Sad Emotional Bangla Galpo – Krishna Kishore Middya
পরাজিত – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
মাঘ মাসের মধ্য রাত পার করে এলো তার মৃতদেহ। সে ভেবেছিল কী, জীবন যন্ত্রণার! মৃত্যু যে কী যন্ত্রণার, সে তো বোঝে মা, বাবা আর বোন ভাই। পিতৃ হারা হয়ে সংসার যুদ্ধে সে ছিল সৈনিক। কিন্তু কেন তার হল পরাজয় নিজের কাছে, সে প্রশ্ন করে কোন উত্তর সাজানো যায় না। শুধু অনুমান আর যুক্তির ফলা দিয়ে কেটে কেটে নিজের বুকটা খালি করে দিচ্ছে মা। সারাদিন অপেক্ষমাণ। আদিবাসী সমাজের রীতি উপেক্ষা করে গভীর রাতের মনি নদীর চরে নিস্তব্ধ প্রকৃতির কোলে গুটিকয় যুবক চিতা সাজাচ্ছে। মাটির বিছানায় শুয়ে আছে চব্বিশ বছরের একটা জীবন , যুবকের। ঘরে বিধবা মায়ের বুক চেরা কান্না মাঝ মাঘের সদ্য দক্ষিণ বাতাসের স্রোত বেয়ে কোথায় যেন চলে যায়। কৃষ্ণ পক্ষের ভাঙা চাঁদের কান্না শিশির হয়ে ঝরে পড়ছে চরাচরে। ক্লান্ত কান্না ভেজা চোখে তার দাদা, প্রতিবেশী কজন দ্রুত চিতা সাজাল।
শেষ প্রহরের শেষে ওরা যখন ঘরে ফেরার পথে, লক্ষ কোটি তারা দূর আকাশে মলিন আভা ছড়াচ্ছে, মনি নদীর কান্না কুলু কুলু! দু তীরের সবুজ বনানী নির্বাক দর্শক যেন। কোটি মানুষের পৃথিবী থেকে একজন চলে গেলে পৃথিবীর হয়তো কোন দুঃখ নেই, কিন্তু যার নাড়ি ছেঁড়া ধন সে কী সান্ত্বনা দেবে নিজেকে! “সমুদ্রের পার আছে, তল আছে তার, / অপার অতল মাতৃ স্নেহ পারাবার।” এই তো এখনই নিদ্রা হীন রাত শেষ হয়ে ভোরের আলো পৃথিবীতে আলো দিলে জীব কুলের প্রাত্যহিক জীবনের ছন্দ শুরু। নদীকে ভালোবেসে, নোনা মাটিকে ভালোবেসে যে শহরের কানা গলিতে যেতে ভয় পেত, সে কী করে মৃত্যুকে ভয় পেল না! বাবা তার চলে যাওয়ার পর নাবালক ছেলেটা তো মাকে সাহস জুগিয়েছিল। বড় খোকা বড় ভেঙে পড়ে, কিন্তু ছোট ভাই হয়ে সেই তো সাহস যুগিয়ে ছিল। ভাই অন্ত প্রাণ দাদা কী করে ছোট ভাইকে নদীর চরে রেখে এলো আজ ! নিস্তরঙ্গ পুকুরের পাড়ে বসে মা অভাগিনী তখন ভূমিকম্পের পরে নিশ্চিহ্ন ভিটের দিকে যেন চেয়ে আছে। এমন সময় শব যাত্রীরা ফিরে এলো ঘরে। সুখরাম শুধু এলো না ঘরে। এখন অনন্ত তার ঘর।
আমন ধান চাষের পর এখন মাঠে মাঠে বোরো ধানের চারা রোপণের কাজ চলছে পুরোদমে। সুখরাম মুন্ডা সকাল হলেই জ্যাঠামশাইয়ের জমিতে কাজে যায় । শীতের দিন রোদ্দুরের মুখ দেখলেই কাজ শুরু। এমনিতে গ্রামে কাজের অভাব। বোরো ধান রোযা শেষ হলে কাজ প্রায় থাকে না। তখন সে তার দাদার ছোট নৌকো নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়। মাছ যে সব সময় হবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই, তবু তার চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। দাদা থাকে কলকাতায় সেখানে নাকি কাজের অভাব নেই। ভাইকে সে কতবার বলেছে সে কথা। কিন্তু সুখরাম এই নদী, এই গ্রাম ছেড়ে যেতে চায়নি। দুই ভাইয়ের এইখানে দ্বন্দ্ব। মা বলেছে সংসারটা একটু গুছিয়ে নিয়ে দুই ছেলের বিয়ে দেবে। তারা তাদের সংসার করবে, মা হয়ে সন্তানদের নিয়ে এই টুকু স্বপ্ন দেখা। কিন্তু দুই ভাইয়ের এই মানসিক দ্বন্দ্ব মায়ের পছন্দ নয়। শূন্য থেকে জীবন শুরু করে শূন্যতায় ভরে আছে যে সংসার সেখানে একটু স্বস্তি কে না চায়, এই ইহ জীবনে।
পূর্ব পুরুষ ছিল বিহারের আদিবাসী মুন্ডা গোষ্ঠীর। কতকাল আগে সেই ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশেরা নিয়ে এসেছিল জঙ্গল হাসিল করার কাজে। সেই থেকে তারা আর ফিরে যায়নি। এখন এখানকার ভূমিপুত্রদের সঙ্গে জীবন তরঙ্গ অজান্তেই অনেকটা সংমিশ্রণ ঘটে গেছে আচার আচরণে লোক লৌকিকতায়। হয়তো এই মাটির গুণে নিজ গোষ্ঠীর আচরণ গুলো ক্রমশ বিলীয়মান। তবে জীবন তো পরিবর্তনশীল। ভূমিপুত্রদের মূল সমাজের সঙ্গে জীবন ও জীবিকা আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে। সেদিন দাদা ঘরে ফিরে এলো, জ্ঞাতি ভাই দাদারা ও কোন এক উৎসবের কারণে একত্রিত হল। আর এই একত্রিত হওয়াটাই যে কাল হবে কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।
কলকাতাতে ঘর ভাড়া করে থাকলে পা বাড়ালেই পয়সা লাগে । তাই তেমন বেশি কিছু টাকা মায়ের জন্য বা সংসারের জন্য পাঠানো খুবই অসুবিধার। মা সেকথা বোঝে। তাই বড় ছেলে মাকে বার বার বলে অন্তত সংসারের সবজি যা প্রয়োজন সেটা যদি নিজেদের যে জায়গা টুকু বাগানে আছে, সেখানে ফলালেই তো কিছুটা সাশ্রয় হয়। আর ছোট ভাই বাড়িতে আছে যখন সেই করতে পারে সবজি চাষ নিজেদের বাগানে। মা তাই ছোট ছেলেকে সে কথা জানায়। ইতি মধ্যে সুখরাম যে তাদের মাঠের ভাগের বাগানে সবজি লাগিয়েছে, মাও জানে না এবং দাদা। অন্যের বাড়ি কাজের ফাঁকে সে নিজেদের বাগানে নানা সবজির বীজ ও চারা লাগিয়েছে। কিন্তু এখনও সেই মরশুমি সবজি ঘরে ওঠেনি। সে জন্য সে বেশ ভাবিত, তবে আশাবাদী। কীটনাশক আর সার কিনে এনেছে পারিশ্রমিকের পয়সা দিয়ে।
সেদিন সকাল হলেই ভাই কাজে বেরিয়ে গেলে দাদা পাড়ায় ও তাদের বাগানে গেল অনেক দিন পর। দেখলো সে, সবজি বাগান আলু কপি পালং চাষের খেত মাটির থেকে যেন উঠতে চাইছে না। সেটি কী জমির দোষ না চাষীর দোষ। পাশের ভূমি খণ্ডে চোখ জুড়ানো দৃশ্য। এইখানে হয়েছে এক বিভ্রান্তি, সে নিজেদের ভূমি খণ্ডটি চিনতে ভুল করেছে, অনেকদিন না দেখার ফলশ্রুতি। সন্ধ্যে বেলা ভাই ফিরলে একথা সেকথার ফাঁকে বাগানের প্রসঙ্গ এনে এক তুমুল বিতণ্ডা ভাইয়ে ভাইয়ে। লোকে বলে নিজের ভাইয়ের মত মিত্র যেমন হয় না আবার ভাইয়ের মত শত্রুও দেখা যায় না। কথাটার দ্বিতীয় অংশটা যে এমন ভাবে মিলে যাবে মা বুঝতে পারেনি। বাগান চাষের তির্যক সমালোচনা ভাইয়ের গায়ে লাগতেই আগুনে যেন ঘি পড়ে গেল। মাঝখানের ভুলটা অনুঘটকের কাজ করতেই দাদার হাত ভাইয়ের গায়ে উঠলে সেদিন রাতে মা তার ছোট ছেলেকে ভাত পাতে বসাতে পারলে না। যে দাদার হাত ধরে ভাই কত পথ চলেছে, দাদার সেই হাত গায়ে ওঠার একটা জ্বালা ভাইকে যেন কুরে করে খাচ্ছে। বয়ঃসন্ধি পার করে আসা ভাই কোন মতে নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করলেও যেন কোথায় একটা বাঁধ ভেঙেছে। রোদে শুকনো তাল পাতাতে যেমন দ্রুত আগুন ধরে যায়, তেমনি সুখরামের মাথায় দ্রুত আগুন ধরে যায়। ভোরের বেলা সে কীটনাশক খেয়ে বসে।
ভোরের আলো ফোটার আগে ছেলের ঘর থেকে গোঙানির শব্দে মায়ের বুক ছ্যাঁত করে ওঠে। বড় ছেলেকে ডেকে তুলে পাড়ার ছেলেদের ডাক দেয়। গত রাতের ঝগড়ার শব্দ ওদের কানে পৌঁছে ছিল, কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিত যে এমন মারাত্মক হবে কেউ বুঝতে পারেনি। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ‘রেফার’ হয়ে চলে যেতে হল কলকাতার হাসপাতাল। সেখানেও ভর্তি করতে সময় নিল বত্রিশ ঘণ্টা। গাঁ-গেরামের মানুষ কলকাতায়, অথৈ জলে ভাঙা নৌকো। …. পনেরো দিন মা দাদা আর প্রতিবেশীদের উৎকণ্ঠা আর বিনিদ্র রজনী শেষে যে সংবাদ বাতাস বাহিত হয়ে এলো, মায়ের কাছে বজ্রপাতের সামিল। মরা মুখখানি দেখার জন্য এই থানা সেই থানায় কেটে গেল দুটো দিন। …..
মানুষ যখন হেঁটে বেড়ায়, কেঁদে বেড়ায় কেউ তার অস্তিত্ব খেয়াল করে না। যখন সে পার্থিব জগৎ থেকে চলে যায় পরিচিতদের কাছে ধরা পড়ে তার অস্তিত্বের অভাব। আর মায়ের বুক ফাটা কান্নার করুণ আর্তি বোঝার সূত্র আজও মানুষের অজানা। ….. রোজ সকাল হলেই মায়ের কান্না বাতাস বাহিত হয়ে কলকাতা থেকে ‘একতারা’ গ্রামে ফিরে ফিরে আসে। নির্বাক দাদা ভায়ের হাতে তৈরি নির্ভুল বাগানের ধারে গিয়ে বাড়ন্ত সবজির দিকে তাকিয়ে হৃদয় বিদারী কান্নায় ভেঙে পড়ে। সকালের প্রাক বসন্তের আলো নিয়ে সূর্য তার কান্না থামাতে পারে না।
মৃত্যু অস্বাভাবিক – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
চক্রর ওপর দায়িত্ব বর্তাল কনক স্যারকে নিয়ে যাবার। তখন বেলা বারোটা পার হয়ে গেছে। গন গনে দুপুর বাইরের রাস্তায়। চৈত্র মাস। চক্র অর্থাৎ ড্রাইভার চক্রধর জানা। স্ট্রাইফ গেঞ্জি, ধূসর রঙের প্যান্ট, মাথায় চুল কম বলাই ভালো, হাতে তার গাড়ির লগ বুক। খুবই নিরীহ, মানুষটার গাড়ি চালানোর হাতটা খুব ভালো। অশোকবাবু পুলকারের দায়িত্বে। তিনি চক্রকে নির্দেশ দিয়েছেন, কনক স্যারকে হসপিটালের মর্গে নিয়ে যেতে। অফিসের জরুরি, আধা জরুরি ও অন্যান্য কাজ রেখে, তিনি দোতলা থেকে নিচে নামলেন। অশোক বাবুর ঘরে ঢুকতেই চা পানের জন্য পীড়াপীড়ি। অগত্যা চক্রকে খবর দিয়ে চা এর ব্যবস্থা হল।
চক্রধর জানার চার চাকার গাড়িতে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই থানার আই.ও. একটা স্যালুট ঠুকে বললেন, – স্যার অনেক দেরি হয়ে গেল, সেই সকালে এসেছি স্যার। – কী করি বলুন, আমাকে তো আধ ঘন্টা আগে জানানো হল। কথা দীর্ঘ না করে মর্গের কাছে যেতে পচনশীল মরদেহের একটা উৎকট গন্ধ বাতাস বাহিত হয়ে নাকে ঢুকলো। একটা গা বমি বমি ভাবের। এখন অবশ্য তার রপ্ত হয়ে গেছে। হাসপাতালের ডোমেরা যে ঘরে বিশ্রাম নেয়, সেখানে যেতে, একজন কালো মাঝবয়সী হ্যাফ প্যান্ট পরা মানুষ বেরিয়ে বলে, – চলুন স্যার।
মূল মর্গের কাছে যাওয়ার আগে বামদিকে একটা ছোট ঘর। তার মেঝেতে গোটা পাঁচেক মৃতদেহ। বেশির ভাগ দেহ খুব ফুলে গেছে, কোনটায় পচন ধরেছে , রাশি রাশি নীল মাছি চেয়ে গেছে । মেঝে ভিজে গেছে দেহ নিঃসৃত জলীয় পদার্থের রসে, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের সম্ভব নয় বেশিক্ষণ। দ্রুত মূল জায়গায় যাওয়ার আগে গেটের চাবি খুলে দাঁড়িয়ে আছে দেহ দেখানো মানুষটি। ওদের সঙ্গে মৃতার পরিচিত আত্মীয় দুজনও গেল।তাদের নিজেদের মৃতদেহ শনাক্ত করতে ডাকা হয়েছে । ঘরের ভিতর থেকে ওরা বের করে আনলো একটা যুবতীর লাশ । তরতাজা সেই দেহ দেখে কনক স্যারের মনে হল, মৃতা নয় অঘোর ঘুমের মধ্যে আছে। কয়েক সেকেন্ড তার মাথাটা একটু যেন টলমলিয়ে উঠলো। মৃতার ছোট ভাই দিদির দেহ চিনিয়ে দিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো । তপ্ত রোদের তাপে পুড়ে যাওয়া যুবকটিকে সামলাচ্ছে তার বন্ধু। কনক বললো, – তোমরা আড়ালে যাও ভাই।
সুন্দর একটা লাল শাড়ি, ম্যাচিং ব্লাউজ কপালে উজ্জ্বল লাল টিপ আর সিঁথিতে সিঁদুর। শাঁখা আর পলা দুই হাতে। বাইরে কয়েক জন আত্মীয় অসহায় দাঁড়িয়ে। দায়িত্বে থাকা লোকটিকে বললাম দেহ নিরাবরণ করতে । লম্বা চুলের বিনুনি আছে অক্ষত। সারা দেহে কোন ক্ষত চিহ্ন নেই, শুধু গলার ঊর্ধ্ব ভাগে ইঞ্চি পাঁচেক লম্বা কালসিটে দাগ ! উদ্বন্ধন ! নাকি শক্ত হাতের কারসাজি। ওই লোকটি একদম মুখস্থের মত বলে যাচ্ছে, দুই হাতে শাঁখা, পলা, নাকে কিছু নেই, পায়ের নখে নেল পালিশ, চুল লম্বা ও কালো, চোখ বোজা, …। কনক স্যার সব খুঁটিয়ে দেখে ছোট প্যাডে নোট নেয়।
মৃত্যুর আপাত কারণ সম্পর্কিত প্রতিবেদন নিমিত্ত হসপিটালের ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে বসে, আত্মীয়দের ডাকেন কনক স্যার। কাছাকাছি আই ও দাঁড়িয়ে, খুবই ব্যস্ততার ভাব চোখে মুখে। মৃতার বাবা, শ্বশুর ও পঞ্চায়েত সদস্য আছেন । হাসপাতালের ভিড়ের মধ্যে কোন এক আড়ালে বসে অঝোরে কাঁদছে দুঃখিনী মা, সামলাচ্ছে পাড়ার এক পরিচিত মহিলা। শ্বশুর মশাইকে ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাইলে, – হাত জোড় করে যা বললেন কাঁপা গলায়, তা আজকের সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব করুণ কাহিনী। যার খুব সামান্য শতাংশ গোচরে আসে, বাকি সব ….। ছেলে থাকে সুদূর মালয়েশিয়াতে, কাজের শ্রমিক, সেখানে বছর দুই হল। বাড়িতে গরীবের সংসারে মা, বাবা, দুই বোন, তার স্ত্রী আর ছোট তিন বছরের মেয়ে, গরিবানা মত ছেলের পারিশ্রমিকের পয়সায় চলে। বেয়াই মশাই মেয়ের জন্য শুধু দু চোখ মুছে যায়। ইতিমধ্যে মৃতার ছোট মেয়েকে পাশের গ্রামের মামাবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত রাতে বৌমা ছেলের সঙ্গে মোবাইলে অনেকক্ষণ কথা বলছিল। সবাই রাতে শুয়ে পড়ে। ইটের দেয়াল টালির ছাউনি তিনটে ঘর রান্নাঘর, মাঝারি পরিসরে তাদের ভদ্রাসন। সকাল হলে সবাই উঠে পড়ে, কিন্তু বৌমার ঘর ছিল বন্ধ। একটু পরে নাতনির কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে শাশুড়ি মায়ের একটু খটকা লাগলো। দরজায় ধাক্কা দিয়েও সাড়া না দেওয়ায় বাড়ির সকলকে ডাকলো। শেষে প্রতিবেশীরা এসে দরজার কপাট ভেঙে দেখলো এক মর্মান্তিক মৃত্যু। ঝুলন্ত মৃতদেহ। শিশুটি তখন মেঝেতে পড়ে কাঁদছে অসহায় ভাবে।
আই .ও.কে ডেকে কনক স্যার জিজ্ঞেস করে, এত দেরি করে আসার কারণ। তিনি সবাইকে একটু বাইরে যেতে বললেন। ইতি মধ্যে কনক স্যারের প্রতিবেদন সম্পূর্ণ হলে, মৃতার শ্বশুর, বাবা ও জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে ওই প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট অংশে। আই.ও. তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জানাল, – মৃত্যু হল একটা তরতাজা যুবতী বধূর, বাবা হারাল তার প্রিয় সন্তানকে, ছোট শিশুটি মা বলে আর কাউকে ডাকতে পারবে না, ওদিকে মা কাঁদছে আর জ্ঞান হারাচ্ছে বার বার। কিন্তু জীবন তো ফিরে আর আসবে না ! তাই সদস্যের মধ্যস্থতায় যাতে মামলা মোকদ্দমা না হয়, তাই আত্মীয় ও গ্রামের মাতব্বরদের নিয়ে একটা সালিশি হয়, দেরির কারণ সেইটা।
মৃতদেহের নিখুঁত বিবরণ সহ মৃত্যুর আপাত কারণ সম্বলিত প্রতিবেদন যাবে হসপিটাল সুপার ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসি’র কাছে। তারপর ডাক্তার বাবু পোস্ট-মর্টেম (মৃত্যুর পরবর্তী) এক্সামিনেশন তৈরি করবে তাঁর নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে। ওই পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলেই মৃতদেহ স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু ও পরবর্তীতে মৃতদেহের সৎকার।
কনক স্যার প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন প্রদান করলে সবাই চলে গেল পরের প্রক্রিয়ার জন্য। এখন কনক স্যার একলা। তাঁর মনটা কিন্তু চলে গেছে ছায়াময় এক গ্রামের এক গরীব খেটে খাওয়া মানুষের সংসারে। যেখানে সারাদিন সংসারের কাজে ব্যস্ত এক গৃহবধূ। অষ্টাদশী এক যুবতী বধূ তার ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকে, স্বামী বিদেশে শ্রমিকের কাজ করে। তার রক্ত জল করা পয়সায় দিনাতিপাত হয়, জনা পাঁচেক সদস্যের সংসার। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে এই দৃশ্য। যতই কাজের মধ্যে থাকুক না কেন, মনটা পড়ে থাকে অন্যত্র। সেই মালয়েশিয়ার কোন এক ঝুপড়ি ঘরে অথবা অন্য কোথাও কিভাবে একটা মানুষ বছরের পর বছর পড়ে থাকে! একজন কম বয়সী বধূর স্বামী বিচ্ছেদের বিরহ ব্যথা বোঝে ক’জন ! তার মানসিক যন্ত্রণা কোন স্তরে গেলে এমন ভাবে জীবন বিসর্জন দিতে পারে! বীথিকা মণ্ডলের মৃতদেহ কনক স্যারের অনুভূতিতে এক ঝড় তোলে ! কত বীথিকার মৃত্যু হচ্ছে দিন দিন কেউ তার খবর রাখে না। দু-একটা মৃত্যু সামনে এলে প্রচলিত একটা প্রতিবেদন করলেই কী দায়িত্ব শেষ ! কী করুণ জীবন নিয়ে একটা শ্রেণি বেঁচে আছে। সমাজ ব্যবস্থা, সমাজবদ্ধ পরিবার,সম্পর্কের নিবিড় বাঁধন এই নিয়ে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কনক মণ্ডলের মনে। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রশাসন, রাজনীতি, দারিদ্র্য, শিক্ষা, ভালোবাসা স্নেহ, সমস্ত বিষয়গুলো যেন একটা ঘূর্ণি স্রোতের মধ্যে অদ্ভুত ভাবে ঘুরছে !
তাঁর ভাবনার পটভূমি মুহূর্তে বদলে যায়। অজানা সেই গ্রাম হানিগঙ্গা, পো : ঝিকারা, থানা: গাইঘাটা । সেখানে যেন মৃত বীথিকা মণ্ডল আবার হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে , মেঠো পথ বেয়ে, তার ছোট্ট মেয়েটা দৌড়ে এসে বলছে মিষ্টি গলায়, – মা তুমি কোথায় গেলে ! এমন সময় চক্রধর ড্রাইভার এসে বলে, – স্যার অফিসে যাবেন না !
অদ্ভুত এক জগৎ থেকে কনক স্যার ফিরে আসে। থতমত খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন, – হ্যাঁ তো, চলুন চলুন। …. গাড়িতে চক্র ধর মনে মনে ভাবে, এ কোন স্যার! চোখ মুখে অন্য এক বিপন্নতা! কী হল স্যারের! এমন তো আগে হয়নি! অফিসের টেবিলে এসে, টিফিনের বক্সে হাত দিতে ইচ্ছে করলো না। এক গাদা ফাইল থাকলেও কাজে মন দিতে পারে না। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে, – বীথিকা মণ্ডলের মৃত মুখ যেন চৈত্রের পড়ন্ত সূর্যের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে,তার কপালের টিপ আর সিঁথির সিঁদুর সূর্যের লাল আভার লালিমার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
হঠাৎ কনক স্যারের দু চোখ ভিজে গেল। গলার কাছে খুব কাছে এলেও মুখ ফুটে বেরিয়ে আসছে না, –
“নারীর হৃদয় – প্রেম – শিশু – গৃহ – নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় —
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে ;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত — ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে সেই ক্লান্তি নাই ; “…
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
New Bengali Story 2023 | আশার আলো | সুভাষ নারায়ন বসু
New Bengali Story 2023 | তুতানের পৃথিবী | গল্পগুচ্ছ
New Bengali Story 2023 | সন্দেহের কাঁটা | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
Bengali Story 2023 | রূপান্তরের পথে | ডরাইয়া মরে
Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla golpo pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Suspense story in english | suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Sad Emotional Bangla Galpo | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Sad Emotional Bangla Galpo | Pdf Sad Emotional Bangla Galpo | Sad Emotional Bangla Galpo App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Sad Emotional Bangla Galpo 2024 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Sad Emotional Bangla Galpo Video | Story – Sad Emotional Bangla Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Sad Emotional Bangla Galpo Netflix | Audio Story – Sad Emotional Bangla Galpo | Video Story – Sad Emotional Bangla Galpo | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Sad Emotional Bangla Galpo | Top Sad Emotional Bangla Galpo | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Modern Online Bangla Galpo