রূপশঙ্কর আচার্য্য – সূচিপত্র [Bengali Article]
কবিগুরুর মানবতার ভাবরূপ [Bengali Article]
রোমাঞ্চকর অতিরঞ্জিত বিভীষিকাময় ও বৈচিত্র্যময় হল এই বিশ্ব বা ব্রহ্ম। মানুষই এই জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। মানব কূলের কল্যাণ ও মঙ্গলই আমাদের প্রতিটি মানুষের পরম আদর্শ ও লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিশ্ব বরেণ্য মহান কবিগুরু, বিশ্ব কবি এবং সমকালীন মহান নাট্যকার,সঙ্গীতকার ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব ধর্ম কে তাঁর জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরেন। মানব জাতির ইতিহাসকে যদি দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে উপলব্ধি হবে মানবজীবনের পরম গুরুত্বপূর্ণ দিক হল “ধর্ম”। এই “ধর্ম”কে অপসারিত বা বর্জন করে আমরা নিজেদের বিশ্লেষণ করতে পারি না।কেননা মানুষের ওপর ধর্মের এত অতিরিক্ত প্রভাব বেশী যে আমরা ধর্ম কে এড়িয়ে বা বর্জন করে দৈনন্দিন জীবনে চলতে অক্ষম। ধর্ম ব্যতীত মানব জাতির আলোচনা অসম্পূর্ণ হয়ে যায়। তাই আমরা বলতেই পারি ,”মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হল ধর্মের ইতিহাস।” “ধর্ম” বলতে বোঝায় ‘যা ধারণ করে রাখে। ‘ধৃ ধাতুর উত্তর ‘মন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে “ধর্ম” শব্দটির উৎপত্তি। ‘ধৃ’ ধাতুর অর্থ ‘ধারণ করা’। অতএব ধাতুগত অর্থে যা ধরে রাখে তাই ধর্ম। এই ধর্ম হল অন্তরের। এই ধারণ হল অন্তরের ও সমাজজীবনে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে যা মানুষকে ধরে রাখে তাকেই ধর্ম বলে।
বিশ্ব কবির মতে মানুষের ধর্ম হল মানব ধর্ম বা মানব অধিকার। রবি ঠাকুরের মতে মানবতাই হল মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন। সুতরাং, যা মানুষের জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশকে সূচিত করে তাকেই বলা হয় মানবতাবাদ। উপনিষদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই মানব ধর্ম পালন।
মানুষের সেবা করাই হল ঈশ্বরের পূজা দেওয়া। মানুষই হল সর্ব শ্রেষ্ঠ দেবতা।
“অসতো মা সদগময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মামৃতং গময়।”
অর্থাৎ, আমাকে অসৎ থেকে সৎ, অন্ধকার থেকে আলোকে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতে নিয়ে যাও – উপনিষদের এই মহান বাণীকে রবিঠাকুর তাঁর জীবনের প্রতিটি উত্থান ও পতন, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বহন করে গেছেন। তাঁর মতে মানুষই সমস্ত বস্তুর বা বিষয়ের মাপকাঠি।
এই বিবৃতির মূল ভাব হল এই বৈচিত্র্যময় বিশ্বে যে সমস্ত বস্তু আছে বা যে সমস্ত বস্তুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব তাদের সব কিছুরই মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে মানুষের প্রয়োজনে ও মানবিক পরিপ্রেক্ষিতে। “সবার উপরে মানুষ সত্য,তাহার উপরে নাই”— এই সুন্দরতম বিখ্যাত উক্তি ভ্রাতৃত্ববোধ, প্রেম ও মৈত্রী এবং মানবতাবাদকেই প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মানুষের পূজারী। মানব-প্রেম ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের ও সাহিত্য চিন্তার মূল বিষয়। মানুষকে তুচ্ছ করে কর্ম বা ভক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া আদর্শ ধর্ম নয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা থাকে। যথা – (১) জীব সত্তা অর্থাৎ, ছোটো আমি (২) মানব সত্তা অর্থাৎ, বড়ো আমি। তিনি”অহং” প্রদীপের সঙ্গে বিশ্বভাব বা আত্মা কে প্রদীপ শিখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রদীপ যেমন নিজের তেল সংগ্রহ করে এবং শিখা নিজেকে প্রকাশ করে থাকে । এইভাবে তার প্রকাশে সব কিছুই প্রকাশিত প্রদীপের সীমারেখাকে অতিক্রম করে সে নিখিলের মধ্যে প্রবেশ করে। অর্থাৎ মানব কল্যাণ কথার অর্থ হলো সেই মানব কুল যেখানে মানব সুস্থ ভাবে সম্মান নিয়ে সযত্নে বেঁচে রয়েছে এবং বেঁচে থাকবে। এই বিশ্ব কূলেরও কল্যাণ কেই বোঝানো হয়েছে। মন্দিরে, মসজিদে,গির্জায় নয় ঈশ্বর আছেন মানব জাতির মধ্যে। ঈশ্বর কে উপলব্ধি হবে শিশু থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলে। জীব সত্তা মানুষের নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এবং মানব সত্তা হল অন্যান্য মানুষের কল্যাণের বা মঙ্গলের জন্য তাই মানব সত্তাকে বিশ্ব সত্তা বা বিশ্বমানব বলা হয়। “আমি” এবং “বিশ্ব আমি”- এর সম্বন্ধই হল মানব প্রেম। মানুষের দেবতাই হল মানুষের মনের মানুষ।
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ জীব রূপে মানুষ তার হৃদয়ের কেন্দ্রে অর্থাৎ অন্তরের মধ্যে উপলব্ধি করছে , সে কেবল ব্যক্তিগত রূপে মানুষ নয়, সে বিশ্ব মানুষের মধ্যেই একাত্ম রয়েছে। সেই বিশ্বমানবের প্রেরণা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যক্তিগত মানুষ সেই সকল কাজে প্রবৃত্ত হয় যা তাকে ভৌতিক সীমা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। মানুষ যাকে ভালো বলে, সুন্দর বা শ্রেষ্ঠ বলে তাকে বলে তার সামাজিক আবেদন থেকে নয়, তার অন্তরের বা বিবেকের নির্দেশ থেকে। মানুষের অন্তরে রয়েছে এক শর্তহীন আদেশ বা অনুজ্ঞা। যেন কর্তব্যের জন্যই মানুষ কোনরূপ শর্ত ছাড়াই সকল মানুষের সেবায় মিলিত হয়। অনাসক্ত ভাবে নিষ্কাম কর্ম প্রেমে অগ্রসর হয়ে মানুষ কে পূজা করতে হবে। সকল মানুষ সকল মানুষের কল্যাণের জন্য, পরসুখের জন্য নিজেকে বিকশিত করতে হবেই। জীব সেবাই শিব সেবা। জীবকে ভালোবাসা, তাঁর সেবা করাই হল ঈশ্বর সেবা করা। সেই সুবর্নময় আলোকিত, ঝলমলে স্বর্ণ মন্দিরে কেবল রাজা মহারাজদের অহংকার প্রকাশ পাচ্ছে। অর্থাৎ ঐ মন্দিরে দেব নাই। দেব আছেন মনুষ্যত্ব বিশিষ্ট মানবের মধ্যেই। তাই মানব ধর্মই বা মানবতাই আমাদের ঈশ্বর হয় উচিত। কবিগুরুর মানবতার রস বা নির্যাস কে গ্রহণ করে আমার ঈশ্বর ভাবনা কে আমি কবিতায় প্রকাশ করলাম মাত্র।
“আপনারা অনুসন্ধান করছেন এই সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের। কখনো মন্দির কখনো মসজিদ কখনো গুরুদ্বার কখনো বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জায় উন্মাদের মত ঈশ্বরকে পাওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। নিজেদের মনগড়া সৃষ্টি করা ধর্মকে আঁকড়ে রেখে মনের মত করে ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন! ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠান যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি ? আমার ঈশ্বর ওই বস্তিগুলোতে থাকা নগ্নদেহী, অনাহারে পড়ে থাকা শিশুগুলো। আমার ঈশ্বর শারীরিক দুর্বলতার কারণে কাজ করতে না পারা সেই ভিক্ষুক যে ভিক্ষুক ভূমির গান মাটির গান গেয়ে আহার সংগ্রহ করছে। আমার ঈশ্বর সেই সমস্ত নারী যারা সমাজকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আহারের তাগিদে ভোগ্যপণ্য বস্তু রূপে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেন সমাজের অর্থবান রক্তপিপাসু মানুষদের কাছে। আমার ঈশ্বর সেই শিক্ষক যিনি শিক্ষাকে ব্যবসার বিষয় হতে দেননি, যিনি এখনো কষ্ট করে বর্তমান পরিস্থিতিতেও শৈশব থেকে মানুষকে নীতিবোধের শিক্ষা প্রদান করে চলেছেন। আমার ঈশ্বর সেই চিকিৎসক যিনি চিকিৎসার জন্য অর্থকে গুরুত্ব দেননি যিনি কর্তব্য ও দায়িত্ব কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আমার ঈশ্বর আমার গর্ভধারিণী মা। আমার ঈশ্বর জন্মদাতা পিতা। আমার ঈশ্বর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেই মানব সন্তান আমাকে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন । আমার ঈশ্বর আমার শিক্ষাগুরু পিতা-মাতাগণ। আমার ঈশ্বর আমার সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীরা। আমার ঈশ্বর সেই কৃষক, রোদে জলে জর্জরিত হয়ে ন্যূনতম অর্থের বিনিময়ে ফসল ফলিয়ে যান। আমার কাছে মানুষের সেবাই হলো ঈশ্বরকে পূজা দেওয়া। শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ করা, আহার দেওয়া ,বস্ত্র দেওয়াই হল পুষ্পে সুসজ্জিত করে ঈশ্বরকে পূজা দেওয়া। বস্তির অনাহারে কষ্টে জর্জরিত হয়ে পড়া শিশু, স্টেশনে রাস্তাঘাটে ফুটপাতে পরিশ্রম করা শিশু শ্রমিক এদের যত্ন করা, ভালোবেসে মুখে আহার তুলে দেওয়াই হলো আমার ঈশ্বরকে পূজা দেওয়ার মহামন্ত্র। এই মন্ত্র মনুষ্যত্বের, বিবেকের। শিশুদের আর্তনাদই ঈশ্বরের বিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কঠিন বার্তা। কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়, ঈশ্বর আছেন প্রতিটা মনুষ্যত্ববোধযুক্ত মানুষের মধ্যেই। তাইতো জীব সেবাই হলো শিব সেবা। জীব সেবা করাই হল ঈশ্বরকে সেবা করা । এই নর নারায়ণ, এই মানুষজন যারা অবহেলিত ও সমাজ বিতাড়িত মানুষ, আমার ঈশ্বর”।
তথ্যসূত্র:-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “Religion of Man”
রূপশঙ্কর আচার্য্য | Rupsankar Acharya
New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩
New Bengali Article 2023 | মূল্যহীন, তবুও : পুস্তক প্রসঙ্গে
New Bengali Article 2023 | ওড়িশার পটচিত্রে ভগবতী কালী দেবী | প্রবন্ধ ২০২৩
Bengali Article 2023 | ভৃগুর শক্তিপীঠ ও বড়োমা :: বিল্লপত্তন থেকে বড়বেলুন
কবিগুরুর মানবতার ভাবরূপ | মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ | ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য | রবীন্দ্র সাহিত্যে মানবতাবাদ ও স্বদেশচেতনা | অস্তিত্ববাদ ও মানবতাবাদ | রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদ | মানবতার সংজ্ঞা | সমসাময়িক ভারতীয় দর্শন | মানবতাবাদী সাহিত্যের ধারা | মানবতাবাদ কাকে বলে | সাহিত্যের রূপ-রীতি | মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | বাংলা প্রবন্ধ | বাংলার লেখক | প্রবন্ধ ও প্রাবন্ধিক | সেরা প্রবন্ধ ২০২২ | শব্দদ্বীপ | শব্দদ্বীপের লেখক | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | bengali article writing bot | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | bengali article writing format | article writing gcse | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | bengali article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | article writing on child labour | article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder