Full Bangla Galpo 2023 | Krishna Kishore Middya

Sharing Is Caring:

বিবর্ণ ডায়েরির উজ্জ্বলতা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Full Bangla Galpo]

ইংরেজি বছর শেষ হলে নয়নের বাবা নতুন বছরের ডায়েরি পেত বেশ কয়েকটা। তাকেও একটা দিত অন্যদের সঙ্গে। কিন্তু যত্ন করে রেখে দেওয়া ছাড়া সে কিছুই লিখতো না। কলেজ, পড়া, কম্পিউটার নিয়ে এত ব্যস্ততার মধ্যে থাকে, লেখার সময় কোথায় ! মাঝে মাঝে তার মনে হয়, কী সব লেখে ওই ডায়েরির পাতায় ! তারও তো সময় নেই, সকালে অফিসে যায় ফেরে সেই রাত আটটায়। কখন যে লেখে কেউ জানে না। নেই তার কোন লেখার টেবিল, বইয়ের তাক বা ভালো কলম। কিন্তু পুরনো ডায়েরিগুলো সুন্দর করে সাজান, বিছানার এক পাশে। শুধু কি ওই ডায়েরি, কত পুরনো খাতা কাগজ ইত্যাদি। মা খুব বকাবকি করে, বাবা নাকি ওইগুলো রেখে, ঘর জঞ্জালের স্তূপ বানিয়েছে।

সেই মানুষটা যখন বাথরুমে পড়ে পায়ের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি, আমরা পড়লাম অথৈ জলে। সকলের সহযোগিতা সত্ত্বেও বাবার অভাব আগে এমন করে অনুভব করেনি সে। আর কদিন পরে ছুটি, মা বলে ওনার বিছানাটা একটু পরিষ্কার করে দিতে। ডায়েরির স্তূপে হাত দিতে হল। কী যেন কৌতূহল হল নয়নের একটা ডায়েরির পাতা উল্টে দেখতে। কতদিনের সব পুরনো, বিবর্ণ পাতা। কিন্তু সেই পাতা জুড়ে লেখার সারি। দেখে, লেখার শুরুতে, ইংরেজি তারিখের সঙ্গে বাংলা তারিখও লেখা। মাঝের ভাঁজ খুলে একটা পাতার লেখায় তার মন টানলো। — ‘ আজ ইংরেজি ২৭/ ৪/ ২০০৮ বাংলা ১৪/ ১/ ১৪১৫, রবিবার। দিনহাটা। এখন দক্ষিণ বঙ্গে দারুণ দহন জ্বালা। উত্তর বঙ্গে এখন বসন্ত – বৈশাখ। বউ কথা কও পাখি ডাকে কোন সে গাছের আড়ালে বসে। এত চেষ্টা করে সেই পাখি দেখা পেলাম কই ! এখানে এখন এই মন খারাপ বিকেল। বসন্ত বৌরির ডাক, সবুজ পানিয়াল গাছের পাতা, আমলকী গাছের পাতার কাঁপন দেখে সময় কাটছে । আমাদের বাসার সামনে বিশাল মাঠ, চার পাশ ঘুরে রাস্তা। সব রকম গাড়ি চলে। পানিয়াল গাছ আগে দেখিনি। ছোট ছোট পাতা, কিছুটা বেলগাছের মত। আর আমলকী গাছ প্রথম দেখা। … রোজ কিশোর কালের স্মৃতি ভাসে। সেই সকালে স্কুল। মেঠো পথ, জাম, জামরুল, খেজুর গাছ। বড় পুকুরে স্নান, সে এক অন্য পৃথিবী । … গতকাল নয়ন ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলো। ওর মার সঙ্গে স্কুলে গিয়ে রেজাল্ট নিয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে উত্তর পূর্ব দিক থেকে গরম বাতাস বইছে। ‘ … নয়নের বুকের ভিতর কেমন হচ্ছে। বাবা তার কৈশোর সময়কে, বৈশাখের বিকেল কেমন সুন্দর ধরে রেখেছে তার ডায়েরিতে ! কৌতূহল বশত আরো একটু সামনের পাতায় এলো।

‘১১/০৭/২০০৭, বুধবার। বামনহাট। আজ এক বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রণ। অফিসের কর্মী শচীন মজুমদারের বাড়ি। গ্রাম লাউ চাপড়া, ঠিক বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা। এখানে স্বাধীনতা পূর্বের রেলস্টেশন বামনহাট দেখলাম। বামনহাট থেকে প্রায় দু কিলোমিটার সাইকেল ভ্যানে যখন শচীনবাবুর বাড়ি পৌঁছলাম আমরা কয়েকজন তখন সন্ধ্যে ছটা । রাত্রি একটায় লগ্ন। পাত্রের বাড়ি বানেশ্বর। এখানকার আঞ্চলিক রীতিতে পর্দা, সামিয়ানা সব সাজানো। কলা গাছ দিয়ে কী সুন্দর বিয়ের জায়গা নিকোন উঠোনে। বাজন্দার বৃন্দ মাঝে মাঝে ভাওয়াইয়া ও দরিয়া গানের সুর বাজায়। বিয়ের কনে শুধু নয়, সবার মন কেমন উদাস হয়ে যায়।

শচীনবাবুর পাঁচ মেয়ে ও সাত ছেলের সংসার। শচীনবাবু নিপাট ভদ্রলোক। দীর্ঘদেহী, গায়ের রং কালো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়ের বিয়ের পর প্রথম মেয়ে পাত্রস্থ হচ্ছে। এখনও সাত ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে বাকি। সংসারের দুর্ভোগের কথা বলে আমাকে। খুব ভালোবাসে আমার। বিয়ের জল গরম না হলে কী হবে, ফেরার তাগিদ আছে বলে আমাদের কজনের ভোজনের ব্যবস্থা হল সেই গোধূলি বেলায়। … শচীন কর্তার ভক্তি এবং শ্রদ্ধা যেন খাদ্য উপকরণে এসে পড়েছে। এত তৃপ্তিদায়ক খাওয়ার জোগাড় যে এই অজ গাঁয়ে করা যায় তা ভদ্রলোক দেখালেন !

সন্ধ্যার আঁধারে আমরা হাঁটতে হাঁটতে বামনহাট ফিরছি । সঙ্গী ভুবন বাবুর বাড়ি কাছাকাছি এক গ্রামে। ওর কাছে আমার অনেক জিজ্ঞাসা। কথায় কথায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ এলো। ও বলে আমরা যে পথে হাঁটছি সে পথ তো সে সময় যুদ্ধক্ষেত্র। সীমান্তের এই গ্রাম তখন সেই যুদ্ধে নাকি সামিল হয়। নিজে ভুবন সেই যুদ্ধে ছিল। ওরা নাকি মাটির ট্রেঞ্চ খুঁড়ে পাক বাহিনীর মোকাবিলা করেছে। আসলে মুক্তি যোদ্ধারা এই সব সীমান্তবর্তী গ্রামে ঘাঁটি গড়ে। আর এপারের যুবকরা সাহায্যের হাত বাড়ায়, যে যার মত করে। তারপর বত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণের বিনিময়ে সেই ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের উত্থান। পৃথিবীর ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা। আর ভারতবর্ষ সেই যুদ্ধে আবেগ তাড়িত অংশ গ্রহণ করে, যে অবদান বাংলাদেশী ও পৃথিবীর মানুষ স্বীকার করে। … আমি তখন ক্লাস এইট এর ছাত্র। সেই বয়সেও কী এক উত্তেজনা অনুভব করতাম, বেতার এর সেই জ্বালাময়ী গান, খবর আর প্রতিবেদনে। কলকাতা ও কলকাতার মানুষ তখন তো ওই নতুন দেশের সহায় । সেই সব আগুন ঝরা দিন যেন এই সীমান্ত গ্রামের পথে, সন্ধ্যার আঁধারেও দেখা পাচ্ছি বুকের ভিতর । ‘ …

বাবার ডায়েরির বিবর্ণ পাতা কী উজ্জ্বল হয়ে উঠলো নয়নের চোখে আজ ! সে অবাক হয়ে যায় । বাবার সঙ্গে সে ও তার মা সীমান্তের গ্রামে গেছিল। কিন্তু তার বাবা যে এত সুন্দর করে ডায়েরিতে সে সব দিনের কথা, স্মৃতিকথা ধরে রেখেছে তা সে জানত না। আজ কেন যে তার বাবার জন্য মনটা বেশি বেশি উতলা হচ্ছে সে বুঝে উঠতে পারে না। বাবার এখনও বাড়িতে না ফেরা এবং ওই তার ডায়েরির লেখার পংক্তি গুলো অজান্তে তার চোখে জল এনে দেয় ! মার ডাকে সে যেন সাড়া দিতে পারে না। …

Bangla Galpo

কল্পনার ডানা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Full Bangla Galpo]

‘দাদান বইয়ের ব্যাগটা একটু নেবে।’ বয়সে প্রবীণ নিমাইবাবু নাতির কাছ থেকে ভারী বইয়ের ব্যাগটা নেয়। মা বাবা দুজনেই সকাল নটাতে অফিস চলে গেলে, ঠাকুরদার জিম্মায় কিশোর নাতিটি । এখন তো সেই আগেকার মত বই নয়,একটা ব্যাগে সব বিষয়ের বই নিয়ে দুই মাইল দূরের স্কুলে হেঁটে হেঁটে। ঠাকুরদা আজ সহুরে নাতির পাল্লায় পড়ে এই বয়সেও স্কুলে যায়! নিমাইবাবু মনে মনে ভাবে, এখনকার বই গুলো খুব ভারী ভারী আর বিশাল আকৃতির। দেখলেই ভয় হয়। এত বই ও পড়ার চাপ কী করে যে নেয় বাচ্চারা ! এর ওপর আছে নানান কমিকস আর হ্যারিপটার। একদিনও খুলে দেখে নি, ইংরেজির যা জ্ঞান তার।

এ যুগে ঠাকুরদা নাতিকে গল্প শোনাবে কী, নাতি তাকে এত শোনায়, মাথা ধরে যায়। কী যে কাল্পনিক কাহিনীর জাদুকর, তাকেই নিয়েই সব পাগল! তবে একটা জিনিস ভালো, এই মোবাইল, ইন্টারনেট এর যুগে বাচ্চাদের কল্পনার ডানা হারিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পড়ুক না হ্যারি আর তার জাদুকরী কাহিনী। নাতি সুপ্রিয় বাবার কাছে শুনেছে, দাদান নাকি ভালো গল্প বলতে পারে। স্কুলে বন্ধুদের কাছে সে বলেছে এ কথা। রবিবারের ছুটিতে কাছের বন্ধুরা চলে এলো ওদের বাড়ি।

কথা শুনে নিমাই বাবু হেসে কুটি কুটি। আরে ভাই, তোমরা এ যুগের ছেলেপুলে হ্যারির পাল্লায় পড়েছ, আমার গেঁয়ো গল্প ভালো লাগবে কী করে। – ‘সুপ্রিয়র বাবা তখন হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে গ্রামে। বিভিন্ন মরশুমে নানান খেলা দেখাতে আসতো মানুষ। পিঠে একটা বড় ঝোলা নিয়ে আসতো ম্যাজিশিয়ান , কেউ বানর, কেউ সাপ, ভালুক নিয়ে আসতো। গ্রামের লোক তখন এত ব্যস্ত ছিল না। এই সব খেলা দেখতে খুব ভালোবাসত। সে বার বৈশাখে, এলো ‘মানুষ বাঘের খেলা’ দেখাতে। ‘মানুষ বাঘ!’ – বলে সবাই আঁতকে ওঠে। ‘সে আবার কী ধরনের খেলা।’ – মজা তো ওখানেই ‘ – নিমাইবাবু বলে ওঠে। ‘ দুজন লোক কাঁধে ঝোলা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় হাঁকছে, ‘ মানুষ বাঘের খেলা ‘, ‘মানুষ বাঘের খেলা।’ শুনে তো লোক জড়ো হল অনেক, তাদের হাঁক আর ডুগডুগি বাজনার শব্দে। বসানো হল মন্ডলদের চন্ডীমণ্ডপে । আগে ছিল চণ্ডীমণ্ডপ , এখন নেই। প্রায় প্রত্যেক পাড়ায় এই বিশেষ সর্বজনীন ঘর ছিল। সেখানে বসে ঠিক হল রাতে ওই খেলা হবে। ওদের দুজনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হল, রাতে খেলা হবে এই চন্ডীমণ্ডপে । সন্ধে হতেই খেলা দেখার লোক আসতে শুরু করেছে। একটা হ্যাজাক আলো জ্বালানো হল । তখন রাত প্রায় ৯ টা বাজে, ভরে গেল চণ্ডীমণ্ডপ ।

একটা মাদুর পেতে বসেছে মূল নায়ক, যে দেখাবে খেলা। কাছাকাছি তার সাগরেদ , রোগা পাতলা লোকটা। শক্তপোক্ত খেলোয়াড়ের হাত পায়ে বাঁধা হল শক্ত দড়ি । সে দড়ি ধরে আছে গ্রামের চার তরতাজা যুবক। উৎসাহী জনতা মাঝে মাঝে হল্লা করে। সাগরেদ হাতে নিয়েছে এক ঘটি জল , তাতে সে নিমগ্ন মনে মন্ত্র পাঠ করে চলেছে। আনা হয়েছে একটা জ্যান্ত বড় হাঁস। এইবার মূল খেলোয়াড় কয়েকবার লম্বা চুল ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র আওড়াতে শুরু করে । ‘ চোখ বড় বড় করে সুপ্রিয় আর বন্ধুরা গল্প শুনছে। আবার শুরু করে নিমাই বাবু, _ ‘ তারপর তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেল, হাত পায়ে এলো প্রচন্ড শক্তি, বাঁধা দড়ি ছিঁড়ে ফেলে আর কি ! এবার সে দাঁত কড়মড় করতে করতে বলছে , ভুখ ভুখ ..। এইবার ওর সাগরেদ লোকটা হাঁসটা নিয়ে তার হাতে ধরায়। মুহূর্তে সে হাঁসের মুন্ডু পাকিয়ে ধরে ,ডানা ছিঁড়ে নখ দিয়ে পেট কেটে ফেলে। রক্তারক্তি কান্ড বেধে গেছে। সবাই আঁতকে উঠলো। দেখা গেল দিব্যি সে ওই কাঁচা মাংস খাচ্ছে তারিয়ে তারিয়ে। শেষে আবার হাতপা ছুঁড়ে পালাবার চেষ্টা করে প্রাণপণে । চার যুবক তো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে দড়ি ধরে রাখতে। এমন সময় সাগরেদ মন্ত্রপূত জল ঘটি থেকে ছিটিয়ে দিল ‘ মানুষ বাঘ ‘ এর গায়ে। আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ে এই বাঘ। সব দর্শক বাড়ি ফিরতে লাগে।’

সুপ্রিয় আর ওর বন্ধুরা গল্প শুনে থ হয়ে গেল। তারা বললো, যদি দড়ি ছিঁড়ে যেত তাহলে কি হত । – ‘ পালিয়ে যেত যেখানে ইচ্ছে। যতক্ষণ না ওই মন্ত্রপূত জল গায়ে পড়বে ততক্ষণ সে মানুষ বাঘ। ‘ এরকম হয়েছিল কী ! ‘ ওরা প্রশ্ন করে।
‘ কোন এক গ্রামে একজন ওই বাঘ হওয়ার মন্ত্র শিখে বাড়িতে প্র্যাক্টিস করছিল। সে তার স্ত্রী কে মন্ত্রপূত জলের ঘটি দিয়ে বলে , ‘ আমি যখন বাঘ হয়ে যাব , তখন খবরদার খবরদার জল ছিটিয়ে দিও। ‘ কিন্তু যখন ওই লোকটা নিজে মন্ত্র পড়ে ব্যাঘ্র স্বভাব পেল , দেখে তো স্ত্রীর চোখ ছানাবড়া ! ভয়ে আঁতকে উঠে সে ঘটি হাতে থেকে মাটিতে ফেলে দিল। দেখলো তার স্বামী বাঘের মত গর্জন করতে করতে এক ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ‘ – সুপ্রিয় আর তার বন্ধুরা প্রচন্ড ভয় পেল। ভয়ে ভয়ে বললো, ‘ তো কোথায় গেল !’ ‘ কেউ জানে না কোথায় গেল সেই মানুষ বাঘ। হয়তো বনেই চলে গেল !’

গল্প শেষ হলে নিমাই বাবু জিজ্ঞেস করে, ‘ ‘কী দাদুর দল পছন্দ হোল আমার গেঁয়ো গল্প!’
‘ হ্যাঁ দাদু এমন ভয়ংকর গল্প হ্যারির ছিল না !’
নিমাইবাবু ভাবতে লাগে, ছেলেগুলোর কল্পনার ডানা গুলো অবশ হয়ে যাচ্ছে। সে ডানায় কল্পনার জল ছিটিয়ে সতেজ করার প্রয়োজন এখনই । না হলে যে ওরা যন্ত্র মানব হয়ে যাবে !

দিগন্তের রাঙা টিপ – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [Full Bangla Galpo]

অহীন আজও ভাবে। তার বাবা কেন যে শেষ বিকেলের আলো ভালোবাসে ! সে আলোয় নাকি একটা বিষণ্ণতা থাকে। আবার বিষণ্ণতার মাঝে ঘরে ফেরার এক ইঙ্গিত সে থাকে। বিকেলে এখানে আলো বলতে ইলেকট্রিকের। দিনেও প্রায় অন্ধকার , এমন এক শহরতলির গলিতে তাদের ভাড়ার বাসা। মানুষটা সারাজীবন খুঁজে গেছে এক চিলতে ফাঁকা জায়গা, যেখানে আলো বাতাস আসবে প্রকৃতি থেকে। কিন্তু তার সে আশা পূর্ণতা পায়নি।

দুই মেয়ের একজনের বাড়ি শহরতলি ছেড়ে পাশের গ্রামে। মাঝে মাঝে নৃপেন বাবু যায় সেখানে । মোটামুটি সচ্ছলতা আছে । আজ যেমন এলো। সকালে হাঁটা তার কোনকালে ছিল না। বিকেলের নরম রোদে পথে হাঁটা, গ্রামের পথে ,তার পছন্দ সেই ছোটবেলা থেকে। এই গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে একটা খাল উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত। তখনও সূর্যের তেজ কিছুটা হলেও বর্তমান। বসন্তের বিকেলে দখিনের মৃদু বাতাস যেন মায়ের মরমী ছোঁয়ার মত মনে হয়। এখানে এলে তার অনেক স্মৃতি জীবন্ত হয়ে ওঠে। দু বছর আগে স্ত্রী মধুমতিকে নিয়ে এখানে আসে এক শীতের বিকেলে। সেই মধুমতি গত বছর যে নদী হয়ে ভেসে যাবে তা স্বপ্নেও ভাবে নি সে। মধুমতির চলে যাওয়া তার জীবনে এনেছে এক অনন্ত শূন্যতা। আর সেই থেকে জীবন চেতনায় এক বিষাদী সুর বাজে অহরহ। তবু তো জীবন থেমে থাকে না। ভাবনা এখন নিজের জন্য হয় না, দুই ছেলে আর তাদের সংসার তাকে ভাবায় । মেয়ে দুজনের তবু এক স্থিতিশীলতা দিতে পেরেছে। ছেলেদের মানসিক অশান্তি নৃপেনবাবুর মনের আকাশে কালো মেঘ বয়ে আনে।

খালপাড়ের নিম গাছের তলায় মাটিতে বসে । নোংরা জল দখিন মুখী স্রোতে বয়ে যায়। তখন সূর্য দিনের শেষ আলো ছড়াচ্ছে সারা চরাচরে। নিম গাছের শাখায় শাখায়, জানা অজানা পাখির ডাকাডাকি মুখরিত করে প্রাক গোধূলির পরিবেশ। কানে তার কুজন ,চোখে অস্তগামী সূর্যের মায়াবী আলোর আভা। তার মনে হয় সূর্য নয়, পশ্চিম দিগন্তের কপালে এক রাঙা গোল টিপ। সে টিপ আস্তে আস্তে অপস্রিয়মাণ। অপলক চেয়ে চেয়ে সূর্য ডোবা দেখে। কোন এক ভাবনার জগতে তার অস্তিত্ব এখন। ভাবে, সূর্য ডুবে গেল, আলোর বিচিত্র রঙে দিগন্ত রাঙিয়ে।

ডুবন্ত কালের সে শোভা দেখার জন্য এই মানব জীবন, হয়তো বা সারা জীবন বাঁচার সংগ্রাম ! এবং অস্তরাগের আলোতে স্বপ্নকে ছোঁয়া ! মনে হয় তার, সূর্য চলে গেলে থাকে তার আগামী ভোরের প্রস্তুতি। সূর্য ডোবে আবার উঠবো বলে, মানুষ ডোবে , ওঠে না আর কোনদিন…।

সন্ধ্যার আলো আঁধারি পথে হাঁটতে হাঁটতে যখন মেয়ের বাড়ির সদর দরজার চৌকাঠে পা রাখলো, সন্ধ্যা আরতির শঙ্খ বাজে তুলসী তলায় । অধিক রাতে নৃপেনবাবুর ধুম জ্বর এলো। মেয়ে বাবার গায়ে হাত দিয়ে ভয় পেয়ে যায়, স্বামীকে জানায় । খবর গেল দাদাদের কাছে। ঘণ্টা খানেকের পথ। অহীন ভাইকে নিয়ে চলে আসে । সারারাত ভাইবোনেরা বাবার বিছানায় বসে। নৃপেনবাবু জ্বরের ঘোরে ভুল বকে। জ্বরের ওষুধে জ্বর কমলেও তার কথা আর শেষ হয় না। সবাই এক অজানা আশঙ্কায় বিনিদ্র রজনী প্রভাতের অপেক্ষায়। ভোর হয় হয়, রোগী ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন হয়।

ঘরের বাইরে বারান্দায় এসে অহীন বোনকে বলে, – ‘ বাবাকে নিয়ে কী করি বলতো ! রোজ বিকেলে সূর্য ডোবার সময় এখানে আসতে চায় , আর বলে , তোদের জন্য আমি সূর্য হতে চেয়ে ছিলাম। পারিনি ! ‘ নির্বাক হয় তিনজন। তখন ভোরের মোরগ ডাকে পাশের বাড়ির হাঁস মুরগির খুপরি থেকে।

কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya

Bangla Prabandha Rachana | মনের কুলুঙ্গিতে আমার ভিক্ষে মায়ের স্মৃতি | New 2023

Osomapto | অসমাপ্ত‌ | প্রবোধ কুমার মৃধা | Top New Story 2023

100 questions and answers about Ramakrishna Mission | রামকৃষ্ণ মিশন সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

Pralambasura badha besha of Jagannath | প্রলম্বাসুর বধ বেশ | অভিজিৎ পাল

Bengali Story | Shabdodweep | Shabdodweep Web Magazine | Full Bangla Galpo 2023 | Full Bangla Galpo | Shabdodweep Writer | High Challenger | Sabuj Basinda | Full Bangla Galpo 2023 pdf | Full Bangla Galpo online | New Full Bangla Galpo | Full Bangla Galpo Audio | Full Bangla Galpo Video | Full Bangla Galpo Netflix | Full Bangla Galpo Read | Full Bangla Galpo Download | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Full Bangla Galpo | Recent Full Bangla Galpo | Top Full Bangla Galpo | Popular Full Bangla Galpo | Best Full Bangla Galpo | Full Bangla Galpo – Krishna Kishore Middya

Leave a Comment