কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা – সূচিপত্র [Bengali Poetry]
হেমন্ত বিকেল – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
উত্তরের হিমেল বাতাস, চুপি চুপি ডাকে,
আয় ওরে আয় আয় ।
কার্তিকের ধান খেতে বিকেল বেলায় ।
তখন ঘরমুখো আলো,
ধান শিশুদের খিল খিল হাসি,
ফিরে যায় ফিঙে পাখি, নীলকণ্ঠ দম্পতি।
বিস্তারিত ধানক্ষেতে ছায়া আলো ঢেউ ।
হৈমন্তিক পৃথিবী এক ।
ধীরে ধীরে নেমে আসে কুয়াশা চাদর।
শিহরিত শিশিরের আবহ সঙ্গীত ।
মনে হয় আর যদি নাই ফিরি ঘর !
আমার প্রশান্ত মন তপস্যায় বসে থাকে,
অন্তর ছায়ায় ।
মহাজাগতিক আলো মেখে ভাসে চরাচর ।
তারপর, গৃহস্থের প্রাত্যহিক শঙ্খধ্বনি,
নিয়ে আসে সন্ধ্যার কাল ।
কোথায় ফিরবো আমি আজ !
স্বর্গীয় আলোতে হৃদয় পাত্র খানি ধুয়ে !
মানুষ জীবন – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়ার মত,
আগুন আমার খাবে জানি !
তবুও তো প্রেম ধরেছে আমার হাত,
জেগেছিল চাঁদ সারা পূর্ণিমা রাত !
পৃথিবী আমার অতল সাগর মায়া,
পথে পথে ছিল, কত জননীর ছায়া !
কেঁদেছিল কারা লক্ষ যোজন দূরে,
পথ ডেকেছিল অচেনা বাউল সুরে !
যুদ্ধের দেশে মৃত্যু মিছিল হাঁটে,
অসংখ্য লাশ পড়েছিল খেয়াঘাটে !
মুখমণ্ডল যদি না চিনতে পারো,
একটা লাশের হাতটি কেবল ধরো !
সামনে তখন উথাল পাথাল নদী,
একবার বাঁচি, মানুষ বাঁচায় যদি !
হাতটা একটু ধরবে ভাই – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
দুরন্ত গতিতে মানুষ দৌড়চ্ছে –
প্লাটফর্মে দৌড়চ্ছে, বাস স্ট্যান্ডে দৌড়চ্ছে,
পথে রথে আকাশে পাহাড়ে
মানুষের অসম্ভব গতি
ছুটন্ত গতির এই জীবনধারায় আমি পিছিয়ে
অনেক অনেক পিছনে আছি
হাতটা আমার একটু ধরবে ভাই
স্বপ্নের ডানা দুটো দিয়ে গেল কারা ছেঁটে
আশাহীন পথে অনেক এসেছি হেঁটে
মিথ্যে কথার গলিতে ঢুকতে গেলে
আতঙ্কে বুক কাঁপে
বাঁকা পথের মাঝে ভ্রান্ত দিক্বিদিক
গলা টিপে ধরে পাপে
হাতটা আমার একটু ধরবে ভাই
বিশ্বাসের খুঁটি ধরে এগোতেই পড়ি খাদে
কথা দিয়ে কথা রাখার অপেক্ষায়
কত দিন কত রাত যে কেটে যায়
উপরে ওঠার পথটা হারালো হায়
হাতটা আমার একটু ধরবে ভাই
মায়াবী মধ্যরাত – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
মধ্যরাত পথে এসে নামে,
নির্জনতা ডোবে অন্ধকারে ।
নক্ষত্রের সামিয়ানা মাথার উপরে,
দুঃখ জাগে, দুঃখবতী ঘরে।
রাতচরা বিহঙ্গের পাখসাটে,
নিশীথ আঁধার কাঁপে।
সন্তানের কোলে রেখে জাগে মধ্যরাত,
ঘুমাও নগরবাসী সূর্যের আড়ালে।
ফুলের সৌরভ ঢেলে, কদম কেশর ফেলে,
মধ্যরাত ধ্যানমগ্ন হয়।
গভীর নয়ন মেলে স্থির ধ্রুবতারা,
রেবতী নক্ষত্রের পানে চেয়ে ঘুমে ঢুলু ঢুলু।
ভোরের লক্ষ্মী প্যাঁচা ডেকে বলে,
“জাগরণে যায় বিভাবরী”।
অনুশোচনা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
যখন বৃষ্টি ছিল,
বুনতে পারিনি বীজধান ।
যখন আগুন ছিল,
পোড়াই নি মান অভিমান।
যখন বসন্ত এসেছিল,
গাঁথিনি ফুলের মালা।
সব কিছু ভুল ছিল!
ভাবি, এই পড়ন্ত বেলা।
স্বপ্নের ঘুড়ি গুলো, গেল যে হারিয়ে,
ছিঁড়ে মাঞ্জার সুতো।
ভেসে ভেসে ভাসমান,
তবু তার পিছুটান,
ভালোলাগা ছিল কত!
মনের সড়ক বেয়ে,
আসে যায়, কত আলোকিত মুখ।
কত জনে দিল প্রেম,
কেউ দেয়, বিষণ্ণ অ সুখ!
মায়ের কথাটি ছিল –
সকল কিছুই, এই জীবনের ধন।
সময়ের অশ্রুপাত, মানিক রতন !
শরতের প্রসন্ন সকাল – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
কাশের ঝোপে দোদুল হাওয়া। দিঘির স্নিগ্ধ জলে সমীরণের মৃদু তরঙ্গমালা। তখন রোদ্দুরের ঘুম ভেঙেছে।
পৃথিবীর এক মধুক্ষরা বাতাবরণ। জুড়াল হৃদয় যেন শতাব্দীর শেষে, এই মহীতলে।
এই যে আমার ক্ষণিক মরমিয়া ভালোবাসার সময়, দিয়েছি তোমার কাছে সঁপে, রেখে দিও সযতনে।
এইবার তুমি মুখ তুলে, গভীর নয়ন মেলে বল একবার, – ভালোবাসি ভালোবাসি, হে আমার চির নবীন বসুন্ধরা!
তখন নীলকন্ঠ পাখি বসে থাকে পিয়াল শাখায়, ভেসে আসে প্রেমিক ঘুঘুর ঘু-ঘু রব। দূরাগত। চেয়ে দেখি,
শ্যামলিমা, ছায়াময় বৃক্ষের দল, কী এক জীবনমুখী আকর্ষণে ডাকে, – আয় আয়!
উপেক্ষা করার নেই তো সময় প্রিয়তমা। একবার হাতে রাখো হাত, চলো ওই শরতের আলোছায়া দেশে,
ছন্দহীন অথবা ছন্দময় পদবিক্ষেপে!
আজিকার ধরিত্রীর শোভায় ঢেলে ভালোবাসা, খুলে দিই জীবন তরণীর পাল।
তারপর ভেসে যাবো, নামহীন, ঠিকানাহীন অসীম অনন্তের পানে!
বুকের বিপন্ন চরে দিয়েছি কবর [Bengali Poetry]
বুকের বিপন্ন চরে দিয়েছি কবর ,
তবু কেন বসে থাকো
রঙিন আঁচল মেলে
অশুভ হাওয়ায় ।
বুকের বিপন্ন চরে দিয়েছি কবর ,
কেন হায় আজও কাঁদো
সূর্য ডোবা আকাশের নিচে
ঝরে পড়া পলাশ তলায় !
আমি এই ফাল্গুনের কংসাবতী নদী,
ছল ছল ছন্দহীন
শূন্য শুষ্ক দিন গুনি
আলোয় ছায়ায় ।
সম্পর্কের মানুষ [Bengali Poetry]
আদিগন্ত কুয়াশার চাদর
বর্ণহীন বিষণ্ণতা ঘিরে,
সূর্য সখা স্থির বিন্দু দূরে ।
বিশ্বাসের পাহাড়গুলো লীনতাপে
গলনাঙ্কে পৌঁছে যায়,
অদূরে বাতাস বলে
ডেকো না ডেকো না আমায়।
সে আমার পড়শি নয়
সে আমার গেরস্থালী দেখেনি জীবনে,
তবে কী বসতে পারি
তাহার হৃদয়ে !
জ্বালাতন রোদ,
বৃষ্টি ধোয়া বাতাসের গান,
ভোরের প্রান্তে আসা স্বপ্নের ঘুম।
ওসবের মর্মার্থ আলাদা
জীবনের কটু কথা , শাপান্ত বা অভিযোগ,
সব কিছু গরল বিষয়ক ।
যে জীবন বসে থাকে
সে জীবন ঘরপোড়া গোরু ,
চিরকাল সিঁদুরে মেঘের ভয়।
হিসেবের খাতা [Bengali Poetry]
স্মৃতি ঘুড়ির সুতো ধরে ধরে
যতই টেনেছি বেলা অবেলায়
সুরে বেসুরে ,
সে এক হিমেল রাতের গাথা,
শৈশবের শিকড় ধরে টানা,
অঙ্কুরের পলকা মাথা ভাঙা।
যেন অহল্যা পাথরের বেদন কাহিনী
কোন এক অরণ্য যুগের।
প্রতীক্ষার বারমাস্যা শোনাতে বসেছি
আজ বাতাসের জ্বালাময়ী কানে।
মনে কর রঙিন ঘুড়ির রূপকথা
পক্ষিরাজ রাজপুত্র রাজকন্যা
মন্ত্রী কোটাল সব হাজির ।
সুতো ছিঁড়লেই সব শেষ
পড়ে থাকে আমার আমবাগান
খাঁ খাঁ চৈত্রের মাঠ যাত্রা শোনা রাত
আর মরা নদীর উপর
ভাঙা সাঁকো ।
মরু পৃথিবী [Bengali Poetry]
পাখির ডানার ঘায়ে বাতাস যখন কাঁপে,
আকাশের মনে পড়ে বৃষ্টির কথা।
মেঘের বুকে মুখ ঢেকে,
ধুলো কণারা তখন অঝরে কাঁদছে।
হঠাৎ কবিতার ডায়েরির ছেঁড়া পাতাগুলো,
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
মাটির কাছে নামে।
পৃথিবী তখন মরুভূমি
চিহ্ন নেই কোন, ঘাস লতা পাতা গাছের।
অনন্তের হাতে রাখি হাত [Bengali Poetry]
গ্রাম থেকে মৃত্যু যায় হেঁটে হেঁটে
শ্মশান ভূমিতে
তারপর আর ফেরা নয়
নিজের সাজানো সেই গৃহকোণে
যেখানে লাউডগা নিম ফুলে চির আহ্বান
আকর্ষণ খেজুর বীথির
কত প্রেম দুঃখ ভালোবাসা
দহন যন্ত্রণা ভীতির
যারা যায় তারা যায়
পিছে রেখে বিষাদ পুকুর
কলমির দাম ভরা জল ভরপুর
এ জীবন খুঁজে খুঁজে পায়নি হদিস
মানুষের
তবু তো জীবন তার চুপি চুপি
পেয়ে ছিল অনেক রতন
হিসেব মেলাতে আজ বড়ই কঠিন
যতই ভরাই পাতা
কিলবিল অক্ষরে সংখ্যায়
জননী [Bengali Poetry]
কার বাছা কাঁদে একা নির্জন সৈকতে,
কার বাছা কাঁদে একা ভাঙা চাঁদের রাতে !
ছায়াপথ ধরে চলো রাতের আকাশে তুমি,
আমার জননী।
চোখে যবে ছিলে বেঁচে,
এ চোখ খোঁজেনি।
যে জীবন দিয়ে গেলে,
তারে আমি এত ভালবাসি!
আমার পৃথিবী বৃত্তে কার স্নেহ রাশি!
বাছা তার নাড়ি ছেঁড়া ধন।
তাই তো অস্তিত্ব জুড়ে,
উপশিরা শিরা বেয়ে মায়ের স্পন্দন,
আজীবন।
প্রিয়জন [Bengali Poetry]
পথ রেখা মুছে যায়,
সীমাহীন সীমার নতুন পথের বাঁকে।
জীবন এসে দাঁড়ায় সে পথে,
শৈশব কৈশোর তারুণ্যের সুখদুঃখ,
আলো ছায়া, মেঘ রোদ্দুরের
উপন্যাস নিয়ে।
পৃথিবীতে কত দিন থাকি।
তবু সে জীবন যেন, সীমিত আলোর এক
আশ্চর্য জোনাকি।
আজ এক মানুষের কথা।
বিকিরিত আলোর মরমী মুগ্ধতা।
সে আলোয় হোক আলোকিত,
আমাদের ছেঁড়া সামিয়ানা।
প্রজন্মের পর্বে পর্বে ,
আমরা মেটাবো যত দেনা ।
আত্মজ [Bengali Poetry]
পৃথিবীর পথ ধরে, দীর্ঘকায় ছায়া ফেলে,
আত্মজরা হাঁটে।
জননীর সাধগুলো বাস্তবের মাটি মাখে
জীবনের হাটে।
অনন্ত কালের গর্ভে যায়
মানুষের ভালোবাসা হৃদয়ের গান।
সূর্যের দেশে নিয়ে এলো,
তাহার সন্তান!
মাতৃভাষা [Bengali Poetry]
মায়ের ভাষার ভেলায় ভেসে,
যাবো অচিন দেশে।
সূর্য যেথায় অস্তাচলে নদীর জলে মেশে!
বুঝবো আমি পাখির ভাষা, ফুলের ভাষা,
জলধারার গান।
আসবে ভেসে বাতাস বেয়ে,
পদ্ম শালুক শিমুল পলাশ,
বকুল ফুলের ঘ্রাণ।
এই প্রকৃতির অবুঝ ভাষা, নীরব ক্রন্দন,
বোঝাবে মোর মাতৃভাষা, হৃদয়রতন!
ডুবে যেও না [Bengali Poetry]
রোদ্দুরের সোপানে বসো না কোনদিন।
তুমি আমি বসেই তো আছি,
সময়ের ধারালো কিনারে।
আসন্ন সব কিছু ম্রিয়মাণ।
তবুও কইমাছের মত জিইয়ে,
নিরাকার আশা।
গিরগিটি সময়ের গভীরে অতলে।
বোধের নির্মাণে নামে ধস্,
রেখেছি তোমার হাতে হাত।
ডুবে যেও না প্রিয়তমা
কালসাঁঝ বেলা।
যাচ্ছি যাচ্ছি করে এ ঘরেতে আছি,
হিংসে করছে মানুষ,
ভালোবাসছে জল।
বাতাসের কাছে ধার নিচ্ছি প্রাণবায়ু
অনন্তকাল।
মনে পড়ে বরণের উলুধ্বনি,
বৈকালিক নারী।
শুধু বাঁচি, শুধু এই আছি,
অমাবস্যা পূর্ণিমায়।
বন্ধুর সন্ধানে [Bengali Poetry]
তার সঙ্গে দেখা হল না আজও,
যাকে বলতে পারি, – আমার বাড়ি যাস।
শোনাতে পারি আমার বুকের গান।
হাত রেখে তার হাতে, বলতে পারি,
দু মুঠো ভাত খাস।
হতাশ হয়ে মনটাকে আজ বলি
আর খচ খচ নয়।
চুপ করে দাঁড়ে বস,
বন্ধু না পেলে কী হয়!
আগুন আবিষ্কার [Bengali Poetry]
অন্ধকারের বুকের ভিতর
শুধু হাতড়াচ্ছি,
মার প্রশ্নের উত্তর।
দেশলাই।
দেশলাই কেন!
আগুন জ্বালবো।
আমার রক্ত হিম হচ্ছে,
হাতদুটো অসাড়।
পায়ের বিকৃতি তো সারা জীবন।
বুকের মধ্যে আগুন জ্বালালে
ওসব মনে থাকে না।
কোথাও কী আগুন নেই!
শেষে বুকের মধ্যে আবিষ্কার করি,
জায়মান আগুন।
আমার কান্না পায়।
আগুনের মধ্যে শুয়ে থাকার,
দিন আসছে।
বিরহী বাতাস [Bengali Poetry]
প্রভাতের হাসি, বাতাসের বাঁশি,
প্রেমিক কোকিল গায়।
সজিনার ফুলে, আমের মুকুলে,
মৌমাছি দল ধায়।
আজ এলো বসন্ত মনে,
দখিনা পবন উচাটন মন
চির হরিৎ ফাল্গুনে।
দেখ উচ্ছ্বাস উদাস বাতাস,
ফুলে ফুলে দেয় দোলা।
যেদিকে তাকাই নিজেরে হারাই,
পথিক সে পথ ভোলা !
মোহময়ী রূপে সাজে চরাচর,
কুজনে ভরিছে গাঁ ,
সখি তোরা আজ দেখে যা লো,
জুড়াবে অন্তরের ঘা !
আমার মনের আকাশ ভরেছে,
ধরেছে হিয়ায় টান,
ক্ষণিক ভুলেছি শোক তাপ জ্বালা,
প্রাণে জাগে প্রিয় গান !
বসন্ত হিল্লোল [Bengali Poetry]
প্রিয় দিদি শীত চলে গেলে। দোদুল দখিন
হাওয়া আঁচল মেলে। সোহাগী বসন্তের
ভুবন! কাঞ্চন টগর করবীর শাখে কিসের
নাচন। পাখপাখালি, গাছগাছালির মনের
তন্ত্রীতে বসন্ত আবেশ। শীতের ধূসরতা
জড়তার চাদর ছিন্ন হোল এক লহমায়।
পাতা ঝরা বনে মায়া মন্ত্রবলে ফাগুনের
ছোঁয়া। পুলকিত বৃক্ষ শ্রেণি, বসন্তের নীরব
পদধ্বনি মাটিও বুঝেছে আজ। সাজে
বনভূমি ফুলের মাধুরী দিয়ে। সাদা ফুলে
গাঁথা মালা। ভালোবাসা প্রিয়ে। দু চোখ
জুড়ানো রূপ। জ্যোৎস্নায় ভেসে যায়
মেঠোপথ। আঁধারের কোন এক অচেনা
পথে হাঁটে কারা! এত পাতা জায়মান,
এত ফুল মুকুলিত। দিগ্বিদিক সবুজের
বাতায়নে আলোর গান গেয়ে যাও, ও
পাখি! বসন্ত নেচে নেচে যায়, পায়ে তার
বকুল মালার ঝুমুর। কানে তার ভাঁটফুল
দুল। গলায় মালিকা তার গন্ধরাজ ফুলে।
খোঁপায় জড়ানো এক মাধবী লতার গোড়ে ।
জোনাকিরা জ্বেলে আলো সন্ধ্যা ভাসায়,
চেতনা জুড়ে সকালের, দুপুরের বিকেলের
চির বসন্তের দুলে দুলে বাহারি হিল্লোল।
গাছ [Bengali Poetry]
অদৃশ্য বসন্ত প্রেমে জেগে উঠে দেখি,
আমার সদ্যজাত পাতা , খিল খিল হাসে।
আমার সন্তান কুঁড়ি ,আধো ফোটা চোখে,
দেখে তার মুখখানি শিশির ভেজা ঘাসে।
ফুল ফল ভারে আমি যৌবনবতী
হে বসন্ত তুমি বুঝি নদী ইছামতী!
কত রূপে সাজায়েছ আমার জীবন,
অবিরত ঢালে সুধা বসন্ত পবন।
রুক্ষ শুষ্ক পৃথিবীর বুকে,
শিকড়ের নিরন্তর বাধা।
তবু আমি এ বসন্তে সেজেছি,
প্রেমিকা সে রাধা !
শাখায় শাখায় পাখি দোল খায়,
আমারও পরাণ দোলে ,
ঝুরু ঝুরু পাতার দোলায়।
পৃথিবী মায়ের কোলে ,
আমি, চিরন্তন প্রবাহ প্রাণের।
সেজেছি কনের সাজে ,
দিন এল বাসন্তী রঙের ।
সমান্তরাল দূরত্বে [Bengali Poetry]
বৃষ্টি তো জানে ভাঙা কুটিরের ব্যথা
ঝড়ের সঙ্গে যার বিপ্রতীপ সখ্যতা
ওরা সেই ভাঙা ঘরে থাকে
ধরণীর মা বলিয়া ডাকে
পৃথিবীর বিপন্নতা জটিল সময়
সব যেন ধূলি মলিন অবর্ণময়
উন্মুক্ত তার মনের কপাট
কোথায় সে যাবে চলে ফেলে রাজ্যপাট
রাজ্য তার নয় কোনদিন সে তো জানে
বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন
মানুষের ভালোবাসা চেনে
তবুও সে বৃষ্টি দিনের অপেক্ষায়
ঘন আঁধার কালো ছায়ায়
মধ্য রাতে প্রহর গোনে একা
কখন যেন নামলো বাদল ধারা
কেন জানি ভিজে আসে তাহার চোখের তারা
শুধু মাটির কাছে যেতে চাও যে তুমি
আসতো সেথায় মায়ের স্বর্গ নামি
শিরীষ ফুলে তপ্ত রোদের ছোঁয়া
বাতাসের কানে বৈশাখী গান গাওয়া
ছেঁড়া পাতার ছবি [Bengali Poetry]
ধামুয়া স্টেশনে, তখন বিকেলের মরে আসা আলো, ঘরে ফেরা মানুষের পায়ে পায়ে জড়াচ্ছে। ট্রেনের হুইসেল বাজে।
অন্ধ ভিখিরি দম্পতি আনুমানিক দক্ষতায়, তুলে দেয় যুগল আত্মজদ্বয়ের। দৃষ্টিহীন ক্ষিপ্রতায় পাশের কামরাতে ওঠার আগে, বলে দেয়, নামিস তোরা ঢাকুরিয়া। মুণ্ডিত মস্তক দুই ভাই বোন।উঠেই দৌড় ঝাঁপ , অবোধ শিশুর চপলতা। মানুষ ভরা ট্রেনের কামরা, হোল বুঝি লুকোচুরি খেলার অঙ্গন। ভয় নেই, ডর নেই অনাবিল যেন এক নিশ্চিন্ত ভুবন। ভাইটা মুষ্টিবদ্ধ হাতে আঘাত করে, কাঠের আসনে। যেন এক শিশু টাইসন। সে হয়তো কুটিল সমাজের বদ্ধ আগল খুলতে চায়! আবার নিজেরটা শেষ করে বোনের আধ খাওয়া কাঠি বরফ কেড়ে নেয়। ভাইবোন সে কি মারামারি!
চারিদিকে হৈ হৈ, ওরা নিরুত্তাপ। এভাবেই কী খেতে চাইছে, অবুঝ সন্তান, ভিখিরি মায়ের ছেলে ! ট্রেনের বিকট আওয়াজে ওদের উচ্ছলতার শব্দ ভাষারা হারিয়ে যায়। যেমন ভাবে হারিয়ে যায় ওদের শৈশব। ঝিক ঝিক ঝিক , ট্রেন যাচ্ছে এগিয়ে সেই ঢাকুরিয়ার দিকে। …. ওরা ভুলে যায়,ফেলে আসা গ্রামের কথা, সদ্য মৃত ঠাকুমার গল্প বলা মুখ, জীর্ণ কুটিরের গল্প। তার বদলে মনে পড়ে, রেললাইনের ধার ঘেঁষা ওদের ঝুপড়ি ঘর, ভাঙা পুতুল, ‘ স্বপ্নের শহর ‘। … তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়ে, ফাঁকা সিটে শুয়ে। দুই ভাইবোন। রেল চলে ঝিক ঝিক, জীবন চলে কখন ঠিক, কখনো বেঠিক। চলন্ত পৃথিবী থেকে নামার সময় হল। তবু যে অঘোর ঘুম শিশুদের চোখে। পাশের প্রবীণ, এক মায়াময় হাত ওদের জাগায়। ‘ ওঠ তোরা ,এসে গেল ঢাকুরিয়া। ‘ পাশের কামরায় তখন, ওদের অন্ধ মা বাবা দ্বৈত কন্ঠে গাইছে –
‘ মানুষ হইয়া জন্ম লভিলাম, মানুষের করিলাম কী ! ‘
শীর্ণ হাতের ছোঁয়া [Bengali Poetry]
পল্লবের ছায়া ফুঁড়ে রোদ্দুর দিয়েছে সংবাদ তার।
সারাক্ষণ বসে থাকে, বারান্দায়,
শীতলতা ঘেঁষে,
চেয়ে চেয়ে দেখে সারাক্ষণ,
মায়ের ভাসান বাসি ফুল
দীঘি জলে ভাসে।
আমরা যে কত উন্মুখ !
একবার যদি সেই মুখ হাসে।
শব্দ গুলো ঘোরে চারিধারে।
চণ্ডীমণ্ডপ থেকে ঢেঁকিশালে ,
নয়তো বা প্রিয় পাকশালে,
দুখিনী মায়ের হাতে সুধা খাবে বলে ।
শূন্য তাহার পিঁড়ি, পদচিহ্ন হীন সিঁড়ি,
তবু যেন চেয়ে আছে জ্বল জ্বল চোখে।
টিক টিক ঠিক ঠিক বেজে চলে ঘড়ি।
মাঝে মাঝে নীরব সময়ের হাত ধরে,
পুরনো কিশলয় বইটার পাতা খুলি।
সেখানে আমার নাম , লেখা তার,
ঘন কালো দিয়ে সাজানো অক্ষর।
যেন তার শীর্ণ হাতের ছোঁয়া মাথার উপর।
শিরদাঁড়া [Bengali Poetry]
আকাশকুসুম স্বপ্ন ,আর বাস্তবের
মধ্যবর্তী চরে আমাদের ঠিকানা।
স্বপ্নদর্শি মানুষেরা আসে এইখানে,
আর পরাবাস্তবের পিচ্ছিল ভূমিতে
আছাড় খায়।
প্রতিদিন ঘর্মজীবি মানুষের মিছিলে
দালালির ছুরি,
নিরন্তর রক্তক্ষরণ।
এইখানে আমদের স্বেচ্ছা নির্বাসন।
হয়তো বা অবান্ধব প্রবাস জীবন।
সারাক্ষণ বিপন্নতার খাটো দড়িতে বাঁধা।
কেউ স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নয় ,
তবু অন্তহীন মিছিলের সামনে দাঁড়াই।
বুকের ভাষায় বলি,
আঁকা বাঁকা গলি আর নয়,
একবার সরলরৈখিক পথে এসে দাঁড়াও !
ন্যুব্জ শিরদাঁড়ার গল্প আর নয় ।
মানুষ তো আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে গেছে ,
বারাম পথের বেড়া ভেঙে ,
একবার পাশের বাড়িতে যাও।
পদচিহ্ন মুছে যায় [Bengali Poetry]
বিশুদ্ধ আগুনে
সব বলিরেখা ছারখার
বাতাসের ওড়না ঝাপটানি
এফোঁড় ওফোঁড় বিকলাঙ্গ ভালোবাসা
এক ফোঁটা রক্ত যদি ঝরে
আরো যন্ত্রণার নির্মমতা
একটা দিন মুখ থুবড়ে পড়ে
এবার শরণাপন্ন
আকাশের মাটির এবং মৃত্যুর কাছে
তারপর পদচিহ্ন মুছে মুছে
চিহ্ন হীন হয়ে যাই
আজ নয় কাল নয় অনন্তকাল
বসে ছিল যারা খেয়াঘাটে
সব মুখ ঢাকা পড়ে স্মৃতির অ্যালবামে
শেষবারের মত চলে যাই
দর্পণের ওপারে
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
Bengali Story | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | গল্পগুচ্ছ | 2022
Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২
Top Bengali Story 2022 | আমাদের একাল-সেকাল | গল্প ২০২২
Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২
সমান্তরাল দূরত্বে | ছেঁড়া পাতার ছবি | শীর্ণ হাতের ছোঁয়া | শিরদাঁড়া | পদচিহ্ন মুছে যায় | কবিতাগুচ্ছ | বাংলা কবিতা | সেরা বাংলা কবিতা ২০২২ | কবিতাসমগ্র ২০২২ | বাংলার লেখক | কবি ও কবিতা | শব্দদ্বীপের কবি | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | দুটি সমান্তরাল রেখার মধ্যে দূরত্ব | সমান্তরাল (জ্যামিতি) | সমান্তরাল এবং লম্ব রেখা পর্যালোচনা | সমান্তরাল সংযোগ মানে কি | সমান্তরাল রেখার বৈশিষ্ট্য | ছেঁড়া পাতার গল্প | ছেঁড়া পাতার পার্শ্বচরিত্র | ছেঁড়া ডায়রির পাতা থেকে | ছেঁড়া দ্বীপ | মলাট ছেঁড়া গালিব | ছেঁড়া কাপড় | একটুকু ছোঁয়া | হাতের ছোঁয়ায় রোদের শিহরণ | মেহেদী রাঙ্গানো হাতের ছোঁয়া | তোর হাতের ছোঁয়া | মায়ের হাতের ছোঁয়া | বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া | শিরদাঁড়ার ব্যথায় কাবু | শিরদাঁড়া অর্থ | পিঠের শিরদাঁড়া ব্যথা | শিরদাঁড়া বিক্রি নেই | মুছে যায় পদচিহ্ন | পদচিহ্ন | কার্বন পদচিহ্ন | পদচিহ্ন নিয়ে উক্তি
bee poem | poem about self love | story poem | poetry angel | narrative poetry examples | poetry reading near me | prose poetry examples | elegy poem | poetry reading | the tradition jericho brown | poetry websites | protest poetry | prayer poem | emotional poetry | spoken word poetry | poem about god | percy shelley poems | jane hirshfield | spiritual poems | graveyard poets | chapbook | poems about life | poems to read | found poem examples | poems about life and love | elizabeth bishop poems | poems about women | sister poems that make you cry | famous quotes from literature and poetry | mothers day poems from daughter | poem about community | 8 line poem | inspirational poetry quotes | poem about life journey | positive poems | short poem about life struggles | toni morrison poems | good bones poem | google poem | funny poems for adults | inspirational poems about life | friendship poem in english | paul laurence dunbar poems | freedom poem | sad poetry about life | Shabdodweep Founder