Indian Banjara Population | Best Bengali Article

Sharing Is Caring:

বানজারা – ভারতের এক হারিয়ে যেতে বসা জনগোষ্ঠী – রণবীর চন্দ

বানজারা বা বোনজারা ভারতের এক অতি প্রাচীন ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। মানে কোন জায়গাতেই এই সম্প্রদায়ের লোকজন থিতু হয়ে থাকে না। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। অনেকটা ইউরোপের জিপসিদের মতন। যদিও ধনে-বলে বা ক্ষমতার দাপটে ভারতের বানজারা সম্প্রদায় জিপসিদের ধারেকাছে আসে না। জিপসিদের কারভানগুলিতে যেরকম অনেকটা পাঁচতারা হোটেলের সুযোগ পাওয়া যায়, তা বানজারারা কল্পনাতেও আনতে পারবে না। বানজারারা দেশের নানা জায়গায় নানা নামে পরিচিত। কোথাও এদের ইরানী নামে ডাকা হয়, আবার কোথাও লামানি, লাম্বানি, ব্রিঞ্জারি বা গৌরমাটি নামেও ডাকা হয়ে থাকে। তবে এখন অবশ্য বানজারা বলতে সেরকম আলাদা করে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশীরভাগ গোষ্ঠীই কোন না কোন রাজ্যে ঘরবাড়ি করে পাকাপাকি ভাবে থিতু হয়ে গেছে। তাদের সেই আজ এখানে, তো কাল সেখানে থাকার পাট অনেকদিন আগেই চুকে গেছে। তবে এখনো অনেক বানজারা গোষ্ঠীর লোকজন উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক সহ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের গ্রামগুলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যারা বাস্তবিকই ভ্রাম্যমাণ জীবনযাপন করে।

বর্ষাকালের তিনচার মাস বাদ দিলে ওরা সারা বছর ধরেই একগ্রাম থেকে আরেক গ্রাম, এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। এরা সাধারণত গ্রামবাসীদের কাছে বিভিন্ন গৃহপালিত পশু, জড়িবুটি এইসব বিক্রি করে থাকে। অনেকেই আবার বিনিময় প্রথাতেও চলে। মানে গ্রামবাসীদের কাছে জড়িবুটির বিনিময়ে খাবার, শস্য এইসব সংগ্রহ করে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় এই গোষ্ঠীর লোকজন নৌকা, গরুর গাড়ি, উট কখনো কখনো আবার ঘোড়াও ব্যবহার করে থাকে। আজকাল অবশ্য এসবের ব্যবহার কমে গেছে। এখন এরা প্রায় সবাই ট্রেনে, বাসে করে যাতায়াত করে থাকে। বানজারারা ঐতিহ্যগতভাবে পরিযায়ী হলেও বর্ষাকালে মানে জুন থেকে অক্টোবর মাস অবধি তারা কোনো এক জায়গায় দলবেঁধে থেকে থাকে। এই সময়টায় এরা কৃষি শ্রমিক বা অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে কাজ করে থাকে। বৃদ্ধরা কোথাও না গিয়ে কোনো এক বানজারা গ্রামে সারা বছরই বসবাস করে।

বানজারাদের বলা হয় “Gypsies of India”, কারণ তাদের সাথে ইউরোপের জিপসিদের বিশেষ করে রোমা জিপসিদের অনেক সাদৃশ্য আছে। ভোপা (Bhopa), ডোম্বা (Domba) এবং কালবেলিয়া (Kalbelia)- এই তিন যাযাবরগোষ্ঠীর লোকজনের সাথে বানজারাদের অনেক সাদৃশ্য আছে। এদের সবাইকেই একসাথে বলা হয় “Gypsies of India”, বা ভারতের জিপসি। B. G. Halbar গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে বানজারারা বিশ্বাস করে যে তাদের উৎপত্তি রাজস্থানের রাজপুত সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে। মুঘল আমলে তাদের পূর্বপুরুষেরা জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন এবং অপেক্ষা করছিলেন যে যেদিন বিদেশি শাসনের অবসান হবে সেইদিন তারা জঙ্গলের জীবন ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসবেন। বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই জঙ্গলের ও যাযাবর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। অনেক বছর পরে তারা আস্তে আস্তে জমিজমা কিনে, ঘরবাড়ি বানিয়ে থিতু হয়েছে। অনেকেই এখন চাকরিবাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকে। এই বানজারারা যখন যাযাবর জীবনযাপন করে থাকে, তখন একজন নির্বাচিত দলপতির নেতৃত্বে এক জায়গার থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করে থাকে। এই দলপতিদের মুকাদ্দাম (muqaddam) বলে অভিহিত করা হয়। কখনও কখনও তাদের নায়কও (nayak) বলা হয়ে থাকে। যাতায়াতের পথে বা স্থানীয় লোকজন বা গ্রামবাসীদের সাথে কোন সমস্যা হলে এই মুকাদ্দামরাই তার সমাধান করে থাকে। বানজারা সমাজে মেয়েদের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। ব্যবসাবাণিজ্য, শিকার বা পশুপালন সব কাজই মেয়েরা ছেলেদের সাথে সাথে একসাথে করে থাকে। কিছু কিছু বানজারা গোষ্ঠীর লোকজন চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে পারদর্শী হয়। ঘুরে ঘুরে এরা নানারকম জড়িবুটি, তেল, বনজ ঔষধ এইসব বিক্রি করে। বানজারাদের এইসব লোক-ঔষধের পারদর্শিতা নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক গবেষণা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বানজারারাই নির্দিষ্ট কিছু জিনিস নিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য করে না। নানারকম জিনিসপত্র নিয়েই এদের ব্যবসা চলে। এই নানারকম বিচিত্র জিনিসপত্রের মধ্যে আছে তৈলবীজ, পোস্ত, নানারকম ফল ও ফুল, আছে জঙ্গল থেকে সংগৃহীত নানারকম জিনিস যেমন লাক্ষা, গাম, মেওয়া, মধু, পাহাড়ি একলা থেকে সংগৃহীত লেমন গ্রাস, শিলাজিত, তামাক ইত্যাদি ইত্যাদি। ইংরেজ আমলে মধ্যপ্রদেশের বেরার অঞ্চলের বানজারারা আবার ঐ এলাকা থেকে তুলো সংগ্রহ করে দূর দূর গ্রামে তা ফেরী করে তার বদলে নানারকম খাবার, মুদিখানার জিনিসপত্র নিয়ে আসত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসার আগে তৎকালীন Central Provinces-এ লবণ কেনাবেচা ছিল এদের একচেটিয়া ব্যবসা। বানজারাদের এই একচেটিয়া লবণের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য ব্রিটিশরা তাদের ওপর Criminal Tribes Act of 1871 প্রয়োগ করা শুরু করে। ফলে তাদের এই লবণের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বানজারাদের এই একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ হবার পেছনে সারাদেশে রেলগাড়ির প্রচলন, রাস্তাঘাটের উন্নতি হওয়াও আর একটি কারণ। রেলগাড়ি চালু হবার ফলে সহজেই অনেক দূর দেশ থেকেও মালপত্র আনা যেত। ফলে স্থানীয়স্থরে বানজারাদের একচেটিয়া ব্যবসাও নষ্ট হয়ে গেল। নিজেদের ব্যবসা নষ্ট হবার ফলে বানজারারা অন্য কাজে লিপ্ত হয়ে পরে। অনেকে বন থেকে কাঠ নিয়ে এসে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে বিক্রি করা শুরু করে। অনেকে আবার কৃষি-মজুর হিসাবে কাজে লেগে পরে। অনেকে আবার অপরাধ জগতের সাথে লিপ্ত হয়ে পরে। এরফলে ব্রিটিশরা তাদের এই ছুতোয় একটা অপরাধ-প্রবণ জাতি হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলে। বানজারাদের এই দুর্ভোগ দেশ স্বাধীন না হওয়া অবধি চলতে থাকে।

বানজারা ভাষার কোনো লিখিত রূপ নেই। বেশিরভাগ বানজারাই দেবনাগরী লিপিতে লেখাপড়া করে থাকে। কিছু কিছু জায়গায় ওরা আবার স্থানীয় ভাষার লিপিও ব্যবহার করে থাকে। বানজারা সংস্কৃতি তাদের নিজস্ব লৌকিক নাচ-গানে সমৃদ্ধ। এছাড়াও ছবি আঁকা, আলপনা, সূচিশিল্প, শরীরে ট্যাটু আঁকা এসবেও তাদের একটা নিজস্ব পরিচিতি আছে। বিশেষ করে বানজারা সূচিশিল্প, এবং ট্যাটু যা একান্তভাবেই বানজারাদের নিজস্ব পরিচয় বহন করে থাকে। লাম্বানি, (Lambani), বানজারাদের এক উপসম্প্রদায় বিশেষ। এই সম্প্রদায়ের মহিলাদের এক বিশেষ ধরণের সূচিশিল্প, যাকে লেপ এমব্রিওদেরি (lepo embroidery) বলা হয় খুব বিখ্যাত। কাপড়ের উপর ছোট ছোট আয়নার টুকরো, কয়েন এসবের সেলাই করা কাপড় দেশবিদেশে রপ্তানি করা হয়।

বানজারাদের প্রধান উৎসব তেজ যা শ্রাবণ মাসে হয়ে থাকে। এই উৎসবে অবিবাহিত মেয়েরা ভাল বর পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করে থাকে। এই উৎসবের দিনে একটা বাঁশের চাঙড়ি ব্যবহার করা হয় যা নানারকম দানাশস্যে ভর্তি থাকে। এছাড়াও জলভরা একটা পাত্রও তার পাশে রাখা থাকে। এই দিন মেয়েরা সারাদিন উপবাস করে, দিনের মধ্যে তিনবার ঐ শস্য ও জল দেখে থাকে। এরপর বিকালবেলায় তারা উপবাস ভঙ্গ করে।

পরে সন্ধ্যার সময় শস্যভরা চাঙড়ি মাঝখানে রেখে মেয়েরা ঘুরে ঘুরে নাচে, সাথে ছেলেরা নানারকম বাজনা বাজিয়ে সঙ্গত করে থাকে। হিন্দুধর্মাবলী বানজারাদের প্রধান দেবতা বালাজী এবং জগদম্বা যা মা দুর্গার আরেক রূপ। এছাড়াও গুরু নানককে তারা খুবই সম্মানের সাথে পূজা করে থাকে। তাদের প্রধান ধর্মগুরু শিবলাল বা শিবলাল রাঠোর, যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে বানজারা সম্প্রদায়কে ধর্মীয়ভাবে সংগঠিত করে ছিলেন।

বানজারা সমাজে বিবাহ একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদের সাধারণত নিজেদের গোষ্ঠীর ভিতর বিবাহ হয়ে থাকে। বিবাহ উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন ধরেই নাচগান এসব অনুষ্ঠান চলে। বানজারা সমাজে বিধবা বিবাহ এবং ডিভোর্স এর প্রচলন আছে। ডিভোর্স ছেলেমেয়ে উভয়ে দিতে পারে। তবে ছেলে মেয়ে উভয়ই আঠারো বছর বয়েস হলেই বিবাহের উপযুক্ত হয়। সাধারণত এপ্রিল মে মাসেই এদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, কারণ ঐ সময় এদের হাতে টাকাপয়সার প্রাচুর্য থাকে।

তথ্যসূত্র [Indian Banjara Population]

১. J. J. Roy Burman, Ethnogrophy of a Denotified Tribe: The Laman Banjara, Mittal Publications, Darya Ganj, Delhi, India, 2010, p-15.

২. T. Pullaiah, K. V. Krishnamurthy, Bir Bahadur, Ethnobotany of India, Volume 1, Eastern Ghats and Deccan, CRS Press, Boca Raton, FL, USA, 2016, p-38.

৩. Dhanasing B. Naik, The Art and Literrature of Banjara Lambanis: A Socio-cultural Study, Abhinav Publiication, Hauz Khas, Delhi, India,2000, p-4.

৪. Suresh Kumar Singh, Tribal Ethnography, Customary Law, and Change, Concept Publishing Company, Mohan Garden, Uttam Nagar, India, 1993, p-253.

৫. Nitin Sinha, Mobility, control and criminality in early colonial India, 1760s–1850s, The Indian Economic & Social History Review, 2008,45 (1): 1 – 33.

৬. Bhangya Bhukya, Subjugated Nomads: The Lambados Under the Role of the Nizams, Orient Blackswan, Kolkata, India, 2010.

৭, B.G. Halbar, Lamani Economy and Society in Change: Socio-cultural Aspects of Economic Change Among the Lamani of North Karnataka, 1986.

রণবীর চন্দ | Ranabir Chanda

Best Real Facts About Dreams 2023

Most Touching History | Best Bengali Travelogue 2023

Education Quality of Public Representatives | Best 2023

Everyday Problems for Elderly | Best Article 2023

Sabuj Basinda | What is Banjara caste? | What do you mean by Banjara? | Who called Banjara? | What are Banjaras called in English? | banjara online | banjara in bengali | banjara meaning | Banjara songs | banjara tribe | Banjara song lyrics | Maro Banjara | Is Banjara high caste? | Is Banjara a SC caste? | Who is God of Banjara? | Is Banjaras a Rajput? | Who is Banjara King? | What do Banjaras eat? | What is the origin of Banjara? | What is the mother tongue of Banjara caste?

Which caste is Banjara in India? | Why are Banjaras famous? | What is Banjara life? | Is Banjara a caste of SC or OBC? | Is Lambani and Banjara same? | Who owns Banjara? | How did Banjaras earn their living? | Where do Banjaras live? | What are the surnames of Banjara? | Which state Banjara belongs to? | Banjara bhajan | Banjara tribe | Banjara song | Banjara language | Banjara video language | Banjara Language | Banjara Clothing | Banjara Movie | Banjara Lyrics | Banjara Chords | Banjara Meaning

Bengali Indian Banjara Population | Indian Banjara Population PDF | Indian Banjara Population Essay | Indian Banjara Population | Bengali Article | Bengali Written Article | International Article | Indian Banjara Population wikipedia | Article Writing Course | Academic Article Writing | Professional Article Writer | Indian Banjara Population Video | Indian Banjara Population Audio | Indian Banjara Population Ebook | Indian Indian Banjara Population | Shabdodweep Writer | Indian Banjara Population MP4 | Article Factory | Freelance Article Writer | New A-Z of Cryptocurrency | Indian Banjara Population History | Full details – Indian Banjara Population

Leave a Comment