From the Myanmar Diaries | অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | 2023

Sharing Is Caring:

অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | পর্ব ১ | কুহেলী দাশগুপ্ত [From the Myanmar Diaries]

পিকুর চিৎকার শুনে কিচেন থেকে ছুটে যায় বনানী। বেডরুমে খাটের উল্টোদিকের দেয়ালের দিকে আঙুল দেখিয়ে ছেলেটা কেঁদে চলেছে। ওর পাশে শুয়ে থাকা টুকু আর চিনুও জেগে উঠেছে। বনানী ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। মনে হয় খুব ভয় পেয়েছে। চিনু, পিকু আর টুকু পিঠোপিঠি তিন ভাই বোন। বনানী বাংলাদেশ থেকে সুদূর বার্মা মুলুকে এসে পৌঁছেছিল বিয়ের পর। জাঁদরেল কত্তাটি বার্মা মিলিটারীর পদস্থ অফিসার। সৌরেন গুপ্ত। তাঁদের ঘরকন্নার চারটি বছরে পর পর তিনটি সন্তান। এ ঘটনা যখনকার, তখন বার্মা মায়ানমার হয়ে ওঠেনি। ম্যান্ডেলে ফোর্টে সেনাবাহিনীর অফিসারদের পরিবার সমেত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ম্যান্ডেলে ফোর্ট অনেকটা জায়গা জুড়ে। চারদিকে অসংখ্য তেঁতুল আর কৃষ্ণচূড়া গাছের জঙ্গল। তারই মাঝে মাঝে অফিসারদের কটেজ গুলি দূরত্ব রেখে অবস্থিত। ম্যান্ডেলে ফোর্ট এ অনেক গুলো ঘর অব্যবহৃত হয়ে থাকে। সন্ধ্যের পর থেকেই কেমন একটা গা ছমছমে অনুভূতি হয়!প্রথম দিন থেকেই বনানীর কেমন একটা গা ভারী হয়েছিল। সেকথা কত্তাকে জানিয়ে কোন লাভ হয়নি। উনি অ-শরীরী কিছু মানেন না। না ভূত, না ভগবান। চিরকালের বেপরোয়া মানুষটির কথা বনানী শাশুড়ি মায়ের কাছে জেনেছিল। সেনাবাহিনীর কাজে কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকতো না। কখনো মাঝরাতে কল এলেও সৌরেন বাবুকে বেড়িয়ে পড়তে হোত। বনানীর কাজে সহায়ক বাবুর্চি, হাউস কিপার সবাই সারাদিনের ডিউটি শেষ করে আউট হাউসে চলে যেত। দিনের বেলায় বাচ্চাদের সামলে কোথা দিয়ে যে সময় পার করে সন্ধ্যে নামতো! বাথরুম, টয়লেট সবটা বারান্দা পেরিয়ে যেতে হত। বনানী বাংলাদেশের চট্টগ্রামে গাঁ গঞ্জে বেড়ে উঠেছে। আনোয়ারা ওর বাপের বাড়ি। এক উঠোন ভর্তি লোকজন গিজগিজ করত সন্ধ্যের আসরে। আপন, তুতো সব ভাই বোনেরা সাথে কাকা কাকিমা। এখানে সবার কথা ভেবে মনমরা হয় বনানী। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। রাতের পরিবেশ টা মনে হয় বেশ দীর্ঘ। কাটতে চায়না কিছুতেই। কিছু বার্মিজ অফিসার পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছে। ওদের সংস্কার ও বিশেষ কিছু খাবার সম্পর্কে জেনেছে ও। বালা ছ, নাপ্পি, মঈঙ্গা, ওন্নো খাওসুয়ে। কিছু আইটেম বাবুর্চি মিয়াতের কাছে শিখে নিয়েছে। পিকুটা খেতে বড্ড ভালোবাসে। রাতের কাজগুলি সন্ধ্যের আগেই সেরে রাখতে চায় সে। বেডরুমের একপাশে হিটার রাখা আছে । রাতের খাবার তাতেই গরম করে নেয়। বারান্দার ওপাশে তেঁতুল গাছ আর কিছু বুনো ঝোপঝাড়। চিনু আর টুকু নিজের মতো ঘরে থাকলেও পিকু সবসময়ই মায়ের আঁচলধরা। বারান্দার একধারে বাথরুম আর রান্নাঘর পাশাপাশি। বনানী যদিও জানে ফোর্টের ভেতরে চোর ,বদমাশের ভয় নেই। ভয় তবু পিছু ছাড়ে না। গার্ডরা প্রাচীরের চারপাশে পাহারা দিয়ে চলে। সে তো বাংলো থেকে অনেকটা এগিয়ে যেতে হয়। ওদের হাউস কিপার খাইন সেদিন বলছিল, কয়েক বছর আগে ফাঁকা ঘরগুলোতে মৃত সৈনিকদের বডি রাখা থাকতো। পরে সময় মতো পরিবারের কাছে পাঠানো হত। শোনার পর থেকে বনানী আরো ভয় পেতে থাকে। ওর কেবল মনে হত, বন্ধ ঘরগুলিতে নানা রকম আওয়াজ হয়। কত্তাকে জানালে বলতেন,–

— দ্যাখো বিনু, অকারণে ভয় পাবে না। অনেককালের বন্ধ ঘর ছুঁচো, বেড়ালদের আস্তানা হতে পারে। তারা তো এদিক ওদিক ছুটতে পারে। তুমি ভয় পেয়ে বাচ্চাগুলোকেও ভীতু বানিয়ে রাখবে। যেখানটা ভয় লাগবে টর্চের আলো ফেলে কাছে গিয়ে সন্দেহ দূর করবে।

যতই বলুক, বনানী মনের ভয় কাটাতে পারে না। মৃত সৈন্যদের বডি ডাম্প করার গল্প করায়, খাইনকে সৌরেন খুব বকেছিল। আর হবে না এমন ভুল তার। ক্ষমা চেয়ে নেয় সে।
এক সন্ধ্যের পর মেয়েকে টয়লেটে নিয়ে যাচ্ছে। সেদিন কত্তা আবার অফিসার্স ক্লাবে। ফিরতে রাত হবে। বারান্দা পেরোনোর সময় বনানীর চোখ যায় পাশের তেঁতুল গাছে। দুটো লাল আলো জ্বলজ্বল করছে না! হঠাৎ যেন গাছ থেকে আগুনের ফুলকি ঝরে পড়ল। বনানী অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। পিকু কেঁদে ফেলল। চিনু আর টুকু অস্থির হয়ে ভেবে পাচ্ছিল না,কাকে ডাকবে! ওদের চেঁচামেচিতে দুজন গার্ড হয়তো শুনতে পেয়েছিল, তারা ছুটে এলো।

Myanmar Diaries

অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | পর্ব ২ | কুহেলী দাশগুপ্ত [From the Myanmar Diaries]

বনানীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার খবর সৌরেন বাবুর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। গার্ডরা অফিসার্স ক্লাবে খবর দিয়েছিল। ততক্ষণে আশেপাশের বাংলো থেকে অন্যান্য পরিবারের লোকজন জড়ো হয়েছে।
চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বনানীর জ্ঞান ফেরানো হয়েছে। দু’জন প্রতিবেশী মহিলা ওকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। সৌরেন আসার পর তারা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। ছেলে মেয়েরা তখনও ভয় পেয়ে আছে। সৌরেন এসে জানতে চায় কি হয়েছিল। চিনু যেটুকু বলতে পেরেছিল, তাতে বোঝা গেল বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় মা ভয় পেয়েছিল।

— বিনু, আবার তুমি মনে ভয় পুষে রাখছ! তোমায় না বলেছি সন্দেহ হলে টর্চের আলো ফেলে দেখবে! চলো তো দেখি, কি এমন দেখলে?

— না গো আমি আবার কেন? তেঁতুল গাছে কিছু ছিল। আমি স্পষ্ট দেখেছি। আর ওদিকটা যাব না।

— চলো,চলো। এই তোরা ও চল।

একরকম জোর করেই সবাই কে নিয়ে যান বারান্দায়। টর্চের আলো জ্বেলে দেখা গেল তেঁতুল গাছে বেশ বড় সাইজের একখানা প্যাঁচা ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে। চোখে আলো পড়াতে একটু বিরক্ত হোল বোধ হয়। ঘাড়টা চারপাশে একবার ঘুড়িয়ে নিলো। ওরা অবাক হয়ে দেখল।

— এই জন্যই বলি ভালো করে পরখ করতে। বলি,তুমি গাঁয়ের মেয়ে হয়ে প্যাঁচা দেখে ভয় পেলে! ছাড়ো, চলো বিশ্রাম নাও।

প্যাঁচা দেখে ছেলেমেয়েরা মজা পেলো। কিন্তু বনানীর সারা রাত ঘুম এলো না। একপাশ ফিরে জেগে ছিলো। বেশি নড়াচড়া করলে যদি কত্তা জেগে যান!অনেক কথা মনে আসছে। ও স্পষ্ট আগুনের ফুলকি দেখেছে। চিনু তখন বাথরুমের কাছে,তাই হয়তো লক্ষ্য করেনি। এ নিয়ে বেশি কথা আর বলবে না বনানী। সত্যিই তো, বাচ্চারা ও ভয় পেয়ে যাবে।

ম্যান্ডেলে ফোর্টে ওদের দিন কাটে নানা ব্যস্ততায়। বনানী ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাতে চেষ্টা করতো। এখানকার স্কুলে বার্মিজ ভাষার চর্চা হয়। চিনু, পিকু রা বাড়িতে ও নিজেদের মধ্যে এই ভাষায় কথা বলতো। বনানীর ভালো লাগতো না। বাঙালির সন্তান হয়ে বাংলা জানবে না! অক্ষর পরিচিতি শুরু হোল তাদের। বনানী যত্ন করে বাংলা শেখাতো ছেলেমেয়েদের। বাংলাদেশ থেকে আত্মীয়দের মাধ্যমে কিছু ছড়া আর গল্পের বই আনিয়েছিল। অবসরে ওদের পড়ে শোনাতো। পিকু, টুকুদের জন্য একজন বার্মিজ টিচার আসতেন। ভদ্রমহিলা খুব মিশুকে ছিলেন। অল্প স্বল্প হিন্দী জানতেন। বনানী হিন্দীতে অতটা সাবলীল না হলেও বুঝতো। বলার চেষ্টা করত। ওঁর নাম ছিল মিস জোয়া। ফোর্টের অনেক অফিসারদের বাচ্চাদের পড়াতেন। বনানীর খুব রান্নার শখ ছিল। জোয়া ম্যামকে ও বানিয়ে খাওয়াতো। দুজনের গল্পের মাঝে আবার এক মন খারাপ করা গল্প এসে পড়ে। দু’তিন টি কটেজের আগে একখানা খালি রয়েছে। ওটাতে কেউ থাকেনা। এক অফিসারের মিসেস গলায় দড়ি দিয়েছিল। নিঃসঙ্গ জীবন। স্বামী সময় দিতে পারতেন না। সন্তান হয়নি তাদের। স্বামীকে খুব সন্দেহ করত। প্রায়ই ঝামেলা হোত। একদিন অমন ঝগড়ার পর এই কান্ড ঘটিয়েছিল। বনানীর মনে আবার যেন ভয় জমে উঠলো। এ ব্যাপারে ও আর কাউকে কিচ্ছুটি বলল না। মাঝে মাঝে চমকে উঠতো। সৌরেন ফিরতে দেরি হলে ছেলেমেয়েদের শুইয়ে দিতো। নিজেও ঘুমিয়ে পড়তো কখনো।

এরকম একদিন রাতে কত্তার নাইট ডিউটি চলছে। বাচ্চাগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। বনানীর খুব জোর বেগ চেপেছে। একরকম দৌড়ে বারান্দা পেরিয়ে টয়লেট গেল। ফেরার সময় দ্যাখে বন্ধ ঘরের একটা দরজা দুম দুম আওয়াজ করে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। বনানী ঘামতে লাগলো। এক ছুটে ঘরের দিকে গেলো কোনদিকে না তাকিয়ে। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে সোজা নাকে মুখে চাদর চাপা। চাদরের নিচে ঘেমে অস্থির । তবুও মুখ বার করবে না। চারদিকে কোন হাওয়া বইছিল না। তবুও কিভাবে ওই বন্ধ ঘরের দরজা খোলা বন্ধ হচ্ছিল! যতই সৌরেন বলুক, অত সাহসী ও হতে পারবে না। ভোরের দিকে ওর চোখের পাতা ভারী হয়ে এলো।

আরেকদিন রাতে বনানী রান্নাঘরে কিছু কাজ সারতে সারতে জানালার দিকে চোখ যায়। বাইরের মৃদু আলোতে মনে হোল, একটা ছায়া সরে গেল। ও সব ফেলে এক ছুটে ঘরে যেতেই দেখে কত্তা ফিরেছে। বনানীকে ছুটতে দেখে সৌরেন ব্যাপার জানতে চায়। বলতে না চেয়ে ও ওকে বলতে হোল কত্তার ধমক খেয়ে। সৌরেন অমনি বাইরে গিয়ে গার্ডদের ডেকে নিয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখে এলো। কিছুই দেখতে পেলো না তারা। বনানী এবার যেন দমে গেল একটু। বার বার ও যা দেখছে বাকিরা কেন দেখতে পাচ্ছে না ! সৌরেনও একটু বিরক্ত। ওদের দ্বিতীয় সন্তান পিকু একটু ভিতু প্রকৃতির। রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে উঠে কান্না জুড়তো। কখনো সে বাবার ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যেত। বনানী ভাবতো হয়তো কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছে ! এই ফোর্টে ওর একদম ভালো লাগে না। ওর প্রতিবেশী এক বার্মিজ অফিসারের মিসেস বনানীর বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। ওর কাছে বনানী সামান্য বার্মিজ ভাষা ও শিখেছিল। থিরি ওর নাম। থিরিকে বনানী ওর অভিজ্ঞতার কথা জানালে, ও বলেছিল-

— আমরা মানি এখানে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে চলে। সবাই দ্যাখে এমনটা নয়। তবে আমরা ফয়া (বুদ্ধদেব)কে খুব মানি। উনি কাছে থাকলে তুমি সব বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। বাড়িতে ফয়াকে নিয়ে এসো।

বনানী এবার শ্বেত পাথরের বৌদ্ধ মূর্তি নিয়ে এলো । দোকানে কেনার সময় সৌরেন জিজ্ঞাসা করলে বলেছিল,

— এখানে সবাই খুব মানে ওনাকে। আমাদের কাছে ও থাক।

কাঁচ দিয়ে ঘেরা কাঠের বাক্সে ফয়া এলেন। বনানীর ঠাকুর সেবার সাথে উনিও সেবা পেতে লাগলেন।

অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | পর্ব ৩ | কুহেলী দাশগুপ্ত [From the Myanmar Diaries]

কিছুদিন পর সৌরেন গুপ্তের বদলি হয় ম্যামিও-তে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় পাহাড়ি জায়গা ম্যামিও-তে ওদের সময় গুলো ভালো কাটছিল। ওদের অনেক আত্মীয় পরিজন থাকতো এখানে। মাঝে মাঝে গেট টুগেদার হত। বনানীর ভয় পাওয়ার ব্যাপারও কেটে গিয়েছিল। বাড়ির চারপাশে বাগান করেছিল। সব্জির বাগান, ফুলের বাগান। মালি আসতো একজন । ভালো সময় যেন নিমেষে কেটে যায়। দু’বছর যেন দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছিল। জায়গাটা ওদের এতো পছন্দের ছিল, স্বাস্থ্যকরও বটে। আবার বদলি হল ম্যান্ডেলে। আগেকার কথা ভেবে এবার ফোর্টে নয়,ওরা একটা ভাড়া বাড়িতে উঠেছিল। কাঠের বাড়ি দেড়তলা। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেড়তলার ঘরখানি ভারি অদ্ভুত রকমের! একটা চৌকি বা সিঙ্গেল খাট তাতে ধরে যায়। কামরাটির সারা দেয়াল জুড়ে নানা রকম কালো হাতের ছাপ। কেউ যেন কালিতে হাত ডুবিয়ে দেয়ালে ছেপেছে! বনানীর মনে খটকা ছিল। সে কথা মেজাজি কত্তাকে বলার সাহস করতে পারেনি। প্রথম রাতে চিনু, পিকু আর টুকু ওই ঘরে থাকতে চাইলো। বনানী বারণ করলেও ওদের বাবা আবদার রেখেছিল। মাঝরাতে চিৎকার শুনে বনানীর ঘুম ভেঙে যায়। সৌরেন গভীর ঘুমে ছিল তাই টের পায়নি। পিকুর কান্না মনে হল! উঠে দেড়তলার সেই ঘরে গিয়ে দ্যাখে, পিকু খুব কাঁদছে। ওদের গায়ের কম্বল মাটিতে পড়েছিল। চিনু, টুকুও জেগে গিয়েছিল। পিকু কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, কেউ ওদের কম্বল টেনে বার বার ফেলে দিচ্ছিল। বাকি দু’জন অঘোরে ঘুমোচ্ছিল বলে টের পায়নি। তিনবার অমন হওয়াতে ও ভয় পেয়ে যায়। বনানী নিজেও টের পাচ্ছিল, এই ঘরে ঠান্ডা একটু বেশি মাত্রায় অনুভব হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে একতলার অন্য ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। শুধু বলে দিলো বাবাকে এসব নিয়ে কিছু না বলতে। সকালে সৌরেন ছেলেমেয়েদের নিচের ঘরে দেখে ব্যাপার জানতে চাইলে, বনানী বলেছিল

— ওই ঘরে পোকামাকড়ের উৎপাতে ওরা ঘুমোতে পারছিল না। তাই এই ঘরে চলে এসেছে। ম্যান্ডেলের এই বাড়িতে এসে, বনানী অনেক প্রতিবেশী পেয়েছিল। বেশিরভাগ বার্মিজ। সকলেই কখনো না কখনো জানতে চেয়েছে, এই বাড়ির খোঁজ ওরা কার কাছে পেয়েছে। কেউ কোন কারণ বলেনি। বনানীও জানতে চায়নি।

কিছুদিনের মধ্যেই এক অঘটন ঘটল। বনানী জামা কাপড় ইস্ত্রি করতে করতে হঠাৎ রান্নাঘরে কোন কাজে গিয়েছিল। এসে দেখে পিকু ইস্ত্রি হাতে আটকে। বনানী ভাবতে পারেনি কিভাবে কারেন্ট হল! বোকার মতো পিকুকে ছাড়াতে গিয়ে নিজেই আটকে গেল। চিনু মা, ভাইকে ওভাবে দেখে ছুটে টানাটানি করতে গিয়ে আটকাল। তারপর টুকু ও। ভাগ্যিস ঠিক ওই সময় সৌরেন আপিস থেকে ফিরল। ব্যাপার বুঝে একটা কাঠের লাঠি দিয়ে আঘাত করে সবকটাকে ছাড়ালো। সবাই ছিটকে মেঝেতে পড়ল। ম্যান্ডেলের সেই বাড়ির মেঝেও ছিল কাঠের। বনানী নির্বুদ্ধিতার জন্য বকুনি খেলো। সৌরেনের প্রায় নাইট শিফট থাকতো। বনানী বড় ঘরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুতো। যেদিন সৌরেন বাড়ি থাকতো, পিকুরা পাশের ঘরে ঘুমাতো। পিকু প্রায় দিন ঘুমের ঘোরে কাঁদতো। বনানী শুনতে পেলে ছুটে আসতো। একদিন সৌরেনেরও ঘুম ভেঙে গেলো। এসে দ্যাখে পিকু ঘুমে কেঁপে কেঁপে কাঁদছে। বনানী গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এসে ঠাটিয়ে চড় পিকুকে। ঘুম চোখে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো ছেলেটা আচমকা অমন চড় খেয়ে।

— এভাবেই মনের ভুত ভাগাতে হয়। চলে এসো বিনু।

— ওভাবে মারলে ওকে!ঘুমের ঘোরে হয়তো কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছে!

— তুমি আর সাফাই গাইতে এসো না। যদি মন চায়, এ ঘরে থাকো। আমার যেন ঘুমের ব্যাঘাত না হয়। সকালে ডিউটিতে যেতে হবে।

বনানী আর কথা না বাড়িয়ে পিকুদের সাথে শোয় সেই রাতটা। এরপর অদ্ভুত সব ঘটনা হতে থাকে। মাঝরাতে কখনো বাথরুমের কলে আপনি জল পড়ছে। কিছুদিন ধরে আরেকটা ব্যাপার হচ্ছিল, বনানী যে ঘরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুমাতো, মাঝরাতে কেউ ওদের গায়ের কম্বল টেনে নিতো। ঠান্ডা লাগলে, জেগে উঠে দেখতো মেঝেতে ওটা টান টান করে পাতা রয়েছে। এই ঘটনা পর পর হয়ে চলেছিল। ওরা রাতে ঘরের আলো আর নেভাতো না। সৌরেনকেও এই ব্যাপার জানায়নি।

The Myanmar Diary

অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | পর্ব ৪ | কুহেলী দাশগুপ্ত [From the Myanmar Diaries]

ম্যান্ডেলের বাড়িটিতে ভূতুড়ে ব্যাপার গুলো বনানী আর ছেলেমেয়েদের ঘাবড়ে দিয়েছিল। কত্তা সৌরেন গুপ্ত আবার এসব মানতে চান না। তবে ওদের বিমর্ষ ভাব, অন্যমনস্ক হয়ে থাকা সৌরেনের নজর এড়ায়নি। উনি কাজের অবসরে ঘুরতে নিয়ে যেতেন সবাইকে। একদিন ওরা দূরে কোন গুম্ফায় গিয়েছিল। ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যে হোল। বন্ধ ঘরের দরজা খুলে আলো জ্বেলে সবাই অবাক হল। সারা বাড়িতে জিনিস পত্র ছড়ানো। জামা কাপড়, বই খাতা, বাসন কিছু বাদ যায়নি। কেউ যেন ক্ষোভ উগড়ে দিতে তাণ্ডব চালিয়েছে! বাথরুম থেকে জল পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

— বিনু , তুমি কি জানালা খুলে রেখে গিয়েছিলে?

— কই! না তো !

— নিশ্চয় কোন বেড়ালের কাজ।

সৌরেন আপনমনে বলে যায়। বনানী চুপ করে থাকে। মনে মনে ভাবতে থাকে, কোন বেড়াল জামা কাপড়, বই খাতা ধরে টানবে! বাথরুমের কল খুলবে! এসব মেজাজি কত্তাকে না বলাই ভালো। কোন ভাবেই মানতে চাইবে না। ছেলে মেয়েরা ততক্ষণে বইখাতা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। বনানী বাকি সব সামলে নিচ্ছে। এসবের মধ্যে সৌরেন দেড়তলার ঘরে গিয়ে দ্যাখে, জানালা খোলা। বিছানা যেন কেউ দুমরে মুচড়ে কুঁচকে রেখেছে! অন্য সময় সে বনানীকে ডেকে দেখায়। আজ আর কিছু বলল না।

কিছুদিন বাদে বিভূতি দত্ত নামের একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে সৌরেনের আলাপ হয়। জন্মসূত্রে উনি ও চট্টগ্রামের লোক। ম্যান্ডেলে ওনার থাকার অসুবিধার কথা উনি সৌরেনকে জানালে, গুপ্ত বাবু ওনাকে নিজের পরিবারে আমন্ত্রণ জানান। বিভূতি দত্ত, গুপ্ত পরিবারে এলেন। বনানী ও সৌরেন ওনাকে কা জী (কাকাজী) সম্বোধন করত। চিনু, পিকুরা নতুন দাদুকে পেয়ে খুশি হয়েছিল। বনানীকে দত্ত বাবু বিনু মা ডাকতেন। দত্ত বাবু দেড়তলার ঘরে থাকতেন। কিছুদিন কেটে গেল। উনি সময় কাটতে না চাইলে বাচ্চাদের পড়া বুঝিয়ে দিতেন। কা জীকে পেয়ে বনানী ও কিছু ফুরসত পেয়েছিল। একদিন সকালে চায়ের টেবিলে দত্তবাবু একটু বিমর্ষ যেন!

— গুপ্ত, তোমায় একটা কথা বলি। এই বাড়ি তোমরা ছেড়ে দাও। এখানে অশুভ কিছু রয়েছে। সেই প্রথম দিন থেকে আমি বুঝতে পেরেছি ও লড়ে চলেছি। ওই ঘরে সারারাত ঘুমোতে পারি না। প্রথমদিন কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে চৌকি থেকে ফেলে দিয়েছিল। আলো জ্বেলে দেখি, কেউ নেই। একদিন মাথায় চাটি মারল। এরপর থেকে আলো নেভাই না। তবুও উৎপাত হয়ে চলে। একটু চোখ লেগে এলে, কখনো গায়ের চাপাখানি কেউ টেনে ফেলে দেয়, কখনো বালিশ টেনে ফেলে দেয়। জানি না, এতদিনে তোমরা কিছু কি টের পাওনি?
সৌরেন একটু বিরক্ত হয়ে,

— কা জী আপনি ও এসব বিশ্বাস করেন! এমনিতেই আপনার বিনু মা ভীতু প্রকৃতির। এসব শুনলে আরো ঘাবড়ে যাবে।

বনানী রান্নাঘরের কাছেই ছিল। ওনার কথাগুলো ও শুনেছে। এগিয়ে এসে কিছু বলতে চেয়ে ও থমকে গেল। ও জানে, সৌরেনকে কিছু বলা বৃথা। দত্ত বাবু এই বাড়িতে আর বেশিদিন ছিলেন না। মেয়ের কাছে রেঙ্গুন (ইয়াঙ্গন) চলে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় বলেছিলেন,

— বিনু মা , বাচ্চাদের নিয়ে সাবধানে থেকো।
দত্ত বাবু চলে যাওয়ার পর থেকে বনানী আর বাচ্চাদের খুব ফাঁকা লাগতো। উনি গল্প করে মাতিয়ে রাখতেন সবাইকে।

দেড়তলার ঘরে কেউ আর থাকতো না। মাঝে মাঝে খুলে পরিষ্কার করা হত। বনানী বাচ্চাদের দিয়ে আলো জ্বেলেই ঘুমাতো। সৌরেনের নাইট ডিউটি থাকলে বনানী অনেক রাত অবধি জেগে থাকতো। কান পেতে শুনতো, কোন দরজা যেন ক্যাঁচ করে খুলে আবার দুম করে বন্ধ হয়ে যেত। ভয় লাগলে ও উপায় ছিল না। বাচ্চারা তখন মায়ের ভরসায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এভাবে অনেক রাত ওর ঘুম হত না।

সৌরেনের অ্যাজমার সমস্যা ছিল। একবার খুব বাড়াবাড়ি হওয়ায় আপিস ছুটি নিয়েছিল। সেই দিন রাতে ছেলে মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছিল। বনানী সৌরেনের হাতে, পায়ে, বুকে গরম রসুন তেল মালিশ দিচ্ছিল। হঠাৎ চিনুর চিৎকার শুনে ওরা হন্তদন্ত হয়ে এসে দেখে পিকু মেঝেতে পড়ে গিয়ে কাঁদছে আর ওদের গায়ের চাপা মেঝেতে পাতা। পায়ের কাছের জানালাটা খোলা। অথচ বনানীর মনে আছে, ও ভালো করে জানালার হুক আটকে পাশের ঘরে গিয়েছিল।

অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | পর্ব শেষ | কুহেলী দাশগুপ্ত [From the Myanmar Diaries]

খাট থেকে পড়ে গিয়ে পিকুর বেশ অনেকখানি লেগেছিল। চিনু আর টুকু ও খুব ভয় পেয়েছিল। বনানী এবার চুপ থাকতে পারল না।

— তোমাকে কবে থেকে বলেছি, এই বাড়িতে অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে। তুমি সেসব আমল দাও না। এভাবে কত সহ্য করা যায়! রোজই কিছু না কিছু হচ্ছে। তোমার কাজের ব্যাঘাত না হয়, তার জন্য কিছু বলি না। তুমি মানতে ও চাও না। এবার বলো, আর কি ব্যাখ্যা আছে! এভাবে ভালো করে না ঘুমিয়ে আর কত রাত কাটাতে হবে!
সৌরেন এবার কিছু ভাবলো। বলল,

— দেখছি, এবার কিছু একটা প্ল্যান করতে হবে।

সেই রাতে সবাই একঘরে কাটিয়ে দিলো। পরদিন সৌরেন ডিউটি সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরল। প্ল্যান মাফিক সেদিন রাতের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে নিয়েছিল সবাই। সারা বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করা হোল ভালো ভাবে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে বনানী একটা ঘরে শুয়ে পড়েছিল। আলো নেভানো। ঘরের এক কোনে সৌরেন একটা টর্চ আর লাঠি হাতে জেগে। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছিল। বনানী সজাগ ছিল। ওর কখন একটু চোখ লেগে গিয়েছিল। হঠাৎ আবার সেই ভূতুড়ে কান্ড। গায়ের কম্বল মেঝেতে কে ফেলে দিলো। তবে, বনানীর ঘুম ভেঙেছিলো যখন ঘরের মধ্যে খুব হুজ্জতি চলছিল। সৌরেন একহাতে টর্চের আলো ফেলে লাঠি দিয়ে খুব পেটাচ্ছে কাউকে আর বলছে,

— ভুতের বাবার অ্যায়সি কি ত্যায়সি। দেখাচ্ছি মজা।

কিছু একটা ঘড়ড় ঘড়ড় আওয়াজ করে সারা ঘরে ছুটছে। আর সৌরেন পিটিয়ে চলেছে। বনানী ছুটে গিয়ে আলো জ্বেলে দিলো , একটা জানালা ও খুলে দিলো। একটা কুচকুচে কালো বেড়াল লাফিয়ে জানালায় ওঠে বার হয়ে যাওয়ার আগে ঘুরে তাকালো। চোখ গুলো যেন আগুনের আংড়া! কি সে তাকানো! বনানী আরো ভয় পেয়ে যায়। পালিয়ে গেলো কালো বেড়ালটা। সৌরেন একটু বিরক্ত হল।

— আলো জ্বাললে কেন? আজ তোমাদের ভূতের তেরোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলাম। জানালা খুলে ওটাকে পালাতে দিলে!

— এই রাতদুপুরে প্রাণীহত্যা করবে!

— দিনক্ষণ মেনে হত্যা করতে হয়,জানতাম না তো!

— তা নয়, ওটা আবার কালো বেড়াল। এমনিতেই গ্রাম দেশে প্রচলিত আছে, বেড়াল মারা ভালো নয়। মা ষষ্ঠীর বাহন। কোন অভিশাপ লাগবে আবার!

— রাখো, তোমার গ্রামের কথা। এদিকে ভয়ে সবাই সিঁটিয়ে আছ! আজ যা মার খেয়েছে, সহজে আর এমুখো হবে না।

চিনু, পিকু টুকু ও জেগে উঠে এসব দেখছিল। ওরা ঘুম চোখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ হয়ে ছিল।
সেই রাতটা বনানী জানালা বন্ধ করে ছেলেমেয়েদের সাথে ঘুমালো। সৌরেন নিজের ঘরে শুয়ে পড়ল।
এরপর দু’চারদিন ভূতের কোন অ্যাক্টিভিটিস দেখা গেল না। তারপরেই একরাতে গুপ্ত পরিবার র খাবারের টেবিলে। বনানী পরিবেশন করছিল। দরজার বাইরে অনেক লোকজনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। একটু অবাক হয়ে সৌরেন জানালার পর্দা সরিয়ে দ্যাখে, ওদের গেটের কাছে অনেক লোক জড়ো হয়ে ,এ বাড়ির দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে কি সব আলোচনা করছে!
সৌরেন হাত ধুয়ে বাইরে এসে দেখল, আশেপাশের প্রতিবেশীদের অনেকে রয়েছে।

— কিছু কি হয়েছে? আপনারা সবাই এখানে!
একজন এগিয়ে এসে বলল,

— আপনাদের কিছু হয়নিতো গুপ্ত? সবাই ঠিক আছেন তো?

— কেন বলুন তো? আমরা সবাই ঠিক আছি।

— এই বাড়ি থেকে বিকট আওয়াজ পেলাম সবাই। আশেপাশের সকলে শুনেছে। যেন খুব জোরে কিছু বাস্ট করল! ব্যাপার জানতে আমরা সবাই ছুটে এলাম।

— কি অদ্ভুত কথা! আমরা কোন আওয়াজ শুনিনি। এই তো সবাই খাচ্ছিলাম। কেমন যেন লাগছে শুনে!

বনানী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সবটা শুনেছে।
সবাই আশ্বস্ত হয়ে চলে গেলে ওরা ঘরে এসে চুপ করে ছিল অনেকক্ষণ। কি যে ব্যাপার হোল! তারপর বনানী একসময় বলে,

— জানো তো, অনেকদিন ধরে একটা কথা ভাবছিলাম। তুমি কি মনে করবে জানি না। আমরা এবার দেশে ফিরে গেলে হত না!

— কি বলছ! ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বলছ তো! ও দেশে মা, ভাইদের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। আমি এতো দিক সামলাবো কি করে! তুমি বললে, মাথায় রইল। এতো তাড়াতাড়ি কিছু হবে না। এখনও ফেরার কথা ভাবার সময় আসেনি।

গুপ্ত পরিবার ম্যান্ডেলের ভুতুরে বাড়িতে বেশিদিন আর ছিল না। বাড়ি বদলের আগে ওরা খবর নিয়ে জেনেছিল, এই বাড়িতে এক বার্মিজ পরিবার থাকতো। বাবা আর মেয়ে। মেয়েটি ভীষণ জেদী আর বদমেজাজি ছিল। মাঝে মাঝেই খুব চেঁচামেচি শোনা যেত এ বাড়ি থেকে। এরা প্রতিবেশীদের সাথে খুব একটা মেলামেশা করত না। একদিন কোন মনোমালিন্যের কারণে মেয়েটি দেড় তলার ঘরটিতেই গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে। মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তার বাবাকে খুব একটা দেখা যেত না। একদিন আশে পাশের লোকজন পঁচা গন্ধ পেয়ে উৎস খুঁজতে গিয়ে এবাড়ির দরজা ভেঙে ভদ্রলোককে মৃত অবস্থায় পায়। দেড়তলার সেই ঘরে চোখ খোলা, মুখ হা করা ছিল। শরীরে পচন ধরে গিয়েছিল। এরপর ওই বাড়ি অনেকদিন, অনেক বছর খালি পড়ে ছিল। ওদের কোন আত্মীয় পরে এ বাড়ি ভাড়া দিয়েছিল। কেউ বেশিদিন থাকতে পারতো না। যারাই ভাড়া আসতো তাদের কেউ না কেউ মারা যেত। প্রতিবেশীরা জানিয়েছিল, একমাত্র এই পরিবারে কারো কিছু হয়নি। বনানী ফয়া (বুদ্ধদেব)কে বার বার প্রণাম জানিয়েছে মনে মনে। সেই থেকে ফয়াকে কোনদিন কাছ-ছাড়া করেনি ও। অনেক বছর বাদে গুপ্ত পরিবার পাকাপাকি ভাবে ভারতবাসী হয়। বংশ পরম্পরায় ফয়া আজও এই পরিবারের সাথে রয়েছেন।

কুহেলী দাশগুপ্ত | Kuheli Dasgupta

ট্যাটুর ইতিহাস ও আমরা | History of Tattoo | Reasons for using tattoos | 2023

Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023

Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023

Best Tattoo Machine 2023 | ট্যাটু মেশিনের ক্রমবিকাশ | প্রবন্ধ ২০২৩

অ-শরীরী মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | অশরীরী | মায়ানমারের ডায়েরী | বার্মা ডায়েরি | ডায়েরি সাহিত্য | ডায়েরি কথা | সোমার ডায়েরী | ব্যক্তিগত ডায়েরি | ডায়েরি বানান | ডায়েরি অর্থ | ডায়েরি ছবি | ডায়েরি লেখা | কাব্য | ডাইরি ইংরেজি | অশরীরী আত্মা | অশরীরী শক্তি | অশরীরী অর্থ | অশরীরী মুভি | অশরীরী মূর্তি | অশরীরী সমার্থক শব্দ | মাছ এর সমার্থক শব্দ | ভূত সমার্থক শব্দ | বৃষ্টির সমার্থক শব্দ | নন্দন অর্থ | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২৩ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২৩ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | ডায়েরীর পাতা থেকে

Myanmar Diaries | Myanmar movies | Myanmar Diaries reviews | Myanmar Diaries imdb | Myanmar Film Collective | Variety Myanmar | Human Rights Film Festival | Myanmar bless movies 2022 | Diary and Notebook | Diary with lock | Diaryer Pata Theke | Oshoriri | Sabuj Basinda | Shabdodweep | High Challenger | From the Myanmar Diaries – read online | From the Myanmar Diaries in pdf | From the Myanmar Diaries – pdf book | From the Myanmar Diaries – documentary | From the Myanmar Diaries – watch online | From the Myanmar Diaries – burmese movie | From the Myanmar Diaries full movie | Collection From the Myanmar Diaries | From the Myanmar Diaries Streaming | From the Myanmar Diaries Netflix | From the Myanmar Diaries – Kuheli Dasgupta | From the Myanmar Diaries 2023 | Stories From the Myanmar Diaries | From the Myanmar Diaries – Bengali Story | New stories From the Myanmar Diaries | Top story From the Myanmar Diaries | From the Myanmar Diaries – Shabdodweep | Collection From the Myanmar Diaries

Leave a Comment