Broken Heart Bengali Story – আখতারুল ইসলাম খোন্দকার – সূচিপত্র
ভগ্ন হৃদয় – আখতারুল ইসলাম খোন্দকার
অনেক অগের কিছু লিখা ঘাটতে গিয়ে পূরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। এইচএসসি পাশ করার রেজাল্ট তখনো হয়নি মাত্র পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু পাশ করবো আশা আছে। অথচ আব্বা আমাকে টাইপ শেখানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলো। তিনি পূবালী ব্যাংকের ছোট একটা পদে চাকুরী করে। সেখানে টাইপিষ্টে কিছু লোক নেয়া হবে। আব্বা তাঁর বড় কর্মকর্তাকে বলে রেখেছে, ছেলেকে অর্থাৎ আমাকে একটা চাকুরী দেয়ার জন্য। বাবা যা বেতন পান তা দিয়ে পরিবারের সব চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। আমরা তিন ভাইবোন এবং দাদা-দাদি, নানা-নানিদের নিয়ে আমাদের বড় সংসার। আয়ের উৎস বলতে একমাত্র ওনার চাকুরীটাই। আমি বাড়ির বড় ছেলে তাই বাবার সাথে আমাকেও সংসারের হালটা ধরার জন্য চাকুরী বেশ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেও টানা-হেঁচড়ায় সব চাওয়া পরিবারকে জানাতে পারিনা। এখন বড় হয়েছি, আস্তে আস্তে অনেক কিছু বুঝতেও শিখেছি। আমরা যখন স্কুলে যেতাম পরিবার থেকে দু’ এক টাকাও প্রয়োজন ছাড়া দেয়া হতো না। টিফিনের সময় হলে বাড়িতে আসা-যাওয়া দিয়ে চার কিলো রাস্তা হেঁটে এসে নাকে-মুখে কিছু দিয়ে আবার স্কুলে দৌড় দিতে হতো। যেহেতু ৪৫ মিনিট টিফিন টাইম এর মধ্যেই উপস্থিত হতে হবে। অনেক দিন বাড়ি থেকে টিফিন খেয়ে আসতে গিয়ে ক্লাসে ঢুকতে দেরি হওয়ায় শিক্ষকদের বেতের বাড়ি খাওয়া মাফ ছিলনা। তাই সকাল নয়টায় স্কুলে আসার সময় খেয়ে আসতাম আর বেশির ভাগ টিফিনে খেতে না গিয়ে একেবারে ছুটির পরে বাসায় গিয়ে বিকাল পাঁচটার দিকে ভাত খেতাম। আবার মাঝেমধ্যে দু’একদিন বাটিতে করে ভাত বা রুটি নিয়ে আসা হতো।
আমি ১৯৯৫ সালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কলেজের সামনে শহর সমাজ সেবার ট্রেনিং সেন্টারে টাইপ শেখার জন্য ভর্তি হলাম। অবশ্য এটা সমাজসেবা পরিচালিত ট্রেনিং সেন্টার এখানে খরচ কিছুটা কম। প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ছ’ মাস মেয়াদে দশজন করে বেশ কয়েক ব্যাচে শেখানো হয়। কিন্তু আব্বা বলেছেন তিন মাসের মধ্যেই লোক নিয়োগ হবে তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব টাইপ শিখে ফেলতে হবে। তাছাড়া এরমধ্যেই আমার এইচএসসির রেজাল্টও বের হবে। তবে পাশ না করতে পারলে এ পদে কখনো চাকুরির জন্য আবেদন করা যাবেনা। অল্প বয়সে অনেক চিন্তা মাথায় নিয়ে আমার আগামীর পথচলা। টাইপ শেখানোর ম্যাডামকে অনেক বলে কয়ে ছ’ মাসের কোর্স হলেও তা তিন মাসে কমিয়ে এনেছি। তিনি আমার হয়ে অনেক অনুরোধ করেছেন পরিচালকের কাছে। তবে এর জন্য প্রতিদিন এক ঘন্টা করে দুই ব্যাচে আমাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং ছ’মাসের সম্পূর্ণ ফি জমা দিতে হবে। আমিও ম্যাডামের সব কথায় রাজি হয়ে ভর্তি হলাম। দুপুর দুইটা থেকে চারটা পর্যন্ত আমার টাইপ শেখার সময় নির্ধারণ হলো।
যদিও বলা ঠিক না বা নিজের ঢোল নিজে পেটানো অনুচিত। তবুও সত্য কথা বলতে দোষ কোথায়? আমি অনেকটাই নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির ছেলে ছিলাম। উঁচু বাক্যে কাউকে কিছু বলেছি বলে কেউ বলতে পারবেনা। হাজার টা বকাঝকা দিলেও প্রত্যুত্তর দেইনি। মাঝেমধ্যে ঘরের কোণে বসে অঝোর ধারায় চোখ দু’টোতে প্লাবিত করি। আমরা দু’ ভাইবোন পিঠা-পিঠি ছিলাম। বোনটা একটু দুষ্ট প্রকৃতির ছিল। খেলা-ধুলা করতে গিয়ে একে ওকে মার-ধর করতো। খেলতে গিয়ে কেউ দোষ না করলেও যদি আমি মারি কেউ বিশ্বাস করবেনা। বরং বলবে সে অবশ্যই কোন না কোন দোষ করেছে বলে মেরেছে, আখতার অমন ছেলেই না। আর যদি আমার বোন হতো একজনকে সে না মারলেও কাঁদতে কাঁদতে গেলেই ওই বদমায়েশ মেয়েটা মেরেছে বলে বলবে।
আমাদের প্রশিক্ষণের ম্যাডামের যথেষ্ট ভালোবাসা পেতাম। তিনি পুরো নাম না বললেও সবসময় খোন্দকার বলেই ডাকত। অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে গুরুত্ব সহকারে না শেখালেও আমাকে হাতে ধরে বুঝিয়ে পড়িয়ে শেখাতেন। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার মতো দাঁড়িয়ে তার হাত আমার হাতের উপর রেখে অক্ষর চাপ দেয়া শিখাতেন। মাঝে মাঝে আমি যেন কোথায় হারিয়ে ফেলতাম নিজেকে। ম্যাডামের সুগন্ধি মাখা শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমার চঞ্চলতা ফুটিয়ে তুলতো। বেশ লজ্জায় গুঁটিয়ে থাকতাম তার অতিরঞ্জিত যত্নশীল মনোভাবে। এ ব্যাপারে কেউ কেউ ওনাকে জড়িয়ে এটা ওটা নানান মুখরোচক কথার মালা শুনতে হতো আমাকে। আমি অবোধ বালকের মতো শুনে কাউকে কিছু বলে ঝামেলা বাধায়নি, বরং মুখ বুঝে সব সহ্য করতাম। তিনি দেখতে অনেক সুন্দরী ও লম্বায় সাড়ে ছয় ফুট। উনি হাসলেই রসগোল্লার মতো নরম গাল দুটোতে টোল পড়তো। অসম্ভব রকমের সুন্দর কারুকার্যে গড়া তার সারা দেহের আকর্ষণীয় গড়ন। অপরূপ সৌন্দর্যের মুখমণ্ডলে কালের সাক্ষী হয়ে থাকা কাজল চোখের দৃষ্টিতে মন ছুঁয়ে যায়। মধু ঝরা বাঁকানো চিকন দুরু দুরু ঠোঁট দুটো দেখলেই ভগ্নহৃদয় সিক্ত হয়ে আসে। বাড়িয়ে না বলতে চাইলেও কেমন যেন কৃপণতা করা হয়।
অন্যান্যদের মধ্যে রাজশাহী শহরের পাশেই সপুরা থেকে দুটো মেয়ে টাইপ শিখতে আসতো। তারা আমার আরও তিন মাস আগে থেকেই ভর্তি হয়েছিল। দুপুর তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত তাদের শেখার সময় ছিল। ঐ বান্ধবী দুটি মেয়ের একে অপরের সঙ্গে খুবই ভাল সুসম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে একটি মেয়ে হালকা গড়নের হলেও দেখতে নজর কাঁড়া অদ্ভুত সুন্দরী। অনবদ্য লাবণ্যময়ী মিষ্টি চেহারার অধিকারী। তার ঠোঁট টিপা মুগ্ধকর হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে। কেন যে সেই শারমিন মেয়েটা আমাকে অনেক পছন্দ করত বলতে পারবোনা। যদিও কখনো সে ভালবাসি কথাটা কোনদিন মুখ ফোঁসকে বলেনি। পরে জানতে পেরেছিলাম সে এতোটাই ভালবাসতো যে দিবানিশি আমাকে নিয়েই ভাবতো। তার মনের রাঙ্গানো আঙ্গিনায় সর্বদা আমার বিচরণ প্রতিনিয়ত। একটু একটু করে আমিও তার আহবানে সাড়া দিয়ে চলতে লাগলাম। সে প্রতিদিন আমার পাশের চেয়ারটাই বসে টাইপ করতো। আমি আসবার পর থেকে আমার পাশে অন্য কারো বসার ভাগ্য হয়নি। যেহেতু শারমিন আমার আগে থেকেই শিখতো তাই সে ম্যাডামের মতো করেই শেখানোর চেষ্টা করতো। ইচ্ছে করে গা ঘেঁষে থেকে আগবাড়িয়ে সব বোঝাত। টাইপ করার ফাঁকে ফাঁকে তার রোমাঞ্চকর প্রেমের গল্পে মাঝে মাঝে পুলকিত হতাম। সে বানিয়ে বানিয়ে অন্যে বান্ধবীদের প্রণয়নের কথা এমন ভাবে বলত যেন ওর ঠোঁট দিয়ে মধু নির্গত হচ্ছে। এক কথায় মজিয়ে বলারম রসালো ভঙ্গিমা আমাকে মহাপ্লাবনের বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যেত।
শারমিন প্রতিদিন আমার জন্য কোন না কোন খাবার নিয়ে আসতো। যেহেতু আমি সকালে নাস্তা করে নওহাটা কলেজে আসি এবং ক্লাস শেষ করে আবার দুপুরে রাজশাহী এসে টাইপ শিখতাম। টাকা পয়সা সে ভাবে থাকতো না শুধুমাত্র যাতায়াত ভাড়া আমাকে দিতো। কখনো অন্য কেউ আমার ভাড়া দিলে বেচে যাওয়া টাকা দিয়ে মাঝে মধ্যে হোটেলে দু’ একটা সিঙ্গাড়া খাওয়া হতো নাহলে একেবারে বিকালে বাসায় গিয়ে খেয়ে নিতাম। ‘ও’ জানতো বেশির ভাগ দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি। কি আর করা, আমার জন্য কষ্ট করে নিয়ে এসে আদর করে খেতে দিত তাই কোন কিছু না ভেবেই খেয়ে নিই। ভাল কিছু রান্না হলেই অনেক দিন ওর বাসায় নিয়ে যাবার জন্য পিড়াপীড়ি করতো কিন্তু যাওয়া হয়নি। শারমিন বাবার একমাত্র মেয়ে ছিল তাই তার জিদও অনেক।
আমি হাই স্কুলে পড়াশোনা অবস্থায় একটু আকটু লিখা লিখি করতাম। অসাবধান বশত কথা বলতে গিয়ে সে তা জেনে গেছে। এখন তাকে আমার সব লিখা গল্প-কবিতার পাণ্ডুলিপি দিতে হবে। অনেক জোরাজুরির পর বাসা থেকে এনে দিতে বাধ্য হতে হলো। আমিও যেন তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি ওর অবাধ্য হতে ভয় পাই, ভীষণ রাগী মেয়ে আবার তুলোর মতো নরম মন। সে প্রতিদিন ঐ গল্প কবিতা গুলো বারংবার পড়তো, আর আমার প্রশংসায় অসম্ভব পঞ্চমুখ। আমিও আহ্লাদে গদ গদ হয়ে তার উপর ভর করে উপরে উঠার সিঁড়ি বেয়ে নিমগ্নতায় মুগ্ধ হলাম। জানিনা যদিও আমার কাঁচা হাতের লিখা তবু উনিয়ে বিনিয়ে যথারীতি সাধ্যমতো উৎসাহিত করতো। তার হাতের টাইপ করা পাণ্ডুলিপি গুলো অনেক যত্নে রেখেছি গুছিয়ে। এখনো ভগ্নহৃদয়ে ওর স্পর্শকাতর উন্মাদনা আমাকে অপরাধের নির্মম শেষ সীমানায় পৌঁছে দেয়।
চারটা বাজার সাথে সাথেই আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তো দু বান্ধবী। পাশেই একটা আম বাগানের কাছে পুকুর পাড়ে বসে গল্প করা হতো। আমি না যেতে চাইলেও কোন উপায় নেই মাঝে মাঝেই এতোটা পাগলের মতো আচরণ করে ভয়ে রাজি হয়ে যায়। আমার জন্য শারমিন অনেক টাকা-পয়সাও খরচ করে। গল্প করতে করতে কতো কি যে কিনে খাওয়াবে তার ইয়েত্বা নেই। কিন্তু আমি তার জন্য মোটেও খরচ করেতে পারিনা কেননা আমার কাছে গাড়ি ভাড়ার টাকা ছাড়া কোন টাকা থাকতো না। বাসায় যেতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে দেরি করাবে তার কাছে আরো কিছুক্ষণ রাখার জন্য। সাধারণ ভাবেই বোঝা যায় মনে মনে অসম্ভব অন্যরকম ভালবাসে। অথচ কখনো সে আমাকে স্পর্শ এমনকি আমার হাতটা পর্যন্ত ধরে দেখেনি।
আমাদের কোর্স প্রায় শেষের পথে। এমন সময় তিনটা থেকে চারটার ব্যাচে নতুন একটা দারোগার মেয়ে ভর্তি হয়েছে। মেয়েটার নাম স্বপ্না দেখতে মোটামুটি ভাল। একদিন শারমিনের আসতে দেরি হওয়ায় সে আমার পাশের চেয়ারটাই বসেছে। পরিচয় হওয়ায় জানতে পারলাম স্বপ্না নওহাটা কলেজের আমার ক্লাসমেট। পরনে বোরখা মাত্র চোখ খোলা থাকে আর মেয়েদের দিকে তেমন তাকাই না বলে তাকে চিনতে পারিনি। সে আমাকে চেনে বলে অনেকটা সাহস করে কাছে ঘেঁসে কিছু বিষয় শিখে নিচ্ছে। শারমিন কখন এসেছে বুঝতে পারিনি সে আমাদের ঘনিষ্ঠতা দেখে আমার উপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। মেয়েটিকে এখান থেকে উঠিয়ে অন্য পাশের টেবিলে বসিয়ে দিল। ও রাগে ফুলে গদো গদো লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে কাল বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস দেখতে পেলাম। ভয়ে আগ বাড়িয়ে বললাম, জান- আমার কলেজের মেয়ে। নতুন তো তাই কিছু জানতে চাইলো একটু শিখিয়ে দিলাম, কি করবো বলো? শারমিনের সোজা সাপটা কথা আমি যেন আর কখনো তার কাছে না যায়।
নিষেধ করা সত্ত্বেও স্বপ্না কোন কিছু না পারলে ম্যাডামকে বলে বার বার আমাকে দিয়েই শিখে নিতে চাই। আমিও তেমন না করতে পারি না তবে পরামর্শ দেই যেন ম্যাডামকে ডাকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা অন্য কাউকেই সে বলতে চায়না। এমনকি গায়ে পড়ে সব ব্যাপারে আমার সাথে চলতে গিয়ে অনেকের দৃষ্টিকটু হয়েছে। স্বপ্নার নিয়মিত এমন বেহায়াপনা আচরণ অতিমাত্রায় পৌঁছালো। শারমিনও দিন দিন তুষের আগুনে পুড়ে আমার সাথে কেমন যেন পাগলামি শুরু করল। ক্লাস শেষে প্রতিদিনের ন্যায় তিনজন একসাথে বের হতেই পেছন থেকে ডাক দিল। আমরা দাঁড়াতেই সে শারমিনকে বলল, ‘আমি আর আখতার এক সাথে যায় একটা দরকার আছে। তাছাড়া আমাদের বাসা পাশাপাশি গ্রামে। ‘ মনের মধ্যে অসামান্য রাগ পুষে নিয়ে মাথা নেড়ে অনুমতি দিল।
দু-একদিন পর পর শারমিনের কাছে বায়না ধরে কাজ আছে বলে আমাকে নিয়ে যাবার জন্য। আমিও একটা রোবটের মতো হয়ে গেছি। নিজের স্বাধীনতা বলতে কিচ্ছু নেই জোর করে কাউকে কোন কথা বলতে পারিনা। তাই যে যেমন ভাবে পারছে ব্যবহার করতে কৃপণতা করছে না। পথ চলার সময় প্রায় বুকের উপর ঝুঁকে পড়ে সুযোগ পেলেই হাত ধরে রাখবে। এসব অতিরঞ্জিত ঘটনায় শারমিনের চোখ এড়ানো সম্ভব হয়নি। এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া ও বকাঝকার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার ফুরসত টুকু হয়নি। অহেতুক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মাঝে মধ্যেই আমাকে বিষয়ে তুলছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না।
আমাদের টাইপ শেখা ছ’মাসের কোর্সের সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এখন শুধুমাত্র সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনা। স্বপ্নাকে গল্পের ছলে বলে দিয়েছি যে আমি ছ’ মাসের কোর্স তিন মাসে শেষ করেছি। কি মুশকিল আমাকে না বলেই সে আমার আরও তিন মাসের কোর্স ফি ম্যাডামের কাছে জমা দিয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজন পড়ায় আমার সার্টিফিকেট পাবো কিন্তু বাড়তি আরও তিন মাস প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ভীষণ যন্ত্রণায় ফেলে দিয়েছে মেয়েটা আর শারমিন বিষয়টা জানতে পারলে একটা মস্ত বড় কেলেঙ্কারি বেঁধে যাবে। দুজন দুজনে যেন ভারত পাকিস্তানের মতো জনম জনমের অজাত শত্রু।
আজকে আমাদের টাইপ প্রশিক্ষণের কোর্স সমাপনীর সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠান। এই কার্যক্রম প্রোগ্রাম পর্ব শেষ হলেই আবার শারমিন আমাকে নিয়ে কি কি বিভিন্ন রকম কর্মসূচি গ্রহণ করে রেখেছে তার বান্ধবীর কাছে শুনলাম। আজকে যেন কোন প্রকার তালবাহানা না হয় তিনজন মিলে সারাদিন অনেক মজা করা হবে বলে জানালো। আমিও ব্যাপারটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে খুশি মনে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একে একে সবাইকে নাম ধরে ডেকে সার্টিফিকেট প্রদান করা হলেও শুধু মাত্র আমার নাম ডাকা হয়নি। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপারটা নিয়ে আমার চেয়ে শারমিন বেশী মাথা ঘামাতে লাগলো। আমাকে সঙ্গে নিয়ে সরাসরি পরিচালকের রুমে ঢুকে বিস্তারিত শুনে হতভম্ব হয়ে বেরিয়ে এসে গোখরো সাপের মতো ফোঁস করে উঠলো। শত চেষ্টা করেও এই অবাঞ্ছিত ঘটনার সত্যতা কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না। এখানে যে আমার কোন হাত ছিলনা এর বিন্দুমাত্র বিশ্বাসস্থতা আনতে অসমর্থ হলাম। তার সকল পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে ঘূর্ণিঝড়ের বেগে এক ঝাপটা দিয়ে আমার কাছে থেকে চলে গেল। মিথ্যা প্রতিবন্ধকতা দূর করতে না পেরে প্রচন্ড অনুশোচনায় কাতর হলাম। আর মনে মনে স্বপ্নার উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দিতে ইচ্ছে হলো। অযাচিত ভগ্ন হৃদয়ে আমিও এক মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ি ফিরে আসলাম।
মানসিকভাবে ভাল না থাকায় সপ্তাহখানেক হল টাইপ শিখতে যাওয়া হয়নি। আর শিখবো না বলেও একেবারে মনস্থির করেছি। আজকে শেষবারের মতো শুধু যাব সার্টিফিকেট নিয়ে আসার জন্য। বুঝছি না কারণে অকারণে মনটাতে কেমন যেন অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন ভাবেই নিজেকে স্থির করে রাখতে পারছিনা। বুকের মধ্যে ধকধকানি দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারা রাত জেগে থাকি ঘুমাতে পারিনা অহেতুক অজানা কোন এক আচমকা ভয়ের দরুন। একটু চোখের পাতা এক হলেই আঁতকে লাফিয়ে উঠি কেউ যেন অন্ধকার গভীর গর্তে ফেলে দিচ্ছে বলে। আবার চেষ্টা করি ভুলে যেতে অহেতুক বিপদের আশংকা। সেদিন থেকেই শারমিনকে আমি চোখের আড়াল করতে পারছিনা। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সে আমাকে ছায়ার মতো চারপাশে ঘিরে রেখেছে অবিরত। তাকে ভালোবেসে ফেলেছি কি বলতে পারবো না। তবে সে একনিষ্ঠ ভাবে আমার মনের মধ্যে অতল গভীরে যেন রন্ধে রন্ধে মিশে আছে। ম্যালেরিয়া জ্বরে তীব্র কাঁপুনি দিয়ে আসা রোগী হয়ে ছটফট করি সারা বিছানায়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মতো অস্থির হয়ে থাকি, নিশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। প্রথম গাঁজা খেলে যেমন কেউ উন্মাদনায় আবোল-তাবোল বকে আমিও তেমনি নেশাখোর হয়ে গেলাম। আগে কখনো বুঝিনি কিন্তু ক’ দিন ধরেই তার সকল স্মৃতি মন্থর ও বিচরণে আমি ন্যস্ত। তাকে নিয়ে অসহনীয় হাজারো ভাবনা আমাকে কেমন পেয়ে বসেছে। তাই অসম্ভব নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছি।
দুপুরের আগেই রাজশাহী শহর সমাজ সেবার ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে সার্টিফিকেট ওঠালাম। ভাবছি আজকে শারমিনের বাড়ি যাব মনে হচ্ছে কতোদিন তাকে দেখিনি। বহুবার তার বাসায় আমাকে নিতে চেয়েছে কিন্তু আমি যায়নি। অথচ আমার অবুঝ মনটাতে খুঁতখুঁত করছে এক নজর দেখার জন্য। আর সুযোগ পেলে ক্ষমা চেয়ে নিব এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ অকারণে কষ্ট না দেয়ার। সার্টিফিকেট নিতে কিছু টাকা লাগবে বলে বাবার কাছ থেকে নিয়ে ছিলাম। সেই টাকা দিয়ে একটা গোলাপ ফুল কিনে ব্যাগে নিয়েছি। অন্তত কিছুটা হলেও ওর অভিমান ভাঙ্গাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শারমিনের বাসাতে যদিও আমার যাওয়া হয়নি তবে সেখানে যাবার সঠিক দিক নির্দেশনা সে দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ভীরু হৃদয়ে একবুক সঞ্চিত আশা নিয়ে তার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়ির কাছাকাছি যেতেই পথিমধ্যে শারমিনের বান্ধবীর সাথে দেখা হয়ে গেল। আমিও অন্তঃকোণে স্বস্তির প্রফুল্ল আনন্দটাকে প্রস্ফুটিত না করতেই থমকে গেলাম। সব সময় হাস্যজ্জল মেয়েটি আমাকে দেখেই গুমরে উঠে শ্রাবণ মেঘের বৃষ্টি তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। হঠাৎ থমকে আসা দমকা বাতাস এসে আমার বুকে এক ঝাপটা ধাক্কা মেরে চলে গেল। আমি নিস্তব্ধতায় আঁতকে গিয়ে বোবার মতো থোঁ মেরে থাকলাম। কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে শান্ত কন্ঠে জানতে চাইলাম, শারমিন কেমন আছে? প্রশ্ন শুনে আষাঢ়ের বৃষ্টির অঝোর ধারার তীব্র গতিতে তার চোখ দিয়ে ঝরে যেতে লাগলো যেন এখুনি থামবার নয়। সে আর কোন কথা বলতে পারেনি। প্রচন্ড ক্ষোভ ও অভিমানে আমার মুখের উপর একটা কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে চলে গেল। বুঝতে পারলাম আমি আসবো না জেনে স্বপ্নার হাতে কাগজটা দিতে আসছিল আমাকে দেয়ার জন্য। মাটিতে পড়ে যাওয়া কাগজ তুলে নিয়ে তৎক্ষণাৎ এক নিশ্বাসে পড়লাম। হতভম্ব হয়ে বোবাকান্নায় আমাকেও ভাসিয়ে দিল এক অথই জলের প্লাবিত বন্যায়।
স্বপ্নার এহেন আচরণে শারমিন মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে টানা দুদিন কিছুই খায়নি। পরের দিন সকালে বাথরুমের রাখা হারপিক খেয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসকের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমাকে অনেকবার দেখতে চেয়েছিল। ওর বান্ধবী আমার খোঁজ করেও পায়নি। কেন যে গত কয়েক দিন আসিনি তাই ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে। এমন সাংঘাতিক অভিমানে আমার ভগ্নহৃদয় ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে ঘুণাক্ষরে কেন আমি টের পাইনি? একটা নরম হৃদয়কে হিটলারের প্যাঁচে ফেলে হত্যা করলাম। নিজেকে কোন ভাবেই ক্ষমা করতে পারছিলাম না। পাহাড়সম অনুশোচনায় আমবশ্যার গাঢ় অন্ধকারে কিছুই দেখি না। এদিকে তার অতি নগণ্য পরমপ্রিয় শেষ চাওয়াটাও অপূর্ণ রয়ে গেল। শুধু আপসোস! খোদা শারমিনের সামান্য এতোটুকু ইচ্ছা পূরণের সাধ্য আমাকে দেইনি।
আখতারুল ইসলাম খোন্দকার | Akhtarul Islam Khandokar
From the Myanmar Diaries | অ-শরীরী | মায়ানমারের ডায়েরীর পাতা থেকে | 2023
Pancha Byanjan Galpo | পঞ্চব্যঞ্জন পর্ব ২ | জয়ন্ত কুমার সরকার | Top New 2023
Bangla Galpo Ochena | অচেনা | শওকত নূর | Top New 2023
Bengali Language Interesting Facts | A Mori Bangla Bhasha
Broken Heart Bengali Story | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Broken Heart Bengali Story | Pdf Broken Heart Bengali Story | Broken Heart Bengali Story App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Broken Heart Bengali Story 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Broken Heart Bengali Story Video | Horror – Broken Heart Bengali Story | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Broken Heart Bengali Story Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent Broken Heart Bengali Story | Top Broken Heart Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Broken Heart Bengali Story Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Broken Heart Bengali Story mp4 | Broken Heart Bengali Story Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection – Broken Heart Bengali Story