Bangla Novel Reading Book | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (১৯ – ১৮)

Sharing Is Caring:

খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১৯) – জয়নাল আবেদিন

পরপর কটা দিন হলো আরশাদের দিনগুলো বেশ টানাপোড়েনের মধ্যেই চলছে। প্রতিদিন শেষে রাতের খাওয়া- দাওয়া সেরে আলোচনা চলতেই থাকছে।
— দিদিমণি আপনি বলেন, কি করা যায় ? মানে আপনি কি সিদ্ধান্ত নেবেন। আরশাদের জিজ্ঞাসা।

একটা দীর্ঘশ্বাস স্বাতীর।
— আমার নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি চলে যেতেই চাই, এ বাড়ি থেকে এবং পৃথিবী থেকেই। আমার আর কোন ঠিকানা নেই।
— এমন করে বলো না গো দিদি! মরলেই কি শান্তি আসবে গো? একজনের মরণ মানে আমাদের দুজনের মরার মতো বেঁচে থাকা হতে পারে। কপালে কি জুটবে ভাবতে পারিনা। শান্ত গলায় চিন্তা দগ্ধ কথা বলে রিজিয়া।
— এমন কথা বারবার ভাবার কি দরকার। ভালো জিনিস ভাবতে হবে। বললে আরশাদ।
— আমি কি ভাবতে পারি আর। যে চক্রব্যূহ আমি পড়েছি আর বেরোনোর কোন পথ নেই। জীবনটা যে আর সুখের স্থান নয়। সেটা অনেক আগেই বুঝেছি। স্বাতীর চোখে জলের ধারা।
— দিদি, এমন করে নিজেকে কষ্ট কেন দিচ্ছ গো ? নিজের চেহারাটা একবার দেখেছো ? ভালো খাওয়া হয়তো জোটে না আমাদের। তবে ভুখা থাকতে হয়নি কোনদিন। তোমার অনিয়মে শরীরটা খারাপ হচ্ছে। চোখের কোনে কালি পড়েছে‌ রিজিয়ার আক্ষেপ।
— তোমাদের কাছে এতদিন পড়ে রয়েছি ।নিশ্চিন্তে খাচ্ছি- ঘুমোচ্ছি। এটা আমার এ জন্মের পূণ্যের ফল। আমি ভাগ্যবতী মেয়েমানুষ তাই এমনি আতিথেয়তা ভাগ্যে জুটলো।

আরশাদ বললে, – দিদিমণি আমরা মুখ্য সুখ্য মানুষ। এমন ভালো কথা বলতেও পারি না। ভাবতেও পারবো না। এটুকু বুঝি মানুষ হিসাবে মানুষের সাহায্য করা উচিত।
— আপনাদের জীবনধারণ সহজ সরল। আজকের সমাজে তাই আপনার মত মানুষরা ঠকে যায় বেশি সময়। চাতুরতা নেই বলেই চাটুকারিতার ফাঁদে পড়তে হয় অনেক সময়। যে যেমন ভাবে বোঝায় তেমনই বোঝেন। কিন্তু জীবনটা যে সুখের ঠিকানা নয়, এটা কখনো ভাবেননি।
— দিদিমণি, খাটলে তবে খেতে পাই। সারাদিন গাধার খাটনি খাটতে হয়, তবে চারটে পেট চলে। অন্য কিছু ভাবনার সময় কোথায়। সুখ- বিলাসিতা কেমন আঁচ করতে পারি না। কিন্তু কাল-পরশু লোকগুলো এলে কি বলবেন ?
— ওরা আসুন না। এসে যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আমি মেনে নেব। আমি কিছু বলবো না। কেমন অসহায় জবাব স্বাতীর।

একটা গা শিরশিরে রাত। শীতের শুরুতে এমন আবহাওয়া রাত্রিটা কিছুটা আরামদায়ক। অসহ্য গরমের হাঁসফাঁস থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি ।বস্তির বাইরে কিছুটা নিস্তব্ধতা নেমেছে। কয়েকটা মাতালের হাঁক ডাক। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ছাড়া বেশ সুনসান। সময়সীমা মধ্যরাত্রি পেরিয়েছে। যে যার বিছানায় পিঠ পাতলো ওরা।

সকালের সূর্য পূব আকাশে উঁকি দিয়েছে মাত্র। বস্তির শেষ প্রান্তের মসজিদের মাইকে ঘোষণা হল। “এখন নিষিদ্ধ সময়, এখন নামাজ পড়বেন না। কুড়ি মিনিট পর আবার নামাজ পড়বেন” । সূর্যের তাপমাত্রা পৃথিবীতে পড়েনি তেমন। বস্তির কলতলায় কোলাহলের তাপমাত্রা হাঁড়িকুড়ির ঠোকাঠুকি বেশ জোর কদমে। কথার কলবলানী বস্তির চরিত্রকে মাত্রা দিয়েছে। আজাদ কলোনীর বৈশিষ্ট্য এটাই। আরশাদ- রিজিয়ার ঘুম ভেঙেছে। রিজিয়া সংসারের প্রাত্যহিকীতে ব্যস্ত হলো। আরশাদ মুখ হাত ধুয়ে জামা কাপড়ে পরিপাটি। কিছু সময় পর লোকজন আসার কথা। চা-রুটিতে সকালের নাস্তা হলো সকলের। সকালে নিয়মমাফিক পড়তে বসেছে ছেলে-মেয়ে। স্বাতীর শাসনে ওদের লেখাপড়ায় উন্নতি হয়েছে। স্বাতীর ভালোবাসায় ওদের অনুশাসন তৈরি হয়েছে। কেমন পরিপাটি।

— আরশাদ দা ঘরে আছো ? ডাক দিলে বাবলু ভাই।

বাইরের ডাক কানে পড়তেই বাইরে এলো আরশাদ।
— হ্যাঁ গো ভাই, রেডি আছি। এসো তোমরা।
— মিনিট পনেরোর মধ্যে সকলে আসছে। বসার জায়গা ঠিকঠাক করে নাও। কথা শেষ করে বাবলু চলে গেল।

গুমটির চা-এর দোকানের সামনে আজ বেশ জমজমাট উৎসাহী মানুষের একটু ভিড়। এমন হাতে গরম মুচমুচে কাহিনীর কি সমাপ্তি হতে পারে বেশ কৌতূহল মানুষের। তাদের ভাবনায় ছিল অবৈধ এক সময় কাটছে বস্তির এই ঘরে। কেমন বৈধ ভাবে। কারো কোন মাথা ব্যথা নেই, চলছে তো চলছে মাসের পর মাস। এমন ধারা নোংরামি আজাদ কলোনীর মানুষ মানবে না। মানিয়ে নেওয়া অনুচিত কাজ হবে। একটা বিহিতের দরকার ছিল আগেই। জাত- বেজাতের হিসেব আছে। এমন ঘটনা রাষ্ট্র হলে সাম্প্রদায়িক বিরোধ তৈরি হতে পারে। অনেক আগেই এর সমাধান করা দরকার ছিল।

— বাবলু ভাই, আজকে কিন্তু আমরা ফায়সালা চাই। মতিন বললে।
বাবলু বললে, – বসা হোক আগে। তারপর তো ফয়সালা।

— এতদিন তাহলে বসা হয়নি কেন ? ফোঁস কাটল মাতাল রিয়াজ।
— তুমি কোথায় ছিলে এতদিন ? আগে বলোনি কেন ?
— এসব কি বলা আমাদের দায়িত্ব ।তোমরা নেতা আছো কি জন্য ? তোমরা বস্তির দেখভাল করবে, তাই তো ভোট দিই তোমাদের। মাতাল রিয়াজের কথায় বেশ হই-চই পড়ে গেল।
একটু গুঞ্জন। চিৎকার। চেঁচামেচি।

— কেউ বললে, – জাতে মাতাল হলেও- তালে কিন্তু ঠিক আছে।
কেউ বললে, – হক কথা বলেছে রিয়াজ কাকা।
— আজকে এ সময়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ করো না। আজ একটা ফয়সালা করার দিন ।একটু ধৈর্য ধরো সকলে। ইকবাল কাশিম একটু গলা চড়িয়ে ধমকের সুরে বললে।

একটু শান্ত হলো সকলে। হই-চই। চিৎকার। চেঁচামেচি নেই বটে, তবে চা গুমটির সামনে গুঞ্জন একটা রয়েছে। বেলা একটু বেড়েছে। বস্তির কাজের মানুষগুলো রুজির সন্ধানে বেরিয়েছে। রোজের গুলতানি কোম্পানির মানুষগুলো যেমন প্রতিদিন থাকে, চা গুমটি উজালা করে। আজ আরো একটু ঘন হয়ে আছে। মুখরোচক সংবাদের অপেক্ষায়। বাবলু, সজল, আমিন ভাই যখন বেশ উৎকণ্ঠায় কাশীদার অপেক্ষায়। সজল ফোন করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ই, ওরা বস্তিতে ঢুকলো কয়েকজন।

কাশীনাথ বাবু বললে, – একটু দেরী হয়ে গেল রে। বাজার মোড়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। সামাল দিয়ে তবেই আসতে পারলাম। চল- চল, বসার জায়গা ঠিক করা হয়েছে তো? বাবলু চলে ভাই। যথারীতি আগের মতই গুমটির ঘরটায় জনা দশেক লোক বসা হলো। এক পাশে আরশাদ- রিজিয়া। ওদের পাশে আগন্তুক মহিলা। যার পোশাকি নাম স্বাতী। বাইরে বেশ কিছু লোকজন। সশরীরে না থাকতে পারার অভিযোগ। আবেগ পূর্ব অপেক্ষা। এমন কাজের উপযুক্ত শাস্তির দাবি। নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। হঠাৎই কয়েকজন মানুষের আবেগবোধ- সচেতনতা, সাগরের ঢেউ এর মতোই বৃদ্ধি পেয়ে গেল। বস্তির সামাজিকতা প্রসঙ্গে তাদের বিবেকবোধ এতো জাগ্রত। অপেক্ষার প্রহর গোনা অসহ্য লাগছে।

আমিন ভাই বললে, – কাশীদা আলোচনা শুরু করুন‌ সময় চলে যাচ্ছে।
কাশি বাবু বললে, – হ্যাঁ শুরু করা হোক। আরশাদ বলো, তোমরা শেষমেষ কি ভাবলে ? কি করবে সিদ্ধান্ত নিয়েছো ?
— বাবু আমি কি আর সিদ্ধান্ত নেব। যা বলার তো দিদিমনি বলবে।
— ঠিক আছে তাহলে আপনি বলুন। এখন আপনার কি করণীয় ? কি করবেন ঠিক করেছেন ? কাশীবাবুর প্রশ্ন স্বাতীকে।

কয়েক মুহূর্ত চুপ স্বাতী। পাশে রিজিয়া বসে জড়পদার্থের মতোই। বুকে হাতুড়ির ঘা পিটছে স্বাতীর।
— আপনারা পাঁচ জনা যা সিদ্ধান্ত দেবেন। আমি সেটাই করবো। স্বাতী একটু নিচু স্বরে বললে।
সজল বললে, – আপনি কি চাইছেন সেটা তো, আপনি বলবেন। আমরা একটা সামঞ্জস্য করতে পারি মাত্র। বাধ্যতামূলক কোনো কিছু চাপিয়ে তো দিতে পারি না।
— আমি তো এখান থেকে চলে যেতেই চেয়েছিলাম। এখনো চাই। তবে নির্দিষ্ট আমার কোন ঠিকানা এখন নেই । আমি মেয়েমানুষ পথে পথে ঘোরা আর যে কোন দালানে শুয়ে থাকা, সেটা তো সম্ভব নয়। তাই মৃত্যুর পথ ই আমার জন্য একমাত্র ঠিকানা। সেখানেই যেতে চাই। ছলছল চোখে স্বাতীর তীব্র আক্ষেপ।

আরশাদ বললে, – দিদিমণি বারবার একই কথা বলছেন। আমার এখান থেকে বাইরে গিয়ে যদি আত্মহত্যা করে। দায়টা কি কিছুটা আমার ঘাড়ে পড়বে না। এতদিন আমার ঘরে রয়েছে। আমরা স্বামী- স্ত্রী দুজনে নিজের বাড়িতে পৌঁছে দিতে চেয়েছি, বাপ- মার ভিটেয় নিয়ে যাবার কথাও বলেছি, কোন আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যেতে চাইলে সঙ্গে যাব আমরা। কিন্তু দিদিমণি রাজি নয়।

কাশীনাথ বাবু বললে, – সব কথা ঠিক আছে। কিন্তু সবকিছু তো নিজের ইচ্ছে মতো ভাবলে হবে না। নিজের মনের মতো কাজও করা যাবে না। আইন তো কারো ইচ্ছে পূরণ করার জন্য হবে না। সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ভাবতে হবে। তুমি একজন বিবাহিতা মহিলা। সংসার ছেলে- মেয়ে বর্তমান। স্বামীর সঙ্গে বিবাদে সেখানে ফিরতে চাচ্ছ না। বাপের বাড়ি বা কোন আত্মীয় বন্ধুদের কাছেও না। তাহলে কি করনীয়, সেটা ভাবার দরকার সকলের।

বাবলু বললে, – আইনি সমাধান করতে হলে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া যায়। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা আছে, কারণ এই পুলিশ অকারণে কোন ইনভেস্টিগেশন ছাড়াই আরশাদকে পানিশমেন্ট দিতে চেয়েছিল। সেটা এনার স্বামীর চক্রান্ত ছিলো। টাকা পয়সা দিয়ে একটা অপরাধ মূলক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিল । অবশ্যই আরশাদকে বিপদমুক্ত করতে উনি কলকাতা থেকে চলে এসেছিলেন বলে ও মুক্ত হয়েছে ।নচেৎ সমস্যা হয়ে যেত আরশাদের ছাড়া পাওয়া।

কাশীনাথ বাবু বললে, – আরশাদ যেমন সে সময় বিপদ মুক্ত হয়েছে মহিলার সহায়তায় ।উপকারের প্রতিদান দিয়েছে। কিন্তু এখন আরশাদ নতুন বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছে। সেটার সমাধান খোঁজা হোক। সঠিক পথ কি হবে ভাবতে হবে এখন। কাশীদা, আমি একটা কথা বলবো। কিছুটা অনুমতি সুরে বললে রিয়াজ।
— অবশ্যই বলবি, আমি তো চাইছি সমস্যার সমাধানে সকলে মতামত দাও। কাশীনাথের জবাব।
— আমি মনে করছি এমন সমস্যার চট জলদি সমাধান হয় না। ডাঙায় বাঘ- জলে কুমির এমন অবস্থা এদের ।বেশ গভীর সংকট পরিস্থিতি। বেশ ভাবনার বিষয় রয়েছে এতে। কিছুটা আইনি মতামত জানার প্রয়োজন আছে।
— ঠিক আছে সেটা জানা যাবে। কিন্তু বিষয়টা কি ভেবেছিস সমাধানের, সেটা খোলসা কর ।কাশীনাথ বাবু জানতে চাইলে।
— মোদ্দাকথা মহিলা এখান থেকে কোথাও যেতে চাইছে না। আরশাদ ওর ঘর থেকে কোথাও চলে যাক নিজের ইচ্ছামতো, সেটা চাইছে না। আবার নতুন কোন ভোগান্তির ভয়ে। তাহলে এখানেই থেকে যাওয়াটা একটা সমাধান ওদের কাছে। খাওয়া-থাকার কোন সমস্যা কয়েক মাস ধরে হয়নি। ছেলে-মেয়ে দুজন মহিলার কাছে লেখাপড়া করছে। বেশ ভালো লাগা তৈরি হয়েছে একটা। আইনি কোনো বাধা আছে কিনা জেনে নিয়ে, আরশাদ মহিলাকে বিয়ে করে নিক। তাহলে মনে হয় একটা সুরাহা হবে। বস্তির লোকজন পরবর্তীতে আর কোন আপত্তি করতে পারবে না।

খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১৮) – জয়নাল আবেদিন

দুদিন পর কলকাতায় ফিরতে হবে। চিন্তাটা কেমন জটিলতর হয়ে উঠছে শঙ্খর মাথায়। বাড়ি ফিরলেই শ্বশুরমশায়ের প্রশ্নবাণ। মেজদার বাড়ি গিয়ে আদৌ সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব হবে কি ? একটা লাখ টাকার প্রশ্ন মাথার উপর চক্কর কাটছে। ছেলে দুজনকেই স্কুলে পৌঁছে, ভর্তির কাজ সেরে আর কলকাতায় ফেরা যাবে কি ? গেলেও যতটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে, না গেলেও ততোধিক সমস্যা। শ্বশুর- শাশুড়ি আর কতদিন এভাবে আটকে থাকবেন।মাথার উপর শেষ বিকেলের রোদ্দুর ।কোচবিহার সীমান্তের রুক্ষ মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশটাকে দেখছিল শঙ্খ। ছেঁড়া- ছেঁড়া পেঁজা তুলোর মতো মেঘের দল। শীতের শুরুতে একটু হিমেল হাওয়া। দূরের মাঠের সোনালী পাকা ধান এখনো কিছু জমিতে কাটা তোলায় ব্যস্ত। এমন প্রকৃতির মুখোমুখি হলে মানুষ জীবনের অনেক যন্ত্রণা- অবসাদ- একঘেয়েমি ভুলে যায়। মনের কত গ্লানি বিশুদ্ধ অক্সিজেনে সাফসুতরো হয়। ঝিমিয়ে থাকা মন তরতাজা হয়ে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

লাল থালার মত সূর্যটা পশ্চিমে সেই দূরের গাছগুলোর মাথায় কাটা ঘুড়ির মত আটকে আছে। রক্তিম রঙে আকাশটা কেমন পটে আঁকা ছবির মত দেখাচ্ছে। আপন- আপন নীড়ে ফিরে চলেছে বলাকার সারি। কাকপক্ষী- পানকৌড়ির দল। দিনের শেষে রাত হয়। প্রকৃতির নিয়মে রাত টুকু বিশ্রামের নিরিখে সকল প্রাণীর নিজের নিজের আস্তানায় ফেরে। অথচ মানুষ কত অসহায় নিজের আস্তানায় ফেরার জন্য কত মানুষ আকুল হয়ে ওঠে অথচ ফেরা হয়ে ওঠেনা। আবার কত মানুষের ফেরাটা কেমন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার ভীতি, থমকে দেয় তার স্বাভাবিক আচরণকে।

ব্যারাকে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে চা খেয়েছে শঙ্খ। সিগারেটের ধোঁয়ায় মনটাকে চাঙ্গা করতে লাইটারের আগুনে সিগারেট ধরালে। কয়েকটা টানে একটা সুখানুভূতি মনের অন্দরে। হঠাৎ আজ প্লে রুমে যাবার ইচ্ছা হলো তার। আগে মাঝে মধ্যে ক্যারাম খেলতে যেতো। গুটি গুটি পায়ে প্লে রুমে ঢুকলে শঙ্খ ।বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালে সেখানে। টিভিতে সিনেমা দেখলো। কয়েক বোর্ড ক্যারাম খেললো। ডিনার টাইমে বেরিয়ে এলো প্লে রুম থেকে।

ডিনার সেরে নিজের রুমে ফিরে এলো শঙ্খ। পাখাটা খুলে বিছানায় বসলে। একটা সিগারেট জ্বালালো লাইটারে। একমুখ ধোয়ার কুণ্ডলী হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ওকেও কেমন চিন্তায় ভাসিয়ে দিলো। জীবনটা যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল। ভবিষ্যৎ সুখের জীবনের জন্য মানুষ কতো ভাবে রোজগার করে। সঞ্চয় করে। সেটা কখনোই নিজের জন্য করে না। পরিবার সন্তান-সন্ততি অর্থাৎ আগামী প্রজন্মের জন্য। তাই তো চেয়েছিলাম। তাহলে আমার ক্ষেত্রে এত জটিলতার সৃষ্টি হলো কেন ? আমি তো কোনদিন কোন অবৈধ উপায়ে রোজগার করিনি। সৎ-ভাবে বেঁচে থাকতে চেয়েছি। আস্তে আস্তে চিন্তার গলিপথে একটু- একটু করে ঢুকতে লাগলো শঙ্খ।

আসলে জীবনের ছোট্ট ভুল পথটাই আর সোজা পথে ফেরার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে দিয়েছে। ক্ষণিকের উন্মত্ততা। ছোট একটা আক্রোশ। মানবতার চিরশত্রু হয়ে দেখা দিলে তার সৌন্দর্য জীবনে। কেমন ভাবে সে ফিরিয়ে আনবে সেই দিনটাকে। ভুলের ক্ষমা হয় শঙ্খ নিজেও জানে। কিন্তু তার জীবনের যে ভুল সে বয়ে বেড়াচ্ছে। সেটা কিভাবে সংশোধন করবে ? কেঁচো খুঁড়তে যদি কখনো কেউ উঠে বের হয় ।তার জীবনে একটা সংশয় ডেকে আনবে না তো ? মাথাটা ভারি হয়ে আছে শঙ্খর। জামা- কাপড় ছেড়ে চিন্তার জালটাকে ছিঁড়ে ফেলার অভিপ্রায় পরপর দু পেগ তরল গলায় ঢাললো। তারপর সটান বিছানায় শুয়ে পড়লো।

সকালের ডিউটি থাকায় ঘুম থেকে উঠেই স্নান সেরে ফ্রেশ হয় শঙ্খ। পোশাক পরে কোনরকমে এক কাপ চা খেয়ে ছুটলে। রাতে সীমান্তে ঝামেলা হয়েছিল বেশ। পাচারকারীদের আটকে দিয়ে ধরপাকড় শুরু করেছিল জওয়ানেরা। শত্রু চিরকালই শক্তিশালী হয়, এক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। তারের বেড়া ডিঙিয়ে মালপত্র নিয়ে যেতে না পারার ক্ষোভে, গুলি ছুঁড়তে- ছুঁড়তে পালিয়ে যায় দলটা। পিছু ধাওয়া করে তেড়ে গেলেও ধরতে পারেনি কাউকে।শঙ্খ ঘটনা শুনে মনে মনে হেসেছিল একটু। শত্রুর মোকাবিলা করলে, চিরকাল শত্রু ভেবে করা ভালো। আজ আড়ি- কাল ভাব এমন ছেলেমানুষী খেলা ভালো নয়। জীবনের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়, পাচারকারী মানুষগুলো আপন- পর বোঝে না। তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে দিনকে রাত- রাতকে দিন বানাতে একটুও ভাবতে লাগেনা। তাদের জীবনটা অবৈধ পথে চলতে চায়। চলতে ভালবাসে। দীর্ঘ সময় তারা এ পথেই চলেছে। শঙ্খকে একজন বলেছিল।

— রোজগারে সৎ- অসৎ কি? ন্যায়- অন্যায় শব্দটা আসবেই বা কেন ? টাকা ইনকাম করতে যে পথে হাঁটতে হয় হেঁটে যাও।
শঙ্খ বলেছিল, – কিন্তু সাদা-কালো দেখবেন না ?
— আরে স্যার, সাদা- কালো দেখলে ইনকাম হবে?
— যার হাতে টাকা-সম্পত্তি দুনিয়া তার হাতের মুঠোয়। আইন তার বুকপকেটে ভাঁজ করা কাগজ। যার কিছু নেই। খেটে খায়। না খাটলে খাওয়া জোটে না। তাদের জীবন তো পশু পাখির জীবন। মানুষের জীবন নয়।
শঙ্খ বেশ কিছুক্ষণ চুপ ছিলো। তারপর বললে, – কিন্তু সুখের জন্য জীবন বাজি রেখে ইনকাম করার রাস্তায়-শখের প্রাণটাই তো চলে যেতে পারে। তাহলে এমন রোজকারের অর্থই তো ব্যর্থ হয়ে যায়।
— স্যার জীবনে লড়াই করেই বাঁচতে হয়। যে জীবনে লড়াই নেই, সে জীবন নিরর্থক। সুখ তৈরি করা যায় না এমনি- এমনি। সুখ কিনতে হয়। তার জন্য চাই অর্থ। মুঠো মুঠো অর্থ। যেটা চাকরি করে- সৎ পথে, কোনদিন হয় না।

শঙ্খ জীবন নিয়ে ভাবতো খুব। একটা মানুষের জীবন ঠিক কেমনটা হওয়া উচিত। বড় হয়ে রোজকার করতে হবে। বিয়ে। সংসার। সন্তান। ক্রমশ প্রৌঢ় -বৃদ্ধ বয়স। তারপর মৃত্যু। না এটা কোন জীবন নয়। জীবনের একটা অস্তিত্ব থাকা উচিৎ। একটা স্থায়িত্ব থাকা উচিৎ। চাহিদা- যোগানের সামঞ্জস্য থাকা উচিত। উচিত – অনুচিত শব্দ দুটোর অনুপাত খুঁজতো মনে মনে। মনের ইচ্ছা পূরণের কাছে কখনো- কখনো শব্দ দুটো তালগোল পাকিয়ে যেত। সাদা কাপড়ে একবার দাগ লাগলে, সে দাগ তোলা যায় কি! কাঁধে বন্দুক নিয়ে একজন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী যোদ্ধা। সীমানা লঙ্ঘনকারী সন্ত্রাসবাদী। চোরা চালানকারী শত্রুদের দমন করার দায়িত্ব প্রাপ্ত জাওয়ান। কেমন নিজেকে আয়নার সামনা-সামনি দাঁড় করিয়ে, শত প্রশ্নের সাওয়াল- জবাব তৈরি করছে। আগামীকাল তাকে কলকাতা ফেরার ট্রেন ধরতে হবে।

জয়নাল আবেদিন | Joynal Abedin

Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল

Appearance of Jagannath and Patitapawan Srivigraha | 2023

Buddhist philosophy and Sudhindranath’s poetic thought | 2023

Role of parents in raising children | Bengali Article 2023

Online Bangla Novel Reading Book | Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online 2023 | New Bangla Novel Reading Book | Bangla Upanyas Online Read | Read Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online pdf | Download Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online Series | Shabdodweep | Sabuj Basinda | High Challenger | Shabdodweep – Bangla Upanyas Online | Bangla Upanyas Online – Joynal Abedin | Bangla Upanyas Online Show | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Novel Writer | New Bengali Novel | Bangla Novel Reading Book in PDF | Free Novel Download | Top Bengali Novel | Famous Bengali Writer | Best Selling Bengali Story | Pratilipi Story | StoryMirror Story | Bangla Upanyas Online Book | Sabuj Basinda Website | Top Bengali Writer | High Challenger Motivational Blog | Full Story in Bengali | Bengali Story Reader | New Bengali Story 2023 | Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo | Natun Bangla Galpo 2023 | Story Writing Competition | Bangla Novel Reading Book 2023 | Writing Competiton 2023 | Shabdodweep Bangla Novel Reading Book | Full Web Stories | Bangla Galper Series | Bangla Novel Reading Book in Netflix Bangla | Download Bangla Novel Reading Book | Bengali Story in USA | Bangla Novel Reading Book in Bangladesh | Indian Bengali Story | Google Bangla Novel Reading Book | Search Bangla Novel Reading Book | Sera Bangla Galpo | 18+ Online Bangla Novel Reading | Adult English Story | Adult Bengali Story | Adult Bangla Galpo | Bangla Upanyas 2023 | Natun Bangla Upanyas | Shabdodweep Upanyas | Shabdodweep New Novel | Attractive Bangla Novel Reading Book | Attractive Bengali Story | Bangla Novel Reading Book Collection | Bengali Story Collection | Story in Bangla | Bangla Galper Episode | Bangla Novel Reading Book Episode | Shabdodweep Forum | Shabdodweep Story Collection | Bengali Web Novel APK | Bengali Web Novel Website | Bengali Literature | Bangla Novel Reading Book in Audio Platform | Bangla Novel Reading Book Audio Book | Bangla Novel Reading Book 2024

Leave a Comment