Best Bangla Galpo Online – Malay Sarkar
মুক্তা – মলয় সরকার
— আজ আমার খিদে নেই, কিছু খাব না।
— সে কি মা, কাল রাতে অল্প একটু খেয়েছেন। এত বেলা হল, চা বিস্কুট কিছুই খান নি। খিদে পায় নি বললেই মানব?
— বলছি তো খিদে পায়নি কো।
কথাটা একটু জোর দিয়েই ছেলের বৌ মনাকে বলল সুধা।
— খিদে পায়নি বললেই মানব আমি? গ্যাস হয় নি তো? আপনার তো আবার গ্যাসের ঝামেলি আছে।
— বলছি তো, খিদে পায় নি। গ্যাস- ট্যাস কিচ্ছু হয়নি কো। আমাকে জ্বালিও নি, বার বার বলছি তো।
আওয়াজের তীব্রতাটা একটু বাড়িয়ে উত্তর দেয় সুধা। সঙ্গে সঙ্গে অলক্ষ্যে নীরবে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখের কোল থেকে। আবার, পাছে কেউ দেখে না ফেলে তাই চট করে আঁচলের খুঁট দিয়ে মুছে নিয়ে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়।আড়ে আড়ে লক্ষ্য করে, কেউ দেখল কি না।
রোজকার অভ্যাসমত ভোর ভোর ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেক আগেই। এটা সুধার বহুদিনের অভ্যাস।বলা যায়, সেই ছোট্ট মেয়েটি যখন নাকে নোলক দুলিয়ে ঈশ্বর দুলের হাত ধরে গাঁয়ের বাড়ী ছেড়ে প্রথম শহরের পথে পা বাড়িয়েছিল তখন থেকেই। ছোট্ট জীবনে তখনও শহর দেখা হয়নি, সুযোগও ছিল না।লোকের মুখে শুনেছে কলকাতার কথা। অনেকে যায়, আসে। হ্যাঁ, তাদের গাঁয়েরও দু একজন যায় বৈকি।কেউ ওখানে কোন দোকানে কাজ করে, কেউ বা অন্য কিছু ব্যবসা করতে। তারা এসে গল্প বলে, তাদের মুখেই যা কিছু শোনা। সেই বিশাল গঙ্গা নদী, তার উপর নাকি বিরাট পুল। এত বড় নদী তাদের বাড়ীর আশেপাশে কোথাও নেই। কোথায় লাগে তার কাছে কাঁসাই কি দামোদরের পুল। এমাথা ওমাথা পুরোটাই না কি ইস্পাতের ঝোলা পুল। গল্প শুনতে শুনতে মনটা কোথায় হারিয়ে যায়। সেখানে নাকি কি এক রকম, ইলেকট্রিকের তারে টিকি বাঁধা গাড়ী চলে, বাসের মত, তার নাম ট্রাম গাড়ী।এই সব নতুন নতুন কথা। তবে সব থেকে বেশি টানত, রেলের গাড়ী। দূর থেকে সে যেতে দেখেছে বটে, কিন্তু চাপা আর হয়ে ওঠে নি।ট্রেন দেখলেই মনটা ছুট্টে চলে যেত গাড়ীর সঙ্গে কোন দূর অজানায়।আনমনা হয়ে যেত ও।তাই যখন কলকাতায় যাতায়াত করা, বাবার এক বন্ধু কলকাতায় থাকা ঈশ্বরের সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ আনল, ওর চোখে বহুদিনের লুকানো স্বপ্নটা ঝিকমকিয়ে উঠল। সুধার বন্ধু মোতির কলকাতায় বিয়ে হয়েছিল।সে শ্বশুর বাড়ী থেকে ঘুরে এসে ওকে কলকাতার অনেক মজার আর আশ্চর্য আশ্চর্য গল্প শুনিয়েছিল। তখন থেকেই ওর মনে হত, ওরও যদি কোলকাতায় বিয়ে হয়, খুব ভাল হয়। প্রাণ ভরে এই সব জিনিস দেখবে, লোকের কাছ থেকে আর শুনতে হবে না।তাই যখন কলকাতার ঈশ্বরের সঙ্গে ওর বিয়ের কথা শুরু হল, ওর পুরানো ঘুম পাড়িয়ে পুষে রাখা স্বপ্নগুলো, শীত ঘুমে ঘুমানো সাপ যেমন গরমের আগমনে জেগে ওঠে, তেমনই কিলবিলিয়ে জেগে উঠল। বিয়ের রাতেই ও বরকে বলেছিল, আমাকে কলকাতা দেখতে নিয়ে যাবে তো? হেসে উত্তর দিয়েছিল নতুন বর, সেখানেই তো থাকতে হবে এবার থেকে। সারারাত উত্তেজনায় ঘুম আসেনি ওর। তারপর যখন ট্রেনে চেপে মেদিনীপুরের কাঁথির কাছের এক গণ্ডগ্রাম থেকে নতুন শ্বশুর বাড়িতে ঈশ্বরের হাত ধরে ঘর করতে এল সুধা, এই বাড়িতে এসে মুখ বেঁকিয়ে বলল, এই নাকি কলকাতা! এ তো আমাদের গ্রাম চন্দনীরই মত।
আসলে হয়েছে কি, ঈশ্বরের গ্রামের বাড়িও, শ্বশুর বাড়ি চন্দনীরই কাছে পাশের গ্রামে। আর এখানে, কলকাতার কাছে গঙ্গার ধারে একটা বর্ধিষ্ণু গ্রামে পুরানো এক পড়তি জমিদারের বেশ কিছুটা জমির চাষবাস দেখাশোনা করার সুবাদে ঈশ্বরের বাবা এখানে থাকত। মাঝে মাঝে গ্রামে যেত।ওখানেও ওদের অল্প জমিজমা ছিল, বাড়িঘর আত্মীয় স্বজন ছিল।দেশের ওইটুকু জমি আঁকড়ে পড়ে থাকলে তো আর দিন চলে না।তাই সে গ্রাম ছেড়ে পা বাড়িয়েছিল শহরের দিকে। তারপর এই বাবুদের এই চাষের কাজে জুটে গিয়ে এখানেই ডেরা বাঁধে। ঈশ্বরও বাবা মায়ের সঙ্গে এখানেই ছেলেবেলা থেকেই আছে। জায়গাটা ঠিক কলকাতা নয়, কলকাতার কাছে; অর্থাৎ প্রায় কুড়ি- পঁচিশ মাইল দূরে। জায়গাটা তখনও গ্রাম গ্রাম, চাষ বাস কিছু কিছু হয়।বেশ পুরানো বর্ধিষ্ণু জায়গা। তবে গ্রামের পাশ দিয়েই ট্রেন লাইন, বাস রাস্তা চলে গেছে। আর এক পাশে বয়ে যাচ্ছে শান্ত শিষ্ট গঙ্গা নদী। ঘণ্টা খানেকেই কলকাতা পৌঁছানো যায়। তবে ওই দূরের বা বাইরের লোকের কাছে জায়গার কথা বললে, যেমন এখন ডায়মণ্ড হারবারের লোক মুম্বাই গিয়ে বলবে কলকাতায় থাকি বা গুরগাঁও এর লোক বলবে দিল্লীতে থাকি সেই রকম আর কি। ঈশ্বরের গাঁয়ের লোকেরাও জানত ওরা কলকাতায় থাকে। সেটা সত্যি কলকাতার মধ্যিখানে নাকি বাইরে সেটা কেউ কখনও জিজ্ঞাসাও করে নি, ওরাও আলোচনা করেনি। তবে হ্যাঁ, ঈশ্বর বিয়ের রাতে যা কথা দিয়েছিল নতুন কচি বৌকে,তার খেলাপ করে নি। তবে এই জায়গাটা তখন একেবারে গণ্ডগ্রাম না হলেও গ্রাম তো বটেই। অবশ্য পরে ঈশ্বর নতুন বউ কে সত্যিকারের কলকাতা দেখিয়ে এনেছে, ট্রামও চাপিয়েছে। আসল কলকাতা দেখে অবশ্য সুধার সব অভিমান কোথায় ধুয়ে গঙ্গার পলিমাটির মত থিতিয়ে পড়েছে সে নিজেই ভুলে গেছে। এখানে তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া চাষের জমির সাথে দুজনে কখন প্রাণ দিয়ে এক হয়ে গেছে মনেই পড়ে না।রেখে যাওয়া জমি বলতে, সে আবার আর এক কথা বলতে হয়। সেও এক ইতিহাস।
যখন জমিদারী- টমিদারী চলে গেল, বাবুদের উত্তরাধিকারীরাও লেখাপড়া শিখে পৈত্রিক জমিদারীর ভরসা ছেড়ে নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন, কারোরই আর এই জমিজমা দেখতে আসার সময় হত না। সেই সময় ঈশ্বরের বাবার এতদিনের বিশ্বস্ততার উপর সন্তুষ্ট হয়েই হোক, বা অনন্যোপায় হয়েই হোক, তৎকালীন মালিকেরা একরকম মৌখিক সম্মতি দিয়েছিলেন যে, যেটুকু জমি ও দেখছে, সেটা যেমন দেখছে দেখুক, কারোর আর এর উপর খবরদারীর সময় হবে না।সমস্ত ব্যাপারের ভাল মন্দ ও নিজেই দেখে নিক। এই পর্যন্তই কথা হয়েছিল। লেখা পড়া বা দানপত্র কিছু হয়ে ওঠে নি। ফলে ওই জমি গুলো ওরা ভোগ দখল করছিল ঠিকই কিন্তু তার উপর আইনতঃ দখল ছিল না।
এর বহুদিন পর জমিদারদের দু এক জন অযোগ্য বংশধরের ,বিভিন্ন নেশায় সব খুইয়ে, হঠাৎ মাথায় চারা দিয়ে ওঠে, তাই তো ওখানে তো বেশ কিছু জমি আছে। সেগুলো এই বাজারে বিক্রি করলে তো ভালই টাকা হাতে আসতে পারে। ব্যস, যেমনি ভাবা, ওমনি কাজ। সব বংশধরেরা, যারা কোন দিন এদিকে ফিরেও তাকায় নি, হঠাৎ অযাচিত কিছু অর্থাগমের খবরে নেচে উঠল। কাজেই সবাই এক জোট হয়ে বিক্রি করার সম্মতি দিতে দেরী করে নি। ততদিনে ঈশ্বরের বাবাও গত হয়েছেন। আর ঈশ্বরের মত দুর্বল লোকের এর বিরুদ্ধে কিছু করে ওঠার মত জোর ছিল না। অবশ্য বাবুরা তাকে বলেছিলেন, এর দরুন কিছু টাকা দেব, চলে যা এখান থেকে।কিন্তু এই কথা শুনে ঈশ্বর আর তার বৌ সুধা ফোঁস করে উঠল। বলল, সে হবে নি কো। জমি নিচ্ছ নাও।আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু এতকাল আমরা বাপের আমল থেকে এখানে বসবাস করছি, বন্ধু বান্ধব, পরিচিতি সব এখানে। এই বসত আমরা ছাড়ব নি। তাতে যদি মেরেও ফেল, তাও সই।
এই কাজে যে সমস্ত স্থানীয় নেতাদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল, তারাও কিছু টাকা দু’পক্ষ থেকেই খেয়ে রায় দিল, ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। ওদের কুঁড়ে ঘরের জন্য ওইটুকু ছেড়ে বাকী টুকু বিক্রি করলেও খুব কম হবে না। চুপ চাপ শান্তিতে এসব কাজ যত সেরে ফেলা যায় ততই মঙ্গল। তখন কোলকাতা শহর ভরে উঠেছে, শহর বাড়ছে। লোকে ঠেলে পিছন দিকে আসছে।যান বাহন বাড়ছে। কাজেই বসত জায়গার দাম বাড়ছে। সেই হিসাবে জমির দাম ভালই পাওয়া যাবে। কাজেই সেই বন্দোবস্ত মেনেই সব স্থির হল। বাধ্য হয়ে ঈশ্বর আর সুধাকে ছেড়ে দিতে হল এতকালের বুক দিয়ে আগলে রাখা জমি, তাদের মায়ের মত ফসল ফলানো সুখ দুঃখের সঙ্গী। আসলে ওরা ভুলেই গিয়েছিল, এটা ওদের নিজেদের আইনতঃ সম্পত্তি নয়। তাই ওদের এক রাশ কান্না আর বুক ফাটা চাপা আর্তনাদের সঙ্গে চোখের সামনে দেখতে হল, তাদের এতকালের বুক দিয়ে আগলে রাখা, রক্ত জল করা প্রাণের থেকেও প্রিয় জমি গুলো প্লট করে এক এক করে বিক্রি হয়ে যেতে থাকল। ওরা নিরুপায় আর অসহায়ের মত দেখত, যে জমিতে উদয়াস্ত খেটে দুজনে ফসল ফলাত, যে জমি তাদের মায়ের মত ছিল, সেখানে হাজির হল নিষ্প্রাণ লোহালক্কড়, ইঁট বালি সিমেন্ট আর নতুন নতুন বিভিন্ন ধরণের বাসিন্দা যাদের ওরা কখনও দেখেনি, যাদের সঙ্গে ওরা পরিচিত নয়। ওরা ধীরে ধীরে একঘরে হয়ে পড়ল। তখন ঈশ্বর বেঁচে থাকার তাগিদে, ছেলে বৌ সংসারের স্বার্থে নিজেকে নতুন পেশার জন্য তৈরি করতে লাগল।আর আঁকড়ে ধরল, শেষ সম্বল কয়েকটি গাই গরুকে। নতুন বাসিন্দাদের কাছে তখন ভাল, ঘরের গরুর দুধের চাহিদা যথেষ্ট।এখনকার মত এত প্যাকেট দুধের রমরমা তো তখন ছিল না। ওরাও বুঝল, এই গরু বা দুধ, ঘুঁটে এগুলোও একটা পেশা হতে পারে। এগুলোও বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে পারে। সেই থেকে সব হারিয়ে ওরা এটাকেই বড় করে দেখেছিল। বেশ গোটা কতক গরু নিয়ে ওরা এর উপরই নির্ভর করতে শুরু করল, অন্যান্য কিছুর সঙ্গে। তখন বলতে নেই, সংসারও বেড়েছে। নয় নয় করে তিন ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে ভরভরন্ত সংসার সুধাদের। কিন্তু, জমি হারিয়ে, ঈশ্বর কেমন যেন হয়ে গেল। সব সময় ওই কথাই বলত, আর দুঃখ আক্ষেপ করত। যতই সুধা তাকে আশ্বাস দিক, ঈশ্বর এই ধাক্কা আর খুব বেশি দিন সামলে নিতে পারে নি। ঈশ্বর যখন চলে গেল হঠাৎ এক বর্ষার রাতে ছেলে মেয়ে বৌ ছেড়ে, তখন ছেলে মেয়েরা যথেষ্টই ছোট, অন্ততঃ উপার্জন করার বয়স হয় নি। কাজেই চাষী -বৌ সুধাকে আঁকড়ে ধরতে হল, এই গরুগুলোকে।আর সঙ্গে দু এক বাড়ীর কাজ, যা তাকে কোন দিন করতে হয় নি, ঈশ্বর বেঁচে থাকতে। সুধার লোকের কাছে পরিচিতি বদলে গেল চাষী – বৌ থেকে গয়লানি মাসীতে।এই হল পুরানো ইতিহাস।
মেজ ছেলের বৌ মনা জানে বা বুঝেছে শাশুড়ি সুধার এই ভোর থেকে উঠে না খেয়ে গুম হয়ে বসে থাকার কারণ। কিন্তু নিজে থেকে সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করতে চায় না। তাই ঘুরিয়ে অন্যদিক দিয়ে কথা বলে শাশুড়ির মন হাল্কা করতে চাইছে।
হ্যাঁ, মন ভার করে বসে আছে সুধা। ঠিকই তো। তো বসে থাকবে না কি হা হা করে হেসে আনন্দ করব, না খুশীতে ডগমগ হয়ে নেত্য করবে!বড় খুশীর কথা কি না! কত দুঃখে পড়ে, কত বাধ্য হয়ে যে তাকে এই কাজ করতে হয়েছে, সে আর কাকে বোঝাবে। বুকটা মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে, চাপা গুমোট বাঁধা কান্নাটা যেন ধোঁয়ার মত কুণ্ডলী পাকিয়ে নাভির থেকে উঠে বুকে ঠেলা মারছে দমকে দমকে। আর তার ঠেলায় সুধার চোখ থেকে বার বারই অবাধ্য চোখের জল বিন্দু বিন্দু মুক্তা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
মনা যে জানে না তা নয়। আর এটা যে হবেই তাও জানাই ছিল। কষ্ট কি আর মনারও হয় নি।নিজের হাতে করনা করে রোজ। মানুষের মত যত্ন করা। হোক না সে গরু।একটা অবোলা প্রাণী। সে তো বোবা ছেলে মেয়ে থাকলেও একই কথা। কিন্তু চোখ তো ছিল কথায় ভরা, অনুভূতির প্রকাশ ভরা, একেবারে বাঙ্ময়। কিন্তু মনার তো আর শাশুড়ির মত দুঃখ বুকে নিয়ে চুপ বসে থাকলে সংসার চলবে না। তাকে রাঁধতেও হবে, বরকে ফ্যাক্টরিতে পাঠাতেও হবে, ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেও হবে আবার সবার মুখে দু মুঠো অন্নের যোগানের ব্যবস্থাও করতে হবে।সকাল থেকে উঠে ফাঁকা খুঁটোটা দেখে তারও কি মনটা হু হু করে ওঠেনি! কিন্তু সেটা আঁকড়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না। ছিস্টির কাজ পড়ে আছে।সকাল থেকে ঘর ঝাঁট দেওয়া, বিছানা তোলা, কাল রাত থেকে এক ডাঁই এঁটো বাসন পড়ে আছে- সেগুলো মাজা, তারপর রান্নাবাড়ার কাজ।বুকের ব্যথা বুকেই চেপে রেখে নীরবে কাজ করে যায় মনা। তার মধ্যে মাঝে মাঝে শাশুড়িকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। শাশুড়ির আবার গ্যাসের সমস্যা আছে। বেশি দেরী করে খালি পেটে থাকলে পিত্তি পড়বে। তখন আবার গ্যাস অম্বল হয়ে সে এক কাণ্ড হবে। শেষে ডাক্তার – কোবরেজ করতে হবে। সেও এক কাঁড়ি টাকার ব্যাপার আর তা ছাড়াও নানান ঝামেলি, কে করে এখন!
সেই কবে থেকে এই গরু নিয়ে কারবার। ছেলেবেলায় বাপের ঘরেও গরু ছিল, তবে তখন এত বেশি মাখামাখি ছিল না।বিয়ে হয়ে শ্বশুর ঘর করতে এসে চাষ বাস আর গরু নিয়ে যখন একটু বেশি মাখামাখি হল, তখন থেকেই সুধার এই গরুর সাথে জড়িয়ে পড়া। অবশ্য তখন ঘরে লাঙ্গল জোয়ালের সঙ্গে চাষের হেলে গরুও ছিল।গাই গরু ছিল ২-৩টে। ওই ছেলেমেয়েদের দুধের যোগানের জন্য। তারপর চাষের পাট উঠতে হাল লাঙ্গলের সাথে হেলে গরুও গেছে।তখন অবলম্বন হল এই গাই গরু গুলোই। সংখ্যাও দু-তিনটে থেকে পাঁচ-ছটা হয়েছে। এর বেশি গরু রাখার জায়গা বা তদারক করার ক্ষমতাও নেই।না হলে, অনেকেই আসে দুধের খদ্দের। গরু আরও কিনতে অনেকেই বলে।কিন্তু অত হ্যাপা করার খ্যামতা আর নেই। যে কটি আছে, লালী, দুলি, গৌরী, হীরা আর মুক্তো, আর তাদের দু তিনটি বাছুর এদের নিয়েই হিমসিম, আবার নতু-ন গরু। যখন তবু ঈশ্বর বেঁচে ছিল, সেও কিছুটা সামলে দিত। এখন যদিও বৌ একটু আধটু দেখে, কিন্তু বাকী একা সুধার পক্ষে ওসব অত করা সম্ভব নয়। ভোর থেকে উঠে গরুর দুধ দোওয়া, খাবার দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার করা, ঘুঁটে দেওয়া, এসব তো আছেই। এ ছাড়াও আছে নানা রকমের কাজ। বাজার থেকে খোল ভুসির যোগাড় আনা, গরুর গা ধোয়ানো, অসুখ-বিসুখ, গোয়ালে ধোঁয়া দেওয়া, খড় কাটানো এই সব কত কি! বয়স হচ্ছে, একা আর কত করা যায়। তা-ও চলছিল একরকম করে।ছেলেরা তো অনেক দিন ধরেই বলছে, মা এবার একটু কমাও এসব। এত কাজের চাপ শরীর নেবে না। ছেলে বৌরা যদিও একটু আধটু দেখে, কিন্তু ওদের ও তো নিজেদের সংসারের কাজ, কারখানা, স্কুল, ছেলেমেয়ের ঝক্কি সব সামলে সময় কোথায়?
তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে একটু তফাতে গিয়ে আলাদা ঘর বেঁধে আছে। এতটুকু জায়গায় তো আর সবার কুলোয় না। সবারই তো পরিবার বেড়েছে। তবে আসা যাওয়া আছে সবার মধ্যে। মা তার গরু আর বসত ছেড়ে কোথাও নড়ে নি। আর সঙ্গে থাকে মেজ ছেলে তার বৌ আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে।
সকাল থেকেই গরু গুলো ডাক পাড়ে হাম্বা হাম্বা করে। আর সুধা উঠে দাঁত মুখ ধুতে ধুতেই উত্তর দেয়, হারামজাদীরা ভোর না হতেই খিদের জন্য ডাকতে লেগেছে। লোকে মনে করবে যেন, চোপর রাতে খেতে দিই নি কো। যাচ্ছি, যাচ্ছি–।
গলার আওয়াজ পেয়েই গরুগুলো চুপ করে। বোধ হয় বুঝতে পারে এবার খাবার জোগাড় আসছে। তারপর গোয়ালে ঢুকতেই সুধাকে দেখে গরুগুলো কেমন অশান্ত হয়ে পড়ে। ওর দিকে তাকিয়ে কেমন একটা গর গর শব্দ করতে থাকে। সবার কাছে গিয়ে, গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে হয়, মুখের সামনে খাবার, জল সব দিতে হয়। সবাই তখন মস মস কঁচ কঁচ শব্দ করে খেতে শুরু করে। এর মধ্যেই এসে পড়ে, দুধ দোয়ার জন্য গিরিধারী গোয়ালা। আগে সব গরুর দুধ সুধা একাই দুইতে পারত।এখন আর পারে না। বাছুর ধরা, আর উবু হয়ে বসে নিপুণ দক্ষতায় দুই হাঁটুর মধ্যে দুধের ভারী বালতি চেপে দুধ দোওয়া, সবটা আর তার শরীরে কুলোয় না। তাই এই গিরিধারীর সঙ্গে মাসিক চুক্তির বন্দোবস্ত। তবে সুধাকে তখন গরুর গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতেই হয়। না হলে তারা অস্থির হয়ে ওঠে। সুধা, আদর সূচক গালাগালি ছাড়া কথা বলতেই পারে না। কত সময় নিজে নিজেই কথা বলে ওদের সঙ্গে। ‘পোড়ামুখি’ সর না, সব খাবার একাই খাবি না কি।’ বাছুরকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলে, ‘হারামিটা আমাকে গুঁতোচ্ছে দেখ, শিং ওঠে নি এখনও, তাতেই এই–‘। এইসব বকতেই থাকে গরুদের সঙ্গে। কখনও তাদের গলায় হাত বুলিয়ে আদর করে। তারাও ঘাড় উঁচু করে বড় বড় মমতা মাখা চোখ নিয়ে চুপ করে আদর নেয়। থামলেই মাথা নেড়ে প্রতিবাদ করে। সুধা বলে, আমার আর কাজকর্ম নেই, তোমাকে একা আদর করলেই দিন চলবে! এইসব চলতেই থাকে দিন ভর।
ছেলেমেয়েরাও দেখে মা অন্ততঃ এই সব নিয়ে নিশ্চিন্ত ব্যস্ত আছে, ভালই। সংসারের বিশেষ কিছুতে নাক গলায় না।তা ছাড়া দুটো পয়সাও তো আসে এর থেকে। মাকে তো হাত খরচা দিতে হয় না। উল্টে মা- ই তাদের নানা কিছুতে এটা সেটা দেওয়া, নাতি নাতনীদের আদর করে কিছু দেওয়া নিজের খোরাকী এসব দিতেই থাকে। মন্দ নয়।
মেজ ছেলে সুনীলের কারখানাটা ক’ দিন ধরেই ঠিক চলছে না। ফলে আয়ও কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংসারে তার ছাপ পড়তে আরম্ভ করেছে। তাই মন মেজাজটা কারোরই খুব ভাল নেই। আর দিনকাল যা পড়েছে, এমনি পুরো মাইনে পেলেই টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়।তার উপর আবার তার থেকেও কমে গেলে চিন্তা তো আসবেই। ছেলে মেয়েও বড় হচ্ছে। তাদের পড়া শোনার খরচ বাড়ছে। সেই নিয়ে নানা ভাবনা চিন্তা হচ্ছে।
সম্প্রতি একটা ঘটনা হয়েছে। এটাকে ঠিক ঘটনা বলা যায় না।এরকম হয়েই থাকে। অন্ততঃ গরু নিয়ে যাদের কারবার তাদের কাছে নতুন কিছু নয়, একান্ত স্বাভাবিকই ব্যাপারটা।কথাটা হল, গরু, বিশেষ করে গাই গরু পুরানো বা বুড়ো হলে তাকে পোষা তো নিছক খরচ বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। সে তো আর কোন কাজে আসে না। তখন তাকে গো- হাটায় বেচতেই হয়। এতকাল চলে এসেছে এমনটাই। এবারে হয়েছে সমস্যা।
সুধার যত বয়স বাড়ছে, গরু গুলোর কাছেই প্রায় ও সারা দিনটা কাটায়। ওদের সঙ্গেই কথা বলা, ওঠা বসা এই সব করে ওদের সাথেই মায়ায় জড়িয়ে পড়েছে অনেক বেশি। আর তাই যখন দেখা গেল এতদিনের লক্ষ্মী, সুধার আদরের গরু, মুক্তার বয়স হয়েছে, আর দুধ দেওয়ার মত ক্ষমতা নেই, তখনই হল সমস্যাটা।
কথাটা একদিন মেজছেলে সুনীলই রাতে খাওয়ার সময় কথা প্রসঙ্গে বলছিল, আমারও আয় কমে আসছে।আর মুক্তোরও আর দুধ পাওয়া যাবে না। এবার ওকে বাদলের কাছে দিয়ে দিলেই হয়। তাহলে আর একটা ভাল দেখে গাভীন গাই নেওয়া যেতে পারে।
পাশের গাঁয়ের বাদল এইসব পুরানো গরুর কারবারি।
সুধা বসেছিল, একটু দূরে। কথাটা শুনেই হঠাৎ ফোঁস করে উঠে বলে ফেলল, সে হবেনি। আমি মুক্তোকে কোথাও কারুর কাছে পাঠাব নি।
হঠাৎ বজ্রপাতের মত আশাতীত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কথাটা শুনে সুনীল, মনা সবাই চমকে উঠে মায়ের মুখের দিকে তাকাল।
— মানে? কি বলছ?
সুনীল জিজ্ঞাসা করে।
— যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। মুক্তোকে আমি ছাড়ব নি, কোত্থাও যেতে দেব নি।
— সে কি কথা? এর আগে তো তুমি আগে অন্য সব গরুর বেলাতে এরকম বল নি।
— বলি নি, বলি নি। মুক্তো আমার খুব আদরের, ওকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।
— কেন, এর আগে তোমার শান্তি, মালা ওরা কি কম আদরের ছিল? না ওরা দুধ দেয় নি, না কি আমরা ভাল বাসতাম না? হঠাৎ এর বেলাতে এরকম বললে তো মুস্কিল। দুধ না দেওয়া গরুকে কতদিন শুধু শুধু খাওয়াতে পারবে? নতুন গরু আনাও যাবে না, আবার আয়ও কমে যাবে।
— সে আগে যা হয়েছে হয়েছে। এর বেলা আর সেটা হবে নি কো।
— মা, এটা বুঝুন, আপনার ছেলের আয় কমে গেছে। এখন নতুন একটা গাভীন গরু এলে সংসারেরও একটু সুসর হয়, আর একে পুষলে তো শুধু মিথ্যে খরচ ছাড়া কিছু হবে না।
এবার, এতক্ষণ চুপচাপ বসে থাকা মনাও মুখ খোলে শাশুড়িকে বোঝাতে।
কিন্তু সুধা অনড়। হঠাৎ দুম করে উঠে গিয়ে, সবাইকে চমকে দিয়ে, না খেয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে।
সে রাতের মত কথাটা থেমে গেলেও, এবার যে মুক্তোকে ছাড়া সহজ হবে না, সেটা সুনীল বা মনা দুজনেই বেশ পরিষ্কার বোঝে। তারপর থেকে ক’ দিন ধরেই অনেক বোঝানো, কথার চাপান উতোর চলতেই থাকে। ঘরের পরিস্থিতি বেশ একটা দম বন্ধ করা গুমোট হয়ে আছে। সুধার সারাদিন গরুর সঙ্গে কথা, আপন মনে কথা, সব বন্ধ হয়ে গেছে। নাতি নাতনীর সঙ্গে আদর – ঠাট্টাও কমে গেছে।বরং লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সুধা যেন আরও বেশিক্ষণ গোয়ালেই কাটাচ্ছে। কখনও বা মুক্তাকে জড়িয়ে ধরে নীরবে চোখের জল ফেলছে। শেষ পর্যন্ত ছেলে বৌয়ের বাস্তব যুক্তির কাছে স্নেহ আর আবেগকে হার মানতেই হয়। মনের দুঃখ মনেই চেপে সুধা মুক্তোকে বাদলের হাতে তুলে দিতেই নীরব সম্মতি জানাতে বাধ্য হল। নির্দিষ্ট দিনে বাদল এল মুক্তাকে নিতে। তখন আর বাড়ীর ত্রিসীমানায় কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না সুধাকে। ছেলে সুনীল একবার জিজ্ঞাসা করল, মা কোথায়? মনা চুপ করে রইল। দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে নীরব ভাষাটা পড়ে নেওয়ার ভমচেষ্টা করল। বাদল জিজ্ঞাসা করল, মাসীকে দেখছি না? বাদল বহুদিনের পরিচিত। অনেক গরু এর আগে এ বাড়ী থেকে নিয়েছে। মনা আসল কথাটা চেপে রেখে বলল, মায়ের শরীরটা একটু খারাপ তো। শুয়েছে। ধরা গলায় সুনীল বলল, মুক্তো আমাদের বড় আদরের, ওকে একটু সাবধানে রেখো বাদলদা। আদরের পোষ্যদের ছেড়ে দেওয়ার এই মর্মস্পর্শী মুহূর্তগুলোর সঙ্গে বাদলের পরিচিতি অনেক দিনের। এতে মন খারাপ করা তার চলে না। এটাই তার ব্যবসা। সে এগুলোকে সহজ ভাবেই নেয়, হাসি দিয়ে ভরিয়ে দিতে চেষ্টা করে।গল্প করে, সহজ কথা বলে। সে বলে, একদম চিন্তা কোরো না। খুব ভাল করে রাখব। গরুটার পিঠে ছোট চাপড় দিয়ে বলে, কি রে মুক্তো, থাকবি তো আমার কাছে?
হ্যাঁ, বাদলও রাখে। তবে যতদিন না আবার বিক্রির উপযুক্ত দাম পায়।
এই সমস্ত কথার পিছনে দু’ পক্ষের অনেক না বলা সহজ বোধ্য কথার আদান প্রদান হয়ে যায়, তা দু’ পক্ষই বোঝে।
বাদল চলে যায় মুক্তাকে নিয়ে। যাওয়ার সময়, মুক্তা কি বুঝেছিল কে জানে। কিছুতেই বাদলের সঙ্গে যাবে না। অনেক টানা হেঁচড়া, ঠেলা ঠেলি করে তবে তাকে পাঠানো গেল। কেবলই সে ফিরে ফিরে ঘরের দিকে তাকায় আর কেমন একটা ডাক ডাকতে থাকে। দেখে সুনীল আর মনারও চোখে জল এসে যায়।
সুধা ফেরে সন্ধ্যার সময়। সারাদিন কোথায় ছিল কে জানে। এসে আর কারোর সাথে কোন কথা বা বলে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। মনা রাত্রে অনেক সাধ্য সাধনা করে অল্প কিছু খাওয়াতে পেরেছে।
সকালে এই সব পালা চলছে।সুধা বেলা করে উঠে দাঁতে কুটোটি না কেটে বসে আছে গুম হয়ে। সকালের গরুর কাজ পাট মনা, আর কাজে বেরোনোর আগে, সুনীল কিছুটা সামাল দিয়েছে। বাড়ীটা আজ যেন এক মৃত্যু ছোঁওয়া নীরবতায় থম থম করছে। এক নিঃসীম, হারানোর শূন্যতায় ভরে উঠেছে। গাছের পাতাটিও পড়লে শোনা যায় এমনই এক স্তব্ধতা ঘুরে ফিরে আসছে। বাতাসের শনশন আর মনার ঘরকন্নার টুকিটাকি আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। দাওয়ায় একটা খুঁটিতে ঠেস দিয়ে চুপ করে উদাস হয়ে বসে আছে সুধা।
এমন সময় হঠাৎ দরজার মুখে চেনা আওয়াজ পেয়ে সুধা ধরমড়িয়ে ওঠে,
— হাম্বা- আ-
চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে চেষ্টা করে। বলে ওঠে, কে? কে ডাকে অমন করে — বলতে বলতে দরজার বাইরে বেরিয়ে যায়। তারপরই, জোর আওয়াজ করে কেঁদে ওঠে,
— মা, মাগো মুক্তো, মা আমার– চলে এসেছিস মা। তোকে তাড়িয়ে দিয়েছি বলে রাগ করেছিস? আর কোনো দিন তোকে ছাড়ব নি। কেউ আমার কাছ থেকে তোকে কেড়ে নিতে পারবে নি— আমাকে ক্ষমা কর মা—-
হঠাৎ এইসব আওয়াজ আর কথাবার্তা, কান্না শুনে মনা দৌড়ে বাইরে আসে। দেখে, মুক্তো গলায় ছেঁড়া দড়ি নিয়ে উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সে চলে এসেছে দড়ি ছিঁড়ে। তার কালো বড় চোখ দুটোতে জলের ধারা। আর সুধা তার গলা জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে যাচ্ছে। দৃশ্য দেখে, মনাও বাক্যহীন হয়ে পড়ল।তার চোখেও অবিশ্রান্ত জলের ধারা নামল।
মলয় সরকার | Malay Sarkar
Anabasarakalina besha of Jagannath | অনবসরকালীন বেশ | অভিজিৎ পাল
Parijayi 2023 | New Bengali Story | পরিযায়ী | জয়নাল আবেদিন
Buddhist philosophy and Sudhindranath’s poetic thought | 2023
Sir Isaac Newton Article 2023 | স্যার আইজ্যাক নিউটন
Best Bangla Galpo Online 2023 | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Best Bangla Galpo Online pdf | World’s Famous Bangla Golpo Online Reading | Pdf Best Bangla Galpo Online | Natun Best Bangla Galpo Online | Full Best Bangla Galpo Online | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Best Bangla Galpo Online | Best Bangla Galpo Online Ebook | Full Best Bangla Galpo Online | New Live Best Bangla Galpo Online | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Web Story in Bengali Video | Horror Live Best Bangla Galpo Online | New Bengali Web Story Audio | New Web Story in Bengali Video | Bangla Golpo Online Reading Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Best Bangla Galpo Online | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trending Best Bangla Galpo Online | Recent Bangla Golpo Online Reading | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Best Bangla Galpo Online in pdf | Best Bangla Galpo Online Download | Best Bangla Galpo Online mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Best Bangla Galpo Online mp4 | Bangla Golpo Online Reading Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Best Bangla Galpo Online – audio | Best Bangla Galpo Online – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection Bangla Golpo Online Reading