Best Article in Bengali – শর্মিষ্ঠা ঘোষ – সূচিপত্র
সমবায়, স্বপ্ন ও আশা – শর্মিষ্ঠা ঘোষ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সমবায়নীতি প্রবন্ধে লিখেছেন, “মানুষের ধর্মই এই যে সে অনেকে মিলে একত্র বাস করতে চায়। একলা মানুষ কখনোই পূর্ণ মানুষ হতে পারে না; অনেকের যোগে তবেই সে নিজেকে ষোলো-আনা পেয়ে থাকে। দল বেধে থাকা, দল বেঁধে কাজ করা মানুষের ধর্ম বলেই সেই ধর্ম সম্পূর্ণভাবে পালন করাতেই মানুষের কল্যাণ, তার উন্নতি। “তাঁর মতে লোভ ক্রোধ মোহ প্রভৃতি মানুষের রিপু কারণ। এইসব প্রবৃত্তি ব্যক্তি বিশেষ বা সম্প্রদায় বিশেষের মনকে দখল করে নিয়ে মানুষের জোট বাধার সত্যকে আঘাত করে। তার এই বক্তব্য থেকেই সংজ্ঞা নির্ধারণ করা যায় সমবায়ের। আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পেশার সাথে যুক্ত। এবার একই পেশায় যুক্ত সমস্ত লোক একত্রে কাজ করলে পেশাগত সমস্যাগুলি সমাধান করা সহজ হয়। সমবায় সমিতি হলো এমন এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যেখানে অনেক মানুষ তাদের মিলিত শ্রম মূলধন ব্যবস্থাপনা পরিচালনার মাধ্যমে উৎপাদিত জিনিস নিজেদের মধ্যেই ভোগ করে ক্রয় বিক্রয় করে সমান মুনাফার ভিত্তিতে। এভাবে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন সম্ভব। কোন মধ্যসত্ত্ব ভোগী শোষণ থাকে না। ফলে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার শোষণ এবং বঞ্চনার কোন গল্প নেই। অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে সমবায় সমিতির ভিন্নতা এইখানে যে ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে মধ্য এবং নিম্নবিত্ত উপেক্ষিত সেখানে সমবায়গুলি শোষক শ্রেণীর হাত থেকে এদের বাঁচায়। সবার শুরুতে সমবায়গুলি গড়ে তোলার প্রধানতম লক্ষ্য ছিল শ্রমিক কৃষক ও অন্যান্য অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মধ্যস্বত্তভোগী ও ঋণদাতা সুদখোর মহাজনদের উচ্ছেদ। নিজেদের স্বল্প মূলধন একত্রিত করে অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবসা গড়ে তুলতে পারে এর মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্থানীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের গুরুত্ব বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদিত পণ্যের সুষম বন্টন বাজারজাত করা পরিবহন এবং মুনাফার শেয়ার ভিত্তিক সম বন্টনের মাধ্যমে গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সমমনস্ক সমঅর্থনীতি এবং সমপেশার মানুষের ঐক্য প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র দূরীকরণ, সাধারণ মানুষের থেকে নেতৃত্ব সৃষ্টি, সামাজিক কল্যাণ সাধন, পেশাদারী দক্ষতা বৃদ্ধি করা, সম্মিলিত পুঁজিতে বৃহদায়তনের ক্রয় সুবিধা তৈরি করা এবং বৃহৎ পুঁজির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, সঞ্চয় এর প্রবণতা সৃষ্টি এগুলিই সমবায় সমিতি গঠনের মূল উদ্দেশ্য।
ভারতবর্ষের সমবায় আন্দোলনের পুরোধা বলা হয় স্যার ফেডরিখ নিকলসনকে। লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালে সমবায় আইন প্রবর্তন করেন । অবিভক্ত বাংলায় সমবায় আন্দোলনের দুই প্রাণপুরুষ স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে প্রথম স্টেট অফ বরোদাতে অনন্যা সহকারী মন্ডলী তৈরি হয়। ভারতের ইতিহাসে সম্ভবত এটিই প্রথম যৌথ সমবায়। অনন্যা কোঅপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড ভারতের প্রথম কোঅপারেটিভ ব্যাংক। ইউরোপের শিল্প বিপ্লবেরও আগে ১৭৬১ সালে ইংল্যান্ডে উইভারস সোসাইটি গঠন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় তাঁতিদের শিক্ষা অভিবাসন এবং ঋণের সুবিধা দেওয়া। সাধারণভাবে সমবায় সমিতি তিন প্রকারের। উৎপাদক, ভোক্তা এবং ঋণদান সমবায় সমিতি। কার্যভিত্তিক সমবায় সমিতির মধ্যে আছে কৃষি সমিতি, ক্রয় – বিক্রয় সমিতি, গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি, বীমা এবং বহুমুখী সমবায় সমিতি। সংগঠনিকভাবে প্রাথমিক, জাতীয় এবং কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি। প্রথম সমবায় আন্দোলনের পত্রিকা “দ্য কো-অপারেট” প্রকাশিত হয়েছিল ১৮১৮ সালে। সমবায় আন্দোলনের জনক বলা হয় রবার্ট ওয়েন কে । একতা সাম্য সহযোগিতা সততা আস্থা বিশ্বাস সেবা এবং গণতন্ত্র, এই নিয়ে তৈরি হয়েছে সমবায়ের নীতিমালা। “অল ফর ইচ এন্ড ইজ ফর অল। ” “সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। “সমবায়ের স্লোগান, “একতাই বল”। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমবায় আন্দোলন পূর্ণতা লাভ করে।
সমবায় সমিতি গঠন করতে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য প্রয়োজন। সদস্য সংখ্যার কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই । সমবায় আইন অনুসারে একটি সমিতিকে নিবন্ধিত করতে হয় এবং এর ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে। সমবায়ে প্রত্যেক সদস্য সমান মর্যাদার অধিকারী শেয়ারের পরিমাণ যাই হোক না কেন। সমবায় সমিতির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। শেয়ার হস্তান্তরযোগ্য নয়। তবে শেয়ার ফেরত দিলে সমিতি থেকে মূলধন উঠিয়ে নেওয়া যায়। সমবায় সমিতির মূলধনের কোন সীমারেখা নেই। তবে যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে সমবায় নিবন্ধিত হয় তার বেশি শেয়ার বিক্রি করা চলে না। কোন সদস্যই সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা বা মোট মূলধনের এক দশমাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারেনা। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সমস্বার্থ বিশিষ্ট লোকের জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপথ খোলা। সমান অর্থনৈতিক চরিত্রের এবং একই পেশাগত বিষয়ের লোক হতে হবে তাদের।। সমবায় কর্তৃক অর্জিত মোট মুনাফার এক চতুর্থাংশ সঞ্চিত তহবিল রেখে বাকি লভ্যাংশ সদস্যদের মধ্যে বন্টন করা চলে। সমিতি পৃথক ব্যক্তিসত্তার অধিকারী। প্রয়োজনে নিজ নামে মামলা দায়ের করা যায়। সমবায় সমিতি স্থানীয় পর্যায়ে গঠিত হয়। সদস্যদের বার্ষিক সভায় সমিতির সদস্যরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট দানের মাধ্যমে পরিচালক ঠিক করেন।
রবীন্দ্রনাথ তার সমবায় নীতি প্রবন্ধে বলেছিলেন, “দারিদ্রের ভয় আসলে ভূতের ভয়। ছাড়া ছাড়া থাকার জন্যই মানুষের এই ভয়।” দারিদ্র এবং বঞ্চনা থেকে মুক্তির উপায় একত্রিত হওয়া। তিনি বলেছেন “অনেক গৃহস্থ অনেক মানুষ একজোট হইয়া জীবিকা নির্বাহ করিবার যে উপায় তাহাকেই য়্যুরোপে কো-অপারেটিভ প্রণালী এবং বাংলায় সমবায় নাম দেওয়া হইয়াছে। আমাদের দেশ কেন, পৃথিবীর সকল দেশেই এই প্রণালী একদিন বড় হইয়া উঠিবে। ” রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহ ও পতিসরে কৃষকদের সমবায় গঠনের মাধ্যমে কৃষির উন্নতির কথা বলেছেন। ১৯২১ সালে “শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী সমিতি”, “শান্তিনিকেতন কর্ম সমিতি” এবং ” সুরুল কৃষি সমিতি ” তৈরি হয়। সুরুল কৃষি সমিতির নাম বদলে রাখা হয় “শ্রীনিকেতন গ্রামোন্নয়ন সমিতি ” ১৯২৮ সালে। শ্রীনিকেতনের আশপাশের সাঁওতাল পল্লীতে তৈরি হয় “আদিবাসী সহায়ক সমিতি”। শান্তিনিকেতন এর পাশে ৭০০ একর জমি সরকার অধিগ্রহণ করে বিশ্বভারতীকে দেয়। এর মধ্যে ৩০০ বিঘা জমি সাঁওতাল পরিবার গুলিকে বন্টন করা হয়।১৯৩৪ সালে শ্রীনিকেতনের পাঁচটি সাঁওতাল পাড়া নিয়ে সাঁওতাল কেন্দ্র ও পল্লী সেবা সমিতি গঠিত হয়। কেবলমাত্র কৃষি নয় তাঁত শিল্প স্বাস্থ্য পরিচর্যার কর্মসূচি ইত্যাদি ও সমবায় ভিত্তিকভাবে চালানোর পক্ষপাতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। “শ্রীনিকেতন সমবায় ডিসপেন্সারি ” তার প্রমাণ। কুঠিবাড়িতে তিনি দেখেন ছোট ছোট জমিতে চাষ করলে অনেক অসুবিধে। তার চেয়ে সমবায় ভিত্তিকভাবে জমিগুলিকে একত্রিত করে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করলে অনেক লাভ। তিনি পল্লী সমিতি স্থাপনের চেষ্টা করেন। তার মতে কোঅপারেটিভ প্রণালী ভারতবর্ষকে দারিদ্র্য থেকে বাঁচাবার একমাত্র উপায়। ছোট ছোট চাষী ছোট ছোট গোয়ালা তাঁতি কামার কুমোর যদি একত্রে কাজ করতে পারতো যদি বড় পরিসরে কাজ করতে পারতো তাতে তাদের পরিশ্রম যেমন লাঘব হত উৎপাদন খরচও কমতো। সম্মিলিত মূলধন মূলধন বৃদ্ধি করত এবং উৎপাদিত দ্রব্যের বন্টন ও মুনাফার সমবন্টন সম্ভব হত। তিনি বলেন, “তোমরা যে ৫০ জনে চিরকাল পাশাপাশি পৃথক পৃথক চাষ করিয়া আসিতেছ তোমরা তোমাদের সমস্ত জমি হাল লাঙ্গল গোলাঘর পরিশ্রম একত্র করিতে পারিলেই গরিব হইয়াও বড় মূলধনের সুযোগ আপনি পাইবে।”
পশ্চিমবঙ্গে ১৭ ধরনের সমবায় আছে। কো অপারেশন ডাইরেক্টরেটের এর তিনটি জোনাল এবং ২২টি রেঞ্জ অফিস আছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৭০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে এখনো কোন ব্যাংক নেই। এইরকম গ্রামগুলিতে ২৬০০টি ব্যাংকিং পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করবে সমবায় দপ্তর। সমবায় ব্যাংকগুলি সাত শতাংশ সুদে চাষের কাজের জন্য কৃষকদের ঋণ দেবে। মহাজনের কাছ থেকে চরা সুদে নিতে হবে না। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে ৪৩ হাজার সমবায় আছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রায় এক লক্ষ পরিবারকে হাঁস মুরগি পালনের জন্য আঠারো হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ২৮ হাজার সাধারণ সমবায়ের পাশাপাশি ১০ হাজার মৎস্য এবং ৫ হাজার দুগ্ধ সমবায় রাজ্যের যুব সম্প্রদায়কে স্বাবলম্বী হবার কাজে সাহায্য করবে। মানুষের কাছে। সরকারের সমবায় দপ্তরের ভূমিকা এবং উদ্যোগ গুলির বিষয়ে।প্রচারের জন্য তৈরি করা হচ্ছে সেন্টার ফর কোঅপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট। মালদা, ঝারগ্রাম, উত্তরপাড়ায় এরকম কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। সমবায়কে জোরদার করে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে এমনটা আশা করাই যায়।
শর্মিষ্ঠা ঘোষ | Sharmistha Ghosh
Shramik Divas 2023 | International Labour Day | পুনম মায়মুনী
32 Beshas of Jagannath Mahaprabhu | পুরীর জগন্নাথ মহাপ্রভুর বত্রিশ প্রকার সাজ-শৃঙ্গার
2023 New Bengali Story | রামপদর ভুবন | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা
Sesh Parinati | শেষ পরিণতি | বিনায়ক ঘোষ | 2023
Best Article in Bengali | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | Best Article in Bengali Language | Best Article in Bengali pdf | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | Best Article in Bengali book | Best Article in Bengali – Online | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | Viral Video – Best Article in Bengali | Best Article in Bengali Source | bengali article writing format | Best Article in Bengali News | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | Ebook Best Article in Bengali | PDF Best Article in Bengali | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | Best Article in Bengali Font | article writing on global warming | bengali article writing pdf | article writing practice | Best Article in Bengali Ebook 2023 | what is article writing | content writing topics 2023 | Bangla Prabandha | The Best Article in Bengali | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Article | Best Article in Bengali in pdf 2023 | Trending Best Article in Bengali | Galpoguccha | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder