কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা – সূচিপত্র [Bengali Story]
পোষা পাখির ছানা [Bengali Story]
ছেলেটা খুব ডানপিটে। স্কুলে যাবার পথে, কার গাছে কুল, কার গাছে আম, পেয়ারা সব দেখে। মাঝে মাঝে বই খাতার ব্যাগ ফেলে রেখে গাছে যে ওঠে না, এমন কথা বলা যায় না। হঠাৎ হঠাৎ তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি। গ্রামের স্কুলে পড়াশুনো আছে, খেলাধুলো আছে, আর মজা তো আছেই। দাদাদের সহজ পাঠের সেই তিনটে শালিকের ঝগড়া, মামাদের গ্রামের কথা বলা শালিক। ওর মাথায় মধ্যে কিভাবে যে ঢুকলো! মায়ের কাছে বায়না, সে শালিক পুষবে। তার মায়ের আছে এক পাল হাঁস, মুরগি এবং ছাগল। ‘দেখ বাছা, পাখি পোষ । কিন্তু শালিকের ছানা পাড়তে গিয়ে যেন হাত পা ভেঙে না যায়।’ – মা বলে। তিন ভাই এক বোনের ওই ছোট। বলে সবাই ছোট্ট, কিন্তু আসলে সে শ্রীদাম । বাবাকে দেখে একটু ভয় পেলে কী হবে, দাদা দিদির ভালোবাসা যেমন পায়, চড় থাপ্পড় খায়, আদুরে। পাড়ার লোকের কাছে সে প্রিয়, লেখাপড়ায় মনোযোগী বলে। সবাই বলে বাবার মত অভ্যাস। বাবা তো ছেলেবেলা গাছপালা কম চড়েনি ! তো
ছেলে গাছে উঠবেই। স্কুলে তার এখন চতুর্থ শ্রেণি । গরমের সময় শালিকের ছানা হয় সে তার বাবার কাছে জেনেছে। তাই স্কুলে যাবার পথে, দেখে কোন গাছে শালিকের বাসা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একদিন সে দেখা পেল, গায়েনদের বট গাছের ডালে শালিকের এক বাসা। সেই থেকে রোজ দেখে ছানা হল কী না শালিকের। সে জেনেছে খুব ছোট ছানা না পুষলে পোষ মানে না। স্কুলে যায়, খেলা করে ,কিন্তু মাথায় সেই শালিকের বাসা। …. একদিন সে শালিক ছানার চি চি আওয়াজ পেল। সেদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে, বন্ধুদের নিয়ে বট গাছের শালিক বাসা অভিযান। সবাই প্রায় চেষ্টা করলো। শেষে ক্লাস সিক্সে পড়া ও পাড়ার নলিন, ছানাটা পাড়তে সক্ষম হল। সহজ কাজ ছিল না মোটেই। তখন মা শালিক ছিল না তাই রক্ষে। সে গেছে খাবারের খোঁজে। বাবা তার পাখি পোষা পিঁজরা হাট থেকে কিনে রেখেছে। এখন শ্রীদামের কাজ বেড়ে গেল অনেক। ছানা চোখ মেলতে পারে না এখন । তবে খিদে পেলে বড় হাঁ করে চি চি করে ডাকে। সে বাবার কাছে জেনেছে ছোট ফল আর কীট পতঙ্গ ছানার খাবার। তখন জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি, বট গাছের ফল পেকে লাল হয়ে গেছে। গাছের নিচে পড়ে বিছিয়ে আছে। টুকরো করে ওই ফল মুখের কাছে ধরলে, কেমন হাঁ করে, তখন টুক করে গালে দিলেই হল। ছানা পাখির খাওয়া সে দেখে বেশ। পাখির বাসায় মা শালিক কিভাবে তার ছানাকে খাওয়ায় শ্রীদাম দেখেছে। আষাঢ় মাস এলে ধানজমির মাঠে প্রচুর ঘাস। সেখানে পাওয়া যায় ছোট ছোট ধূসর রঙের ফড়িং, শালিক ছানার প্রিয় খাবার। বিকেলবেলা সে মাঠে যায় একটা খেজুর পাতার ‘ ছাট ‘ নিয়ে। সবুজ ঘাসের উপর ছাট বুলিয়ে ধরে ফড়িং। রেখে দেয় কৌটোয় ছিপি এঁটে। বাড়ি এসে সেই জ্যান্ত ফড়িঙের পা আর মুণ্ডু কেটে ফেলে দিয়ে শুধু দেহটা ছানার হাঁ করা মুখে দেয়। কী মজা করে সে খায়। মন ভরে যায় শ্রীদামের ।
কয়েক মাস পরে ছানার সারা গায়ে কচি পালক গজায়, চোখও ফুটেছে বেশ। এখন সে দাঁড়ে বসে। কেউ কাছে গেলেই চি চি করে ডাকে বার বার। স্কুলে গেলে তার মা দেখাশুনো করে ছানা পাখির। পিঞ্জর টি এখন দড়ি বেঁধে ঝোলানো থাকে ঘরের বারান্দার চালে। ফাঁক পেলেই এসে দেখে আর অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে। মা বলে, ‘শুধু পাখি দেখলে হবে,পড়া লেখা হবে তো!’
….. সেদিন স্কুল থেকে ফিরতে শ্রীদামের দেরি হল। মা,বাবা, দাদা দিদি কাছাকাছি কেউ নেই। বাড়িতে ঢুকে সে শুনতে পেল, পাখি খুব জোর ডাকাডাকি করছে। সে ডাকে একটা আতঙ্কের সুর। কাছে এসে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। একটা বিশাল ঢোঁড়া সাপ মুখ গলিয়ে ছানার লেজের দিকে কামড়ে ধরেছে। শ্রী দামের আর্ত চিৎকারে সবাই ছুটে এল। একটা লাঠি দিয়ে সাপটাকে আঘাত করতে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গেল, কিন্তু পাখিটাকে চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না। … তার পোষা শালিকের মৃত্যু দেখে শ্রীদাম ডুকরে কেঁদে উঠলো। সকলের মন খারাপ হয়ে গেল এই করুণ দৃশ্যে। মা তাকে সান্ত্বনা দিলে কী হবে শ্রীদামের কান্না আরো দীর্ঘতর হয় …।
গতির প্রতীক [Bengali Story]
গ্রাম থেকে রাজধানী শহরে কাজে আসতে বাবার খুব কষ্ট হত। স্বপ্ন দেখতো রেললাইনের ধারে একটা আস্তানার। মাঝে মাঝে বলতো, – ‘একটা ফাঁকা জায়গার স্টেশন, যেখানে নেমে পায়ে হেঁটে আমাদের বাড়ি যাওয়া যাবে ! এমনি জায়গায় একটা বাড়ি করবো দেখিস! …কথাগুলো খুব মনে পড়ে শতদলের। আর বাবা যে তার স্বপ্নের খুব কাছে এসেছিল, তা ভাবলে সে খুব উদাস হয়ে যায়। খুব বেশিদিন মানুষটা তার স্বপ্নের বাড়িতে থাকতে পারেনি । ওদের মা, দুই ভাই আর বোন কে রেখে প্রায় অকালে চলে যাওয়ার যন্ত্রণা খুব জ্বালাময়ী। তবু তো জীবন গতিময় ওই দূরান্তের রেললাইনের দুই সমান্তরাল লাইন বেয়ে চলে যাবার মত !
শতদলের তখন ক্লাস নাইন। শহরতলির স্কুলে একাই যেত। মা নিয়ে যেত ছোট ভাই আর বোন কে অন্য স্কুলে। বাবা ভুবনমোহন সেই ভোরে উঠে কাছের স্টেশনে, সেখান থেকে রেললাইন ঘেঁষা পথ ধরে বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে, বাজার করে বাড়ি ফিরত। তারপর দ্রুত চান খাওয়া সেরে প্রায় দৌড়ে গিয়ে ট্রেন ধরত। অফিসের তাড়া। কাল ট্রেনের প্রচণ্ড ভিড় । ভয় পেত ওঠা নামা করার সময় ঠেলাঠেলিতে। গ্রাম ছেড়ে চলে আসার পর বছর দুই এমনি চললো। স্টেশন কাছাকাছি থাকার একটা সুবিধা, ঘন ঘন ট্রেন পাওয়া যায় । মাঝে মাঝে বলতো, – ‘গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। কত কাজ যে থাকে ওই অফিসে ! ‘ … আসলে ফাঁকিবাজি ছিল না তার ধাতে। তাই তার যন্ত্রণা সোজা পথে হাঁটার।
ছুটির দিন খুব দুপুরে বেরিয়ে পড়ত ভাত খেয়ে । জিজ্ঞেস করলে মাকে বলতো, ‘কোথায় আর যাবো, ওই স্টেশনে বসে থাকি। বন্ধু শম্ভু এলে ,সোজা রেল লাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা।’ মা বলে, ‘তোমার আর কাজ নেই, শুধু রেললাইন ঘেঁষে হাঁটা !’ ‘ইচ্ছে করে ওই লাইন ধরে হেঁটে হেঁটে যাই, কিন্তু সে তো হয় না, কখন ট্রেন এসে পড়ে। কী সুন্দর দু পাশের প্রকৃতি। দু চোখ জুড়িয়ে যায়। একটা নির্জনতার শব্দ শোনার ইচ্ছে হয়। এই পথে অনেকটা সাধ মেটে।’ মা বলতো , ‘তোমার কথা বাবা আমার মাথায় ঢোকে না ।’ … শতদল কিন্তু বাবাকে অনেকটা বুঝতে পারতো। তার গতিময় কষ্টকর জীবনে, একটা উদাসী পথের দিকে মন ছিল। তাই বুঝি রেলের ওই সমান্তরাল লাইন দুটো ডেকে নিয়ে গেল, কোন এক উদাস নগরীতে !
সেদিন ছিল ট্রেনের খুব গণ্ডগোল, অগ্রহায়ণ মাসের প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে। অথচ বাবাকে যেতে হবে অফিস ঠিক সময়ে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তার। কয়েক ঘণ্টা পর একটা ট্রেন রাজধানীর দিকে যাওয়ার জন্য আসতেই স্টেশনে জনজোয়ার। কোনমতে পা রাখতে পারলেও হাতটা কোথাও শক্ত করে ধরতে পারেনি । ভিড়ের স্রোতের মুখে ভিতরে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা নিষ্ফল হল ট্রেন ছাড়ার মিনিট দুই পর। …. গতিশীল ট্রেন থেকে একটা মানুষ পড়ে গেলে জনতার কিছু যায় আসে না আজকের দিনে । ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে থেকে একটা প্রাণ কোথায় হারিয়ে গেল! বাবার স্বপ্ন দেখার শুরু এভাবেই শেষ হল । …
শতদল অনেক রাতে ওদের বাড়ির কাছে সেই স্টেশন এসে দাঁড়ায়। আনমনে ভাবে, ‘বাবা ওই দূরের গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে দূরে — চলে যাওয়া রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে এখনি হয়তো প্ল্যাটফর্মে পা রাখবে।’ …
শীত ভক্ত [Bengali Story]
গ্রামের বুক চিরে যাওয়া রাস্তার ধারে বাড়ি রামতারকের। পৌষের মাঝামাঝি। আমন ধান কাটা – তোলা শেষ । দরিদ্র কৃষিজীবী এবং পিতৃ-সূত্রে শিউলী সত্তা তার বর্তমান। গ্রামীণ জীবনে শীতকাল লক্ষ্মীর আশীর্বাদ। খামারে, গোলায় নতুন ধান। সবজির সমারোহ, আমের মুকুল, সজনের কুঁড়ি। খেজুর রস, নলেন গুড়, পৌষের পিঠে। রাস্তার পাশে দু-গণ্ডা খেজুর গাছ রসবতী হয়, শীত আর রামতারকের সৌজন্যে। সে চাষ করেছে পালং, কপি, বরবটি…। শীত পয়মন্ত ঋতু। বিকেলে চারটে খেজুর গাছে ভাঁড় বাঁধে রামতারক। ভোরবেলা উঠে সে বোঝে, শীত পড়েছে বটে! হালকা কুয়াশার ঠান্ডা ভোর। পাখিরা জাগছে। সূর্য ওঠার আগে রস নামাতে, রামতারক প্রথম গাছটাতে ওঠে। ভাঁড় ভরা রস ! তার মনও ভরে। শেষ গাছটাতে সে যখন, একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ায়। রসের ডাবরি নামিয়ে দেখে, বিচিত্র পোশাকের চারজন। শীতের স্বচ্ছ খেজুর রস পান শেষে , তারা ৫০০ টাকা রামতারকের হাতে দেয়। শীতের ভ্রমণপিপাসু ওরা সুন্দরবনের পথে। ছুটন্ত গাড়ির দিকে চেয়ে তার স্বগতোক্তি, ‘বাবুরা দেখছি শীত ভক্ত! তখন দিনের আলো ফুটছে।
আলো মেঘের গল্প [Bengali Story]
ঠাকুরদা ছিল গ্রামের এক নিরক্ষর চাষী। কী সুন্দর ছিল তার লাঙল চষা। যেন নরম মাটির খেতে শিরেলে শিরেলে কবিতার পংক্তি! তারপর ধানের চারা রোপণ,… সবুজের ঢেউ,…গভীর রাতের মায়াবতী মেঘের ধারা বর্ষণ…গর্ভবতী ধানগাছের বিস্তীর্ণ প্রান্তর…। এত কথা হয়তো বুঝত, নয় তো বুঝত না । অনিমেষ মাঝে মাঝে ভাবে, তার পূর্বপুরুষদের প্রকৃতি পালিত জীবন কথা, গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে।
শহরতলির মেসে, যে বেকার জীবন সে বয়ে চলেছে তার থেকে উদ্ধার হবে কী না ! কিন্তু দর – মার বেড়া দেওয়া মেস ঘরের বাইরে এসে যখন সে আকাশ পানে চায়, মনটা কেমন উদাস হয়ে যায় ! শরতের ছেঁড়া ছেঁড়া তুলোর মত, কোথাও স্তূপাকার সাদা মেঘ , দূরে শূন্যের নীলিমা। ওই সূর্যের সাত রঙ মহাজাগতিক কিরণ। ক্ষণিকের জন্য হলেও সে যেন পার্থিব জগৎকে ভুলে যায়। এই ভুলে যাওয়ার অভ্যাসটা পেয়েছিল বংশগতভাবে। … ঠাকুরদার সঙ্গে যখন সে মাঠে যেত ,তার বয়স ছিল কৈশোরের। কৈশোরে যখন বাড়ির গরুগুলো মাঠে চরাতে যেত তখন জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস। ভিজত প্রাক বর্ষার বৃষ্টিতে, বর্ষার ঘনঘোর মেঘের ছায়াতে । মাঠে বন্ধু রাখালদের সঙ্গে খেলতে খেলতে আকাশের অদ্ভুত সব মেঘ দেখতো। আর কখন আনমনে চলে যেত , সেই মেঘের দেশে। সেথায় কখন বিশাল হাতি, নয়তো কুমির, কোনদিকে পাহাড়,পাহাড়ি পথ সবগুলোই মেঘের এবং কল্পনায়। কখনো বা দিগন্তের রামধনু। খুব দ্রুত তাদের রূপ বদল। আবার প্রাক সন্ধ্যার বর্ষালি মেঘ, পশ্চিম দিগন্তে কী এক মায়াবী জগৎ সৃষ্টি করে, তা আজও তার উত্তর তিরিশ জীবনে মনে আছে স্বপ্নের মত।
শরতের ছেঁড়া মেঘ আরো তাকে পিছনে টেনে নিয়ে যায়। বৈশাখের তপ্ত আকাশে থাকে না মেঘের কোন চিহ্ন । সূর্যের তাপ যেন ঝলসে ঝলসে মাটিতে নামে। অথচ বিকেলে এক চিলতে মেঘ থেকে কী দ্রুততায় আকাশ ঢেকে ধেয়ে আসে কালবৈশাখীর ঝড়। শূন্য আকাশে জলভরা মেঘের পুকুর! শীতল বাতাসের অদ্ভুত অনুভূতি। ধূলিঝড়, মেঘ গর্জন, বিদ্যুতের ঝলকানি। আকাশ ভাঙা বৃষ্টিতে গ্রীষ্মের সকল মালিন্য মোচন । …. মহাশূন্য সূর্যকে দায়িত্ব দেয় পৃথিবীর । সূর্য তাই আপন মনের ইচ্ছে দিয়ে ,মেঘমালার বহিরাবরণ সাজায় সারাবছর, ছয় টি ঋতুতে। .. গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর পর আসে বর্ষালি মেঘের সামিয়ানা পৃথিবীর আকাশে। বৃষ্টি নামে ঝরঝর সাদা ফুলের পাপড়ির মত মাটির বুকে । জীবন্ত হয় মৃতপ্রায় দূর্বাদল, ঘাস, গাছগাছালি, সমস্ত প্রকৃতি। সুখ দুঃখের গল্প লেখা থাকে মেঘের গুরু গুরু গর্জনে। ধরণীর বুকে শস্যের ভান্ডার, খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্ন যেন সফলতায় ভরে দেয়। বিচিত্র মেঘের দল, হাসায়, কাঁদায়, ভাসায় ।
সূর্য বোঝে বর্ষা মেঘের স্থায়িত্ব। সে বলে, যাও মেঘ ,ছুটি এখন তোমার । পরিচ্ছন্ন করে দাও আমার আকাশ উঠোন। এইবার নিমন্ত্রণ জানাব শরতের মেঘ কন্যাদের। আমার রুপোলী আলো দিয়ে ধানক্ষেত করে দেব আলো। সার্থক হবে ওই কৃষকের শ্রম। আকাশের উঠোন হয় নিক্বণ । সাদা মেঘের থোকা থোকা ফুলের স্তবক আকাশ গঙ্গায় ! মন উদাসী দূর নীলিমার শূন্যতা । ধানগাছের সদ্য ফোটা শিষের প্রতিটি দানায় মাটির রস ভরে দেয় দুধ।.. কৃষাণীর রান্নাঘরের ফুটন্ত হাঁড়ি থেকে ভেসে আসবে ভাতের সুবাস।
.. .. ভাবনার ডিঙ্গিতে ভাসতে ভাসতে কখন যে অনিমেষ, সাজানো দোতলা বাড়ির সামনে এসে বাজাল কলিং বেল ! দরজা খুলে টিউশন ছাত্রের মা বলে, এসো। ….
রক্তগোলাপ কাঁটা [Bengali Story]
বার্ধক্যে এসে কমলিনী পিছনের দিনের কথাগুলো ভোলে না, স্মৃতি যতই আবছা হয়ে যাক। জীবনটা মনে হয় সেদিন শুরু হল। ছোটবেলার বাপের বাড়ির স্মৃতি রোমন্থন করে নি, এমন দিন বোধহয় আসেনি । বাপের ছিল এই প্রকৃতির প্রতি, গাছপালার প্রতি এবং ফুলের বিশেষ ভালোবাসা। তার প্রিয় ফুলবাগানে আর যাই থাক বা না থাক, গোলাপ থাকবেই। দাদা ভাই বোনদের মধ্যে সেই ছিল গোলাপের ভক্ত, বাবার মত। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়, বইয়ের পাতার ভাঁজে ভাঁজে রাখতো সে লাল গোলাপের পাপড়ি খুব সুন্দর করে। বিভিন্ন রঙের মধ্যে পছন্দ ছিল লাল গোলাপ। বাবা তার কী পরিশ্রম করে যে ওই গোলাপ চারা করতো ! স্কুলের বন্ধুরা তার সেই গোলাপ গন্ধি বই নিয়ে টানাটানি করতে দেখে একদিন প্রফুল্ল বাবুর ছড়ি খেয়েছিল। তারপর থেকে ওরা লুকিয়ে কমলিনীর গোলাপী বই দেখতো। বন্ধুদের বায়না মেটাতে কত দিন সে লুকিয়ে বাড়ি থেকে ফুল আনতো ।
প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে হাই স্কুল। অন্য এক জগতের দোরগোড়ায়। নতুন বন্ধু, ছেলে সহপাঠী নতুন পরিবেশ। ছেলে সহপাঠীরা অনেকে যেন অন্য চোখে তাকায়। ওই তাকানো সব সময় যে খারাপ লাগতো ত নয়। দু একজনকে ভালই মনে ধরতো। টিফিনের সময় কত যে গল্পের ঝুলি খুলে যেত তার শেষ নেই। …. দেখতে দেখতে অষ্টম শ্রেণি । ওর প্রিয় বন্ধু যূথিকা একদিন মনমরা হয়ে ক্লাসে বসে। অনেক জেদাজেদি করে কমলিনী গল্প শুনে অবাক! ক্লাসের সেকেন্ড বয় সুরজিৎ নাকি যূথিকাকে লুকিয়ে লাল গোলাপ দিয়েছে। এই নাকি ভালোবাসার প্রথম পদধ্বনি! দিনে দিনে গোপন কথাটি রইলো না গোপন।
কলেজে ভর্তি হয়ে কমলিনী যেন খেই হারিয়ে ফেলে। সে যেন এক বিচিত্র বর্ণের জগৎ, তার কাছে। কান পেতে শোনে কত কথা, দেখে আরো বিচিত্র ছবি। সারা ক্লাসে সে যে অন্য রকম এবং মনোযোগী ছাত্রী ,সবাই জানে। কিন্তু এক দিনের ঘটনা তার জীবন ওলট পালট করে দিয়ে যায়। অন্যদের মত তারও একটা ভাল লাগার মন স্বাভাবিক ভাবে তৈরি হয়েছে। ক্লাসের সেই নিরীহ মিষ্টি ছেলেটা , যার কাছ থেকে নোট নেয়, সে যে এমন কাণ্ড করে বসবে কমলিনী ভাবেনি। …. একদিন বসন্তের বিকেলে ক্লাস শেষে দুজনে একটু আলাদা হয়ে যায়। চলতি পথে সুতনু ওর খোঁপায় একটা লাল গোলাপ গুঁজে দিয়েছিল। অন্য এক জগতের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন, কমলিনীর। আর সেই ভেসে যাওয়ার দুরন্ত স্রোতে বাড়িতে এসেও মনে পড়লো না যে, তার খোঁপায় আছে প্রিয় ফুল। মা দেখলো, বাবা এবং দাদারাও। কিন্তু কেউ কিছুই বললো না। ….
আজ এই বাষট্টি বছরের দীর্ঘ জীবনে কী পেল সে! সংসার ও স্বামী পেল বাবা মার পছন্দ অনুসারে। কিন্তু সন্তানহীনতার ‘ মহাপাপ ‘ এ ভেসে গেল সে সুখের সংসার ! ভাসতে ভাসতে শেষে শহরবাসী দাদার সংসারে সে এখন এক ‘বিপদ’ । কী সমারোহ করে বিবাহ অনুষ্ঠান। তার প্রিয় গোলাপের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল বড় মোহময়ী করে। গোলাপের মালা ছিল তার মাথার চুলের খোঁপায়। সবটাই তার গোলাপ প্রীতির কারণে। সেদিন সুতনুর নিরীহ স্নিগ্ধ মুখ মনে করে সে কেঁদেছিল আড়ালে। দীর্ঘ জীবনের সমস্ত ঘটনা যেন তার মুখস্থ কবিতার হৃদয়ভাঙা পংক্তি দিয়ে সাজানো !
….. বিকেলে শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে ভাসা বারান্দায় বসে কমলিনী যখন স্মৃতি সমুদ্রের ঢেউ গুনছে, দাদার ছোট নাতি এসে, পিছন থেকে গলা জড়িয়ে বলে, ‘ দিদা বাপি ডাকে তোমার ।’ চোখের জল মুছতে মুছতে কমলিনী বলে, ‘চলো দাদু ভাই!’ খোঁপায় গুঁজে দেওয়া সুতনুর লাল গোলাপের কাঁটা আজ তার জীর্ণ হৃদয়ে, ফুটে ফুটে রক্ত ঝরায় !
বোবা বন্ধু [Bengali Story]
গ্রামের প্রাইমারি স্কুল। বিকেলে ছুটি হলে সব ছেলেমেয়েরা মিলে, ছু – — টি বলে এক অদ্ভুত চিৎকার করে। সেই কোরাস শব্দে গ্রামের মানুষ বুঝতে পারে, আজকের মত ছুটি। কুন্তলের এখন ক্লাস থ্রি । পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে বই খাতার ব্যাগ নিয়ে ফিরছে। তবে সে কেন আজ গাছের দিকে তাকাচ্ছে, তা সেই জানে। বিকেলে তার কাকা, বাড়ির পাশের বাগানে গাছপালা পরিচর্যা করে। কাকা জিজ্ঞেস করে, ‘ কী রে কুন্তল, গাছের দিকে কী দেখিস! ‘ সে বলে,’ কচি পাতা দেখছি। ‘ কাকা, ‘ সে তো দেখিস রোজ, আজকে কী হল ! ‘ ‘ মাস্টার মশাই আজ ক্লাসের পড়াতে বলেছেন , কিশলয় মানে কচি পাতা। ‘ ‘ ও! তাই বুঝি সব গাছের কচি পাতা দেখে দেখে আসছিস। ‘ আচ্ছা কাকা কচি পাতা কিভাবে জন্মায় ! ‘
সন্ধেবেলা ভাইপো ভাইঝিদের পড়ায় ওদের কাকা। সব বই পড়ার শেষে কুন্তলের প্রশ্নের উত্তর খোঁজে কাকা। সবাই শোনে সেই গাছ কথা মন দিয়ে। ….আমরা এই মানুষ ,আমাদের জন্ম মা থেকে। আর গাছেদের মা হল মাটি। উর্বর মাটিতে বীজ পড়লে , মেঘের বৃষ্টি, সূর্যের আলো
আর বাতাসের সাহায্যে অঙ্কুরোদগম অর্থাৎ জন্ম হয় গাছের। এখন থেকে তার দরকার হয় ওই জল হাওয়া আলো আর খাদ্য। তবে তো বড়ো হবে গাছেরা। মানুষেরও তাই লাগে। মনে কর, তোরা কেউ আম সে খেয়ে আঁটিটি ঘরের পাশের এক জায়গায় ফেলে দিয়েছিস । কিছুদিন পরে তোরা নিশ্চয় দেখে থাকবি, সেই বীজ বা আঁটি থেকে কী সুন্দর কাঁচা সবুজ রঙের একটা নরম ছোট্ট গাছ, আঁটি ফুঁড়ে বের হয়েছে। তার মাথায় কচি দুটো পাতা। ওই তো কিশলয় । তারপর সে বেড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। ডালে পাতায় যায় ভরে। কুন্তলের জ্যাঠার ছেলে ভুতো পড়ে বড় ক্লাসে। সে বলে, ‘ হ্যাঁ কাকা,আমি ক বছর আগে, আম খেয়ে তার আঁটি বাগানে ফেলে দিই , সেই গাছ বড় হয়ে গত বছর মুকুল ধরেছিল, তবে সব ঝরে গেছে। কিন্তু মুকুল ঝরে গেলে কি হবে , আমার যে কি আনন্দ হয়েছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না। সবাই অবাক হয়ে শোনে গাছেদের কথা।
তোরা সবাই জানিস, আমাদের মানুষের বেঁচে থাকতে লাগে খাদ্য ছাড়া অক্সিজেন । যা পাই ওই বাতাস থেকে। আবার বাতাস পায় গাছেদের কাছ থেকে । আসলে গাছ বাঁচার জন্য আমাদের দম ফেলার খারাপ গ্যাস কার্বন রাত্রে খায়।আমরা বুঝতে পারি না। এবার কুন্তল বাবু , তুমি বল, – গাছ না থাকলে আমদের বাঁচা যাবে! সে উত্তর দেয়, ‘ না মোটেই না।’ আমরা চলা ফেরা করতে পারি, গাছেরা পারে না। মানুষের খাদ্য জোগাড় করতে যেমন অনেক কিছু বাধা আছে, গাছেদেরও আছে। গাছের খাদ্য সংগ্রহ করতে মাটির নিচে শিকড় চালিয়ে দিতে হয়। আর মাটির নিচে থাকে , নুড়ি,পাথর, ইট ইত্যাদি। মাটির গভীরে জল পেতে ওইগুলো শিকড়ে বাধা দেয়। তবুও ওরা খুব কৌশলে পথ পাল্টে জলের খোঁজে শিকড় নিয়ে যায়। তবে গাছ কমে গেলে কি হবে? – কুন্তল বললো। মানুষের বাঁচার জন্য খুব অসুবিধা হবে, পরিমাণ মত অক্সিজেন পাবে না। এখনই বেশি বেশি গাছ প্রয়োজন এই পৃথিবীতে। ‘ শহরে তো গাছ পালা কম, সেখানে নাকি মানুষ খুব সুখে থাকে ? ‘ প্রশ্ন করে বাবলু। ‘ সুখে নেই বাবু, তবে গ্রাম গঞ্জের গাছ আর বনের গাছের থেকে অক্সিজেন বাতাসে ভেসে ভেসে সহরে যাচ্ছে তাই ।
সলিল বলে, ‘ কাকু, গাছেদের ডাল কাটলে, পাতা ছিঁড়লে আঘাত লাগে না,! ‘ – আঘাত লাগে বৈকি! ওরা তো আমাদের বোবা বন্ধু। সহ্য করে আঘাত, তবে কিছুই বলতে পারে না। তবে আমাদের বোঝা দরকর, যে ওদেরও লাগে খুব আঘাত লাগে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, গাছেদের আঘাত লাগে, ওরা নড়া চড়া করে, কিন্তু আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। তোরা তো দেখেছিস, লজ্জাবতীর পাতায় হাত দিলে বা ফু দিলে তার পাতা মুড়ে যায়, বোঁটা নিচের দিকে নুয়ে পড়ে। একটু পরে আবার কেমন সে স্বাভাবিক হয়ে যায় ! লক্ষ্য করে দেখিস, রাতে তেঁতুল, শিরীষ, বাবলা, আমলকী ইত্যাদি গাছ পাতা বুজিয়ে দেয়। দিনের আলোতে আবার সব ঝলমলিয়ে ওঠে। পদ্ম ফুল দিনে পাপড়ি মেলে, রাতে গুটিয়ে নেয়। হয়তো তোরা শুনেছিস, আমাজন বৃষ্টি অরণ্যের কথা। ব্রাজিল ও তার সংলগ্ন কয়েকটি দেশের ৫৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এই অরণ্য, বিশ্বে মানুষের ২০ শতাংশ অক্সিজেন যোগায়। কিছু দিন আগে এই অরণ্যের বিশাল অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অপূরণীয় ক্ষতি হল মানুষের । দিন দিন বিভিন্ন দেশে মানুষের হাতেও বন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। সামনের দিনে বিপদের সংকেত। তাহলে বোঝ বাবুরা, গাছ আমাদের কী উপকার করে। আমাদের পাড়ার ওই যে বিশাল বটগাছ, যার নিচে তোমরা খেলতে যাস। ওই গাছে ফল ধরতে দেখেছ, পাকলে লাল হয়, ওর মধ্যে দানা বা বিচি ঠিক যেন পোস্ত দানা। মানুষ কিন্তু ওই বিচি থেকে গাছ করতে পারে না প্রবীণরা বলেন । পাখি ওই ফল খায়, তাদের বিষ্ঠা বা পায়খানা থেকে ওই বিচি মাটিতে বা দেওয়ালে পড়ে আপনি গাছ জন্মে। সেই গাছ মানুষ বড় করার জন্য পুঁতে দেয় বিভিন্ন জায়গায়। এই ভাবে খুব উপকারী ওই বিশাল বৃক্ষ জন্ম।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, একজন মানুষের বাঁচার জন্য দৈনিক প্রয়োজন প্রায় হাফ লিটার অক্সিজেন, আর সেই পরিমাণ জোগাতে প্রায় তিনটি গাছের দরকার। সবাই চোখ বড় বড় করে শুনছিল। কাকা বলে, কুন্তল তুমি গা ঘেঁষে বসছ কেন, সকলের মত ছেড়ে ছেড়ে বস। জানত এখন অতিমারী কাটেনি ! আজ এই পর্যন্ত থাক। আসলে গাছ নিয়ে অনেক বলার আছে। খুব অল্প শুনলে। বড় হয়ে অনেক কিছু জানবে, পড়বে এবং দেখবে । গাছ যে মানুষ এবং পৃথিবীর কত বড় সম্পদ তা বলে বোঝানো যাবে না। এই পৃথিবীর আদি প্রাণ হল উদ্ভিদ বা গাছ। তুমি যদি একটা গাছ প্রতি বছর ভালো মাটিতে বসাতে পারো আর তার নিয়মিত যত্ন করো জল মাটি সার দিয়ে, দেখবে সে গাছে যখন ফুলে ফলে ভরে যাবে, তখন তোমার আনন্দ !
গাছ কথা শেষ হলে রান্নাঘর থেকে ডাক পড়ে, ‘ খেতে আয় সবাই। ‘…
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
Bengali Story 2022 | জয়ন্ত কুমার সরকার | গল্পগুচ্ছ ২০২২
Top Bengali Story 2022 | আমাদের একাল-সেকাল | গল্প ২০২২
Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২
Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩
bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short bengali story pdf | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | short bengali story for kids | short bengali story generator | short bengali story ideas | short bengali story length | long bengali story short | long bengali story short meaning | long bengali story | long bengali story instagram | bengali story writing competition | bengali story writing competition topics | bengali story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali story writing competition india | bengali story competition | poetry competition | bengali story australia 2022 | bengali story competitions uk | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | bengali story crossword | writing competition bengali story | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | bengali story competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | bengali story for teens | writing competitions australia 2022 | bengali story competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali story writing ai | bengali story writing app | bengali story writing book | bengali story writing bot | bengali story writing description | bengali story writing example | article writing examples for students | bengali story writing for class 8 | bengali story for class 9 | bengali story writing format | bengali story writing gcse | bengali story writing generator | article writing global warming | bengali story writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | bengali story writing lesson plan | bengali story writing on child labour | bengali story writing on global warming | bengali story writing pdf | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder