প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Bengali Article]
ট্যাটু মেশিনের ক্রমবিকাশ | Tattoo Machine
ট্যাটু সংস্কৃতির ইতিহাস অতি প্রাচীন। তবে এই ট্যাটু বা উল্কি শিল্পের আদি পর্বে সে অর্থে কোন ট্যাটু মেশিন ছিল না, ছিল কাজ চালিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত কিছু প্রাকৃতিক ও হাতের নাগালে পাওয়া ঘরোয়া উপকরণ। যার পদ্ধতি ও অঙ্কন সরঞ্জাম ছিল সময়োপযোগী। বর্তমানে ট্যাটু অঙ্কন প্রণালী সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হতে হতে আজ অতি আধুনিক ডিজিটাল যান্ত্রিক রূপ ধারণ করেছে। এই ক্রম পরিবর্তনশীল ধারার মধ্যে ধারাবাহিক একটা যোগসূত্র কোথাও যেন থেকে গিয়েছে, প্রকারান্তরে যাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আদিতে ট্যাটু অঙ্কন পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণরূপে ম্যানুয়েল । তার ভালো-মন্দের সবটাই নির্ভর করত ট্যাটু আর্টিস্টের দক্ষতা বা তার পারদর্শিতার উপর। আজকের প্রেক্ষিতে সবকিছুই ইলেকট্রিক যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে।ট্যাটু শিল্প সুন্দর, সুদৃশ্য ও শৈল্পিক সুষমায় সর্বাঙ্গসুন্দর রূপ নিয়েছে। এই বিবর্তন কিন্তু একদিনে সম্ভব হয় নি।ট্যাটুর অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান করলে একটা যন্ত্রণাদায়ক ও নিষ্ঠুর অধ্যায়ের পরিচয় সর্বসমক্ষে প্রতিভাত হবে ওঠে। বিশ্বজুড়ে যেমন ট্যাটুর প্রচলন ছিল তেমন এক একটা দেশ বা অঞ্চল স্বতন্ত্রভাবে তার ঐতিহ্য ও প্রথা বজায় রেখে ট্যাটু অঙ্কনের প্রণালী এবং যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল।
পৃথিবীর আদিম অধিবাসীরা জীবজন্তুর ছুঁচলো সরু হাড় বা বাঁশের তীক্ষ্ম ফলা দিয়ে নিজেদের গায়ের চামড়ায় বিঁধিয়ে বিঁধিয়ে নানা ধরণের উল্কি আঁকতেন।কাঁটা গাছের কাঁটা অথবা বাঁশের ডগা মসৃণ করে তা দিয়ে চামড়া ছিদ্র করে শরীরের ভিতর কালি বা রঙ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হতো। আর কালি হিসেবে ব্যবহার করা হতো গাছের রস, গোদুগ্ধ, গোমূত্র, ষাঁড়ের পিত্ত ও অ্যানিম্যাল ফ্যাট ইত্যাদি। তীক্ষ্ম ধারালো চিরুনি দ্বারা কার্বন গুঁড়োর সাহায্যে উল্কি আঁকার চল ছিল কোথাও কোথাও। ‘তোবরি’ নামক উল্কিটি জাপানের একটি প্রচলিত প্রথাগত ঐতিহ্যবাহী উল্কি সংস্কৃতি। এটি আঁকা হয় আধুনিক কোন যন্ত্রে নয়, একেবারে হাতে তৈরি বিশেষ একপ্রকার যন্ত্রের সহায়তায়।
হাওয়াই দ্বীপে এক সময় সামাজিক ও প্রশাসনিক নজর এড়িয়ে অত্যন্ত গোপনে উল্কি আঁকা হতো এবং পরে সেই যন্ত্রপাতি গুলো ধ্বংস করে ফেলা হতো। চীনে এক ধরণের মাঙ্গলিক প্রথা হিসেবে যুদ্ধে গমনকারী সন্তানের শরীরে সুঁইয়ের ফোঁড়ে চামড়া ছিদ্র করে উল্কি এঁকে দিতেন মায়েরা। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, যুদ্ধক্ষেত্রে এই উল্কি চিহ্ন দৃষ্টি গোচর হলে নাগরিক হিসেবে দেশ মাতৃকার প্রতি কর্তব্যের কথা স্মরণে আসবে। সামোয়া দ্বীপপুঞ্জে উল্কির চল দুই হাজারের ও পুরনো ।ধর্ম প্রচারক খ্রিষ্টান মিশনারিদের বাধাদান সত্ত্বে ও তাদের উল্কি উৎসাহে ভাটা পড়ে নি। তবে আধুনিক যন্ত্র পাতি দিয়ে নয়, তাদের উল্কি আঁকার উপাদান ছিল, শূকরের দাঁত, কাছিমের খোলা আর কাঠের হাতল দিয়ে বেশ যত্ন সহকারে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বিশেষ এক ধরণের কার্যকরী যন্ত্র।কালি মাখা তীক্ষ্ম ফলা শরীরের চামড়ার উপর বসিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে করে ছিদ্র করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে এই কাজ সমাপ্ত করতে লাগত প্রায় মাস তিনেক। আবার উল্কির নকশা মজবুত ও স্পষ্ট হয়ে উঠতে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হতো।
ট্যাটু শিল্প যে বহু প্রাচীন তার প্রমাণ মেলে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ট্যাটু কিট আবিষ্কার হওয়ার পর। সময়টা ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ। নেশভিলে এক ব্রিজ তৈরি উপলক্ষে এলাকা খনন কারীরা খুঁজে পেয়েছিলেন এই কিট।এগুলি খুব সাধারণ যন্ত্র ছিল না। ওষুধের বান্ডিল বলে ভ্রম হয়েছিল ডেটার উল্ফের । কিন্তু পরে জানা যায় এগুলি ট্যাটু কিট।বস্তুগুলি ছিল,টার্কির হাড় দিয়ে নির্মিত সূচ, পাথর এবং রঙ রাখার একটি পাত্র। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, প্রাপ্ত কিটগুলি ৫৫২০ থেকে ৩৬২০ শতকের কোন এক সময়ের। শিফম্যাচার নামে এক বিশ্বখ্যাত উল্কি শিল্প সংগ্ৰাহক তাঁর সংগ্ৰহ শালায় ৪০ হাজারের ও বেশি ট্যাটু যন্ত্র পাতি মজুত রেখেছিলেন। সেখানে ১৯ শতকের ‘কাবুকি’ ধরণের উল্কি আঁকা জার্মানি কাঠের ব্লক- প্রিন্ট যেমন আছে, তেমনি ছিল ১৯০০ শতকের গোড়ার দিকের উল্কি শিল্প সংক্রান্ত কাঠ ও হাড়।
এছাড়া আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ট্যাটু শিল্প সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির বহু নিদর্শন সংগৃহীত আছে।যেমন, নিউইয়র্ক সিটির ডেয়ার ডেভিল মিউজিয়াম ও সানফ্রান্সিসকোর ট্যাটু স্টুডিও এবং আরো কয়েকটি জাদুঘরে। শুধু মাত্র ধর্মীয় কারণে ধর্ম ভিত্তিক দেব-দেবীর মূর্তির আদলে আঁকা ছবির ট্যাটু ধারণ করতে দেখা যেত ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নর নারীর মধ্যে। বাহুতে সূচ ঢুকিয়ে চামড়া ছিদ্র করে এই সমস্ত উল্কি আঁকার পর তাতে কেশুর্তিয়া পাতার রস প্রয়োগ করা হতো এবং নীলাভ রঙের উল্কি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে দেখা যেত। বাংলার বাইরের রাজ্য, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব থেকে অবাঙালি হিন্দুরা ফেরি করে করে উল্কি এঁকে বেড়াতেন। তাদের উল্কি আঁকার প্রধান হাতিয়ার ছিল লম্বা এবং সরু এক ধরণের সূচ। সঙ্গে আরো থাকত মুখ বন্ধ শিশিতে কালচে সবুজ রঙের তরল পদার্থ।অপর একটি কৌটোতে সাদা তুলো চেপে চেপে ভর্তি করা থাকত। ধারালো সূচ দিয়ে চামড়ার উপর বিঁধে বিঁধে মূল নকশার বর্ডার অনুযায়ী অসংখ্য ছিদ্র তৈরি করে একটি তুলির সাহায্যে কালচে তরল পদার্থটি ওই সারিবদ্ধ ছিদ্রগুলির উপর বুলিয়ে দেওয়া হতো এবং তরলটি ছিদ্র মারফত চামড়া ভেদ করে নিচে নেমে গেলে পর সম্পূর্ণ ট্যাটুটি কালচে অবয়বে স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠত। তখন উল্কি ক্ষেত্রটিতে তেলের মতো অন্য একটি স্বচ্ছ তরল পদার্থের প্রলেপ দিয়ে একটু অপেক্ষা করে তুলো দিয়ে মুছে নেওয়া হতো।
একটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ছোট হোক কিংবা বড়ো হোক, সূচের ব্যবহার প্রায় কমন ছিল। যদিও এক একটা দেশ বা এলাকা তাদের ঐতিহ্য বহাল রেখে প্রচলিত যন্ত্রপাতি প্রয়োজনে লাগিয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতেন।
বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের সাহায্যে ট্যাটু আঁকা হয়।১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে টমাস আলভা এডিসন একটি বৈদ্যুতিক কলম আবিষ্কার করেন।পরে ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্ক বাসী স্যামুয়েল এফ ওরিলি সেটিকে ট্যাটু মেশিনে পরিবর্তিত করেন এবং ১৮৯১ -এর ৮ডিসেম্বর তার পেটেন্ট লাভ করেন।(ইউ এস পেটেন্ট 404,801) এডিসনের রোটারী চালিত স্টেনসিল কলমের পেটেন্ট ছিল ইউ এস 180,857. এডিসনের বৈদ্যুতিক কলমটি ট্যাটু অঙ্কন প্রণালীতে প্রথম বিপ্লব ঘটিয়েছিল। তারপর ওরিলির ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিন আনুষ্ঠানিক ভাবে ট্যাটু জগতে নব যুগের বিস্তার ঘটায়। স্যামুয়েল ওরিলিকে বৈদ্যুতিক ট্যাটু মেশিনের গড -ফাদার রূপে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
আধুনিক যুগে শরীরে ট্যাটু খোদাইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সর্বজন গ্ৰাহ্য মেশিন হচ্ছে ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিন। দন্ত চিকিৎসকদের ড্রিল মেশিনের অনুরূপ ট্যাটু মেশিনের মাথায় রয়েছে অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি সূচ। রংযুক্ত সূচটি যখন বার বার চামড়া ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে তখন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সূচের কালি ও শরীরের ভিতর প্রবেশ করে চামড়ার ডার্মিস স্তর পর্যন্ত পৌঁছে স্থায়ী হয়ে থেকে যায় সারা জীবনের জন্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ট্যাটু মেশিনের কারিগরি কলাকৌশলের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে।স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে ট্যাটু আঁকার জন্য ব্যবহার করা হয় নানা মাপের সূচ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার উপযোগী পৃথক পৃথক কার্যকরী মেশিন কাজে লাগানো হয়।
এল সি ডি স্ক্রিন, যেটি মেশিনের মোড, গতি, শক্তি ও কাজের স্থায়িত্ব নির্দেশ করে। আইলাইনার, ঠোঁট, ভ্রু প্রভৃতি স্থানে ট্যাটু করার জন্য সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বহু ডিজিটাল ট্যাটু মেশিন বর্তমানে দেশ-বিদেশের বাজার ভরে গিয়েছে। এমন কি ভিন্ন ধরণের ত্বকের জন্য উপযোগী একাধিক ভিন্ন ভিন্ন মেশিন ও আজ সহজলভ্য। স্টেনলেস স্টিলের ট্যাটু পেনগুলি যথেষ্ট মসৃণ, মজবুত এবং যত্রতত্র পোর্টেবল।স্বয়ংক্রিয় ভাবে এর নিব গুলিকে লক করা যেতে পারে। ট্যাটু শিল্পীদের সুবিধার্থে, দক্ষতা প্রদর্শনের এবং সুনাম অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকূল, নিরাপদ ও আরামদায়ক ট্যাটু কিট, বৈদ্যুতিক ট্যাটু পেন,ট্যাটু মেশিন এবং সরঞ্জাম হাতের নাগালে পেতে এখন আর কোন সমস্যা নেই। বৈদ্যুতিক ট্যাটু মেশিনের প্রান্তে আটকানো সূচের মুখে কালি নিঃসরণ হওয়ার ব্যবস্থা করাই থাকে।সূচ ও আছে রকমারি।লাইন টানা এবং শেড দেওয়ার পৃথক পৃথক সূচ পাওয়া যায়। যদি একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন রঙের কালি ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত আছে।
এক্সিবিট-A ও এক্সিবিট -C নামের এলমার গেচেলের দুটি ট্যাটু মেশিনের উল্লেখ প্রসঙ্গক্রমে এসে যায়। এছাড়া আছে বেল ট্যাটু মেশিন। 2D, 3D প্রিন্টেড ট্যাটু মেশিন। চীনা ডিজিটাল ভ্রু ট্যাটু পেন মেক আপ মেশিন। তবে বর্তমান বিশ্বে এমন অনেক ট্যাটু শিল্পী আছেন যাঁরা আগের সেই সমস্ত পুরানো উল্কি মেশিন বেশি পছন্দ করেন। সূচ, লাঠি, চিরুনি, হাড়, বাঁশ, কাঁটা ইত্যাদি প্রথম দিককার সাজ-সরঞ্জামগুলি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৮৭৬ অবধি। আধুনিক ট্যাটু মেশিনের দুনিয়ায় শেষতম সংযোজন বৈদ্যুতিক ট্যাটু মেশিন (2015), যেটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। বর্তমান বিশ্বের বাজারে ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিন যে কতো প্রকারের আছে তার সঠিক হিসেব রাখা প্রকৃতপক্ষে দুরূহ ব্যাপার।এক চীন দেশে উৎপন্ন ইলেকট্রিক ট্যাটু মেশিনের সংখ্যাটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে যথেষ্ট।
প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha
Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023
Emblem of Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকের অর্থ | নক্শা ও তাৎপর্য | 2023
Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023
Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023
ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | History of Tattoo | Reasons for using tattoos | 2023
Tattoo Machine | Online Tattoo Machine | Tattoo Machine Images | tattoo machine price | professional tattoo machine | tattoo machine full set price | tattoo machine price india | tattoo machine pen | tattoo machine price amazon | tattoo machine low price | New Tattoo Machine | Top Tattoo Machine | Tattoo Machine Pictures | Tattoo Machine Vector Images | Wireless Tattoo Machine | Mother Tattoo Machine | Tattoo machine Icons | Tattoo Machines and Parts | Rotary Tattoo Machine Motors | Tattoo Machines for sale | Tattoo Machine Jeans Perfume | x wireless tattoo machine | Tattoo Machine Vector Art | Tattoo Machine in Kolkata | How Tattoo Machine Work | Neuma Tattoo Machine | Professional Tattoo Machine | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder