Adrishya Alor Poth | অদৃশ্য আলোর পথ | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Top New 2023

Sharing Is Caring:
Adrishya Alor Poth

অদৃশ্য আলোর পথ – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Adrishya Alor Poth]

শহর, শহরতলি পার করে স্টেশন। এই সব স্টেশন থেকে লাখ লাখ মানুষ রোজ কলকাতা শহর এবং মাঝারি শহর গুলোতে যায় কাজে। স্টেশন ছাড়িয়ে গলি রাস্তা। সংকীর্ণ। তার এক ধারে অটো গাড়ির দীর্ঘ লাইন। পরপর দাঁড়িয়ে থাকে। ডাউন ট্রেনের প্যাসেঞ্জার নামার অপেক্ষায়। প্রত্যন্ত গ্রামের যাত্রীরা ওই সমস্ত গাড়ি করে বাড়ি ফেরে, আবার রাতের অন্ধকার থাকতে বের হয় কাজে। যারা অটো চালায় তারা ওই সব কাজের মহিলা আর পুরুষদের নিয়ে ভোরের অন্ধকারের বুক চিরে স্টেশনে পৌঁছে দেয়। এবং স্টেশন প্ল্যাটফর্মের কাছাকাছি দ্রুত লাইনে দাঁড়ায় ফিরতি প্যাসেঞ্জার পাওয়ার জন্য। ডাউন ট্রেনের প্যাসেঞ্জার আসা ও সংখ্যার উপর নির্ভর করে সে গাড়ি ছাড়বে কী না। হ্যা পিত্যেশ হয়ে বসে থাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

মিহির একজন গ্রাজুয়েট ছেলে, অন্য কোন উপায় না পেয়ে এক মালিকের অটো দৈনিক ভাড়া নিয়ে চালায়। দিন শেষে শর্ত অনুযায়ী মালিকের হাতে টাকা দিতে হয়। বাড়িতে মা বাবা দুই বোন আর ছোটো এক ভাই। ছেলে একটা চাকরি পেয়ে সংসারের হাল ফেরাবে এই আশা যখন নিরাশায় পরিণত হল, তখন মিহির এক বন্ধুর পরামর্শে ও সহযোগিতায় এই অটো চালানোর কাজে এলো। তবে আজকাল এই কাজে তীব্র প্রতিযোগিতা। তার ওপর আছে পার্টির দাদাগিরি। একটা ভালো রুটের লাইন পেতে নেতার বাড়ি অন্তত দশ বার যেতে হয়, অবশ্য ভালো সোর্স ধরে। রুটের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক একটা টাকা দিতে হয় ওই রুটের দায়িত্বে থাকা নেতাকে। এইখানে তো শেষ নয়, পার্টির মিছিলে যাওয়া একেবারে বাধ্যতামূলক। এই সমস্ত শর্ত মেনে মিহির এই কাজে এসেছে, সংসারের মুখ চেয়ে।

দুমাস হয়ে গেলেও এই কাজে মিহির মন বসাতে পারছে না। সেই ভোর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পরিশ্রম করেও সংসার চালানো দুষ্কর। তবে এই কদিনে যাত্রীদের কাছে সৎ অটো চালক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এমনিতে সে ভালো ছেলে, যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। দিন সাতেক আগে একটা ঘটনা তাকে আলোচনায় এনেছে। দূর গ্রাম থেকে মাঝ বয়সী এক মহিলা আর তাঁর যুবতী কন্যা মিহিরের গাড়িতে স্টেশন আসে। কিন্তু তাড়াতাড়ি ট্রেন ধরতে গিয়ে একটা ব্যাগ ছেড়ে যায়। মিহির ব্যাগের গায়ে লেখা ফোন নম্বরে ডায়াল করে ব্যাগ নিয়ে যেতে বলে ওদের বাড়ি থেকে। ঘটনাটা সামান্য ভেবে কাউকে না বললেও কিভাবে যে জানাজানি হয়ে গেল সে বুঝতেই পারলো না।

ব্যাগ ফেলে যাওয়া ভদ্রমহিলা খোঁজ করে দুদিন পরে এক বিকেলে ওদের বাড়িতে এসে দেখেন মিহির অটো চালাতে চলে গেছে, সেটাই স্বাভাবিক। মায়ের কাছে মিহির সব ঘটনা বলে ব্যাগটা ফেরত দিতে বলেছে। ভিতরে যে কী সম্পদ আছে মিহির দেখেনি, দেখেনি তার বাড়ির লোক। বাড়িতে অতিথি এলে যেমন আপ্যায়ন করা হয়, ওরা তাই করলো। ভদ্রমহিলা ব্যাগ খুলে দেখে মিহিরের মায়ের দিকে চেয়ে থাকেন। অক্ষত ব্যাগ দেখে তিনি আশ্বস্ত এবং বিস্মিত। এই এক ছন্ন ছাড়া ঘরবাড়ি, দারিদ্র্য লাঞ্ছিত সংসার , কিন্তু সততা যে অটুট রয়েছে ষোলো আনা! ভদ্রমহিলা সেদিন এই অঞ্চলে এসেছিলেন একজন ভালো পাত্রের সন্ধানে।

তিনি বেশ কিছুক্ষণ মিহিরের বাড়ির খবরাখবর ও সকলের সঙ্গে কথা বললেন। শেষে একটা ফোন নম্বর দিয়ে বলে গেলেন – মিহির যেন তাঁর সঙ্গে সময় করে কথা বলে। রাতে এসে মিহির ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে চাপ মুক্ত হল আর ফোন নম্বর লেখা কাগজটা বোনের কাছে দিয়ে বলে – তোর খাতায় লিখে রাখ, কোথায় হারিয়ে যাবে। তার বড়ো বোন এবার দ্বাদশ শ্রেণি। ছোটো নাইন, ভাই সেভেন। সবজি উৎপাদক বাবা হাসিমুখে সংসারের জোয়াল টানে এখনও। কিন্তু বড়ো ছেলের তো একটা দায়িত্ব থেকে যায়। তাই সে চোরা পথে হাঁটা সমাজ ব্যবস্থায় , সোজা এবং কষ্টকর পথ বেছে নিয়েছে সততার সঙ্গে বাজি রেখে।

সেদিন ছিল ঝড় জলের রাত, ট্রেনের গন্ডগোল হল দুর্যোগের আবহাওয়ায়। যাত্রী নিয়ে ফিরতে তাই দেরি হয়ে গেল। অন্ধকার রাত, রাস্তার দু পাশে দূরবর্তী গ্রাম। বৈশাখের দখিনা হাওয়ার দাপট আছে। ট্রেন ফেরত যাত্রী বোঝাই তার অটো। গন্তব্যে যাওয়ার প্রায় এক কিলোমিটার আগে বাষ্প পার হতে যখন গাড়ির গতি সে কম করেছে, রাস্তার পাশ থেকে যেন একটা গোঙানির শব্দ পেল। গাড়ি থামিয়ে মোবাইলের আলোতে দেখে একটা রক্তাক্ত দেহ রাস্তার পাশে হামাগুড়ি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, মানুষটার গোঙানি শোনা যাচ্ছে। যাত্রীদের সব প্রায় মুখ চেনা, অনুরোধ করলো ওইটুকু হেঁটে যেতে। তারাও রাজি হয়ে গেল। কাছাকাছি এক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে, ভর্তি করার জন্য রাতের ডিউটির কর্মীকে অনুরোধ করলো। একটা অটো চালক এই অবস্থায় একজনকে নিয়ে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। তারাও ভর্তি করার আগে পুলিশে খবর দিল। মিহির সবটাই দেখছে। এই সব কাজে পুলিশ খুব তৎপর। থানা খুব বেশি দূর নয়। কেউ রিস্ক নিতে চায়না, হাসপাতাল ভর্তি করার আগে আসল কাজটা করে রাখে।

অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে থানার থেকে গাড়ি চলে এলো দশ মিনিটের মধ্যে। মিহির যে ক্রমশ অবাঞ্ছিত জালে জড়িয়ে পড়ছে, তা বুঝতে পারলো না। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বেডে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে ডাক্তারবাবু বুঝলেন, – আঘাত গুরুতর বড় হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন। এখন রোগীর কেউ এখানে নেই, তার পরিচয়ও কেউ জানে না, জ্ঞান হারিয়েছে অনেকক্ষণ। খুব সকালে কারা যেন মিহিরের বাড়িতে খবর দিয়েছে, তাকে থানায় ধরে নিয়ে গেছে মানুষ খুনের জন্য। দিশেহারা অবস্থা বাড়ির সকলের, এই খবর শুনে। পাড়ায় পাড়ায় জটলা, সবার কাছে একটাই প্রশ্ন মিহির কী খুন করতে পারে ! মিহিরের বড়ো বোন নমিতা দাদার বন্ধুকে ফোন করে সব জানায়। সঙ্গে সঙ্গে সে বাইক নিয়ে মিহিরের বাড়ি এসে নমিতাকে নিয়ে থানায় যেতে বের হয়। মা কান্নায় ভেঙে পড়ে, বাবা বুঝতে পারে না, কী করে মিহির মানুষ খুন করলো!

আজ তিন দিন হল, মিহির জেল কাস্টডিতে। আগামী কাল তাকে কোর্টে তোলা হবে। বাড়িতে তার রান্না খাওয়া বন্ধের জোগাড়। গতকাল নমিতা বুদ্ধি করে একটা কাজ করেছে। সেই ভদ্রমহিলাকে মিহিরের ঘটনা আর জেল বন্দির কথা জানিয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন – তোমরা চিন্তা করো না, আমি ব্যাপারটা দেখছি।মিহিরের বন্ধু থানাতে কিছু সুবিধা করতে পারলো না, নমিতার কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে সেই ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলে। ইতিমধ্যে ঘটনার দিন মিহিরের অটোতে থাকা প্যাসেঞ্জারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোর্টে সাক্ষী হিসেবে হাজির করার কথা নিশ্চিত করলো ছেলেটি। আর ভদ্রমহিলা কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি সেই আক্রান্ত ব্যাক্তির খোঁজ পেয়ে গেছেন । তিনি এখন অনেকটা সুস্থ, তার বাড়ির লোকের উৎকণ্ঠা প্রশমিত করে হাসপাতাল থেকে যোগাযোগ করা গেছে। এবং ভদ্রমহিলার তৎপরতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোর্টে ওই ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে ছাড়তে রাজি।

মিহিরের বন্ধু সেদিনের পাঁচজন রাতের প্যাসেঞ্জার, ও নমিতাকে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কোর্টে হাজির হয়ে দেখে, সেই ভদ্রমহিলা হাসপাতালের একজন নিরাপত্তা রক্ষীসহ আপাত সুস্থ আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে আগেই পৌঁছে গেছেন। সকলকে ওদের নিযুক্ত উকিলের কাছে নিয়ে গেলে সব কিছু তিনি বুঝিয়ে দিলেন। ওদিকে জেলখানা থেকে মিহিরকে নিয়ে হাজির হল দুজন কনস্টেবল । নমিতা দাদাকে দেখে আঁতকে উঠলো, এ কী চেহারা হয়েছে দাদার! সে এক উদভ্রান্ত মানুষ! মুখ ভর্তি দাড়ি গোঁফ, উস্কো খুস্কো চুল দিকভ্রান্ত চাহনি। হয়তো মনে মনে ভাবছে, সততার মাশুল গুনছে বুঝি কড়ায় গণ্ডায়! মানুষ ভর্তি এজলাসে সে দেখলো তার বন্ধু, বোন, সেই নাম না জানা ভদ্রমহিলা আর আধো আধো চেনা সেদিন রাতের পাঁচ অটো যাত্রীকে।

…. উভয় পক্ষের সাক্ষীদের শুনানি গ্রহণের পর বিচারক বুঝলেন – আক্রান্ত ব্যক্তি নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়ে অপহৃত হওয়ার পর এই খুনের প্রচেষ্টা। মারা গেছে এই ভেবে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। মিহির বাবুর তৎপরতায় তিনি বেঁচে কোর্টের সামনে হাজির। অটো গাড়ির যাত্রীরাও সত্যি কথা বলেছেন। মহামান্য বিচারক শুধু একটাই প্রশ্ন পুলিশের আইনজীবীকে করলেন – মিহিরবাবুকে গ্রেপ্তারের আগে তার কথা শোনা আর স্থানীয় ভাবে একটু খোঁজ করা দরকার ছিল না কী!

বেকসুর খালাস হয়ে মিহির, সেই ভদ্রমহিলা ও অন্য সকলে একটা বড়ো টাটা সুমো করে গ্রামের পথে চলেছে। … বাড়ির কাছাকাছি পথের দুধারে গ্রামবাসীরা দাঁড়িয়ে মিহিরকে দেখবে বলে। মূল রাস্তা থেকে মিহিরের বাড়ি যেতে মিনিট দুই লাগে। সে পথেও ভিড়। গাড়ি থেকে সবাই নামলো। একটা মুক্তির আনন্দ সারা গ্রাম জুড়ে। … মিহিরদের বাড়ি ঢোকার আগে সেই ভদ্রমহিলা জলপাইগুড়িতে কর্মরত স্বামীকে ফোন করে বলছেন – তুমি চিন্তা করো না, আমি পাত্রের সন্ধান পেয়ে গেছি। নমিতা সেকথা শুনে দাদার দিকে অপলক চেয়ে আছে।

কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya

Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল

New Bengali Novel 2023 | অকপটে অগ্রজকে (পর্ব ৫) | অতনু দাশ গুপ্ত

Machipaat | মাছিপাত | রানা জামান | Bangla Galpo 2023

Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | শঙ্খক্ষেত্র পুরীধাম ও মাদলা পাঁজির রাজবৃত্তান্ত

Adrishya Alor Poth | Adrishya Alor Poth 2023 | Adrishya Alor Poth in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Adrishya Alor Poth – audio story | Adrishya Alor Poth – video story | Adrishya Alor Poth pdf download | Full story – Adrishya Alor Poth | Adrishya Alor Poth – Krishna Kishore Middya | Shabdodweep Story – Adrishya Alor Poth | Best story – Adrishya Alor Poth | Top Story – Adrishya Alor Poth

Leave a Comment