তুহিন কুমার চন্দ – সূচিপত্র [Bengali Story]
ভুতুড়ে সিন্দুক – তুহিন কুমার চন্দ [Online Bengali Horror Story]
হঠাৎ করে খাবার টেবিলের ওপর দিয়ে উড়ে গেলো সেই চামচিকাটা। পাশের দেয়ালটায় ধারালো নখ দিয়ে চেপে ধরে বড় বড় ভয়ার্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছিলো। আমি ঠিকই চিনেছি সেই ডানাভাঙা আর পিঠে একটা সাদা দাগ ওয়ালা চামচিকে। কিন্তু এটা এখানে এলো কি করে?
তখন শীত শেষ হয়েছে সবে। শীতের আর গরমের মাঝামাঝি একটা দারুণ আমেজমাখা সময়। বাড়ির ছোটদের বেশ কয়েকবছর ধরে আশা দিয়ে দিয়ে এবছর আর কিছুতেই ছাড়া পাওয়া গেলো না, সুতরাং চলো দিনকয় ঘুরে আসা যাক চিলাপাতা। একঢিলে আলিপুরদুয়ার, বক্সা আর জলদাপাড়া ঘুরে দেখা যাবে সুতরাং … ঝিনাইয়ের আনন্দ এতটাই বেশী যে সে চিৎকার করতে গিয়ে খাট থেকে পড়ে গেলো সটান মেঝেতে। আঘাত ততটা নয় তবুও তো ব্যথাটা পেয়েছে ঠিকই। ঝিনাই সবার থেকে একটু বড়। ঝিনাই বলল –
— ও মামা, আমরা তো আলিপুরদুয়ারেই থাকবো। ওখানেই তো নল রাজার গড়।রাজার আদেশেই চিলা রায় এই দুর্গ থেকেই গেরিলা যুদ্ধ করেছিলেন তাই না মামা?
— ঠিক তাই।
— আমরা কিন্তু দেখতে যাবো মামা।
ঝিলিক কোনকিছু না বুঝেই আপত্তি জানিয়ে বলল – থামতো তুই, যাচ্ছে ঘুরতে, সেখানে আবার চিলের গড়, বাজের গড় খুঁজে বেড়াচ্ছে।না গো মামা আমরা গভীর জঙ্গলে যাবো কিন্তু। আলিপুরদুয়ার থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে চিলাপাতার গভীর সবুজ বন। “চিলাপাতার নল রাজার গড় বা দুর্গের প্রাচীনত্ব নিয়ে রয়েছে বহু মত । কারও মতে এই দুর্গ তৈরি হয়েছে গুপ্ত যুগে। কারও মতে আবার এই দুর্গ কোচ রাজা প্রাণনারায়ণ তৈরি করেছিলেন। মতভেদ যাই হোক না কেন এই দুর্গ আজ অস্তিত্ব সংকটে। নেই কোনও সংরক্ষণ। দুর্গকে আজ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে বুনো গুল্ম, লতাপাতা।” চিলাপাতা রেঞ্জ অফিস থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গভীর জঙ্গলে এই নলরাজার গড়। কাল আমাদের যাত্রা শুরু হবে বারসোই ষ্টেশন থেকে রাত্রি বারোটায় তিস্তা তোর্ষা এক্সপ্রেসে। সারাদিন যে যার লটবহর গোছাতে গোছাতে কখন যে ট্রেনের সময় হয়ে গেল বোঝাই গেলো না।আমরা সাথে বেশ কিছু খাবার জল আর শুকনো খাবার নিয়ে নিলাম।জিনিসপত্র বাঁধার সময় নীলা মাসি কিছু মুড়ি আর খেজুরের গুর সঙ্গে দিয়ে দিলেন জোর করে।
যথারীতি ষ্টেশনে এসে শুনলাম ট্রেনটা প্রায় দু’ঘন্টা লেটে চলছে। আমি আমার দলের দায়িত্বটা দিয়েছিলাম ঝিনাইয়ের হাতে। ঝিনাই, ঝিনুক, আন্না, মিছিল, সম্রাট,গোকুল আর জিনিয়া আর আমাকে নিয়ে আট জনের এই দল। মস্কিউটো কিলার মেশিন ষ্টেশনে লাগানোর জন্য মশার প্রকোপ অনেকাংশেই কম ছিলো। এর ভেতর ঝিনাই সবাইকে একটা জায়গায় বসিয়ে কিসের যেন ভাষণ দিচ্ছিলো। পরে জানলাম ঝিনাই সবাইকে সতর্ক করছিলো কিভাবে চলাফেরা করতে হবে ইত্যাদি। মোবাইলে দেখে নিলাম ট্রেনটা মালদা থেকে ছেড়ে এখন ভালুকা ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। গোকুল সবার ছোট। ঝিনাইয়ের কোলে মাথা রেখে গোকুল ঘুমিয়ে পড়েছে।সময় আর কিছুতেই কাটতে চাইছে না। আমারও ঝিমুনি এসে গিয়েছিলো এক সময়। কুলিদের চিৎকারে যখন ঝিমুনিটা কাটলো তখন রাত দু’টো বাজে। কুলিদের কাছেই শুনলাম মুকুরিয়াতে ট্রেনটা আবার দাঁড়িয়ে আছে। নেট না থাকায় আমি নিজে দেখে নিতে পারিনি।
মিনিট কয়েকের মধ্যে ট্রেনটা বারসোই এসে দাঁড়ালো। আমরা আমাদের নির্দিষ্ট কামড়ায় উঠেই প্রথমে বিছানা করে গা ঢাকা দিলাম। ট্রেনের দুলুনিতে সাধারণত আমার ঘুম হয় না কিন্তু এদিন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমটা যখন ভাঙলো তখন তাকিয়ে দেখি ষ্টেশনটার নাম নিউ কুচবিহার আর কিছুটা গেলেই আমরা আমাদের গন্তব্যে নেমে যাব আমরা নেমে যাব নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন। একটা টোটো নিয়ে আমরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়লাম বুধুয়াদের বাড়ির দিকে।বেশ কয়েক মাইল যেতে হয়। বুধুয়া আমার পুরনো ছাত্র। বুধুয়াদেব বাড়িতেই আমরা কয়েকটা দিন থেকে আশেপাশে জায়গাগুলো দেখে নেবো এরকমই ঠিক আছে। আধ ঘন্টার মধ্যেই আমরা বুধুয়াদের বাড়ি পৌঁছে গেলাম। সামান্য কিছু খাওয়ার পর আমরা আলিপুরদুয়ার শহরটা দেখার জন্য বের হলাম। বেশ পুরনো শহর, দেখেই বোঝা যায় নেহাত লোক সংখ্যাও কম নয়। ঠিক হলো কাল খুব সকাল সকাল আমরা দেখতে যাব চিলাপাতা জঙ্গলে চিলারায়ের গড়। বুধুয়ার মা রাত্রে পাতলা মুসুর ডাল আর শুটকি মাছের ঝাল করেছিল। আমরা সবাই কমবেশি শুটকি মাছ খাই শুধু ঝিলিক ছাড়া।খেতে বসার পর মাসিমা আমাকে বললেন – হ্যাঁগো মাষ্টার ওখানে না গেলেই কি নয়!
বললাম – কেন মাসিমা!
— জায়গাটা খুব ভালো নয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ওখানে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না।
আমি মাসিমাকে ভরসা দিয়ে বললাম আপনি ভয় পাবেন না মাসিমা আমাদের সাথে বন্দুক আছে।
পরদিন সকালে মাসিমার হাতের কষা বনমোরগের মাংস খেয়ে একটা ভাড়া করা গাড়িতে রওনা হলাম নল রাজার দেশ চিলা রায়ের গড়ে। জঙ্গলে ঢোকার জন্য অনুমতি নিয়ে নিলাম রেঞ্জ অফিস থেকে। চিলাপাতা অরণ্য জলদাপাড়া আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে হাতি চলাচলের পথ।এত ঘন জঙ্গল আগে কখনো দেখিনি।সূর্যের আলো মাটি স্পর্শ করেনা। এক সময় কুচবিহারের রাজা এখানে একটা গন্ডার মেরেছিলেন। তখন গন্ডার ছিলো এখানে এখন গন্ডার নেই। আছে চিতা, হরিণ, বাইসন ইত্যাদি। চিলাপাতার পিছন দিয়ে বয়ে চলেছে বর্ষার বিভিষীকা ভয়ঙ্কর তোর্ষা নদী।বনের বিভিন্ন দিক থেকে জলের গর্জন শোনা যায়।আমরা একটা হাতীর পিঠে বনের রাস্তাটা ধরলাম।কি ঘন বন।ময়ূরের এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি, বনমোরগের ঝাঁক চিৎকার করে উঁড়ে যাচ্ছে।বনে জঙ্গলের একটা এঁদো গন্ধ পাওয়া যায়।দেখা পেলাম বিশাল পাইথনের। ঝিনাই ওরা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে হাতীটা ছুট লাগাতেই আমরা হুড়মুড় করে নিচের কাঁটাঝোপে পরে গেলাম।শরীরটা থরথর করে কাঁপছে।
বুধুয়া বলল – হাতিটা ভয় পেয়ে ছুটে পালিয়েছে, আমাদের খুব সাবধানে চারদিক দেখে যেতে হবে স্যার। সামনেই একটা ছোট্ট গ্রাম পাবো ওখানে গিয়ে হাতে মুখে জল দিয়ে আমরা চিলাগড়ের দিকে যাবো। ঘন বন, চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ঝিঁঝিঁ শব্দে কেমন যেন একটা ভয়ার্ত ভাব সবসময়। আমরা পাশের ঝোপটা পাড় হতেই হুস করে এক পাল খরগোস ছুটে পালালো।আমাদের বুকের নিচের ধুকপুক যন্ত্রটা আরো দ্রুত চলতে লাগলো।
বুধুয়া বলল – ঐ যে খাড়িটা দেখছেন তার পাশেই একটা গ্রাম আছে।
মিছিল আর সম্রাট বেশ ডাকাবুকো। ভয়ডর বলে কিছুই নেই।জঙ্গলের পথ বেয়ে সুরসুর করে ওরা খাড়িটার পাশে নেমে গেলো।ঢালু পথটা নামতে গিয়ে আমি বেশ কয়েক হাত গড়িয়ে গেলাম।হাতের বাইনোকুলার আর ফ্লাক্সটা একটা গাছে আটকে রইলো।অনেক কষ্টে বুধুয়া সেটা উদ্ধার করলো বটে তবে বাইনোকুলারটা কাজ করবে কিনা কে জানে।আমার অবস্থা দেখে ঝিনাই, ঝিনুক, আন্না, গোকুল হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করলো।আমি ভাল্লুকের ভয় দেখিয়ে ওদের কান্না থামালাম। যেভাবেই হোক আমরা একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই একদল আদিম মানুষের মতো দেখতে আমাদের ঘিরে ধরলো। আসলে এরা রাভা জাতীভুক্ত মানুষজন। এদের ভাষা সামান্য বোঝা যায়।চারদিকে জনা কয়েক বাঁশের বাড়ি। গ্রাম নয় বরং হ্যামলেট বলা যেতে পারে। একজনকে বুধুয়া কিছু একটা জিজ্ঞেস করতেই লোকটা “কুসুম্বা কুসুম্বা” বলে ডাকতেই একজন মহিলা আমাদের কাছে এসে অভিবাদন জানালো।
বুধুয়া লোকটিকে বললো – ইয়াক চিলাকানা গড়ত যাবু, নিয়া কিনা হিতি আত।
কিছুই বুঝতে পারলাম না। মহিলাটি আমাদের হাতে নারকেল আর নারকেলের জল দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসল।
বুধুয়া বলল এরা এখানের গাইড।
— আমি এদের ভাষা তো বুঝতে পারছি না।
বুধুয়া – আমি তো আছি স্যার!
অতঃপর চলো চিলাগড় আর নল রাজার দেশে। সরু পায়ে হাঁটা পথে আমরা এগিয়ে চললাম। দু’পাশে সরলবর্গীয় গাছের সারি। গাছের পাতা ভেদ করে সূর্যরশ্মি সরু বল্লমের মতো মাটি স্পর্শ করেছে।যখন আমরা ছায়াময় জঙ্গলের বাইরে এলাম তাকিয়ে দেখছি অনেকটা জায়গা নিয়ে লাল ইটের ভগ্নদশা চিলাগড়। গড়ের সামনে একটা অর্ধচন্দ্রাকার প্রবেশদ্বার।আর সব ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। বুধুয়াকে বললাম – আমরা আশপাশের জায়গাগুলো বরং একটু দেখে নিই। সঙ্গের লোকটা বুধুয়াকে কি যেন বললো, বুধুয়া আমাকে জানালো আমরা যেন খুব একটা দূরে না যাই। গড়ের এবড়ো খেবড়ো ইটের ওপর দিয়ে আমরা গড়টা দেখতে লাগলাম।গড়ের অনেকটা ভেতরে আমরা চলে এসেছি। একটা লতা জড়ানো ঝোপের পাশে কিছু পাখির হাড়গোড় দেখতে পেলাম।তার মানে আশেপাশে মাংসাশী কোন প্রাণী আছে।ঝোপটা মিছিলের হাতে আনা লোহার রড দিয়ে সরাতেই কিছু একটা যেন দেখতে পেলাম।কাছে যেতে গিয়ে মিছিল ঝুপ করে অনেকটা নিচে পড়ে গেলো।তাহলে এখানে কি কোন সুরঙ্গ আছে? ততক্ষণে মিছিলের গলা পেলাম।
— মামা সাবধানে নিচে নেমে এসো।
— নামবো কিভাবে।
— লতাপাতা ধরে নেমে এসো।
এসব কান্ড দেখে জিনিয়া কাঁদতে আরম্ভ করলো।যতই তাকে থামতে বলি ততই আরো জোরে কাঁদে। ঝিনাইয়ের জোর ধমক খেয়ে কান্না থামলো বটে, তবে লতা জড়ানো মাটি চোখে মুখে ঢুকে গিয়ে বিদিগিচ্ছিরি ব্যাপার। আমরা সবাই আস্তে ধীরে নীচে নেমে এলাম।মাকড়সার জাল আর চামচিকা ছাড়া কিছু চোখে পড়লো না। সাপখোপ অবধারিত আছেই। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কিছুই বোঝা গেলো না।মিছিল হঠাৎ ও মাগো শব্দ করতেই ঐ ক্ষীণ আলোতেই দেখলাম ঝং ধরা বাক্স জাতীয় কিছু একটা। পিছনের দেয়ালে কয়েকটা চামচিকা ঢ্যাপঢ্যাপ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মিছিল এই বাক্সেই হোঁচট খেয়েছিলো। ভালো করে পরীক্ষা করে বুঝলাম ওটা একটা ঝং ধরা সিন্দুক। তালা দেয়া হুড়কোটায় একটা নাটবল্টু দিয়ে আটকানো। সিন্দুকের ওপরটা হাত দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে দেখলাম তার ওপরে সেসময়কার কুচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের নাম খোদাই করা রয়েছে। এটা কি তবে সেই সিন্দুক যেটা প্রাননারায়ণের আমলে নেপাল ও ভুটান আতঙ্কবাদীরা গোপনে নিয়ে গিয়েছিলো?এইসময়ই রাজার মুকুটটাও হঠাৎ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এদিকে ঝিনাই মিছিলের হাতে রাখা লোহার রড দিয়ে সিন্দুকটা খোলার চেষ্টা করছিলো।পাথর দিয়ে ঠুকাঠুকি, ইটের ঘা সব কিছু বিফল হলো। আমরা সবাই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পরেছি।মোবাইলের চার্জও আর বেশিক্ষণ থাকবে না। ঝিলিক বললো
— মামা, বুধুয়া আঙ্কেলকে একটা আলো নিয়ে আসতে বলো না।
— ঠিক কথা বলেছিস তো।
আমি একটা কল দিলাম বুধুয়াকে। বুধুয়া সব শুনে বললো যে সে দুটো টর্চ সংগ্রহ করেই আমাকে ফোনে আমরা কোথায় তা জেনে নেবে।
— তুমি কিন্তু কাউকে কিছু বোল না বুধুয়া। আর তুমি একা আসবে।গড় থেকে সোজা পুবে আসবে। আসার সময় …
মোবাইলের চার্জটাও শেষ হয়ে ফোনটা কেটে গেলো। যাঃ এবার কি হবে!! কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ঘরঘর শব্দ আমার কানে এলো। মিছিল বললো
— কিছু শুনতে পাচ্ছ মামা।
ফিসফিস করে বললাম – হ্যাঁ পাচ্ছি। কিন্তু কিসের শব্দরে এটা।
— কিছুই বুঝতে পারছি না মামা।
আমার চারপাশে স্থির পাথরের মতো বসে আছে দলের বাকিরা। একটা ছোট্ট ক্ষীণ আলোয় সারাটা গুহা যেন ক্রমশ দেখা যাচ্ছে।এক ঝাঁক বাদুর বা চামচিকার বীভৎস চিৎকারে অনেকেই প্রায় সংজ্ঞাহীন। ঘরঘর শব্দে চামচিকাগুলো সেই সিন্দুকটা ঢেলে একদিক থেকে অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে।
একি! এটা কি সম্ভব নাকি? নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি।আস্তে আস্তে সিন্দুকের ডালাটা খুলে গেলো।সিন্দুকের ভেতর থেকে বাইরে একটা আলো ঠিকরে পরছে সাথে ধোঁয়া। চারদিকে অজস্র চামচিকে উড়ছে।ঝুপ করে আমাদের সামনে ডানাভাঙ্গা একটা বড় চামচিকে পিঠে একটা সাদা দাগ নিয়ে এসে দাঁড়ালো। আমরা ভয়ে পালাতে যাবো এমন সময় সিন্দুকের ভেতর থেকে ছিপছিপে গড়ন, মাথায় ঝাঁকড়া চুল,মুখে সাদা পাকা দাড়ি একজন বেড়িয়ে এলো। আমি কিছু বলার আগেই সে বলল – আমি চিলা রায়ের চেলা।রাজার মুকুট পাহারা দিচ্ছি সেই কবে থেকে এবার তোমাদের সিন্দুকে ঢোকাবো।তোমরা এখন থেকে এই মুকুটটা পাহারা দেবে। আজ থেকে আমার ছুটি। কথাগুলো বলেই একটা লম্বা চক্কর কাটিয়ে হেঁড়ে গলায় বললো – নাও এবার এর দায়িত্ব। মুকুটের মাঝখানে একটা হীরা বসানো। চারপাশে নানান রংবেরঙের পাথর লাগানো।
আমি বললাম- দাও ফিরিয়ে ঐ মুকুটটা। কথাটা শুনেই বড় চামচিকাটা আমাদের আক্রমণ করতেই ঝিনুক ছুটে গিয়ে মুকুটটা বগল দাবা করে গুহার মুখে চলে গেলো।গোকুল আর ঝিনাই ততক্ষণে মাটিতে পরে থাকা একটা জালে আটকে ফেলেছে চামচিকাগুলোকে।
ঝিনাই জোরে ডাকলো – মামা তাড়াতাড়ি চলে এসো।একদম সময় নষ্ট করো না।
এদিকে চিলারায়ের চর একটা অদ্ভুত রূপ নিয়ে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছিলো। আমি গুহার প্রায় কাছাকাছি চলে এলেও আমার পিঠে একটা ধারালো কিছুর আঘাতে ভীষণ ব্যথা পেলাম।ডান হাতে একটা গাছের শেকড় হাতড়ে হাতড়ে পেয়ে গেলাম।সবাই ততক্ষণে ওপরে উঠে গেছে।আমি অসহ্য ব্যথা নিয়েও গুহার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে পেলাম। আহঃ কি আনন্দ।বনের ভেজা গন্ধ আর জংলী লতাপাতা সরিয়ে একটা গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। আবছা অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ও মাগো! ঝিনাইয়ের চিৎকারে কান্না অনুসরণ করে কাছে গিয়ে দেখলাম ঝিনাই মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চারপাশে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পকেটের লাইটারটার কথা মনেই ছিলো না। লাইটারটা জ্বালিয়ে দেখলাম কোন আঘাতের চিহ্ন নেই, তবে এত রক্ত কিসের।
ঘড়ির কাঁটায় রাত প্রায় শেষ হবার পথে। খুঁজতে খুঁজতে বুধুয়াও এসে হাজির হয়ে গেছে। আমি বললাম – আর একটু হলে ঝিনাই খুন হয়ে যেতো। দেখো কত রক্ত। বুধুয়া একটু ঝুঁকে পড়ে দেখলো ওগুলো রক্তই নয়। রামগুয়া গাছের রস। চিলাপাতা জঙ্গলের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বিখ্যাত রামগুয়া গাছ। এই গাছে আঘাত করলেই রক্তের ধারা বেয়ে আসে। সেই গাছ এখন বিপন্ন প্রায়। ঝিনাইয়ের হাতের রডটার আঘাতে এই বিপত্তি আর কি।
সকালের আলো বনের চারদিকে ঠিকরে পড়ছে। চিলাগড়ের চারপাশে পড়ে থাকা লাল সুরকির রাস্তা ধরে আমরা চারদিকটা দেখতে দেখতে জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে এলাম।মুকুটটা আমরা জেলা শাসকের হাতে তুলে দিয়ে ফেরার ট্রেন ধরে আবার ফিরে আসবো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঝিনুকের হাতে সেই হারিয়ে যাওয়া মুকুটটায় রোদের প্রথম আলো পরে চারদিকের তার দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। পুবের আকাশটা তখন লালে লাল।
তুহিন কুমার চন্দ | Tuhin Kumar Chanda
Nishim Prantare | নিঃসীম প্রান্তরে | শওকত নূর | 2023
Hello Baby Animals | হ্যালো বেবী এনিম্যালস | সুবল দত্ত | Top New Story 2023
Bangla Prabandha Rachana | মনের কুলুঙ্গিতে আমার ভিক্ষে মায়ের স্মৃতি | New 2023
Adrishya Alor Poth | অদৃশ্য আলোর পথ | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Top New 2023
Read Online Bengali Horror Story | New Read Online Bengali Story | Online Bengali Horror Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best New Bengali Web Story 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Online Bengali Horror Story in India | World’s Online Bengali Horror Story Blogs | New Bengali Web Story in Online | Collection Online Bengali Horror Story | Full Read Online Bangla Golpo | New Bengali Web Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Famous Live Online Bengali Horror Story | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Golpo Read Online | New Online Bengali Horror Story | Online Bengali Horror Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | Bangla Golpo Read Online Audio | Bangla Golpo Read Online Video | Online Bengali Horror Story Netflix | Full Bangla Galpo Read | Online Bengali Horror Story Download | Shabdodweep Competition | Bangla Golpo Read Online Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Online Bengali Horror Story | Recent Online Bengali Horror Story | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Bangla Golpo Read Online 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Read Online | New Bangla Golpo Read Online | Online Bengali Horror Story in pdf | Golpo Dot Com Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read Online Bengali Horror Story pdf | Live Online Bengali Horror Story – video | Online Bengali Horror Story APK | New Bengali Web Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Online Bengali Horror Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Online Bengali Horror Story – audio | Top Online Bengali Horror Story | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bangla Golpo Read Online | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bangla Golpo Read Online | Shabdodweep Writer | Full Online Bengali Horror Story