Most Touching History | Best Bengali Travelogue 2023

Sharing Is Caring:

Most Touching History – শর্মিষ্ঠা ঘোষ – সূচিপত্র

ইতিহাস ছুঁয়ে – শর্মিষ্ঠা ঘোষ

অবশেষে অষ্টমীর ভোরে বেরিয়ে পড়া গেল। পুজোর সময় যেহেতু চাপ বেশি থাকে প্রচুর মানুষ দক্ষিণে যায় চিকিৎসা বাবদ আমরা গোটা চারেক ট্রেনের টিকেট কেটে শেষমেশ একখানায় কনফার্ম হলো। তাও দুখানা টিকেট কাটতে হলো সেই ট্রেনের উৎস থেকে শেষ স্টেশন পর্যন্ত। পরে বোর্ডিং স্টেশন পরিবর্তন করা হলো। আই-আর-সিটিসির দিশা অ্যাপে এই জাতীয় পরিবর্তনগুলি করা যায়। এবারের যাত্রার কল্যাণে এটাও আমার নতুন শেখা। ভোর পাঁচটায় একটি প্রাইভেট কারে রওনা দেওয়া গেল রায়গঞ্জ থেকে মালদা টাউন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে ট্রেন ছটা ৫৫তে। ফলকনামা এক্সপ্রেস। যথাসময়ে এলেও ট্রেনের সার্ভিস দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। প্যান্ট্রি থেকে সারাক্ষণ খাবারদাবার সাপ্লাই হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ক্লিনিং-এর দিকে কোন ধ্যান নেই। একটি কামরার তো দেখলাম দরজা ভেঙে পড়ে আছে। আই-আর-সিটিসির ওয়েবসাইট গিয়ে আমার বড় বাবাজি কমপ্লেইন করার পর যাত্রা শুরুর প্রায় ২৫ ঘন্টা পর দরজা সারানো হলো এবং টয়লেট ক্লিনিং হল। এই সমস্ত ঝামেলা সামলে যে ট্রেন তিনটে ৫৫তে পৌঁছানোর কথা ছিল সে ট্রেন পাঁচটা কুড়িতে গিয়ে পৌঁছালো কাটপাডি স্টেশন।

কাটপাডি স্টেশন থেকে ভি-আই-টি ক্যাম্পাস অল্প রাস্তা। ইনফ্যাক্ট ট্রেন যখন স্টেশনে ঢোকে সেটা ওই ক্যাম্পাসের পাশ দিয়েই ঢোকে। ওখান থেকেই আমরা দেখতে পেলাম মেয়ের হোস্টেল। ভিআইটির কাছাকাছি ক্লাউড সার্ভিস এপার্টমেন্ট-এর রুম বুক করা ছিল দুটো। এর আগের দুবারই প্রায় সাত-আট কিলোমিটার দূরের হোটেলে ছিলাম, এখানে এই প্রথম আসা। এমনিতে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। একটাই অসুবিধে। এদের নিজেদের রেস্টুরেন্ট যেমন নেই খুব কাছে সাধারণ খাবার দাবারের দোকানও নেই। আইনক্সের পেছনে নারায়ণা স্কুলের পাশে এই অ্যাপার্টমেন্ট। আইনক্সের নিচে পিজ্জা হাট আছে এবং ওপরে দামি রেস্টুরেন্ট। একটু ডান দিকে গেলে ম্যাকডোনাল্ড। উল্টোদিকে পরপর দুটো ফাস্টফুডের দোকান ছিল। কিন্তু সেগুলো পিজ্জা বার্গার স্যান্ডউইচ কোল্ডড্রিংক্স এসবের। সাধারণ দুপুর রাতের খাবার খেতে হলে বা এক কাপ চা-কফি খেতে হলেও প্রায় ৮০০ মিটার ঠ্যাঙাতে হবে। ভেলোরের গরমে দুপুর রোদে সেটা বেশ অসুবিধাজনক। সাথে বয়স্ক মানুষ থাকলে আরও অসুবিধা। যাই হোক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মেয়ের হোস্টেল থেকে মেয়েকে নিয়ে এলাম। তারপর আমরা চলে গেলাম গ্রিন সার্কেলের কাছে। সেখানে বেশ কিছু শপিং মল ও বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে। কালার্স থেকে মেয়ের পুজোর জামা কিনে দেওয়া হল।

ভেলোরের কাছে রানীপেটে এবং সিএমসির কাছে দুখানা পুজো হয় শুনলাম। যার মধ্যে রানীপেটের দুর্গাপুজোটা তুলনায় বড়। মেয়ে বন্ধুদের সাথে সেখানেই অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দিয়ে এসেছে এবং নবমীর দিন দুপুরে প্রসাদ নিয়ে এসেছে। আমরা ভেবেছিলাম দশমীর দিন যাব, নানা ঘটনায় সেটা আর হয়ে ওঠেনি। বছর দুয়েক ধরে আমাদের দুর্গাপুজো দেখা হয় না। একটাই কারণ, পুজোর সময় আমরা মেয়ের কাছে চলে যাই। মেয়ে যেহেতু পুজোর সময় ছুটি পায় না আমাদেরও বাড়িতে মন বসে না। যাইহোক সেদিনের ডিনার আমরা ভি-আই-টি ক্যাম্পাসের ভেতর ডার্লিং রেস্টুরেন্ট থেকেই সেরে এসেছিলাম ৷ পরদিন সকালে মেয়ে বেরিয়ে গেল ক্লাসে। দুপুরে লাঞ্চ করা গেল আন্টিজ মেসে। চিকেন বিরিয়ানি, রাইস এবং চিকেন কারি নেওয়া হয়েছিল। বিরিয়ানি যথেষ্ট সুস্বাদু হলেও ভয়ানক ঝাল। দুই বোতল কোল্ডড্রিংস উড়ে গেল। তারপর বেরিয়ে দশমী উপলক্ষে ফুল কিনলাম। দেখলাম ভি-আই-টির প্রচুর স্টুডেন্ট দল বেঁধে কোথায় চলেছে দশেরা উপলক্ষে। বিভিন্ন প্রদেশের ছেলে মেয়ে একসাথে খেতে বেরিয়েছে। রংবেরঙের পাঞ্জাবি এবং ট্রাডিশনাল ড্রেস পরেছে। একদল নেপালি ছেলে-পেলেকে দেখলাম কানে মাথায় ধানের শীষ জাতীয় কিছু গোঁজা ছিল। কপালে অবশ্যই টিক্কা। জানার খুব আগ্রহ থাকলেও লজ্জাবশত জিজ্ঞেস করে উঠতে পারলাম না কোথায় যাচ্ছে৷ ভেবেছিলাম আমরা রনিপেট যাব খেয়ে উঠে কিন্তু গরমে আর ইচ্ছে করলো না। তাছাড়া আমরা যেতে যেতে যদি ঠাকুর বিসর্জন দিয়েই ফেলে এতদূর গিয়ে আর কোন লাভ হবে না। সুতরাং হোটেলে ফেরত গিয়ে দিবা-নিদ্রা দেওয়া গেল।

সন্ধ্যার পর মেয়ে আসার পর চললাম সিএমসির কাছের বাজারে। এই অঞ্চল বাঙালি অধ্যুষিত। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ বিশেষ করে বাংলাভাষী মানুষ এই অঞ্চলে আসেন এবং ব্যবসা করেন। কান পাতলেই বাংলা আপনি শুনতে পাবেন। আমি গেছিলাম বাঙালি মিষ্টির দোকানের খোঁজে। মেয়ের আর তার বন্ধুদের রসগোল্লা খাবার সখ হয়েছিল। কিন্তু কোন একটা দোকান বাঙালি মিষ্টি বলে ওদের কিটকিটে কটন ক্যান্ডি টাইপ কিছু খাইয়ে দিয়েছিল। আমরা রায়গঞ্জ থেকে লাড্ডু আর কাজু বরফি নিয়ে গিয়েছিলাম। ওরা ভাগ করে খেল। কিন্তু মেয়ে বলল যে দুটোর একটাও সেই অর্থে বাঙালি মিষ্টি না। অগত্যা রসগোল্লার খোঁজ। ব্যানার্জি বলে একটি হোটেল আছে যেখানে আমি এর আগেরবার বাঙালি খাবার এবং রসগোল্লা দেখে এসেছিলাম। তো খুঁজে খুঁজে গিয়ে দেখলাম রসগোল্লা শেষ। গরম পান্তুয়া নেমেছে। তাই কিনে আনলাম মেয়ের বন্ধুদের জন্য। আরেকটা মারওয়ারি দোকানে দেখলাম স্পঞ্জ রসগোল্লা। যদিও বেশ কিরকিরে টাইপের মিষ্টি। সেটাও নেওয়া হল৷ এই রসগোল্লা কিনতে গিয়ে আমাদের অটো ভাড়া দিতে হলো যাওয়া আসার পথে সাড়ে চারশ টাকা। যাইহোক ফিরে এসে ম্যাকডোনাল্ডসে ছোট মেয়ের বায়নায় ঢুকতে হলো। ম্যাকডোনাল্ডসে এসে বার্গার ফ্রেঞ্চফ্রাই কোল্ড কফি কোলড্রিংক্স দিয়ে ডিনার সারলাম সেদিনের মতো।

পরদিন ভোরে মেয়ে বেরিয়ে গেল ব্যাঙ্গালোরে তার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিট-এ। প্রথমে আমরাও ভেবেছিলাম একটা গাড়ি ভাড়া করে ব্যাঙ্গালোর গিয়ে সেদিনের মতো রাতটা কাটিয়ে পরদিন ঘুরেফিরে আসবো কিন্তু ছোট মেয়ে আমাদের এলার্ট করল ব্যাঙ্গালোর শহরের বিখ্যাত যানজট সম্পর্কে। পরে বুঝেছিলাম ব্যাঙ্গালোর না যাওয়ার সেই সিদ্ধান্ত একদম সঠিক ছিল। ভোরবেলায় মেয়েকে ওর কলেজ টিমের সাথে বাসে তুলে দিয়ে এসে আমরা ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম ভেলোর মিউজিয়াম-এর উদ্দেশ্যে। ভেলোর ফোর্ট-এর পাশেই সেই মিউজিয়াম। এর আগেরবার গিয়ে খোলা পাইনি। এবার পেলাম। সেখানে বেশ কিছু কালেকশন আছে দক্ষিণ ভারতীয় ইতিহাস ঘেঁষা মূর্তি স্থাপত্যের ভগ্নাংশ এবং সেখানকার ফ্লোরা ফণার। মিউজিয়াম দেখে আমরা চলে এলাম ফোর্ট-এর সামনে আইসক্রিম চা কফি সিঙ্গারা যেখানে বিক্রি হয় সেখানে৷ এদের অনিয়ন সামোসা আমাদের সিঙ্গারার মত দাঁড়াতে পারে না। এগুলো চ্যাপ্টা তিন কোনা। মেয়ে খেল সফটি আইসক্রিম। তারপর গেলাম ফোর্ট-এর পাশে জলকন্ডেশ্বর মন্দির। জল বা পরিখা ঘেরা শিব মন্দির দেখতে। অপূর্ব সেই স্থাপত্য। ইতিহাস বইয়ে এর ছবি দেখেছি। এই মন্দির নিয়ে একটি লোকগাথা চালু আছে। এখন যেখানে মন্দির সেখানে ছিল এক বিশাল উই ঢিবি৷ তার চারিদিক জলবেষ্টিত। ১৫৫০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এই ফোর্ট-এর যিনি রক্ষাকর্তা বিজয়নগরের রাজা ছিন্না বম্মি নায়ক তিনি স্বপ্ন দেখেন যে এই উই ঢিবির নিচে শিবলিঙ্গ আছে। স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে তিনি সেই ঢিবি সরিয়ে শিবলিঙ্গ আবিষ্কার করেন এবং শিব মন্দির স্থাপিত হয় বিজয়নগরের মহারাজা সদাশিবা মহারায় এর আমলে । জল দ্বারা ঘেরা শিবের মন্দির। তাই এর নাম জলকণ্ডেশ্বর মন্দির। মন্দিরটি দুটি ধাপে গড়ে উঠেছে। মেইন গেট এর উপর একটি বিশাল চূড়া সেটি দিয়ে ভেতরে ঢুকলে দ্বিতীয় চূড়া ৷ ভেতরের স্থাপত্য দুর্দান্ত৷ ভেতরে একটি কুয়ো আছে। লোকের বিশ্বাস সেই কুয়োর জলে টাকা পয়সা ফেললে ধন-সম্পদের আগমন হয়। তাছাড়া এই মন্দির সন্নিহিত ভেলোর ফোর্ট অন্যতম দ্রষ্টব্য। দিনের বেলা এই ফোর্ট-এর মাথায় আপনি চড়তে পারবেন। ফোর্ট-এর মাঝে মাঝে আছে একটি করে কুঠুরি। লোহার শিক লাগানো। সেগুলোকে নাকি কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই ফোর্ট ১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগরের মহারাজার আমলে নির্মিত। এই দুর্গ বহু হাত ঘুরে তুর্ক পারসিক কর্ণাটকের নবাব হয়ে ইংরেজদের হাতে পৌঁছে ভারত স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত এই দুর্গ ইংরেজদের অধীনেই ছিল। দুর্গের ভেতরে মন্দির ছাড়াও একটি চার্চ এবং একটি গির্জা আছে। এখন লাইট লাগানো হয়েছে এই দুর্গকে ঘিরে৷ বালাজিনগর গেলে রাস্তা থেকেই এই দুর্গ আপনি দেখতে পাবেন।

Sea Shore Temple

ভেলোরকে বলা হয় মন্দির শহর৷ এই জলকন্ডেশ্বর মন্দির ছাড়াও এখানকার আরো দুটি বিখ্যাত মন্দির হল কার্তিক মন্দির এবং শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ স্বর্ণমন্দির৷ রত্নগিরি পাহাড়ের ওপর ১৫০০ শতকে নির্মিত কার্তিক মন্দিরের আরেক নাম মুরুগান মন্দির। অপূর্ব স্থাপত্য ছাড়াও এই মন্দির শহরের ওয়াচ টাওয়ার হিসেবেও কাজ করে। এই মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে আপনি গোটা শহর দেখতে পাবেন। শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ গোল্ডেন টেম্পল থিরুপুরম শহরে অবস্থিত থিরুমালাইকড়ি পাহাড়ের নিচে। পনেরোশো কেজি সোনার পাত দিয়ে মোরা এই মন্দির। আমরা গিয়েছিলাম সন্ধ্যাবেলা ৷ অপূর্ব লাইটিং মন্দির ঘিরে। অনেকটা লম্বা রাস্তা আপনাকে এ মন্দির ঘিরে হাঁটতে হয়। গোটাটাই অপূর্ব স্থাপত্য দিয়ে সাজানো। মূল মন্দিরটি ছাড়াও ভেতরে অনেকগুলি ছোট মন্দিরও আছে । মন্দিরের ভেতরে আছে নিজস্ব স্যুভেনির-এর দোকান৷ কাফে৷ পূজার সামগ্রী বিক্রির দোকান। সেরকম পুরনো না হলেও গোটাটা মিলিয়ে ভালো লাগবে৷মেয়ের কাছে এলে আমরা প্রত্যেকবারই ভেলোরকে সেন্টার করে আশেপাশে কিছু ট্যুর প্রোগ্রাম করি। এবার সেই ট্যুর ছিল মহাবলীপুরমে৷ আপনি এখানে এক রাত্রি থেকে গেলেও পারবেন। আবার দিনাদিনি ঘুরেও যেতে পারবেন। রাতে যদি থাকেন অবশ্যই সমুদ্রের বিচ সংলগ্ন কোন রিসর্ট-এ থাকবেন। আমরা প্রথমে হোটেল তামিলনাড়ু বুক করলেও পরে মামাল্লা বিচ রিসর্ট-এর রুম নিয়েছিলাম।

হোটেল ভাড়া করবার সময় দেখে নেবেন প্রাইভেট বিচ আছে কিনা। ব্যালকনি বা ওপেন এয়ার রেস্টুরেন্ট থেকে সি বিচ দেখা যায় কিনা। মামাল্লা বিচ রিসর্ট-এ বিচ ওয়েডিং, কোম্পানি মিটিং ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। আছে নিজস্ব সুইমিং পুলও। দিনের বেলা মাহাবলিপুরমের সি শোর টেম্পল দেখবেন। দেখবেন পঞ্চরথ। দেখবেন লাইট হাউস। আর সন্ধের পর এসে রেস্টুরেন্টের বিচ চেয়ারে অথেন্টিক সাউথ ইন্ডিয়ান বা সি ফুড খেতে খেতে সাথে হালকা পানীয় বা কফি নিয়ে সমুদ্র দেখবেন সমুদ্রের হাওয়া খাবেন আর গর্জন শুনবেন। এটা সত্যিই একটা মেমোরেবল এক্সপেরিয়েন্স হতে পারে। মহাবলীপুরম যাবার পথেই আপনি পাবেন ক্রোকোডাইল পার্ক। সাথে কাঁচা বাচ্চা থাকলে আমার যেমন ছিল ঘুরে দেখবেন এটা। বিভিন্ন রকমের কুমির ঘড়িয়াল ছাড়া সাপ গিরগিটি বিভিন্ন সরীসৃপ কচ্ছপের বাসস্থান এই পার্ক। এখান থেকে বেরিয়ে রাস্তার দুই ধারে সমুদ্র আর খারি দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন মহাবলীপুরমে।

সি শোর টেম্পলে টিকেট কেটে ভেতরের মন্দির দেখে চলে যেতে পারেন সংলগ্ন সি বিচে৷ পা ভেজাবেন স্নান করবেন ঘোড়ায় চড়বেন আইসক্রিম খাবেন টুকটাক স্যুভেনির কিনবেন। তারপর চলে আসবেন পঞ্চরথ দেখতে। পাঁচটা মন্দির। রথের আদলে পরপর সাজানো। আর আমার দেখে মনে হয়েছিল ঘোড়া নয় সিংহ টানছে সেই রথ। মহাবলিপুরমের অধিকাংশ স্থাপত্যই মহাভারতের অনুষঙ্গে। ছোট ছোট পাহাড় বা বড় বড় পাথর কেটে গড়ে উঠেছে এক একটা মন্দির। আছে শতবর্ষ পুরোনো লাইট হাউস পরে তৈরী আবার পল্লব রাজ বংশের তৈরি পাহাড়ের মাথায় তেলের প্রদীপ-জ্বালা ন্যাচারাল লাইট হাউস। যার মাথায় চড়ে আপনি দেখতে পাবেন দূরে সমুদ্র থেকে সি শোর টেম্পল থেকে শুরু করে একটা বিশাল রেডিয়াসে আরো অনেক মন্দির এবং জনপদ। ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত ওলাকানেশ্বর মন্দির ভারতের সর্বপ্রাচীন লাইট-হাউস৷ ওই অঞ্চলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় নির্মিত গুহার ওপর একটি শিবের মন্দির যেমন আছে তেমনি আছে তার দেড় ফুট উপরে পাথর নির্মিত বিশাল প্রদীপ যেটিতে তেল দিয়ে একসময় সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বেলে দেওয়া হত৷ যা দূরদূরান্ত থেকে সমুদ্রে পথ হারানো নাবিকদের পথ চেনাতো৷ পরবর্তীকালে পাশেই পাথর দিয়ে ১৮৮৩ সালে মনুষ্য নির্মিত লাইট-হাউসটি তৈরি হয়। এটি ১৯০৪ সাল থেকে কাজ করছে। মহাবলিপুরমের সেই সি শোর টেম্পলে ঢোকার মুখে আপনি যে টিকেট করবেন সেই টিকিটটি ফেলবেন না। কারণ ওলাকানেশ্বর মন্দির এবং লাইট-হাউসে ঢোকার মুখে ওই টিকেটটি আবার দেখতে চায়। আমাদের টিকেটটি হারিয়ে যাওয়ায় ঢোকার মুখে গার্ড আমাদের চারজনের একসাথে নেওয়া ফটোগ্রাফ দেখতে চাইল৷ এবার মানুষের তৈরি লাইট-হাউসে ঢোকার মুখে আবার দশ টাকা করে পার হেড টিকেট লাগে। লাইট-হাউসের একদম শেষ ধাপের সিঁড়িগুলি অত্যন্ত খাড়া এবং স্বাভাবিক কারণেই অপরিসর। একজন একজন করে উঠতে নামতে হয়। তবে একবার যদি কষ্ট করে উঠে পড়তে পারেন মনে হবে স্বর্গে এসেছেন। ইউনেস্কো মাহাবলিপুরমকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়েছে।

ভেলোর থেকে মহাবলীপুরম যেতে ছোট গাড়িতে চার সাড়ে চার ঘন্টা লাগে। মহাবলিপুরম থেকে ফেরার পথে চলে আসুন কোভালাম বিচ। জেলেরা এখানে নৌকোয় মাছ ধরে এনে সমুদ্র তীরেই নৌকোয় বসে বিক্রি করে মাছ কেটে দেয়। এখান থেকে সূর্যাস্ত খুবই মনোরম। রঙিন জেলে নৌকোর সারিও ভালো লাগবে। তারপর আসবেন চেন্নাইয়ের মেরিন একুরিয়ামে। ৭০০ টাকা করে এন্ট্রি ফি। তবে বাচ্চাদের অবশ্যই খুব ভালো লাগবে। ট্রপিক্যাল ম্যানগ্রোভ কোস্টাল বিভিন্ন রিজিয়নের ফ্লোরা ফণা ইত্যাদি যেমন আছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড-এর মাধ্যমে তেমনি বড় বড় কাচের একুরিয়ামে আছে মাছ আছে গভীর সমুদ্রে প্রাপ্ত স্টিং রে শার্ক হোয়েল এইসব। আমার মেয়েরা তো খুবই উপভোগ করেছে এই গোটা ট্যুর। ভেলোর থেকে মহাবলীপুরাম যেহেতু চেন্নাই-এর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হবে হাতে একটু বেশি সময় রাখবেন। কারণ বিকেল পেরোলেই চেন্নাইয়ে শুরু হবে জ্যাম। পথ চলতি কাফেগুলোতে স্যান্ডউইচ বার্গার দোসা ইডলি চা কফি জুস কেক খুব ভালো মানের পাওয়া যায়। ভাতের নেশা না থাকলে খুব কষ্ট হওয়ার কথা নয় খাবার দাবার নিয়ে। সাউথের টিপিকাল বিরিয়ানি আমাদের বাঙালি বিরিয়ানির মত নয়৷ চাল আলাদা। আমাদের মত বাসমতি রাইস দিয়ে ওরা বিরিয়ানি বানায় না। তাছাড়া মাংস রান্না করতে চেট্টিনাড মসলা ব্যবহার হয়। সাথে কারি পাতা নারকেল দই বেগুন টমেটো পেঁয়াজ ইত্যাদির বহুল ব্যবহারের জন্য ওদের রান্নায় একটা আলাদা ফ্লেভার আসে। আপনি যদি চঞ্চল, সুদূরের পিয়াসী এবং নতুনের অভিলাষী হন বিনা মন্তব্যে ভালোই কাটবে আপনার সময়।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ | Sharmistha Ghosh

Bengali Article 2023 | এক নিভৃত কবির উচ্চারণ : সপ্রসঙ্গ কবি দীপক হালদার

Traditional Seth Family Durga Puja | চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী হরিহর শেঠ পরিবারের দুর্গাপূজা

Bengali Article 2023 | সুভাষচন্দ্রের আত্মজীবনীঃ বিভিন্ন মনীষী প্রসঙ্গ

New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩

Most Touching History | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Most Touching History | Pdf Most Touching History | Most Touching History App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Most Touching History 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Most Touching History Video | Story – Most Touching History | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Most Touching History Netflix | Audio Story – Most Touching History | Video Story – Most Touching History | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent story Most Touching History | Top Story Most Touching History | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Most Touching History Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Most Touching History mp4 | Most Touching History Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Most Touching History

1 thought on “Most Touching History | Best Bengali Travelogue 2023”

Leave a Comment