কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা – সূচিপত্র [Bengali Story]
রামপদর ভুবন – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা [2023 New Bengali Story]
ইংরেজি বছরের শুরু। আমের মুকুল ঝরে ঝরে উঠোনে বিছিয়ে যায়। কুয়াশা তখনও ঘন হয়ে জড়িয়ে থাকে আমগাছ, তার ঘর, গোলা ঘর পুকুর পাড়। রামপদ রোজ সকালে ওঠে। নারকেল কাঠির ঝাঁটা দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করে। মনে মনে ভাবে এত মুকুল ঝরে গেলে কয়টা বা আম ধরবে গাছে! রামপদ সংসারে একা, বাবা মা গত হয়েছে প্রায় এক দশক হল। একই বছরে সে বাবা আর মাকে হারাল। তখন তার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। গ্রামের ছেলেপুলে লেখা পড়া বেশিদূর নয়, আঠারো পেরোলে তাদের বিয়ের ফুল ফোটে। রামপদ কিন্তু সেই ধরনের ছেলে নয়। ক্লাস এইট পাশ হওয়ার পর সংসারের হাল কাঁধে চাপে। বিশেষত বাবা মা উভয়ে অসুস্থ ,তাদের কোন যত্নের ত্রুটি সে কোন দিন করেনি। সেই একমাত্র সন্তান। তার মত বাবা মা অন্তপ্রাণ, এমন ছেলে দেখাই যায় না । প্রতিবেশীরা এক বাক্যে এই কথা স্বীকার করে অকপটে।
তার গোয়ালে দুটো বলদ। নিজে এখনও লাঙ্গল দিয়ে জমি চষে। বেশি তো জমি নয়, বিঘে দুই। তাতেই তার সারাবছরের খোরাকি হয়ে যায়। বিঘে খানেকের ভদ্রাসন, ছোট পুকুর আর বাগান। নিজেই জাল বোনে, মাছ ধরে। আর রান্না তো সে অনেক দিন হল নিজেই করে। আসলে সে তো আর সংসারী হল না! গ্রামের এমন কোন লোক নেই যে তার জন্য ঘটকালি করেনি। কিন্তু হল না, সেও আর বিয়েতে মন দিল না। মূল কারণটা ছিল তার একটা পায়ের বিকলাঙ্গতা। যদিও সেই বিকলাঙ্গতা তার চাষ করা, জাল ফেলা, গাছ বাওয়া কোন কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। তাই সে একলা থাকাটাই শেষমেশ বেছে নিল।
দুটো বলদ যেন তার দুই সন্তান। কোন যত্নের ত্রুটি করেনা তাদের, বিশেষ করে চাষের সময়। আর তার উঠোনের আম গাছটা, যেন তার বাবা। জন্মাবধি সে শুনেছে তার বাবার হাতে পোঁতা ওই গোলাপ খাস আমের গাছ। পুকুর পাড়ের নারকেল আর তাল গাছগুলোও তার বাবার হাতের। কিন্তু ওই আমগাছ তার কাছে কেন যে পিতৃতুল্য সেই জানে! তার বাবাকে দেখেছে কী যত্ন করত ওই আম গাছটা। মাটির ঘরের বারান্দায় রোগশয্যায় শুয়ে শুয়ে ওর বাবা ওই গাছটার দিকে চেয়ে থাকতো।বৈশাখে যখন ডালে ডালে আম ঝুলে থাকতো, সেও অবাক বিস্ময়ে দেখতো সবুজ বরণ কাঁচা আম গুলো। তার মনে হত, সৃষ্টিকর্তার কী অপরূপ সৃষ্টি। বৈশাখের দহনের দিনে সে ওই আমগাছের ছায়ায় বসে বসে ভাবত, একটা গাছ, সে পারে না বলতে কোন কথা, পারে না চলতে, খায় যে কী, – তবু মানুষের জন্য সৃষ্টি করছে সুস্বাদু এক অমৃত ফল! এই আমগাছের কাঁচা আম সে কোনদিন গাছে উঠে বা আঁকশি দিয়ে পাড়ে না। গাছের শাখায় আঘাত লাগবে বলে। মনে করে আম গাছের আঘাত মানে, তার বাবার গায়ে যেন আঘাত। শুধু মাত্র ঝড়ে গাছ থেকে পড়লে বা পেকে পড়লেই তবে সে আম নিয়ে থাকে। তাল গাছ আর নারকেল গাছেরও সেই একই পদ্ধতি। ডাব নারকেল হলে, তাল পেকে পড়লেই তবে সে গ্রহণ করে। যদি বলি একলা মানুষ কত গুলো আম , নারকেল আর তাল খাবে ! আসলে তার তো প্রয়োজন সামান্য। খায় পাড়ার ছেলেরা, বড়রা , মহিলারা। তবে খাওয়ানোর আগে তার শর্ত আরোপিত হয়। পাকা আম নিলে তার নিজের বাড়িতে ওই আমের এক বা দুটো গাছ করতে হবে, তাল আর নারকেলের ক্ষেত্রে ওই একই শর্ত। প্রথমে পাড়া,তারপর গ্রামের সবাই রামপদ হালদারের ওই শর্ত মেনে নিয়েছে অনেক দিন হল। আর এই ফল বণ্টনের ক্ষেত্রে সে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করে।
খোঁড়া মানুষটা কোন মন্ত্রে এই গাছকে ভালো বাসতে শিখল! গ্রামের মানুষ অবাক হয়। এখন তো রামপদ হালদারের গাছের আম খাওয়ার লোক নেই, সব বাড়িতে আম গাছ, তাল গাছ আর নারকেল গাছ। তবে ছেলেরা না আসুক, পাখিরা পাকা আম খেতে আসে। দিনের বেলায় কত পাখি তার গাছে, রাতে আসে বাদুড়ের দল। কোন বাধা তো দেয় না, বরং সে পাখিদের ডাকে আম যখন পেকে টুকুর হয়। তবে কাঁচা ও পাকা আম কুড়ানোর ছেলে মেয়েরা যে এখনও আছে তা সে জানে। না হলে বৈশাখের শেষ পর্বে, প্রত্যেক ভোরবেলা ছোটদের চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভাঙত না। আম, তাল আর নারকেলের ছায়া ভরা এক গ্রাম, রামপদর জন্ম গ্রাম। শুধু কী এই ফলের গাছ, তা কিন্তু নয়, আরো কত গাছ গাছালি ভরে আছে তার গ্রামে। বলা যায় রামপদ হালদারের দেখানো পথে সব পরিবার নানান গাছের মালিক। কোন বাড়িতে আত্মীয় এলে অবাক হয়ে যায়, ছায়াঘেরা এক মনোরম পরিবেশ পেয়ে। তারা গল্প শোনে খোঁড়া রামপদ হালদারের। লোকটা এত সরল – সিধে, খোঁড়া রামপদ কেউ বললে মনে মনে হাসে । কেউ বা দেখতে যায় তার সেই ঘর, উঠোন , উঠোনের সেই বুড়ো আম গাছ, পুকুর পাড়। আর রামবাবুর একক জীবন। রামপদ তার মাটির ঘরের বারান্দায় মাদুর পেতে বসতে দেয় অতিথিদের। গরমের দিন হলে একটা তালপাতার পাখা দেয়, দেয় এক গ্লাস জল মাটির কলসি থেকে গড়িয়ে। অচেনা অতিথি তার আতিথেয়তায় অবাক না হয়ে পারে না। শেষে আমের দিন হলে পাকা আম, নয়তো বা কয়েক টুকরো নারকেল আর মুড়ি।
গ্রামের গ্রীষ্মকাল যেন ফলের উৎসবের মাস। জৈষ্ঠ্য মাসের প্রথম পর্যায়, একদিন খুব সকাল বেলা। রামপদকে কে যেন ডাকছে। গলাটা কিছুটা যেন চেনা মনে হল তার। রামপদ তার মাটির বারান্দা গোবর জল দিয়ে লেপে দিচ্ছিল। উঠোনে নেমে অবাক হয়ে সে মানুষটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, যদিও তার হাতে তখন গোবর জল লেগে আছে। … বিস্ময়ের ঘোর কাটতে রাম বলে, ‘রতন, তুই এত বছর পরে গ্রামে এলি! রোজ তোর কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই প্রাইমারি স্কুলের দিনগুলোর কথা। ক্লাস ফোর পাশ করে তুই চলে গেলি শহরে, আমরা এই গ্রামে রয়ে গেলাম। বল তুই কেমন আছিস।’ বড় অফিসের অফিসার রতন শুধু চেয়ে আছে খোঁড়া রামপদ হালদারের দিকে। প্রাইমারি স্কুলে ওরা দুজনে খুব ভালো বন্ধু ছিল। সেই স্কুল জীবনের সমস্ত গল্প তার মাথার মধ্যে হঠাৎ ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি করলো। তাদের সেই জীবন আর এই জীবন, কী বিশাল পরিবর্তন ! ….. স্কুলে সকলে রামপদকে খোঁড়া বলে ডাকলেও রতন কিন্তু কোনদিন ওই নামে ডাকেনি, বরং সে অন্যদের সঙ্গে এই নাম নিয়ে ঝগড়া করতো।
রতন অনেক কথা, অনেক গল্প, রামপদর বাবা মার কথা সব মন দিয়ে শুনলো। দেখল তার ঘর, গোয়াল, উঠোন, রান্নাঘর, গরু। আর সেই বুড়ো আমগাছটা। তার এই একক জীবন, তার এই প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, নিষ্পাপ নিরালম্ব গ্রাম্য যাপন চিত্র। …. রামপদ তার ছোট বেলার সহপাঠী বন্ধুকে বসতে দিল বারান্দায় মাদুর পেতে। বড় অফিসের অফিসার রতন এখন কিন্তু সেই ছোট রতনের ভূমিকায়। সে শুধু রামপদর সংসার দেখছে, দেখছে তার গৃহস্থালির কাজকর্ম। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে রামপদ নিত্য দিনের কাজগুলো গুছিয়ে নেয়। গরু দুটোকে উঠোনে গাছের ছায়ায় বেঁধে রাখে। রান্না ঘরে উনুনে রতনের জন্য চা এর জল বসিয়ে দেয়।
কত কাল পরে দুজনে মুখোমুখি। রতন চা, মুড়ি আর নারকেল খাচ্ছে। রামপদ কতকাল পরে যেন চায়ের কাপে ঠোঁট ঠেকাল। ‘তুই গ্রামে একি কাণ্ড ঘটালি!’ -রতন বলে। রামের উত্তর, – ‘কিছুই তো করিনি ভাই। তোরা বড় বড় অফিসার, দশের ও দেশের কত কাজ করছিস, দেশ এগিয়ে চলেছে। আমি এই খোঁড়া, ল্যাংড়া মানুষটা আমার এই ছোট সংসার নিয়ে পড়ে আছি। পৃথিবীর কোন খবর রাখি না।’ রতন অবাক হয়ে তার ছোট বেলার সহপাঠীর দিকে তাকিয়ে থাকে। নিবিষ্ট মনে দেখে, এক পোড় খাওয়া চেহারার খোঁড়া মানুষটিকে। এক নিরীহ দর্শন গ্রামের মানুষ কিভাবে সমস্ত গ্রামের ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে। গ্রামটা যেন তার এক অলৌকিক ছোঁয়ায় সবুজের অভিযানে নেমেছে। হয়তো ছড়িয়ে যেতে পারে পাশের সংলগ্ন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে! রতন হেসে ওঠে, রামপদর কথা শুনে। কতদিন পর সে মাটির বারান্দায় বসলো, মনে করতে পারছে না। কিন্তু এসি ঘরে অভ্যস্ত অফিসার, যেন এক অন্য প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ করতে পারছে। দখিনা বাতাস আর ছায়ার সামিয়ানা। সেই কিশোর বেলার স্বপ্নের দিনগুলো যেন ভেসে ভেসে আসছে বৈশাখি সকালে। মনে পড়ে তার পঁচিশ বৈশাখের প্রভাত ফেরির দিন, রামপদর রবীন্দ্র কবিতা পাঠ। দশতলা আবাসনের এসি ঘর, সে এখন ভুলে গেছে। ভুলে গেছে ব্যাঙ্গালোরে তার ঠিকানা। সে শুধু ভাবছে এত বড় অফিসার হয়ে নিজের গ্রামের জন্য সামান্য কিছুই করতে পারেনি, কিন্তু রামপদ পেরেছে। খুব বড় কাজ সে করেছে, ও নিজেই জানে না কী করেছে!
রতনমনি ভাবে, – আজকের এই পরিবেশ দূষণ আর বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্রান্তিকালে, যে অশনি সংকেত বিশ্ব জুড়ে, রামপদ বোধ হয় তার একটা সমাধান সূত্র বের করেছে। আসলে শহরের দূষণ নিরাময় অযোগ্য। গ্রামের সবুজ আস্তরণ থেকে প্রাণবায়ু না পেলে, শহর বাঁচবে না বেশিদিন। গাড়ির ধোঁয়া, ঘরের এসি মেশিন, কারখানার ধোঁয়া, ভূগর্ভের জলের অপরিমিত ব্যবহার, বৃক্ষ বিহীন পথ, মাটির ছোঁয়া নেই, জলাশয় ক্রমশ বিলীয়মান। শীতের সময় ধূলোয় ভরে যায় বাতাসের বুক। এক দমবন্ধ করা অবস্থার মধ্যে মানুষ আজকের শহুরে পৃথিবীতে।
রামপদর সংসার, রামপদর জীবন রতনকে আজকে খুব নাড়া দিল। রোদ্দুরের তেজ বাড়ছে। ইতিমধ্যে গ্রামের অনেকে রতনকে দেখতে এসেছে ওদের বাড়িতে। তারা শুনলো, রতন গেছে রামপদর বাড়ি। …… রামপদ তার খেপলা জাল টা বের করলো দেখে রতন বলে, – ‘কী রে তুই মাছ ধরবি নাকি? ‘রামপদ হেসে বলে, – ‘বাড়িতে বড় অফিসার এসেছে, শুধু ডাল ভাত খাবে?’ রতন উদাস হয়ে এক সময়ের সহপাঠীর দিকে চেয়ে থাকে। হঠাৎ তার মনে হল, যদি সে শহর ছেড়ে তার জন্ম গ্রামে ফিরে আসে! রামপদ কী তার সঙ্গী করে নিতে পারে! এমন সময় একদল গ্রামের যুবক আর প্রবীণ, হৈ হৈ করে রামপদর ছায়া কুঞ্জে ঢুকে পড়ে রতনকে দেখবে বলে।
কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya
Bengali Poetry 2023 | কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | গোবিন্দ মোদক | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Poetry 2023 | বারিদ বরন গুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ ২০২৩
Bengali Novel 2023 | স্টেশন কান্তার (১ম পর্ব) | উপন্যাস ২০২৩
bengali story new | indian poems about death | 2023 new bengali story | 2023 new bengali story books for child pdf | 2023 new bengali story books for adults | 2023 new bengali story books | bengali story books for child | 2023 new bengali story books pdf | 2023 new bengali story for kids | 2023 new bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short 2023 new bengali story definition | short story english | short story for kids | short 2023 new bengali story generator | bengali story 2023 | short story ideas | short story length | long story short | long story short meaning | long bengali story | long story | long story instagram | story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | 2023 new Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Bengali Writer | Shabdodweep Bengali Story | Updated Bengali Story 2023 | update 2023 new Bengali Story | 2023 new Bengali Story – top list | 2023 new Bengali Story – best story | 2023 new Bengali Story – top story | Best seller – 2023 new Bengali Story | Best seller 2023 – 2023 new Bengali Story | 2023 new Bengali Story – Best book