Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী

Sharing Is Caring:
Tebhaga Movement
Tebhaga Movement

বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গীত | Tebhaga Movement

মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে এক জ্যোতির্ময় অধ্যায় তেভাগা আন্দোলন (Tebhaga Movement)। অবিভক্ত বাংলায় এবং স্বাধীনোত্তর কালে উভয় বাংলায় উত্তর উপনিবেশ কালখন্ডে গড়ে ওঠা লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ জনতার অংশগ্রহণের পরিচালিত তেভাগা কৃষক সংগ্রাম (১৯৪৮-৪৯) এক ঐতিহাসিক গণআন্দোলন রূপে আজ ইতিহাসের পাতায় যথাযোগ্য মর্যাদার স্থান পেয়েছে। আজ অর্ধেক শতাব্দীর বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর, এই দেশে কৃষিজীবী মানুষের নিজের জমি এবং ভূমিজ ফসলের উপর যে অধিকার রয়েছে তার দৃঢ়তার পেছনে এক ঋজুস্তম্ভ বাংলার তেভাগা আন্দোলন (Tebhaga Movement)। ব্রিটিশের কাছ থেকে ভারতের মুক্তি আন্দোলন যখন শেষ পর্যায়ে, সেই সময় দেশীয় জমিদারশ্রেণী এবং ব্রিটিশ পুলিশের বর্বরতায় বাংলার মাটি রঞ্জিত হয় কৃষকদের তাজা রক্তে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে এক নতুন ধরনের জমিদার শ্রেণীর পত্তন হয়, যাদের জমির সঙ্গে মূল সম্পর্ক ছিল ব্যবসাভিত্তিক। ব্রিটিশ শাসককে নির্ধারিত খাজনা দেওয়ার পর বর্গাদারের থেকে আদায় খাজনার সম্পূর্ণ লভ্যাংশ তাদেরই থাকতো। সেই সঙ্গে চলতো চাষীদের ওপর অনিয়ন্ত্রিত অত্যাচার। ১৯২০ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কৃষকরা কর মুকুব, করছাড়ের আন্দোলন করতে থাকেন। পাঞ্জাবের গদর পার্টির নেতৃত্বে, গুজরাটে স্থানীয় নেতৃত্বে কর মুকুব করার দাবি নিয়ে কৃষকরা সংগঠিত হতে থাকেন। ১৯২৯ সালে “বিহার প্রাদেশিক কিষান সভা” এবং ১৯৩৬ সালে “All India Kishan Sabha” প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলতঃ এই সময়ে কৃষকরা উপলব্ধি করেন, শুধুমাত্র দুর্যোগের বছরগুলিতে করহ্রাসের লড়াই দিয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা সম্ভব নয়। দরকার জমিদারদের তৈরি করা নির্মম নিয়মগুলি বদলানো। বর্গাদার ও ভাগচাষীরাও এই আন্দোলনে যোগদান করেন। উৎপন্ন ফসলের দুই তৃতীয়াংশ ফসল পাওয়ার দাবিতে শুরু হয় গণ কৃষক আন্দোলন। (সূত্র: “বাংলার তেভাগা: তেভাগার সংগ্রাম”— জয়ন্ত ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সি। পৃ: ১১)। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম ফসলের উপর প্রজার অধিকার নিশ্চিত করতে প্রজারাই এগিয়ে আসেন। চিরকল্যানময়ী বাংলার মাটিতে গাঁথা হয় তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) উপকথা এবং সামন্ততন্ত্রের উচ্ছেদের ভবিষ্যৎ।

অসন্তোষের স্ফুলিঙ্গ জ্বলতে শুরু করেছিল তিরিশের দশকের শেষভাগ থেকেই। ১৯৩৭ সাল নাগাদ ময়মনসিংহের চাষিরা ধানে খাজনা দেওয়ার পদ্ধতি “টংক প্রথা”-র বিরোধিতা করে সংগঠিত হন। ক্রমে বাংলার বাকি অংশের ভাগচাষী ও বর্গাদার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে এই আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৪০ সালে Floud Commission ফসলে দুই তৃতীয়াংশ উপর চাষীদের অধিকারের স্বীকৃতি দেন। কিন্তু সেই সুপারিশ কার্যকর হয় না। ১৯৪০ সাল থেকেই খুলনার কৃষকরা তেভাগার অতিরিক্ত ফসল খাজনা দিতে অস্বীকার করেন এবং ধান কেটে নিজের গোলায় তুলতে থাকেন। জমিদারের লেঠেল বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী এসে কৃষকদের উপর অত্যাচার শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে সর্বত্র আগুন জ্বলে ওঠে। ১৯৩৯-৪০ সালে উত্তরবঙ্গের জোরদারদের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই শুরু হয়েছিল। (সূত্র: “Ibid — Sugata Bose; page: 253)

অবিভক্ত বাংলার খুলনার মৌভোগে প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলনে সারা বাংলা জুড়ে তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় — বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করা। এই আন্দোলন একপ্রকার গণআন্দোলন বা Mass Movement -এ পরিণত হয়। তৎকালীন বাংলার ২৫ টি জেলার মধ্যে ১৯ টি জেলার ২৯টি মহাকুমায় সংগঠিত হয়েছিল কৃষকদের মহাসংগ্রাম তেভাগা আন্দোলন (Tebhaga Movement)। অবিভক্ত দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, বগুড়া, চট্টগ্রাম, মেদিনীপুর, ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলী, নদীয়া,
বাঁকুড়া, বীরভূম, মালদহ এবং জলপাইগুড়ি জেলার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল এই আন্দোলনের দাবানল। ‌ মহিলা এবং আদিবাসীরা এই নেতৃত্বে উঠে এসেছিলেন। দাবি উঠেছিল যৌথ খামার এবং ফসলের সামাজিক সঞ্চয় গড়ে তোলার। (সূত্র: “বাংলার আর্থিক ইতিহাস” — সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়; কে.পি.বাগচী এন্ড কোম্পানি; পৃ: ৯২)

অপমানিত লাঞ্ছিত কৃষক সমাজের প্রতি অবিচার, প্রতিবাদ,প্রতিরোধে বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই নিজেদের শ্রেণীগত অবস্থান ভুলে এই লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর এই সর্ববৃহৎ কৃষক অভ্যুত্থানে মধ্য চল্লিশের দশক থেকে মেহনতি মানুষের সংগ্রামকে উপজীব্য করার জন্য এবং সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নির্জীব চেতনাকে, ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তুলতে সম্যকভাবে আবির্ভূত হন সলিল চৌধুরী (১৯শে নভেম্বর, ১৯২২— ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫)।

“গণসঙ্গীত” বা “Mass Song” হলো সঙ্গীতের একটি ধারা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক শোষণ, নির্যাতন, অত্যাচার, অনাচারের বিরুদ্ধে গণমানুষকে উদ্দীপ্ত করার গানই হলো “গণ সঙ্গীত”। গণসঙ্গীত যেকোনো সুরে আঞ্চলিকতা সহকারে গাওয়া যায়। যে কারণে গণসঙ্গীতের গণমুখীনতা সবচেয়ে ভিন্ন।বাংলার লোকসঙ্গীতের ধারার সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে গণসঙ্গীত। প্রখ্যাত গণসঙ্গীতকার হেমাঙ্গ বিশ্বাস বলেছেনঃ
“গণ সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ লোকসঙ্গীতের ধারাটি গণসঙ্গীতেরই অন্তর্গত, কিন্তু গণসঙ্গীত মাত্রই লোকসঙ্গীত নয়। লোকসঙ্গীত সুরে, ভঙ্গিতে ও বাক্যবিন্যাসে আঞ্চলিকতার বৈশিষ্ট্যের সীমাবদ্ধ।” ( সূত্র: ” গণনাট্য, গণসঙ্গীত : কিছু ভাবনাচিন্তা” — শংকর সান্যাল ও তাপস চক্রবর্তী সম্পাদিত। পৃ: ৩৬৫)

বাংলায় গণসঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৩ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত “ভারতীয় গণনাট্য সংঘ” ( Indian Peoples Theatre Association বা IPTA) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এইসময় বাংলায় গণসঙ্গীত এক অনন্য ও ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আবহমণ্ডল তৈরি করে। সলিল চৌধুরী ছিলেন একাধারে বিপ্লবী, কবি, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার এবং গল্পকার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলের গাজীপুরে এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্রমোহন চৌধুরী আসামের লতাবাড়ি চাবাগানে ডাক্তারি করতেন। বাবার কাছেই সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি। পিতৃব্য নিখিল চৌধুরীর কাছেও সঙ্গীতের তালিম গ্রহণ করেন। মূলতঃ তাঁর নিখিল চৌধুরীর ঐক্যবাদন দল “মিলন পরিষদ”-এর মাধ্যমেই গানের জগতে সম্পৃক্তি। তেভাগা আন্দোলন শুরু হবার আগে থেকেই সলিল চৌধুরী কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ত্রাণকার্যে দক্ষিণ বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন সুন্দরবন,কাকদ্বীপ ও মেদিনীপুর জেলায় যেতেন। সেই সময় কৃষকদের দুঃখ দুর্দশা দেখে গণসঙ্গীত রচনার কাজে তিনি হাত দেন। (সূত্র: “পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা” দক্ষিণ ২৪ পরগনা সংখ্যা ; মার্চ, ২০০০ ; পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃ: ৩১৮)। সেইসব গান দলবেঁধে গ্রামেগঞ্জে গেয়েছেন।

Tebhaga Movement Song

গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ধারা অনেকখানি অনুসরণ করেছেন। সলিল চৌধুরী ছাড়াও সেইসময় বিনয় রায়, হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও অন্যান্য সঙ্গীত রচয়িতা তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) গান লেখেন গ্রাম্যভাষায়। সলিল চৌধুরী লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকে অন্যদের মতো গানগুলো লিখলেও তিনি সজ্ঞানে ভারতের অন্য প্রদেশের বা বিদেশি সঙ্গীত মেশাতে কসুর করেননি। কেবলমাত্র আন্দোলনের প্রয়োজনেই গানকে নিবদ্ধ না করে উচ্চমানের সঙ্গীত সৃষ্টির দিকেও তিনি সমান নজর দিয়েছিলেন। যে ব্যাপক সাঙ্গীতিক জ্ঞান ও প্রতিভা নিয়ে তিনি গণসঙ্গীতের ক্ষেত্রে আসেন সেটা বিবেচনা করলে সলিল চৌধুরীর সৃষ্টিধর্মিতা বোঝা যায়। ১৯৪৪ সালে তরুণ সলিল তাঁর স্নাতক পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন এবং তখনই ভারতীয় গণনাট্যে সঙ্গে যোগ দেন। এইসময় থেকেই তিনি গান লিখতে এবং সুর করতে শুরু করেন। ‘বিচারপতি’, ‘রানার’ এবং ‘অবাক পৃথিবী’র মত গানগুলি সাধারণ জনতার কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৪৫ সালে সলিল চৌধুরী তাঁর প্রথম গণসঙ্গীত সৃষ্টি করেন। ( সূত্র: “পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা : বাংলার সঙ্গীত সংখ্যা”; পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ‌ এপ্রিল, ২০০৫. পৃ: ৫২)। এই গানগুলিকে তিনি “The mass songs of Consciousness and Awakening” বলে অভিহিত করেছেন। ( সূত্র: “Rally Songs and Poems from the Tebhaga Movement in Bengal” — Ratul Ganguly ; page: 58)

সলিল চৌধুরীর তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) একটি জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান ( রচনাকাল: ১৯৪৭/৪৮), যা কৃষক সমাজে ডেকে এনেছিল নতুন বিপ্লবের আহ্বান:

“হেই সামালো হেই সামালো
হেই সামালো ধান হো, কাস্তেটা দাও শান হো
জান কবুল আর মান কবুল
আর দেব না আর দেব না
রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো…”

তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) সময় সলিল চৌধুরীর আরও একটি গান:—

“ধন্য আমি জন্মেছি মা তোমার ধূলিতে
জীবন মরণে তোমায় চাইনা ভুলিতে…
হিমালয় আর নিদ্রা নয়
কোটি প্রাণ চেতনায় বরাভয়
জাগো ক্রান্তির হয়েছে সময়
আনো মুক্তির খরবন্যা…”

(সূত্র: “গণনাট্য, সলিল চৌধুরী স্মরণসংখ্যা, ১৯৯৫, পৃ: ৫৭-৫৮)

১৯৪৪ সালে তিনি একটি গান লিখেছিলেন, পরবর্তীকালে এই গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

“উর-র তাকা তাকা তাকা তাকা
তাঘিনা তাঘিনা ঘিনা ঘিনা রে-
উর-র জাগা জাগা জাগা
জাঘিনা জাঘিনা ঘিনা ঘিনা রে
গুরু গুরু মেঘের মাদল বাজে
তা তা থৈ থৈ মনের ময়ূর নাচে
আষাঢ়ের বরষা এলো
পরশে তারি রুক্ষ মাটি সরস হলরে
আয় লাঙ্গল ধরি মোরা লাঙ্গল চালাই
আয় ফসল বুনি মোরা ফসল ফলাই
আয় আয়রে আয়…”

এই গানের দুটি দিক আছে—- গানের সুরের তালে তালে ধান বোনা এবং বাঙালি কৃষকদের ফসল তোলার উৎসব পালন। ‌ এই গানটির হিন্দি সংস্করণও হয়েছিল ‘Do Bigha Zameen’ – নামক হিন্দি সিনেমায়। যার সুরকার ছিলেন স্বয়ং সলিল চৌধুরী। (সূত্র : “সলিল চৌধুরী: প্রথম জীবন ও গণসঙ্গীত”– সমীর কুমার গুপ্ত। ২০১১. পৃ: ১১২)

বিদ্যাধরী নদীর বানভাসি অঞ্চলে কৃষকদের উপর অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ১৯৪৫-৪৬ সালে রচনা করেন:—-

“দেশ ভেসেছে বানের জলে ধান গিয়েছে মরে
কেমনে বলিব বন্ধু পরানের কথা তোর
ঘরেতে ছাউল নাই পরনে পিরান নাই
অনাহারে দিবা নিশি ভাসি নয়ন লোরে
কেমনে বলিব বন্ধু পরানের কথা তোরে…”

— এই গানটিই কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত সলিল চৌধুরীর প্রথম গণসঙ্গীত। সেই সময় হরিনাভি, বারুইপুর, সোনারপুরের কৃষকরা প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিল তাঁর এই গানে। এই গানটির মধ্যে দিয়ে কৃষকদের দুর্দশার কথা ফুটে উঠেছিল। মূলতঃ ভাটিয়ালি সুরে গাওয়া হত। (সূত্র : “চল্লিশের দশকে বাংলায় গণসঙ্গীত আন্দোলন” — অনুরাধা রায়। পৃ: ৯২-৯৩)

স্বাধীনতা লাভের পর কতিপয় অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলন (Tebhaga Movement) হয়েছে। কাকদ্বীপ, বড়াকমলাপুর, ডুবিরভেড়ি ইত্যাদি এলাকায় জোরদার আন্দোলন চলেছে। সেখানে স্বাধীন দেশের সরকারের পুলিশ বাহিনীর অত্যাচার ছিল সীমাহীন। এর প্রতিবাদে সলিল চৌধুরী লিখলেন এক অনবদ্য গণসঙ্গীত:—

“ও আয়রে ও আয়রে
ভাইরে ও ভাইরে
ভাই বন্ধু চল যাইরে
ও রাম রহিমের বাছা ও বাঁচা আপন বাঁচা
চলো ধান কাটি, আর কাকে ডরি
নিজ খামার নিজে ভরি, কাস্তাটা শানাই রে
ওই কমলাপুর বড়া
আর কাকদ্বীপ ডোঙ্গাজোড়া
এসেছে ডাক চলনা সবাই সোনা তুলি ঘরে…”

— “লাঙ্গল যার জমি তার” জমিদারি প্রথা বিরোধী এই স্লোগানই গানের উৎস। নিজের খামার নিজে ভরার যে আনন্দ তার থেকে আমাদের দেশের কৃষক সমাজ যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত থেকেছে। এই গানটি পরে প্রখ্যাত গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে রেকর্ড করা হয়, সলিল চৌধুরীর সুরে
( “ঘুম ভাঙার গান”- ক্যাসেট)।
প্রাজ্ঞ সঙ্গীত গবেষকদের মতেঃ

“কোরাস বা সমবেত সঙ্গীত আগে গাওয়া হত একতানে। সলিল চৌধুরীই প্রথম সমবেত অর্কেস্ট্রার ব্যবহার করে অপূর্ব ছন্দ লয়ের সমন্বয়ে ঘটিয়ে অন্যান্য ধারার সাঙ্গীতিক আবহের সৃষ্টি করেন।”

পরিশেষে, সলিল চৌধুরীর তেভাগা আন্দোলনের (Tebhaga Movement) কিছু গণসঙ্গীত আজও সভা-সমাবেশে গাওয়া হয়। ‌ কারণ তাতে রয়েছে চিন্তা ও চেতনার সম্যক কালজয়ী উপাদান। রয়েছে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার রসদ। সলিল চৌধুরীর মর্মস্পর্শী স্লোগানগুলি আজও উজ্জীবিত করে —–

“লাঙ্গল যার জমি তার”, “আধি নয় তেভাগা চাই”,
“দখল রেখে ভাগ করো”।

সলিল চৌধুরী আজ নেই; কিন্তু তার অমর সৃষ্টি কর্মের মাধ্যমে তিনি যুগ যুগ ধরে অগণিত সঙ্গীতরসিকের চিত্তে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।।

তথ্যঋণ:

প্রবন্ধের মধ্যেই উল্লেখ করা আছে।

সৌম্য ঘোষ | Soumya Ghosh

New Bengali Article 2023 | শ্রমের শোষণ

New Bengali Article 2023 | বাংলায় শিল্পে বিনিয়োগ সামান্যই

New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩

স্বামী বিবেকানন্দের যোগ ভাবনা | Top Best 4 Yoga by Swami Vivekananda

তেভাগা আন্দোলন | তেভাগা আন্দোলন টিকা | তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্র | তেভাগা আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য | তেভাগা আন্দোলনের প্রধান দাবি গুলি কি কি | তেভাগা আন্দোলনের তাৎপর্য | তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী কে | বাংলা সাহিত্যে তেভাগা আন্দোলন | তেভাগা আন্দোলন কবে হয়েছিল | তেভাগা আন্দোলনের স্লোগান | তেভাগা আন্দোলন ও বাংলা ছোটগল্প | তেভাগার সংগ্রাম | তেভাগা আন্দোলন কোন জেলায় | দিনাজপুরে তেভাগা দিবস পালিত | তেভাগার ৭৫ তম বর্ষ | তেভাগা আন্দোলন এর বিবরণ দাও | তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস | ওলিম্পিক থেকে তেভাগা আন্দোলন | সলিল চৌধুরীর সেরা গান | সলিল চৌধুরীর হিট | গণসঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ সলিল চৌধুরী | সলিল চৌধুরীর জনপ্রিয় গান | সলিলের সঙ্গে নদিয়ার যোগসূত্র | গণসঙ্গীতের তালিকা | সলিল চৌধুরীর গানের ইতিহাস | সলিল চৌধুরীর কবিতা | সলিল চৌধুরী | সলিল চৌধুরীর জীবনী | বাংলা গানের ধারায় সলিল চৌধুরীর অবদান | হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সলিল চৌধুরী | সলিল চৌধুরী মৃত্যু | সলিল চৌধুরীর গান | সলিল চৌধুরীর গান | সলিল স্মরণে | সলিল চৌধুরীর সুরের পথ | বাংলা গানে সলিল চৌধুরি | খ্যাতিমান সঙ্গীতস্রষ্টা সলিল চৌধুরী | সুরের উজ্বল নক্ষত্র সলিল চৌধুরী | সঙ্গীতজ্ঞ সলিল চৌধুরী | সলিল চৌধুরী আন্ডারগ্রাউন্ডে | আমাদের লড়াই সংগ্রামে গণসঙ্গীত | সলিলের গানে দুঃখ-বিরহ | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Tebhaga movement | Tebhaga movement in west bengal | Tebhaga Andolan Hardcover | Salil Choudhury | Best Of Salil Chowdhury | Shabdodweep Founder | tebhaga movement upsc | tebhaga movement pdf | tebhaga movement ncert | causes of tebhaga movement | tebhaga movement in which state | impact of tebhaga movement

Leave a Comment