Bangla Prabandha Rachana | মনের কুলুঙ্গিতে আমার ভিক্ষে মায়ের স্মৃতি | New 2023

Sharing Is Caring:
Bangla Prabandha Rachana

মনের কুলুঙ্গিতে আমার ভিক্ষে মায়ের স্মৃতি – রূপশঙ্কর আচার্য্য [Bangla Prabandha Rachana]

আমার মামা বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গোঘাট থানার অন্তর্গত ধুলেপুর নামক একটি ছোট গ্রামে। ধুলেপুর বললে অনেকে ভাবতে পারে নামটা এই ধরনের কেন? আসলে ওই গ্রামের রাস্তা কাদামাটি দিয়ে তৈরি (মোরামও দেওয়া নেই)থাকার কারণে প্রচুর ধুলো হতো মানে বন্যা হলে যেমন জল পারাপার হতে হয় এক হাঁটু জল সেই রকম ধুলোও হাঁটু পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য প্যান্ট বা কাপড় হাঁটু পর্যন্ত তুলে হাঁটতে হয়। এই অদ্ভুত কারণে “ধুলেপুর” নাম দেওয়া হয়েছিল যা আমার অনুমান।

মামা বাড়িতে মাঝে মাঝে এই ধরনের প্রশ্ন উদ্ভব হতো যে গ্রামটির নাম ধুলেপুর কেন? অতি সাধারণভাবে এ কথাটাই অনেক প্রবীণ মানুষ বলেছেন। তাই আমার অনুমান এই কারণেই ধুলেপুর নামকরণ হয়েছে। কিন্তু এর মূল কারণ কি তা আজ পর্যন্ত আমার জানা নেই। যাইহোক মামা বাড়ি খুব দারুণ একটা আনন্দের, আবদারের স্থান। এখানে যত আবদার যত আনন্দ রয়েছে। কি সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশ। আলো বাতাস পাখির শব্দ দূষণমুক্ত অক্সিজেন। মাঝখান দিয়ে রাস্তা বয়ে গেছে, দুধারে জমি ধান গাছ, সরষে গাছ, পাটগাছ, আলুর চাষ। চারিদিক সবুজ আর সবুজ। কি সুন্দর পরিবেশ! যা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। এত সুন্দর ভাবে প্রকৃতি সেজে উঠেছে ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। এই মুহূর্তে আমি আমার বাল্যকালের অতীতের স্মৃতিচারণ করে উঠছি। মামা বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে আমরা খুব ভোরে মামা বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে দিতাম। ঘাটাল – আরামবাগ লোকাল বাসে উঠতাম। ওই বাসে তখন প্রায় তিন ঘন্টা – সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন যেমন রাস্তাঘাট অনেকটাই ভালো হয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি ঘটেছে, লিমিটেড স্টপেজ হয়েছে, সুপারফাস্ট বাস হয়েছে। তখন বাস যেমন অতি কম খুব তেমন ধীরগতিতে বাস যেত এবং বহু প্যাসেঞ্জার অপেক্ষা করে থাকতো বাসে ওঠার জন্য। আমরা সময় ও ভিড়ের জন্য কখনো আরামবাগের একটু আগে কালিপুরে নেমে পড়তাম, আবার কখনো আরামবাগে নেমে আরামবাগ থেকে বালি দেওয়ানগঞ্জ-এর বাস ধরে ধুলেপুর স্টপেজে নামতাম। যখন কালিপুরে নামতাম তখন কালিপুর থেকে হেঁটে হেঁটে ধুলেপুর পর্যন্ত অনেকবার গেছি। এই দূরত্ব প্রায় আড়াই-তিন কিলোমিটার। ঠিক জানা নেই কত কিলোমিটার কিন্তু আড়াই কিলোমিটার তো হবেই। তখন ছিল মনের মধ্যে মারাত্মক মানসিক জোর মামা বাড়ি যাচ্ছি বলে। বাস থেকে নেমে হাঁটা দিতাম। তবে হ্যাঁ অনেকক্ষণ বাসে থেকে অস্বস্তিকর অবস্থার চেয়ে ৪০-৪৫ মিনিট ধীরে ধীরে হেঁটে যেতে খুবই ভালো লাগতো। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম আবার হাঁটতাম তারপর একসময় ধুলেপুর বাসস্টপেজে গিয়ে থামতাম। সেখানে তখন খুব কম দোকান-দানী ছিল। এখন অনেক দোকান-দানী হয়েছে। এখন জায়গাটা মনে হবে শহর হয়ে গেছে।

আমরা হেঁটে পৌঁছালাম। আমার মায়ের এক পিসতুতো ভাই একটি চায়ের দোকান করেছিল ওই ধূলেপুর বাস স্টপেজে। আমাদেরকে দেখতে পেয়ে ভাগ্নে ভাগ্নে বলে ডেকে তাঁর দোকানে বসাতো। আমাদের চোখে মুখে জল দিত, জল খাওয়াত, বাতাস করত। তখন তালপাতার পাখা দিয়ে সস্নেহে আদর করে বাতাস করত। আর সকলকে চা বিস্কুট টিফিন করার মতো টুকটাক দিত। আমরা একটু বিশ্রাম নিয়ে আর একটুখানি দশ মিনিট পর আমাদের মামা বাড়িতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতাম। যে কারণে এতগুলি কথা বলা সেটাই এখন বলবো বলেই অতীতের শৈশবের কথা গুলো আমার স্মৃতি থেকে লেখনীতে ফুটে উঠেছে। ওই বাড়িতে সেই সময় প্রথম যিনি মাতৃতুল্যা মামিমা ছিলেন তিনি হলেন বর্তমানে আমার ভিক্ষা মা। মামিমা আমার উপনয়নের সময় আমায় ভিক্ষে দিয়েছিলেন। সেই দিন থেকে তিনি যেমন আমার মামিমা তেমন ভিক্ষা মা হয়ে উঠলেন। আমি তখন অত্যন্ত ছোট। ওই মামিমাই বাড়ির মধ্যে সর্বপ্রথম বধূ রূপে এসেছিলেন।

এখন এই মুহূর্তে মামিমার সম্বন্ধে কিছু বলতে গেলেই সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে, কারণ কোনো রকম ভাষা সেই মানুষটির বৈশিষ্ট্য আচরণ বিধি কেমন তা প্রকাশ করতে পারবো না । এই মুহূর্তে আমার সাধ্য নেই, ক্ষমতা নেই, স্পর্ধা নেই তার আচরণ বিধিকে তুলে ধরার। তবুও যতটুকু আমি আমার হৃদয়ে অনুভব করেছি আজ সেই লেখনীতেই প্রকাশ করতে চাই। মাতৃতুল্যা মামিমা আমার মায়ের থেকে ছোট ছিলেন। কারণ আমার মা ওই পরিবারের সবার চেয়ে বড়, তাই মামিমা ছিলেন আমার মায়ের ভাইয়ের স্ত্রী। আমরা মামাবাড়িতে যাওয়ার সময় যখনই দূর থেকে আমাদেরকে মামা বাড়িতে আসছি দেখতে পেতেন তখনই তাঁর আচরণ বিধিটা এক অদ্ভুত ধরনের ছিল। পিতলের গাড়ুতে জল নিয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আমাদেরকে প্রত্যেককে নিয়ে আসতেন। সোনা আমার, বাছা আমার বলে চোখে মুখে জল দিয়ে হামি দিয়ে হাত, পা মুছিয়ে দিয়ে বসাতেন। এক অদ্ভুত অনুভূতি মাতৃত্বের অনুভূতি এ কোন মা ? মামিমা, মায়ের পক্ষেই সম্ভব। এত যত্ন করে এত আদর করে আপ্যায়ন মামা বাড়িতে আমি একমাত্র ওনার ক্ষেত্রেই দেখেছি। আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন অবশ্য তিনিই ওই পরিবারের একমাত্র বহু ছিলেন। তিনি অদ্বিতীয়া অতুলনীয়া এক নারী। আজও মনে পড়ে সেই অতীত। ওই অতীত বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাকে দংশন করে মেরে দিচ্ছে। তাঁর এত ভালোবাসা, এত যত্ন আমি ভাগ্না রূপে বা সন্তান রূপেও এক টুকরো কর্তব্য পালন করতে পারিনি। সন্তান কোনদিনই পিতা-মাতার ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা আশীর্বাদ এই সমস্ত কিছু ঋণ শোধ করতে পারে না জানি। কিন্তু আমি তো কর্তব্যটাও সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। তাই আমি অন্য কোনো কথা বলে আমি নিজের স্পর্ধাকে, ঔদ্ধত্যকে আনতে পারব না। মায়ের চরণে প্রণাম জানিয়ে আমি আবার পরবর্তী পর্যায়ে আসতে চাই ।

সেই মা যিনি আমার উপনয়ন হওয়ার সময় আমাকে ভিক্ষা দিয়েছেন। হ্যাঁ একটা কথা বলতে চাই আমাদের ব্রাহ্মণ সন্তানদের নয় বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পর উপনয়ন রূপে এক সংস্কার আছে যাকে অতি সাধারণভাবে পৈতা বলা হয়। এই উপনয়নের রীতি অনুযায়ী একজন নারী ব্রহ্মচারীর ভিক্ষা মা হবেন ।আমার ভিক্ষা মা হয়েছিলেন আমার এই মামিমা। তিনি আমাকে ভিক্ষে দিয়েছিলেন। আমি তাঁর ভিক্ষা সন্তান, তিনি আমার ভিক্ষা মা। আজ এই মুহূর্তে এইগুলো অনেক যন্ত্রণাদায়কভাবে মনে আসছে। কারণ আজ ১৬ই মে হঠাৎ রাত্রি আটটা পঞ্চাশ মিনিটে আমার কাছে একটা অচেনা নাম্বারে ফোন আসে। আমি ফোনটা রিসিভ করার পর আমি শুনতে পাই, ফটিক কিছু শুনেছিস? আমার ডাকনাম ফটিক, আমি বললাম কে বলছিস ? এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে পরিচয় দিয়ে বলল আমি মিষ্টু বলছি ধুলেপুর থেকে। আমি বললাম হ্যাঁ আমিতো জানি মেজ মামিমা অর্থাৎ আমার ভিক্ষা মা তো অসুস্থ, ক্যান্সার হয়েছে। মিষ্টু বলল সেটা তো শুনেছিলি, আজ রাত্রি সাড়ে সাতটার সময় তিনি মারা গেছেন । এটা শোনার পর ওই মামা বাড়ির সবচেয়ে অদ্বিতীয়া, অনন্যা, অতুলনীয়া নারীর পরলোকগমন যা হাজার চেষ্টা করেও ফিরে পাওয়া যাবে না এটা উপলব্ধি করতে পারলাম। এখন রাত্রি নটা বাজতে দশ, সাড়ে সাতটার সময় মারা গেছে। যেকোনো কারণে জানাতে দেরি হয়ে গেছে। কি করে যাব? গাড়িতে করে যাওয়া সম্ভব নয়। চটজলদি মারুতি করে রাত্রেই গেলামl বাসে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই, অনেক কষ্টে জানাশোনা এক ভাই ‘গণেশ সিট’ তাকে বলতেই মারুতি সহ ড্রাইভার পাঠিয়ে দিল। গাড়িতে আমি মা, বৌদি, ভাইপো চড়লাম। ঠিক রাত্রি দশটা আঠেরো মিনিটে মারুতি স্টার্ট দিল। যেতে যেতে যে কতবার মামা বাড়ি থেকে ফোন এসেছে কারণ তারা আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে দাহক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না। আমি যতটা সম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু মনের মধ্যে ওই একই যন্ত্রণা স্মৃতিতে ভেসে উঠছে সেই জননী, যিনি প্রত্যেকবার মামা বাড়ি গেলে ওইভাবে আপ্যায়ন করতেন, কত যত্ন করে খাবার খাওয়াতেন। আমার কোনো কষ্ট হলে কোন জায়গায় কষ্ট হচ্ছে সেই জায়গায় মন্দিরের পূজা করা ফুল, স্নান জল এনে লাগিয়ে দিতেন। তরি-তরকারি দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে মুখে খাইয়ে দেবার চেষ্টা করতেন আমি এত বড় হওয়ার সত্ত্বেও এই ধরনের ভালোবাসা স্নেহ। “মা” যা হয় আমি তো বোকার মতো এতগুলো কথা বলছি, কাকে বলছি? সবাই তো জানি মা কেমন হয়, মায়ের আচরণবিধি কেমন হয়, মা কি করতে পারে একটা সন্তানের জন্য, নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে দিতে পারে সন্তানকে সুস্থ রাখার জন্য ।আমাকে ভিক্ষা দেওয়ার পর বলেছিলেন যে তোরা তিন ভাই মানে আমার ভিক্ষা মায়ের দুই পুত্র নন্টু, নাথু আর আমি ফটিক । আমাকে এই ফটিক নামেই আমার ভিক্ষা মা যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ডেকে এসেছেন ।এখন বর্তমানে ফোন চালু হওয়ার ফলে চিঠিপত্র লেখার রেওয়াজ টা খুব কম হয়ে গেছে। কিন্তু আমার এই ভিক্ষে মা পোস্টকার্ডে চিঠি লিখে আমাদেরকে বিশেষ করতে আমার বাবাকে এবং আমার মাকে বিজয়া দশমীর প্রণাম আমার জ্যাঠামনি, জেঠিমাদের বিজয়া দশমীর প্রণাম এবং আমাদেরকে স্নেহশীষ এবং আশীর্বাদ করতেন। যাই হোক আজ এই কথাগুলো মারুতিতে যেতে যেতে মনে পড়ছে। আবার একবার ফোন আসছে। বুঝতে পারলাম জিজ্ঞেস করবে কোথায় এখন? আমি তখন বললাম বালিডাঙ্গায় আছি, তারপরে যখন ফোন এসেছে অনেকটা দেরিতে তখন বললাম ধুলেপুরে চলে এসেছি। মারুতি থেকে নামার পরই দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া পাঁজরের যন্ত্রণার মতো চলল কান্নাকাটি, যন্ত্রণা সেই অতীত ভেসে ওঠা। আর জীবনে মামা বাড়িতে গিয়ে এতো ভালোবাসা পাব কিনা জানি না। এত যত্ন, এত আদর পাব কিনা তাও জানি না।

আমার ভিক্ষে মাকে কখনোই মনে হয়নি আমার ভিক্ষে মা, সব সময় মনে হয়েছে এ ভিক্ষে মা আমার নিজেরই মা গর্ভধারিণী মা। তাঁর ভালোবাসাতে কখনো আমি ভিক্ষা সন্তান এটা মনে হয়নি। আমি যেন তারই সন্তান এটাই মনে হয়েছে। পরিস্থিতির কারণে নিজের কর্তব্য করতে না পারার জন্য আমার আমার মা স্বর্গলোক থেকে ক্ষমা করবেন। সমগ্র শরীরে রজনীগন্ধার মালায় ভর্তি, সিঁথিতে সিঁদুর পায়েতে আলতা এক সৌন্দর্যময়ী নারী সাবিত্রী, সতীসাবিত্রী, রূপে মহামায়া রূপে চললেন পরলোকে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সময় চেষ্টা করেছি মায়ের যথাসাধ্য সশ্রদ্ধ নিজের কর্মসূচি পালন করার। যত্ন করে মাকে ঘি মাখিয়ে স্নান করিয়ে কাপড় পরিয়ে তিন ভাই মিলে চিতায় দিলাম। মুখাগ্নি করার পর ভোর চারটে দশ পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম সমস্তটা ছাই হয়ে যাওয়ার পর ফিরে এলাম। আবার সেই মারুতি, আবার সেই ঘাটাল। এই হল আমার ভিক্ষে মায়ের বিজয়া।

রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya

Natun Bangla Galpo 2023 | এক জীবন পিপাসা ও এক বিন্দু জল | মনসুর আলি

Gaai | গাই | শওকত নূর | New Bengali Story 2023

Aleya | আলেয়া | আবদুস সালাম | Bangla Galpo 2023

Shree Jagannath Bijay Kabya | ‘শ্রীজগন্নাথবিজয়’ কাব্য প্রসঙ্গে | 2023

Bangla Prabandha Rachana | Sabuj Basinda | High Challenger | Bangla Prabandha Rachana 2023 | Bangla Prabandha Rachana in pdf | Bangla Prabandha Rachana pdf download | New pdf – Bangla Prabandha Rachana | PDF Bangla Prabandha Rachana | Bangla Prabandha Rachana PDF book | Bangla Prabandha Rachana – audio file | Bangla Prabandha Rachana – video | Bangla Prabandha Rachana Online | Online Bangla Prabandha Rachana | Bangla Prabandha Rachana online download | 2023 Bangla Prabandha Rachana | Bangla Prabandha Rachana book

Leave a Comment