Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী

Sharing Is Caring:

Travel Story | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী

ভারতের শেষ ভূ-খণ্ড, এতদিন স্বপ্নে লালন করা বাঙালীর গর্বের শহর, বিবেকানন্দের পদস্পর্শে ধন্য কন্যাকুমারী। দক্ষিণ ভারত বেড়াতে যাওয়া, কন্যাকুমারীর সঙ্গে তিরুপতি, পণ্ডিচেরী মহাবলপূরম ভ্রমণে বেরিয়েছিলাম আমরা অফিস কলিগ কয়েকজন, ২০১৭ সালের দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার ঠিক পরেই অক্টোবরের শুরুতে। তারও দিন পনের আগে খড়গপুরের কাছে গিরিময়দান শহরে তিরুপতি ট্রাস্টের অফিসে গেলাম, ভেঙ্কটেশ-তিরুপতি দর্শনের টিকিট বুক করাতে হল; পাঁচ অফিস সহকর্মীর দলটায় আমার পরিবারসহ সব মিলিয়ে সতের জন। স্থানীয় এক ট্যুর এজেন্সীর সাথে চুক্তি হয়ে গেল । টিকিট বুকিং সম্পূর্ণ, প্রস্তুতি চলতে লাগল ; প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না; অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, ৬ই অক্টোবর, ২০১৭ সাল, আগের রাত থেকে ভাল করে ঘুমোয় নি কেউ । সন্ধ্যে ৭-০০ টায় ট্রেন, সাঁতরাগাছিতে বোর্ডিং, ‘‘হাওড়া-বিজয়ওয়াড়া” এক্সপ্রেস ট্রেনটা পুরোটাই এ.সি.।

তিরুপতি দর্শন

আমাদের প্রথম গন্তব্য তিরুপতি দর্শন। বিজয়ওয়াড়ায় ট্রেন পাল্টাতে হবে। থ্রি-টায়ার হলেও খুব ভাল সিট ক্যাপাসিটি। বেলা ১টায় বিজয়ওয়াড়া স্টেশনে নামলাম আমরা। পরের ট্রেন সন্ধ্যা ৭টায়, প্রতিক্ষালয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হবে। দুপুরের খাওয়াদাওয়া হল নিজের পছন্দমত। ট্যুর এজেন্সীর দায়িত্ব আছে, রান্না করা খাবার, টিকিট বুকিং, মাঝের ছোটখাটো ভ্রমণের সব দায়িত্ব তিরুপতি পৌঁছানোর পর থেকে শুরু হবে। আমাদের দলে কয়েকজন কমবয়সী ছেলেমেয়ে খোঁজ নিয়ে কাছেই উন্দ্রাভালির গুহা যেখানে মুনি ঋষিদের পাথরে খোদাই মূর্তি রয়েছে অনেক, সেটি দেখতেই বেরিয়ে গেল। ওদের মনে করিয়ে দিলাম আমাদের পরের ট্রেনের সময়। ইলেকট্রনিক বোর্ডে স্ক্রলে তিরুপতিগামী ট্রেনের সময় সারণী দেখছি; দীর্ঘ ছয় ঘন্টা প্রতীক্ষা শেষে ৪ নং প্ল্যাটফর্মে ট্রেন লাগল। দৌড়াদৌড়ি করে এক থেকে চার নম্বরে লাগেজ নিয়ে ওভারব্রিজ পেরিয়ে আসতে নাকাল অবস্থা। একেবারে ট্রেন ছাড়ার মুখে হন্তদন্ত হয়ে ওরা ফিরে এল; সকলে ট্রেনে চেপে বসলাম নিজের জায়গায়। জার্নি বেশ ভালই হল, ট্রেনের দোলুনিতে বেশ ভালই ঘুম হচ্ছিল আমার। নিরুপদ্রবে সকাল সাতটায় গন্তব্যে পৌঁছালাম, তিরুপতি স্টেশনে । স্টেশন থেকে গাড়ীতে তিরুমালা পাহাড়ের ১৫৩ মিটার উপরে তিরুপতিধামের গেষ্টহাউসে উঠলাম, লাগেজের ধকল বেশ কষ্টকর, সইতে হচ্ছে উপায় নেই। তিরুপতি গেষ্ট হাউসের ব্যবস্থা বেশ ভাল। ঝকঝকে পরিষ্কার বিছানা, ওয়ারড্রোব, সব কিছুই পরিচ্ছন্ন। স্নান সেরে টিফিন সেরে সকলে বের হলাম তিরুপতি দর্শনে । ভেঙ্কটেশ্বর বিষ্ণুর মূল মন্দিরটি সোনার পাতে মোড়া, দেবতার নাম বালাজী তিরুপতি । প্রাচীন দ্রাবিড় সংস্কৃতির আদলে তৈরী ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরের অনেকগুলি প্রবেশদ্বার। ভেঙ্কটেশ্বর বালাজী তিরুপতি বাবার সে এক বিশাল সাম্রাজ্য। মন্দির সংলগ্ন বিশাল এলাকা জুড়ে কত যে লোক আর কত রকমের চালচলন, কত যে সাধুসন্ত বিভিন্ন প্রদেশের, বিভিন্ন ভাষা, রুচি, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক, বিভিন্ন ধরণের মানুষ, যেন গোটা ভারতবর্ষের ক্ষুদ্র সংস্করণ এই তিরুপতিধাম; সাধুসন্তদের জন্য, সাধারণ দর্শনার্থীরা বিনা খরচেও গেষ্টহাউসে থাকতে পারেন, খাবার ব্যবস্থাও আছে। পুজোর সামগ্রী, ফটো, স্মারক, শো-পিস এসবের অসংখ্য দোকান। মেলা তো বটেই, দু-চার দিনের তো নয়, সারা বছর চলছে ভক্তদের আনাগোনা, দান করছে রাশি রাশি টাকা, সোনা, রুপো অজস্র ধনরাশি জড় হচ্ছে তিরুপতির দানভাণ্ডে। দর্শনের অনলাইন টিকিট করাই ছিল। মূল মন্দির থেকে দূরে বেশ চওড়া হলঘরের মধ্যে পাশাপাশি কয়েকটা লাইন দিয়ে এক জায়গায় মিশছে, এখানে নারী পুরুষ পৃথক। হলের ভিতর দিয়ে লাইন বরাবর চলেছি, একটু ছাড়া ছাড়া কফি, চা, জল মিলছে কাউন্টারে, বিনা খরচেই; বা:! বেশ ব্যবস্থা তো! ভাবলাম খুব তাড়াতাড়ি দর্শন মিলবে, কিন্তু, কোথায় কি। প্রথমে একটু বিশেষ আলাদা লাইনে থাকলেও সব লাইন শেষে এক জায়গায় মিলেছে। অজস্র মানুষ, চাপা পড়ার অবস্থা। গোলকধাঁধায় পাক খেতে খেতে সিঁড়িতে ওঠা আবার নামা, ঘোরা পথে চক্রাকারে ঘুরছি, মানুষের স্রোতে ছেড়ে দিয়েছি নিজেকে, এর মধ্যে দলের অন্যরা কোথায়, দিশেহারা অবস্থা আমার মত প্রায় সবার । ঘন্টা দুই চরকি পাক ঘোরার পর তিরুপতি বাবার গর্ভগৃহের সামনে এলাম। আগা গোড়া সোনার পাতে মোড়া মন্দিরের খিলান, থাম, মন্দিরের দেওয়াল, চূড়া সব কিছু; গর্ভগৃহে প্রদীপের আলো আঁধারিতে বালাজী তিরুপতি বাবার দর্শন লাভ করলাম। সামনে দিয়ে লাইন, ঐ অবস্থায় এক পলকে যতটুকু দেখা যায়, আপাদ মস্তক সোনায় মোড়া বিগ্রহ। কয়েক সেকেণ্ড পর পর ঠেলে লাইনকে এগিয়ে দিচ্ছে সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী। বাপরে, হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। বেরিয়ে সবার সঙ্গে দেখা হল, আমার মতই ঘর্মাক্ত,পরিশ্রান্ত সকলে। গর্ভগৃহের বাইরে দেখছিলাম প্রায় পনের ফুট অবধি সোনার পাতে মোড়া মন্দির গাত্র,তাতে ইলেকট্রিকের তার জড়ানো। এক জায়গায় মণ্ডিত মস্তক বাচ্চা ছেলেদের বাটখারায় বসিয়ে সম ওজনের চিনি তাল-মিছরি, তুলসীপাতা, আর সোনার গয়না চাপানো চলছে, একে নাকি তুলাভরম বলা হয়, মানত থাকলে এভাবে ভক্তরা দান করেন। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় বড় বড় পিতলের হুণ্ডী রাখা আছে, দান নেওয়ার জন্য। মন্দিরের বিভিন্ন জায়গায় রাখা আছে এরকম বেশ কয়েকটি হুণ্ডী । বিগ্রহের কাছে দান ভাণ্ডে সঞ্চিত অর্থ,সোনাদানা, অর্থের বিপুল ধনরাজির উপর অতন্দ্র প্রহরায় রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত তামিল ভক্তবৃন্দ। আশ্চর্য বিষয়,এত ধন, অর্থ দান চলছে, এত মানুষে গিজগিজ করছে, কিন্তু, কোথাও পুলিশ বা কোন সরকারী বাহিনী,সিকিউরিটি ফোর্স নেই,সবই নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাস্টের কর্মী বাহিনী। ওখানকার সব ব্যবস্থাতেই ট্রাস্টের কর্মীদের পরিচালনায় পেশাদারিত্ব নজরে এল। দর্শন শেষ, এবার প্রসাদ তিরুপতির সেই বিখ্যাত লাড্ডু, বিশাল পাত্রে রাখা লাড্ডু বিতরণ হচ্ছে কাউন্টার থেকে। কুপন জমা দিয়ে বেশ কয়েকটা লাড্ডু পাওয়া গেল, বেশ বড় আর সুস্বাদু লাড্ডু। ওখান থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেলাম গেষ্ট-হাউসের ক্যান্টিনে। ট্যুর এজেন্সির কর্তা দুলালবাবুর খরচে একটু হাতটান আছে, খুটখাট চলছে কারও না কারোর সঙ্গে। পরদিন সকালে প্রাতঃরাশ সেরে এজেন্সীর ট্রাভেলার গাড়ীতে আমরা সকলে চেপে বসলাম।

মহাবলীপূরম দর্শন

এরপর আমাদের গন্তব্য মহাবলীপূরম হয়ে পণ্ডিচেরী। চেন্নাইতে রাত্রিবাস আছে। লাগেজ নিয়ে এতবার গাড়ীতে চাপা নামা টেনে নিয়ে যাওয়ার ধকল আমি সত্যিই পারতাম না, ছেলে মেয়েরা অনেকটাই বহন করছে। চেন্নাইয়ের ট্রেনে চাপার পর খাবার প্যাকেট ধরাল ওরা। বিকেল ৫টা নাগাদ চেন্নাই স্টেশনে নামলাম। হোটেল বুক করাই ছিল,বেশ ভাল হোটেল, যা ধকল বাইরে বেরিয়ে কৃপণতা করা চলে না, সামান্য কিছু টাকার জন্য পরিবারের কষ্ট বাড়ানোর পক্ষপাতি নই আমি। চেন্নাই কোন ভ্রমণসূচীর মধ্যে নেই, পণ্ডীচেরী যাবার সুবিধার জন্য চেন্নাইয়ে রাত্রিবাস। সেদিন ওখানেই রান্নার আয়োজন হচ্ছে, লজের শেষদিকে দুলালবাবুর টিম রান্নার জায়গা করে নিয়েছে। গরম ভাত আলুপোস্ত, চিকেন কারী,পাঁপড় আর চাটনী। পরদিন সকালে স্নান সেরে টিফিনে গরম লুচি আলুর দম বেশ তৃপ্তি করেই খাওয়া হল। বেলা ১০টা নাগাদ ট্রাভেলকার হাজির, ১৯ সিটের বড় গাড়ী, বেশ ঝকঝকে। সকলে চেপে বসলাম, গন্তব্য পণ্ডিচেরী। মাঝে পড়বে মহাবলীপূরমের গুহাচিত্র দর্শন আর আছে অরোভিল। গাড়ীটার সিটগুলো বেশ আরামদায়ক হলেও এ.সি. নয়। তামিলনাড়ুতে গরম সাধারণত বেশীই, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশী থাকায় আদ্রতা বেশী,তাই ঘর্মাক্ত সবাই । ওরা বড় কন্টেইনারে দুপুরের খাবার গাড়ীতে নিয়ে এসেছে। রাস্তা ধারে একটা কৃষি খামারের পাশে গাড়ী দাঁড় করাল ড্রাইভার। অনুমতি নিয়ে ফার্মে ঢুকলাম সকলে। প্রচুর ছোট বড় গাছ, ছায়াঘন সুশীতল তরুতলে ফুরফুরে হাওয়ায় নরম ঘাসের বিছানায় ছড়িয়ে বসলাম। গাছে পাখি কৃজন, অফিস বিল্ডিং-এর ঘুলঘুলিতে পায়রার বকবকম, বেশ ভাল, ঠাণ্ডা একটা পরিবেশ। টয়লেট ব্যবহার করতে দিলেন ওখানকার কেয়ারটেকার। ইতিমধ্যে থালায় এসে গেছে, ফ্রায়েড রাইস আর গরম চিলি চিকেন। ফেভারিট খাবার আমার, বিল্টুরও। বেশ খিদে পেয়েছিল, রসনা তৃপ্ত করে খেলাম। এজেন্সীর মালিক দুলাল চক্রবর্তী, ওনার স্ত্রী, ছেলে বাবাই আর রান্নার লোক ৪ জন, এই নিয়ে ওরা ট্যুর করে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়। খাবারটা ভালই দিচ্ছেন, বিশেষত দেশী চালের ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, লুচি-আলুর দম প্রায় দিনই মেনুতে থাকছে, দক্ষিণ ভারতে বসে এরকম ঘরোয়া খাবার ভাবাই যায় না । বেলা তিনটা নাগাদ মহাবলীপূরমে থামল আমাদের গাড়ি। তামিলনাড়ুর সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত এই শহর প্রস্তর স্থাপত্য শিল্পে সমৃদ্ধ যা ইউনেস্কো দ্বারা স্বীকৃত। রাস্তার ধারেই অনেকগুলি গুহা, সামনে বিশাল পাথরের দেওয়ালে ব্যাকপ্যাক, গুহার দেওয়াল, পাথর কেটে পুরাণের কাহিনী খোদাই করা, থাম বানানো হয়েছে, অদ্ভুত সুন্দর নির্মাণশৈলী, বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার খোদাই শিল্পের সৌন্দর্য মনে করায়।। গুহার পিছন দিকে বিস্তৃত ভগ্ন রাজপ্রাসাদ, যা সপ্তম শতাব্দীতে পল্লব রাজবংশের সাক্ষ্য বহন করছে। এখানে প্রাচীন গণেশ মন্দিরের কাছে বিস্তৃত পাথরের অসমতল ঢালু ভূমির উপর এক বিশাল দৈত্যাকার প্রস্তরখণ্ড যেন গড়িয়ে পড়তে গিয়েও আটকে দাঁড়িয়ে গেছে। ক্যামেরা বন্দী করলাম বিস্ময়কর ঐ পাথর খণ্ডটির, যার ব্যাস অন্তত পনের ফুট হবে, তাই, কেউ পাশে দাঁড়ালে খুবই ছোট দেখাচ্ছে ! জানা গেল এভাবেই এই পাথরদৈত্য দাঁড়িয়ে আছে যুগের পর যুগ,নড়েও না গড়িয়েও পড়ে না।

পণ্ডিচেরী দর্শন

মহাবলীপূরম দর্শন শেষ, এবার গন্তব্য পণ্ডিচেরী। ঐ বাসেই যখন আমরা ঋষি অরবিন্দের আশ্রমে পৌঁছালাম সূর্য তখনও মধ্য-গগন পেরোলেও তেজ কমেনি। ছবি তোলা নিষিদ্ধ,তাই ক্যামেরা,সেলফোন জমা দিতে হল। ভেতরে ঢুকলাম লাইন দিয়ে, সামনেই সমাধিগৃহ, শান্ত সমাহিত ঋষি। ফুল, মালা, চন্দন, ধৃপে শোভিত সমাধি, সকলের মৌনতায় স্থানটি এক অনাবিল ভাবগম্ভীর পরিবেশ, আবিষ্টতায় মগ্ন। গভীর আত্মোপলব্ধী হয় ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই, এমনই স্নিগ্ধ পরিবেশ। কিছুক্ষণ পর পাশেই অরবিন্দ সংগ্রহশালা ও লাইব্রেরীতে গেলাম। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ,ছিমছাম সুন্দর সাজানো পুস্তক, স্মারক, ফটোগ্রাফির সম্ভার রামকৃষ্ণ মঠ-মিশনের কথা মনে করায়। দক্ষিণ ভারতের ছোট্ট অপূর্ব শহরটি বেশ ছিমছাম আর বৈচিত্র্যময়। চেন্নাই থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র উপকুলে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কৃষ্টির এক অনবদ্য মেলবন্ধন এই পণ্ডিচেরী । আমি আসার আগে গুগল সার্চ করে জেনে নিয়েছিলাম এখানকার কিছু তথ্য। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অনেক আগে ফরাসীরা পণ্ডিচেরীর গোড়াপত্তন করে উপনিবেশ গড়ে ১৬৭৪ সালে। স্বাধীনতার অনেক পর ১৯৫৪ সালে ফরাসী সরকার ভারতে অবস্থিত তাদের তৈরী উপনিবেশগুলি ভারত সরকারের কাছে সমর্পণ করে। তখন থেকেই পণ্ডিচেরী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। পরে তামিল ভাষায় পদুচেরি নামকরণ করে তামিলনাড়ু সরকার। এখানের সর্বত্রই, প্রতিটি রাস্তা, রেস্তোরা, বাড়ির স্থাপত্যশৈলীতে ছড়িয়ে রয়েছে দেখলাম, ফরাসী সভ্যতার নানা নিদর্শন । মুগ্ধ হলাম এখানকার শিল্প সুষমায়,অরবিন্দ আশ্রমের আবাসিকদের চেতনাবোধে। প্রখর রোদে ঘর্মাক্ত পণ্ডিচেরীর সমুদ্র সৈকতে আমরা যখন, রবির কিরণ তখনও প্রখরভাবে প্রকট । রাস্তা থেকে সমুদ্রের সৈকত অনেকটা দূরে। বালির উপর ফেনিল জলরাশির শান্ত ঢেউ পা ভিজিয়ে দিচ্ছিল, খালি পায়ে ঠাণ্ডা বালির উপর হাঁটতে বেশ ভাল লাগছিল। বড়বড় কালো পাথরের চাঙড়ের মাঝে কালো জলতরঙ্গ ব্যাকগ্রাউণ্ড করে অসংখ্য স্ন্যাপ, ভিডিও রেকর্ডিং চলল ছেলেমেয়েদের। বিচের উপর এখানকার স্থানীয় জেলে-বস্তির ছোকরারা তাঁবু লাগিয়ে, ছবি তোলার স্টুডিও বানিয়েছে, ঠাণ্ডা পানীয়, বিচিত্র দর্শন শাঁখ আর ডাব বিক্রির পসরায় বসিয়েছে । এখানে ডাব খেলাম সকলে। আশ্রমের লাইব্রেরীতে একটা বাংলায় লেখা বই পেয়েছিলাম, ওখানেই পণ্ডীচেরীর আশ্রমে সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানতে পেরেছিলাম। জানা যায়, পণ্ডীচেরীর আশ্রম প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই শ্রীমা মীরা আলফাসার হাতে আশ্রমের সমস্ত দায়িত্বভার অর্পণ করে ঋষি অরবিন্দের অন্তরালে চলে যান। পণ্ডিচেরীর অরবিন্দ আশ্রম ছাড়াও আর একটি দর্শনীয় স্থান আছে।

পণ্ডিচেরী থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ‘অরোভিল’ নগর। ভ্রমণসূচীতে ছিল না, কিন্তু বর্ণনা পড়ে ছেলেমেয়েরা ছাড়ল না কিছুতে। অনুরোধ রাখল, তবে বাড়তি কিছু গুণতে হবে, যাই হোক ট্রাভেলারে চেপে বসলাম। পৌঁছে গেলাম এক ঘন্টায় অরোভিলে। একজন গাইড পেয়ে গেলাম, কমবয়সী বেশ ছিমছাম ভদ্র মনে হল ছেলেটিকে। হিন্দী-ইংরেজিতে যা বলেছিল, কমসময়ে সব মেলাতে পারিনি; ওর চোখ দিয়েই বুঝছিলাম; স্বপ্নের শহর অরোভিল, যেখানে রাজনীতি নেই, দারিদ্র্য নেই, হিংসা-হানাহানি নেই, টাকার প্রচলনও নেই; ভাবাই যায় না, ভারতবর্ষের ভিতরে এমন স্বপ্নের দেশ! তামিলনাড়ুর ভিল্লুপূরম জেলা আর পণ্ডিচেরীর কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে এই অরোভিল শহর । ঋষি অরবিন্দের শিষ্যা ও সহকারী মীরা আলফাসা গুরুজীর আদর্শে এই নগর ইউনেস্কোর ও বিভিন্ন দেশের অনুদানের উপর ভর করে ১৯৬৮ সালে ‘‘অরোভিল” নগর প্রতিষ্ঠা করেন। মীরা আলফাসা একজন ফরাসী মহিলা, যিনি পরে শ্রীমা নামে পরিচিত হয়েছিলেন। ওখানকার পরিবেশ বান্ধব এই শহরটির বাইরে প্রশস্ত এলাকা জুড়ে সবুজ গাছপালা দ্বারা পরিবেষ্টিত গ্রীন বেল্ট। শহরের অভ্যন্তর কয়েকটি পৃথক এলাকায় ভাগ করা রয়েছে । সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা এলাকা, আবাসিক, আন্তর্জাতিক, শিল্প এলাকা। গোটা শহর জুড়ে অসংখ্যা সোলার আলো, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমেই চলে সমস্ত কাজ, আছে নিজস্ব শিল্পকেন্দ্র, গবেষণাগার, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। আছে অরোভিলের গর্ব ‘মাতৃমন্দির’, আশ্চর্য সুন্দর শান্ত মনোমুগ্ধকর এক উপাসনাগৃহ। সোনার জলে রঙ করা অসংখ্য সোনালী গোল চাকতি দিয়ে কমলালেবুর আকৃতিতে তৈরী উপাসনাগৃহটির অভ্যন্তর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাদা মার্বেল পাথরে মোড়া, একেবারে কেন্দ্রস্থলে আছে আধ্যাত্মিক চেতনায় নিজেকে সমর্পণ করার জায়গা, ধ্যানগৃহ। কি অপূর্ব অনুভূতি, এখানে না এলে অনেক কিছুই দেখা হত না, জানা যেত না। ভারতবর্ষের মধ্যে এ রকম জায়গাও যে হয় ভাবতেই পারি নি, এ বিপুলা ধরণীর কত বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে চারিদিকে, কত অজানা রহস্য লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোনায় কোনায়, ভাবতেই অবাক লাগে, কত ক্ষুদ্র আমি, কত তুচ্ছ, কত কিছু বাকি আছে জানতে । জানা গেল অরোভিলে মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, এখানে রাজনীতি নেই, ধর্র্মের বেড়াজাল নেই, অপরাধ নেই বললেই চলে, কোন মুদ্রার প্রচলন নেই। ‘অরোকার্ড’ নামে ডেবিট কার্ড দিয়ে বিনিময় হয় এখানে। অরোভিল ফাউণ্ডেশন গোটা শহরের দেখাশোনা করে, আছে স্থানীয় বাসিন্দা ও সরকারী আধিকারিকদের নিয়ে একটি গভর্নিং বডি । এখানের বাসিন্দা হতে হলে তাকে আধ্যাত্মিক চেতনাবোধে জাগ্রত স্বেচ্ছাসেবক হতে হবে। সন্ধ্যের মুখে আমরা ঐ গাড়ীতে করেই পণ্ডিচেরী স্টেশনে উপস্থিত হলাম, গন্তব্য ভারতের শেষ বিন্দু কন্যাকুমারী । সন্ধ্যা ৭টায় কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে আমাদের রিজার্ভেশন হয়েই ছিল, এ.সি. কোচ। ট্রেনে উঠে পড়লাম সকলে, দুলালবাবুরা খাবার তৈরী করেই এনেছিলেন। খাবার খেয়ে নিজের নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লাম, আমার কোমরের ব্যথার জন্য নীচে সীট ম্যানেজ করেছি, ঠিক আমার উল্টো দিকেই বাঙ্কের উপরের সীটেই বিল্টু, উপরে আর এক দিকের বাঙ্কে থাকছে আমার মেয়ে পায়েল। ট্রেনে আমার কাছাকাছিই বিল্টু থাকছে, আমার খেয়াল রাখার জন্য, ওর মায়েরও ফরমাস শুনছে, বিল্টু অন্যদেরও সাহায্য করছে,যতটা পারছে । বাইরে বেরুলে বোঝা যায় ছেলেটা বড় হয়ে গেছে, অনেক দায়িত্ব নিচ্ছে বিল্টু, বিশেষ করে লাগেজ বয়ে নিয়ে যাওয়া, হোটেলে রুমে তোলা, নামানো সবই করছে, নিজেই করছে, বেশী বলতে হচ্ছে না। ট্রেনের সব জার্নিতেই সঞ্চিতদার ফ্যামিলীর সঙ্গেই থাকছি আমরা, মানে নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এ, তাতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । দলের মধ্যে আমি সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কথাবার্তা বলে ট্যুরটা অ্যারেঞ্জ করেছি, তাই আমার কথার একটা গুরুত্ব দেয় সবাই। অন্য কিছু অসুবিধা থাকলেও ট্রেনের দলুনী বেশ ভালই লাগে, ঘুমটাও এসে যায় তাড়াতাড়ি।

সকাল ৭টার কিছু পরে কন্যাকুমারী স্টেশনে পৌঁছাল আমাদের ট্রেন। আগেই উঠে পড়েছি সকলে, ইতিমধ্যে নামার জন্য তৈরী। যাক, এবারে যে হোটেলে তুললেন দুলালবাবুরা, বেশ ভালই বলতে হবে। দোতলার উপরে পূ্র্ব-মুখে ব্যালকনি, সামনেই, একটু দূরে সমুদ্র, সকালের স্নিগ্ধ সোনালী রোদে স্নান করছে কন্যাকুমারীর অন্তরীপ, চিকচিক করছে বালুকাবেলা, হাত নেড়ে ডাকছিল যেন আমাদের, যাবই তো, একটু পরেই। এখানে দুই-রাত, তিনদিন কাটানোর কথা। নীচের তলায় ওরা রুম নিয়েছে, পাশেই আন্ডারগ্রাউন্ডে রান্নার দল আয়োজনে ব্যস্ত। এখানেই ডাইনিং স্পেস, চেয়ার-টেবিল রয়েছে। গরম লুচির সঙ্গে আলুর দম আর মিষ্টি, খিদে পেয়েছিল, বেশ তৃপ্তি করে খেলাম। এবার সমুদ্র সৈকত, স্নান তো হবেই, ছবি তোলার জন্য ছেলেমেয়েরা ক্যামেরা নিয়ে রেডি । আজ সকালে সমুদ্রে স্নান আর বিকেলে এখানেই ঘোরাঘুরি, আগামীকাল সকাল ১০টায় বিবেকানন্দ রক, এরকম কথা হয়ে গেল টিম ম্যানেজারের সঙ্গে। সমুদ্রের ধারেই কন্যাকুমারীর দেবী মন্দির, ওখানেও টিকিট। ভিতরে কন্যাকুমারীর পুজো দিচ্ছে কেউ কেউ, আমরা অন্য সময় পুজো দেব ঠিক করলাম ; এই মন্দিরে অদ্ভুত নিয়ম, পুজো দিতে হলে পুরুষদের সম্পূর্ণ খালি গায়ে যেতে হবে । এখন সমুদ্রতট ভীষণ টানছে, বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল কখন দেখব। বীর সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে আছেন সমুদ্রের উপর পাথরের দ্বীপে, পাশেই মন্দির, উড়ছে পতাকা, মনের মধ্যে ছবিটা আঁকা আছে না, বহু বছর ধরে, উত্তেজনায় অস্থির আমি মনে মনে । কত দিনের স্বপ্ন কন্যাকুমারী যাওয়ার, আজ বাস্তবায়িত হল, উ: অসম্ভব ভাল লাগায় ভরে উঠেছে মনটা। স্নানের জন্য বারমুডা পরেই এসেছি, মেয়েরা সকলেই প্রায় সালোয়ার। মন্দিরের পিছনেই সমুদ্র, অনেকটা বালির উপর হেঁটে বিচে নামলাম। সকাল দশটা, চিকচিক করছে বালুকারাশি। বিপুল জলরাশির কিনারায় পায়ে এসে পড়ছে ফেনিল জলরাশি । সামনে দুরে বিবেকানন্দ রক, সমুদ্রের উপর, পাথরের স্তূপে মন্দিরের চূড়া । পাশেই বিশাল মূর্তি তামিল কবি থিরুভাল্লাভারের। অনেকক্ষণ ধরে দেখছি শুধু, সার্থক করছি নয়নের যত খিদে, মনের যত কৌতূহল ঐ রকেই যেন কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। অন্য সকলে ইতিমধ্যে নেমে পড়েছ, এখানের বিচটা চওড়া, ঢেউ আসছে পাথরের গয়ে আছড়ে পড়ে গতি কমে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে বালির বিছানায়। দেখলাম সবাই নামলেও বিল্টু শুধু দাঁড়িয়ে আছে, ছবি তুলছে। আমার জন্য অপেক্ষা করছে বোধহয়। সামনের জলে পাথরের গায়ে ওরা সবাই যে যার মতো বসে বসেই জলে ডুব দিচ্ছে, জল ছিটোচ্ছে, ছবি তুলছে। ওকে সঙ্গে নিয়ে নিজেও নামলাম জলে । অনেকক্ষণ ধরে চলল জলক্রীড়া। হোটেলে ফিরে বাথরুমে স্নান করলাম। দুপুরের খাওয়া সেরে যে যার মতো ঘুরতে বেরিয়ে গেল। আমরাও বের হলাম। কন্যাকুমারীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান, ‘সেন্ট থাশনভিস মাথা গির্জা’, নির্জন ও শান্তিপূর্ণ উপাসনার আদর্শ স্থান, জেলেদের বস্তির পাশ দিয়ে গেলাম চার্চে, বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফিরলাম বেশ প্রফুল্ল মনে। কন্যাকুমারী মন্দিরে আসার পথের দুইপাশ প্রচুর দোকান হোটেল, নানান ধরণের ফটো, স্মারক,,পূজা সামগ্রী সহ নানান গৃহস্থালি জিনিষপত্র পসরা সাজানো। ওখানেই একটা বই কিনলাম,ছবি সহ কন্যাকুমারীর বৃত্তান্ত । তামিলনাড়ুর একটি জেলা কন্যাকুমারী। হিন্দু দেবী কন্যাকুমারীর নামানুসারেই এই জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্রটির নাম, ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম শেষ বিন্দু কন্যাকুমারী অন্তরীপ । ভারত মহাসাগর, আরবসাগর, বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলের সৈকতে পাথর দিয়ে তৈরী দেবী কন্যাকুমারী তামিলদের কাছে কুমারী আম্মান বিগত প্রায় তিন হাজার বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন । হিন্দু মতে কুমারী হলেন পার্বতীর এক রূপ, মহাদেব দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চান, কিন্তু বিয়ের সময় মহাদেব উপস্থিত হননি, তখন থেকেই নাকি দেবী কুমারীব্রত পালন করে আসছেন। কুমারী মন্দিরের পাশেই রয়েছে গান্ধী মেমোরিয়াল, যেখানে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভস্ম রাখা হয়েছিল। পরের দিন সকাল দশটায় বহু প্রতীক্ষিত ‘বিবেকানন্দ রকে’ যাওয়ার লঞ্চের টিকিট করল ম্যানেজার। জেটিতে যাওয়ার জন্য লম্বা টিউবের মত টানেল, সেখানে অপেক্ষা করার সিটও আছে। টানেল পেরিয়ে জেটিতে নামলাম, লঞ্চগুলো যাতায়াত করছে, রকের উপর নামিয়ে আবার ফিরে আসছে। লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট পরতে দেওয়া হল । প্রবল উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছি; দীর্ঘদিনের বাসনা কৌতূহল মিলেমিশে একাকার, লঞ্চ চলতে লাগল ভারত মহাসাগরের বুকে । মাত্র ৫০০ মিটার, সামান্য সময়, মাত্র পনের মিনিট। ওপারে নামলাম, জ্যাকেটগুলো খুলে জেটিতেই খুলে রাখতে হল। দেশের শেষ ভূখণ্ড কন্যাকুমারী, বিশালাকৃতি পাথরের স্তূপ, বিবেকানন্দ রকের উপর দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ খাড়া হয়ে যাচ্ছে, বিস্ময়ে বিমুগ্ধতায় ঘোর যেন কাটতে চাইছিল না। তিন সাগরের মহারানী কন্যাকুমারী। তীর থেকে সমুদ্র সাঁতরে এপারে উঠেছিলেন স্বামীজি, সুবিশাল এই প্রস্তরখণ্ডের উপর বসে দীর্ঘক্ষণ ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন, সালটা ১৮৯২; অনেক পরে, স্বাধীন ভারতের সরকার ১৯৭০ সালে এই মন্দির তৈরী করেন। মুখোমুখি দুটি মন্দির। একদিকে বিবেকানন্দমণ্ডলম, অনেকগুলো সিঁড়ির ধাপ উপরে মন্দিরের ভিতর স্বামী বিবেকানন্দের সুবিশাল মূর্তি। প্রাঙ্গণের আরেক দিকে শ্রীপদমণ্ডলম, এখানে দেবী কুমারী নাকি ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন, তাই এই মন্দিরে দেবী কন্যাকুমারীর পদ চিহ্ন পাথরের উপর রক্ষিত আছে সযত্নে। ঘুরতে ঘুরতে বিবেকানন্দমণ্ডলম মন্দিরের নিচে প্রাঙ্গণে নেমে এলাম, মেঝেতে টালি দেওয়া রেলিং ঘেরা বিশাল চওড়া প্রাঙ্গণ, একপাশে মেডিটেশন হল, জানতাম না ওখানে এরকম একটা সুন্দর ধ্যানগৃহ আছে। ঢুকলাম, ভেতরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, গভীর স্তব্ধতা বিরাজ করছে। মৌন সকলে, শুধু ইশারায় কথা বলা। বসে পড়লাম শতরঞ্জের উপর, আলো-আঁধারিতে চোখ অভ্যস্ত হতে দেখলাম আমার মত অনেকে বসেছেন, ধ্যানে মগ্ন। সামনে স্বামীজীর ধ্যানমগ্ন মূর্তি। মন্দিরের অন্তঃস্থল থেকে থেকে একটা ওম…ম ধ্বনি ভেসে আসছে নিরন্তর, ওম ধ্বনির তরঙ্গাকারে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা ধ্যানগৃহের কোনায় কোনায়। একটা আলাদা প্রশান্তি সকলের চোখে মুখে। মোহাবিষ্টের মত ধ্যানে বসে আছি, কতক্ষণ সময় পেরিয়ে গেছে মনে নেই। পাশেই আমার মেয়ে পায়েল, ধ্যানে ডুবে আছে নিজের মধ্যে; আরও কিছুক্ষণ বসতাম, কিন্তু হল না, এজেন্সীর লোক তাড়া দিচ্ছে। মন্দিরের আকৃতি পরিবেশ সবই দেখলাম বেলুড় মঠের আদলে। মন না চাইলেও বাইরে বেরিয়ে এলাম । পাশে বুক স্টোর, এখানে স্বামীজির স্মারক, সুগন্ধী ধূপ, ছোট কয়েকটা বই কিনলাম। আমার দাদা নিমাইদা, ভীষণভাবে রামকৃষ্ণ-স্বামিজী অনুরাগী, বিষ্ণুপুরে নিয়মিত পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়, নিমাইদা ও সঙ্গে আরও কয়েকজন সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন। নিমাইদার চাহিদামতো ‘ওম’ ধ্বনির সিডি একটা নিলাম। ছেলেমেয়েরা ছবি তুলে চলেছে একনাগাড়ে। রকের উপরের এই জায়গা থেকে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর আর বঙ্গোপসাগরের সঙ্গমস্থল দেখছিলাম, জলের রঙ কিছুটা তফাৎ আছে, সামনেই নীল ভারত মহাসাগর, বাঁদিকে ফিকে ঘোলাটে নীল রঙের বঙ্গোপসাগর, ডানদিকে পান্না সবুজ রঙের আরব মহাসাগর। যতদূর চোখ যায়, সুনীল জলরাশি, শেষ নেই, দূরে মাছ ধরার নৌকায় জেলেরা মাছের সন্ধানে। নৌকাগুলো বিন্দুর মত দেখাচ্ছে। কি অপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য। বিবেকানন্দ রকের অদূরেই আর এক বিশাল পাথরখণ্ডে বিখ্যাত তামিল কবি তিরুভাল্লুভার দণ্ডায়মান, ১৩৩ ফুট উঁচু সুবিশাল মূর্তি। তামিল সরকার এই মূর্তি বসিয়েছে। আমরা আরও কয়েকদিন ছিলাম দক্ষিণ ভারতে। গিয়েছিলাম মাদুরাই, রামেশ্বরম, মাইশোর, কোদাইকানাল, শেষ হয় উটিতে গিয়ে, ওখান থেকে সরাসরি আসানসোল হয়ে বিষ্ণুপুরে ফিরেছিলাম টানা ১৬ দিন পর । এখানের পরিসরে আর নয়, পরে হয়তো আর একদিন বলব পরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023

Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্‌শা ও তাৎপর্য | 2023

Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023

Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023

আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী | বাঙালির বেড়ানো | সপ্তাহান্তের বেড়ানো | ভ্রমণ পত্রিকা | ভ্রমণ রচনা | ভ্রমণ অভিজ্ঞতা | ভ্রমণ গাইড | ভ্রমণ কাহিনী | ভ্রমণ নিয়ে উক্তি | সকল ভ্রমণ কাহিনী | কয়েকটি ভ্রমণ কাহিনী | ভ্রমণ কাহিনী লেখার ১০ টিপস | ভ্রমণ গল্প – ভ্রমণ গাইড | হিমালয় ভ্রমণ কাহিনী | ভ্রমণ কাহিনী অভিজ্ঞতা | ভ্রমণ কাহিনী বই | ছোট ভ্রমণ কাহিনী | বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী | দার্জিলিং ভ্রমণ কাহিনী | আমার ভ্রমণ কাহিনী | অসমাপ্ত এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ | বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ কাহিনী | আশ্চার্য্য ভ্রমণ-কাহিনী | সেরা ভ্রমণ কাহিনী | ঐতিহাসিক ভ্রমণ কাহিনী | চিকমাগলুর ভ্রমণ কাহিনী | সত্যি ভ্রমণ-কাহিনী | ভ্রমণ অনুভূতি | ভ্রমণ কাহিনী লেখার নিয়ম | ভ্রমণ কাহিনী কি | ইসলামী ভ্রমণ কাহিনী | গালিভারের ভ্রমণ কাহিনী | ভ্রমণ কাহিনী পণ্ডিচেরী | মহাবলীপুরম স্মারকসমূহ | সপ্তরথ কী | মহাবলীপুরম মন্দির কে নির্মাণ করেন | মহাবলীপুরমের রথ মন্দির | পঞ্চরথ | তিরুপতি মন্দিরের রহস্য | তিরুপতি মন্দিরের ইতিহাস | তিরুপতি মন্ত্র | তিরুপতি মন্দির কোন রাজ্যে অবস্থিত | পদ্মনাভস্বামী মন্দির | ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির কোথায় অবস্থিত | তিরুপতি ঠাকুরের ছবি | কন্যাকুমারী পর্যটন স্থান | কন্যাকুমারী দর্শনীয় স্থান | দেবী কন্যাকুমারী | কন্যাকুমারী অভিনেত্রী | কন্যাকুমারী কোথায় অবস্থিত | কন্যাকুমারী উপন্যাসের লেখক কে | কন্যাকুমারী ভ্রমণ গাইড | কন্যাকুমারী দর্শনীয় স্থান | কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী | কন্যাকুমারী মন্দির | সতীপীঠ কন্যাকুমারী | কন্যাকুমারী ভ্রমণ | মস্কো বনাম পণ্ডিচেরী | পন্ডিচেরি কোথায় অবস্থিত | পন্ডিচেরি রাজধানী | পন্ডিচেরি ছিল | পন্ডিচেরি কাদের প্রধান ঘাঁটি | পন্ডিচেরী কোন রাজ্যে অবস্থিত | পন্ডিচেরি রাজধানী কি | পন্ডিচেরি হসপিটাল | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

Mahabalipuram | Mahabalipuram Travel Guide 2022 | Mahabalipuram Tourism 2022 | Where is Mahabalipuram | Mahabalipuram history | Mahabalipuram built by | Mahabalipuram – wikipedia | Tirupati Dham | Tirupati Tour Packages | Tirupati Balaji | Kanyakumari | Kanyakumari-Tathagata-Bibriti | Puducherry | Best Short Travel Stories | Travel Story Tales | write a travel story | Real Travel Story | Short Travel Story | My Travel Story | my travel story | travel story in english | short story about travel | unforgettable travel story | travel story example | inspiring travel story | short story travel adventure | travel story ideas | Indian Travel Story | Bengali Travel Story | Best Short Travel Story | India Travel Story Archive | Untold Travel Story | Travel story for young kids | Great Travel Story | Travel Story Hamper | World Travel Story | 22 Travel Story Ideas | England Travel Story | Love Travel Story | Travel Story Archives | Long Travel Story | Suspense Travel Story | Horror Travel Story | Attractive Travel Story | Submit Your Travel Story | Secret Travel Story | Travel Story News | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Travel Story Creation | Shabdodweep Travel Story | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Founder

Leave a Comment