A-Z of Cryptocurrency | Digital Currency | Best Article

Sharing Is Caring:

গুপ্তমুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি – প্রবোধ কুমার মৃধা

পটভূমি

সুদূর অতীতে মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলনের পূর্বে দীর্ঘকাল যাবৎ কেনাবেচা বা লেনদেনের মাধ্যম ছিল বিনিময় প্রথা।এক পণ্য বা পরিষেবার বিনিময়ে আরেকটি পণ্য বা পরিষেবা প্রদানের অলিখিত ধারাটি সামাজিক রীতি -নীতি রূপে গণ্য ছিল। বিজ্ঞান ও সভ্যতার অগ্ৰগতির দৌলতে আমাদের যাপন প্রণালীতে তথা লাইফ-স্টাইলে প্রতিনিয়ত ঘটছে পরিবর্তন। আধুনিক সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপকে ডিজিটাল করে তোলার পথে মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলেছি। তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ উদ্ভাবন। ধাতব মুদ্রা বা কাগজি নোটের বিকল্প স্বরূপ সম্পূর্ণ নেট-নির্ভর অত্যাধুনিক ভার্চুয়াল এই ব্যবস্থা আজ আমাদেরকে ভাবীকালের নববিধানের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট করছে।

উদ্ভাবক

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকান প্রখ্যাত ক্রিপ্টোগ্ৰাফার ‘ডেভিড চাউম’ প্রথম e-cash নামক এক ধরণের ক্রিপ্টোগ্ৰফিক ইলেকট্রিক অর্থের idea মাথায় এনেছিলেন। পরে পরে ডিজিক্যাশের মাধ্যমে এটিকে তিনি বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হন ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। সম্ভবতঃ এটিই ছিল ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ অর্থাৎ ক্রিপ্টোগ্ৰাফিক ইলেকট্রিক পেমেন্টের প্রাথমিক রূপ।

ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ও কেন? [What is cryptocurrency and why is it important?]

ক্রিপ্টো শব্দের অর্থ গোপন। কারেন্সি শব্দের অর্থ মুদ্রা। অত‌এব ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ হল গুপ্ত মুদ্রা বা ডিজিটাল কারেন্সি। একমাত্র নেট-জগতে যার অদৃশ্য গতিবিধি। শক্তিশালী ক্রিপ্টোগ্ৰাফি দ্বারা সুরক্ষিত ভার্চুয়াল মুদ্রা,যে অদৃশ্য মুদ্রার মালিকানা জাল করা প্রায় অসম্ভব। এনক্রিপশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করে নির্মিত কম্পিউটার দ্বারা ডিজাইন করা প্রথম ডিজিটাল সম্পদ রূপে সারা বিশ্বে অনলাইন অর্থ আদান-প্রদানের বিকল্প বিকেন্দ্রীভূত বাইনারি (সংখ্যা ভিত্তিক) উপাত্তের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির সমগ্ৰ কার্যক্রম গুপ্ত লিখন নামক সুরক্ষিত প্রক্রিয়া মারফত সুসম্পন্ন হয়। বেশিরভাগ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত। ক্রিপ্টোকারেন্সি কিন্তু প্রথাগত অর্থে প্রচলিত মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হয় না। ভার্চুয়াল এই কারেন্সির জন্য ফলোয়ারদের নিজস্ব একটা ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট থাকা আবশ্যক। ওয়ালেটগুলি ক্লাউড ভিত্তিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিষেবা ভোগীদের কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে। ক্রিপ্টোকারেন্সি সর্বতোভাবে অদৃশ্য ও অধরা। তৎসত্ত্বে ও একজন ব্যক্তি আর একজন ব্যক্তির সাথে সরাসরি আর্থিক লেনদেন করতে পারেন ক্রিপ্টোগ্ৰাফিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। ব্লকচেইন প্রযুক্তিদ্বারা ডেটাবেসে প্রতিটি লেনদেনর একটি রেকর্ড থাকে। নতুন নতুন ব্লকগুলিকে পুরনো ব্লকের সাথে সংযুক্ত করা হয়। এনক্রিপশন ব্যবস্থা ডিজিটাল এই লেনদেনকে নিরাপদ ও নিশ্চিতভাবে পরিচালনা করে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে সরকার বা সরকারি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার কোনো রকম যোগাযোগ থাকে না। অর্থাৎ লেনদেনকারী ক্রেতা ও বিক্রেতা ব্যতীত তৃতীয় কোনো পক্ষের অস্তিত্ব একেবারেই অনুপস্থিত।

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ অর্থ সঞ্চয় এবং আর্থিক লেনদেনের এমন একটি গোপন মাধ্যম খুঁজছিল, যার সুলুক সন্ধান শাসকগোষ্ঠী যেন কোনোভাবে না পেতে পারে।২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে অর্থাৎ ‘বিটকয়েন’ নামক ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভব না হ‌ওয়া পর্যন্ত ধারণাটি ছিল অবাস্তব এবং অসম্ভব। ক্রিপ্টোকারেন্সি ও তার গোপন মাধ্যমটি পেয়ে গিয়ে আমানতকারীগণ স্বভাবতই মহাখুশি।যার ফলশ্রুতিতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি উঠতি বাজারে পরিণত হয়েছে।

কার্যক্রম ও ক্রমবিকাশ

ক্রিপ্টোকারেন্সির কার্যক্রমের একাধিক প্রণালী আছে। এটি একটি Blockchain System. প্রাথমিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্ৰাহকদের লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ড আপডেট করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সি ইউনিট প্রস্তুত প্রক্রিয়াকে মাইনিং বলে। যেখানে কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েন জেনারেট করার সকল জটিল গাণিতিক সমস্যা সমূহের সমাধান করা হয়। ক্রিপ্টো-গ্ৰাহকগণ এজেন্ট মারফত ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় করতে পারেন এবং ক্রিপ্টোগ্ৰাফিক ওয়ালেটের সাহায্যে তা মজুত ও খরচ করতে পারেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মালিকদের কাছে ফিজিক্যালি কিছুই থাকবে না, থাকবে কেবলমাত্র একটি key, যার সাহায্যে ক্রিপ্টো -হোল্ডার নিজের ভার্চুয়াল অর্থ আদান প্রদান করতে সক্ষম হবেন। এভাবেই এক কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে অপর কম্পিউটার বা মোবাইলে ব্লকচেইন সিস্টেম দ্বারা দ্রুত অর্থ স্থানান্তরিত করা হয়ে থাকে।

বর্তমানে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন টেকনোলজির প্রয়োগ অতি দ্রুত হারে বিস্তার লাভ করছে। জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের ডিজাইনার সাতোশি নাকামোতোর দাবি অনুসারে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিটকয়েনের ডিজাইন ও কোডিং প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং পরে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তা স্বাধীন সফটওয়্যার রূপে অবাধ গতি অর্জন করে। এ মার্টি মালমি নামক জনৈক ব্যক্তি,২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে, বিটকয়েন বিক্রির সূচনা করেন। সম্ভবত ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের ইতিহাসে এটিই বাস্তব বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হয়।

২০০৯-এর জানুয়ারি থেকে ২০১০- এর মার্চ মাসের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে Cryptography ভক্তরা মূখ্যত ‘হবি’ হিসেবে এটি শুরু করেছিল। তবে প্রকৃত অর্থে লেনদেন আরম্ভ হয়েছিল ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিক থেকে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিপ্টো-মুদ্রার খনির দেশ হয়ে ওঠে কাজাকিস্তান।সমগ্ৰ বিশ্ব ব্যাপী যার উৎপাদন হার ১৮.১% শতাংশ। ক্রিপ্টোকারেন্সি কারবারের দুনিয়ায় আমেরিকার পর তার স্থান। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সরকারি আনুকূল্য বঞ্চিত হয়ে ও ক্রিপ্টোকারেন্সির আর্থিক লেনদেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত হারে প্রসার লাভ করছে।

[*** Read upto the end – A-Z of Cryptocurrency ***]

ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রকার [Types of Crypto]

প্রযুক্তিগতভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রধানত দুই প্রকার।
i) প্রুফ অব ওয়ার্ক (Proof of work )
ii) প্রুফ অব স্টেক (Proof of Stake)

পদ্ধতিগতভাবে বা ব্লকচেইন সিস্টেম অনুসারে ও দুই প্রকার।
i) কয়েন (coin)
ii) টোকেন (token)

আবার সংখ্যার দিক দিয়ে ক্রিপ্টো-মুদ্রা অসংখ্য প্রকারের। তবে ক্রিপ্টো মুদ্রার প্রকারগত সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য আছে। এককথায় তালিকাটি দীর্ঘ। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে প্রায় চার হাজারের ও অধিক ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। অপর এক সমীক্ষা অনুসারে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির সংখ্যা প্রায় ১০,৭৪৮ টি।এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় বা মৃতগুলি বাদ দিলে নিট প্রায় ৮,৮৪৮ রকম ক্রিপ্টো-মুদ্রা বাজারে সক্রিয় আছে।

যুক্তরাস্ট্রের ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির এক সমীক্ষা অনুমান করছে যে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রারম্ভে বিভিন্ন প্রকার ক্রিপ্টোকারেন্সি মিলে প্রায় ২০,০০০ হাজারের ও অধিক ক্রিপ্টো-মুদ্রার হদিস মেলে। তবে সবগুলি সক্রিয় বা সচল নয়। বিপুল সংখ্যক এই মুদ্রার মধ্যে একটা বড়ো অংশ নিষ্ক্রিয় বা অচল অবস্থায় আছে। জনপ্রিয়তার নিরিখে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হল।
১। বিটকয়েন (Bitcoin)
২। ইথেরিয়াম(Etherium)
৩। ইথার (ETH)
৪। বিনান্স কয়েন(Binance coin)
৫। টিথার (USDT coin)
৬। কার্ডানো (Cardano)
৭। সোলানা (SOL)

বাজার চলতি বাকি ক্রিপ্টোকারেন্সি সমূহের নাম এই প্রবন্ধের পরিসরে অনুল্লিখিত রাখতে হল। যে সমস্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি জনপ্রিয় এবং বাজারে চালু আছে তার মধ্যে গুপ্তমুদ্রা হিসেবে ‘বিটকয়েন’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য,২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিটকয়েন সৃষ্টি হ‌ওয়ার পর থেকে ‌২০১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ‘বিটকয়েন‌ই’ ছিল একমাত্র ক্রিপ্টোমুদ্রা। ২০১১- র পর থেকে নতুন নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সির সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ক্রিপ্টো মুদ্রার সুবিধা এবং অসুবিধা [Pros and Cons of Cryptocurrency]

গুপ্তমুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের ক্ষেত্রে যেমন সুবিধে বর্তমান তেমনি বেশকিছু অসুবিধে ও আছে।

সুবিধেসমূহ [Pros of Cryptocurrency]

  • ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন যে কেউ করতে পারে, কোনো বাধ্যবধকতা নেই।
  • সস্তায় এবং অতি দ্রুত এক হাত থেকে অন্য হাতে বা এক দেশ থেকে অপর দেশে অনলাইন অর্থ স্থানান্তর সম্ভব।
  • বিকৃত বা জাল হ‌ওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
  • যেহেতু ক্রিপ্টোমুদ্রার লেনদেন সম্পূর্ণ বেসরকারি, সেহেতু এই ব্যবস্থা কোনো রকম শর্ত সাপেক্ষে নয়।
  • ক্রিপ্টোমুদ্রা ATM Card-এর মাধ্যমে টাকায় রূপান্তরিত করার সুযোগ আছে।
  • ক্রিপ্টোকারেন্সির কারবার শেয়ার বাজার, সেনসেক্স ও নিফটির সমগোত্রীয়, ফলে অনেক সময় এর বাজার মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক মুনাফা লাভ সম্ভব।
  • এই ব্যবস্থা অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিরাপদ ও সুরক্ষিত।
  • ডেবিট / ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাঙ্কের মতো কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ব্যতীত অর্থ বিনিময় সম্ভব।

অসুবিধেগুলি [Cons of Cryptocurrency]

  • অসুবিধের মধ্যে প্রধান হল ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার মূল্যের অস্থিরতা। দিনের মধ্যে একাধিকবার বাজার মূল্য আপ-ডাউন করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • ক্রিপ্টোমুদ্রা সংরক্ষণের নির্দিষ্ট কোনো সংরক্ষাণাগার না থাকায় যে কোনো মুহূর্তে কম্পিউটার ক্রাশের ফলে তথ্য সমূহ ডিলিট হয়ে যেতে পারে।
  • প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল হ‌ওয়ায় ,প্রযুক্তি প্রকৌশলের সাথে সাথে ছায়া সঙ্গী হয়ে উঠছে সাইবার ক্রাইম; ফলে হ্যাকিং বা ম্যান‌ওয়্যার আক্রমণের প্রবল ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • ব্লকচেইন প্রযুক্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি শক্তি খরচ হয়, ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে গ্ৰীনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটে; যা জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
  • নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক অথরিটি না থাকায় এই ব্যবস্থার উপর কারো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
  • ক্রিপ্টোমুদ্রা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা আছে, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি কয়েন জেনারেট করা যায় না।
  • হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র দেশ ছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার সব দেশে বৈধ নয়।
  • অবৈধ এবং অপরাধমূলক আর্থিক কারবার চালাবার একটি আদর্শ উপায় হয়ে উঠতে পারে।
  • ক্রিপ্টোমুদ্রা কোনোভাবে স্থানান্তরিত হয়ে পড়লে তা পুনরুদ্ধারের আর কোনো উপায় থাকে না।

[Read More – A-Z of Cryptocurrency | Online A-Z of Cryptocurrency | A-Z of Cryptocurrency List]

ক্রিপ্টোকারেন্সি কারবার থেকে সম্ভাব্য আয় [How to Make Money with Cryptocurrency]

ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক ধরণের বিকল্প সম্পদ শ্রেণি। ডলারের বিকল্প রূপে গড়ে তোলা হয়। শেয়ার বাজারের মতো এর ক্রিয়াকলাপ অর্থ উপার্জনের আকর্ষণীয় বিনিয়োগ মাধ্যম হয়ে ওঠে। ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয়ের সাতটি উপায় আছে। তার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হল ‘ট্রেডিং।’ এছাড়া আছে মাইনিং, বিনিয়োগ, স্টেকিং, ICO,- তে অংশ গ্ৰহণ ইত্যাদি। ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং শেয়ার বাজার অনেকটা সমগোত্রীয়। এই উভয় প্লাটফর্মে ইনভেস্ট করে Income‌ যেমন আছে, পাশাপাশি loss ও আছে। ঝুঁকি নিতেই হবে,সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হবে। ক্রিপ্টোমুদ্রা লেনদেনের বহু মার্কেট প্লেস আছে। এদের মধ্যে যে কোনো একটিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ক্রিপ্টো কারবার থেকে বিপুল আয়ের পথ প্রশস্ত হতে পারে। দক্ষতা অর্জনের পূর্বে আজেবাজে এপ্‌ (App) থেকে দ্রুত মুনাফা লুটতে গেলে পস্তাবার সম্ভাবনাই বেশি।

পারচেস সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীরা প্রতি সার্চে ০.১০ PRE থেকে ০.৫০ PRE-এর মাঝামাঝি আয় করেন। এভাবে অনলাইন জব থেকে দৈনিক আয় ৮ PRE-র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অস্থিরতা ক্রিপ্টো বাজারের প্রধান বৈশিষ্ট্য; অভিজ্ঞতা ব্যতীত ক্রিপ্টো-কারবার থেকে আয় অসম্ভব। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের মাত্র ১% শতাংশ ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডের দৈনিক গড়। ক্রিপ্টো দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজেক্ট যুক্ত হচ্ছে; দক্ষতা অনুযায়ী নিরাপদ ও সুবিধেজনক বাগ বেছে নিতে পারলে ক্রিপ্টো লেনদেন থেকে আয় সুনিশ্চিত করা যায়। অধিকাংশ ক্রিপ্টো-ট্রেডারদের বর্তমান বেতন $56.500 (25 পার্সেন্টাইল) থেকে $105.500 (75 পার্সেন্টাইল)-এর মধ্যে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার থেকে শীর্ষ উপার্জনকারীগণ প্রায় সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী।যাদের বার্ষিক গড় আয় 9018.500 মার্কিন ডলার।

ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন কি অপরাধ? [Is trading in crypto illegal?]

ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন অপরাধ কি না তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশ ও দেশের জনগণের মন- মানসিকতার উপর। যেহেতু ক্রিপ্টো-প্রক্রিয়াটি এক ধরণের জুয়া, সেহেতু প্রশাসন এবং জনগণ উভয়ের শুভবুদ্ধি, সততা এবং সচেতনতার, সহায়তা পেলে ক্রিপ্টো লেনদেন উপার্জনের সোপান হতে পারে অন্যথায় অপরাধ জগতের লীলাক্ষেত্র হতে বাধ্য। তবে অনেক দেশ এবং অনেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেনকে অপরাধ বলে বিবেচনা করে না, আবার অনেকে করে। অর্থের সংস্রব বা গন্ধ যেখানে, সমাজবিরোধী তথা অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিবর্গের আনাগোনা সেখানে। ক্রিপ্টোমুদ্রার মতো স্বনিয়ন্ত্রিত অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে মিস-ইউজের সম্ভাবনা প্রবল। ফলে স্ট্রং অথরিটির নিয়ন্ত্রণ এবং কঠোর বিধিনিষেধ থাকা একান্ত প্রয়োজন।

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার অতি দ্রুত প্রসারিত হয়ে চলেছে।একে রোধ করা বোধকরি আর সম্ভব নয়। প্রতিটি দেশের সরকারের উচিত এই ভার্চুয়াল মুদ্রকে বৈধতা দিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা; অন্যথায় অবৈধ পথে অপরাধ প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। অবৈধ, অপরাধ প্রবণ ইত্যাদি নেগেটিভ তক্‌মা দিয়ে ক্রিপ্টোমুদ্রাকে অপাংক্তেয় করে রাখার স্বপক্ষে যুক্তিগুলি ধোপে টেকে না, কারণ বিভিন্ন ধরণের জুয়া, যেমন, গেমিং, ঘোড়াবাজি, লটারি, বেটিং, ক্যাসিনো ইত্যাদি বিবিধ প্রকার অনৈতিক অর্থকরী কারবারসমূহ যেখানে অবাধে চলছে, সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার কোনো যুক্তিগ্ৰাহ্য কারণ থাকতে পারে না। সরকার জানে কিন্তু প্রকাশ্যে মানে না।অথচ ঘুরপথে, ব্যাকডোর দিয়ে সরকারি কোষাগার ভরে তোলার উপায়টাকে প্রকারান্তরে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সমর্থনের অঘোষিত হাতিয়ার বলা চলে না কি? আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ। সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকে অপরাধ বা হালালের পর্যায়ে গণ্য করা হয়। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির কারবার যে অপরাধ নয়, এই মর্মে সিআইডি-কে চিঠি দিয়ে জ্ঞাত করে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক।

ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রভাব [Impact of Cryptocurrency in India]

ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির কারবার অবৈধ, আবার বৈধ ; নিষিদ্ধ কিন্তু নিষ্ক্রিয় নয়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল মুদ্রার উপর কঠোর অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও ক্রিপ্টো-লেনদেন রমরমিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ নাগাদ সারা ভারতে ক্রিপ্টো- ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৫৬ মিলিয়নের ও অধিক। সম্প্রতি ভারতে ক্রিপ্টোমুদ্রা লেনদেনের বাজার ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে। বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোমুদ্রার কারবার বিপুল পরিমাণে বেড়ে গেছে এবং তার সবটাই সম্পূর্ণ গোপনে। বর্তমানে বিশ্বের বাজারে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোমুদ্রা বিটকয়েনের যত লেনদেন হয় তার ১১% শতাংশ হয় ভারতে বলে বিশ্ব বাজার বিশেষজ্ঞদের দাবি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ অবধি বিটকয়েনের দাম ছিল ৬০ হাজার টাকার মতো, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২২ হাজারে।

RBI-এর গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে জুয়া ছাড়া কিছুই না।একে এক প্রকার আর্থিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করা ভুল। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সিকে স্বীকৃতি না দিলে ও RBI তার নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। তবে কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব টি বি সোমনাথনের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, বিটকয়েন বা অন্যান্য নন-ফানজিবেল টোকেনের (NFT) মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি কখনোই স্বীকৃত মুদ্রার তক্‌মা পাবে না। এমন কি RBI যে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে চাইছে তা ও স্বীকৃত মুদ্রা হবে না।

বিনিয়োগের ব্যাপারে ভারতীয়গণ ঐতিহ্যগতভাবে বরাবরই, সোনা, সরকারি বন্ড বা রিটেল এস্টেটে অভ্যস্ত। অধুনা সেই প্রথাগত ঐতিহ্য ভেঙে প্রযুক্তিনির্ভর ক্রিপ্পোকারেন্সির আকর্ষণ নতুন করে গোপনে গভীরভাবে তাদেরকে চুম্বকের মতো টানছে। ক্রিপ্টো কারবার গোপনে ঘটে চললে ও ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রভাব এক কথায় ক্রমবর্ধমান। এই গুপ্তমুদ্রার গুপ্ত কারবার থেকে বিপুল অংকের আর্থিক লাভের খবর সরকারের অগোচর নয়।যার কারণে ২০২২-২৩- এর অর্থ বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিটকয়েন লেনদেন থেকে প্রাপ্ত আয়ের উপর ৩০%শতাংশ হারে ট্যাক্স ধার্যের কথা ঘোষণা করেন।এ প্রসঙ্গে তাঁর আরো বক্তব্য হল,ক্রিপ্টো কারবার থেকে আয়কর নিতে নতুন করে আলাদা আইন প্রনয়ণের প্রয়োজন নেই। আগামী অর্থবর্ষ থেকে আয়কর রিটার্ন ফর্মে পৃথক একটি স্তম্ভ বা কলম রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব তরুণ বাজাজ।

ভারতে নিষিদ্ধ ক্রিপ্টোকারেন্সি কারবার নিয়ে উদ্ভূত এক মামলার প্রেক্ষিতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বৈধতার পক্ষে সায় দেয়। অজয় ভরদ্বাজ বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়ার এক মোকদ্দমার শুনানি প্রসঙ্গে বিচারপতি সূর্যকান্তের বেঞ্চ বিটকয়েন নিয়ে ভারত সরকারের অবস্থান অবিলম্বে হলফনামা দিয়ে স্পষ্ট করতে নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি বিচার পতির বক্তব্যে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। তবে ক্রিপ্টোমুদ্রার অবৈধ কার্যকলাপের জন্য সরকার যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, তৎসত্ত্ব ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে প্রচ্ছন্নভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। Superapp Crypto Wire সম্প্রতি ভারতের প্রথম ক্রিপ্টো-ইনডেক্স CI15 চালু করেছে। অনেকগুলি ভারতীয় কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন অ্যাপ্লিকেশন সমূহের অনুসন্ধান করছে,যার ফলশ্রুতিতে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত ও ত্বরান্বিত হতে পারে।

উপসংহার

অদূর ভবিষ্যতে প্রচলিত প্রথাগত মুদ্রা ব্যবস্থার দুনিয়ায় ডিজিটাল বা ক্রিপ্টোমুদ্রা যুগান্তর নিয়ে আসতে পারে, যার প্রাবল্যে আর্থিক ব্যবস্থায় ঘটবে এক বিরাট রূপান্তর। বিকেন্দ্রীকৃত বিকল্প ব্যবস্থায় ক্রিপ্টো,আর্থিক ল্যান্ডস্কেপকে ভবিষ্যতে নতুন আকার দেবে। উত্তরোত্তর নব নব প্রযুক্তির উদ্ভব ও উন্নতির ফলে আমাদের জীবন ধারায় অভাবিত পরিবর্তনের সংকেত নির্দেশ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মন্দ প্রভাব যত‌ই থাকুক না কেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গতির যুগে তাকে রোধ করা দুরূহ। সে চেষ্টা না করে, প্রযুক্তির এই প্রকৌশলকে গ্ৰহণযোগ্য আকারে অভ্যর্থনা জানানোই বোধকরি হবে সুস্থ মানসিকতার সুলক্ষণ।

** তথ্য সহায়তায় গুগল **

প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha

Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | শঙ্খক্ষেত্র পুরীধাম ও মাদলা পাঁজির রাজবৃত্তান্ত

Appearance of Jagannath and Patitapawan Srivigraha | 2023

Role of parents in raising children | Bengali Article 2023

Political Consciousness of Marquez | মার্কেসের রাজনৈতিক চেতনা | Article 2023

Bengali A-Z of Cryptocurrency | A-Z of Cryptocurrency PDF | A-Z of Cryptocurrency Essay | A-Z of Cryptocurrency | Bengali Article | Bengali Written Article | International Article | cryptocurrency price wikipedia | Article Writing Course | Academic Article Writing | Professional Article Writer | A-Z of Cryptocurrency Video | A-Z of Cryptocurrency Audio | cryptocurrency prices live chart | Collection of A-Z of Cryptocurrency | cryptocurrency prices in inr | English Article Writing | Article Writing Job | Professional Writer | Republic Day Wikipedia | A-Z of Cryptocurrency Ebook | cryptocurrency market | Independence Day Wikipedia | Indian A-Z of Cryptocurrency | Shabdodweep Indepence Day Essay | Shabdodweep Writer | A-Z of Cryptocurrency MP4 | cryptocurrency news | Article Factory | Freelance Article Writer | New A-Z of Cryptocurrency | cryptocurrency price | cryptocurrency price chart | cryptocurrency price prediction | When cryptocurrency tax started in India? | A-Z of Cryptocurrency History | Full details – A-Z of Cryptocurrency

Leave a Comment