জয়ন্ত কুমার সরকার – সূচিপত্র [Bengali Story]
আমাদের একাল-সেকাল [Bengali Story]
আমার ঘর যে আমার এত আপন, আমার শৈশবের..আমার কৈশোরের…আমার যৌবনের সেই সোনাঝরা দিনগুলি যে আমার এত কাছের, এত মন-কেমনের তা আগে বুঝিনি । বুঝলাম যখন পারিবারিক কারণে আমার নিজের ঘর ছেড়ে নিজের পাড়া ছেড়ে বাইরে বেরতে হল । বেশি দূরে না হলেও, একই শহরে হলেও সেখানে আমি নতুন, নতুন এলাকা, আশেপাশের নতুন মানুষজনকে নতুন ভাবে নতুন করে চিনতে হল, সবই প্রথম থেকে শুরু করা, ধীরে ধীরে মানিয়ে চলা..নিজের মনকে মানিয়ে নেওয়া । মেয়েদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি থাকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে চলার, প্রকৃতিগত ভাবেই যেন তারা তৈরী থাকে । বিয়ের পরে যেতে হয় অন্য বাড়িতে অন্য কোনখানে, কিন্তু আমার তো তা নয় । কাজের সূত্রে মেস বা বাসা বাড়িতে সাময়িক থাকাটা অন্য রকম, এটা জানা তাকে যে, সময় শেষে বাড়ি ফিরবই, দিন চলে যাবে কোন রকমে । কিন্তু যদি নিজের বাড়ি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে অন্য কোনখানে থেকেই যেতে হয় আজীবন, তখন অনুভূতিটা হয় অন্যরকম। আমি ইচ্ছে করলেই আর আমার আপন ঘরে যদি ফিরে যেতে না পারি, তখন মনের কষ্টটা হয় অনেক বেশি, এটা বলে বোঝানো যায় না ; যখন বুঝতে পারি আমি উঠানে হামাগুড়ি দিয়ে বড় হলাম, যে ঘরদোর আমার শৈশবের লীলাভূমি, একটু একটু করে বেড়ে ওঠার সময়টা, আমার গায়ের গন্ধ লেগে থাকা লোহার থাম ,রেলিং, সিঁড়ির ধাপ এখন আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছিন্নমূল বাস্তুহীন হয়ে আসা অসহায় মানুষদের মতই কতকটা মনে হয়েছিল তখন নিজেকে । আপন ঘরকে বিদায় জানানোর যে কি কষ্ট তা মর্মেমর্মে উপলব্ধি করি আমি; আমার নিজের ঘর, পড়ার জায়গা, সন্ধ্যাপ্রদীপ হাতে তুলসীমঞ্চে মায়ের আবছায়া মুখ, ছো্ট্ট খাটে গাদাগাদি করে ভাইবোনেদের খুনসুটি, মায়ের রান্না ঘরের অপ্রশস্ত জায়গা, সন্ধ্যায় পড়ার ফাঁকে রেডিও তে তরজা আর যাত্রা শোনা, বাবার কাছে সবাই একসাথে গল্পশোনা …এগুলো কালের নিয়মে অতীত আজ। পাড়ার মাঠে দুপুর রোদে ঘুড়ি নিয়ে দৌড়ানো মাঠ-পুকুর-আমগাছ-জামগাছে দৌরাত্ম, পেয়ার গাছে দুপুর কাটানো… আমার মনকে বিবশ করে। এখন হয়ত আরও উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রা । স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে আগের থেকে, কিন্তু সেই ভাল লাগার দিন গুলি অতি সাধারণভাবে জীবনযাপন,পাড়ার সব কিছুতে মেতে থাকার আনন্দই আলাদা । পাড়ার দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা ছিলাম আমি। ক্লাবের সেক্রেটারির দায়িত্বের কারণে আমার উদ্যোগটা বেশিই ছিল । ক্লাবের ছেলে-ছোকরা আর ষোলআনার যৌথ মেলবন্ধন ঘটিয়ে অনেক দৌড় ঝাঁপ করে পত্তন করি দুর্গাপূজার আজ থেকে ৩০ বছর আগে । কালের নিয়মে আমার পরের ছেলেরা এখন দায়িত্ব পালন করছে । হাজির হলে অনেকে সম্মানও করে, কিন্তু আগের মত ছোটাছুটি করতে পারি না এখন, পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হয় । প্রকৃতির নিয়মেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর-মন থিতু হতে চায়। বয়সের সাথে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে । কোনটা খারাপ কোনটা ভাল বোঝার ক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেশী, তাই আবেগে আর কাজ করতে পারি না। এখনও পুজোর সময় ঐ কয়েকদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলে আগের কত টুকরো সংলাপ আর মজার ঘটনা কথায় কথায় ফিরে আসে; স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে পাড়ার গলি, চায়ের দোকান, কালিমন্দির, ক্লাবঘরে নাটকের মহড়া, পাড়ার দাদা-ভাই-ইয়ার-দোস্ত-এর সঙ্গে রকে বসে আড্ডার ছবি, কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষণে সমবয়সী মেয়েদের সাথে খুনসুটি, আড়চোখে চাওনি, একটু ভাল লাগা একটু ভালবাসা, চাপা রহস্যে ঢাকা কোন কোন সম্পর্ক, বাঁকা চাউনি, মুচকি হাসি, পাড়ার বৌদি-কাকিমা-পিসিমাদের অনাবিল ভালবাসা আর ওদের কাছ থেকে পাওয়া হালকা অন্যায় প্রশ্রয় আর আবদার ….এগুলো… কোথায়… কোথায় যেন হারিয়ে গেছে কালের গর্ভে। আমার ঘর তো এসব নিয়েই ছিল। শুধু আমার বাড়ির সীমানা নয়, সীমানার ওপারেও পাড়ার সব কিছু মিলিয়েই আমার ঘর । ছাত্রাবস্থায় গোপনে পড়ার বইয়ের আড়ালে বড়দের উপন্যাস গিলে খাওয়া, বাড়ীর গুরুজনদের চোখেকে ফাঁকি দিয়ে ম্যাটিনি শোতে ঢুকে পড়া, সমবয়স্ক বন্ধুদের সাথে পাড়ার মেয়েমহলে একটা হিরোইজম দেখানোর চেষ্টার রেশারেশির ছবি..সবমিলিয়ে একটা নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই না কি আমরা !
সময়ের সাথে সাথে প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের মধ্যে সর্বদাই একটা ফারাক গড়ে ওঠে, এটা সময়ের নিয়ম, পরিবর্তনের ধারা। নব্বই-এর দশক থেকেই বিশ্বায়নের ঝোড়ো হাওয়া দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু; এই সময়কালে যারা জন্মেছে ই-পরিষেবার সীমাহীন গতির সরাসরি অংশীদার ওরা । আমাদের ছোটবেলায় মফস্বল শহর জীবনে রেডিও-ই ছিল খবর বা বিনোদনের একমাত্র সহজলভ্য মাধ্যম। টিভি এখন রেডিওর জায়গা জুড়ে বসেছে । ব্ল্যাকে টিকিট কেটে সিনেমা দেখার উত্তেজনা আজ অদৃশ্য, খবর নেওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল টেলিফোন,যা এখন শুধু টেবিলের শোভা বাড়ায় ।তখন চিঠি পাঠিয়ে উত্তরের জন্য কত আকুলি-বিকুলি, একটা ১৫ পয়সার পোস্টকার্ড কত জরুরী, কত খুশীর মুহূর্ত বয়ে আনত, হাত চিঠির গোপন যাতায়াতে মন দেওয়া-নেওয়া, ডাকপিওনের পথ চেয়ে বসে থাকা উদাস গ্রাম্যবধূর সলাজ ভঙ্গিমা নিয়ে কত রোমান্টিকতা আলোড়িত করত আমাদের। পোস্টকার্ড এখন প্রায় অদৃশ্য, সেলফোনেই কাজ সারা হয়ে যায় । ঘরোয়া ছোটখাটো ভালো লাগায় মন ভরে না এখন ছেলেমেয়েদের । অথচ এই সেদিন, মাত্র তিন দশক আগেও কত টুকরো টুকরো খুশীতে ভরে যেত আমাদের কৈশোর । মনে পড়ে পুজোর আগে নতুন জামাপ্যান্ট না পরা পর্যন্ত বাক্স থেকে বার বার জেল্লা দেখতাম ; প্রথম যেদিন বাবা বাড়িতে রেডিও নিয়ে এলেন, উফ্:…কি আনন্দ; রবিবারের নাটক-গল্পদাদুর আসর, বুধবারের যাত্রা শোনার জন্য অন্যের বাড়িতে আর যেতে হবে না । কোলকাতা-‘ক’-তে টেষ্ট ক্রিকেটের ধারাভাষ্য….প্রখ্যাত ভাষ্যকার অজয় বসু, পুস্পেন সরকারের সেই আবেগমথিত গলা…‘‘ ইডেনের সবুজ বুক চিরে বল চলে যাচ্ছে..সীমানার বাইরে…চা….র “ উফ:..ভাবা যায় না…রেডিওর সামনে সে কি উত্তেজনা ছেলেবুড়ো সকলের । পুজোর সময় মায়ের হাতে তৈরী নারকেল নাড়ু-গুড়পিঠে অন্ধকার কোঠাঘরে হাঁড়ি থেকে ভাইবোনে চুরি করে খাওয়ার মজা আজও স্মৃতিতে অমলিন । দুপুর রোদে ঘুড়ি নিয়ে মাঠে মাঠে দৌড়, পুকুরের জল দু-ফাঁক করে ডুব সাঁতার-চিৎ সাঁতার…শেষে চোখ লাল করে বাড়ী ফেরা, পেয়ারাগাছে অলস দুপুর কাটানো, ডাংগুলি-হাডুডু-শাঁখের মার্বেলে টোক-চেরা-ফুসুল্লা, সরস্বতী পুজোর আগে রাত জেগে প্যান্ডেল বানানো, গরম খিচুড়ি পাতায় ভাগ করে খাওয়া….ভাললাগা ঐ সবই স্মৃতি আজও মন মাতায়; তখন নতুন যৌবনের দূত আমরা….ক্লাবে নাটকের রিহার্সাল, সরস্বতী পুজোয় নাটক মঞ্চস্থ করার সে কি উন্মাদন ; পাড়ার বিয়েবাড়ি.. আমরাই ছিলাম ত্রাতা । অভয় দিতাম মেয়ের বাবাকে…‘‘চিন্তা করবেন না কাকু…অতিথি আপ্যায়ন-খাবার পরিবেশন আমাদের উপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন ।” এখনকার ছেলেমেয়েরা এসব আনন্দের মর্মই বুঝল না; কেবল রাশিকৃত বই-টিউশনি-টুর্ণামেন্ট আর সেলফোন ।
আমার বাবা ভাল গল্প বলতেন, রূপকথা-কল্পবিজ্ঞান-সিনেমার গল্প খুব সুন্দর করে সাজিয়ে বলতে পারতেন বাবা, গল্পের টানে পাড়ায় কয়েকজন প্রায়ই সন্ধ্যেয় আমাদের বাড়ীতে জুটে যেত । পড়া ফাঁকি দিয়ে আমিও ঢুকে পড়তাম ঐ দলে, খেয়াল হলেই বাবার ধমক—‘‘যাও….নিজের কাজ করগে.. আমি পড়া ধরব এখুনি ।” পেশায় শিক্ষক না হয়েও বাবা বাড়িতে বাচ্চাদের পড়াতেন, আমিও সেই দলে ছিলাম । সকাল থেকে আমাদের মাটির বারান্দায় সার দিয়ে বসে শ্রুতিলিখন, সুর করে নামতা বলানো… গোটা পাড়ায় একটা পরিচিত ছবি ছিল…আজ বাবা প্রয়াত হয়েছেন অনেকদিন…তবুও আমার স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল করে সেইসব দিনগুলি । তখন মাষ্টার মশাইদের শ্রদ্ধা মেশানো ভয় নিয়ন্ত্রণ করত আমাদের। অবজ্ঞামিশ্রিত শর্টনামে ডাকা হত না তখন মাষ্টারমশাইদের । আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বাবা আমাকে অফিসের সহকর্মীর আত্মীয়ের টাইপ-শর্টহ্যাণ্ড কলেজে ভর্তি করে দিলেন । বাবার মাইনে কম, তাই অত্যন্ত কম বেতনে প্রিন্সিপ্যাল আমাকে সুযোগ করে দিলেন । টাইপটা বেশ ভালই রপ্ত করে নিলাম কমসময়ে, বেশ ভালই স্পীড উঠত আমার সপ্তাহের পরীক্ষাগুলোতে। বেশ কিছুদিন অনুশীলন করার পর আমার মাইনে মকুব করে নতুন ছাত্রদের শেখানোর দায়িত্ব দিলেন আমার প্রিন্সিপ্যাল, যাকে সকলে বড়দা বলতাম । তখন সময়টা আমার কাছে খুবই মূল্যবান ।
সকালে নিজের টিউশনি সেরে স্নান খাওয়া করে টাইপ সেন্টারে এক ঘন্টার অনুশীলন, তারপর ওখান থেকেই স্কুলে, স্কুল থেকে ফিরে টাইপ সেন্টারে ইনস্ট্রাকটারের দায়িত্ব, সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ছাত্র পড়াতাম দু’ঘন্টা । রাত্রে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিজের পড়াশোনা । এটাই ছিল আমার তখনকার রোজনামচা । তখন বড়দাই আমার ফ্রেণ্ড ফিলোজাফার অ্যান্ড গাইড, চাকরীর পরীক্ষা, ফরম পূরণ, কলেজে ভর্তি হওয়া, বিষয় নির্বাচন সবই বড়দাই ছিলেন পথ প্রদর্শক । বড়দাকে জিজ্ঞেস না করে কোন কাজ করতাম না । উনিও ভালবাসতেন নিজের ভাইয়ের মতই । আমিও যতটা সম্ভব সাহায্য করে এসেছি টাইপ সেন্টার পরিচালনায় । আসলে টাইপ সেন্টারটা ওনার পেশা ছিল না, নেশা বলা যায়, উনি একটা সরকারী চাকরী
করতেন, বাকি সময়টায় কবিতা-গল্প লেখালেখি, নিজের খরচে ছোট পত্রিকা প্রকাশ, কবিতা গল্প পাঠের আসর বসাতেন মাঝে মাঝেই, নিজের লাইব্রেরীতে ক্ষুদ্র পত্র-পত্রিকা সংরক্ষণ করা আর ঐ টাইপ সেন্টার নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকতেন । ওনার ভাই যাকে ছোড়দা বলতাম, উনি আমাদের স্টেনো শেখাতেন ; দীর্ঘ সাত বছর ওখানে নিরবচ্ছিন্ন টাইপ-স্টেনো অনুশীলন করতেই করতেই আমি সফল হই, চাকরী পাই সরকারী দপ্তরে ; আমার এই সাফল্যের পিছনে বড়দার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশী, উনি অভিভাবকের মত পাশে না থাকলে আমি হয়ত কিছুই করতে পারতাম না । আমার লেখালেখির অভ্যাসও ঐ বড়দার অবদান । ওনার ঠেলাতেই আমার পড়াশুনা বাইরে লেখার হাতেখড়ি । দিন চলে যায়, সময়ের নিয়মে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, সময় মানুষকে অনেক কিছু শেখায়, পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছু করতে বাধ্য করে । স্মৃতির সরণী বেয়ে মন চলে যায় কখনো কখনো টাইপ সেন্টারের হল ঘরে, মনের ক্যানভাসে ফুটে উঠে কিছু টুকরো ছবি, কিছু স্মৃতি, কিছু মুহূর্ত, কিছু ঘটনা, বড়দার সান্নিধ্য আর কিছু টুকরো কথাবার্তা । ওঁরা আমার শিক্ষক, ওঁদের অবদান আজও মাথা নত করায় আমাকে । এখন আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অনেক মানুষই কর্মক্ষেত্রে বাড়তি হয়ে কাজ হারাচ্ছেন । পয়সা অচল হয় জানতাম, বর্তমানে মানুষও যে অচল হয় ! তাই বলে আগে অনেক ভাল ছিলাম…এখনকার সবই খারাপ…উচ্ছন্নে গেছে ভাবার কোন কারণ নেই, প্রয়োগের ভুল কি উন্নয়ন কে বাধা দিতে পারে, গতির যুগে সময়ের এই পরিবর্তনকে কি অগ্রাহ্য করা যায়, গতিই তো উন্নয়নের কাণ্ডারি, গতিই তো জীবন ।
আদিম যুগে অরণ্যের হিংস্র শাপদ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য একসাথে লড়াই করতেই গেরিলা-শিম্পাঞ্জী..বনমানুষ থেকে ক্রম বিবর্তিত মানুষ জোট বেঁধেছে । নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে পরস্পরের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে মানুষ সমাজ গড়েছে ; সামাজিক হয়েছে । আগের দিনে সমাজপতিদের নির্দেশ অমান্য করলে একঘরে হতে হত ; দিন পাল্টেছে…এখন আর সেভাবে একঘরে না হলেও বিহার হরিয়ানা সহ কয়েকটি রাজ্যের কিছু গ্রামে এখনও খাপ পঞ্চায়েত দিব্যি সচল । বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে গ্রামের মোড়লরা আটচালায় বিচারসভা বসান…বিধান দেন, না মানলে কঠিন শারীরিক লাঞ্ছনা, অর্থদণ্ড চলছে দিব্যি । এরাই সমাজ পরিচালনা করেন । সামাজিক কথাটা এদের কাছে দুর্বোধ্য ।
এখনকার নিউক্লিয় পরিবারে বেড়ে ওঠা আধুনিক সভ্য মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে, সমাজ বা পড়শির পাশে দাঁড়ানোকে সময় অপচয় মনে করে, এরা সমাজ চায় না । মনের সুকুমার বৃত্তিগুলো ক্রমশ: লোপ পেয়ে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে আমাদেরই ভাই বন্ধু সন্তান…কেবল আত্মচিন্তা…নিজের আখের গোছানো ; ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ এই অমৃতবাণী আর সেভাবে নাড়া দেয় না মনকে । কেবল নিজের স্ত্রী আর সন্তান…এর বাইরে কিছু নেই….বাবা-মা-আত্মীয় বন্ধু কেউ নেই । মাথার ওপর খোলা আকাশ নেই…চায়ের টেবিলে তুফান তোলা তর্ক নেই..আড্ডা নেই…কেবল অর্থ উপার্জন আর সুখ নামের মরীচিকার পিছনে অনন্ত দৌড়…! লোভের মোহে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে হতাশাগ্রস্ত বেকার তরুণ-তরুণী. পরিবারকে বাঁচাতে মানববোমা হতেও দ্বিধা করছে না । সমাজের মঙ্গলের কথা ভাবার সময় কোথায়….যেন সামাজিকতা শব্দটা থেকে আলোকবর্ষ দূরে ওদের বাস । বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে অনলাইন-ভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দারুণ পছন্দের বিষয় এখন । খেলাধুলা..আড্ডা-কবিতা-গল্প-সাংস্কৃতিক চর্চা…বন্ধুর হাত দিয়ে চিঠি চালাচালি এখন ব্যাকডেটেড…বিস্মৃতির অতলে । সবই টুইটার-ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপের নেশায় বুঁদ হয়ে আঙ্গুল চলে সেলফোনে । দায়ী হয়তো আমরাই…শুধু ক্যারিয়ারের পিছনেই ছোটাচ্ছি ওদের দিনরাত…ভাল মানুষ হওয়ার ভাবনাটাই উধাও ; এ কোন অসুস্থ অসামাজিক পরিবেশ তৈরী করছে আধুনিক যন্ত্র সভ্যতা । সোশাল সাইটের অমোঘ টানে আত্মীয়-বন্ধুর সাথে কুশল বিনিময় আর মুখে হয় না আমাদের । আত্মীয়-বন্ধু বাড়ীতে এলে মনে মনে বিরক্ত হই…হয় টিভি সিরিয়াল নয়তো সেলফোনে ঘোরাঘুরি করে মন-চোখ-আঙ্গুল । আগে-পিছে না ভেবে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া তরুণ চরিত্রগুলো আজ উধাও । পাড়ায় ক্লাবে অ্যামেচার নাটকের রিহার্সাল আর সেরকম চোখে পড়ে না । তবে কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পরিবার থেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে আমাদের । মানুষ কি ক্রমে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা হয়ে উঠছে…অসামাজিক..অমানবিক…হয়ে উঠছে নিজের অজান্তেই ।
ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্কটাও এখন কেমন জটিল জায়গায় চলে যাচ্ছে দেখুন । ‘‘….ওরে ভাইয়ে ভাইয়ে আর বিরোধ করিস না, ও যে তোর মায়ের পেটের আপন ভাই, কথায় কথায় ছুরি-কাটারি….আমাকে আর কত কি দেখতে হবে বলতে পারিস।” কথা গুলো কোন প্রলাপ বাক্য নয় । গ্রাম বাংলার সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ঘরের মায়েদের নিজস্ব ঢঙে আর্ত অনুরোধ তাঁর অবাধ্য ছেলেদের উদ্দেশ্যে ; যা আমরা সিনেমা-সিরিয়াল-যাত্রা-নাটকেও দেখতে পাই প্রায়শই । কথায় বলে ‘‘ভাই-ভাই ঠাঁই-ঠাঁই …‘‘ যত ভাব তত বিরোধ । ‘ভাই’ দুই অক্ষরের এই শব্দবন্ধ মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব তৈরীর ক্ষেত্রে সব থেকে বেশী মনে ও মুখে আসে। জন্ম লগ্ন থেকেই দুই আপন সহোদর বা সহোদরা বড় হতে হতে পারিবারিক শিক্ষা আর পরিবেশ থেকে মানবিক মূল্যবোধ গুলি মনে দানা বাঁধতে শুরু করে আর পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। বাবা-মা সন্তানদের জ্ঞান হওয়ার সময় থেকেই উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক মনে গেঁথে দিতে শুরু করেন । ভাইয়ে ভাইয়ে পরস্পরের মধ্যে একটা টান অনুভব করে, এটাই রক্তের টান। জিনগত কারণেই ভাইয়ে ভাইয়ে চেহারায় মিল থাকে,যমজ ভাই-বোনের টান তাই অন্যের থেকে বেশী । দুনিয়ার এই একটা সম্পর্কই মানুষের মাঝে সমস্ত ভেদাভেদ,সামাজিক বৈষম্যকে মুছে এক সুতোয় বেঁধে মনের উদারতাকে সহস্রগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। মানুষের মধ্যে এই সম্পর্কটাই মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক। পাশের অপরিচিত মানুষটিকে ‘ভাই’ ভাবতে পারলে কতটা স্বস্তি পাই আমরা ; তাই বিপদে পড়া নারী অপরিচিত পুরুষকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে আত্মসম্মান রক্ষা করতে চায় । মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা এই শব্দটা আমাদের আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে । এই ভ্রাতৃত্ববোধই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করে ব্যবসা বাণিজ্য আমদানি-রফতানির পথ সুগম করে দেশের আর্থিক সামাজিক উন্নয়ন ঘটায়, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উভয় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে । আবার অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যায়…পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার কারণে কত মানুষ আপন ভাইয়ের চরম শত্রু হয়ে যায় । যে ভাই একই মায়ের স্তন পান করে পাশাপাশি বেড়ে ওঠে, একই থালায় খাবার খেয়ে বড় হয়, একই স্নেহে লালিত-পালিত হয়, তারাই টাকা-পয়সা-সম্পত্তির প্রশ্নে পরস্পরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে..প্রাণে মেরে ফেলতেও পিছপা হয় না। অধিকারের প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে একই মায়ের জঠর থেকে জন্ম নেওয়া দু্টি মানুষের এটাই কি তাহলে আসল সম্পর্ক, হৃদয়ে গাঁথা এই পবিত্র সম্পর্কের কি কোন মূল্যই নেই ! সমস্ত তর্ক..যুক্তি যেন হার মেনে যায় । মনে প্রশ্ন জাগে..এরা কারা..এরা কি ভাই-ভাই ? অথচ বাড়ির সব ভাই একতা বদ্ধ হলে কতটা মানসিক জোর পাওয়া যায় বলুন তো !
প্রকৃত শিক্ষা মনের উদারতা প্রসারিত করে, ধৈর্য-মমত্ববোধ-সহনশীলতা এই সব মানবিক গুণাবলী মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে, মানুষকে বন্ধু ভাবতে সাহায্য করে ; মানুষ ক্ষমাশীল ও সুন্দর হয়ে ওঠে, মন প্রসারিত হলে বৈরী মনোভাব কাছে ঘেঁষতে পারে না। পুরাকালে পরিবার প্রথার শুরু থেকেই এই বন্ধনের মর্যাদা রেখে ‘ভাই-ফোঁটা’, ‘রাখিবন্ধন’ পালিত হয়ে আসছে । সামাজিক এই প্রথাকে ঘিরে বাঙালীর ঘরে ঘরে ভাই-বোনের পবিত্র স্নেহ-ভালবাসার সম্পর্ক পারিবারিক জীবনে কতটা গভীর রেখাপাত করে আমরা জানি। কোন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই এই সামাজিকতাকে অবজ্ঞা করতে পারেন না। পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ দেশ ও দশের কল্যাণে কাজে আসুক, মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগ্রত হোক, এই আশা ও ভরসা থাকল সবার কাছে ।
জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar
Top Bengali Article 2022 | বসন্ত উৎসব | প্রবন্ধ ২০২২
Bengali Story 2023 | সন্ধ্যে নামার আগে | গল্প ২০২৩
Travel Story 2022 | আমার বেড়ানো | পণ্ডিচেরী | মহাবলীপূরম | তিরুপতিধাম | কন্যাকুমারী
Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023
আমাদের একাল সেকাল | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | একাল ও সেকাল | কবিতার একাল – সেকাল | সেকাল একাল | নববর্ষের সেকাল-একাল | মানবকথার সেকাল একাল | একাল আর সেকাল | সেকাল কবিতা | শিক্ষার একাল-সেকাল | প্রেমের একাল-সেকাল | জলসাঘরের একাল সেকাল | নানারঙের লেখা সেকাল ও একাল | বিনোদনের সেকাল-একাল | সম্প্রীতির সেকাল একাল | ঈদের সেকাল একাল | বিজ্ঞানচর্চার সেকাল একাল
bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short bengali story pdf | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | short bengali story for kids | short bengali story generator | short bengali story ideas | short bengali story length | long bengali story short | long bengali story short meaning | long bengali story | long bengali story instagram | bengali story writing competition | bengali story writing competition topics | bengali story writing competition for students | story writing competition malayalam | bengali story writing competition india | bengali story competition | poetry competition | bengali story australia 2022 | bengali story competitions uk | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | bengali story crossword | writing competition bengali story | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | bengali story competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | bengali story for teens | writing competitions australia 2022 | bengali story competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | bengali story writing ai | bengali story writing app | bengali story writing book | bengali story writing bot | bengali story writing description | bengali story writing example | article writing examples for students | bengali story writing for class 8 | bengali story for class 9 | bengali story writing format | bengali story writing gcse | bengali story writing generator | article writing global warming | bengali story writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | bengali story writing lesson plan | bengali story writing on child labour | bengali story writing on global warming | bengali story writing pdf | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder