What is Language and Culture – Soumya Ghosh
ভাষা ও সংস্কৃতি – সৌম্য ঘোষ
মানুষ যেভাবে তার প্রতিদিনকার জীবনকে যাপন করে, সেই জীবনচর্যার সৃজনশীল শিল্পীসুলভ রূপকেই মানুষ নিজ সংস্কৃতি রূপে উপভোগ করে। তাই সংস্কৃতি কোন বাহ্যিক আড়ম্বর নয়; এটি নিতান্তই মানুষের জীবনচর্যার সৃজনশীল অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মূলত একটি জাতির ইতিহাস, ভাষা, সার্বভৌমত্ব, চিন্তাভাবনা, শিল্পকলা, সাহিত্য তথা যা কিছু সৃজনশীল সেই সমস্ত কিছুই সংস্কৃতির অন্তর্গত। আমাদের এই বিশ্বে প্রত্যেকটি জাতির নিজ নিজ সংস্কৃতি তথা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে।
সংস্কৃতির স্বরূপ
সংস্কৃতিকে আমরা সহজ কথায় বলতে পারি কৃষ্টি। এই “কৃষ্টি” (Culture) শব্দটির অর্থ হলো কর্ষণ করা অথবা চাষ করা। “Culture” শব্দটি ইংরেজি সাহিত্যে প্রথমবার ব্যবহার করেছিলেন ফ্রান্সিস বেকন ষোলো শতকের শেষের দিকে। সংস্কৃতি সনাক্তকরণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা গণ্ডি নেই।
সমাজ-তত্ত্ববিদ Jones বলেছেন যে, “মানুষ যা সৃষ্টি করে তার সামগ্রিক রূপই হচ্ছে সংস্কৃতি।” নৃবিজ্ঞানী E.B.Tylor এর মতানুযায়ী, “সমাজের সদস্য হিসাবে অর্জিত আচার-আচরণ, ব্যবহার, জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতি-প্রথা, আইন ইত্যাদির জটিল সমাবেশই হল সংস্কৃতি।”
প্রত্যেক মানুষই চায় নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনন্ত সম্ভাবনাকে প্রকাশ করতে। শুধুমাত্র মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনের পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই সম্ভাবনার আত্মপ্রকাশ সম্ভব। সংস্কৃতির সহায়তাতেই প্রত্যেক জাতি তাদের গৌরবময় রূপটি পূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত করার চেষ্টা করে।
বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
বাংলার প্রাকৃতিক এবং সামাজিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে এখানকার সাংস্কৃতিক জীবনধারার বিকাশ ঘটেছে। বাংলা হল হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ নানা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনভূমি। এখানে সবাই মিলেমিশে একসাথে প্রাণ খুলে তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। একে অপরের সাথে তারা আনন্দ ভাগ করে নেন। একে অন্যের দুঃখে সমব্যথী হন। একের উৎসবে ও অনুষ্ঠানে অন্যরা যোগদান করে। এখানকার মানুষেরা আপন ঐতিহ্যের মহিমায় স্বভাবতই পরম অতিথিবৎসল।
কোন জাতির সাংস্কৃতিক ভাবনা বিকশিত হয় তার মাতৃভাষার মাধ্যমে। যা মায়ের মুখ থেকে পাওয়া। মাতৃভাষা সহজাত আপন ভাষা; মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে পৃথিবীর কোন জাতি উন্নতি করতে পারেনি। ইংরেজরা যতদিন ফরাসিকে ইংরেজি ভাষার উপরে স্থান দিয়েছিল, ততদিন ইংরেজদের শিল্প সাহিত্যের স্ফুরণ হয়নি। রাশিয়াও মাতৃভাষাকে স্বীকার করেই জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় গৌরবময় উন্নতি করেছে। জাপান যতদিন অন্য ভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছে ততদিন তাদের অগ্রগতি ছিল কুণ্ঠিত। মাতৃভাষার মাধ্যমে তারা গৌরবময় অগ্রগতি করেছে।
প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি স্মরণযোগ্য
“আমাদের মন তেরো চৌদ্দ বছর বয়স হইতেই জ্ঞানের আলোক এবং ভাবের রস গ্রহণ করিবার জন্য ফুটিবার উপক্রম করিতে থাকে, এই সময় যদি অহরহ তাহার উপর বিদেশি ভাষার ব্যাকরণ এবং মুখস্থ বিদ্যার শিলা বৃষ্টির মতো বর্ষণ হইতে থাকে তবে তাহা পুষ্টি লাভ করিবে কিভাবে।”
“একুশ” কেন আমাদের কাছে এত তাৎপর্যপূর্ণ? এটা নিয়ে নিশ্চয় বিশদ আলোচনার দরকার নেই। ভাষা আমাদের অস্তিত্বের একটা অংশ। মানুষের যতগুলো আত্মপরিচয় থাকে, তার মধ্যে ভাষা অন্যতম। তার দেশ, জাতি, ধর্ম, পরিবার যেমন তার আত্মপরিচয়, তেমনি ভাষাও। আর নিজের আত্মপরিচয় প্রতিটা মানুষের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। একুশ আমাদের সেই আত্মপরিচয়ের অধিকার অর্জনের মাইলফলক। আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর।
শিশু জন্মের পর মায়ের মুখ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে, মনের ভাব প্রকাশ করতে শেখে, সেই ভাষা তার মাতৃভাষা। মায়ের ভাষা। এই মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি সৃষ্টি করেছে এক গৌরবময় ইতিহাস। বাংলার দামাল ছেলেদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা পায় বাংলা ভাষার মর্যাদা। সেই মহান ‘একুশে’ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃত। বাঙালি মাত্রই সেই বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের গর্বিত আবেগময়ী ইতিহাসকে স্মরণে রাখা উচিত।
দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রজন্ম এই উপলব্ধি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। নিজেদের আসল পরিচয় কী এটা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ভাষা পরিবর্তনশীল। কালের প্রবাহে এর পরিবর্তন হবে। নতুন শব্দ যোগ হবে, এটাই স্বাভাবিক। এমনকি শব্দের ব্যবহারও পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তন আসে বানানে। কিন্তু বাংলা ভাষা বলা, লেখা, পড়া অর্থাৎ ভাষার সার্বিক চর্চায় প্রবল অনীহা চলে এসেছে। ভুল উচ্চারণে বাংলা বলা, বাংলার সঙ্গে প্রচুর ইংরেজি ও হিন্দি শব্দের মিশ্রণ অথবা আদৌ বাংলা না বলাকে আধুনিকতার পরিচয় হিসাবে দেখা হয়। দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পৃথিবী সম্পর্কে জানার দরকার আছে বৈকি। কিন্তু মাধ্যম কেন ইংরেজি হতে হবে? মানছি ইংরেজি শিক্ষার দরকার আছে, শুধু লেখা নয়, বলাটাও। ইন্টারনেট এমনিতেই সেই সুযোগের দ্বার খুলে দিয়েছে। জগৎ সম্পর্কে জানার সুযোগও করে দিয়েছে অবারিত। তারপর নিজেদের বাড়িঘর, স্কুল, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কেন ইংরেজিতে কথা বলতে হবে? কেন পুরোপুরি বাংলায় নয়?
ভাষার ব্যবহার কিন্তু শুধু বলাতেই সীমাবদ্ধ নয়। লেখাতেও নয়। মানুষ কোন্ ভাষার গান শোনে, রেডিও শোনে, টিভি দেখে, চলচ্চিত্র দেখে, বই পড়ে বা ইদানীং বলা যায় টেক্সট মেসেজ করে, ফেসবুকের পোস্ট লেখে; এগুলোর সঙ্গেও জড়িত। সেদিক দিয়েও বলা যায়, আমরা বাংলাকে হারাচ্ছি, আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের নিজস্ব অস্তিত্ব। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইংরেজি ও হিন্দি গান বাংলা গানের চেয়ে অনেক অনেক বেশি জনপ্রিয়। চলচ্চিত্র বা টিভি দুটো মাধ্যম অনেক আগেই দখল করে নিয়েছিল হিন্দি, সেই সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ইংরেজিও। এই দুটো মাধ্যম ভীষণ শক্তিশালী মাধ্যম। যেকোনো জাতির চিন্তাধারায়, আদর্শে, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে এ দুটো মাধ্যমের কোনো তুলনা নেই। আমাদের দেশের মানুষের পোশাক-আশাকে, উৎসবে, সংস্কৃতির সব অঙ্গনে সর্বোপরি তাদের আদর্শে, জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে, চরিত্রে, পারস্পরিক সম্পর্কে সবকিছুতে, সবকিছুতেই এগুলোর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। শাড়ি পড়ার প্রচলন কমে আসছে, উৎসব ছাড়া তেমন দেখা যায় না। পূজার আনন্দকে ছাপিয়ে যদি ভ্যালেন্টাইনস্ ডের উদ্যাপন বড় হয়ে যায়, সেটা বাঙালি সংস্কৃতির জন্য একটা ধাক্কা বৈকি। একেকটা বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন হিন্দি সিনেমার অনুকরণে। পোশাক আশাক সাজসজ্জাও হতে হবে সেই রকম। আর অনুষ্ঠান মানেই হিন্দি গানের সঙ্গে নাচ, হিন্দি সিনেমার অনুকরণে নাচ। বাঙালির নিজস্ব নাচ কই? বাঙালি নিজস্ব গান কই?
ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর এই আগ্রাসন থেকে বাঁচতে হলে মুক্তির পথ আমাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে। এখনই চেষ্টা না করলে অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে। নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে নিজেদের গর্বিত হতে হবে। নিজের অস্তিত্বকে ভালোবাসতে হবে। আমাদের সন্তানদের আমাদের শেকড়ের সঙ্গে, অস্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আমরা যদি আমাদের আত্মপরিচয়ে গর্বিত না হই, তাহলে আমাদের সন্তানদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি? আসুন বাংলাকে ভালোবাসি, বাংলা চর্চা করি দৈনন্দিন জীবনে। শুধু একটি দিনে ভালোবাসা দেখিয়ে, বাকি তিনশ’ চৌষট্টি দিন তাকে ভুলে গেলে হবে না। বছরের প্রতিদিন চলুন ভালোবেসে বাংলা বলি, বাংলা গান শুনি, নাটক দেখি, চলচ্চিত্র দেখি, বই পড়ি, মন থেকে ভালোবাসি আমাদের নিজেদের পরিচয়।
সৌম্য ঘোষ | Soumya Ghosh
Hello Baby Animals | হ্যালো বেবী এনিম্যালস | সুবল দত্ত | Top New Story 2023
100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
Ananta Bikeler Rupkathara | অনন্ত বিকেলের রূপকথারা | New Bengali Story 2023
Natun Bangla Kabita 2023 | নীলমাধব প্রামাণিক | Top New Poetry
ভাষা ও সংস্কৃতি | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলা প্রাবন্ধিক | গল্পকার | সাহিত্যিক | নতুন প্রবন্ধ ২০২২ | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | কবি | লেখক | আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | ২১শে ফেব্রুয়ারি | আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি | ২১শে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস | ২১ শে ফেব্রুয়ারি রচনা | মোদের গরব মোদের আশা | আ মরি বাংলা ভাষা
21st February 2023 | Ekushey February | Ekusher Gaan | Bangla Article | Bengali Article | Bangla Prabandha | Definite Article | Essay 2023 | Article 2023 | Bengali Poetry | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Poetry Collection | Book Fair 2023 | Bengali Poem | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Poet | Story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Relationship Between Language and Culture | Language And Culture Relationship | Language and culture pdf | relationship between language and culture pdf | difference between language and culture pdf | Language and culture essay | Language and culture notes | Shabdodweep Founder | What is Language and Culture | What is Language and Culture in pdf | Read Article – What is Language and Culture | Online article – What is Language and Culture | Read article – What is Language and Culture | Trending article – What is Language and Culture | What is Language and Culture in Archive | What is Language and Culture – English Essay | Full article – What is Language and Culture | Article Archive – What is Language and Culture | What is Language and Culture – Read article | Question – What is Language and Culture