রাত এক নিরুদ্বিগ্ন ঘুম।
এলো না – আশীষ হাজরা
দিয়েছিলেন পিঁড়ি একখান বাড়িয়ে
বলেছিলাম- বসো, বসেনি,
জল চৌকি ঝেড়ে মুছে
পেতে দিয়েছিলাম- বসেনি
আরাম চেয়ার পেতে বলেছিলাম-
এখানে বসো তবু বসেনি
মখমলের চাদর পেতে
বলেছিলাম – বসো, সে বসেনি
দুরন্ত ঘূর্ণির মত দুরে দুরে
এপাড়া ওপাড়ায় ঘুরে মরে
ঘরের ভেতর কোনদিন এলো না
আমার ভালোবাসা কেবল
প্রবল শীত গ্রীষ্ম বর্ষায়
বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো।।
এ পৃথিবী – আশীষ হাজরা
এ পৃথিবীটা বাসি হবে
কুয়াশা চাদর ঘেরা ভোর
আর আসবে না
তারা ভরা রাত
সোনালী সকাল দেখার জন্য
কেউ থাকবে না
দিগন্তব্যাপী চরম এক
শূন্যতা নেমে আসবে,
মানুষের এত হাসি কান্না
এত প্রেম প্রীতি ভালোবাসা
লোভ হিংসা এত ব্যবধান
সব শেষ হয়ে যাবে,
বাসি ভাতের মত একদিন
দূর করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে
পড়ে রবে নির্জীব নিথর
নিভন্ত চিতাভষ্ম মত।
শেষ স্টেশন – আশীষ হাজরা
ঐ আসছে পৃথিবী শেষ স্টেশন,
ওখানে বন জঙ্গল নেই
নদী-নালায় জল নেই
পশুপাখি শূন্য
শুধু কীটপতঙ্গ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে
ধূলিকণা আর ধোঁয়ায়
কিছুই দেখা যায় না
মাটির রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।
দু একটা মানুষ এখনো আছে
জীর্ণ শীর্ণ কঙ্কাল সার
খোল করতাল নিয়ে
আকাশযানের প্রতীক্ষায়।।
নবজাগরণ – আশীষ হাজরা
আধপোড়া শবগুলো হাঁটছে
গলির মোড়ে বড় রাস্তায়
সার বেঁধে দাঁত বার করে হাসছে।
আসমুদ্র হিমাচল শোণিত প্লাবনে
ভেসে যাচ্ছে,
কুজ্ঝটিকা বাঁধ ভেঙে তেড়ে ফুঁড়ে
ঐ নেমে আসছে
নটরাজ স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ভেদ করে
প্রলয় নৃত্যে মেতেছে।
এ সময় ওরা তোমাকেই খুঁজে মরছে
জীবন মৃত্যুর মহা মিছিলের এক প্রান্তে
তোমাকে আশা করছে
যেখানে মৃতপ্রায় অর্ধ দগ্ধ মানুষগুলো
ঝাণ্ডা হাতে উঠে দাঁড়িয়েছে।।
জয়ের মন্ত্র – আশীষ হাজরা
আমার ভয় লাগে
লাল নীল সবুজ হরেক রঙের
বাতি গুলো দেখে -আমার ভয় লাগে
পেছন থেকে কে কখন আঙ্গুল নাড়বে
কোনটা কখন জ্বলে উঠবে
আমার সাথে দেশবাসীও চমকে উঠবে
আমার ভীষণ ভয় লাগে।
সর্বনাশা কোন আলোটা
কখন জ্বলে উঠবে তার দাপটে
আমার সাজানো সংসার
ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে,
কখন প্রতিবেশীর আর্তনাদে বাতাস
ভারী হয়ে উঠবে
আমার ভয় লাগে।
তাই তো ভয় কাটানোর মন্ত্রটা
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তোমাদের মাঝে
তোমরা যারা ভয়টাকে জয় করেছো।।
তবুও আনন্দ – আশীষ হাজরা
দুঃখ মনস্তাপ আর হাহাকারে
ভরা এই পৃথিবী
মানুষে মানুষে সংঘর্ষ অবিরাম
তার মাঝে আসে প্রেম ভালোবাসা
জন্ম হয় নবজাতকের
ভরে ওঠে সুখ- জেগে ওঠে আনন্দ ধ্বনি
ব্যথার কঠিন স্রোতে গেয়ে ওঠে
জীবনের গান।
নব কলেবরে নতুনের আগমনে সেজে ওঠে
নব সাজে ধরাতল
অন্ধকার শেষে যেন নবীন প্রভাত।
আসে মৃত্যু আসে দুঃখ
বেদনার কষাঘাতে জর্জরিত তনুমন
তারি মাঝে বেজে উঠে খুশির ক্রন্দন
তৃপ্ত হিয়া খানি
মানুষের মাঝে শুনি আনন্দ বর্ষণ।।
বিজ্ঞাপন – আশীষ হাজরা
বিজ্ঞাপনেই হার মেনেছে
মনো নদীর ধারা
পারের রেখা যায় না দেখা
বিজ্ঞাপনে সারা
বিকিকিনির হাট বসেছে
পশরা তার নাই
বিজ্ঞাপনেই মুখ ঢেকেছে
আসল দেখা নাই,
পথঘাটেতে ঝলসে উঠে
রাজা রানীর মুখ
আসল গেছে পিছন পানে
নকল দেখেই সুখ।
বিজ্ঞাপনে ঠিক করছে
লোক জনের চাওয়া
পয়সা দিয়ে লোক রেখেছে
বিজ্ঞাপন ওয়ালা।।
আমি দ্রৌপদী – আশীষ হাজরা
আমি দ্রৌপদী চিরন্তনী
অযোনি সম্ভবা যাজ্ঞসেনী
সবচেয়ে আলোচিত নারী
সবে জানে পঞ্চ স্বামী মোর
যুগে যুগে তবু আমি সতী,
প্রকাশ্য সবার মাঝে আমি
হয়েছি যে চরম লাঞ্ছিতা
ক্লীব স্বামীগণ স্তব্ধ সব
কৃষ্ণ ছাড়া নাহি সখা কেউ
তাই আমি ধ্বংসে মেতে উঠি
আমি ধ্বংস করি কুরুকুলে
পাণ্ডবেরে করেছি নিঃশেষ
মহাভারতের মহাযুদ্ধে
আমি বিজয়িনী নারী।।
যাচ্ছে তাই সুখ – আশীষ হাজরা
আনন্দ সুখ ভালোবাসা
গায়ের জোর
ধস্তাধস্তির পাগলামি
ফাটা ঠোঁট -কালো কাজল
শুধু লিপস্টিক
বাঘ নখে কেবল আঁচড়ানো
চিরুনিটা সিঙের
সিলিং ফ্যানের ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ,
জানালাটা খুলতে
ভিজে কলমির গন্ধ
দুরন্ত ঝড় বৃষ্টির পর
এক ঝাঁক স্নিগ্ধ বাতাস।।
পিছিয়ে যাচ্ছি – আশীষ হাজরা
একটা জঙ্গল নীল জলাভূমি
শিমুল পলাশ ডালে
এক ঝাঁক প্রজাপতি
দোয়েল কোয়েল ফিঙ্গে
কতদিন আগে দেখা কোন কালে।
অনেক এগিয়ে শুধু পিছিয়ে পড়ছি
দুরন্ত গতিতে খাদের কিনারে
আজ শেষ যাত্রী হিসেবে চলেছি ।
উদাম উচ্ছল আবেগে ভেসেছি
কত শত লেখা কথা গানে মেতেছি।
জাহান্নামের সে পথ ধরে
এক পা এক পা করে
কেবল এগিয়ে চলেছি
আসলে পিছিয়ে পড়ছি।।
বাতাস চাই – আশীষ হাজরা
আমি শ্বাস নিতে চাই
বুক ভরে প্রাণ ভরে
মুক্ত বাতাসে নাক ডুবিয়ে
আমরা শ্বাস নিতে চাই ,
কয়েকটা অসভ্য বর্বর তস্কর
আমার আকাশটাকে
প্রতিদিন কেমন নষ্ট করে দিচ্ছে
আমার মুক্ত বাতাসকে
লোভের আগুনে পুড়িয়ে
কেমন ছারখার করে দিচ্ছে,
এখন আমি নিশ্চুপ আছি
বালিতে মুখ গুঁজে নিজের
শেষ বাজনা সবাই মিলে বাজিয়ে
শ্মশানের পথে হাঁটছি।।
বসত – আশীষ হাজরা
মন পবনের নাও ভাসাইলি
কোন সে অচিন পারে
জীবন নদীর জোয়ার ভাটায়
মনটা কেমন করে
এপার ওপার কোন পার মাঝে
বসত ছিল আমার
ঝাপসা দেখায় দুদিক পারেই
ঠিকানা তো নেই আর,
নদীর ভাঙ্গন যখন তখন
একুল ওকুল ভাঙ্গে
বসত আমার কোথায় কেমন
যায় যে নদীর গাঙে।।
নববর্ষের আশা – আশীষ হাজরা
পুরাতন যার চলে স্মৃতির সারণী বেয়ে
নবীনের আবাহনে ধরণী নতুন হয়ে
যত কিছু পাপ তাপ মনেতে রাখি না আর
যা কিছু সুন্দর তার আসুক সে বারবার
নবপত্র দলে দলে সাজাইতে ধরণী রে
প্রখর রৌদ্রের তাপে নবীনে বরণ করে
হাসি গান ভালোবাসা জাগে মনে কত আশা
নতুনের কলস্বনে পাবে সে তো নব ভাষা,
যত কিছু ভুলভাল যত কিছু মনস্তাপ
যাক চলে নদী জলে যত কিছু অভিশাপ
আবার নতুন করে নব বরষের ডাক
দুঃখ জ্বালা কেটে গিয়ে সুখ হোক শান্তি হোক
ধরাকে আবার সবে পত্রপুষ্পে বাঁধো ডোরে
আনন্দের হাসি গানে পৃথিবী উঠুক ভরে। ।
ভিতর বাহির – আশীষ হাজরা
কোন কথা রয় বুকের ভিতর
কোন কথা আসে মুখে
কোন সে কথায় হৃদয় মাতাল
কোন কথা বাজে বুকে
দুঃখ সুখের বাধার দেওয়াল
ভাঙবো কেমন করে,
ভালোবাসা তরে মানুষ কাঙ্গাল
তবু ব্যবধান বাড়ে
একজনে ধরলে অন্যে পালায়
চলেছে যে যার পথে
ধরা ছাড়ার এ ভীষণ জ্বালায়
আজও বাঁচি কোন মতে।
তারে খুঁজে বেড়ায় জনম ভরে
ঠিকানা কোথায় সই
তাই থাকলাম আমি দূরে দূরে
নাগাল পেলাম কই।।
মান অপমান – আশীষ হাজরা
মনটা যে আজ গোঁসা ঘরে
অপমানটাই সার
হাজার ডেকে পায় না সাড়া
মনের ভেতর বার,
কেউবা বলছে বেহায়াটা
কেউবা বলছে বোকা
বলছে বা কেউ হেসে হেসে
তোর ফন্দিটা তো দেখা,
চোর গুন্ডা ধাপ্পাবাজদের
মন্ত্রী নেতা সাজায়
নাই এদের মানের বালাই
এরাই দেশ চালায়।
আমার কথা বলছ কেন
খেয়ে না খেয়ে আছি
আমার আর মান সম্মান
শুধু হাঁড়িটুকু চাচ্ছি।।
সুখ দুঃখ – আশীষ হাজরা
সুখের আশায় বসে আছি
দুখের নদীর পাড়ে
সেই নদীতে বান ডেকেছে
পাড়টা যে নড়বড়ে
কখন থাকে কখন ভাঙ্গে
হিসাব কেই বা জানে
কখন যে গো ঝড় বাদলে
সেথায় আঘাত হানে,
সুখের মাঝে ভূতের বাসা
বাসায় আগুন লাগে
তখন যে সে বাসাটা ছেড়ে
নদীর পাশেই জাগে,
চির দুঃখীর নেই তো জ্বালা
তারার আলোয় আলা
সুখের তরে আকুতি নেই
দুখেই গলার মালা।।
ঘর বসত – আশীষ হাজরা
বাতাস হেসে বলল আমায়
এই কি তোমার ঘর
কেমন করে থাকো হেথায়
নেই কি আপন পর,
নদী কখন ভাঙন আনে
পাড়ের মাটি ভাঙ্গে
তবু দেখো জীবনটা যে
চলে নদীর সঙ্গে,
কেমন তুমি ঘর করেছ
সমস্ত দিক খোলা
দুঃখে সুখে প্রাণ ভরেছো
বাঁচা মরার দোলা
নদীর পাড়ে বসত তোমার
কখন ভাঙ্গে রাখে
উথাল পাতাল জলে জোয়ার
কেমনে ঘর থাকে।।
পার – আশীষ হাজরা
পাশে পড়ে অরূপ রতন
দেখলাম না নয়ন মেলে
দিন যে গেল আঁধার পথে
চোখের আলো গেল নিভে,
রতন আছে রতন মাঝে
আমি রয়েছি পাগল সেজে
পাগল মনের দুয়ারেতে
মনের বেদন শুধু বাজে
রতন খুঁজে রূপ সাগরে
মন চলেছে ডুব সাঁতারে
কোথায় খুঁজে পাব গো তারে,
ঝড় বাদলে অগাধ পানি
সাঁতার তেমন নাহি জানি
পারের আসে একলা বসি
বৃথায় খুঁজি রতন মনি।।
নিরপেক্ষ – আশীষ হাজরা
নিরপেক্ষ লোকটাকে
হন্যে হয়ে খুঁজে মরছি,
যেদিকে তাকাই সবার গায়ে
হয় লাল জামা নয় সবুজ
নয়তো গৈরিক- নয় শুধু সাদা,
জিজ্ঞেস করলে বলবে
আমি সাথেও নেই পাঁচেও নেই
আমি নিরপেক্ষ
আমার কোন পক্ষ নেই
ঠিক কে ঠিক বলি ভুলকে ভুল,
সে তো ভুলে গেছে- ঠিক ভুল
সময়ের সাথে বদলায়।।
ভ্রষ্ট – আশীষ হাজরা
সত্য কথা বলতে তোমার
কেন এত কষ্ট
শুনেছিলাম তুমিই তো নাকি
সত্য বল স্পষ্ট।
মিথ্যে বলে সত্যিকারের
দেশ করেছো নষ্ট
বুঝে গেছে দেশবাসী আজ
তুমি বড় ভ্রষ্ট।
দুর্নীতি আর গুন্ডামিতে
হচ্ছো তুমি তুষ্ট
এখন তোমায় দেখায় যে
ঘোলাটে অস্পষ্ট।।
নজরুল – আশীষ হাজরা
তোমার কথা ভাবলে পরে
দেহ মনটা শিউরে ওঠে
জাত ধর্মের কারবারিরা
তোমার নামে চমকে ওঠে।
এমন করে কজন বলে
কলম খানি উঁচিয়ে ধরে
মৌলবাদীর বুকের পরে
তলোয়ারের মতন করে।
জাতের নামে বজ্জাতি সব
খুললে তুমি মুখোশগুলো
জাত ধর্মের ব্যবসায়ীরা
তোমার কাছে বিকল হলো।।
ধাক্কা – আশীষ হাজরা
সেই কথাটা বলতে এসে
থমকে গেলে কোথায় শেষে
একটু করে ধাক্কা দিলে
পাথর নয় পাহাড় টলে,
একই সাথে ধাক্কা দিবে
সকল বাধা উপড়ে যাবে,
ছোট্ট সোনা কাঠবিড়ালি
সাগর বাঁধে করে মোড়লী
নুড়ি পাথর জুটিয়ে এনে
সাগর বাঁধে প্রাণের টানে,
এমনিভাবে সমাজ চলে
ক্ষুধা অভাব তুলতে হলে
দুনিয়া বদল করতে হবে
মানুষের জোট বাঁধতে হবে।।
সন্দেশখালি – আশীষ হাজরা
সন্দেশখালি যদি তোমাকে নাড়া না দেয়
বুঝতে হবে
তোমার ওই ইন্দ্রিয়টা পচে গেছে।
জেলের মধ্যে মহিলাদের অন্তঃসত্তার ঘটনা
যদি তোমাকে নাড়া না দেয়
বুঝতে হবে
তোমার ওই ইন্দ্রিয়টা পাথর হয়ে গেছে।
নির্যাতিতা মা বোনেদের বুকফাটা কান্না
যদি তোমাকে স্পর্শ না করে- বুঝতে হবে
তোমার ওই অঙ্গটি নষ্ট হয়ে গেছে
চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে
তুমি আর পরিপূর্ণ মানুষে নেই।
মুক্ত কর – আশীষ হাজরা
ফুসফুসটা বাইরে রেখে
ঘরের মধ্যে ঢুকেছিলাম
বাইরে বেরিয়ে দেখি
সেটা ধূলি ঝড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে,
সমস্ত জালিকা বন্ধ হয়ে গেছে,
তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছে
উঠোনে শুধুই আছাড় খাচ্ছি
একটু মুক্ত বাতাস চাই-
দমকা বাতাসে
বদ্ধ জালিকাগুলো পরিষ্কার করতে হবে
কে কোথায় আছো!
একটা প্রবল ঝড় নিয়ে এসো।।
মুক্তি – আশীষ হাজরা
বাঁধন যেদিন মুক্ত হব
সেদিন তোমার ডাকবো না
অন্ধকারে মুখটা ঢেকে
অঝোর ধারায় কাঁদবো না,
আঁধার রাতে ক্ষতস্থানে
প্রলেপ লাগাও বলবো না
আঘাতটা কে সইবো বুকে
তবু ভিক্ষে কারো চাইবো না।
আঁধার কেটে আলোর মাঝে
ভাসবে যখন দেশটা
তখন আমি জাগব জেনো
কাটবে বেদন রেসটা।।
পথ চলা – আশীষ হাজরা
সেদিন যারা আমার সাথে
চললে পথে জ্বালিয়েছিলে আলো
তারা আমার হৃদয় মাঝে
খুলে কপাট মুছিয়ে ছিলে কালো।
অচিন পথে বিজন রাতে
আনলে আমায় আলোর মাঝে
সামনে এসে বললে ডেকে
বেরিয়ে এসো আছো যেমন সাজে।
সেই তো আমার পথচলা
জীবন খুঁজে আলোর পথে নামা
অন্ধকারকে আঘাতে হেনে
চলার পথে নেই তো কোন থামা।।
মানি না – আশীষ হাজরা
তুমি যা বলবে
সেটাই কি সত্যি
তুমি যা করবে
তাই কি ঠিক হবে।
তোমার রাঙা চোখ
আমি যে মানি না
তোমার বাঁজা ধমক
আমি ভয় করি না।
ভুরি ভুরি মিথ্যে বলো
কাজের নেই মানে
কথাবার্তা ছিরি নেই
দেশের লোক জানে।।
মানুষের কাছে এসো – আশীষ হাজরা
যাও না তুমি কোথায় যাবে
আসতে হবে সেই এখানে,
যেখানে যাও আকাশ যাবে
সঙ্গে তোমার বাতাস যাবে
এদের বাদে কোথায় আছে
এমন দেশ ভুবন মাঝে,
এই মাটিতে জন্ম তোমার
শেষের দিনে যাবে আবার,
মানুষ মাঝে বাঁচতে শেখো
তাদের মাঝে স্বপ্ন দেখো
পালিয়ে গিয়ে যায় না বাঁচা
এগিয়ে চলো ভাঙ্গতে খাঁচা।।
সন্ধান – আশীষ হাজরা
যখন একলা আমি
নিজের সঙ্গে কথা বলতে চাই
তখন আধো আলোকে
এক গুহার সন্ধানে বের হই
আদিম মানব কবে
যেখানে বহুবার পা ফেলেছিল
সূর্যও ঢুকতে গিয়ে
পথটা হারিয়ে ফেলেছিল
ফিরে গাছের আড়ালে
ফিক করে হেসে মুখ লুকিয়ে ছিল,
আমার প্রলম্বিত সন্ধান
শেষ হয়নি -খুঁজে চলেছি।।
আলো – আশীষ হাজরা
আগুন লেগেছে
মরা ডালে ঝরা পাতায়
বনের কোলে গোপনে
আঁধারটা আলোয় ভেসে যাচ্ছে ।
চুপচাপ রাত্রি
ঘুম ভেঙে জেগে উঠে দেখি
আগুনের শিখা চারিদিকে
গ্রাস করে সবকিছু ধ্বংস করে রাত্রি ।
এ রাত্রির কবে ভোর হবে
অন্ধকার কেটে অমানিশা শেষে
নতুন আলোর মাঝে ভেসে
ডাক দিয়ে যাবে নব যাত্রী ।।
অমর জাত – আশীষ হাজরা
ওই একটা জাত আছে
প্রতিদিন দলে দলে বাড়ছে
ডালপালা মেলছে
পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়গা
একটু একটু করে দ্রুত তালে
দখল করছে।
এ জাতর মৃত্যু নেই
ধ্বংস নেই,
জাতটা গরিব হা-ভাতের
মান নেই কুল নেই কোন ধর্ম নেই
আছে শুধু অভাব ক্ষুধা
আর বাঁচার জন্য চরম লড়াই।।
গণতন্ত্র – আশীষ হাজরা
চলন্ত গাড়ি
গনগনের রাস্তা
রাস্তার শুয়োরের বাচ্চা
বোমা বন্দুক গুলি
দুম ফাটাস
রক্তের আলপনা,
বিজয়ীর হাসি
দরজা জানালা বন্ধ,
প্রাণ ভয়ে
গণতন্ত্র দৌড়াচ্ছে
টাটা বাই বাই
আবার কখনো দেখা পাই।।
বিশ্বায়ন – আশীষ হাজরা
বিশ্বায়নের আজব বাজনা,
বাজছে আকাশ পাতাল ফুঁড়ে
ঘরে বসে বৃথা চিন্তা ভাবনা
হাহাকার উঠে দুনিয়া জুড়ে ।
কে হলো রাজা কেই বা উজির
ওদের উপর কে করে আশ
বিশ্বায়নের বোমা কেড়ে নেয়
কচি শিশুদের মুখের গ্ৰাস ।
আকাশে বাতাসে বারুদ মাখা
কোথাও নেই মানুষের দেখা,
মরার জন্য গজিয়েছে পাখা
এত ধ্বংসেও হলো না তো শেখা ।।
বাসা – আশীষ হাজরা
খুঁটির দেওয়াল নড়েচড়ে
ছাদ বুঝি ভাই ভেঙে পড়ে,
কেমন আমি ঘর বানাইছি
মাটির দেয়াল দিয়া রে,
বাঁশের খুঁটির ঘুণ ধরেছে
দড়িদড়া সব ছিঁড়ে গেছে
নদীর ওপার ডাক দিয়েছে
পার করাবার লা কোথা রে,
পাগলা বলে আর দেরি নয়
ক্ষ্যাপা বাতাস উত্তরে বয়
দেরে দে খুলে দে পাল তুলে দে
অবকাশে নেই রে সময়।।
আঃ হাঃ – আশীষ হাজরা
কেউ খুঁজে ভালোবাসা
কেউ খুঁজে দেশ
কেউ খুঁজে জাতপাত
কেউ করে দ্বেষ,
কারো পাতে ভাত নাই
খালি পেট সাথ
কারো হাতে কাজ নাই
বসে দিন রাত।
ভোট দিল জনগণ
মনে বড় আশা,
যেই হলো ভোট শেষ
আশা হল ফর্সা ।।
কান্না – আশীষ হাজরা
কাঁদছে শিশু কাঁদছে নারী
দেখো কাঁদে অভাজন
পেটের ভিতর ক্ষুধা নিয়ে
কাঁদছে পাগল মন,
দুনিয়া জুড়ে কান্না দেখে
কান্না গেলাম ভুলে
চোখের জল শুকিয়ে গেল
প্রাণ পাখি যায় চলে,
কেউবা আছে দুয়ার এঁটে
কেউ বা পথের মাঝে
নিরন্ন কেউ কাঁদছে দেখো
কেউ বা সুখের সাজে ।।
অস্থির সময় – আশীষ হাজরা
একটু দাঁড়াতে দাও
টলমল করছে পৃথিবী
ফুলে ফুলে দুলছে হাসছে
জল স্থল আকাশটা
বড্ড অস্থির এই সময়টা ,
এখন উল্কার গতি
অশান্ত গতিময় পৃথিবী
এবার একটু দাঁড়াতে দাও
নইলে পড়ে যাব যে ।
পাগলা টা বলেছিল
একদিন সব ঠিক হবে
দুরন্ত পৃথিবীর শান্ত হবে
নতুন সূর্য হাসবে
মানুষ আবার মানুষ হবে ।।
এখন – আশীষ হাজরা
লক্ষ শিশু পায় না খেতে
ধর্ষিতা বোন মুখটি ঢাকে
গরিব লোকে আঁধার দেখে
শুনবে কথা বলবে কাকে!
কৃষক মরে ঋণের ফাঁদে
বেকার ঘুরে চাকরি বাদে
টাকার জোরে খুনি পালায়
কেমন আইন চলে হেথায়।
এই ধরণীর যতেক জ্বালা
সইছে শুধু গরিব গুলা
ধনীরা সব আয়েশ করে
শোষণ ফাঁদে মানুষ মারে
বদল আনো দুনিয়া জুড়ে
শান্তি সুধায় উঠবে ভরে ।।
ওদের কথা – আশীষ হাজরা
ওরা দেখে বিশ্বাস করে না
ওরা ভাবে ভরসা করে না
ওরা জানে কিচ্ছু বলে না
ক্ষুধা কাতর দিনগুলি যায় জানে কিছুই পাবে না
ওরা শোনে কিছু বোঝে না
ওরা কাঁদে কেন জানে না
ওরা ফুঁসে শক্তি পায় না
এমনি করে দিনগুলি যায় জানে সহজে হবে না
ওরা বোঝে কেউ তো দেবে না
ওরা শেখে দিনটা পাল্টা না
ওরা নামে পথ চেনে না
ওরা বোঝে জোট বেঁধে বাঁচা যায় অন্য কোন পথ না
আশীষ হাজরা | Ashish Hajra
Shesh Belay | শেষবেলায় | মনসুর আলি | Best 2023
Suryamukhi | সূর্যমুখী | শওকত নূর | Best 2023
Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী
Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস
Shabdodweep Web Magazine | Famous Poetry in Bengali | Ashish Hajra
Bengali poetry has long been celebrated for its depth, emotion, and lyrical beauty. From ancient scriptures to modern verses, famous poetry in Bengali has evolved, but its core essence of capturing the human experience remains unchanged. Whether it’s the works of great poets like Rabindranath Tagore or modern voices, Bengali poetry continues to enchant and inspire readers worldwide. In this article, we explore the enduring legacy of famous poetry in Bengali, focusing on Bengali classic poetry and how the digital age is making these gems accessible to readers today. We’ll also introduce you to some exciting works featured on Shabdodweep Web Magazine, including poetry from emerging voices like Ashish Hajra.
The Legacy of Famous Poetry in Bengali
Bengali poetry has a rich tradition, with works that span centuries, embracing a variety of styles, themes, and emotions. The earliest Bengali poetry emerged from religious texts and folk traditions, eventually flourishing in the medieval period with the advent of Bhakti poetry. However, it was in the modern era, with the rise of poets like Rabindranath Tagore, Kazi Nazrul Islam, and Jibanananda Das, that Bengali poetry truly began to shine on the global stage.
These poets are considered the pillars of famous poetry in Bengali, and their works remain an essential part of Bengali literary culture. Tagore’s Gitanjali is perhaps the most well-known work of Bengali poetry worldwide, while Nazrul’s poems of rebellion and liberation resonate deeply even today. Jibanananda Das, known for his melancholic yet beautiful verses, has captivated generations of readers with his unique style.
But famous poetry in Bengali isn’t confined to these giants alone. The modern era has witnessed a resurgence of poetic voices, often addressing contemporary issues with both sensitivity and boldness. Poets like Ashish Hajra, featured on Shabdodweep Web Magazine, continue to explore the depths of human emotions and the world around them through powerful poetry.
The Charm of Bengali Classic Poetry
Bengali classic poetry holds a special place in the hearts of literature lovers. From the beautifully structured works of medieval poets like Chandidas and Michael Madhusudan Dutt to the lyrical sonnets of Rabindranath Tagore, Bengali classic poetry combines cultural depth with aesthetic richness. The themes in these works range from love and longing to political resistance and the search for spiritual truth.
Tagore’s work, in particular, revolutionized Bengali poetry by blending traditional forms with Western influences, resulting in a style that was both universal and deeply rooted in Bengali identity. His Rabindra Sangeet and poetry collections like Sonar Tori and Banalata Sen continue to inspire not only poets but also musicians, filmmakers, and artists alike.
In the same vein, poets like Kazi Nazrul Islam and Jibanananda Das brought unique perspectives to Bengali classic poetry. Nazrul’s powerful revolutionary poems fought against British colonialism and social injustices, while Jibanananda Das, often referred to as the poet of modern Bengal, explored existential themes with simplicity and profound beauty.
Poetry Collection on Shabdodweep Web Magazine
In today’s digital age, platforms like Shabdodweep Web Magazine are preserving and celebrating the tradition of famous poetry in Bengali. This online magazine features a curated poetry collection that brings together both classic and contemporary voices. Here, readers can access a wide variety of Bengali classic poetry alongside modern poems, making it an essential resource for poetry enthusiasts.
Shabdodweep Web Magazine showcases Ashish Hajra’s thought-provoking poems, among others. Known for his evocative and contemplative style, Hajra’s poetry deals with themes such as identity, love, and social issues, making his work particularly resonant in today’s world. His poems stand out for their emotional depth and their ability to connect with readers on a personal level.
The magazine’s poetry collection spans various genres, from romantic and philosophical to social and political. Whether you’re interested in exploring famous poetry in Bengali or discovering new voices, Shabdodweep offers a platform for both seasoned and emerging poets to share their works.
Why You Should Explore Famous Poetry in Bengali
Emotional Depth: Famous poetry in Bengali offers a window into the emotional and intellectual life of Bengali culture. The themes range from personal love and loss to social struggles and philosophical musings.
Cultural Significance: Bengali poetry is deeply intertwined with the history and culture of Bengal. Understanding Bengali classic poetry provides insights into the region’s rich heritage, traditions, and political movements.
Literary Innovation: Bengali poets have consistently pushed the boundaries of language and form. Whether through the lyrical beauty of Tagore or the boldness of Nazrul, Bengali poets have contributed immensely to global literary movements.
Accessibility: Today, thanks to platforms like Shabdodweep Web Magazine, readers can easily access classic and contemporary famous poetry in Bengali. The magazine’s online presence ensures that these poems are just a click away, accessible to readers anywhere in the world.
Connection with Contemporary Voices: Exploring famous poetry in Bengali today also means engaging with fresh, contemporary voices. Poets like Ashish Hajra bring new perspectives to age-old themes, bridging the past with the present.
FAQs About Famous Poetry in Bengali on Shabdodweep Web Magazine
- What is the significance of famous poetry in Bengali?
Famous poetry in Bengali holds immense cultural and historical significance. It reflects the Bengali people’s emotional depth, struggles, and triumphs. From the revolutionary verses of Kazi Nazrul Islam to the soul-stirring lines of Rabindranath Tagore, these poems capture the essence of Bengali identity and thought. - Where can I read famous poetry in Bengali?
You can read a wide range of famous poetry in Bengali on Shabdodweep Web Magazine. The platform offers a curated poetry collection featuring both classic Bengali poets and contemporary voices like Ashish Hajra. - What kind of poetry can I find on Shabdodweep Web Magazine?
Shabdodweep Web Magazine offers a diverse collection of poems, ranging from Bengali classic poetry to modern, experimental works. Whether you’re interested in love, social justice, or philosophical musings, the magazine has something for every reader. - Who is Ashish Hajra, and what are his contributions to Bengali poetry?
Ashish Hajra is a contemporary poet whose works are featured on Shabdodweep Web Magazine. His poetry explores themes of identity, love, and societal issues, offering a modern take on traditional Bengali poetic forms. His poems are known for their emotional depth and intellectual engagement. - Can I download Bengali poetry from Shabdodweep Web Magazine?
Yes, Shabdodweep Web Magazine offers many of its poems in downloadable formats. You can easily access your favourite Bengali poetry collection and save them for later reading.
Conclusion
Famous poetry in Bengali is not just an academic pursuit; it is an emotional and cultural journey. From the classic works of Rabindranath Tagore to the contemporary voices of poets like Ashish Hajra, Bengali poetry continues to inspire and captivate readers worldwide. Platforms like Shabdodweep Web Magazine play a crucial role in preserving this literary heritage while also fostering new voices. Whether you are a fan of Bengali classic poetry or looking to explore new poems, there is no better time to immerse yourself in the world of Bengali literature.
Visit Shabdodweep Web Magazine today and explore a world of timeless poetry that speaks to the soul.
Sabuj Basinda | Follow our youtube channel – Sabuj Basinda Studio