Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal – Barid Baran Gupta
শিউলিরা হারিয়ে যাচ্ছে:: প্রসঙ্গ নলেন গুড় শিল্প – বারিদ বরন গুপ্ত
“শীতের সকালে
শিউলিরা এসেছিলো এককালে
হারিয়ে গেছে ধূসর স্মৃতির আড়ালে!”
এক সময় গ্রামবাংলায় প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত, আর এই খেজুর গাছকে কেন্দ্র করে গোটা শীতকাল জুড়ে একটা ব্যবসা চলতো, অবশ্যই খেজুর গুড় পাটালি! শীতকাল তো গ্রাম বাংলার উৎসবের মাস, কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন উৎসব, নবান্ন, পিঠে পার্বণ ইত্যাদি ,আর এর সাথে যুক্ত হয়েছিল নলেন গুড়, যা গ্রাম্য সংস্কৃতির একটা অঙ্গ হিসেবে ধরা হয়। আধুনিক সভ্যতার গ্ৰাসে আজ তা সোনালী অতীত! শীতের বিকেলে বা সকালে হাড়ি হাতে আর শিউলিদের তেমন দেখা যায় না! গ্রামের পুকুরের ধারে ধারে খেজুর গাছের সাড়ি আজ আর খুব একটা চোখে পড়ে না! সব মিলিয়ে গ্রাম্য সংস্কৃতির আঙ্গিনায় ঐতিহ্যবাহী নলেন রস এবং নলেন গুড় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে!
গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রস, ছোটবেলায় দেখেছি প্রায় প্রত্যেক গ্রামে শীতকালে খেজুর গাছ ছিলে খেজুর রস সংগ্রহ করা হতো, এটা গ্রাম্য সংস্কৃতির একটা অঙ্গ হিসেবে গড়ে উঠেছিল, পৌষ পার্বণ বা নবান্নের সাথে এর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে মনে হয়। আগামী প্রজন্ম হয়তো খেজুর রস, খেজুর গুড় ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হবে তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। কারণ একটাই এই ঐতিহ্যবাহী কঠিন সাধ্য পেশায় আর তেমন রোজগার হয় না, তাই নবীন প্রজন্ম এই ঐতিহ্যবাহী পেশায় আর যুক্ত হতে চাইছে না!
ছোটবেলায় শীতের সকালে চাদর জড়িয়ে সোজা হাজির হতাম খেজুর গাছ তলায়, শিউলিরা এক ঘটি রস ভরে দিত, শীতের সকালে তার কি স্বাদ! হয়তো অনেকদিন আগেই ভুলে গেছি! এই সেদিন সাতের, আটের দশকে গ্রামের তেলা কাকা কুড়ি পঁচিশটা খেজুর গাছ ছুলতো! দেখতাম কার্তিক মাস পড়লেই গাছ ছোলা শুরু হতো, গাছের শীর্ষ দেশ থেকে একটু নীচে, ওপর থেকে নিচু পর্যন্ত আয়তাকারে গাছ ছুলতো, এই গাছ ছোলার কয়েকটা স্টেপ ছিল, দুদিন অন্তর অন্তর ছোলার পর তৃতীয় দিনে খুব হালকাভাবে ছুলে নিচুটা একটু অর্ধ বৃত্তাকারে রেখে, একেবারে মধ্যখানে সামান্য একটা গর্ত করে তারমধ্যে বাসের ডগা অংশ কেটে দু’ভাগ করে নলের মত সাইজ করে ওই ফুটো করা অংশে গেঁথে দেওয়া হতো, তারপর কলসি ওপরে অংশ একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছের সাথে আংটার মধ্যে বেঁধে দেওয়া হতো, রস ওই নলের মধ্য দিয়ে টপ টপ করে হাঁড়ির মধ্যে পড়তো, নলের সাহায্যে এই রস সংগৃহীত হতো, তাই এই রসকে নলেন রস এবং এর তৈরি গুড়কে নলেন গুড় বলা হয়।
উল্লেখ্য যে সবচেয়ে সুমিষ্ট ছিল জিরেন কাঠের রস! এক্ষেত্রে গাছগুলোকে দু-তিন দিন বিশ্রাম দেওয়া হতো, তারপর বিকালের দিকে সামান্য একটু ছিলে ভালো করে হাড়ি ধুয়ে রস সংগ্রহ করা হতো, জিরেন অর্থাৎ বিশ্রাম দিয়ে এই রস সংগ্রহ করা হতো বলে একে জিরেন কাটের রস বলা হয়! এই রসের চাহিদা ছিল খুব বেশি! আর খেতেও সুস্বাদু, তখনকার দিনে শীতের সকালে যারা এই রস খেয়েছে একমাত্র তারাই এর স্বাদের কথা বলতে পারবে। আজকে প্রায় দুর্লভ-ই বলা যায়!
যাই হোক দেখতাম শিউলি রা রস সংগ্রহ করে একটা হাড়িতে রেখে জ্বাল দিত, অনেকক্ষণ ফোটার পর তা একটু চিট চিট করলে নামিয়ে দেওয়া হতো, দেখতে একদম সরষের তেলের মত, এটাই ছিল ঝোলা নলেন গুড়, শীতকালে সরুচিকুলি, পিঠে ইত্যাদি দিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষরা এই নলেন গুড়ের স্বাদ গ্রহণ করেছে! অনেকেই আবার পাটালি তৈরি করত! ছাঁচে ফেলে বিভিন্ন রকমের পাটালি তৈরি হতো! এখনো বাজারে পাওয়া যায়, নামেই নলেন গুড়, নলেন গুড়ের পাটালি! তাতে নলেন গুর কতটা থাকে তা একমাত্র ঈশ্বরই বলতে পারবেন! সবই ভেজাল, কৃত্রিম ফ্লেভারে পরিপূর্ণ ! সেই স্বাদ কি আর মেলে? বর্তমান বাজারে নলেন গুড়ের মিষ্টি সন্দেশ প্রায় সারা বছর-ই মেলে, তাতে আসল নলেন গুড়ের স্বাদ কি আর থাকে?
এই সেদিন খড়ি নদীর তীরে মানকরের কাছে মারো গ্রামে, ভাতার ব্লকের আমারুনের কাছে আরা গ্ৰামে বেশ কয়েকজন শিউলির সাথে দেখা হল, সবার সেই একই বক্তব্য, জ্বালানির যেভাবে দাম বেড়েছে, আর এই পেশায় যে পরিশ্রম হয়, সেই তুলনায় গুড়ের দাম পাওয়া যায় না, তাছাড়া প্রায় পাঁচ কেজি রস ফুটিয়ে দু কেজি মতো গুড় পাওয়া যায়, প্রায় দেড় দুশো টাকার জ্বালানি খরচ হয়ে যায়, সেখানে এক কেজি গুড়ের যা খরচ বাজারে বিক্রি করে সেই পরিমাণ দাম মেলেনা, সবাই সস্তায় গুড় কিনতে চায়, কিন্তু তারা তো খরচের হিসাব রাখে না! সেই কারণেই গুড় বিক্রি করে লাভ থাকে না বললেই চলে! তবুও বেশ কিছু খরিদ্দার আছে, যারা দরদাম করে না, আসল জিনিসটাই পেতে চায়, সেইসব খরিদ্দারদের জন্য ই টিকে আছে এই ব্যবসা! খড়িনদীর তীরে মন্তেশ্বর থানার দেনুড় পঞ্চায়েতের অধীন গলাতুন ডাঙ্গায় রয়েছে অজস্র খেজুর গাছ, এখানে বেশ কিছু শিউলি দীর্ঘদিন ধরে খেজুর গাছ জমা নিয়ে রস সংগ্রহ করে খেজুর গুড় তৈরি করছেন, তাদেরও বক্তব্য প্রায় এক! আগের চেয়ে লাভ অনেক কমে গেছে, কারণ বাজারে তেমন দাম পাওয়া যায় না! এক সময় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই শিউলিদের দেখা যেত, কিন্তু বর্তমানে খেজুর গাছের অভাব এবং এই শিল্পে আগের থেকে লাভ অনেক কম হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্ম আর এই কষ্টসাধ্য পেশায় আসতে চাইছে না, এর মধ্যে নদীয়া চব্বিশ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় এখনো প্রাচীন কিছু শিউলিদের দেখা যায়, তারাই এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটিকে এখনো টিকিয়ে রেখেছে! তবে আর কতদিন টিকে থাকবে তা হয়তো ভবিষ্যতেই বলবে।
শুনেছি তখনকার গ্রাম বাংলার প্রাচীন হাট গুলো শীতকালে নলেন গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল! পূর্ব বর্ধমান জেলার নাদন ঘাট বেলেরহাট প্রভৃতি প্রসিদ্ধ হাটগুলোতে প্রচুর নলেন গুড় আমদানি হতো বলে জানতে পারা যায়! আজ সব অতীত! যান্ত্রিক সভ্যতার গ্রাসে সবকিছু হারিয়ে যেতে বসেছে! বর্তমানে শিউলিরা এই পেশায় আর আসতে চাইছে না, কারণ একটাই শ্রমসাধ্য ঐতিহ্যবাহী এই পেশায় আর তেমন লাভ পাওয়া যায় না, খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে গেছে, প্রাকৃতিক আবহাওয়ার খামখালীপনা হয়তো এই শিল্পের পক্ষে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে! তাই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই শিউলিরা হারিয়ে যাবে, বাংলা হয়তো হারিয়ে ফেলবে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে! কারণ একটাই বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থায় লাভহীন পেশায় কেউ থাকতে চায় না!
বারিদ বরন গুপ্ত | Barid Baran Gupta
Amar Pujo Special | Best Story 2023 | আমার পুজো স্পেশাল
Ramkrishna Mission Durga Puja Belur Math | Best Article 2023
Life Story of Matangini Hazra | Best Article 2023
The Holy Basil Lighting | Best Bengali Article 2023
Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | Article – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | Best Article in Bengali | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal – essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | Best Article – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | Best Article in Bengali pdf | writing competitions in africa 2023 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions 2023 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | bengali article rewriter | article writing | Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal – writing ai | bengali article writing app | Best Article in Bengali book | Best Article in Bengali – Online | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | Viral Video – Best Article in Bengali | Best Article in Bengali Source | bengali article writing format | Best Article in Bengali News | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | Ebook – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | PDF Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | Best Article in Bengali Font | article writing on global warming | bengali article writing pdf | article writing practice | Best Article in Bengali Ebook 2023 | what is article writing | content writing topics 2023 | Bangla Prabandha | The Best Article in Bengali | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Article | Best Article in Bengali in pdf 2023 | Trending Best Article in Bengali | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Trend – Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal | Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal 2023 | Famous Nolen Gur Shilpa in Bengal – History