Diary of Bangla Galpo – সূচিপত্র [Bengali Story]
রোদে মেঘে আনাগোনা – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ [2024]
বাঁশের বেড়ার ফুটো দিয়ে কতো কীইতো দেখা সম্ভব হয়। রাত দশটায় ঝগড়াঝাঁটি, সকাল দশটায় ঝগড়াঝাঁটি, বিকেল পাঁচটায় ঝগড়াঝাঁটি। এখন সতী-সাহাব পরিবারের কমন বিষয়। সতী আর সাহাব। কচি পাতার মতো নতুন সংসার। পালিয়ে আসা। মুরুব্বীরা চান তাঁদের কথামতোই অনুগত ছেলেমেয়েরা সংসারের আবেদন করবে।মুরুব্বিরা মনে করিয়ে দেবেন।পাত্র অনুসন্ধান হবে। দেখাদেখি হবে।ঘাটাঘাটি হবে।খুনসুটি হবে।যাচাই-বাছাই হবে।পছন্দ অপছন্দ তো আছেই। যদিও কতিপয় ক্ষেত্রে উল্টোটিও ঘটে। এরা আবার কয়েক কাঠি উপরে। ঝাঁপিয়ে প্রেমের রোগ হবে।চুটিয়ে সবার নাকের ডগায় প্রেম করে যাবে। তারপর লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা, সব হিসেব কড়ায়গণ্ডায় আমলে নিয়ে সংসারে টুপ করে ঢুকে পড়বে।মুরুব্বিরা সেটা মানতে নারাজ। কেউ কেউ এটাকে সঠিক মনে করেন। তাই সতী-সাহাব জুটি পালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ নেয়, দেরী করে না। চল পলায়ে যাই— গানটা এদের কাছে ভালো লাগে স্কুল জীবন থেকেই।
বুলির বাবা তাদের বাড়িওয়ালা। বাসা ভাড়া এদের কাছে দেবেন না, একদম সাফসুতরো আলাপ। কিন্তু দূতিয়ালি করে নিশানের বৌ সাকসেসফুল। আজকেই বিয়ে হলো, জিনিসপত্র কেনা হলো, রাতেই হালকা ডিনার হবে। ফ্রেণ্ডসার্কেলের কয়েকজন, একদম নাছোড়বান্দা টাইপের যারা তাদের জন্য জাস্ট সিম্পল একটা ট্রীট। সমবয়েসি দূর সম্পর্কের মামা, আর দারোয়ান লোকমান ভাই। তাদের সকল জোড়াতালির বিরাট হোতা। কারোরই রান্নার প্রশিক্ষণ নেই। বিয়ের আগে অনেকে ছোটবেলায় মা-চাচীদের যৌথ প্রয়াসে ডুবে থেকে শিখে ফেলে। সতী আদুরে এবং বাবার একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলাটা অভিজ্ঞতাহীন ছিলো। তাই এখন সংসার নামক বাসটি স্টপেজে এসেছে। তাই সদ্য মাস্টার্স করা সতী মায়ের কিচেনে এটা ওটা করার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রশ্নের খপ্পরে পড়তে যাচ্ছিলো।
— আচ্ছা মা,ডাল রান্নায় পেঁয়াজের সাথে কি রসুন দিতে হয়?
— কেনরে রে?
— না,এমনি। জাস্ট জানতে চাইলাম।
তারপর লুকিয়ে পড়া সতী হঠাৎই বেরিয়ে গেলো। আরেকদিন সতীর জিজ্ঞাসা, মা দেড় মাসের বাচ্চার গায়ে কি লোশন মাখা যায়? এবার মায়ের চোখ রসূনের মতো সাদা এবং বড় হয়ে গেলো।
— তোর কী হয়েছে, বলতো!
আবারও নিজেকে লুকিয়ে ফেললো সতী। বিষয়টা মা গিয়ে বাবাকে বললেন, ওগো শুনছো—। বাবার এসব শোনার টাইম কম। ওদিকে সাহাবকেও প্রশ্নটা করে। সাহাব একটু অবাকই হলো, তোমার মুখে হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন?
— না, আমরা আফটার অল সংসারটা শুরু করতে যাচ্ছি তো, তারই কতিপয় আগাম প্রস্তুতি।
— আচ্ছা, বুঝেছি। কিন্তু তাতে এতো আগাম প্রস্তুতির কী দেখলে?
— কেন নয়? এগুলো কী অবান্তর? অভিজ্ঞতা নিতে হবে না?
— অবশ্যই। কেউ কী তোমার মতো এরকম বিসিএস এর মতো স্টাডি করে সংসার শুরু করে? সংসার শুরু করে দেয়। তারপর ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে আগায়। অভিজ্ঞতা পরে হয়।
তারপর যুক্তি, পাল্টা যুক্তির সংযোজন বিযোজন, প্লাস-মাইনাস। শেষে যখন দুপক্ষের মুরুব্বীরা আত্মীয়, অনাত্মীয়ের মধ্যে সার্কুলার দিয়ে ফেলেছেন, আর কড়া মার্কিংয়ে রাখতে শুরু করেছেন, শ্যেনচক্ষু হানা শুরু করেছেন, তখনই সতী, সাহাব জীবনের কঠিন ক্যালকুলাসটার ফাইনাল রেজাল্ট বের করে ফেলে।
নাহ,চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে।
বাসা ভাড়া নেয়া হলো। সাহাবের এক আত্মীয় এ-বাসার দারোয়ান। তার সহযোগিতা একশতে একশ। শর্ত প্রযোজ্য, ভরপেট কাচ্চি, আর বিশ টাকা দামের পানের খিলি। সংসারের বিউগল বাজিয়ে দিলো বন্ধুরা। সাহাবের মা কোমল-প্রাণ। ছেলে এত বড় বেইমানী করবে মানতেই পারেন না। কিন্তু সন্ধ্যায় একদম রাখঢাক না করে ঘটনাটা বলে ফেলার পরে মা এভাবে স্ট্রোক করে ফেলবেন ভাবতেই পারেনি সাহাব। হাসপাতালে আইসিইউতে চার-পাঁচ দিনের জেল খেটে বেরুনোর পর শিয়রের দাঁড়ানো সতীকে দেখে জিগ্যেস করেন, মেয়েটা ভারি মিষ্টি। কে রে? মার সামনে গুটিয়ে যাচ্ছিল সাহাব। সতী পায়ে ধরে সালাম করার পরই মোটামুটি বুঝেই ফেললেন, বললেন, শোন্, তোরা লেখাপড়া করেছিস, নিজেদের জীবন নিজেরা গড়ে নে। ভালোমন্দ নিজেরা হিসেব করে নে। মাকে জড়িয়ে ধরে সতী, সাহাব। কিন্তু সতীর বাবা-মা, আমার বাবাকে কী করে ম্যানেজ করব—? ওটা ম্যানেজ করা যাবে।
ম্যানেজ করার আগেই তেজকুনি পাড়ার নীল কালারের বাসার চার তলায় একটি ইউনিটে ব্যাংকার সাহাব, হাইস্কুল টিচার সতীর জন্য টুনি বাল্বের হাজারো বাতি ঝলসে উঠলো। দুয়েক দিন গেলো বিয়ের নানান পর্ব। শরীরেও বিয়ের ঘ্রাণ, রঙ লেগে আছে।তারপর ব্যস্ত পৃথিবীর সবাই নিজ নিজ কাজে সরতে শুরু করে। আগের তুলনায় দ্রুতই গড়াচ্ছিল মনে হয় পৃথিবীটা। কিচেনে আরো কিছুদিন ডাল, আলুভর্তা, ডিম পোঁচ খেতে হবে। এর চাইতে বেশি কিছু অভিজ্ঞতা নেই। ভাগ্যিস পাঁচতলার দিনটা আন্টি পেঁয়াজ কাটার নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছেন। মাছটাতে সাহস হয় না। তাছাড়া ওটার আঁশটে গন্ধে পেটের ভেতর থেকে সব ওয়াক আউট করার হুমকি দেয়। মাংসের সাথে মশল্লা, তেলের হিসেব-নিকেশটা দ্বিঘাত সমীকরণের মতো জটিলতর লাগে। চেষ্টা করতে গিয়ে হাফ লিটার তেলের বোতলটা চুলোর ওপর পড়ে গেলো, আর যত বিপত্তি। পোড়া হাত নিয়ে কিছুদিন সতী বিছানায় শুয়ে শুয়ে সাহাবকে বলে দেয়। আর সাহাব ভুলভাল মিশিয়ে রান্না করে। দুপুরের পরে ডাইনিং টেবিলের ওপরে অনভিজ্ঞ বালক-বালিকা সহজ সরল খাদ্য খায়, আর বলে ওফপপ্ ফাইন, ঝাক্কাস, অসাম, সেইইইই স্বাদ — এরকম ফেসবুকীয় শব্দের ভেতরে তৃপ্তি খুঁজতে থাকে। সাহাব এবার বিচলিত। কেন না, সতীর ভেতর থেকে তার বিবমিষার লক্ষ্মণটা প্রকাশ করে। মকবুলের গলির মোড়ে ডাক্তার আংকেল প্রেসার মাপেন। ইউরিন টেস্ট স্ট্রিপ কিনতে বলেন। স্ট্রিপের গায়ে দুটো লাল দাগ দেখে ডাক্তার আংকেল একটু মোলায়েম হাসি হাসলেন। সাহাব একটু ইতস্তত করে, আংকেল, কোনো প্রবলেম? প্রবলেম তো আছেই। আপনারা কেন আমার জন্য মিষ্টির অর্ডার করছেন না?
সত্যি সত্যি সাহাব ডাক্তার আংকেলকে দুই কেজি বালিশমিষ্টি দিয়ে আসে। তিন মাস পর সতীর অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেন না, স্কুলটা গ্রামে। কখনো ভ্যান, কখনো পায়ে হেঁটে যাওয়া। রাস্তায় পিচ ছিল। ছাল ওঠা অর্জুন গাছের মতো অবস্থা। দাউদের মতো ছোপ তার গতরে। ভাঙ্গা রাস্তা বলে অটো, সিএনজি চলে না। শহরের সাফসুতরা মানুষেরা আসে, জরিপ করে, মাপজোখ করে। তারপর চলে যায়। রাস্তার জায়গায় রাস্তা পড়ে থাকে। বরাদ্দ আসে।বরাদ্দ হাওয়া। আবারও প্রজেক্ট আসে।কিন্তু রাস্তায় আলকাতরা পড়ে না। পড়ে তিন নাম্বার ইটের খোয়া। বুলডোজার আসে।আপাতত রাস্তা সমতল চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে। আবার বর্ষার সাথে সাথে সুরকী উঠে যায়। এটাই যেন নিয়তির বিধান।
মিসক্যারেজ! সতীর জন্য বিশাল একটা ফর্দ ধরিয়ে দেন ডাক্তার। হিউম্যান ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আল্ট্রা করাতে হবে। সঙ্গে লিপিড প্রোফাইল। রিপোর্ট অনুযায়ী ব্লাড ভরার পর বেড রেস্ট। বাসায় ফিরে অগ্রিম বানানো ছোট ছোট কাঁথা গুলো দেখে ভেতরটা পাড়ভাঙ্গা নদীর মতো তোলপাড় করে।
স্বর্ণলতা – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ [2023]
হারাধনের আজ অপারেশন।ছেলেদের কেউ বেঁচে নেই। নানান সমস্যায় ওরা পৃথিবী ছেড়েছ। একটাই মেয়ে, নবীনা। হারাধনের অবলম্বন। ভার্সিটি লাইফ শেষ।এখানে ওখানে টুকটাক ইন্টারভিউ চলছে।বেশ কবার বিভিন্ন ক্যাটাগরি পাত্রপক্ষ দেখে গেছে। বাড়িতে গিয়ে পাত্ররা ডিটেইলস জানাবে। জানায়নি। এখন সব কিছু ললাটের লিখন বলে মেনে নিতে হচ্ছে। হারাধনের হাঁড়ির খবর সবাই জানে। তাই পাত্ররা দলবল নিয়ে আসে।ভুঁড়ি ভোজন করে। তারপর পানের থালায় হাজার টাকা সালামী রেখে সেই যে যায়। মাস্টার্স, সুন্দরী, পাঁচ ফুট চার উচ্চতা, স্বাস্থ্য ভালো হওয়া স্বত্বেও পাত্রদের অরুচি। ডিমান্ড নিয়েই ঘাপলা। বাবাকে ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা করানো, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাড়া করা — সব কাজ নবীনাকে একাই সামলাতে হচ্ছে। স্ত্রী নিজেও চিররোগী। কবিরাজ, তাবিজ, তুম্বা, আরক, শরবতের ওপর তার আস্থা। হারাধনের চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। এপথে তার অনেক টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে। আজকে নিরুপায়।
ডাক্তার সিগনাল দিলেন, ভেতরে লিভার ফেইলিউর হতে দেরি নাই। ইনফেকটেড হতে চলেছে। সকালেই খালিপেট থাকতে হবে। ন’টার পরে থেকে মুখে খাবার খেতে বারণ করে গেছে নার্স। এগারোটার দিকে বয় এসে বললো, আপনারা বাইরে যান। রোগীর শেইভ হবে। হারাধন টয়লেটে ঢুকে গেঞ্জি খুলে দিলো। বয় একটা বলপেনে সুপার ম্যাক্স ব্লেড কীভাবে যেন আটকে দিয়ে রেজারের কাজটা সুন্দর করে ফিনিশিং দিলো। তারপর বললো, নেন দাদা, আপনার কাজ শেষ। এইবার একশ টাকা লন।
— একশ টাকা! আরে মিয়া, এটুক কাজে একশ টাকা। এটা তো আমিই পারতাম।
— দ্যাহেন, কাজ করছি। ট্যাকা লন। আরে এইসব তো —– ল ফালানির টাকা।
— কী আর করা, এসেই যখন পড়া, খেলামই যখন ধরা — একশ টাকা তো আজকাল পানি-ভাত।
অবশ্য হারাধনের বেলা এটি প্রযোজ্য। অনেকের কাছে এ-ই টাকা, টাকাই না।
দেয়ালে টানানো ইস্তিরি বিহীন পাঞ্জাবির পকেট হাতড়াচ্ছে হারাধন। বয় কিছুক্ষণ আগেইতো ঢুকলো। সে একশ টাকা নিয়ে গেল। মাথার ওপর ফ্যানের দুটো ব্লেড ঘুরছে। সভ্যতার চরম বাস্তবতা, একটা ব্লেড কেউ যত্ন করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে হয়তো। একটা ব্লেড দিয়ে কী এমন লাভ? যার যা বুঝ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ-ই সমস্যা ঝুলিয়ে নিয়েই কাজ চালাচ্ছে। মোটা দাগে রোগী জবাই করে টাকা নিচ্ছে। আবার শেভ করানোর টাকাও আলাদা নিচ্ছে।
স্যালাইন পুশ করার জন্য কয়েকজন দেবতার চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হলেন। ওনারা টিসটুস, কসমস, শব্দ করে একের পরে এক ইনজেকশন পুশ করছেন। স্যালাইন সেট রেডি করলেন। রোগীর ফাইলে খচাখচ লিখে রাখা ডাক্তারি বিধি নিষেধ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে চললেন। এরই মধ্যে কয়েকজন আয়া ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে এ-ই রুমে এসেছে। বেডের নীচে ডিশ,ফ্লোরের যাবতীয় ময়লা সরাচ্ছে, নাক ছিটকাচ্ছে।কাজ শেষে ‘মামা’ সম্বোধন করে বকশিস চাইছে। এদেরকেও হাসিমুখ টিকিয়ে রেখেই বকশিস প্রথা চালু আছে। এ-ই কাজের জন্য বেতন, বোনাস পেলেও রোগীর জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে এদের কঠোর অবস্থান এখন সর্বজনগৃহীত। স্বাভাবিক নিয়ম।আসলে অনিয়মের চর্চা করতে করতে অনিয়মই এক সময় নিয়ম বলে জয়যুক্ত হয়। আরো তিনজন মহিলাকে এনাসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ এসে ক্লোরোফরম দিয়ে গেছে। আগের একজন মহিলা রোগীদের একজন চলে গেছে নাচতে নাচতে। কারণ তার হাই-প্রেসার। ডাক্তার বললেন, নাচতে নাচতে চলে গেলে লাভ নেই। খুব শীঘ্র আবারও আসবেন। গলব্লাডারে পাথরকে জিইয়ে রেখে নিজেরই ক্ষতি। ওটা চুপচাপ আপনার ভেতরে বড় হবে। আরো বড় ক্ষতির কারণ হবে। টু-ডে অর টুমরো, ওটাকে টেনে হিঁচড়ে বের করতেই হবে।
সন্ধ্যার পর হারাধনের অপারেশন হবে। পাশে দাঁড়ানো তার মেয়েটা। চিররোগী বৌটা আসার চেষ্টা করেছিল। মেয়ে মানা করেছে। কারণ হার্ট উইক মা, যিনি মাছ, মুরগী খান না মোটেই। ওগুলো কাটার পর রক্ত দেখে শিউরে ওঠেন। কাজেই হাসপাতালে নতুনভাবে কোনো সমস্যা তৈরি হোক এটার সুযোগই দেয়া যাবে না। ও.টিতে ঢুকিয়ে দেয়া হোলো হারাধনের নটনড়নচড়ন শরীর। বাইরে মেয়েটা চুপচাপ।মনটা খারাপ।এ-ই সক্ষম বাবাটা যে পরিমাণে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, তার হিসেব করা যাবেনা।স্কুলের মাস্টারি, টিউশনি, সামাজিকতা সবকিছুই এতদিন বাবাকে ষাট বছরেও যুবক বানিয়ে রেখেছিল। এখন অপারেশন পরবর্তী ঝক্কিও কম না। কতসব উটকো ঝামেলা এসে ভীড় করবে। ভেতরেই একটা ঔষধের দোকান। ওটার পাশে কিছু চেয়ার। ওখানে বসে ব্যাগের ভেতর থেকে জলটা বের করে। এক প্যাকেট লেক্সাস চিবিয়ে জল ঢালে মুখে। পাশের একজন মহিলাকে দেখা গেলো বকবকানিতে — সে নাকি এণ্ডোসকপি করতে ভয় পায় না। একটু গর্বান্ধ হয়ে টানটান উত্তেজনা নিয়ে এণ্ডোসকপি করতে ঢুকেছে। আর বের হবার সময় সে কী — বীভৎস রকমের অবস্থা! — চোখ দুটো যেন ট্যারা হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। তা গড়িয়ে পড়ছে চিবুক বরাবর। আরো কয়েক ঢোগ জল খেতেই বাইরে কোথাও একটা সম্মিলিত চিৎকার। সমবেত আর্তনাদ বলা যায়।সেই সাথে ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্সের যৌথ সাইরেন, আর মানুষের আতঙ্কিত দৌড় শুরু হলো। এক নিমিষেই জনারণ্য। নবীনা সব কিছু রেখে এক দৌড়ে চিৎকারগুলোকে টার্গেট করে। অস্থিতিশীল নিজের মনটাকে বেঁধে রাখতে পারে না। মুহূর্তেই মানুষের চিৎকার, আগুনের দাপাদাপি, যুদ্ধের সাইরেনের মতো বেল বাজিয়ে আসছে এম্বুলেন্স। এই–এই– সরো– দেখি একটু সাইড। ইমার্জেন্সিতে দৌড়ুচ্ছে সবাই। বার্ণ ইউনিটের বেড,কেবিন, বারান্দায় সংকুলান হচ্ছে না।অন্য আরেক হাসপাতালের সন্ধানে বেরিয়ে যাচ্ছে এম্বুলেন্স। ভয়াবহ পোড়া গন্ধ, বীভৎস রকমের অবস্থা, নির্মমতার স্বাক্ষরিত এক একটা পাঠ যেন হাজির হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল হার্টের লোকজন চোখ ঢেকে ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলছে। রক্তের ডোনারদের ভীড়, স্বেচ্ছাসেবকদের ভীড়, সামরিক, বেসামরিক বাহিনীর ভীড়। কেবল ভীড় নয়, মানবজট। এটা নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যর্থ।
সে-মুহূর্তে চারপাশের বিভেদের দেয়াল আজকে ভেঙে গেছে। সরে গেছে জাত, পাত, রঙ কিংবা ব্যক্তিগত বিষয়গুলো। এক একটা দুর্ঘটনায় মানুষের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করে। মানবিকতার আবেদন দ্রুতই বাড়ে।উদারনৈতিক মনোভাব বাড়ে। অবশ্য কৌতূহলী জনতা, উৎসুক জনতা বলে একটা কথা থেকেই যায় — এরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে তামাশা দেখে, ঘটনাস্থলে আগুন না নিভিয়ে তাকে ঘিরে ভিডিও তৈরি করে। সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কেউ কেউ হরিলুটের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। আগুনের লেলিহান শিখার সামনে আর্ত নরনারীর কান্নার অসহায় দৃশ্য আগুনকে নির্বাপিত করেনা।সহস্র মানবের কান্নার রোনাজারি,পোড়া ধোঁয়া আকাশ পর্যন্ত পৌঁছালেও আগুন তার পোড়াবার লেলিহান লালসা থেকে নিবৃত হয় না। জায়গাটা জমজমাট ছিল। কয়েকটা কেমিক্যালস এবং ঔষধের কারখানাও ছিল।আগুনের আজকে তীব্র ক্ষুধা। বস্তি, মানুষ, দোকান, মালামাল পুড়িয়ে আগুন আজ তৃপ্ত। লাগার কারণ যাই হোক আজকের উত্তপ্ততর শিখার সামনে বিশ-পঁচিশ ইউনিট ফায়ার সার্ভিসের সামর্থ্য বড্ড অসহায়। চেষ্টা করা মানুষগুলো কেবলই সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিলো। নবীনা এদিক ওদিক বিকল্পের সব দরোজা বন্ধ দেখেও হতাশ ছিলো না। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নেমে পড়লো। হতাশ জনতার কতটা জনবান্ধব, সেটাই নিরপেক্ষভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ এদের ভীড় ঠেলে এম্বুলেন্সগুলো আগুনের মূল জায়গার কাছে যেতে পারছে না। পানির কোনো উৎস মিলছে না।
একটু আহতদের উঠে বসতে, বসা রোগীকে ধরাধরি করে স্ট্রেচারে শোয়ানো, ঔষধ গুলো এনে দেয়ার কাজগুলো করতে পেরেছে। স্কুল লাইফে এরকম কাজ স্কাউটিংএ করেছে অনেক। হঠাৎ মনে হলো, বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে এসেছে। মাথাটাকে সে-মুহূর্তে সামাল দেয়া যাচ্ছে না। অবসন্নতা ঘিরে ধরেছে। বাবার অসহায় মুখটা চোখের সামনে ভালো। পুনরায় ফিরে চললো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ওকে দেখে কেউ কেউ কটু মন্তব্য করছিল —
— তামাশা দেখতে গেছিলো আরকি। নিজের বাপকে কেউ ও.টিতে রেখে ভাগে?…. আরো অনেক তেঁতো কথা।
আয়া জানালো — দিদি আপনের রোগী কেবিনে বেডে নিয়া গেছে অনেকক্ষণ হৈলো। দৌড়ে কেবিনে ঢুকলো নবীনা। বাবা চুপচাপ চোখ বুজে শুয়ে। অপরাধীর মতো নবীনা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলো, স্যালাইন চলছে। ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই বাবা চোখ বুজেই জিগ্যেস করলেন — কীভাবে আগুন লাগলো? অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তাই না?
— হ্যাঁ, বাবা। কিন্তু তোমাকে এ-ই সংবাদ কে দিলো বাবা?
— এই তো ডাক্তার, নার্স ওনারা। অবশ্য মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম। চোখ মেলে দেখলাম আমি বেডে।
আবেগে নবীনার চোখ ভিজে যাচ্ছে — বাবা!তোমাকে এ-ই কঠিন অবস্থায় রেখে আমার চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আমি ক্ষমা চাইছি বাবা !আর কক্ষনো এমন ভুল হবে না।
আরে, ধূরর্। তুই তো মানবিকতার খাতিরে সবাইকে সাহায্য করতে গিয়েছিলি। এমনটি সবাই পারে? সার্জন সাহেব তোর অনেক প্রশংসা করলেন। আর তোর অনুপস্থিতিতে সবাই আমাকে বেশ সহযোগিতা করলো। এনাসথেশিয়ার আগে সার্জনের সাথে অনেক কথা হলো। তিনি তার অপারেশন চার্জ নেবেন না বললেন। আরো বললেন, এমন মেয়ের বাবা হিসেবে আমারও জীবন সার্থক। উনার ছেলের বৌ হিসেবে তোকে সিলেক্ট করেছেন। আমি হ্যাঁ, না কিছু বলিনি। তোর মতামত কী?
— বাবা! তুমি ঘুমাও তো। বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।
অন্যান্য রাতগুলোর মতোই আজকের রাত প্রকৃতির নিয়মে জারি হলো। জানালা গলিয়ে ঝিঁঝিঁর শব্দ আসছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর নেতিয়ে পড়ছিল। সারাদিন আগুনপোড়া মানুষের জন্য একটু শ্রম, রাতে বাবার সাকসেসফুল অপারেশনের পর বেডে আসার খবরটি, আর সার্জনের মুখে নবীনার শুভ পরিণয়ের আগ্রহের খবরটা ক্লান্তিকর রাতকে ফুরফুরে মেজাজে পরিণত করছে। মোবাইলে ইউটিউবে সার্চ দিচ্ছে। কোন গানটা শুনবে?—- ধূররও, মাথাটা সারাদিনে একদম গেছে।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | Md Shohidullah
Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২
Top Bengali Poetry | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ | 2023
Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla golpo pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Roktakto pdf | Roktakto books | Noyti Raktakta Robibar by Sayak Aman | Roktakto sharod | Roktakto Jonmodin by Jayanta De | Roktakto Bangla | Roktakto Jonmodin | Roktakto Lyrics | Roktakto Itihas | Roktakto Prantor Download | Roktakto Tabligh | Roktakto Dairy | Roktakto Swadhinata | Roktakto robibar kake bole | Roktakto prantor hsc bangla | Roktakto Jharokha event | Roktakto Shouchagar | Roktakto Somoy | Protibesi Surjer Roktakto Dinguli | Roktakto Swopno | Roktakto Chirkot | 21 August Roktakto Oddhay | Roktakto Redoy | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Suspense story in english | suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Diary of Bangla Galpo | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Diary of Bangla Galpo | Pdf Diary of Bangla Galpo | Diary of Bangla Galpo App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Diary of Bangla Galpo 2024 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Diary of Bangla Galpo Video | Story – Diary of Bangla Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Diary of Bangla Galpo Netflix | Audio Story – Diary of Bangla Galpo | Video Story – Diary of Bangla Galpo | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent story Diary of Bangla Galpo | Top Story Diary of Bangla Galpo | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Modern Online Bangla Galpo