Read Online Bangla Galpo – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ – সূচিপত্র
যাবতীয় জমাট মেঘ – মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
১
আবেদালী পিয়নের দু-চোখকে পাশ কাটাতে পারলো না অর্জন। ওর আজকাল ম্যুড টলে যায় একটুতেই। ওপরের চাপ। ফাইল-পত্তর সচল থাকে।আগে পৌরসভার ডাস্টবিনের মতো অবস্থা হতো। আবেদালী এখন অর্জনের কাছের মানুষ। সূর্যটা গড়িয়ে গড়িয়ে মাথার ওপরে উঠে আসাতে পেটের ভেতরে অবরোধ, হরতালের আবহ সারা গায়ে টের পাচ্ছিল সবাই। যে যেদিকে পারে ছোটে। আবেদালীর ব্যাগে রেশন, ও, এম, ওস এর অবদান — পেঁয়াজ, তেল, ডাল, চিনিতে সংসার। টিফিনবাক্সে ডাল, আলুভাজি কিংবা ভর্তা, কমন। বাইরের খাবার কম খেলেই ভালো। বাইরের ভাজি ভর্তা স্বাস্থ্য-বান্ধব নয়। প্রেসার, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিসের বাড়াবাড়ি, আরও ডাক্তারের চশমা। ওপর দিয়ে তাকানোর নিখুঁত ভঙ্গিমা ডাক্তারের। এটা খাবেন না। ওভাবে হাঁটবেন। একদিন অসুস্থতা, একদিন ছুটি, আরও এটা কাটা, সেটা কাটা। দায়িত্বে অবহেলার শত শত অভিযোগ।
মোটা, পেটিদের বেলা রাখঢাক কম। ফাস্টফুড, রসমালাই, ফুচকা, চটপটি, কাবাবের চেহারা মনে হলো মানেই ওগুলোতে হামলে পড়া।বিয়ে,আকিকা, জন্মদিনের বারবিকিউ, ডিশ রসনায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলছে।ঘন ঘন হাসপাতাল, প্রেসক্রিপশন, ডায়েট, টেস্ট-ফেস্ট — নিত্যকার বিষয়গুলো বিব্রতকর। আর এসব জায়গা যেন আগে থেকেই সব জানে।
আবেদালীর হাতে একশো টাকার নোট দিয়ে অর্জন বলল, তোমার বাচ্চা মুগডাল ভাজা পছন্দ করে। কিনে দিও।
— কিন্তু স্যার আজ সকালেও একশো টাকা দিছেন।
— তাই নাকি?
স্যারের এরকম অবস্থা প্রায়ই হচ্ছে, এটা আবেদালীর চোখে পড়ে। ক্যালেণ্ডারেও আজ বুধবার। অথচ আজ কি তাহলে বৃহস্পতিবার ভেবে বসে আছেন?
বৃহস্পতিবার বাড়ি যাবার তাড়া থাকে সবারই। শুক্র, শনির গ্যাপিং-এ কত রকমের রিল্যাক্স — ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, রিইউনিয়ন, কালচারাল্ কর্মসূচি। বাসজার্নির চাইতে ট্রেনটা চয়েস। ঝাঁকুনি নেই। আয়েসের ঘুম ঘুমিয়ে নেয়া যায়। বাথরুম প্রব্লেম নেই। মুশকিল হলো, ট্রেনের টাইমটেবিল মাঝেমধ্যে ঝামেলা পাকায়। কখনো সময় মেইনটেইন হয় না। কোনো সময় সেই যে স্টেশনে দাঁড়াবে, আছে তো আছেই। ছাড়ার নাম নেই। এগারোটা, বারোটা, একটা, জোহরের আজান। রেললাইনের রেখা ধরে দূরে বহুদূরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ব্যথা করে যাত্রীদের। যেন লম্বা ইনিংসের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।এদিককার ট্রেন থামিয়ে পর পর দুটো ট্রেন ক্রসিং হলো। মানুষের জীবনে সময়ের কি কোনো মূল্যই নেই!
স্যার সিএনজিতে যাবেন — এটা শুনে আবেদালী একটু ইতস্তত করে। এগুলো আজকাল আজরাইল। চালকের ড্রাইভিং কাগজপত্র নেই, মাদকাসক্ত, চলতি পথে মোবাইলে কানে কাঁধ চেপে যখন খুশি কথা বলছে, অতিরিক্ত গতি, রাখঢাক নেই। যখন খুশি স্পিড বাড়ায়, সাইড ক্রস করে, ওভারটেক করে, টার্ন নেয়। যাত্রী যদি মহিলা হয় তাতে তার “পাঠ মারা” একটু বেড়ে যায়। কিন্তু সিএনজি কী দোষ করলো, এক্সিডেন্ট তো বাকিগুলাও করে।
স্যার, এইটা একটু পাগলা ঘোড়ার মতন। এ-ই বিষয়টি অর্জনের মাথায় স্যালাইন বানানোর মতো ঘুঁটা দিয়ে গেলো। আজকের বুধবারে স্যার বাড়ি যাবার জন্য কেন সিএনজি ডেকে দিতে বলবেন? স্যার তো সবসময় বিকেলের ট্রেনের কথা বলেন। তারপরও ওনার সাথে সম্পর্কটা এমন জায়গায় আছে, এরকম প্রশ্ন করার পরিস্থিতি অনুকূল ছিলো। স্যার, আজকে কি সিএনজিতে যাবেন? — বাড়ি যাবেন? নাকি অন্য কোথাও —-।
ফিরতি জবাবটাও দিয়েও আবেদালীর ওপর অফিসার থেকে চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত সবার আন্তরিক শুভেচ্ছা পেতে থাকে। এ-ই দিনে অর্জন স্যার আবেদালীকে দিয়ে কোকোলা ন্যুডলস, বলগাম, টুথপেস্ট, ডিমের বাস্কেট, বেডশিট, কনডেন্স মিল্ক, বেডশিট কিনিয়ে নেয়। ওগুলো স্যারের ব্যাগে ভরার সময় হঠাৎ এতসব জিনিসের ভেতর থেকে একটা প্যাকেট পড়ে যায় আবেদালীর পকেট থেকে। আবেদালী গালভরা হাসি— হাসিতে জবাবদিহিতা–
— স্যার, এইগুলা আপনের বৌমার ব্লাউজের হুক।
স্যার এবার চাপা ক্ষোভ সম্বরণ করে নিজ পকেটে আবারো হাত দিয়ে একটা কিছু বের করেন। এবারও টাকা। তিনশো।
— ধরো, বৌটার জন্য ব্লাউজ কিনে নিও। মিয়া, বৌ মানুষের খোঁজ খবর নিও। নাম্বার জানো তো?
আবেদালী কৌশলে নিজেকে গোপন করতে চায়। ব্যাগের ভেতর থেকে এবার বেরুলো কঁচি শুকনো বেলের টুকরো।
— কার ডিসেন্ট্রি আবার?
স্যারের এ-ই প্রশ্নটাও এড়িয়ে চলার চেষ্টা চলে কিছুক্ষণ। আবেদালী বললো, স্যার বাড়িতে আমার প্রতিবেশী নিপুন ভাই। গ্যাসের সমস্যা। বেলগুলো পানিতে সিদ্ধ করে খায়।মফস্বলের বাজারেএগুলা নাই।
— এনেছো যখন কয়েকটা টুকরা রেখে দাও আমার জন্য।
স্যার কিছু চাইলে আবেদালীর ভালো লাগে। সে অনেকগুলো টুকরো স্যারের হাতে দিয়ে নিজে বেরিয়ে এসেছে।
২
মৌরীদের বাড়িতে আজ-কাল গানের আসর বসে না। বসাতে দেয়না কেউ হয়তো। হারমোনিয়াম, তবলার জোড়া নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এবার ফাটতে শুরু করেছে। হারমোনিয়ামোর রিডগুলো বেসুরো হতে শুরু করেছে। ভেতরে ঘুণ পোকা বংশের নবায়ন চলছে। অথচ মৌরীদের বাড়ি মানেই গানের প্র্যাকটিস, বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং একটা সময়ের পারফেক্ট ছবি। এ বাড়ির সুবোধ মেধাবী ছেলেটা থাইল্যান্ড গেলো। টাকা দিয়ে বাড়ি সাজালো। আর মাধব,মোহন্তরা ব্যাংকার হলো।কেউ কলেজে শিক্ষক। ওসব বাদ্য-টাদ্য দিয়ে কী হবে?
ব্যস। হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার, পিয়ানো, পেটড্রাম, সব এখন আড়াঙ্গীতে ঘুমাচ্ছে অঘোরে। ওগুলো এখন স্যাম্পল মাত্র।
এবাড়ির প্রাণবন্ত সঙ্গীতশিল্পী তমালিকার সিজারিয়ান বেবি। বড় হয়ে এখন কলেজে। কমার্সে পড়ে। সাইন্স পড়ে পড়ে বুড়ো হলে লাভ নেই। কবে যে বিসিএস ক্যাডার হবে, তার নাই ঠিক। কপালে না থাকলে টিউটরী নিয়ে সারাজীবন। তারচে বরং বিবিএ, এমবিএ পড়ে ব্যাংকে কপাল লাগাও। লেখাপড়া মোটামুটি পারলে আর্মিতে। আর্মিতে ভালো পর্যায়ে ভালো সবই। মান-মর্যাদা, স্টেটাস। জনগণও রাস্তায় হিসেব করে কথা বলে। মনে হচ্ছে সকলেই এইরকম একটা ধারণার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। মৌরীও তাই চাকরিতে। কিন্তু সঙ্গীতের সুর তাকে মোহাবিষ্ট রাখে। আটকে থাকে হারমোনিয়াম, তবলার সুর, তালে। মনটা দোয়েল পাখির মতো নাচে, মাছরাঙার মতো শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেলায় অবেলায়। একটু গানের টিউশনিও করে অফিস থেকে ফেরার পথে।
শিষ্যটির মা নেই। বাবা আছেন। বিকেলের হলুদ মুছে আকাশে কমলা ছাপিয়ে কালি পড়ে। সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।গান তো ত্রিশ মিনিট।রাত আটটায় বাবা ফিরে আসা অব্দি গল্প আর গল্প। মৌরীর মুখে গল্প শুনে শুনে ছেলেটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। শুধুই আবদার, ম্যাম গল্প বলেন, ম্যাম আর পড়বো না। গল্প একটা—–।
আটটায় শিষ্যটির বাবা বাড়ির গেইটে নক করে। মৌরী দরজা খুলে দেয়। ওনার হাতে ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিয়ে ছুটি। বাসায় ফিরতে না ফিরতে শাশুড়ির ডাক।একটু আগেই শাশুড়ি আর ছেলেতে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। মৌরী চাকরি করে, আবার টিউশনি কেন। তাও আবার গানের। ওসব গান-ফানের কোনো ভবিষ্যৎ আছে? সারাদিন অফিসে পড়ে থাকে, কোথায় বাড়ি ফিরে স্বামী, শাশুড়ির খেদমত করবে, তা–না। আবার গানে মজে গেছে! ‘মজে যাওয়া’ শব্দের কারণে ঝগড়ার পালে বাতাস লাগে। শেষ হলো বৃষ্টি দিয়ে। রুমে ঢুকে মৌরী দরজা বন্ধ করে।
বাসায় অর্জন ঢোকার পরে আরও এক দফা ধূলিঝড়। আর ঝড়ো সংলাপের পাঁয়তারা। পরদিন যথারীতি যে যার মতো বাথরুম, শাওয়ার, ডাইনিং। তারপর বাস। সিএনজি। ট্রেন। নানান চিন্তালব্ধ জাল একটা গেরোতে ছিলো। তারপর আবার ছিটকে পড়া। ঠিক একোয়ারিয়ামের ভয় পাওয়া মাছের মতো। তবে আজকে অর্জনের একটু পূর্বাভাস — টিউশনিতে সময় কমিয়ে দাও। চাকরিই তো এনাফ। তুমিও করছো আমিও করছি। কোনো অর্থনৈতিক সংকট তো নেই। কিছুই বললো না মৌরী। শিষ্যের টানা টানা চোখ, শিশুসুলভ কথাবার্তা, ওর অমায়িক বাবার গোছানো আলাপ বেশ।কেবল শুনতেই ইচ্ছে করে।
৩
অর্জনকে ডেকে পাঠালেন বস। আবেদালী খবরটা দিয়ে গেলো। ডেকে পাঠানোর কারণটা আবেদালী বলতে পারেনি। ওনার রুমে গিয়ে একটু হোঁচটই খেলো সে।
— মৌরী এখানে!
— অবাক হবার কিছু নেই।
— এর আগেও তোমার অফিসে আমি এসেছি কয়েকবার।
— তাতো বটেই।
— কিন্তু আজকে মনে হলো ভূত দেখেছো —? কোনো প্রবলেম?
আমি বলছি–। বস কথাটা কেড়ে নিলেন — উনি মৌরী। শুনেছি ভালো গান করেন। বেশ ভালো ওস্তাদ।আমার বন্ধু তালাত বলেছে। ওনার ছেলেটিকে ওনি শেখান। বাসায় আমার ছেলেটাকেও গান শেখাবে। আবেদালীই আলাপ করিয়ে দিলো। একজন ভালো ওস্তাদকে পেয়ে আমার ছেলেও বেশ খুশি।
আবেদালী দূর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। সব কিছু বুঝি ফাঁস। এবার রক্ষা নেই।
— না না। আমি পুষিয়ে দেব।
অর্জনের এ-ই মুহূর্তে এমন জটিলতার সামনে সে নিজে থ-মেরে আছে। গানের টিউশনি এমনকি গানটাও বাদ দিতে হবে, এমনই সিদ্ধান্ত ছিলো সংসারে।
— এমুহূর্তে এটি একটি জটিল ত্রিমুখী মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
ঠিক আছে আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।– বসের কথাটা আরেকটু বিরক্তিকর লাগলো। আপাতত মৌরীর গান বিষয়ক আলোচনার সমাপ্তি টেনে বস বেরিয়ে গেছেন। অর্জন নিজের ভেতরে একটু একটু করে গুমোট আবহাওয়া টের পায়।
বাসায় জলদী এসো, কথা আছে। — মৌরীকে ফোনে এমনটাই বললো অর্জন।
বিকেলে চায়ের টেবিলটা যতটা প্রাণবন্ত লাগছিলো, তারচে বেশি মনের করিডোরে ঘোলাটে নহরে প্লাবিত ছিল। বাতাসের ঝাপটায় বার বার মশালটা নিভে যায়। একদিকে বাসায় গান না করা সংক্রান্ত কম্পাস কাঁটার হিসাব। আরেকদিকে অর্জনে বসের বাসায় ছেলেটাকে গান শেখানো।
রাত হয়ে যায় বাসায় ফিরতে ফিরতে। শ্বশুরের রুটি, ভাজি, শাশুড়ির গরম পানি, বিছানার চাদর, বাথরুমের পরিচর্যা –কাজের শেষ নেই। আটটার মধ্যে ইনস্যুলিন নিয়ে খাওয়াতে হবে। তার আগে ব্লাডসুগার মাপা। যেন সেনাবাহিনীর ট্রেনিং। একটা সময় সব থিতিয়ে যায়। সব রুটিন এলোমেলো হয়ে যায়। কেউ কারো জন্য সময় করতে পারছে না। দুই বৃদ্ধ যুগলের আহাজারি অর্জনের জন্য দুঃসময় দুঃসময় লাগে। ওপর থেকে টিম আসে। অর্জন বদলী হয়ে যায়। সিলেট। মৌরী, ওর বাচ্চা, শ্বশুর, শাশুড়ি নিয়ে থেকে যায়। আবেদালী তাকে নানান দিকে হেল্প করে। বাসার বাজার টাজারও করে দেয়।
ওদিকে বসের ছেলেটাকে নিয়ে মৌরীর জেলাসদরে নিয়ে যেতে হয়। বাড়তি প্রশিক্ষণ, কম্পিটিশন, মাতৃহীন বালকটির জন্য সময় বের করা। স্কুলে নিয়ে যাওয়া। মৌরীদের বাসায় রুমের চেয়ার, টেবিলের গেট আপ বদলে গেছে। সুন্দর একটা টিপটপ রুম হয়েছে। ফার্নিচারগুলোর ডিজাইন নিয়ে অর্জন সিলেট থেকে প্রশংসা করে। গানের বাড়তি টিউশনি’র জন্য শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কাজের বুয়া রেখে দেয়। ওনাদের আগের যেসব সমস্যা হতো, সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। ওনাদের বাড়তি আর অভিযোগ নেই। বসের ছেলেটা জেলা থেকে বিভাগে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। খবরটা অর্জনকে ব্যাপক আগ্রহ জোগালো। বস মৌরীকে লংড্রাইভ, শহরের বড় বড় হোটেল, ভিজিটিং এরিয়াতে সময় কাটানো, শপিংয়ের প্রপোজাল দেন।
মৌরী অর্জনকে ফোন দেয়। শ্বশুর শাশুড়ির কথা ভাবে। ওনারা দুজনেই বলেন, যাও, এটা তোমার নিজস্ব ব্যাপার। অর্জন বললো, যাও। একটু পরিশ্রমের পাশাপাশি রিক্রিয়েশন দরকার আছে।
— কিন্তু, আমার আসলে ওনার সাথে কক্সবাজার যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
— কেন নয়?
মৌরী মনে মনে অনেক কিছুই ভাবে। শেষবারের মতো ফোন করে — আমাকে কি বসের সাথে যেতে বলছো?
— হ্যাঁ। বলছি।
— ঠিক বলছোতো?
— হ্যাঁ।
৪
কক্সবাজার।সী-বীচ। বার্মিজ মার্কেট। মোটেল আর সমুদ্র। বসের ছেলেটাকে নিয়ে ভেজা বালুতে আঁকিবুঁকি, কোমরপানিতে নেমে ফটোসেশান, শৈবাল-শামুক-কড়ি-তারামাছের সাথে তিন-চারটা দিন। বস পানিতে নামেন না। ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা। দূরে বসে ছেলেটার আনন্দের গভীরতার সাথে সমুদ্রের মিল খুঁজে পান। আজকের যৌথ আনন্দের সাথে তার মনে পড়ে ছেলেটার মা, দিয়াকে। আজ থেকে ছ’সাত বছর আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। সেদিন জন্মদিন ছিল ছেলের। এমনি করে দিয়া’ও এসেছিল সমুদ্রের পাড়ে। ফেরার পথে দিয়াকে থেঁতলে দিয়েছে ঘাতক ট্রাক।
— স্যার,আপনি সমুদ্রে নামবেন না?
— না। আমার কোল্ড এলার্জি।
— আরে কী-যে বলেন। কিচ্ছু হবে না। এতদূর ছেলেটাকে নিয়ে আসলেন।
আব্বু তুমিও আসো।– ছেলেটার আবারও আবদার।
— না বাবা। আমার ইচ্ছে করছে না। তোমার ওস্তাদ আন্টি আছে তো সাথে। তুমি ওনার সাথে সমুদ্রে খেলা করো। দেখো বেশী দূরে যেওনা।ডুবে যাবে। আমি বরং এখানে বসে বসে তোমাদের খেলা দেখি।
— না,আব্বু। আসোই না।
ছেলেটা বাবার দিকে ভেজা বালু ছুঁড়ে মেরে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে। একরকম টেনে হিঁচড়ে ওর বাবাকে পানিতে নামায়। ওরা তিনজনে হাত ধরাধরি করে পানিতে কিছুটা সময় কাটায়। জল ছিটিয়ে একে অপরের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। পড়ো পড়ো মৌরীকে জাপটে ধরেন বস। নিজেকে সামলে বস বলেন– সরি, না ধরলে ডুবে যেতেন। প্রচুর লবণ জল গিলতে হতো—- ঠিক? মৌরী, বস, আর ছেলেটা একযোগে হেসে জায়গাটা ব্যস্ত করে তুলেছে।
অগোচরে সমুদ্রের জল বেড়ে চলেছে। এতো আনন্দের সামনে জোয়ারের পানিতে শরীর গলা অব্দি ডুবে গেছে। আজকের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের সামনে জোয়ার যেন তুচ্ছ। হঠাৎই পানির টান শুরু হয়ে গেছে। পায়ের নীচে বালু সরে যাচ্ছে। টালমাটাল মৌরি ভেসে যাচ্ছে। চিৎকার করছে। খক খক কাশি আর অস্ফুট চিৎকারগুলো সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে। ছেলেটাকে বস তটে কোনোমতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সমুদ্রে। বিশাল সমুদ্রের বিশাল ঢেউ, আর ভাটার প্রচণ্ড টানের সাথে তীব্র লড়াই করে যাচ্ছেন। অবশেষে মৌরীকে তীরে তুললেন। ভিজে বালির ওপর নিথর, শীতল হয়ে আসা শরীর মৌরীর। এলোমেলো বস্ত্রহীন। নোনাজল ভর্তি পেট থেকে চাপ দিয়ে পানি বেরুলো খানিকটা। নিঃশ্বাস যেন পড়ছে না। ছেলেটা হাউমাউ করে চিৎকার করছে। মানুষজনের ভীড় জমে গেছে। কী করবেন সেই মুহূর্তে বসের মাথাটা নিষ্ক্রিয় মনে হচ্ছে। কয়েকজন উদ্ধারকর্মী এসে মৌরীকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দিয়েছে। গাড়িতে মৌরীর ফোনটা বেজে উঠেছে। অর্জনের ফোন।
— কী বলবেন এবার বস?
হ্যালো মৌরী — কী অবস্থা? সব ঠিক তো, কোনো সমস্যা নেই তো? হ্যালো, কথা বলছো না কেন মৌরী?
বস ফোন ধরে কাঁপছেন। শরীরটা হিম হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় ঢোক গিলছেন।
হ্যালো —-
অর্জনের এবারের শব্দটার মাত্রা তীব্র অনুভব হলো। দাও, আমি কথা বলি—- ছেলেটা ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,
— আংকেল, আন্টির খুব বিপদ। তুমি তাড়াতাড়ি কক্সবাজার চলে এসো —।
অর্জনের ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেল। বস আবার ফোন ব্যাক করলেন। ফোন বন্ধ। সব মিলিয়ে আটাত্তরটি কল মিস। এম্বুলেন্স ছুটে চলেছে উল্কার মতো। সারাদিনের হাসফাঁসানো অবস্থা। দমবন্ধ করার মতো ভয়াল সংকট মাথায় নিয়ে মৌরীর আধমরা ঠাণ্ডা শরীর অক্সিজেন, স্যালাইন নিয়ে ঢাকার দিকে ছুটে চলেছে এম্বুলেন্স। উৎকন্ঠার সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়ুচ্ছে অনিশ্চিত জীবন। আজ মনে হয় মিগ-২৯ বিমানও হেরে যাবে এম্বুলেন্সের কাছে।
৫
দু’চারদিন হয়ে গেলো, অর্জনের ফোনে কলটাই ঢুকছে না। মৌরীর অবস্থা একটু একটু ভালোর দিকে। ছেলেটার গোমরা মুখটাতে একটু ফিনকি দেয়া হৈমন্তী রোদের আনাগোনা। বস নিজেও স্বস্তি বোধ করছেন। নিজের প্রতি রাগও হচ্ছে। অনুশোচনা ভীড় করছে ভীষণ। বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা আজ সব ভীমরুলের মতো লাগছে। সকালের নাস্তা দিয়ে গেছে ওয়ার্ডবয়। ডাক্তার আসবে দশটার রাউণ্ডে। বসের কথামতো নার্সিংয়ের ঘাটতি নেই। পত্রিকার পাতায় চোখ পড়লো।
দুর্ঘটনায় একটা বাসের সবাই নিহত —
এ-ই হ্যাডিংটা তীব্রভাবে তাকিয়ে আছে বসের দিকে।
কয়েকজনের পরিচয় জানা যায়নি। একজনের ভোটার আইডি অনুযায়ী নাম, ঠিকানা পড়লেন বস— সিরাজুল ইসলাম অর্জন, কুলিয়ার চার, কিশোরগঞ্জ।
নামটি কয়েকবার পড়ার পরে আবারও একটা প্রচণ্ড ধাক্কা বসের মনের ভেতরে, সরাসরি কলিজায়। এ-ই ধাক্কার শক্তি বোঝা বড় দায়। মৌরীকে এটা জানানো ঠিক হবে কী না, তার কোনো পরিমাপ করতে পারছেন না বস। ছেলেটা মৌরীর পাশে বসে মোবাইল টেপাটেপি করছিল। হালকা ঘুমের আমেজে চোখ বুজে আছে মৌরী। কাউকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বস দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।
মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ | Md Shohidullah
19 types of Mashan Thakur | মাসান ঠাকুর | Ranabir Chanda
Bibarna 2023 | New Bengali Story | বিবর্ণ | শওকত নূর
2023 New Bengali Article | বাংলায় মুসলিম বিজয় ও বাংলা সাহিত্য
Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল
Read Online Bangla Galpo | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Read Online Bangla Galpo | Pdf Read Online Bangla Galpo | Read Online Bangla Galpo App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Read Online Bangla Galpo 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Read Online Bangla Galpo Video | Story – Read Online Bangla Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Read Online Bangla Galpo Netflix | Audio Story – Read Online Bangla Galpo | Video Story – Read Online Bangla Galpo | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent story Read Online Bangla Galpo | Top Story Read Online Bangla Galpo | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Read Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Read Online Bangla Galpo mp4 | Read Online Bangla Galpo Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Read Online Bangla Galpo