Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস

Sharing Is Caring:

শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্মরণে অথবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা প্রণম্য ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জনসচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে কিছু দিবস পালন করা হয়ে থাকে ‌। তার মধ্যে শিক্ষক দিবস হলো অন্যতম একটি সর্বজন বিদিত বহু নন্দিত এবং বহু বন্দিত উদযাপিত দিবস। শিক্ষক হলেন সমাজের সর্বস্তরে সমাদৃত এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব। সভ্যতার আদি পর্ব থেকে শিক্ষকের গুরুত্ব, শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা সমাজের সর্বক্ষেত্রে অনুভূত হয়। তখন থেকেই শিক্ষক হলেন সমাজের অভিভাবক স্বরূপ।তাঁর‌ই নির্দেশিত পথে সমাজ জীবনের তথা ব্যক্তি জীবনের অভিমুখ নির্ধারিত হতে দেখা যায়।

পূর্ব কথা [Teachers day]

আদিকালের সামাজিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেই আবাসিক গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থার যুগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ছিল নিবিড় ও মধুর সম্পর্ক। পিতা মাতার পর দ্বিতীয় পিতা বা অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকদেরকে মান্য করতেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কাছে শিক্ষক ছিলেন পরম গুরু। গুরুর আশীর্বাদ ও দাক্ষিণ্য ছাড়া জীবনে সাফল্য অধরা থেকে যায়। গুরুর নির্দেশিত পথে অনুগমন করলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হ‌ওয়ার সম্ভাবনা কম। শিক্ষক তথা গুরুর প্রতি ছাত্র তথা শিষ্যের আনুগত্য, ভক্তি, বিশ্বাস ও আত্মনিবেদন ছিল দৃষ্টান্ত মূলক। প্রাচীন ভারতে গুরু গৃহে গুরুর সাহচর্যে বসবাস করে শিক্ষা গ্ৰহণ ছিল তৎকালীন ঐতিহ্য। গুরু শিষ্য তথা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ঐতিহ্যগত পরম্পরা বৈদিক সংস্কৃতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উত্তরাধিকার নির্দেশ করে। প্রাচীন আর্য সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা নিরূপণ করতে, গুরু শিষ্যের পরম্পরাকে সম্মান জানাতে একটি পূর্ণ দিবস উৎসর্গ করা হয়। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় অন্য কোন সম্পর্ক এতটা গুরুত্ব পেত না। গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট করে ‘গুরু পূর্ণিমা’‌ উদযাপন অনুষ্ঠানটি আবহমানকাল ধরে চলে আসছে। গুরু পূর্ণিমা একটি বৈদিক প্রথা, যে প্রথার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষককে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। এই সনাতনী প্রথার মাধ্যমে শিষ্য তাঁর গুরুকে শ্রদ্ধার অঞ্জলি নিবেদন করতেন গুরু প্রণাম মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে:

‘ অখন্ড মন্ডলা কারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তদপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রী গু‌রবে নমঃ ।।
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাজ্ঞন শলকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী ঘুরবে নমঃ ।।’

শিক্ষকের স্বরূপ [Teachers day]

যিনি শিক্ষা দান করেন তিনিই শিক্ষক। শিক্ষা বলতে কেবল প্রথাগত শিক্ষা বা পুঁথিগত শিক্ষা নয়, বৃহৎ অর্থে প্রথা বহির্ভূত জ্ঞান ও কর্মের বাস্তব অভিজ্ঞতা। রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে বলা যায় যে, উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র। শিক্ষকের মধ্যে ছাত্রত্ব বেঁচে না থাকলে ছাত্রেরা তাঁর মনের নাগাল পেতে সমর্থ হয় না। বল্লাল সেন রচিত ‘দানসাগর’ গ্ৰন্থে শিক্ষকের গুণাবলী বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায়।যে শিক্ষক অর্থ প্রকাশের উপযুক্ত বাগধারা ও শব্দ উচ্চারণের সঠিক কলাকৌশল অবলম্বনে শিক্ষণীয় বিষয় বস্তুর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব সমূহ যু‌ক্তি সহকারে প্রকাশে সমর্থ তিনিই গুণের আধার শিবশম্ভু সদৃশ।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা বোধকরি অযৌক্তিক হবে না যে, একজন শিক্ষক যখন শিক্ষা দানে বৃত হবেন, তার পূর্বে তাঁকে জানতে হবে শিক্ষার সংজ্ঞা বলতে কী বোঝায়? জানলে সেই মতো তিনি অগ্ৰসর হতে পারবেন। শিক্ষার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বহু মনীষীর বহু অভিমত প্রচলিত আছে। যেমন, স্বামী বিবেকানন্দের মতে, ‘Education is the manifestation of the perfection already in man.’ শিক্ষার সংজ্ঞায় উপনিষদে বলা হয়েছে যে, শিক্ষা মানুষকে সংস্কার মুক্ত করে তোলে। ঋকবেদের মতে, শিক্ষা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মত্যাগী করে তোলে। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের মতে,’ তাকেই বলি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা,যা কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, যা বিশ্ব সত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।’ ফ্রয়েবেলের মতে, ‘শিক্ষা হলো অন্তর্নিহিত সুপ্ত সম্ভাবনার উন্মেষ সাধন ।’

Teachers Day

শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। The teacher is a maker of man. শিক্ষার্থীর মধ্যে যে বহুমুখী অনন্ত সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় গুপ্ত থাকে তার জাগরণ ঘটিয়ে ব্যক্তি প্রবণতা অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মযোগী হিসেবে স্বক্ষেত্রে অধিষ্ঠিত করাই হলো শিক্ষকের ধর্ম।শিক্ষাদানকারী মাত্রেই শিক্ষক , তবে সব শিক্ষক আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন না। আবার আদর্শ শিক্ষকের উপযুক্ত সংজ্ঞা নির্ণয় যথেষ্ট কঠিন ব্যাপার।এক্ষেত্রে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীকে আদর্শ শিক্ষকের শ্রেণি নির্ধারণের মাপকাঠি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তার মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য সহজাত এবং কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জিত।

আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য সমূহ : কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। অত‌এব প্রথম শর্ত হতে পারে :-

১। চেহারা: একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। সৌম্য দর্শন ও দৃষ্টি আকর্ষণী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন।

২। ধৈর্যশীল: মানুষ হিসেবে আদর্শ শিক্ষককে হতে হবে অসীম ধৈর্যের প্রতীক।শান্ত স্বভাব, আন্তরিক ও যত্নশীল।

৩। মার্জিত পোশাক: আদর্শ শিক্ষকের আদর্শ পোশাক তাঁর ভূষণ। রুচিশীল মার্জিত পোশাক তাঁর ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।শিশুমন সর্বদাই অনুকরণ প্রিয়। পিতা মাতা অপেক্ষা শিক্ষককে অনুকরণ করার প্রবণতা তাদের অনেক বেশি দেখা যায়। অত‌এব আদর্শ শিক্ষকের পক্ষে পরিচ্ছন্ন, মার্জিত, সাধারণ পোশাক পরিধান করাই বাঞ্ছনীয়।

৪। প্রেরণা: শিক্ষার্থীদের মনে অনুপ্রেরণা সঞ্চার‌কারী সক্রিয় কর্মের উদ্যম থাকা আদর্শ শিক্ষকের একটি লক্ষণ।

৫। সদর্থক মানসিকতা: আমরা যা কিছু করি, সব কিছুতেই সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। অত‌এব ‘ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।’ সবকিছুকে এই রূপ সদর্থক দৃষ্টি ভঙ্গীতে দেখা প্রয়োজন ন‌ইলে উদ্যমে বিঘ্ন ঘটে। একজন আদর্শ শিক্ষকের মানসিকতা হবে সব সময় সদর্থক।

৬। শিশু-মনোরঞ্জনকারী: শিক্ষকতা সেবা কার্যে বহু গুণের মধ্যে এটি একটি অন্যতম গুণ। শিক্ষার্থীর মনের গতিপ্রকৃতি আন্দাজ করার দক্ষতা না থাকলে তাদের মনের মতো করে শেখানো সম্ভব নয়। তাই এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন,’ কী শিখাব, তা ভাবনার কথা বটে, কিন্তু যাকে শিখাব তার সমস্ত মনটা কীভাবে পাওয়া যেতে পারে, সেটা ও কম কথা নহে।’

৭। নমনীয়তা: বিচিত্র মানুষ ও বৈচিত্র্যে ভরা প্রকৃতি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার মতো নমনীয়,সহনশীল মানসিকতার অধিকারী হতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষককে।

৮। মৌলিকত্ব: অন্ধ অনুকরণ বা অনুসরণ নয়, জীবন ধারণের প্রতিটা ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্বকীয়তা বজায় রাখা উত্তম শিক্ষকের সহজাত বৈশিষ্ট্য।

৯। চাহনি ও বাকশৈলী: শিশুমন কর্কশ আওয়াজ ও ভয়ঙ্কর চাহনিতে ভীষণ ভীত হয়ে পড়ে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে ভয়ের সম্পর্ক তৈরি হলে শিক্ষা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। তাই একজন আদর্শ শিক্ষকের চাহনি হবে স্নিগ্ধ-প্রশান্তিতে ভরা আর শব্দের স্বর -ক্ষেপণ হবে সংযত, নিয়ন্ত্রিত ও আদর্শ। ক্ষেত্র বিশেষে বা প্রয়োজনে উচ্চ-নিচ।

১০। রসিকতা বোধ: আদর্শ শিক্ষক অবশ্যই সু-রসিক হবেন।আপন রসবোধ মাত্রা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়ে তাদেরকে নির্মল আনন্দ লাভের অংশীদার করবেন।

১১। দৃঢ় মানসিকতা: কথায় ও কাজে দৃঢ় মানসিকতার পরিচয় রাখা একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ। দৃঢ় মানসিকতাই হলো আদর্শ চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

১২। উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা: পরিস্থিতি বিবেচনায় বুদ্ধি ও যু‌ক্তি দিয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান করে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের স্বাক্ষর রাখা একজন আদর্শ শিক্ষকের পরিচয়। এভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক পথের দিশা দেখাতে নিজের নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা লাভ করবেন।

১৩। মুদ্রাদোষ মুক্ত: সাধারণত দেখা যায় বহু মানুষের বহু রকমের মুদ্রাদোষ আছে,যার হাত থেকে তাঁরা সহজেই রেহাই পান না,অথচ এগুলি এক প্রকার কু-অভ্যাস। কোমলমতি শিক্ষার্থীগণ শিক্ষকের মধ্যে এই মুদ্রাদোষ দেখলে অতি সহজেই তারা এর শিকার হয়ে পড়ে। অত‌এব আদর্শ শিক্ষককে মুদ্রাদোষ মুক্ত হতে হবে।

১৪। আত্ম‌-মূল্যায়ন: নিজের কৃতকর্মের ভালো -মন্দ বিষয়ে আত্ম সমীক্ষা করা আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য হ‌ওয়া উচিত। নিজের পেশার মূল্যায়ন , নিজের দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা, নিজের পারফরম্যান্সের মান যাচাই ইত্যাদি আত্ম-শুদ্ধির পথ সমূহ বিবেচনায় রাখা একজন আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

একজন আদর্শ শিক্ষকের যে বৈশিষ্ট্য সমূহের কথা উল্লেখ করা হলো, তার সমুদয় সমাবেশ ঘটা একজন রক্তমাংসের মানুষের মধ্যে সম্ভব নয়। হয়তো অতি- মানবের মধ্যে সম্ভব। কিছু কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিক্ষক‌ই আদর্শ শিক্ষকের পর্যায় ভুক্ত হতে পারেন। আর একক প্রচেষ্টায় আদর্শবান হ‌ওয়া কার ও পক্ষে সহজ সাধ্য নয়,যদি না পরিস্থিতি, পরিবেশ এবং জীবনের প্রারম্ভিক পর্বে উপযুক্ত পথ-প্রদর্শকের সাহায্য ও সহযোগিতা না পান। সু-শিক্ষক সু-শিক্ষার্থী পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। প্রসঙ্গক্রমে জানা-শোনার মধ্যে থাকা দু’একজন আদর্শ শিক্ষক তথা শিক্ষাব্রতী কর্মযোগী মানুষের কথা লিপিবদ্ধ না করলে বোধকরি আলোচনা অসমাপ্ত থেকে যায়।

এমন একজন ছিলেন আদর্শবান প্রণম্য শিক্ষক তথা শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব মাননীয় ডঃ সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়। (১৯২৬- ২০১২)। বিগত শতাব্দীর ছয়ের দশকের প্রথমার্ধে কালাজ্বর আর ম্যালেরিয়া প্রবণ সুন্দর বনের ক্যানিং লাটে এসে বহু প্রতিকুল পরিস্থিতি কাটিয়ে কাটিয়ে শেষে ট্যাংরাখালি গ্ৰামের শিক্ষানুরাগী ভূস্বামী বঙ্কিম চন্দ্র সরদার মহাশয়ের বদান্যতায় তাঁর‌ই দান করা আবাদি খেতের উপর প্রতিষ্ঠা করেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্কিম সরদার কলেজ ‘।সময়টা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ। বাঁশের খুঁটির উপর খড়ের ছাউনি দিয়ে গড়ে তোলা কুঁড়ে ঘরে ইন্টারমিডিয়েটের ১ম বর্যের ক্লাস দিয়ে শুরু হয় পথ চলা। সুন্দর বনের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে উচ্চশিক্ষার আলোক বর্তিকা প্রজ্বলনের পৌরোহিত্য নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ছিলেন সুন্দর বনের এই মহান শিক্ষাগুরু সর্বজন সুপরিচিত শ্রদ্ধাভাজন ‘ভাইস-প্রিন্সিপাল’ অকৃতদার শ্রদ্ধেয় সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয়। যাঁর ঐকান্তিক সৌজন্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, পান্ডব-বর্জিত, জলা-জঙ্গল পরিবেষ্টিত আবাদি সুন্দর বন অঞ্চলের বিরাট এলাকা জুড়ে অগণিত দরিদ্র ও দরিদ্র -সীমার নিচে থাকা শিক্ষার্থীগণ উচ্চশিক্ষার আলোক লাভে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আর একজন ছিলেন মাননীয় শিক্ষক তুষার কাঞ্জিলাল মহাশয়। (১৯৩৫-২০২০)। আদর্শ শিক্ষক তথা জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদার অধিকারী সুন্দর বন -রাঙাবেলিয়ার উন্নয়নের কর্ণধার, রাঙাবেলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষাদান ব্রতকে বিদ্যালয় কক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নদী -নালা বেষ্টিত সুন্দর বন অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার সার্বিক উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। নাগরিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে সুন্দর বনের গোসাবায় এসে রাঙাবেলিয়া সহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের একেবারে প্রান্তিক স্তর থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে আত্মনিয়োগ করেন তুষার বাবু। পরবর্তী সময়ে তাঁরই ঐকান্তিক উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট।’ আমৃত্যু মাটির সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় সংযোগ। তাঁর কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ লাভ করেছিলেন পদ্মশ্রী সহ একাধিক পুরষ্কার।

আমাদের বর্তমান প্রবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল শিক্ষক-দিবসের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা। এবার আসা যাক সেই প্রসঙ্গে। ভিন্ন ভিন্ন দিনে হলেও সারা বিশ্ব জুড়ে শিক্ষকদের আদর্শগত মহান কর্মকান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শিক্ষকদের পেশাগত অবদানকে স্মরণে -বরণে উদ্‌যাপন করতে এই মহান ‘শিক্ষক দিবস’ পালনের রীতি প্রচলিত আছে। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার মৈটে ওয়ায়েটে উডব্রিজ সর্বপ্রথম শিক্ষকদিবস উদ্‌যাপনের পক্ষে সুপারিশ করেন। তার প্রায় এক দশক পর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন কংগ্রেস তাতে সম্মতি দেয়। তবে শিক্ষক দিবস পালন শুরু হয় ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মার্চ থেকে। কিন্তু পরে আবার তারিখটি পরিবর্তন করে করা হয় প্রতি বছরের মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার। বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়, তবে পৃথক পৃথক তারিখে। ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয় জার্মানি, ইংল্যান্ড,রাশিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়ার মতো ১৯টি দেশে। ২৮শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমির শাহির মতো ১১‌টি দেশে। সিঙ্গাপুরে শিক্ষক দিবস পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবার। নেপাল শিক্ষক দিবসটি পালন করে ‘গুরু পূর্ণিমার ‘দিনে। শিক্ষকদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫ই অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস‌’ পালন শুরু করে ইউনেস্কো।

ভারতে শিক্ষক দিবসের উৎপত্তি মূলত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ রাষ্ট্রপতি হ‌ওয়ার পর। সারা ভারত জুড়ে শিক্ষকদের মহান অবদানকে সম্মান জানিয়ে ‘শিক্ষক দিবস’ পালিত হয় ৫ই সেপ্টেম্বর। ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখটি অধ্যাপক, দার্শনিক তথা ভারতরত্ন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের শুভ জন্মদিন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ, ডঃ রাধাকৃষ্ণণ তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন। ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি যখন প্রথম বার নিজের কার্যালয়ে পৌঁছলেন,দেখলেন তাঁর গুণমুগ্ধ কিছু ছাত্র এবং কয়েক জন বন্ধু মিলে তাঁর জন্মদিনটি সেলিব্রেট করার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন। তখন ডঃ রাধাকৃষ্ণণ তাঁদেরকে বললেন যে, জন্মদিনটিকে তাঁরা যদি একান্তই স্মরণীয় করে রাখতে চান তো দেশের সমস্ত শিক্ষক -শিক্ষিকাদের অবদানকে মাথায় রেখে তাঁদের স্মরণে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে উৎসর্গ করা হলে তিনি অধিক খুশি হবেন। সেই শুরু। সেই থেকে অদ্যাবধি প্রতি বছর ৫ ই সেপ্টেম্বর তারিখটি সারা দেশ জুড়ে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে।

বর্তমান অবস্থা [Teachers day]

বর্তমানে শিক্ষক দিবস পালনে আড়ম্বর বাড়ছে বটে কিন্তু আন্তরিকতার অভাব বড়ো প্রকট। ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্কটি বহু প্রাচীন। বর্তমানে এই সম্পর্কে চিড় ধরেছে। ‘ফেলো কড়ি মাগো তেল’, মার্কা মানসিকতা, দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ছাত্র শিক্ষক দৃঢ়-বদ্ধ সম্পর্কের বুনিয়াদে ঘুণ ধরিয়েছে। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক এখন ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে পরিণত। বিদ্যা আজ পণ্যে পর্যবসিত। শিক্ষক সেখানে বিদ্যা-পণ্যের ব্যবসায়ী,ছাত্র খরিদ্দার। অর্থের বিনিময়ে চলে লেনদেন। একদা বৈদিক যুগে আচার্যগণ অবৈতনিক শিক্ষা দান করতেন কিন্তু উপাধ্যায় শ্রেণিভুক্ত শিক্ষকগণ গুরুদক্ষিণা স্বরূপ শিক্ষার্থীদের দেয় আর্থিক দান গ্ৰহণ করতেন, তবে তার মধ্যে বাধ্য-বাধকতা ছিল না।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশ‌ই এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে অ – সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ। বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সেখানে বিদ্যা বিক্রয় করা হয়। অর্থশালী ধনী পরিবারের সন্তান-সন্ততি ভিন্ন বাকিদের সেখানে সুযোগ লাভের সুযোগ নেই।

সময়ের পালা বদলের সাথে সাথে মানুষের মন-মানসিকতায় ঘটেছে বিরাট পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ঢে‌উ সমাজ থেকে শুরু করে সংসারের অন্দরে ও পৌঁছে গিয়েছে। দিশাহীন অপরিকল্পিত মামুলি শিক্ষা ব্যবস্থায় অবক্ষয়ের বিষবাষ্পে অধৈর্যের আস্ফালন মাথাচাড়া দিচ্ছে যাপনের সর্বস্তরে।‌ ছাত্র-আন্দোলন ,ছাত্র-বিক্ষোভ, শিক্ষক ঘেরাও,ফেল করে পাস করিয়ে দেওয়ার অন্যায় দাবি, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রভৃতি কারণে সময়ে সময়ে শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠছে রণাঙ্গন । ছেলে মেয়েদের এই সমস্ত অন্যায় দাবির পক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন এক শ্রেণির অভিভাবকগণ।’ ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’, আপ্ত বাক্যটি ছাত্র-অভিভাবক উভয়েই বিস্মৃত হয়েছেন। পড়লে পাস করবে, না পড়লেও পাস করবে, বর্তমানের শিক্ষা নীতির এই যে ঢালাও ব্যবস্থা, এতে শিক্ষার্থীর মেধা নির্ণয় যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে তেমনি মূল্যহীন ও হয়েছে।ফলে আসল মেধাবী শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগছে। আবার শ্রেণীকক্ষের পিছনের সারিতে বসা ফাঁকিবাজ শিক্ষার্থীগণ শিক্ষকদের পাঠদানের মাহাত্ম শ্রবণ অপেক্ষা স্মার্টফোনে ইউটিউবের আকর্ষণে মশগুল হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎকে করছে দিশাহীন আর ক্লাসের পরিবেশকে করছে নষ্ট।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ছোট বড়ো নানা ধরণের কোচিং সেন্টার। কোচিং সেন্টারগুলোর মধ্যে চলছে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার তীব্র অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা।এক শিক্ষক দুর্নাম রটাচ্ছে সম-পেশার অপর এক শিক্ষকের নামে। ছাত্র ছাত্রীরা বিভ্রান্ত, অনেক সময় তারা ও কোচিং শিক্ষকদের এই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির কাজিয়ায় সামিল হয়ে পড়ছে। শিক্ষককে সম্মান করার পরিবর্তে তাদের মনের মধ্যে জমা হচ্ছে ক্ষোভ, অবজ্ঞা, ঘৃণা ও প্রতিশোধ প্রবণতা।

* এভাবে চলতে থাকলে ভাবী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন হতে বাধ্য।

* প্রশাসনিক উদ্যোগে সমাজের সর্বস্তরে মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার একান্ত প্রয়োজন, যাতে অবক্ষয় রোধ করা যায়।

* আদর্শ শিক্ষা-সিলেবাস চালু করা জরুরি।

* শিশুপাঠ্য থেকে নীতি শিক্ষা,মানব-ধর্মের পাঠ অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখা দরকার।

* আইন মোতাবেক আধুনিক ডিজিটাল বিনোদন -মাধ্যমগুলির ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নির্মিত অনৈতিক, অসামাজিক, অসংযত চিত্রের প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা।

* কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণের ভার অপেশাদার ব্যক্তি বা সংস্থার হাতে সম্পূর্ণ ছেড়ে না দিয়ে যথাসম্ভব অভিভাবকদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

ভবিষ্যৎ ভাবনা [Teachers day]

ক্রম বর্ধমান প্রযুক্তির যুগে, ডি‌জিট্যাল লাইফ‌ – স্টাইলের রমরমা যে-ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সর্বস্তরে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটছে, তাতে শিক্ষক -শিক্ষার্থী ধ্রুপদী সম্পর্ক অটুট রাখা এবং নিজেকে আদর্শ শিক্ষকের পর্যায়ে উন্নীত করার পথে সৃষ্টি হচ্ছে দুস্তর ব্যবধান। একজন শিক্ষক কতটা ভালো বা ভালো নয় সেই উৎকর্ষ প্রমাণ করার প্লাটফর্মটাই যাচ্ছে পাল্টে। শিক্ষক -শিক্ষার্থীর যোগাযোগটা প্রত্যক্ষভাবে মুখোমুখি না থাকার কারণে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব থাকছে না। এই ব্যবস্থার সুবিধে অপেক্ষা অসুবিধের মাত্রা বেশি। কারণ একজন শিক্ষার্থীর অশালীন কথা বা অশালীন আচরণ অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিকার করা কঠিন হয়ে পড়ে। সদিচ্ছা থাকলেও অনলাইন- মাধ্যমে একজন শিক্ষকের পক্ষে তা বাস্তবায়িত করার সময় ও সুযোগ তেমন থাকে না।পাঠদান কালে নিজের বক্তব্যকে শুধুমাত্র সিলেবাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। থিওরিগত তথ্য পরিবেশন সম্ভব হলেও হাতে -কলমে শিক্ষাদানের বিষয়টি উহ্য রাখতে হয়।

ডি‌জিট্যাল যুগে অনলাইন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কীভাবে কোন পথে একজন শিক্ষক আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন তা নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতির যত‌ই পরিবর্তন হোক না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থার কাণ্ডারি হয়ে শিক্ষকগণ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেনও। আর প্রতিভা থাকলে তা প্রকাশের পথ‌ আপনা থেকেই খুঁজে নেবেই।’যে পারে সে আপনি পারে, পারে সে ফুল ফোটাতে।’ সেই জন্য দরকার নব উদ্যম, নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। নতুন যুগে নতুন আদর্শবান শিক্ষকের পথ চেয়ে বুকভরা আশা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে ভাবী প্রজন্ম। অন্তর বলছে, ‘….আশা ছেড়ে তবু আশা রেখে দাও, হৃদয় রতন- আশে।।’

প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha

Rabindranath Tagore’s love for art and literature

Porokia Prem Ekaal Sekaal | পরকীয়া প্রেম (একাল সেকাল) | 2023

Loukik Debota Masan Thakur | লৌকিক দেবতা মাশান ঠাকুর | 2022

Best Tattoo Machine 2023 | ট্যাটু মেশিনের ক্রমবিকাশ | প্রবন্ধ ২০২৩

শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস | শিক্ষক দিবসের বক্তব্য | শিক্ষক দিবস নিয়ে ১৫ টি সেরা উক্তি | ৫ সেপ্টেম্বর | মহান শিক্ষক দিবস | শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য | শিক্ষক দিবস রচনা | শিক্ষক সম্পর্কে | শিক্ষক দিবস সম্পর্কে প্রতিবেদন রচনা | শিক্ষক দিবস কবিতা | শিক্ষক দিবস: আমাদের স্মৃতি | শিক্ষক দিবসের তালিকা | শিক্ষক দিবসে ১০টি বাক্য | বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ | জাতীয় শিক্ষক দিবস | ০৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস | শিক্ষক শ্রদ্ধাঞ্জলী | শিক্ষকদের সম্মানে উক্তি | শিক্ষক সম্পর্কে | শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণ | শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা | শিক্ষকদের নিয়ে বিদায়ী উক্তি | শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা | শিক্ষক স্মরণে | শিক্ষক নিয়ে ছন্দ | ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | শিক্ষকের স্বরূপ

teachers day gift ideas | best gift for teachers day | teachers day wishes cards | teachers day invitation card | handmade teachers day card | beautiful happy teachers day | international teachers day | about teachers day | happy teachers day photo | happy teachers day message | national teachers day | happy teachers day date | teachers day card making | teachers day special | teachers day wishes in tamil | birthday card for teacher | 5th september teachers day | teachers day celebration ideas | teachers day greeting card ideas | teachers day activities | teachers day theme | bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment