Best Bangla Mukto Gadya Archive | Shabdodweep

Sharing Is Caring:

সেলফি – জয়ন্ত কুমার সরকার

সরকারী অফিসের দেওয়ালে পানের পিক, গুটখার নোংরা দাগের দৃশ্যদূষণ ঠেকাতে নতুন সাহেব স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে ‘যামিনী রায়’ শিল্পকলায় অফিসের সারা সীমানা প্রাচীর ছবিতে ভরিয়ে দিলেন। তারপর দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা ডাকা হল হোয়াটস-অ্যাপ গ্রুপে। ব্যস, কেল্লা ফতে! দারুণ সাড়া! দেওয়াল ঘিরে সারাদিন টিন-এজ ছেলেমেয়েদের ছবি তোলার উন্মাদনা চলতেই থাকল বেশ কিছুদিন। এই দেখে শহরের অন্য দেওয়ালেও ছবি আঁকানো চলতে থাকল। এখন আর দেওয়াল নোংরা হয় না। হাতে অ্যানড্রয়েড ফোন আসার পর ক্যামেরার কদর আর নেই। আট থেকে আশি সবাই এখন সেলফি ফোবিয়ায় আক্রান্ত। লকডাউনের সময় মাস্ক পরেও চলছে সেলফি তোলার ভীড়। এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাস্কটা সরিয়ে একটা শট আর সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে আপলোড…চলছেই। আসলে নিজেকে দেখাতে মানুষ এতই উন্মুখ যে ভাল-খারাপ জ্ঞানও থাকছে না। দুর্ঘটনায় সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে মোবাইল বাড়িয়ে দিচ্ছি, ছবি তুলে সবচেয়ে আগে আপলোড করতে হবে যে! মানবিকতা ভুলে এত যান্ত্রিক হই কি করে আমরা! দ্রুত বদলাচ্ছে পরিবেশ-পরিস্থিতি; আগের দশকেও, কোডাক ফিল্মের একটা শট নষ্ট মানে অনেকটা ক্ষতি ভাবতাম। এখন আলো, অ্যাপারচার,জুম এসবের বালাই নেই, ফটাফট্ ক্লিক; একটা না হলে পরেরটা ; চলছে তো চলছেই। হাতের ফোনেই তো যত ভেলকি! আমরা সবাই এখন ক্যামেরাম্যান যে, তাই ছবির এত ছড়াছড়ি।

পাদুকা পুরাণ – জয়ন্ত কুমার সরকার

দর কষাকষি শেষে মহিলাবাহিনী ঘোষণা করলেন, পাঁচ হাজার না হলে জুতো ফেরৎ হবে না! কি মুশকিল! এত রাত্রে নতুন জামাই বাবাজীবন জুতো পাবেন কোথায়! বরের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও নিরুপায়! অগত্যা আত্মসমর্পণ। বিয়ে বাড়ির অন্দরমহলে হুলস্থূল, মহিলামহলে হাসির রোল, কমবয়সীরা হো-হো শব্দে, উচ্চস্বরে, বয়স্কারা মুখ চেপে হাসছেন, মজা নিচ্ছেন। নতুন বরের সদ্য হারানো জুতো জোড়ার শোক, নতুন কুটুম্বদের সামনে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, শালিকা-বৌদিদের আদরমিশ্রিত রঙ্গতামাশা সবাই উপভোগ করছেন, কিন্তু মুখে কিছু বলছেন না। শেষে শালিকাকুলের কাছে মোটা টাকার জামিনে জুতো ফেরতের অঙ্গীকার। বিয়েবাড়ির এরকম অম্লমধুর ঘটনা প্রায়ই দেখি আমরা। মানুষের পদযুগলের নিরাপত্তার জন্য জুতোর উদ্ভাবন হলেও বর্তমানে এটি একটি অপরিহার্য্য সামগ্রী, যা ফ্যাশনও বটে। কালের আবর্তে খড়ম এখন শুধুই স্মৃতি। বেশ কয়েক শতক আগেও কাঠের তৈরী খড়ম ভারতে জনপ্রিয় ছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সেই জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে কল্পনায় হবুচন্দ্র-গবুচন্দ্রের কৌতুক মিশ্রিত জুতো আবিষ্কারের গল্প শুনিয়েছেন কবিতায়। মাটিতে পা ফেললেই ধূলা-কাদা লেগে পা কেন নোংরা হবে, অস্থির রাজা মন্ত্রী গবুচন্দ্রকে উপায় খুঁজতে আদেশ করেন। মন্ত্রী গবুচন্দ্র সারা রাজ্য তোলপাড় করেও সঠিক উপায় বের করতে পারলেন না। তখন এক বৃদ্ধ মুচি অগতির গতি হয়ে রাজসভায় উপস্থিত হলেন। বৃদ্ধ চর্মকার রাজামশাইয়ের পা জোড়া চামড়ায় মুড়ে দিলেন। চামড়ার তৈরী এই বস্তুটিই আজকের জুতো। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে পাদুকার ঐতিহ্য স্মরণে আসে। বনবাস আটকাতে না পেরে অগ্রজ রামচন্দ্রের পাদুকাদ্বয় অযোধ্যার সিংহাসনে বসিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতেন ভ্রাতা ভরত। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে জুতোরও আধুনিকীকরণ হয়েছে। জুতো নিয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক মজার পর্ব চলে বিয়ে বাড়িতে; বরের জুতো লুকিয়ে কন্যাপক্ষের ছেলেমেয়েরা মজাদার রঙ্গ-তামাশায় লিপ্ত হয়। পা-এর নিচে থাকে বলে ফ্যাশানের আভিজাত্যে এখন আর অবহেলিত নয় পাদুকা মহাশয়। জুতো পালিশ-মেরামতির পেশায় যুক্ত মুচি ভাইয়েরা মানুষেরা আমাদের কত বড় বন্ধু তা অনুভব করা যায় যখন হন্যে হয়ে একটাও জুতো সেলাইয়ের দোকান খুঁজে না পাই! তখনকার কাঠের খড়ম, কাঠের জুতো, গাছের ছাল দিয়ে তৈরী পাদুকা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এখন লেদার,ফোম, কাঠ, পেট্রোকেমিক্যাল দ্রব্যে সজ্জিত রঙিন ও সুদৃশ্য নানান মডেলের জুতো বাজার মাত করেছে অনলাইন-অফলাইনে। পাদুকা পুরাণ তাই বিবর্তিত জুতোর আধুনিক উপাখ্যানও বটে।

না-মানুষ বন্ধুরা – জয়ন্ত কুমার সরকার

মাধ্যমিক পরীক্ষার মাস তিনেক আগে সুরেশের অনেক দিনের সাধ ওর বাবা পূরণ করেছিলেন। সদ্য কৈশোরে পা, সবে পনের পেরোনো সুরেশ তখন পেয়েছে একটা নতুন ঝকঝকে সাইকেল, মাধ্যমিককের টেস্ট পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। অ্যাভন’ সাইকেলটা কমদামী হলেও,তখন ওটাই ঢের সুরেশের কাছে। খুব সাধারণ একটা চাকরী সুরেশের বাবার,ছ‘জনের টানাটানির সংসার। সাইকেলটা কিনতে লোন করতে হয়েছিল বাবাকে। সুরেশের স্মৃতিচারণে উঠে আসে ছেলেবেলার নিষ্পাপ মনের ক্যানভাসে আঁচড় কেটেছে যে সব ঘটনা। সুরেশ বলছিল, সাইকেল কেনার আগের রাতে আনন্দে উত্তেজনায় ঘুম হয়নি আমার। নতুন সাইকেল, হাত কাঁচা, তাই খুব ভয়ে আর সাবধানে চালাতাম, আর খুব যত্নে রাখতাম আমার বাহন বন্ধুকে,একটু ধুলো জমতে দিতাম না। তখন সাইকেলে টিউশানি যেতাম শুধু। অঙ্ক স্যরের বাড়ীতে যেতাম, স্যর আমার বাবাকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন। খুব ভালবাসতেন আমাকে, আমার সাইকেল যত্নের বহর শুনেছেন, মুচকি হেসে ঠাট্টা করে প্রায়ই বলতেন, “সরকার ! সাইকেলটা আজ ভাল করে মুছেছিস তো, তুই, বাইরে রাখিস না, ভিতরে রাখ!” অন্য সহপাঠীরা বাইরেই সাইকেল রাখত,আমি লজ্জায় পড়ে যেতাম! তখন নতুন চালাতে শিখেছি, সিটে উঠেছি সপ্তাহখানেক হবে, হাতের বশ ততটা পাকা হয়নি, তাই ভীড় এড়িয়ে চালাতাম। কিন্তু সেদিন এড়ানো গেল না, খাতা কিনতে বেরিয়ে বাজারে চৌমাথার মোড়ে রাস্তা মেরামতের বোর্ড লাগানো ছিল, বড় একটা বাঁশ রাস্তার মাঝে আড়াআড়ি, তাতে লাল পতাকা লাগানো। বাঁশের পাশ দিয়ে ড্রেন পাশে রেখে অনেকেই সাইকেল, মোটর সাইকেল নিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে দেখলাম। আমিও সাহস সঞ্চয় করে বাঁক নিতে গিয়ে সমতা হারিয়ে হাইড্রেনে সাইকেল সহ পড়ে গেলাম, আমার সেরকম না লাগলেও বন্ধুর চোট সাংঘাতিক হল, সামনের ফগটা বেঁকে গেল, ঘষা লেগে রঙ চটে গেল কয়েক জায়গায়। অব্যক্ত কান্নায় বুক ফেটে যাচ্ছিল আমার। কত বছর, মাস, দিন, ঘন্টা আমার সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছে বাহন বন্ধু আমার,আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে রোদ জল ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে বাইরে পড়ে থেকেছে, আমি থেকেছি ভিতরে। কত স্মৃতি ভীড় করে। কলেজ শেষ করার পর অন্য সাইকেল কিনেছি, অবহেলায় নষ্ট হওয়ার আগে ওকে এক পড়ুয়াকে দিয়ে দিই। চাকরীতে আসার পর অনেকদিন পর্যন্ত সাইকেলই আমার সঙ্গী ছিল। এখন বাহন স্কুটি। আমার কাছে যত্নেই থাকে, অনেকে বাহনের যত্ন দেখে ঠাট্টা করে, করুক ঠাট্টা! কি আসে যায়! একই রকম আমার কাছে যত্নে থাকে হাতঘড়ি’, রেডিওসেট, মোবাইল, চশমা, ছাতা, ‘অফিস ব্যাগ’ সহ আরও অনেকে, আমার না-মানুষ বন্ধুরা। সুরেশের স্মৃতি চারণায় অনেকে নিজের ছোটবেলা ফিরে পাবেন, মনে হয়।

পরিযায়ী – জয়ন্ত কুমার সরকার

পাখি হয় জানতাম, কিন্তু মানুষও পরিযায়ী হয়! প্রকৃতির কি নির্মম পরিহাস ; রেললাইন বরাবর পায়ে হেঁটে আসছে এক দল শ্রমিক, লটবহর-বোঁচকাসহ পরিশ্রান্ত হয়ে রেললাইনেই ঘুমিয়ে পড়েছিল, অভুক্ত ভিনদেশী শ্রমিক, আচমকা যমদূত রেলের চাকায় পিষ্ট হতে হয় ঘুমন্ত অবস্থায়; আকস্মিক লকডাউন ঘোষণায় অনির্দিষ্টকাল পরিবহন সহ সমস্ত ধরণের পরিষেবা বন্ধ, মানুষকে ঘরে আবদ্ধ থাকার কড়া সরকারি সতর্কতা জারি; সতর্কতা উপেক্ষা করে নিরুপায় উদভ্রান্ত মানুষ পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে হাজার-হাজার কিলোমিটার পথ, ঘরে ফিরতেই হবে, ওরা বেপরোয়া, মরতে হলে নিজের ভিটেয় মরবে, মরিয়া ওরা এই বিশ্বাসে ভর করে হেঁটে চলেছে মাইলের পর মাইল, কখন শেষ হবে পথ, শেষ হবে কবে অমানিশা, কেউ জানে না; জুতো নেই, খালি পায়ে ফোস্কা, খুঁড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বুকে হাঁটছে, থামছে না তবুও; পায়ে পায়ে অনেক পথ হেঁটেই চলেছে, শেষ নেই, বিভিন্ন চ্যানেলে ছবি-খবর দেখে শিউরে উঠেছি আমরা। ঠিকানায় ফেরার জন্য মানুষের কি আকুতি; অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, অসুস্থ, ক্ষুধার্ত, তবুও, হেঁটেই চলেছে ওরা।

অহংকার – জয়ন্ত কুমার সরকার

তুই এসব ছাড় সবসময় আমিই সেরা, আমিই ঠিক, আমার চেয়ে ভাল কেউ বোঝে না,আমি সবসময় ঠিক করি, আমার ছেলে, আমার বউ, আমার মেয়ে, সর্বদাই আমার আমার করাটা বন্ধ কর। কি ভাবিস তুই আমরা সব ফালতু! তুই খালি নিজের কথাই বলিস, তুই কারও কথা শুনতে চাস না, শুধু নিজের কথা শোনাতে চাস, শুধু হুংকার দিস! এত অহংকার ভাল নয় বুঝলি। কেন রে, তোর কথা সবসময় শুনতে হবে কেন। তুই কি ভাবিস, আমরা বোকা,‌ শুধু তুই বুদ্ধিমান! আত্মবিশ্বাস ভাল, কিন্তু, এতটা কি ভাল! এতক্ষণ চুপ করে বন্ধু অতনুর কথা শুনছিল প্রবীর, আর পারল না। থাম, তুই থাম অতনু, অনেকক্ষণ জ্ঞানগর্ভ কথার ফুলঝুরি দিয়েছিস।‌ তুই কি মনে করিস আমি চরম স্বার্থপর, ধান্দাবাজ! আমার মানবিকতা নেই! না রে অতনু, ব্যাপারটা সেরকম নয়। অনেকদিন তো খেটে মরলাম, নিজের জন্য তখন ভাবিনি, এখন দেখি আমিই বোকা, তলে তলে সব আখের গুছিয়ে নিয়েছে। মুখেই বড় বড় লেকচার বুঝলি, ব্যক্তি জীবন অন্যরকম কাজের সঙ্গে মিল নেই। যেন-তেন-প্রকারেণ নিজের পেট ভরানো। এখন ছেলে-মেয়ে-বউ ছাড়া পরিবারের আর কাউকে দরকার নেই, বাবা-মাও বোঝা, ওঁদের জীবন শেষে কিছু পাওয়ার থাকলে হয়তো ততদিন সহ্য করে, কেউ কেউ আরও অধৈর্য, জোর করে ধমক দেয়, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেখায় আমাদের আদরের সন্তানরা। কি নিদারুণ পরিস্থিতি। মূল্যবোধ এতটা নিচে! সততা এখন আলোকবর্ষ দূরের শব্দ।”

সেবার বাণী কেঁদে মরে, ফাঁকা বুলি মর্ম-ব্যথা,
হুংকার ছাড়ে অহংকারী প্রতিবাদ বৃথা যথা-তথা।

তাই, না! মামা বাড়ীর আবদার! এত দম্ভ, মাটিতে পা পড়ে না, কেন রে ভাই, আমাদের টাকায় ফুটানি মারা,আর আমাদেরই চোখ রাঙানি, এসব কেন মেনে নেব রে আমরা! কিছু কাজের ব্যবস্থা কর না, দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না!” অতনু বলল, “ওরে গাধা, কে বলল দয়া-দাক্ষিণ্য, আমরা তো পাচ্ছি অনেক বেশি রে! মুচকি হাসে প্রবীর।

গল্প আড্ডা মজলিশ – জয়ন্ত কুমার সরকার

চাকরীতে আমার প্রথম পোষ্টিং বাড়ীর থেকে বেশ দূরের এক ব্লক অফিসে ; আমার শহর বিষ্ণুপুর থেকে বাস পাল্টে অফিসে যেতে হত । অফিস থেকে ফিরেই পাড়ার মোড়ে এক বন্ধুর হারমোনিয়াম দোকানে রোজ বসতাম, তখন বন্ধুটি হারমোনিয়ামে সুর বাঁধত ; কাজের ফাঁকেই টুকটাক কথাবার্তা গল্প হত, মাঝেমাঝেই ওর বাড়ির ভেতর থেকে চা-মুড়ি-তেলেভাজা আসত ; সপ্তাহে দু-এক দিন গানের মজলিশও বসত ; রোজ অফিস ফেরত বাড়িতে ঢুঁ মেরেই ছুটতাম ঐ মোড়ের দোকানের আড্ডায় । চাকরীর আগে ক্লাবও করেছি চুটিয়ে, ঐ দোকানের সামনের মাঠটায় বাচ্চাদের খেলাতাম আমরা কয়েকজন, শহরের অন্য একটা ক্লাবের দু-তিনজন ট্রেনার আসত আমাদের সাহায্যের জন্য । খেলার শেষে সন্ধ্যের গোঁড়ায় হৈ হৈ করে কচিকাঁচা ছেলেমেয়েগুলো বাড়ি ফিরত আর গোটা এলাকাটা সরগরম হয়ে উঠত বাচ্চাগুলোর তান্ডবে ; তখন পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি ছিলাম আমি, ইমেজটা ভালই ছিল আমার । বন্ধুদের সাথে গল্প, নাটকের রিহার্সাল, রক্তদান শিবির, বসে আঁকো প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা, খরচের হিসাব, চাঁদা আদায় এসব মাঠ থেকে ফিরে হারমোনিয়াম দোকানে বসেই হয়ে যেত । পরে পরে বাচ্চাদের খেলাতে মাঠে যাওয়া আর হয়ে উঠত না, সন্ধ্যের পর অফিসে থেকে ফিরে ঐ দোকানেই বসতাম, পাড়ার শহরের হাল-হকিকত গল্প গুজব সবই হত, একটা অমোঘ টান ছিল ঐ আড্ডায় । দিন বদলের সাথে সাথে সব কিছুই পাল্টে যায়, সময়ই সবকিছু পাল্টে দেয় ; এখন মধ্য গগনে অফিস সামলে সংসার সামলে আড্ডার আর সময় কোথায়, নিয়মিত বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব, ঠাট্টা-ইয়ার্কি হয় আর কই ! মন মানসিকতা পাল্টেছে যে, তখনকার মতো কম বয়সের আবেগ, উদ্যম, প্রাণ চঞ্চলতা আছে কি ! এখন আড্ডায় বসি পুজোর ছুটির সময়, পুরানো পাড়ায়, পুরানো বন্ধুরা জড়ো হলে ।

নিন্দুকেরা বলে বাঙালী আড্ডাবাজ, বিশ্বজোড়া এই বদনাম থেকে বাঙালীরা যে একেবারে মুক্ত নয় তা আমরা সকলে জানলেও আড্ডায় বসেন না এমন বাঙালি কি খুঁজে পাবেন, সে হাই-প্রোফাইল সফল বঙ্গ সন্তানই হোক বা আমাদের মত ছা-পোষা মধ্যবিত্তই হোক ; গল্পে-গানে-আড্ডায় রসিক বাঙালীর জুড়ি মেলা ভার । আড্ডা শব্দটার ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই । এটা কেবল বাঙালীরই, একেবারে নিজস্ব, বাঙালীর পরম্পরার অঙ্গই বলা যায়। আগের সময়ে বেশীর ভাগ শহুরে শিক্ষিত যুবক গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন করত, তাদের আড্ডা ছিল অন্যরকম ; গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ মোড়ের চা-দোকান বা চণ্ডীমণ্ডপে আড্ডা জমাত । মেয়েদের পি-এন-পি-সি র মতই কুট-কিচালি থেকে গ্রামের কোন মেয়ে কাকে ল্যাং মারল বা কে কাকে কটা চিঠি পাঠাল এ সবই থাকত আড্ডার বিষয়বস্তু । স্বাধীনোত্তর সময়ে নিছক আলস্যের সময় কাটানোর কেন্দ্রস্থল হিসাবে আড্ডা প্রাধান্য পেয়েছে ; ক্রমে নানান পেশার সফল মানুষজন নিজের নিজের পছন্দের জায়গায় সময় কাটাতে জড়ো হতেন ; কফি হাউস, চা-দোকান, হোটেল-রেস্তোরার নির্দিষ্ট কয়েকটা টেবিলে আড্ডা চলত; সৃজনশীল চিন্তার ভাব বিনিময়, সাহিত্য-কবিতা-বিজ্ঞান-নাটক-যাত্রা-সিনেমা সবই থাকত আলোচনায়, উঠতি কবিরা ছন্দ মেলাতেন, কেউ বা গানের নতুন সুর খুঁজে পেতেন আড্ডায় বসে। ‘কফি হাউসের আড্ডা‘টা তো মিথ হয়ে আছে রসিক বাঙালীর দৈনন্দিন জীবনে । এসব আড্ডা কপালে বদনাম বয়ে আনলেও বাঙালীরা আড্ডায় বসে প্রাণ ফিরে পায়, মনের স্ফুরণ, বুদ্ধির গোঁড়ায় ধোঁয়া দিতে বাঙালীর আড্ডা জুড়ি মেলা ভার ; একান্নবর্তী পরিবারে পুজো, বিয়েবাড়ি উপলক্ষে জড়ো হলে তুতো সম্পর্কের মধ্যেও আড্ডা চলত। এখন আবার আড্ডার ওয়েবসাইট খুলেছে । চ্যাট করা তো দুজনে হয়, এই চ্যাটিং গ্রুপের মধ্যে অনেকে থাকতে পারে ; তবে যতই নেটে আড্ডা দিন, একসাথে বসে চা-পেঁয়াজি-মুড়িমাখা বা তাসের আড্ডা কিম্বা চুটকির হাসির ফুলঝুরির মজা যে আলাদা সে আর বলে দিতে হয় ! কি বলেন আপনারা ; কাজের ফাঁকে একটু গল্প-গুজব হাসি ঠাট্টা করাটা কি অন্যায়, তাতে তো মাথাও খানিক বিশ্রাম পায় ; আড্ডা কাজের উদ্যম বাড়ায় ; মনকে নতুন কিছু ভাবতে সাহায্য করে, অনেক সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটায় ; তাই বাঙালীর জীবনে ‘গল্প-আড্ডা-মজলিশের’ একটা জায়গা থেকেই যায়, নিন্দুকেরা যে যাই বলুক তাতে আড্ডাবাজ বাঙালীর কিছু যায় আসে না ।

মনে করা – জয়ন্ত কুমার সরকার

প্রতিদিনের জীবনে আমরা অনেক কিছু শিখি, অনেক কিছু দেখি, কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। ঘটে যাওয়া সবকিছু কি পরে মনে করতে পারি! কিছু ঘটনা স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হয়, কিছু ঘটনা ক্ষণস্থায়ী হয়। মানুষের মস্তিষ্ক একটা পুরো জীবনের সমস্ত জ্ঞান ও তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে, যা উন্নতমানের কম্পিউটারও পারে না। যে কোন কাজ করতে গেলে সর্বদাই আগের ঘটনার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা দিয়েই আমরা কাজ করি। অতীত মনে করতে পারি বলেই খারাপ ভালোর তফাৎ বুঝতে পারি, নিজেকে উন্নত করতে পারি। মনে করতে পারাটা স্বাভাবিক অভ্যাস, এজন্য কোন কসরত করতে হয় না, জোর করে মস্তিষ্ককে কাজ করানো যায় না। ঠিক সময়ে ঠিক কথা মনে করতে না পারলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়, ক্ষতিও হয়। তীক্ষ্ণ স্মৃতি বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করে। একই বই পড়ে অনেকে পরীক্ষা দেয়, কিন্তু যার স্মৃতি তীক্ষ্ণ, সে-ই সেরা হয়। মনে করতে না পারা, ভুলে যাওয়ার জন্য কত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। নতুন কিছু শিখলে তা পরে মনের চেতন থেকে অবচেতন স্তরে চলে যায়, পরে মনে করতে চেষ্টা করলে আবার চেতন স্তরে স্মৃতির পুনরুদ্রেক ঘটে, আমরা মনে করতে পারি। ‘আঙ্কেল পোজার’কে মনে আছে! তিনি কোর্ট খুলে রেখে ভুলে যেতেন, খুঁজে বেড়াতেন ঘরময়, শেষে দেখা যেত ওটার উপরেই উনি বসেছিলেন। সুকুমার রায়ের ‘হারিয়ে পাওয়া’ কবিতায় ‘ঠাকুরদাদার চশমা কোথায়’ নিয়ে হুলুস্থুল, শেষে কপাল থেকে খসে পড়ল চশমা। অ্যালজাইমার রোগের শুরু এরকমই হয়, ক্রমে স্মৃতিভ্রংশ বাড়ে, নিজের পরিবারের মানুষকে চিনতে পারেন না, খাবার খেয়ে মনে থাকে না, নিজের বাড়ি ভেবে অন্য বাড়িতে ঢুকে পড়েন। স্মৃতিভ্রমের বিড়ম্বনায় মানুষ কত অসহায় হয়ে পড়ে না ভেবে হাসির খোরাক করে ফেলি আমরা চেতনে-অবচেতনে!

হার জিত – জয়ন্ত কুমার সরকার

হারতে হারতে যে জিতে যায় তাকেই বাজিগর বলে। হাল না ছাড়ার মনোভাব মনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। এই চ্যালেঞ্জ জেতার খিদেটা বাড়িয়ে দেয়। হার মানে নিছক ব্যর্থতা নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সোপান হল হার। তাই হেরে যাওয়া মানেই সব শেষ নয়, হারতে হারতেই জয় আসে। একসময় আমি হতাশ হয়েছিলাম। তখনও পড়া শেষ হয়নি, ফাইনাল ইয়ার; বাবাকে অফিস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ জানায় চাকরী আর মাত্র একমাস। বাবা খুবই মুষড়ে পড়লেন, আমিও দিশেহারা, সংসারটা চলবে কি করে, দুম করে এমন দু:সংবাদ! জমিজমা নেই, পারিবারিক কোন ব্যবসাও নেই। চাকরী ছাড়া কোন পথ নেই আমার। টিউশানি থেকে কটা টাকা পাই, বাড়ির বড় ছেলে,কি করব ঠিক করতে পারছি না। হতাশা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। তখন আমি টাইপ-স্টেনো প্রাকটিস করতাম, বাবার অফিসের এক সহকর্মী খুব সাহায্য করছেন, চাকরীর এক্সটেনশনের জন্য। একসময় এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে কল পেলাম। দাঁতে দাঁত দিয়ে প্রাকটিস করছি । লিখিত পরীক্ষায় সফল হয়ে ইন্টারভিউ- এ বাক পেলাম। সফল হয়েছিলাম সেদিন। আমরা শুধু রেজাল্ট দিয়েই সফলতা মাপি, রেজাল্ট খারাপ, ব্যস! সব শেষ! একবার একাডেমিক রেজাল্ট খারাপের সঙ্গে জীবনে সফল হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। হারটা লজ্জার নয়, মুষড়ে পড়ে হাল ছেড়ে দেওয়াটা লজ্জার । জিতবই আমি, এই ভাবনা মনে লালন করা, নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটাই আমার একমাত্র কর্তব্য। কোন সাফল্যের পথই সোজা নয়। জীবনে সফল হতে হলে দীর্ঘ পরিশ্রম আর লাগাতার চেষ্টা প্রয়োজন। সাহিত্যিক মতি নন্দীর কোনি বার বার হেরেও তাই হাল ছাড়েনি, তার ক্ষীত্দা তাকে হাল ছাড়তে দেননি। দৃঢ় সাহসী মনোভাবই জয়লাভ এনে দেয়।

কুসংস্কার – জয়ন্ত কুমার সরকার

গাড়ী চালাতে গিয়ে সামনে বিড়াল, ব্যস! শত চেষ্টাতেও ড্রাইভার গাড়ী এগিয়ে নিয়ে যাবে না। থমকে দাঁড়িয়ে ব্র্যাক গিয়ার, তারপর সামনে এগোনো। যাত্রাপথে বিড়াল মানেই অশুভ ইঙ্গিত, বিশ্বাসটা এরকমই। বিড়াল কালো হলে তো কথাই নেই। একজন মানুষের বিশ্বাস ভাঙ্গা ভীষণ শক্ত, অন্ধবিশ্বাস ভাঙ্গা তো আরও শক্ত। তেমনই পাতিলেবু-কাঁচা লঙ্কা ব্যবসায় অশুভ দৃষ্টি রোধ করে, ঘরের চৌকাঠে বসতে নেই, পরীক্ষার দিন ডিম খেলে গোল্লা পেতে হয়, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা অশুভ, রাত্রিবেলা কাউকে সূচ দিতে নেই,এরকম হাজারো কুসংস্কার জড়িয়ে আছে আমাদের মনে, জীবনের রোজনামচায়। শিশু বয়স থেকে মনে গেঁথে দেওয়া হয়,এটা করতে নেই,ওটা করবে না, মা-কাকীমার সাবধান বানী রক্তে মজ্জায় মিশে যায়, বিশ্বাস ক্রমে দৃঢ় হয়। অশিক্ষিত অর্ধ-শিক্ষিত গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের মনে লালিত হয় এসব ধারণা। কোনরকম যুক্তি, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই অনেক শিক্ষিত আধুনিক প্রজন্মের মানুষও অন্ধবিশ্বাসের শিকার হন। কোন যুক্তিতে জোড়া-শালিক মঙ্গলজনক, আর কেনই বা এক শালিক অশুভ হবে বলুন তো ! এসব বিশ্বাস ক্ষতিকর নয় বলে অনেক সময় মেনে নিই আমরা। দ্বাবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান আধুনিক মানুষ যখন মঙ্গলগ্রহে বসবাসের ঠিকানা খুঁজছে, ঠিক তখনই দেশের অন্য প্রান্তে ডাইনী সন্দেহে মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। কি অদ্ভুত বৈপরীত্য!তুকতাক মন্ত্রবিদ্যা গরীবগুর্বো প্রান্তিক মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে মানুষ দিশেহারা, ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করছে ওঝা, তান্ত্রিক, ভুয়ো সাধুর অশুভ আঁতাত। একমাত্র যুক্তিবাদী বিজ্ঞান চেতনা দিয়ে মানুষের বুদ্ধির উন্মেষ ঘটাতে পারলে তবেই রেহাই মিলবে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের করালগ্রাস থেকে।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

Top Bengali Story 2022 | আমাদের একাল-সেকাল | গল্প ২০২২

Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২

Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩

Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী

Short bengali story | Bengali story pdf | pratilipi bengali story | Short Stories for Children | English Stories for Kids | Moral Stories for Kids | story in english | story hindi | story book | story for kids | short story | story for girls | short story in english | short story for kids | bangla Bangla Mukto Gadya Archive pdf | Bangla golpo pdf | Bangla golpo story | bangla romantic golpo | choto golpo bangla | bengali story | Sunday suspense golpo | sunday suspense mp3 download | suspense story in hindi | suspense story in english 200 words | Bangla Mukto Gadya Archive in english

suspense story in english 300 words | Suspense story examples | suspense story in english 100 words | suspense story writing | very short suspense stories for students | Bangla Mukto Gadya Archive | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Bangla Mukto Gadya Archive | Pdf Bangla Mukto Gadya Archive | Bangla Mukto Gadya Archive App | Full Bangla Mukto Gadya Archive Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs

Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Bangla Mukto Gadya Archive 2024 | New Bangla Mukto Gadya Archive – Episode | Golpo Dot Com Series | Bangla Mukto Gadya Archive Video | Story – Bangla Mukto Gadya Archive | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Bangla Mukto Gadya Archive Netflix | Audio Story – Bangla Mukto Gadya Archive | Video Story – Bangla Mukto Gadya Archive | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2024 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Bangla Mukto Gadya Archive | Top Bangla Mukto Gadya Archive | Bangla Mukto Gadya Archive Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2024

Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bangla Mukto Gadya Archive | Bengali Famous Story in pdf | Modern Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Modern Online Bangla Galpo mp4 | Modern Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Bangla Mukto Gadya Archive

Leave a Comment