Bengali Story 2023 | পরিচারিকা পাপিয়া | প্রবোধ কুমার মৃধা

Sharing Is Caring:

প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Bengali Story]

পরিচারিকা পাপিয়া [Bengali Story]

বলা নেই, ক‌ওয়া নেই, টানা তিন দিন কামাই করে চতুর্থ দিনের মাথায় নিয়মিত সময়ের ঘন্টা খানেক আগে এসে হাজির পাপিয়া। গিন্নি মায়ের মৌন থমথমে মুখটা দেখে চোখ নামিয়ে নিল সে। তারপর ধীরে ধীরে কাজে হাত লাগালো। এ বাড়ির পরিচারিকা পাপিয়া। মধ্য তিরিশের পাপিয়াকে দেখলে পরিচারিকা বলে মনে হবে না। বেশ ফিটফাট সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী সুন্দরী স্বল্পভাষী ভদ্র মহিলা।ভাগ্যের ফেরে এই কাজে নামতে বাধ্য হয়েছে। পরে আসব সে কথায়। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় পাতা চেয়ারে বসে ছিলেন সুরেশ বাবু। পাপিয়া এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘চা দেবো মেসোমশায়?’ সুরেশ বাবু মাথা নেড়ে সায় দিলেন। এমন সময় নিচে মাছ বেপারির হাঁক শুনে উঠে গিয়ে তাকে দাঁড়াতে বললেন। কর্তা-গিন্নির সংসার। উভয়েই কর্মজীবন থেকে অবসৃত। দুই ছেলে কর্মসূত্রে সপরিবারে বাইরে তারা। বিগত তিন দিন পাপিয়ার অনুপস্থিতির কারণে হোম-ডেলিভারির খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে। সে খাদ্যে এ বয়সে শরীর ভালো থাকে না। পাপিয়ার রান্না তখন মাঝপথে। কিচেনে ঢুকলেন সরমা দেবী। তারপর পাপিয়াকে লক্ষ্য করে বলতে শুরু করলেন,’ পুজোর ক’দিন তোকে একবেলা করে ছেড়ে দিলাম, তারপরও পরপর তিন দিন এমুখো হলিনে। এই বেতো শরীর নিয়ে আমাদের কীভাবে চলে তার হিসেব রাখিস? এরকম করলে লোক রেখে লাভ কী? বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকলে তো মিটে যায়।’

পাপিয়া নীরবে শুনল কথাগুলো। পরে আস্তে আস্তে বলল,’ গ্ৰাম থেকে হঠাৎ আমার ছেলে মেয়ে এসেছিল, ওদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এদিকে আসার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মাও এসে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
‘সব তো বুঝলাম, কিন্তু আমাদের চলে কী করে! …. আর শোন্‌ , রান্নার পরে কাপড়-চোপড়গুলো কেচে দিয়ে ছাদে মেলে দিয়ে যাস। ওবেলা আসার পথে কিছু সবজি কিনে আনবি।’

সান্ন্যাল দম্পতি জানেন পাপিয়া অন্যান্য পরিচারিকাদের মতো আটপৌরে মুখরা স্বভাবের নয়। মুখে মুখে তর্ক করে না।যে কারণে অনেক পয়সা দিয়ে তাকে কাজে রেখেছে। মনে মনে তার আচার – আচরণকে যথেষ্ট মান্যতা দেন। ঘটনার ফেরে হয়তো সে আজ পরিচারিকা, তবে যথার্থ নম্র-ভদ্র, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সুরেশ বাবুর বড়ো ছেলে ডাক্তার। থাকে দিল্লিতে।ছেলে মেয়ে দুজন কন্‌ভেন্ট স্কুলে পড়ে। ছোট ছেলে থাকে বেঙ্গালুরু। সে ইঞ্জিনিয়ার। তার দুই ছেলে।ছোটটির বয়স তিন। কোন ছেলেই বাবা-মা দুজনকে একসাথে নিজেদের কাছে রাখতে রাজি নয়। অগত্যা তাঁরা কোথাও না গিয়ে নিজেদের বাসা আগলে রয়ে গেছেন। কোন সন্তানের থেকে কোন আর্থিক সাহায্য আসে না, তার দরকার ও হয় না। নিজেদের পেনশনের টাকায় খাওয়া – পরা, ডাক্তার -বদ্যি সমস্ত‌ই অনায়াসে মিটে যায়। পাপিয়াই এখন তাঁদের বড়ো নির্ভরস্থল। সে কথা পাপিয়াও মনে মনে বুঝে গিয়েছে। ছেলে -বৌ, নাতি-নাতনির আশা-ভরসা এখন আর খুব একটা করতে চান না প্রৌঢ় দম্পতি। অকারণ তাদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে আর নিজেদের মনোকষ্টে বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। ওরা নিরাপদে থাক, ভালো থাক‌।

বিজয়া দশমীর দিন বাইরে সারা শহর জুড়ে আনন্দ উৎসবের ধুম। মেঘমুক্ত শারদীয় বিকেলে সান্ন্যাল দম্পতি উপরের ঝুল বারান্দায় বসেছিলেন। নিচে চলমান কর্ম জগতের মহা ব্যস্ততা দেখতে দেখতে আর উপলব্ধি করতে করতে কথা প্রসঙ্গে সুরেশ বাবু আপন অন্তরের গভীর অনুভূতির কথা কতকটা আক্ষেপের সুরে স্ত্রীকে শোনাচ্ছিলেন।- মানুষ ধীরে ধীরে যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। নিজের প্রয়োজন আর গরজ ছাড়া আবেগ-আকাঙ্ক্ষা, স্নেহ-প্রেম, ভালোবাসার কোন মূল্য থাকছে না। অনেক আশা নিয়ে,ভরসা নিয়ে পারিবারিক জীবনটাকে গুছিয়ে সর্বাঙ্গসুন্দর করে গড়ে তুলতে চায় মানুষ, গড়ে তোলে ও অনেকে। কিন্তু শেষে সব যেন এলোমেলো, অগোছালো আর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।তাকেই ভবিতব্য ভেবে নিয়ে মেনে নিতে হয়, ন‌ইলে জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলির রূপ-রস-গন্ধ সব ফিকে হয়ে যায়। নিচে এক প্রৌঢ় দম্পতি দুই নাতি -নাতনিকে নিয়ে পথে হাঁটছিলেন। ফুটফুটে বাচ্চা দুটিকে রঙিন প্রজাপতির মতো লাগছিল।এক ঝলক আনন্দ খেলে গেলে ও পরক্ষণে মনটা বিষাদে ভরে গেল সরমা দেবীর।কাল রাতে দিল্লি থেকে ফোন করেছিল নাতনি সৃজা। কলকাতায় আসার জন্য কি আকুতি! সময় নেই ওর বাবা মায়ের। উপায়হীন অসহায় দাদু-দিদা সুরেশ-সরমা ! অগোচরে দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলা ছাড়া বিকল্প কোন পথের সন্ধান জানা নেই তাঁদের। ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির কাছে ফেলে যাওয়া বাসার কোন মূল্য থাকে না।

যথা সময়ে কলিং বেলটা বেজে উঠতে সুরেশ বাবু গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। ঘরে ঢুকে পাপিয়া নিজের কাজে চলে গেল। তাকে আজ কিছুটা চিন্তাযুক্ত বলে মনে হলো। বাইরে বসে বিকেলের চা পানের পর বৃদ্ধ দম্পতি যুগলে উঠে ঘরের মধ্যে ফিরে গেলেন। কাজ করতে করতে এক-ফাঁকে পাপিয়া তার স্বভাব শান্ত ভঙ্গিতে জানাল যে, আগামী কাল তাকে গ্ৰামের বাড়িতে যেতেই হবে,তাই খুব সকালে এসে দু-বেলার ব্যবস্থা করে রেখে যাবে। রাতে অবশ্য ফিরে আসবে সে। সরমা দেবী হাসি মুখে সম্মতি দিলেন। পাপিয়ার সমস্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল তিনি। বেচারি পাপিয়া! বাপের ঘর লক্ষ্মীকান্তপুর।বিয়ে হয়েছিল কুলপিতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।দু-বেলা দু-মুঠো খাওয়া-পরার অভাব ছিল না। শ্বশুর শাশুড়ি যতদিন বেঁচে ছিলেন কোন সমস্যা ছিল না। তাঁরা গত হলে পর জমাই সঙ্গ দোষে জড়িয়ে পড়ে। ঘরে ব‌উ-ছেলে মেয়ে রেখে পাশের গ্ৰামে এক নিম্ন সম্প্রদায়ের মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে সেখানে দিনের পর দিন কাটাতে শুরু করে। কোন কোন দিন ঘরে ফেরে বটে, তখন ছেলে মেয়ের সামনে শুরু হয় চিৎকার চেঁচামেচি আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। শ্বশুর ভিটেয় টিকে থাকার চেষ্টা করেছিল পাপিয়া। কিন্তু ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ ভেবে অনিশ্চিত অজানা পথের ঝুঁকি নিজের কাঁধে নিয়ে ভাইয়ের সংসারে এসে হাজির হলো। সেখানে আছেন বিধবা মা। মায়ের ভরসাতেই ছেলে মেয়ে দুটোকে রেখে উপার্জনের সন্ধানে রাজপুর-সোনারপুর পৌরসভার উপকন্ঠে বাসা ভাড়া নিয়ে আছে আজ প্রায় চার বছর হয়ে গেল। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ঘরে আরও বিভিন্ন গ্ৰামের কাজের মানুষ জন বাস করে। তারা সবাই ফ্যামিলি নিয়েই আছে। তাদের সঙ্গে পাপিয়ার অনেক পার্থক্য, ফলে পাপিয়াকে তারা মনে মনে সবাই হিংসা করে। বাড়ির মালিকের সাথে জড়িয়ে আড়ালে-আবডালে অনেক কানা-ঘুষো করে।

পারিপার্শ্বিক ঘটনা বা রটনা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না পাপিয়া। সবার সাথে সমান ভাবে কথাবার্তা বলে তবে কার ও সাথে তেমন মাখামাখির মধ্যে সে নেই। প্রথম প্রথম বেশ ক’টা বাড়িতে কাজ ধরেছিল। এখন সান্ন্যাল বাড়ির কাজে সময় দেয় বেশি। দুপুরে পাড়ার ঘোষেদের বাড়িতে রান্নার কাজটা করে। সান্ন্যাল দম্পতির বাড়ির সঙ্গে তার একটা হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে।দায় দরকারে গিন্নিমা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন। প্রতিমাসে মা এবং ছেলে মেয়ের খরচ বাবদ টাকা পয়সা ভাই-ভাজের হাতে তুলে দেয়,উপরন্তু ছেলে মেয়ের জন্য হাত খরচ বাবদ বাড়তি কিছু টাকা মায়ের হাতে দিয়ে আসে। এখন পাপিয়ার একমাত্র লক্ষ্য মাসে মাসে কিছু জমিয়ে মাথা গোঁজার একটা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে ছেলে মেয়ে দুটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসা।মা দিন দিন অসমর্থ হয়ে পড়ছেন, ভাই-বৌয়ের মতিগতি তেমন সুবিধের নয়। তাছাড়া তাদের ও তো ছেলে মেয়ে আছে, বাড়তি বোঝা বয়ে বেড়াবে আর কতো দিন!

প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha

Best Online Bangla Galpo App | Story Archive

Best Story About Travel Experience | Haridwar to Varanasi

Best New Bengali Famous Story | Bishonno Biday

Best Modern Online Bangla Galpo | Shabdodweep Story

শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২৩ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২৩ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

bengali story | short bengali story analysis | short bengali story characteristics | short bengali story competition | short bengali story definition | short bengali story english | bengali story competitions for students | bengali story competitions ireland | writing competitions ireland | bengali story writing practice | bengali story writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is bengali story writing | bengali story trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Shabdodweep bengali story | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder

Leave a Comment