New Bengali Article 2023 | কবিতা – কী, কেন এবং পাঠকের দায়িত্ব

Sharing Is Caring:

কবিতা – কী, কেন এবং পাঠকের দায়িত্ব [Bengali Article]

কবিতা একজন কবির একান্ত স্বর, অনুভব, অনুরণন, চিত্রকল্প, সুর, ছন্দ-লয়ের এক টোটালিটি, শব্দের যাদুবাস্তবতা – যেখানে থাকে মহাজাগতিক সময়ের কিছু প্রতিফলন। যা তার সময়ের হয়েও অনন্তের। সেখানে পাঠক যুক্ত হয় তার নিজস্ব পঠন অভিজ্ঞতা আর অনুভবের জগত থেকে। কবিতা যেন কখনো এক ঝলক তাজা হাওয়া, কখনো দীর্ঘ যাত্রা, কখনো খন্ড চিত্রকল্প কখনো সময়ের কোলাজ। এ এক মহামায়া, জীবনের সাথে কিংবা প্রকৃতির সাথে, সময়ের সাথে শব্দের মাধ্যমে, ভাষার মাধ্যমে কবির বোঝাপড়ার মেলবন্ধন।

কবি মণীন্দ্র গুপ্ত একবার ‘সংলাপ অবিরত’ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, কবিতা রাজনীতি নয়, কবিতা কোনো তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়, কবিতা দর্শন নয়, কবিতা কোনো স্টেটমেন্ট নয়, কবিতা আরো অন্য কিছু। সেই সূত্র ধরেই আমাদের যেন মনে হতে পারে যে কবিতা এই সবকিছু, অথচ শুধুই সেগুলো নয়, তাদের এক অনির্বচনীয় বিস্তার যেন, তাদের ছাপিয়ে এক মহৎ সত্যের দিকে পা বাড়ানো। শঙ্খ ঘোষ এই কথাকেই বলেছেন এক দৃপ্ত কন্ঠস্বরে, ‘সত্যিকথা বলা ছাড়া কবিতার আর দায় নেই কোনো।’ সময়ের আলোয়, সমাজের কষ্টিপাথরে ঘষেমেজে দেখছেন এই সত্যকে, এ যেন তাঁর নিজের মত করে ‘এক্সপেরিমেন্ট উইথ ট্রুথ’! শেষপর্যন্ত হয়তো সেখানে ওড়ে ‘সত্যপোড়া ছাই’….. সেই ছাইয়ের অণুপরমাণুও হয়তো একদিন নতুন কোনো সত্যের দিকে এগোতে পারে।

কবিতা সময়ের প্রতিধ্বনি। কবি সময়ের প্রতিনিধি। সুনির্দিষ্ট সময়ের পাটাতনে দাঁড়িয়েই একজন কবি তাঁর সৃষ্টির গন্তব্য নির্ধারণ করেন। কবি এবং কবিতার আলোচনায় তাই সময়কে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। সময় সম্পর্কে গ্যেটে তাঁর আত্মজীবনীর প্রাক্কথনে বলছেন, ‘আমি যদি বিশ বছর আগে বা পরে জন্মাতাম তাহলে হয়ত আমি পুরোপুরি অন্য মানুষ হতাম’। গ্যেটের বিচার মান্য করলে ‘সৃষ্টিশীল হয়ে উঠা’র জন্য সময়ের নিয়ামক ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কবি এবং কবিতার আলোচনায় সময়ের মতোই ভাষা এবং ভৌগোলিক সীমানা সমান গুরুত্ববহ।

বাংলার গ্রামীণ জনপদের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন অসংখ্য মরমী-সাধক-কবি। রয়েছে তাদের চর্চার সমৃদ্ধসম্ভার। কবিতার আছে এক অব্যাখ্যাত জগৎ, যা ব্যাখ্যা যায় না। অতীন্দ্রিয়, অনুভূতিশীল শব্দে বর্ণে ছন্দে একটা রূপকের ভেতর দিয়ে কবিতা এসে ধরা দেয় পাঠকের সম্মুখে। পাঠক তখন নিজের মতো করে আরেক জগৎ তৈরি করে নেয়। এই হলো কবিতার কুহকী ঘোর, যা কখনোই ছেড়ে যায় না কবিকে। কবি সেই ঘোরের ভেতরই লিখে থাকে।

উনিশ শতকে সারা বিশ্বের কবিতার মোড় ঘুরে গেছে রোমান্টিসিজম থেকে আধুনিকতার দিকে। ভিক্টোরিয়ান সৌন্দর্য থেকে বেড়িয়ে ভাঙাচোরা মুখ নিয়ে কবিতাকে বাস্তবতার দিকে মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছেন টি. এস. এলিয়ট তাঁর ‘ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কবিতায়। ৪২৮ লাইনের এই কবিতা পরবর্তীকালে নোবেল প্রাইজ পায়। সেখানে সংস্কৃতি থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবীর কবিতার ভাষা নতুন রূপ পেল। ইংরেজি কবিতার মোড় ঘুরে যায় পৃথিবীর দিকে। কবিতাকে শুধু আর ড্রয়িংরুম কিংবা এলিট কালচারের অংশ হয়ে থাকতে হলো না। কবিতায় স্থান পেল দৈনন্দিন মুষড়ে পড়া জীবনের বয়ানগাথা। প্রতিদিনের ক্ষয়ে আসা সময়ের আর্তনাদ প্রতিফলিত হলো কবিতায়। তা থেকে বাংলা কবিতাও অনুপ্রাণিত হলো। পঞ্চ-কবির কবিতার পর ষাটের দশকেই কবিরা নিজেদের স্বরে প্রতিভাত হন। কবিরা লিখতে শুরু করেছিলেন নিজেদের স্বরে, দেশজ আবহে। তবে পশ্চিমবাংলার কবিতার স্বর এবং বাংলাদেশের কবিদের কবিতার স্বরে স্বতন্ত্রতা লক্ষ্য করা যায়। আলাদা স্বর। তাঁদের কবিতা স্থায়ী আসন করে নিল দুই বাংলার সাহিত্যে।

কবিতা পৃথিবীর আদি নান্দনিক ধারা, যা কবির কল্পনার ভিতর দিয়ে চিন্তা ও অভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করে। কবি-কবিতাকে প্রকাশ করেন আকার-ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে যার মধ্যে রয়েছে ছন্দ, অলংকার। কবি কবিতাকে কখনো পাঠকের কাছে উন্মুখ করে দেন না। একটি কবিতার মধ্যে লুকানো থাকে সারা পৃথিবীর পাঠ্য যা পাঠক নিজের মত করে আবিষ্কার করেন নেবেন। কবিতার শরীর কবির ইচ্ছার অধীন। তিনি খেলবেন কবিতার শরীর খেলা। কবিতা সব সময় সমকালকে ধারণ করে তার শরীরে। কিন্তু অনেকে বলতে পারেন কবিতা তো কবির অধীন তাহলে কবিতা কি করে সমকালকে ধারণ করবে। কবিই সমকালীন দৃশ্যত-অদৃশ্যত সব কিছুর সমন্বয় ঘটাবেন কবিতায়। আর এই এক একটি কবিতায় হতে পারে কালের সাক্ষীর ইতিহাসের অংশ।

আদি কবিদের হৃদয় যন্ত্রণায় সৃজিত হয়েছে শ্লোক; এগুলো তাদের চিত্তের এক বাচনিক প্রকাশ। তবুও এই শ্লোকের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস। কালকে কিংবা তাদের পারিবারিক-সমাজ বাস্তবতাকে তারা এড়িয়ে যেতে পারেনি। হৃদয় আর্তির যে বানী সে দিন তাদের মুখে মুখে সৃজিত হয়েছে। সেটাই আদি কবিতা। এই আদি কবিতাতেই রয়েছে তাদের হৃদয়ানন্দের এক অভিজ্ঞান যার অন্তর্জগতে রয়েছে তাদের হৃদয় প্রশান্তি, তবে এই কবিতাতে নান্দনিকতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কবির অন্তর জগতে যখন একধরনের রসক্রিয়া কিংবা অভিজ্ঞানের সৃজন হয় তখনই কবি এই দ্বন্দ্বের তাড়িত রসকে ছন্দোবদ্ধ করে রূপ দেন শিল্পে-এ থেকেই রূপান্তিত হয় কবিতা। এই কবিতা এক সময় মহৎ মহান কবিতায় পরিণত হতে পারে। প্রাচীন গ্রিক মহাকবি হোমার কাব্য-সৃজনের অনুপ্রেরণার সন্ধানে শরণাপন্ন হয়েছিলেন সৃজনীশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপী মিউজ (muse) এর। ইংরেজ মহাকবি মিল্টন তাঁর ‘প্যারাডাইস লস্ট’-এর ইনভোকেশন অংশে দ্বারস্থ হয়েছিলেন গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিমার্তা ঈশ্বরের সৃজন আত্মার ধারক ঐশী শক্তির ‘The still small voice’ থেকে। তিনি বলেছেন ‘heavenly muse’. [ সূত্র: ‘সাহিত্যের রূপ-রীতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ — কুন্তল চট্টোপাধ্যায়, কবিতার জন্ম রহস্য, পৃ.২১] কবি একজন প্রকৃতি শব্দ-শিকারী। তার হাত ধরেই কাব্যে সৃষ্টি হতে পারে নতুন নতুন কাব্য ব্যঞ্জনা। কবি কবিতাতে শব্দ নিয়ে খেলেন। শব্দের কারুকাজেই যেন নতুন নতুন কবিতার জন্ম হয়। এই খেলার মধ্যে মিশেল ঘটে কবির আত্ম-উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতার যাপিত জীবন। যাপিত জীবন কবিতায় এক বিশাল ভূমিকা পালন করে। কবি কবিতায় আবিষ্কার করেন নতুন নতুন শব্দ আর আমাদের মগজে দৌঁড়ে চলা শব্দের ঘোড়াদের কাব্য থেকে পছন্দের শব্দকেই তিনি হাজির করেন কবিতায়।

রোমান্টিক কবি-হৃদয় মধ্যে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলি, কিটস এদের কবিতা সম্পর্কে এক একজনের এক এক মতবাদ সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। তবে তারা কবিতায় ভাষা এবং আঙ্গিক নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন। যার চাক্ষুষ প্রমাণ মেলে ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘লিরিক্যাল ব্যালাডস’ -এর ‘ভূমিকা’ কোলরিজের ‘বায়োগ্রাফিয়া লিটাররিয়া’ শেলির ‘ডিফেন্স অব পোয়েট্রি’ আর কিটসের ‘পত্রগুচ্ছ’ কাব্যতত্ত্ব জিজ্ঞাসার ইতিহাসে এক অমূল্য সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হয়। কবিদের এত এত পরীক্ষা কিংবা নিরীক্ষাধর্মী কবিতা লেখা হয়েছে এবং হচ্ছে। তা কাদের জন্য। নিশ্চয় পাঠকের জন। কবিতায় যা কিছুই থাকুক না কেন এসব কবিতা পাঠককে নিজের উপলব্ধি আর নিজ মননের আলোকে অনুভব করতে হয় কবিতায় অন্তর জগতের ভাবতত্ত্ব। এ জন্যই কবিকে মাথায় রাখতে হবে পাঠকের কথা- এ কথা অনেকে বললেও একথা আমি মানি না।

BENGALI ARTICLE

কবি তার কবিতা তার মত করে সৃজন করবে আর পাঠক নিজের পরিমিতি বোধ দ্বারা আস্বাদন করে কবিতার রূপ-রস ও সৌন্দর্যের কারিশমা। কবি এক দক্ষ কারিগর শব্দ শিকারি। সে থাকেন কবিতার কাঠামো সৃষ্টির এক কঠোর ধ্যানে। কবি উপমার ব্যবহার করতে শিখেছেন বলেই সে অনেক কঠিন কথা অবলীলায় বলে যেতে পারেন। উপমা প্রয়োগ করে হেঁটে যেতে পারেন মধ্যরাতে, ছুঁয়ে দেখতে পারেন পৃথিবীর শরীর; হাতের মুঠোয় আনতে পারেন চাঁদ, মঙ্গল দেশের পতিত ভূমি চাষ দিয়ে জন্মাতে পারেন হাজার হাজার মণ শষ্য। এসবই কবি উপমার প্রয়োগে করতে পারেন। চর্যাপদের উপমার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় তবে এটা কোন সহজ উপমার ব্যবহার ছিল না। এই উপমা ব্যবহারের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় আধ্যাত্মবোধ।

পাঠক অনেক সময় প্রশ্ন তোলেন অনেকের কবিতায় ছন্দ নেই, ছন্দইতো কবি। আবার অনেক বোদ্ধা কবিতা পেলে আগেই কবিতায় কোন্ কোন্ ছন্দ রয়েছে ছন্দের নিক্তিতে ওজন করেন। কিন্তু ছন্দ প্রধান কবিতাও অকবিতায় বা দুর্বল কবিতায় পরিগণিত হতে পারে। আসলে ছন্দ না থাকলেও শিল্পমান সম্পন্ন কবিতা সৃষ্টি করা সম্ভব। এ পর্যন্ত আমরা যত উৎকৃষ্টমানের কবিতা পড়েছি সব কবিতাতেই ছন্দ রয়েছে। এজন্যই একটি সফল কবিতার জন্য ছন্দ প্রয়োজনীয়। চর্যাপদে দেখেছি আলো-আঁধারি। কবিতার ভাষা সহজ সরল হয়ে কিন্তু এর অন্তর্নিহিত দর্শন হবে তত্ত্বে ভরপুর। যে কারণে কবিতায় থাকতে হবে রহস্য আর এ রহস্যের সাগরে ডুব-সাঁতার দিতে তো কবি সদাপ্রস্তুত। লুকোচুরি খেলা-ই তো কবির কাজ। কেন সে সাদামাটা কবিতা লিখে নিজেকে রহস্যহীন করে তুলবেন। পাঠক নিজের মত করে আবিষ্কার করে নেবে কবিতায়। কবিতা পড়ে পাঠকের মনে ধাক্কা পেতে হবে ভাবতে হবে অর্থ খুঁজে বের করতে হবে। তবেই না পাঠক কবিতায় উপস্থাপিত বিষয় নিয়ে মূলার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।।

সৌম্য ঘোষ | Soumya Ghosh

Bengali Article 2023 | সুভাষচন্দ্রের আত্মজীবনীঃ বিভিন্ন মনীষী প্রসঙ্গ

Bengali Article 2023 | ভৃগুর শক্তিপীঠ ও বড়োমা :: বিল্লপত্তন থেকে বড়বেলুন

New Bengali Article 2023 | ওড়িশার পটচিত্রে ভগবতী কালী দেবী | প্রবন্ধ ২০২৩

Bengali Article 2023 | কবিগুরুর মানবতার ভাবরূপ

কবিতা কী এবং কেন | পাঠকের দায়িত্ব | কবিতার পাঠক কমে যাচ্ছে কেন | কবি কবিতা ও পাঠক | কবিতা কি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে | আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতা | কীভাবে পাঠক হয়ে উঠবেন | কবিতা কেন জনপ্রিয় নয় | পাঠকের ভাববিশ্ব | কাব্যভাবনা ও কবির সংগ্রাম | আধুনিকতা : আধুনিক বাংলা কবিতা | কবিতার দুর্বোধ্যতা ও পাঠক চিন্তা | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২৩ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন

bengali article writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | article writing ai | article writing app | article writing book | article writing bot | article writing description | article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | article writing format | article writing gcse | article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | bengali article writing pdf | bengali article writing practice | Bengali article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Bengali Article | Bangla kobita | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Founder | Full Details about poetry | High Challenger | Shabdodweep Article Writer

Leave a Comment