Sunglass and our friendship | সানগ্লাসেই সৃষ্টি আমাদের বন্ধুত্ব | Bangla Galpo 2023

Sharing Is Caring:
Sunglass and our friendship

সানগ্লাসেই সৃষ্টি আমাদের বন্ধুত্ব – রূপশঙ্কর আচার্য্য [Sunglass and our friendship]

সালটা ছিল ১৯৯৮থেকে ১৯৯৯ সাল। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তখন কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য ফরম ফিলাপ করতে ব্যস্ত আমি। আমি দেখি আমার পাশে একজন সান গ্লাস হাতে নিয়ে ফরম ফিলাপ করার জন্য অপেক্ষা করছে। তার চোখগুলো এক অদ্ভুত ধরনের। আমি আমার শহর ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় ভর্তি হই। যার সঙ্গে আমার দেখা হল ওর বাড়ি খুকুড়দহতে। ওইখান থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা পাঁশকুড়া কলেজ । কিন্তু সে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট রাস্তা পেরিয়ে ঘাটাল রবীন্দ্র শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয় এ ভর্তি হতে এসেছে। আমি যখন পাস করি অতি সাধারণ রেজাল্ট ছিলো আমার। পাশের হার অনুযায়ী, বিষয়ভিত্তিক নম্বর অনুযায়ী আমি তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনো একটি বিষয়ে অনার্স নিয়ে ভর্তি হতে পারতাম। যেমন -বাংলা বা ইতিহাস বা দর্শন। কিন্তু আমার হৃদয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স নেওয়ার ইচ্ছাই হল। সেই সময় কোন বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতে ভালো হবে এই ধরনের সাজেশন দেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিল না। স্বাভাবিকভাবে আমি দর্শনশাস্ত্র নিয়ে ভর্তি হলাম। কলেজের প্রথম দিন অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে অনেক কষ্টে দর্শন শাস্ত্রের অনার্স ক্লাসের রুমটা খুঁজে পেলাম। দেখি এমন কেউ নেই আমার চেনা-শোনা কারণ সেই সময়ে যারা আমার সঙ্গে পড়াশোনা করত তারা দর্শনশাস্ত্রকে শাস্ত্র বলেই মনে করত না। তাই অন্য বিষয়ে নম্বর পাওয়ার ফলে কোনো বিষয়ে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। সুতরাং ক্লাসরুমে অজানা বন্ধুদেরকে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছিল । যেহেতু তারা আমাদের সঙ্গে একসঙ্গে পড়ে তাই এই সহপাঠীদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরিচয় জানতে চাইল। ক্লাসের নিয়মিত ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষামূলক সম্পর্ক তৈরি হলো।

দিনটা ছিল বর্ষার দিন। সকাল থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু নতুন নতুন ক্লাস তাই বর্ষার দিনে ছাতা নিয়ে ক্লাস করতে যাওয়ার ইচ্ছা জাগল । একটু তাড়াতাড়ি করে খাওয়া দাওয়া করে বাড়িতে পুরনো ছাতাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যেহেতু বর্ষাকাল, ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে যেতে সময় লাগবে তাই একটু তাড়াতাড়ি বের হলাম। কলেজে গিয়ে দেখি খুব কম ছাত্র-ছাত্রীই উপস্থিত। ছাত্র-ছাত্রী ঠিক নেই বলে ক্লাস হবে না এই ভাবনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ছাত্র কম থাকার কারণে শিক্ষক শিক্ষিকা ঐদিন অতি শান্তভাবে, সুন্দরভাবে আমাদের মূল্যবান ক্লাসগুলি করেন।

তৃতীয় পিরিয়ড হওয়ার পর ক্লাস প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। অনেককেই লাইব্রেরীর দিকে যেতে দেখলাম। আমি যেখানে বসেছিলাম তার কিছুটা দূরে সেই সানগ্লাসটি পড়ে থাকতে দেখলাম, যেটা ভর্তির দিন সেই বন্ধুটির হাতে থাকতে দেখেছিলাম অর্থাৎ যার চোখগুলো এক অদ্ভুত ধরনের বলেছিলাম। আজও সেই বন্ধুটি ওই সানগ্লাস টি পরে এসেছিল। আমি সানগ্লাসটা হাতে নিলাম। আমার যেন মনে হল ওই বন্ধুটি অবশ্যই লাইব্রেরীর দিকে গেছে। আমি ধীরে ধীরে লাইব্রেরী কাছে গিয়ে দেখলাম বন্ধুটি তার পরিচিত বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে গল্প করছে এবং লাইব্রেরী থেকে বই নিচ্ছে। আমি গিয়ে সেদিনই প্রথম ওর সঙ্গে সানগ্লাসটা দিয়ে কথা বললাম।আমি বললাম, ‘এটা কি তোমার সানগ্লাস?’ সে হেসে বলল, ‘ হ্যাঁ অবশ্যই, আমি এই সানগ্লাসটি ছেড়ে এসেছিলাম ক্লাসরুমে।’ একটি সানগ্লাসের মধ্য দিয়ে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হলাম যা বন্ধুত্বের বন্ধন থেকে আরো গভীরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। এইভাবে আমাদের মধ্যে সুন্দর এক বন্ধুত্ব হয়ে গেল । এর ওর মুখে আমার নতুন বন্ধুটির নামটা আগে শুনেছিলাম। বন্ধুটির নাম ছিল বাসুদেব আর পদবী দালাল ঠাকুর। আমার নাম ও জানে কি না আমার জানা ছিল না। আমার মনে হয়েছিল আমি যেহেতু বাসুর নাম জানি সেহেতু হয়ত বাসুদেব আমার নামও জানে। আমি ধীরে ধীরে তার কাছে আমার মনে যে কৌতূহলী প্রশ্নটি ছিল তা প্রকাশ করলাম। আমি বললাম, তোদের পদবী দালাল ঠাকুর কেন ? সে বলল, আমার দাদু বা তার আগে দাদুর বাবারা যখন বেঁচে ছিলেন তাঁরা জমিদার ছিলেন। ব্রিটিশরা তাঁদেরকে দালাল ঠাকুর পদবী দিয়ে গিয়েছিলেন। এরপরে একসঙ্গে দুইজনে দুই ভাইয়ের মত ক্লাসরুমে বা ক্লাসের বাইরে মেলামেশা করতে থাকি। সেই সময় আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি – ফার্স্ট ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ার নিয়ে পার্ট ওয়ান পরীক্ষা হত এবং থার্ড ইয়ার কেবল পার্ট টু এর পরীক্ষা হত। বাসু যেহেতু এন.সি.সি. করতো তাই তাকে মাঝে মাঝেই ক্যাম্পে যেতে হত। এর ফলে পড়াশোনায় গাফিলতি হত, পড়াশোনায় দুর্বল হয়ে পড়তো।

সে মারাত্মক ফাঁকিবাজ ছিল পড়ার ক্ষেত্রে। সে ঠিকমতো পড়াশোনা করতই না। ক্লাসে লজিকের সমাধান করতে পারতো না। তাই অধ্যাপক ও অধ্যাপিকার কাছে বকুনি খেত। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা হতে বেশি সময় নেই। আমি যে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতাম বাসু সেই শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করত। কিন্তু যেহেতু ক্যাম্পে ব্যস্ত থাকতো সময়ে সময়ে পড়তে যেত না। নামেই শিক্ষকের কাছে ভর্তি হয়েছিল। এদিকে আমি নোটস সংগ্রহ করে তাকে দিয়ে দিতাম এবং দর্শন শাস্ত্রের কিছু লজিক শিখতে হয়। সময় করে ওকে শিখিয়ে দিতাম। ওকে নোটগুলো কপি করে দিয়ে দিতাম। ফাইনাল পরীক্ষার সময় এগিয়ে এসেছে। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার সেন্টার পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ পড়েছে। আমি ঠিক করলাম বাসুর বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেব। বসুর বাড়ি যেহেতু খুকুড়দহতে তাই খুকুড়দহ থেকে পাঁশকুড়া কলেজ যেতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না । পাঁশকুড়া কলেজে বাসুর বাড়িতে থেকেই পরীক্ষা দেব।

একদিন কলেজের ফিস জমা দিতে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা হয় আমি যে তাদের বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেব এই বিষয়ে। তারপর এক মাসের মতো কলেজ বন্ধ থাকে। এক মাস বাদে এডমিট কার্ড আনতে যাই কলেজে। সেই সময় বাসু আমাকে বলে এখনো তো ফাইনাল পরীক্ষা একমাস বাকি তুই আমার বাড়িতে পরীক্ষার একমাস আগে থেকে গিয়ে থাকবি এবং যেই লজিক গুলো আমি শিখতে পারিনি ওই সময় আমাকে শিখিয়ে দিবি। আমি প্রথমে কথাটা শুনে ভাবলাম সে মনে হয় ঠাট্টা করছে। পরে সে যে সত্যই এই কথাটা বলছে বুঝতে পারলাম। আমাদের মধ্যে এত ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে যে আমি আর তার এই কথাটা ফেলতে পারলাম না। তবে তার আগে আমি বাসুর বাড়ি একবার গিয়েছিলাম। বাড়িতে গিয়ে দেখি একেবারে গ্রাম্য পরিবেশ। সে যেই ঘর টাতে বিশ্রাম নেয় এবং ঘুমায় সেই ঘরটি ঝিটে বেড়ার ঘর, তার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। সাধারণ বোধ নেই। ওদের পরিবারের সবাই খুব নিজের সন্তানের মত করে আমাকে কাছে টেনে নিল। আমি তার মাকে মা বলেই প্রথম ডেকে ছিলাম। আমি জেঠিমা বা কাকিমা বা মাসীমা যেকোনো সম্পর্কে ডাকতে পারতাম। কিন্তু মা ডাকটাই প্রথম কণ্ঠে এলো আমার। সেইদিনটি খুব আনন্দে কাটলো। পরীক্ষার ঠিক এক মাস আগে বাসুর সঙ্গে তার বাড়ি গেলাম।

খুকুড়দহ বাসস্ট্যান্ডে নেমে তিন কিলোমিটার সাইকেলে চেপে আড়খানা নামক গ্রামে আমরা পৌঁছে গেলাম। দুপুরের দিকে বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই স্নান সেরে বাড়ির পাশে মা শীতলা মনসা মন্দিরে প্রণাম করলাম। তারপর পরিবারের সকলের সঙ্গে মন্দিরের অন্ন ভোগ খেলাম। দুপুরের আহারের পর বিশ্রামের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি। বিকালের দিকে আচমকাই আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে বলে চল গ্রাউন্ডে যাব। কেন যাব? আমি প্রশ্ন করলাম তাকে । সে বলল গ্রাউন্ডের সব বন্ধু-বান্ধব রা থাকে এই সময়। তারা সবাই বিভিন্ন খেলা নিয়ে মেতে থাকে। আমি তাকে বললাম তোর যে লজিকের কিছু বিষয় শিখতে বাকি আছে সেইগুলো শিখবি বলেই তো আমি একমাস আগে এসেছি তোর বাড়ি। বাসু বলে সেসব হবে এখন। চল্ তো এখন গ্রাউন্ডে গিয়ে বসি। তার বাড়ির কাছেই বেশ সুন্দর একটি খেলার উপযুক্ত মাঠ দেখতে পাওয়া গেল। মাঠের একেবারে ধারে ধারে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো আছে। একধারে ভলিবলের কোর্ট কাটা আছে। অন্যদিকে, ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। গিয়ে দেখি ভলিবল খেলা চলছে খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এত সুন্দর ভলিবল টিম যা বলে বোঝানো যাবে না। খুব সুন্দর খেলছে ওরা। আমি এই খেলা দেখে আপ্লুত হয়ে গেছি। তার কিছুক্ষণ পর সবাই মিলে ক্রিকেট খেলি। খেলা শেষে আমাকে নিয়ে অনেকেরই মনে কৌতূহলী প্রশ্ন রয়েছে। সেই প্রশ্নের উত্তর মাঠের বন্ধুরা পেয়ে যায় যখন বাসু আমার সাথে তার অন্যান্য বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ গল্প করার পর আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিই। সামনে একটি পুকুর রয়েছে সেখানে গিয়ে ভালো করে হাত পা ধুয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বাড়িতে ঢুকি। বাড়িতে গিয়ে দেখি বাসুর মা, যাকে আমি নিজের মায়ের মতোই মা বলে ডাকি, সেই মা জমি থেকে তুলে আনা করোলা বস্তা ভর্তি করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এগুলো কি হবে? তখন বাসু বললো, আগামীকাল ভোরে এই বস্তা ভর্তি করোলা বাজারে পাইকারি দেওয়া হবে। মা আমাদেরকে দেখে বলল একটু অপেক্ষা কর বাবা আমি হাতের কাজটা শেষ করে তোদেরকে খাবার খেতে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর হাতের কাজ শেষ করে মা আমাদের দুজনকে মুড়ি নারিকেল, শশা, লঙ্কা দিয়ে খেতে দিল। আমরা খাওয়া শেষ করে পড়তে বসি। আমি যে যে বিষয়গুলি বাসু শিখতে পারেনি সেগুলি অত্যন্ত যত্নসহকারে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। সে শুধু শুনতে থাকে এবং আমাকে মাঝে মাঝে বলে কিছু মনে করিস না আমি একটু ধূমপান করতে চাই এই বলে আমার সামনে একটা সিগারেট ধরিয়ে নেয়। আমি আর তাকে বাধা দিইনি। সে রাত দেড়টা দুটো পর্যন্ত আমার পড়া গুলো শুনতে থাকে। তারপর দুজনের চোখ ঘুমের দেশে টেনে নেয়। ভোর ভোর বাসু ঘুম থেকে উঠে তার লোডিং সাইকেল টা বের করে সাইকেলের পেছনে করলার বস্তাগুলো ভালো করে বেঁধে নেয়। তারপর আসছি বলে পাঁশকুড়া বাজারের দিকে চলে যায়। বাড়ি ফিরে আসে যখন সে আমার তখন ব্রাশ হয়ে গেছে। ফিরে এসে দুজনে একসঙ্গে মুড়ি খেয়ে নিই। তারপর আবার পড়া। এইভাবে কখনো বাজার করতে যাওয়া,কখনো নিজের জমির ফসল বাজারে বিক্রি করা, কখনো রেশন তুলতে যাওয়া এবং অবশ্যই বিকালে মাঠে খেলাধুলা করতে যাওয়া এইসবের পর যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেই সময়টুকু পড়াতে দেওয়া। আমি মাঝে মাঝে ভাবি আমি লিখছি, খাতায় প্র্যাকটিস করছি, না দেখে প্রশ্নের উত্তর গুলো তৈরি করে খাতায় লিখেছি। কিন্তু বাসু প্র্যাকটিস করছে না, তৈরি করে খাতায় লিখবে না, আমার পড়ার বিষয় গুলো কানে শুনে শুনে মনে রেখে দিচ্ছে। ফাইনাল পরীক্ষার সময় এত সাজেশন নোটস যা কিছু আছে আগের দিন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব নোট গুলো কে রিডিং দিয়ে পরের দিন পরীক্ষার হলে লিখে দিয়ে চলে আসতো। আমি এত পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে যে ফল করলাম পরীক্ষায়, সে পরীক্ষার আগের দিন শুধুমাত্র নোটসগুলি রিডিং পড়ে চোখ বুলিয়ে তার পরের দিন পরীক্ষার খাতায় লিখে আসলো এইভাবে সে বিএ পাস করে গেলো ।

এই কথা অনেকেই শুনলে হয়তো ভাববে গালগপ্প বলছি। এটা সম্পূর্ণ বাস্তব বিষয়। এখানে আমি উপস্থিত ছিলাম, এই বিষয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আমি জড়িত। সেই ১৯৯৯ সাল থেকে আজও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন রয়েছে। বর্তমানে ২০২২ সালেও আমাদের মধ্যে এখনো বন্ধন টিকে রয়েছে। আমার একবার অভিনয় করতে গিয়ে বুকে পাঁজরে খুব ব্যথা লাগে। ডক্টর এক্সরে রিপোর্ট দেখে বলেন পাঁজরের বাম দিকে দুটি হাড়ে একটু চিরফাট হয়েছে। তাই যখন আমরা দুই বন্ধু মিলে একসঙ্গে ঘুমাতে যেতাম তখন যে বিছানায় আমরা ঘুমাতাম কোন অবস্থাতেই খুব ভালোভাবে দুইজন সেই বিছানাতে ঘুমাতে পারবো না অর্থাৎ বেড টি ছিল খুব কম চওড়া অথচ বন্ধু এমন ভাবে ঘুমাতো যাতে আমার শরীরের একটুও না লাগে । বন্ধু হয়ে আমার শরীরের এত যত্ন করত যা অন্য বন্ধুদের থেকে আশা করা বৃথা। আজও তার পরিবার ,তার আত্মীয়স্বজন আমারও পরিবার, আত্মীয়স্বজন। আমি বিএ পাশের পর আর পড়তে চাই ছিলাম না। কিন্তু বাসু নিজে পড়বে বলে মনে মনে এক ফন্দি তৈরি করে এবং বলে সে নাকি এম এ পড়বে। এইভাবে আমাকে এম এ ভর্তি করে জোর করে। তারপর আমার এম এ পড়ার খরচ বহন করে করে আমাকে আজকে বেঁচে থাকার এক মার্গ বের করে দেন। এই হল বন্ধু।

বাসুর এক জেঠুর ছেলে সম্বলপুরে অটোমোবাইল ডিপার্টমেন্টে কাজ করতো। বাসু বিএ পাস করার পর আমি একদিন ওদের ল্যান্ডফোনে ফোন করে জানতে পারলাম সেও তার দাদার কাছে কাজ করতে চলে যাবে। সত্যি সত্যিই একদিন সম্বলপুর এ চলে গেল। ওর বাড়িতে সে না থাকলেও আমি আরেকজন পুত্ররূপে ইউনিভার্সিটি থেকে আমার নিজ বাড়ি আসার পথে বাসুর বাড়িতে যেতাম সর্বপ্রথম। সেখানে সবকিছু দেখাশোনা করে আমার বাড়িতে আসতাম। আমি প্রতি শুক্রবার ইউনিভার্সিটি থেকে বাসুর বাড়িতে যেতাম শুক্রবার। শনিবার সেখানে থাকতাম মা বাবার কি প্রয়োজন আছে কি সমস্যা আছে সেগুলোর সমাধান করে আমার নিজ বাড়িতে আসতাম রবিবার সকালে। সেই দিন থেকে আবার সোমবার সকালে ইউনিভার্সিটি চলে যেতাম। বাসুর গ্রামের অনেক মানুষই আমাকে তখন ভালোভাবে চিনতে পেরে যায় বুঝতে পারে। তারা মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়, এদের দুই বন্ধুর এই অটুট বন্ধন এমনই যে বাসু তার দেশে না থাকা স্বত্বেও বন্ধুত্বের বন্ধনে অপর এক পুত্ররূপে বাবা মাকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে সপ্তাহে একবার হলেও ঘাটালের ওই বন্ধু এসে হাজির হয়। তাই ওখানকার মানুষজন প্রায় সকলেই আমাকে খুব ভালবাসত।

পরীক্ষার আগে একমাসের বন্ধুত্বের জীবন এবং আমাদের দুজনের মধ্যে সঠিক বোঝাপড়া ও শিক্ষামূলক আলোচনার ফলস্বরূপ আমাকে এখনো রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে নিজের ভাই রূপে। এত ভালো বাসা,এত স্নেহ , মা বাবার আশীর্বাদ আজও আমাকে সুস্থ রেখেছে।

রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya

Bengali Poetry 2022 | তালাল উদ্দিন | কবিতাগুচ্ছ ২০২২

Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা

Rabindranath Tagore’s love for art and literature

Loukik Debota Masan Thakur | লৌকিক দেবতা মাশান ঠাকুর | 2022

Sunglass and our friendship | Story – Sunglass and our friendship | Bangla galpo – Sunglass and our friendship | English story – Sunglass and our friendship | Bangla Natak – Sunglass and our friendship | Telefilm – Sunglass and our friendship | Short film – Sunglass and our friendship | Sunglass and our friendship – pdf story | Sunglass and our friendship – video download | full movie – Sunglass and our friendship | New book – Sunglass and our friendship | Trending story – Sunglass and our friendship | Best story – Sunglass and our friendship | Sunglass and our friendship 2023 | Shabdodweep story – Sunglass and our friendship | Best seller – Sunglass and our friendship | Viral short movie – Sunglass and our friendship | Short film – Sunglass and our friendship | Sunglass and our friendship history | Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Bangla Galpo | Shabdodweep story

Leave a Comment