Bangla Galpo Ochena | অচেনা | শওকত নূর | Top New 2023

Sharing Is Caring:

অচেনা – শওকত নূর [Bangla Galpo Ochena]

অবশেষে যাওয়া হলো একজনের কাছে। নগর রাজপথ, চারপাশের চাকচিক্য পেরিয়ে যখন তার কার্যালয়ে হাজির হলাম, তখন সূর্য মধ্যাহ্ন-সীমা অতিক্রমান্তে অপরাহ্ন সীমায় ঢলেছে। দৃশ্যমান ঝরা ঘামে জবজবে আমার শরীর। আনন্দ কিংবা উৎফুল্লতার লেশ নেই মনে -মুখাবয়বে ; বরং মুখ কাঁচুমাচু, মাথা নিচু। তার টেবিলে হোঁচট খাওয়া সামলে ঊর্ধ্বে মুখ তুলতেই নজরে এলো, ওপাশের চেয়ারে উপবিষ্ট তার চোখেমুখে প্রসন্নের হাসি।খানিকটা আহলাদে কণ্ঠে বললেন, আপনি কাহারুল কাহার, এলেন তাহলে?

জি, স্যার। চিন্তিত বললাম আমি।

তা কী মনে করে হঠাৎ? বলা নেই, কওয়া নেই! মনে করবেন না কিছু।

এলাম স্যার, এইতো-।

বসুন ওপাশেই।

জি, স্যার।

একটু ব্যস্ত আছি। জলদি বলে ফেলুন কী মনে করে এই আগমন।

জি স্যার, মানে আমি এলাম -।

আপনার তো আসার কথা নয়, আমার ভাবনায়ও কখনো তা ছিল না। পিয়ন এসে জানাবার পর থেকেই ভাবছি এ নিয়ে। এখানে মফস্বলে বছর দুই আছি । অনেক ব্যবসায়ীই আসে। আবার আসেও না অনেকে।

স্যার, মানে?

ভাবছি, নিশ্চয়ই কোনও বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। কোন বিপদআপদও হয়ে থাকতে পারে। আপনার তো অনেকের মতো কোনও স্বার্থ মতলবে আসার কথা নয়।

এলাম স্যার, স্বার্থ ভাবনাতেই এলাম, বিপদগ্রস্ত হয়েও বলা যেতে পারে।

ও–। আচ্ছা, ধরে নিচ্ছি, তা-ই এসেছেন। মানুষ তো আর চিরকাল একরকম থাকে না। প্রয়োজনের তাগিদে হলেও পাল্টায় । তা বলুন, কী মনে করে আসা, কী করতে পারি আপনার জন্য।

স্যার, কথা তো অনেক। অনেক দিনের অনেক কথা। ভাবছি কোনটা থেকে শুরু করব, কিভাবে গুছিয়ে বলব সব ।

আচ্ছা, গোছাতে থাকুন। ফাঁকে আমি কিছু কাজ সেরে নিই।

জি, স্যার।

তিনি কাজে মনোনিবেশ করেছেন। টেবিলের ফাইলপত্রে মাথা ঝুঁকে গভীর মনোযোগে কীসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। আমি ভাবনার ফাঁকে দৃষ্টি দিই তার পেট, বুক, মস্তকে। বয়স হয়েছে তার। মাথার চুল বলতে চাদি থেকে পেছন অব্দি যা আছে তা ধবধবে সাদা, ভ্রু জোড়া সাদাকালো, মুখমণ্ডলের চামড়ায় ভাজ এসেছে, তবে তা বয়সের তুলনায় অনুল্লেখযোগ্য। হঠাৎ তিনি ফাইলপত্র থেকে মুখ তুলে বললেন, কী খবর এবার বলুন, গোছানো হলো সব কথা?

জি, স্যার।

বলুন কী বিপদে পড়েছেন। কে একজন কিছুদিন আগে আপনার সাথে থেকে দুর্ঘটনায় মারা নাকি গেছেন, সেটাই কি বিপদ? নাকি ব্যক্তিগত অন্য কোনও বিষয়াদি? যাই হোক, বলুন সংক্ষেপে।

জি স্যার, সেটা থেকেই শুরু করতে চাচ্ছি। ব্যক্তিগত কথাও কিছু আছে।

আচ্ছা, শুরু করুন।

স্যার, উনি লেখক হতে চেয়েছিলেন। একটা লেখাও লিখেছিলেন সারা জীবনের সাধনায়। কোথাও ছাপা হচ্ছিল না তা। অনেক ধর্না দিয়েছেন নানা জায়গায়। আলাপবশত একদিন জানতে পারেন এক সৃজনশীল প্রকাশকের সাথে আমার চেনাজানা আছে; আমার ব্যবসায়ীক কাগজপত্র ওখান থেকে নিয়মিত ছাপা হয়।

আচ্ছা থামুন, মনে তো হচ্ছে বর্ণনাটা ঢের লম্বা হবে। কিন্তু অতটা সময় আমার হাতে নেই। অতএব, এক কাজ করুন।

জি, স্যার।

এই প্যাডের পাতায় বর্ণনাটা লিখে ফেলুন। ফাঁকে আমি কাজটা সেরে নিই। খুব জরুরি একটা কাজ। বয়স হয়েছে দেখছেন তো। কিন্তু কাজের চাপ কিছু কমেনি, বরং বেড়েছে। লিখুন কষ্ট করে।

জি, স্যার।

Bangla Galpo Ochena

প্যাডটা টেনে নিয়ে পকেট থেকে কলম বার করে পৃষ্ঠা-শীর্ষ থেকে লিখলাম নিম্নরূপ :

(এক) লেখক ঘটনার বিবরণ

লেখকের লেখাসহ লেখককে নিয়ে আমি প্রকাশকের উদ্দেশ্যে নগর-পথে হাঁটছিলাম। তখন পড়ন্ত বেলা। বেশ জনাকীর্ণ পথ। মাঝেমাঝে থামছিলাম আমরা। প্রতিবার থামতে আমি দৃষ্টি ছুঁড়ছিলাম লেখকের আপাদমস্তকে। বয়সের বাঁধ অতিক্রম করে এক দুর্নিবার তারুণ্যসুলভ উচ্ছ্বাস আনন্দানুভূতি বোধ করি ভেতর থেকে ক্রম উদ্ভাসিত করে তুলছিল তাকে। সারাজীবন খুব খেটেখুটে ওই একটি সাহিত্যকর্মই দাঁড় করিয়েছেন তিনি। মনের সবটুকু দরদ ঢেলে দিয়ে লিখেছেন। আদ্যোপান্ত পড়েছি আমি সুপারিসর লেখাটার। ভালোও লেগেছে । নিজ কিংবা পর-জীবন, যেটি ঘিরেই তৈরি হয়ে থাক লেখাটা, তা বাস্তবতাকে বেশ টেনেছে এবং একটা ভবিষ্যৎ লেখাটার থাকবে। সেই অনুভবই সম্ভবত তাকে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত করে তুলছিল।

ঘণ্টা আধেকের হাঁটা-পথ পেরিয়ে আমরা যখন এক ব্যস্ত সড়কের এপারে উপনীত হই, তাকে প্রকাশনালয়ের অবস্থান নির্দেশে বললাম, দেখুন, ওই যে ওই ওপারের যে অনুচ্চ ভবনগুলো, তার মাঝামাঝিতে অপেক্ষাকৃত একটা দীর্ঘ ভবন, ওটারই তিনতলায় আমাদের গন্তব্য। ওখানেই উদ্দিষ্ট প্রকাশনালয়।

এটুকু বলতেই কী হলো তার, আচমকা পথ বিভাজক থেকে লাফ দিলেন তিনি নিচের ব্যস্ত পথে। চোখের নিমিষে ঘটল ঘটনাটা। লেখার ফাইলটা চেপে ধরা আছে বুকে, যেন দু’ হাতে আরো বেশি শক্তি সঞ্চারণ ঘটেছে। ফেরাতে সমর্থ হলাম না আমি। নিচে পা ফেলে দু’ কদম এগোতেই সব শেষ। ছুটন্ত যানের ধাক্কায় ছিটকে ক’ হাত গিয়ে উবু-স্থির হয়েছেন তিনি। ফাইলটা বগলে ধরা আছে পূর্ববৎ। হাসপাতালে নেয়া হলো তৎক্ষণাৎ; তবে তা কর্তব্যকর্ম সম্পাদনের তাগিদ মাত্র।

তার অনাথ ছেলেমেয়ে দুটি সেই থেকে আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। মাঝেমাঝে নিজেকে কিছুটা হলেও অপরাধী বলে গণ্য হয়। ভাবনাগ্রস্ত হই, কী প্রয়োজন ছিল ওই উপকার সাধনে যাবার। তার ছেলেমেয়েরা আমাকে কোনও ভাবনা বিশ্লেষণে ন্যূনতম হলেও দায়ী কিংবা দোষী সাব্যস্ত করে কি না তা স্পষ্ট ধরা যায় না। আমি ভাবনা ঝেড়ে বারবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হই, বইটা যে করেই হোক দাঁড় করানো চাই। স্রেফ একটা সাফল্য মুকুট প্রয়াতের অনাথ ছেলেমেয়ে দুটির শিরস্থ করে তাদের থেকে দায়মুক্তি – এই আর কি। কিন্তু মৃত্যুই যেন লেখকের সৃষ্টিকর্মটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকাশক আমূল মত পাল্টেছেন। অখ্যাত মৃত কোন লেখকের একমাত্র লেখা ছাপার ঝুঁকিতে কিছুতে তিনি যাবেন না। যতদূর পা বাড়িয়েছি, একই মনোভাব পেয়েছি অন্য প্রকাশকদেরও।

দিনদিন আমি লেখকের ছেলেমেয়েদের কাছে মানবিক দায়বদ্ধতায় পড়ে যাচ্ছি । এমতাবস্থায় একটা উপকার যদি তার তথা আমার আপনি করতে পারেন-প্রথমত এই মনে করে আপনার এখানে আসা।

(দুই) ব্যক্তিগত সমস্যার বিবরণ

আমার পিঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, রসুন তথা মসলা ব্যবসায়টা দীর্ঘদিন যাবতই আমাকে খুব ভোগান্তিতে ফেলছে। শুধু শারীরিক মানসিক ভোগান্তিই নয়, আর্থিকও। কোনও অদৃশ্য কারণে মালামালগুলো আমার আটকে যায় স্থানীয় নৌ বন্দরে। খালাস করতে করতে দ্রব্যগুলোর চড়া দাম এমন পর্যায়ে পড়ে যায় যে আমাকে বরাবর মুনাফার বদলে লোকসানের অংক কশতে বাধ্য হতে হয়। তিন ছেলে আমার। প্রত্যেকেই ছাত্র।নিয়মিত তাদের খরচ জোগাতে হয়। একটা প্রতিকার সম্ভব হলে প্রার্থনা করছি। এটা আগমনের দ্বিতীয় হেতু।

লেখা শেষে প্যাডটি তার দিকে বাড়িয়ে ধরি। ফাইলের কাজ শেষে প্যাডের পৃষ্ঠাগুলো ওল্টাতে থাকেন তিনি। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সম্ভবত বার দুই পড়লেন আমার তাৎক্ষণিক লিখিত বিবরণী। ঠোঁট চেপে বললেন, বইটার একটা ব্যবস্থা আমি করতে পারি। পরিচিত বেশ ক’জন প্রকাশকই আমার আছে। একজন একটু বেশি ঘনিষ্ঠ। নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর দিয়ে দিচ্ছি। সময় পেলে ফোনে কথাও বলতে বলব তার সাথে। আশা করি সফল হবে বইটা। এবার বলুন আপনার ব্যবসায়ীক প্রগতিতে কী করতে পারি। অবশ্য আপনি ইচ্ছা করলে কিন্তু ওইসব মরিচ পিঁয়াজের ব্যবসায় ছেড়ে লেখার কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারেন! যাহোক, সাজেস্ট করুন, যদি কোনও আইডিয়া মাথায় থেকে থাকে।

স্যার, কোনও ধারণা আমার নেই।

আপনার মালামালগুলো সময়মত খালাস হবে, মুনাফায় বিক্রি হবে- এইতো, নাকি?

জি, স্যার।

এ কোন জটিল সমস্যা বলে মনে হচ্ছে না আমার কাছে। আমি দেখব। আশা করি, শীঘ্র সমস্যাটা দূর হবে। আর কিছু?

জি না, স্যার। আজ তবে উঠি।

জি।

ধন্যবাদ, স্যার।

ধন্যবাদ।

বইটি ছাপা হয়েছে এবং তার একটি কপি মৃত লেখকের ছেলেমেয়েরা আমার কার্যালয়ে এসে দিয়ে গেছে। তারা আমাকে উষ্ণ ধন্যবাদের সাথে অবহিত করে গেছে, বইটির কাটতি ও সাফল্য এরই মধ্যে প্রত্যাশিত মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শুনে এ বিষয়ে বেশ একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলি আমি।

ব্যবসায়ীক প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে অনেকটা গতিশীল পর্যায়ে আমিও আছি। দ্রব্যগুলোর উচ্চ দরদাম নিচে নেমে স্থিতিশীল হলেও সময়মত তা খালাশ হতে থাকায় ওসবের বেচা-বিক্রি বেড়েছে ঢের। ফলে দরপতনেও লাভের মুখ দেখছে ওগুলো। কার্যালয়ে বসে প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় যেসব বড় বড় অর্ডার পাচ্ছি, তাতে সাফল্যানন্দে বুক ভরে উঠছে। আয়নায় তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্বে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করি, তা সুখ সাচ্ছন্দ্যব্যঞ্জক।

ব্যবসায়ীক ব্যস্ততা, ব্যবসায়ীক কর্মযজ্ঞের অতি বিস্তৃতিই একজন ব্যবসায়ীর উদ্দিষ্ট লক্ষ্যবিন্দু। সে বিন্দুতে আমি এখন সমাসীন। বহুদিন পর তাই এমন পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস! মনের আনন্দে একটা গানেও গলা চড়াই; সুর তাল লয়ে পরম উচ্ছ্বসিত হাত পা নাড়াতে থাকি।

কর্মচারীর ডাকে আচমকা ঘুম ভাঙে আমার। কাঁধে হাত রেখে চেঁচাচ্ছে সে, সাব, ও সাব, আপনি কি স্বপ্নে দেখতেছেন? ভয়ংকর কিছু দেখতেছেন নাকি? এমন হাত পা কাঁপাইতেছেন!

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম মালামালের অসময়ে খালাস হয়ে মফস্বলের গুদামঘরে ওঠার পর সেগুলো দেখতে আসা গুদামঘরটি প্রায়ান্ধকার। লোডশেডিং! দুপুরে রেস্তোরাঁ-খাবার গ্রহণের পর চিন্তিত ক্লান্ত অবসন্ন এক ঘুমে বেলা পড়ে এসেছে। পায়ের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কুলিদের ফেলে যাওয়া মালামালের বড়ছোট বস্তাগুলো। এক কোনে ধূলিধূসর মুখ থুবড়ে আছে কথিত মৃত লেখক শিমজান আলী শেহরান সাহেবের বহুল প্রত্যাখ্যাত জীর্ণ পুস্তক-পাণ্ডুলিপি। সামনেই টুলের ওপর স্থাপিত পত্রিকা পৃষ্ঠায় এতক্ষণের স্বপ্নে দৃষ্ট সহায়ক বিশিষ্ট ব্যক্তির হাস্যোজ্বল ছবি।

আমি চোখ খুলতেই কর্মচারীটি চলে গেছে। তড়িঘড়ি উঠে গুদাম কোনার দেয়ালে ঝুলন্ত অপ্রশস্ত আয়নাটির দিকে পা বাড়াই। ওর দিকে মুখ ধরা হয়নি গত ক’দিন।

ক’দিনের তেল পানি চিরুনি চালনাহীন ধূলি আস্তরিত চির-কোঁকড়া চুল, লালচে ভ্রু-গোঁফ, ধবধবে ফর্সা মুখমণ্ডলের বর্ণ রূপান্তর, কালচে বলিরেখা, প্রায় বুজে থাকা মরিচ লাল দুই চোখ – নিজ প্রতিবিম্বটি অচেনাপ্রায়!

শওকত নূর | Shawkat Noor

Ektu Chuye Deya | একটু ছুঁয়ে দেয়া | New Bengali Story 2023

New Bengali Novel 2023 | খুঁজে ফিরি বিশল্যকরণী (পর্ব ১২) | উপন্যাস

Natun Bangla Kabita 2023 | রঞ্জনা বসু | Top New Poetry

Sunglass and our friendship | সানগ্লাসেই সৃষ্টি আমাদের বন্ধুত্ব | Bangla Galpo 2023

Shabdoweep Founder | Bangla Galpo Ochena | Bengali Story – Bangla Galpo Ochena | Bangla Galpo Ochena – Shwkat Noor | Bangla Galpo Ochena 2023 | Bangla Galpo Ochena – Audio Story | Bangla Galpo Ochena – Story in pdf | Bangla Galpo Ochena – Trending Story | Bangla Galpo Ochena – Visual story | Shabdodweep Story – Bangla Galpo Ochena | Indian Story – Bangla Galpo Ochena | Bangladesh Story – Bangla Galpo Ochena | Best Story – Bangla Galpo Ochena | Top Story – Bangla Galpo Ochena

Leave a Comment