Government Charity Politics – Pradyut Palui
খয়রাতির রাজনীতি! – প্রদ্যোৎ পালুই
নগদে সাহায্য দিলে হতদরিদ্র মানুষের অনেকটা সুবিধা হয়। তারা একটু উন্নততর জীবনযাপন করতে চেষ্টা করে। একটু স্বাচ্ছন্দ্য পেলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আঙিনায় পাঠাতেও বেশি উদ্যোগী হয়। এবিষয়ে অনেকে সহমত পোষণ করেন। তাই অনেক অর্থনীতিবিদ দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য নগদ সাহায্যের প্রয়োজন আছে বলে স্বীকার করেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। তা মেনে নিয়েও ঢালাও অর্থ সাহায্যের বিষয়টি তিনি সমর্থন করেন নি। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে গত ১৭ই ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, “–কিন্তু এই প্রকল্প যখন নির্দিষ্ট কোন শ্রেণির কল্যাণে হয় না এবং কে বেশি দিতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়, সমস্যা তখনই। সেখান থেকে সরকারের আর্থিক সমস্যার সূচনা হয়।”
আমাদের দেশের কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদের বর্তমান উন্নয়ন ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এই সতর্কবাণী বাস্তবোচিত এবং সময়োচিত সন্দেহ নেই। কারণ তামিলনাড়ুতে একসময় জয়ললিতা জনগণের জন্য ব্যক্তিগত অনুদান প্রকল্প চালু করায় দেশজুড়ে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এখন রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সেই অনুদানের অগণিত প্রকল্প। ইতিমধ্যে দিল্লির আপ সরকার, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার-সহ বিভিন্ন রাজ্য একাধিক অনুদানভিত্তিক প্রকল্প ঘোষণা করে তার রূপায়ন শুরু করেছে। ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করে গত মে মাসে কর্ণাটক বিধানসভা এবং সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ঘোষিত অনুদান প্রকল্পের প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী এই মাত্রাহীন ব্যক্তিগত অনুদান ঘোষণাকে ‘রেউড়ি রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার ভেঙে পড়া অর্থনীতির উদাহরণ টেনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। সেই বক্তব্যে ভুল ছিল না। ক্ষমতা দখলের স্বার্থে বেপরোয়া অনুদান চালু করা আখেরে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশা ডেকে আনে। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাঁর দল বিজেপিও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনের প্রাক্কালে চটকদারি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শেষ পর্যন্ত অনুদানের রাজনীতির প্রতিযোগিতায় নেমে একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরেছে। ফলে ক্রমবর্ধমান অনুদানের রাজনীতি সারা দেশে ছড়য়ে পড়ছে। এর ফলে মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থান গুরুত্ব পাবার পরিবর্তে পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে। কারণ তাৎক্ষণিক লাভের কড়ি ঘরে তুলতে শাসক ব্যস্ত হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
অনুদান যখন প্রকৃত দরিদ্র শ্রেণির জন্য ঘোষিত না হয়ে সকলের জন্য ঘোষিত হয় তখন তা আর অনুদান থাকে না, হয়ে দাঁড়ায় ভোটের তাগিদে খয়রাতি। আমাদের মতো ভোটসর্বস্ব দেশে রাজনৈতিক দলগুলি ক্রমশ সেই খয়রাতির রাজনীতির দিকেই ঝুঁকে পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে কন্যাশ্রী, কৃষকবন্ধু, লক্ষ্মীর ভান্ডার, সবুজসাথী, দুর্গাপুজোর অনুদান প্রদান, ছাত্রদের ট্যাব প্রদান ইত্যাদি প্রকল্প ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য চালু করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরি করেন, সেইরকম আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের একমাত্র কন্যাও কন্যাশ্রীর জন্য অর্থ সাহায্য পাচ্ছে এবং এককালীন প্রাপ্ত অর্থ পেয়ে বাবা-মাকে তাঁদের জন্মদিনে মোবাইল ফোন উপহার দিচ্ছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবার কৃষক বন্ধুর টাকা পেয়ে সেভিংস সার্টিফিকেট কিনছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা জমিয়ে শাশুড়ি-বৌমা সোনার দোকানে যাচ্ছেন। নিজের সাইকেল থাকা সত্ত্বেও সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেল পেয়ে নিজেরটা বা সবুজসাথীর প্রাপ্ত সাইকেল বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রয়োজন না থাকায় ট্যাব না কিনে বিল জমা দিয়ে ট্যাবের অর্থ হস্তগত করা হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে এক পরিচিত শিক্ষক বলছিলেন, ট্যাবের টাকা পড়ে থাকায় তাঁদের স্কুলের এক ছাত্রীকে খবর পাঠানো হয়েছিল। বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে ট্যাব কিনে অর্থ সংগ্রহে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি। স্কুল থেকে চাপ দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত দোকানদারকে কিছু কমিশন দিয়ে মিথ্যা বিল সংগ্রহ করে তা স্কুলে জমা দিলে তার ট্যাবের অর্থ ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ধরণের সংখ্যাগুলো খুব কম নয়। অনেক বড় বাজেটের পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়া সমুদ্রে এক ঘটি জল ঢালার মতো ব্যাপার। এইসব বেনিফিসিয়ারিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া তেলা মাথায় তেল দেওয়ার সমতুল। তাতে সরকারের কোষাগার থেকে অহেতুক বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। ফলে বছর শেষে আর্থিক সঙ্কট বাড়ছে। সামাল দিতে ঋণ করতে হচ্ছে। বেড়ে চলেছে ঋণের বোঝা। এমন ঘটছে এবং ঘটবে জেনেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ব্যক্তিগত অনুদান দেওয়ার প্রতিযোগিতা সারা দেশে উত্তরোত্তর বাড়ছে। রাজন এই প্রবণতাতে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজন পুরানো পেনশন প্রথায় ফিরে যাওয়ারও যুক্তিসঙ্গত বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মতে, “পুরানো পেনশন প্রথায় ফিরে গিয়ে সরকারকে দেউলিয়া হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়ার কী প্রয়োজন?” একথা ঠিক যে, পেনশন এক ধরনের ভর্তুকি, যাতে কর্মচারীর কোন দায় থাকে না। উৎপাদনও কিছু থাকে না। অথচ অপ্রয়োজনীয় বিরাট আর্থিক দায়ভার বর্তায় সরকারের উপর। আর্থিক সঙ্কটের সময়ে সেই সঙ্কট সামাল দেওয়ার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন রাজ্য পুরানো পেনশন প্রথায় ফিরে যাচ্ছে। কোন কোন রাজনৈতিক দল পুরানো প্রথায় ফিরে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছে।
ক্ষমতার কুর্সি অর্জনের জন্য এমন আত্মঘাতী ঘোষণা দলমত নির্বিশেষে সারা দেশবাসীর কাছেই অশনিসঙ্কেত। বর্তমানে দেশে যেখানে ধনী গরীবের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির সিংহভাগ চলে যাচ্ছে ধনী এবং উচ্চবিত্তদের দখলে, তখন শুধুমাত্র দরিদ্র শ্রেণির উন্নতি ঘটাতে কিছু অনুদান প্রকল্প ঘোষণা এবং তার সফল রূপায়ন দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন ছিল। তাও সব দিনের জন্য হওয়া উচিত নয়। কারণ দরিদ্রকে অনুদান দেওয়ার মাধ্যমে যদি তাকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে আনার মতো সক্ষম করে তোলা না যায় তাহলে আর্থিক অনুদান চিরকাল চালিয়ে যেতে হবে। সেই পথ কখনও উন্নয়ন হতে পারে না। কিন্তু উন্নয়নের সংজ্ঞা এখন পালটে যাচ্ছে। কারণ ক্ষমতা অতি বিষম বস্তু। সেই ক্ষমতা দখলের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে অপ্রয়োজনীয় খরচ করতে শাসকের কোন দ্বিধা নেই। এমনকি মানুষকে অনুদান নির্ভর করে রেখে দলের অনুগামী করার ভাবনা বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বর্তমানে প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ‘সবার উপরে ক্ষমতা সত্য তাহার উপরে নাই’। এই আপ্তবাক্যে এখন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বিশ্বাসী। তাই যেন তেন প্রকারে ক্ষমতার দখল নিতে এখন সকল দলই তৎপর। সেই লক্ষ্যে চটজলদি অনুদান দিয়ে মানুষকে কাছে টেনে ক্ষমতায় টিকে থাকার এমন নীতিহীন প্রয়াস। তাতে দেশ এবং রাজ্য অধিক ঋণগ্রস্ত হলেও ক্ষতি নেই। তবে আশার কথা, এই কঠিন সময়ে সামাজিক প্রকল্প আর খয়রাতির মধ্যে বিভাজন রেখা টানতে সর্বোচ্চ আদালত সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা এবং বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে, যা এই দিশাহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও আলোর রেখা সন্দেহ নেই।
প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui
Bengali Language Interesting Facts | A Mori Bangla Bhasha
From the Myanmar Diaries | অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | 2023
Prem Sadhanar Nayika | প্রেম সাধনার নায়িকা : নানা আঙ্গিকে | New Article 2023
Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023
Bengali Government Charity Politics | Government Charity Politics in Bengal | Government Charity Politics PDF | Prajatantra Diwas Essay in Bengali | Republic Day | 75th Republic Day | 74th Republic Day | When is Republic Day in India | English Prajatantra Diwas | Republic Day 2024 | Republic Day in Hindi | Republic Day in English | Republic Day Speech | Republic Day Sale Amazon | Republic Day Quotes | Republic Day Flipkart Sale | Republic Day Drawing | Republic Day Sale | Republic Day Drawing Easy | Republic Day Meaning | 26th January Republic Day | Independence Day | independence day drawing | independence day speech | independence day 2024 | 15th August independence day | independence day quotes | independence day caste | 75th independence day | independence day India | independence day essay | Government Charity Politics | Bengali Article | Bengali Written Article | International Article | Article Writing Course | Academic Article Writing | Professional Article Writer | Government Charity Politics Video | Government Charity Politics Audio | Collection of Government Charity Politics | English Article Writing | Article Writing Job | Professional Writer | Republic Day Wikipedia | Government Charity Politics Ebook | Independence Day Wikipedia | Indian Government Charity Politics | Shabdodweep Indepence Day Essay | Shabdodweep Writer | Government Charity Politics MP4 | Article Factory | Freelance Article Writer | New Government Charity Politics