Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | শঙ্খক্ষেত্র পুরীধাম ও মাদলা পাঁজির রাজবৃত্তান্ত

Sharing Is Caring:
Shankhakshetra Puridham and Madala Panji

শঙ্খক্ষেত্র পুরীধাম ও মাদলা পাঁজির রাজবৃত্তান্ত – অভিজিৎ পাল [Shankhakshetra Puridham and Madala Panji]

(১)

ওড়িশার আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলে সমগ্র ওড়িশার পবিত্রভূমিকে বিষ্ণুর চার হাতের চার উপকরণ শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মের অনুসারে চার ভাগে বিভক্ত করার রীতি রয়েছে। এই আধ্যাত্মিক বিন্যাসের অনুসারে ওড়িশার ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী মুখ্য বৈষ্ণবতীর্থ পুরুষোত্তম ধাম শ্রীক্ষেত্র হলো শঙ্খক্ষেত্র, মুখ্য শৈবতীর্থ ভুবনেশ্বর ধাম হলো চক্রক্ষেত্র, মুখ্য শাক্ততীর্থ জাজপুর মণ্ডল হলো গদাক্ষেত্র ও মুখ্য সৌরতীর্থ অর্কক্ষেত্র কোনার্ক অঞ্চল হলো পদ্মতীর্থ। ওড়িশায় লোকবিশ্বাস রয়েছে, জগন্নাথই একাধারে বিষ্ণু, শিব, শক্তি, গণেশ, সূর্য। উৎকলের পবিত্রভূমি সাক্ষাৎ নারায়ণের শরীর।

বাস্তবিকই পুরীতীর্থের ভৌগলিক আকৃতি বা প্রাকৃতিক গঠনকৌশল শঙ্খের মতো। সাধারণত শঙ্খ দুই প্রকারের — দক্ষিণাবর্ত ও বামাবর্ত। এর মধ্যে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খই বিষ্ণুর প্রিয়। ওড়িশার দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগর থাকার জন্য পুরীক্ষেত্রকে ওপর থেকে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খের মতো দেখতে লাগে। দক্ষিণাবর্ত শঙ্খক্ষেত্র পুরীর নীলাচলের ঠিক কেন্দ্রে বিরাজমান জগন্নাথদেব। জগন্নাথ ও জগন্নাথের শ্রীমন্দিরকে ঘিরে রেখেছে বিভিন্ন প্রাচীন দেবতীর্থ, আশ্রম, মঠ, মন্দির, বিভিন্ন সাধকের সাধনভূমি, সরোবর ও ঐতিহাসিক স্মৃতিধন্য গাছগুলি। ওড়িশার অনেক আধ্যাত্মিক অনুভূতিপ্রবণ মানুষই বিশ্বাস করেন শঙ্খক্ষেত্র পুরী তীর্থের জগন্নাথের ভূমি দেবযন্ত্রস্বরূপ। যন্ত্রের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্র-সুদর্শনের অবস্থান।

শঙ্খক্ষেত্রের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সর্বমোট একশো পনেরোটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। সেগুলি হলো — ১) শ্রীমন্দিরের কেন্দ্রে বিরাজমান জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলভদ্র-সুদর্শন, ২) শ্রীক্ষেত্রের পীঠনায়িকা বিমলা দেবী, ৩) শ্রী বা মহালক্ষ্মী দেবী, ৪) উত্তরা দুর্গা দেবী, ৫) বট মঙ্গল [প্রথম], ৬) গরুড় স্তম্ভ, ৭) মহাপ্রভুর ভোগ মণ্ডপ, ৮) বাঞ্ছিত ফলদাতা কল্পবৃক্ষ, ৯) রোহিণী কুণ্ড, ১০) বট গণেশ, ১১) উচ্ছিষ্ট গণপতি, ১২) সারদা বা সরস্বতী দেবী, ১৩) নবগ্রহ, ১৪) কোনার্ক অর্ক বা সূর্য দেব, ১৫) পাদপদ্ম তীর্থ, ১৬) যজ্ঞ বট, ১৭) অঙ্গেশ্বর, ১৮) ইন্দ্রাণী দেবী, ১৯) ক্ষেত্রপাল দেব, ২০) স্বর্ণ ভৈরবী দেবী, ২১) মুক্তেশ্বরী দেবী, ২২) চিত্র কালী, ২৩) বট মার্কণ্ডেয়, ২৪) কাত্যায়নী দেবী, ২৫) গোপেশ্বর দেব, ২৬) বেদ কালী, ২৭) পাতালেশ্বর দেব, ২৮) ভুবনেশ্বরী দেবী, ২৯) বৈকুণ্ঠেশ্বর দেব, ৩০) যজ্ঞেশ্বরী দেবী, ৩১) ঈশানেশ্বর দেব, ৩২) শীতলা দেবী, ৩৩) দেবতার ভোগের পাকশালা, ৩৪) দক্ষিণেশ্বর দেব, ৩৫) কুণ্ডলেশ্বর দেব, ৩৬) রাম চৈতন্য মন্দির, ৩৭) বড় হনুমান মন্দির, ৩৮) নির্মাল্য হনুমান, ৩৯) অলক বাটিকা, ৪০) চক্র নারায়ণ স্বামী, ৪১) রামেশ্বর দেব, ৪২) চতুর্ধাম তীর্থ, ৪৩) কানপাতা হনুমান, ৪৪) নীলাদ্রি বিহারী দেব, ৪৫) ভবেশ্বর দেব, ৪৬) সিয়ালিলতা, ৪৭) কৈলী বৈকুণ্ঠ অঞ্চল, ৪৮) তপস্বী হনুমান, ৪৯) স্বর্ণ কূপ, ৫০) জগন্নাথের মহাপ্রসাদের প্রাপ্তিস্থান আনন্দবাজার, ৫১) দেবস্নানমঞ্চ, ৫২) মেঘনাদ প্রাচীর, ৫৩) শ্রীমন্দিরের সিংহদ্বার বা পূর্বদ্বার, ৫৪) অরুণস্তম্ভ, ৫৫) বড়ছটী মঠ, ৫৬) ছৌনী মঠ, ৫৭) পেজনালা, ৫৮) প্রহরী হনুমান, ৫৯) শ্রীমন্দিরের দক্ষিণদ্বার, ৬০) দুর্গামাধব মন্দির, ৬১) মঙ্গলেশ্বরী, ৬২) শ্রীমন্দিরের পশ্চিমদ্বার, ৬৩) শ্রীমন্দিরের উত্তরদ্বার, ৬৪) লোকনাথ শিব, ৬৫) রামেশ্বর শিব, ৬৬) কাণ্ড নৃসিংহ দেব, ৬৭) কান্দু আশ্রম, ৬৮) নিকুম্ভিলা বট, ৬৯) হরচণ্ডী দেবী, ৭০) চামুণ্ডেশ্বরী দেবী, ৭১) বনদুর্গা দেবী, ৭২) বাশেলী, ৭৩) কপালমোচন শিব, ৭৪) মণিকর্ণিকা তীর্থ, ৭৫) ঘটমঙ্গলা, ৭৬) দেবী ভগবতী, ৭৭) মার্কণ্ডেশ্বর শিব, ৭৮) মার্কণ্ডেয় তীর্থ, ৭৯) সপ্ত মাতৃকা দেবী, ৮০) অলম্বা দেবী, ৮১) আঠারো নালা, ৮২) মকরধ্বজ হনুমান, ৮৩) ভার্গবী নদী, ৮৪) মুক্তেশ্বর দেব, ৮৫) বট মঙ্গল [দ্বিতীয়], ৮৬) কপোতেশ্বর শিব, ৮৭) বিল্বেশ্বর শিব, ৮৮) সিদ্ধ হনুমান, ৮৯) ইন্দ্রদ্যুম্ন তীর্থ, ৯০) নীলকণ্ঠেশ্বর শিব, ৯১) আদি নৃসিংহ ভগবান, ৯২) গুণ্ডিচা ভবন, ৯৩) মৌসিমা, ৯৪) মর্চিকা দেবী, ৯৫) চর্চিকা দেবী, ৯৬) ষোড়শ পুত্রী, ৯৭) নারায়ণী দেবী, ৯৮) অঙ্গিরা আশ্রম, ৯৯) অঙ্গিরা বট, ১০০) দক্ষিণা কালিকা দেবী, ১০১) উগ্ৰেশ্বরাশ্রম, ১০২) শ্বেতগঙ্গা ধারা, ১০৩) মুক্তিশিলা, ১০৪) আদি শঙ্করাচার্য পীঠস্থান, ১০৫) স্বর্গদ্বার, ১০৬) বারাহী দেবী, ১০৭) শ্যামা কালিকা দেবী, ১০৮) বেড়ী হনুমান, ১০৯) চক্রতীর্থ, ১১০) চক্র নারায়ণ দেব, ১১১) মহোদধি তীর্থক্ষেত্র, ১১২) জগন্নাথ বল্লভ, ১১৩) কাশী বিশ্বনাথ, ১১৪) বিশ্বেশ্বরী দেবী, ১১৫) নরেন্দ্র সরোবর।
এর প্রতিটি দেবস্থান, দেববিগ্রহ, মঠ, আশ্রম ইত্যাদি কোনো না কোনোভাবে মূল শ্রীমন্দিরের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। একাধিক আচার অনুষ্ঠান ও রীতি পালনের জন্য জগন্নাথ বা তার প্রতিনিধিদের কেউ এই সমস্ত স্থানে লীলা বর্ধন করেছেন।

(২)

‘মাদলা পাঁজি’ পুরীর শ্রীমন্দিরের নিজস্ব দিনপঞ্জিকা। শ্রীমন্দিরের সেবকরা দীর্ঘ সময় ধরে বহুজন মিলে কালে কালে মাদলা পাঁজি লিখেছেন। মাদলা পাঁজি মূলত গদ্যে লেখা। মাদলা পাঁজির ঐতিহাসিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে ওড়িশার গবেষকমণ্ডলে যথেষ্ট সংশয়, মতানৈক্য, বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু এর পরেও মাদলা পাঁজিকে অতিক্রম করে শ্রীক্ষেত্র নগরীর ইতিহাস লেখা অসম্ভব। মাদলা পাঁজি ওড়িআ গদ্যরীতির ধারাবাহিক বিবর্তনের জীবন্ত দলিল। ধ্রুপদী ওড়িআ গদ্যরীতি থেকে আধুনিক ওড়িআ গদ্যরীতি পর্যন্ত রূপরেখা রয়েছে মাদলা পাঁজিতে। মাদলা পাঁজিতে রয়েছে শ্রীমন্দিরের ইতিহাস, উৎকলী রাজবংশের ইতিহাস, উৎকলের জন ইতিহাস, পুরাণসম্মত ইতিহাস, অজস্র কিংবদন্তি থেকে শুরু করে মন্দির সংস্কারের বিবরণও।

মাদলা পাঁজিতে চার যুগের রাজাদের বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখণ্ডের পুরুষোত্তমমাহাত্ম্য রয়েছে, দশ যোজন বিস্তৃত তীর্থরাজ শ্রীক্ষেত্র সমুদ্রের জল থেকে উত্থিত হয়। এরই মধ্যস্থলে রয়েছে নীলগিরি। দূর থেকে যাকে পৃথিবীর স্তন মনে হয় :
অহো তৎ পরমং ক্ষেত্রং বিস্তৃতং দশযোজনৈঃ।
তীর্থরাজস্য সলিলাদুত্থিতং বালুকাচিতম্।।
নীলাচলেন মহতা মধ্যস্থেন বিরাজিতম্।
একস্তনমিব পৃথ্যাঃ সুদূরাৎ পরিভাবিতম্।।
জগৎ সংসার সৃষ্টির আদিলগ্নে নিরাকার মহাবিষ্ণুর প্রথম সাকার রূপ নীলমাধব বিগ্রহে প্রকাশের অনেক আগেই নীলগিরি বা শ্রীক্ষেত্রের মাহাত্ম্য ঘোষিত হয়েছে। একই দৃষ্টিভঙ্গিতে মাদলা পাঁজিতে সত্যযুগ থেকে রাজাদের বৃত্তান্ত পাওয়া গেছে। এই সত্যযুগ শুরু হয় সৃষ্টির সূচনায়। একটি সৃষ্টির সূচনা হয় পূর্ববর্তী বিনাশের পর।

পৌরাণিক সংখ্যাপদ্ধতি ও যুগবিভাগ এই তত্ত্ব প্রবেশের আগে স্পষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। বিষ্ণুর নাভিকমল থেকে প্রজাপতি ব্রহ্মার আবির্ভাব ঘটে। ব্রহ্মাই জগৎ সংসার সৃষ্টি করেন। বিষ্ণুর দ্বাদশবার পূর্ণ অবতারের লীলাবিলাস সমাপ্ত হলে প্রজাপতি ব্রহ্মার একটি দিন সম্পূর্ণ হয়। আরও সহজ করে বলা যেতে পারে : সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের সমন্বয়ে এক গণ্ডা হয়। এমন করে মোট এক হাজার গণ্ডায় একজন ব্রহ্মার একটি দিন হয়, এমন সমান সংখ্যক কালপর্ব জুড়ে ব্রহ্মার এক রাত পূর্ণ হয়। দিন ও রাত মিলে ব্রহ্মার মাত্র একটি দিন পূর্ণ হয়। এভাবে ব্রহ্মার পনেরো দিনে এক পক্ষ, ত্রিশ দিনে এক মাস সম্পূর্ণ হয়। এভাবে দীর্ঘ বারো মাসে হয় ব্রহ্মা এক বছর। তাঁর একশো আট বছর পূর্তি হলে ব্রহ্মার জীবন শেষ হয়। এই সময় পৃথিবীতে প্লাবন আসে, মহাবিষ্ণু অনন্তদেবের কোলে শয়ন করেন ও জগৎ সংসার লয় হয়। এমন অঙ্কের হিসেবে পৃথিবীতে সত্যযুগের কালপর্ব ১৭,২৮,০০০ বছর, ত্রেতাযুগের ব্যাপ্তি ১২,৯৬,০০০ বছর, দ্বাপরযুগের পরিসর ৮,৬৪,০০০ বছর ও কলিযুগের প্রসার ৪,৩২,০০০ বছর। বছরের সংখ্যার দিকে তাকালেই বোঝা যায় সত্যযুগ থেকে কলিযুগের দিকে বছরের পরিসর ক্রমান্বয়ে কমেছে। এর পিছনে পাপতত্ত্ব রয়েছে, সত্যযুগে পাপ সবচেয়ে কম তাই সময়ের পরিসর ও জীবের আয়ু বেশি, এরপর থেকে পৃথিবীতে পাপবৃদ্ধির ফলে তা ক্রমান্বয়ে কমে এসে কলিযুগের সবচেয়ে ছোট পরিসর ও জীবনের আয়ু কম।

মাদলা পাঁজি অনুযায়ী সত্যযুগে মোট ছয়জন সত্যনিষ্ঠ রাজা পৃথিবী শাসন করেছিলেন। পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন রাজা ছিলেন মহারাজা বলী। তিনি ৫,০০,০০০ বছর শাসন করেন। তাঁর পরে রাজা বেণু ৩,০০,০০০ বছর, রাজা শিব ১,২৮,০০০ বছর, রাজা মান্ধাতা ৪,০০,০০০ বছর, রাজা পুরুরবা ২,০০,০০০ বছর ও রাজা জানুঘণ্টা পরশুরাম ২,০০,০০০ বছর পৃথিবীর অধীশ্বর ছিলেন। অর্থাৎ মাদলা পাঁজির হিসেব অনুযায়ী সত্যযুগে মোট ছয়জন রাজা ১৭,২৮,০০০ বছর ধরে রাজত্ব করেছিলেন। এরপর ত্রেতাযুগ প্রবর্তিত হলে যুগের প্রথম রাজা ছিলেন অষ্টব্রহ্মদেব। তিনি মোট ৮৫,০০০ বছর পৃথিবী শাসন করেছিলেন। অষ্টব্রহ্মদেবের পর রাজা কাশ্যপদেব ৭৮,০০০ বছর, রাজা দিলীপ ৬৮,০০০ বছর, রাজা সূর্যদেব ৬০,০০০ বছর (সূর্যবংশ সূচনা), রাজা হরিচন্দন ৫৮,০০০ বছর, রাজা গান্ধারদেব ৫৪,০০০ বছর, রাজা হরিবেণু ৬০,০০০ বছর, রাজা যুগদেব ৫৭,০০০ বছর, রাজা আরণ্যদেব ৫৯,০০০ বছর, রাজা বইসুনি ৫০,০০০ বছর, রাজা সুরেন্দ্রদেব ৫২,০০০ বছর, রাজা সৎমনুদেব ৫৫,০০০ বছর, রাজা পৃথু ৫৪,০০০ বছর, রাজা জীবন্যাসদেব ৫৫,০০০ বছর, রাজা মান্ধাতা ৫২,০০০ বছর, রাজা সাগর ৪৪,০০০ বছর, রাজা ঋতুপণ ৫৩,০০০ বছর, রাজা ভগীরথ ৫৭,০০০ বছর, রাজা ত্রিবলী ৪৮,০০০ বছর, রাজা রঘু ৫০,০০০ বছর (রঘুবংশ সূচনা), রাজা অজদেব ৪৮,০০০ বছর, রাজা দশরথ ১৯,০০০ বছর, রাজা রামচন্দ্র ১১০০০ বছর (এর মধ্যে রামচন্দ্রের ভাই ভরত তাঁর প্রতিনিধি হয়ে রাজ্যশাসন করেন ১৪ বছর, এই রাজা রামচন্দ্রই পুরুষোত্তম জগন্নাথ) পৃথিবীর শাসন করেছিলেন। রামচন্দ্রের স্বশরীরে স্বর্গলাভ হওয়ার পর রাজা লব-কুশ মোট ৯,০০০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। অর্থাৎ মাদলা পাঁজির হিসেব অনুযায়ী ত্রেতাযুগে সর্বমোট পঁচিশজন রাজা ১২,৯৬,০০০ বছর রাজ্য পালনের ব্রত বহন করেছিলেন।

এরপর পৃথিবীতে যুগ পরিবর্তন হয় ও দ্বাপরযুগের সূচনা ঘটেছিল। দ্বাপরযুগের প্রথম রাজা ছিলেন প্রসাদদেব। মহারাজা প্রসাদদেব ৫৭,০০০ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর পরে রাজা বেণুদেব ৫২,০০০ বছর, রাজা নিরঞ্জন ৩৫,০০০ বছর, রাজা ব্রহ্মানন্দ ৩০,০০০ বছর, রাজা সুরথ ৩২,০০০ বছর, রাজা মণিদেব ৩৪,০০০ বছর, রাজা মেদদেব ৩২,০০০ বছর, রাজা অরণ্য ৩৩,০০০ বছর, রাজা সিদ্ধ ৩৫,০০০ বছর, রাজা বৈবসূত মনু ৩৩,০০০ বছর, রাজা নঘোষ ৩২,০০০ বছর, রাজা যুগদেব ৩০,০০০ বছর, রাজা মনু ৩৫,০০০ বছর, রাজা অত্রি ৩২,০০০ বছর, রাজা ত্রিপুর ৩৭,০০০ বছর, রাজা বয়সমান ২৮,০০০ বছর, রাজা সরপ ৩৫,০০০ বছর, রাজা বলিদেব ১০,০০০ বছর, রাজা দুষ্ম্যন্ত ৩০,০০০ বছর, রাজা ভরত ২৮,০০০ বছর, রাজা মন্মথ ১৩,০০০ বছর, রাজা সরব ১১,০০০ বছর, রাজা ভাস্কর ২৮,০০০ বছর, রাজা ব্যাধি ১৮,০০০ বছর, রাজা কনু ৩২,০০০ বছর, রাজা সাত্রঁতনু ৩২,০০০ বছর, রাজা বিচিত্রবীর্য ২২,০০০ বছর, রাজা পাণ্ডু ১৮,০০০ বছর, রাজা যুধিষ্ঠির ৫২,০০০ বছর। দ্বাপরযুগে সর্বমোট ত্রিশ জন রাজা মোট ৮,৬৪,০০০ বছর এই ভূলোক শাসন করেন।

Anabasarakalina besha of Jagannath

কলিযুগের প্রথমদিকে রাজা যুধিষ্ঠির মাত্র ১১২ বছর শাসন করেছিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভাইদের পুত্রদের সংহার করেছিলেন অশ্বত্থামা। ফলে তাঁর পরে রাজা পরীক্ষিত (যুধিষ্ঠিরের পৌত্র) ৭৫৭ বছর শাসন করেছিলেন। তিনি শুকদেবের কাছে শ্রীমৎ ভাগবতকথা শ্রবণ করেছিলেন। এঁদের বৃত্তান্ত ব্যাসদেব কৃত মহাভারতে রয়েছে। রাজা পরীক্ষিতের পর রাজা জন্মেজয় ৫৮২ বছর, তাঁর পুত্র রাজা সঙ্করদেব ৪৮০ বছর, রাজা গৌতমদেব ৫৭৩ বছর, রাজা মহীন্দ্রদেব ২০৫ বছর, রাজা সসোকদেব ১৫০ বছর, রাজা সরসংঘ ১২৫ বছর, রাজা ভোজদেব ১২৭ বছর, রাজা বীর বিক্রমাজিত ১৩৫ বছর, রাজা কর্মার্জিত ১১৫ বছর, রাজা বটুকেশ্বরদেব ৭০ বছর, রাজা ত্রিভুবন ৬৩ বছর, রাজা নির্মলদেব ৭০ বছর, রাজা ভীমদেব ৭৫ বছর, রাজা শোভনদেব ৯৬ বছর। রাজা শোভনদেব জগন্নাথের উপাসক ছিলেন। শোভনদেবের সঙ্গে হিংস্র যবন রাজা রক্তবাহুর ভীষণ যুদ্ধ হয়েছিল। কলিযুগের পরিসর ৪,৩২,০০০ বছর। এই কলিযুগ এখনও চলমান।

এছাড়াও কয়েকজন ঐতিহাসিক গজপতি রাজার বৃত্তান্ত মাদলা পাঁজিতে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজা যযাতিকেশরী, রাজা অনন্তকেশরী, রাজা ললাটেন্দুকেশরী, রাজা কনককেশরী, রাজা নরকেশরী, রাজা চূড়গঙ্গদেব, রাজা অনঙ্গভীমদেব, রাজা মত্তভানু কপিলেন্দ্রদেব, রাজা পুরুষোত্তমদেব, রাজা প্রতাপরুদ্রদেব (তিনি মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন), রাজা কালুয়াদেব, রাজা কখারুয়া প্রতাপ, রাজা গোবিন্দ বিদ্যাধর, রাজা চক্রপ্রতাপদেব, রাজা নৃসিংহজেনা, রাজা রঘুরাম ছোটরায়, রাজা মুকুন্দদেব, এরপর ভোই বংশের রাজা রামচন্দ্রদেব, রাজা পুরুষোত্তমদেব, রাজা নৃসিংহদেব, রাজা গঙ্গাধরদেব, রাজা বলভদ্রদেব, রাজা মুকুন্দদেব, রাজা দিব্যসিংহদেব, রাজা হরেকৃষ্ণদেব, রাজা গোপীনাথদেব, রাজা রামচন্দ্রদেব, রাজা বীরকেশরীদেব, রাজা দিব্যসিংহদেব, রাজা মুকুন্দদেব প্রমুখ। মাদলা পাঁজি আজও অতি গোপনে লিখিত হয়ে চলেছে। তদানীন্তন সময় পর্যন্ত জগন্নাথ সংস্কৃতিতে নানা ইতিবৃত্ত মাদলা পাঁজিতে লেখা হলেও তা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে আনা হয় না। ভবিষ্যতে তা প্রকাশিত হবে।

অভিজিৎ পাল | Avijit Pal

Shesh Belay | শেষবেলায় | মনসুর আলি | Best 2023

Suryamukhi | সূর্যমুখী | শওকত নূর | Best 2023

Teachers day in honor of teachers | শিক্ষকদের সম্মানে শিক্ষক দিবস

Tebhaga Movement | বাংলায় “তেভাগা আন্দোলন” এবং সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গী

Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – bengali article | new journal – Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | Bangla article – Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – pdf | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – video | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – full pdf | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – article book | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – English article | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – history | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – full video | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – audio series | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – new bengali article | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – Bangla prabandha | History – Shankhakshetra Puridham and Madala Panji | Shankhakshetra Puridham and Madala Panji – Images | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Article | Shabdodweep Writer

Leave a Comment