Read Online Bengali Novel | Best Bangla Upanyas

Sharing Is Caring:

অকপটে অগ্রজকে (পর্ব ৭) – অতনু দাশ গুপ্ত

প্রতিবিম্বের ইমেইলে প্রাণের উত্তর

আমার প্রশ্ন হচ্ছে এত কষ্ট করে আধপেটা খেয়ে তোমার পড়ার খরচ জোগাড় করার মূল্য কি তুমি দিতে পেরেছ? ভালো করেই জানতাম বাবার পক্ষে তোমার পড়ার সার্বক্ষণিক খরচ চালানো কষ্টের হবে। যদি এত খরচায় পড়াশোনার পর এতে ক্যারিয়ার করার অনিচ্ছা থাকে তাহলে কি বলতে হবে আমার কাজের অবমূল্যায়ন হয়েছে? দুটো বিষয় সবসময় মাথায় ছিল, প্রথমত তোমার একটা ভালো পেশাগত জীবন হোক যা দিয়ে ঠিকঠাক সাবলম্বী হবে আর দ্বিতীয়ত, বাবা-মা’কে বাকি সময়টা দেখবে, ঠিক সে সময়েই তুমি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছ।

আজকের মেইল অনেক লম্বা করে ফেলেছি।
উত্তরের অপেক্ষা থাকবে। ভালো থেকো!

ইতি
তোমার দাদা

মানুষের সম্পর্কের সাঁকো হিসেবে শরীরের কোন অঙ্গ যদি ভূমিকা রাখে সেটা হচ্ছে হৃদয়! যদিও বলা হয় দূরত্ব সবকিছুর পথেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবুও হৃদয়ের বন্ধন বড়ই জটিল। একবার জোড়া লেগে গেলে যেমন শিথিল হয় না তেমনি ছিঁড়ে গেলে আর জোড়াও লাগে না। প্রাণ, প্রতিবিম্বের সম্পর্কে কতটা হৃদয়ের বন্ধন ছিল আর কতটা ছিল না সেটা সময় বলে দেবে। কখনও মনে হয় অগ্রজের দিক থেকে সমস্যার টানাটানি, পরক্ষণেই মনে হয় দায়ী কি তাহলে প্রাণ?

প্রিয় দাদাই,

মেইলটা পড়েছি! এসব আসলেই আমার ধারণার বাইরে ছিল। জেনে অনেক কষ্ট হচ্ছে আবার মনে নানান কৌতূহলেরও উদ্রেক হয়। এমন কষ্টের জীবন প্রায় সকলেই কাঁটায়। বাবাও কাটিয়েছেন। এজন্য আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার সম্পর্ক কোথায় সেটা বোঝা গেল না। নিজের জীবনে সে কি হবে বা ভবিষ্যতে কি করবে এটা যার যার উপরে। কখনো শুনেছো কারও উপর কিছু চাপিয়ে দিয়ে কাজ হয়েছে? আমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে দুর্ভাগ্যবশত! একান্ত ইচ্ছে ছিল জার্নালিজম নিয়ে পড়বো। পড়তে হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা বিষয় নিয়ে। পড়া তো হল কিন্তু যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলাম তখন টের পেলাম এভাবে কাজ করাটা ভেতরে ভেতরে অন্তঃসারশূন্যতার সামিল। নিজে কি হতে চেয়েছি তা কখনো জিজ্ঞেস করা হয়েছে আমাকে?? করতে দেওয়া হয়েছে?? হয়নি!

অনিচ্ছা সত্বে কিছু করলে সেটা কখনো চিরস্থায়ী হয় না। আমার সবসময়ই লেখালেখির ইচ্ছে ছিল। পড়তে চেয়েছিলাম সাংবাদিকতা নিয়ে। বা লেখালেখি নিয়ে। কোনটাই হয়নি। আমার ইন্টার পরীক্ষার পরে ছুটির সময়ে রাঙ্গুনিয়া যাই বেড়াতে। ওখানকার পাহাড়ি জায়গা দেখে এত বিমোহিত হই এসে একটা গল্প লিখি। এরপর সেই গল্পের ডায়েরিটা কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবীকে পড়তে দিই। ওরা সবাই এককথায় আমাকে লেখা চালিয়ে যেতে বলে। কিন্তু কোথায় কি?? মানুষ নিজের স্বপ্নের পথে নিজেই হাঁটতে শিখে বা সে পথ নিজে খুঁজে বের করে নেয়। কাজেই অন্যের দেখিয়ে দেওয়া পথ বা ইচ্ছে নিজের ভেতরকার মানুষকে কখনো বদলাতে পারে না। নিজে যা হতে চায় তা হতে পারে না। এসব বাঁধা নিজেকেই সরাতে হয়। আমি যা-ই করেছি মা-বাবার অনুমতি নিয়েই করেছি। তাদের অমতে কিছু হয়নি। এত বড় অংকের টাকা আমার হাতে বাবা কিছু না বুঝে তুলে দেননি। তোমার যেমন বায়োলজি পছন্দসই ছিল না বলে তুমি সেটা বাদ দিয়েছিলে। পরে আর ওই পথে মাড়াওনি। আমিও ঠিক একইভাবে লেখালেখি, সাহিত্য বা সাংবাদিকতার পথে থাকতে চেয়েছি। এখানে অপরাধের কিছু নেই।

Natun Bangla Kabita 2023

আর খেলাধুলা বা পরীক্ষার কথা যা বলেছো সেটা কিছু অংশ অবশ্যই ঠিক। ছোটকাল থেকেই যে সবসময়ই ছোট মাঠে বা ছোট বাউন্ডারি দিয়ে খেলে অভ্যস্ত, সে বড় মাঠে গেলে খই হারাবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?? তুমি চেন্নাইতে পড়াশোনা বা খেলাধুলার সুবাদে বড় মাঠে খেলেছ। তাই তোমার কোন সমস্যা হয়নি কখনো। এক্ষেত্রেও বাদ সাদলো লেখাপড়ার মাত্রাতিরিক্ত চাপ! আমার ভীষণ রকমের ইচ্ছে ছিল পাশের মাঠে গিয়ে ছেলেপেলেদের সাথে খেলবো। স্কুলের পড়ার ক্রমাগত চাপ এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও গেছি মাঝেসাঝে কিন্তু যে পরিমাণ গেলে সবার পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা যায় তা আর হয়েছে কই ?? ওখানে প্রতিদিন যাওয়া, সবার সাথে যোগাযোগ করে খেলাধুলায় অংশ নেওয়া, সবই বাতিলের খাতায় চলে যায়। রইলো বাকি লেখাপড়ায় ভালো ফলাফল করতে না পারা। এক্ষেত্রে আমি যখন তোমাদের হোস্টেলে যাই তখন বারবার সাহায্য চেয়েছি পড়াশোনার ব্যাপারে। প্রথমে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলেও পরে আসল সময়ে সাহায্য চেয়ে তোমার কোন বন্ধুর কাছ থেকে কোনরকম সাড়া পাইনি। উলটো ওরাই তোমাকে বলতো যাতে ওনাদের বিরক্ত না করা হয়। পরে তুমিও তাদের পক্ষই নিয়েছ। যখন জটিল বিষয়গুলো বোঝার দরকার ছিল তখন কোনরকম সহযোগিতা পেয়েছি? পাইনি! ভালো ফলাফল হবে কিভাবে?? তুমি যখন আমার জন্য টিউটর ঠিক করে দিয়েছ তখন ঢের দেরী হয়ে গেছে। পরীক্ষা সমাগত। আর বেশিদিন বাকি নেই। দেখলাম, সবাই যখন পড়া রিভাইজ দিচ্ছে তখন আমি বোঝার চেষ্টায় আছি অনেক কিছু! পাশ করা নিয়েই টানাটানি, ভালো ফল হবে কিভাবে?? যখন আমার প্রয়োজন ছিল তখন কোনবারই তোমার সাড়া পাওয়া যায়নি। সেটা তখনকার কলেজে পড়ার কথাই হোক বা পরে ইংল্যান্ডের ভিসা চলে আসার পরেই বল। দুইবারই ফলাফল একই ছিল। বাবা চলে যাওয়ার পরও তুমি কোনরকম যোগাযোগ করার প্রয়োজন বোধ করোনি।

প্রশ্ন হলো কেন??
বাবার অবর্তমানে তখন সে অভিভাবকের শূন্য জায়গা তোমার অধীনে ছিল। তুমি তার কতটা মূল্যায়ন করেছো?? এসব প্রশ্ন কখনো নিজেকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছো??
বাবা চলে যাওয়ার পর তোমাকে কল করেছিলাম আমি। তোমার ভেতরে সেই ইচ্ছে জাগেনি। বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক। মানুষ যখন বিষয়-আশয়ের হিসাব মেলাতে পারে না তখন নিজেকে ভাগ্যহীন তকমা দেয়। আমার ক্ষেত্রে সেটা খাটে।

ইচ্ছে করলেই তুমি মা’কে তোমার কাছে নিয়ে রাখতে পারতে কিছুটা সময়। তাতে কারও মাথায় আকাশ ভেঙে পড়তো না! কে বলবে আমরা একই পরিবারের কেউ?? তিনজন মানুষ পৃথিবীর তিন কোণায় পড়ে আছি। আমার সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই মা’কে এখানে নিয়ে আসতাম। আর যখন হবে তখন আশা করি নিয়ে আসবো। কতদিন রাখতে পারবো বা কি হবে তা জানা নাই। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কিসের?

অকপটে অগ্রজকে (পর্ব ৮) (প্রাণের উত্তর) – অতনু দাশ গুপ্ত

তোমার ইন্ডিয়া থেকে ফিরে আসার ঘটনা বা হরতালের ভাঙচুরের সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মাদ্রাস যাত্রা লোমহর্ষক!

জীবনে আমাদের দুজনের মধ্যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার দিক থেকে তোমার অভিজ্ঞতা আকাশছোঁয়া। তোমাকে সে সুযোগ বাবাই করে দিয়েছেন, এটা নিজেই লিখেছ। তবে সে অনুকূল পরিস্থিতির পরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছো সেটা লেখায় পরিষ্কার বোঝা যায়। তোমার পরিসর বড় হওয়ায় মানুষের সাথে মেশার সুযোগও পেয়েছ বেশি যা আমার ক্ষেত্রে খাটে না। তবে অনেকের সাথে উঠা বসা করলেই যে নেতৃত্ব গুণ গড়ে ওঠবে তা নয়। সবাইকে সংঘবদ্ধ করার ক্ষমতা তোমার ছিল। আমাদের ডরমিটরিতে যখন তুমি প্রথমবার পিকনিকের আয়োজন করলে বা রূপালী ব্যাংকের মাঠের ক্রিকেট খেলার দল, সবখানেই তোমার জয়গান গেয়েছেন সবাই।

আর এসবের ঠিক বিপরীত মেরুর মানুষ আমি। সাংগঠনিক ক্ষমতা সকলের থাকে না। এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত। আমার সেটা ছোট পরিধির ভেতরে ছিল। তোমার মত সর্বজনের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠা হয়নি এজন্যই।

কুসংস্কার থেকে তুমি শতসহস্র হাত দূরে থেকেছো। এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে ক্লাস ফাইভে গণিতের বার্ষিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় গলার লকেটটা ভুলে গেছিলাম। দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েও আবার ফেরত আসি ওটা ফেরত নিতে। তুমি সহাস্যে বলেছিলে, ” এটা পড়লে কি সব অংক মাথায় চলে আসবে??” বোঝা যায় তখনও আমি বাস্তব পৃথিবী থেকে কত দূরে ছিলাম! আর তুমি মহাশূন্যে।

ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ মূলত তোমার কারণেই হয়েছিল। শচীন তেন্ডুলকারের ইনিংস দেখার জন্য রীতিমতো আমরা উত্তেজিত হয়ে থাকতাম! কত টুর্নামেন্ট টিপু দাদাসহ একসাথে বসে আমরা দেখেছি। অবশ্য ইন্ডিয়া জিতেছে শুধুমাত্র একবারই, ১৯৯৮ সালে শারজা কাপে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেই বিখ্যাত ম্যাচ, শচীনের পরপর দুটো সেঞ্চুরির সুবাদে কাপ জয়। এরপর এমনটা আর হয়নি। পরবর্তীতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ওদের। নিরানব্বই বিশ্বকাপের পরের কথা। আর বাংলাদেশ দল তো তখন শিশু। টেস্ট স্ট্যাটাসও পায়নি। কত চুল চেরা বিশ্লেষণ হত ক্রিকেট নিয়ে, পিচ নিয়ে, বলের সুইং নিয়ে, ব্যাটিং করার ধরণ নিয়ে। কেন ওরা ইন্ডিয়ান পিচের বাইরে গিয়ে এত খাবি খায়? এসব তখন তেমন একটা আর বুঝতাম কই? তবে তোমাদের দু’জনের কথা, ম্যাচের বিশ্লেষণ, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে দীর্ঘ সময়ের আলোচনা – সবকিছু বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। মনে হত জ্যাফ্রি বয়কট, সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রী, হার্শা ভোগলে, টনি গ্রেগ, মাইকেল হোল্ডিংস, রিচি বেনোড, ডেভিড গাওয়ার, সবাই এক টেবিলে চলে এসেছেন। ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক অনেক বেড়ে গিয়েছিল তখন। এতে পড়াশোনার বেশ ক্ষতিও হয়েছিল।

তোমার জন্য মেজ কাকার সুদূর পাকিস্তানের করাচী থেকে এনে দেওয়া ক্রিকেট ব্যাট দিয়েই প্রায় সবাই ব্যাট করতো! আমি ঢাকায় চলে আসার পরেও ওটা দিয়ে ব্যাট করা যেত। অবশ্য আমরা কদমতলীর মাঠে খেলার সময় অন্যরকম ব্যাট দিয়ে খেলতাম। বাবা কখনো খেলার নানান উপকরণ ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস কিনে দিতে কোন কার্পণ্যতা দেখাননি!

যাক গে সে-সব কথা! এখনকার তোমাকে চেনা দায়!! আমার এদিকের বন্ধুরা অনেকেই তোমার নাম্বার চেয়েছে। দিইনি। ওদের কৌতূহল হওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি? এক ভাই অস্ট্রেলিয়া স্থায়ী নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও আরেকজন অন্য দেশে কেন?? দুইজন একসাথে থাকলো না কেন?? আবার পরে যখন আমি মহাবিপদে পড়লাম তখন কারও কোন খোঁজ খবর নেই কেন?? মূলত সেসময়ই থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়ে! ওরা আগেই আমার পরিবারের মানুষজন কোথায় আছেন সেটা জানতো। যেমন ওদেরটাও আমি জানতাম। এমন বিপদে কেউ ই যখন আমার পাশে দাঁড়ালো না তখন শুধুমাত্র কৌশিক দাদা ছাড়া। তবে তিনি সরাসরি সাহায্য না করলেও মৌখিক সমর্থন জুগিয়েছিলেন যেটা সেসময়ের প্রেক্ষিতে আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া! কিন্তু নিজের সহোদরের কোন খোঁজ খবরই নেই! এখানকার আমার বন্ধুরা, এমনকি চাকরির সহকর্মীরা পর্যন্ত আমার পাশে এসে দাঁড়াল! অথচ তোমার টিকিটিও দেখা যায়নি! সেই শত্রুতা আজও বহাল তবিয়তে ধরে রেখেছো মহান গরিমায়। তবে সকল কিছুরই একটা শেষ আছে! বিশেষ করে বিনা কারণে কারও উপর দোষারোপের বিষয় তো বটেই!

যখন বাবার ক্যান্সার হল, তখন আমার সবে প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়েছে। গ্রীষ্মের ক্লাস তখন শুরু হবে মাত্র, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কিভাবে ওইবারের পরীক্ষা পার করেছি, তা করুণাময় বলতে পারবেন। পরের সেমিস্টারে ক্লাস করা, না করাই তখন অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হল। আমার এখানকার বন্ধু- বান্ধবীরা পাশে না দাঁড়ালে এতদিন আমার এ দেশে টেকা কখনোই সম্ভব হত না। যারা আমাকে চেনা না, জানে না, কোন রকম রক্তের সম্পর্ক তো দূরের কথা! যারা চার মাসেই আমাকে এতটা আপন করে নিল, পথ যেন না হারিয়ে ফেলি সে ব্যবস্থা করলো। এতে ওদের কি স্বার্থ ছিল? কিছুই না! তবুও ওরা আমাকে আপন ভেবেছে। আর তোমরা কখনোই আমার খোঁজ নাওনি! নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করোনি।
কেন??
কি কারণে??

যাদের হয়তো কেউই থাকে না তাদের ভগবান কাউকে না কেউকে পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে দেন। জীবনে ওদের আগমন হয়তো এজন্যই হয়েছে। এটা দৈবঘটনা ছাড়া কোন কারণে হয়নি। গত পাঁচ বছর আমি তোমাদের কাছে জীবিত থেকেও মৃতপ্রায়! তাই অদূর ভবিষ্যতেও আমার তোমাদের সামনে আর জীবিত উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পাঁচ বছরে যে ব্যক্তি কারও কাছে জীবিত উপস্থিত হতে পারেনি, তার এরপরে জীবন্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এটা আশা করি মাথায় রাখবে। কাজেই নিজেরা যেখানে আছো, সেখানে চিরস্থায়ী সুখে থাক।

আমার মত একদিকে সৌভাগ্যের অধিকারী যেমন কেউ হয় না তেমনি দুর্ভাগ্যও পিছু ছাড়েনি! ইউনিভার্সিটিতে ডিপার্টমেন্টের ডিন, প্রফেসরদের আমি চরম দুঃসময়ে পাশে পেয়েছি।অন্যদিকে বাইরে কিছু অজানা, বহুদূর দেশের ছেলেমেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, এমনকি এখনও তারা আমার পাশেই রয়েছে, যোগাযোগ রেখেছে সবসময়। আমি তাদের জন্য কতটা করতে পেরেছি জানি না, তারা করেছে এটুকু জানি। সেটা পড়াশোনার বাইরেও করেছে, যতটা করেছে ততটা নিজেদের আত্মীয়রাও করে না। দুর্ভাগাও নিজেকে একারণেই বলবো যে নিজের আত্মীয়স্বজন বা সহোদরা কেউ কোন খোঁজ খবর রাখেনি! কোন আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হয়েছি তা কেউই জানার কোন চেষ্টাও করেনি।

অকপটে অগ্রজকে (পর্ব ৯) – অতনু দাশ গুপ্ত

(প্রাণের চিঠির পরবর্তী সময়কাল)

উল্টো সবসময়ই বলে গেছে নিজেদের মনগড়া সব কথা! সম্পদের পাহাড় গড়ে আজ পর্যন্ত কেউ সুখী হতে পারেনি! কোনদিন পারবে না। সুখের সংজ্ঞা বোঝা যেমন দুর্বোধ্য, তেমনি তাকে ধারণ করাও যায় না। জীবনে সুখপাখিকে ধরতে গিয়ে আপনজনের কাছে থেকে একটু একটু করে মানুষ কোথায় হারিয়ে যায় সেটা নিজেও ঠাহর করতে পারে না! তোমরা আমার সাথে সেটাই করেছো। নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করো, উত্তর পাবে আশা করি। অবশ্যই দশ বছর আগের যে দাদাভাইকে আমি জানতাম, তার বিবেকের কথা বলছি, এখনকার নয়!!

আজ আর কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট না করি। ইমেইলের উত্তর সময় মতো দিও৷

ইতি
প্রাণ

অফিস আর সংসার সামলাতে মহাব্যস্ত প্রতিবিম্ব। ইমেইল আসলেও কাজের ইমেইল এত বেশি যে নিজের ইমেইলই খোলা হয় কখনো সখনো। প্রাণেরটাও হারিয়ে গেল।

প্রতিদিনের মত আজও ঘুম ভেঙেছে অফিসে যাওয়ার অ্যালার্মে। সকালে টোস্ট আর চা খায় ও। আজকেরটা বাসায় বসে খাওয়ার সময় নেই। চা, টোস্ট গরম করে বাক্সে নিয়ে গাড়িতে উঠে মিনিট পনের যাওয়ার পর যখন হাইওয়েতে গাড়ির গতি প্রায় শ ছুঁই ছুঁই তখন পাশে বার্গার কিং এর একটা সাইনবোর্ড দেখে মনে পড়লো, যাঃ বাবা, দুপুরের লাঞ্চটা তো নেয়নি! থাক, ওদের ডাউনটাউনেই কয়েকটা বাঙালি খাবারের দোকান আছে। এলাচি, আনন্দভোগ, স্বাদ ইত্যাদি। ভাবছে ওখান থেকেই অর্ডার করিয়ে নেবে। চিতল মাছের তরকারি, ভর্তা আর ডাল- ভাত। অনেকদিন চিতল মাছ খাওয়া হয়নি। সামনেই বাচ্চাদের গ্রীষ্মের ছুটি। যদিও ওর নিজের বা বৌয়ের ছুটি নিয়ে ফ্যাসাদে পড়বে। অফিসের দুপুরের খাবারের সময় পৌলমী ফোন করে খোঁজ নেয়। আজকেও করবে, ও সকালে উঠে ফ্রীজে দেখেছে প্রতিবিম্বের ফেলে যাওয়া লাঞ্চবক্স। টুকটুকিকে উঠিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি করে দেওয়ার মধ্যে ওর মনে পড়ে রাতের বেলার জন্য ফ্রিজ থেকে বের করে রাখতো হবে ইলিশ মাছের ডিমগুলো। আলু কুঁচি, টমেটো, ধনেপাতা দিয়ে বেশ লাগে খেতে। গতবার বড়া বানিয়েছিল। পৌলমীর কাজ দুপুরে শুরু হয়ে রাতে শেষ। প্রতিবিম্বই মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। রাতে ওরা একসাথেই খায়। মাঝে মধ্যে টুকটুকি একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়ে।

ওদিকে প্রাণের স্থায়ী নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়। বহুদিনের লালিত স্বপ্ন মা’কে নিয়ে আসার ব্যাপারে ওর দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। আইনের মারপ্যাঁচ জেনে নিতে উকিলের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নেয় আনাচে-কানাচে। অভিবাসনের নিয়মানুযায়ী পিতা-মাতা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসলে ছয় মাসের মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে হবে। আর পরবর্তীতে অভিভাবকদের দীর্ঘ মেয়াদী সময়কালের জন্য আলাদা ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। কাগজপত্র জোগাড় করা, খরচাপাতি, মেডিকেল ইনস্যুরেন্স কেনা আরও নানান কাজে ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো ওর। ওদের পিসি, পিসেমশাই মায়ের যাবতীয় ভিসার কাজ, নতুন করে ছবি তোলা, ভিসা প্রত্যাশীদের লাইনে দাঁড়ানোর সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ওর মা এমনিতেই পিসির বাসার আশেপাশেই থাকতেন, তাই একসাথে যাওয়া আসায় কোন জটিলতা ছিল না। অ্যাপ্লিকেশন করার পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাসপোর্ট জমা দেওয়ার অনুরোধ চলে আসলো। সবকিছু ঠিকঠাক মতই শেষ হয়েছে। এসবের খবরাখবর প্রতিবিম্বকে জানাতেন ওদের মা। বলতে গেলে মা-ই এখন দুই সহোদরের বন্ধনের মাধ্যম হয়ে রয়েছেন। দুই জনের একত্রিত হওয়ারও আপাত কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

আগামী মাসে জার্মানিতে একটা অফিসিয়াল কাজে অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসার কথা রয়েছে। ওকে এবার অষ্ট্রেলিয়া পাঠানো হচ্ছে আরও নানান নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে। ব্যস্ততা বাড়ছে। শেনগেন ভিসা হওয়ায় ও চাইলেই ইংল্যান্ডে এসে মায়ের সাথে দিব্যি দেখা করে যেতে পারে। ওদের হাতে মিটিংয়ের কাজ বাদেও বেশ কয়েকটা দিন ইমার্জেন্সি ব্রেক হিসেবে রেখে দেওয়া হয়। ট্র্যাভেলিংয়ের ঝক্কি ঝামেলা, অসুস্থতা এসবের কথা ভেবে। পৌলমীর ছুটি হবে না। টুকটুকিরও স্কুল আছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবিম্বকে একাই এ যাত্রা করতে হবে। টুকটুকির সাথে গতকাল কি কথা হয়েছে সেটা ফোনে মা বলছেন প্রাণকে। ছবিতে ওকে যতটা দেখেছে ওইটুকুই, বাস্তবে ভাতিজির সাথে ওর সাক্ষাৎ হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে কি হবে তা কেউ জানে না!

বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে ফারাক ব্যাপক। আপাতদৃষ্টিতে যে কেউ ভাবতে পারে যে মায়ের এক ছেলে অষ্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডে থাকে তার দুঃখ কিসের? অভাবই বা কিসে হবে? হয়তো এর কোনটাই নেই। কিন্তু যা আছে তা পূরণ করার সামর্থ্য কারও নেই। সন্তানের লালন-পালন করা যে কতটা কষ্টসাধ্য কাজ সেটা প্রাণ ভালোই বোঝে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই এটা সত্যি। ইংল্যান্ডে ও যখন পাবলিক বাসে মহিলাদের ছোট বাচ্চা ট্রলিতে নিয়ে বাসে উঠতে দেখে তখন ভাবতে থাকে এই মহিলা কতদূর পথ চলে বাচ্চাকে নিয়ে এখানে উঠেছেন। নিজে বসতেও পারছেন না, অন্যদিকে সবসময় খেয়াল রাখছেন বাচ্চা যেন না কাঁদে। প্রশ্ন হলো, ওই বাচ্চাটির কি এইসব কষ্টের কথা মনে থাকবে?? এমন একটি দেশ যেখানে শেষ জীবনের অনেক আগেই ছেলেমেয়ে অভিভাবক থেকে আলাদা থাকতে শুরু করে। কখনোই তেমন কোন যোগাযোগ থাকে না। আর এ রোগ এখন আস্তে আস্তে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে! কেউই এখন আর একসাথে বসবাস করতে চায় না। নিজের মত থাকতে চায়। নিজের বাড়ি, নিজের গাড়ি, সব শুধু নিজের জন্য চাই! বাকি পৃথিবী কোথায় পড়ে রইলো দেখার সময় কই?? টাকা, সম্পত্তি এত আছে, আরও চাই। চাওয়ার কি কোন শেষ আছে??

মহাভারতে একটা শ্লোক থেকে বলতে গেলে –
“কাম্য বস্তুর উপভোগে কখনও কামনার শান্তি হয় না। ঘৃত সংযোগে অগ্নির ন্যায় আরও বাড়তে থাকে। পৃথিবীতে যত ধান্য, যব, হিরণ্য, পশু ও স্ত্রী আছে তা একজনের পক্ষেও পর্যাপ্ত নয়, অতএব বিষয়তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত “!!
(যযাতি ; কনিষ্ঠ পুত্র পুরুর উদ্দেশ্যে)

আদি পর্বের যযাতির জরা উপাখ্যানে এর বিস্তারিত গল্প দেওয়া রয়েছে। অভিশাপগ্রস্ত যযাতি জরায় আক্রান্ত হলে তার নিজের কোন পুত্রই সেটা নিতে রাজি হননি। তখন দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র রাজি হন। শত বছর অতিক্রম করার পরে যযাতি বুঝতে পারেন আসলে ভোগ করার কোন অন্ত হয় না। এটা শুধু বাড়তেই থাকে নিরন্তর।

অতনু দাশ গুপ্ত | Atonu Das Gupta

Political Consciousness of Marquez | মার্কেসের রাজনৈতিক চেতনা | Article 2023

Sir Isaac Newton Article 2023 | স্যার আইজ‍্যাক নিউটন

Role of parents in raising children | Bengali Article 2023

Buddhist philosophy and Sudhindranath’s poetic thought | 2023

new bengali novel 2023 | indian poetry | Read Online Bengali Novel in english | indian poetry in urdu | indian poems | indian poems about life | indian poems about love | indian poems about death | bengali story | bengali story books for child pdf | new bengali novel 2023 for adults | bengali story books | bengali story books for child | new bengali novel 2023 pdf | bengali story for kids | new bengali novel 2023 reading | short story | new bengali novel 2023 analysis | new bengali novel 2023 characteristics | new bengali novel 2023 competition | short story definition | short story english | short story for kids | short story generator | short story ideas | Read Online Bengali Novel 2023 length | long story short | bengali novel meaning | long story | Read Online Bengali Novel instagram | Read Online Bengali Novel competition | story writing competition topics | Read Online Bengali Novel for students | story writing competition malayalam | bengali novel competition india | story competition | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | Read Online Bengali Novel for teens | writing competitions australia 2022 | writing cmpetitions 2022 | writing competitions uk | new bengali novel 2023 writing | bangla news article | bangla article rewriter | article writing | new bengali novel 2023 ai | Read Online Bengali Novel app | article writing book | new bengali novel 2023 bot | bengali novel description | bengali novel example | article writing examples for students | article writing for class 8 | article writing for class 9 | Read Online Bengali Novel format | Read Online Bengali Novel generator | article writing global warming | article writing igcse | article writing in english | article writing jobs | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | bengali novel on child labour | article writing on global warming | Read Online Bengali Novel pdf | bengali novel practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | bengali novel trends 2023 | bengali novel topics 2023 | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Read Online Bengali Novel Translation

Leave a Comment