প্রবীর কুমার চৌধুরী – সূচিপত্র [Bengali Story]
পরকীয়ার পরাকাশে – প্রবীর কুমার চৌধুরী [Porokia Bangla Galpo]
সেদিন অফিস ফেরতা কি মনে হতেই সৌভিক হঠাৎ বাস থেকে একাডেমির সামনে নেমে পড়ে একটা টিকিট কেটে হলে ঢুকে পড়লো। কদিন ধরেই ভাবছে নাটকটা দেখতেই হবে। রবিবারের কাগজে গ্রুপ থিয়েটারের সমালোচনার পাতায় বেশ ভূয়সী প্রশংসা করেছে নাটকটির। পরিচালক খুব খেটেছেন। রীতিমত ওয়ার্কশপ করে নাটকটা দাড় করিয়েছেন। প্রত্যেকটা অভিনেতা, অভিনেত্রী মেপে, মেপে অভিনয় করছেন । মঞ্চ পরিকল্পনায় মুন্সীআনা দেখিয়েছেন অমিত ধর। সবচেয়ে বড় পাওনা আলোকসজ্জা। নাটকটার আলোক সজ্জায় বিখ্যাত আলোকশিল্পী সমীর সেন।
একা থাকলেই সৌভিকের পুরানো দিনের কথাগুলো মনে পড়ে। স্কুল, কলেজ জীবনে কত নাটকে অভিনয় করেছে। নিয়মিত নাটক দেখাটা তার নেশা ছিল। বহুরূপী, রঙ্গকর্মী, নান্দিকার, চেতনা, স্বপ্নসন্ধ্যানি ইত্যাদি গ্রুপের নতুন নাটক না দেখা পর্যন্ত তার স্বস্তি ছিলো না। সৌভিকের নাট্য-জীবনের প্রথম নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শারদোৎসব দিয়ে। ঠাকুরদার চরিত্রে। দাদামনির বাড়িতে রোজ সন্ধ্যাবেলায় রিহার্সাল হতো। তখন বয়স কতই বা হবে দশ- এগারো বছর। বেশ মনে পড়ে নাটকটি দুর্গাপূজায় হয়েছিল, টালিগঞ্জের আর-ওয়াই-এমের মাঠে। পরিচালনায় ছিলেন রাঙাদা। আজও চোখের সামনে ভাসে, কত সুন্দরভাবে বাগানের দৃশ্যটাকে সাজানো হয়েছিল। মঞ্চটাকে পুরোপুরি সাজানো হয়েছিল স্টুডিও সেট দিয়ে। পাশেই তো ক্যালকাটা মুভিটন স্টুডিও। তখন কত রমরমিয়ে শুটিং চলত ওখানে।তারপর তো সুদক্ষিণায় চলে আসার পর নিয়মিত প্রতিবছর দুর্গাপূজায় নাটক হতোই। কোন,কোন বছর তো দুটো নাটকও হয়েছে। পরিচালনার দায়িত্বে কোন বছর হয়তো মিশ্র কাকু, কোনবছর রঞ্জিত কাকু থাকতেন ।
কলেজ লাইফ থেকে বিভিন্ন গ্রুপ থিয়েটারে নাটক করা শুরু হয়েছিল সৌভিকের। চাকুরী পাওয়ার আগে পর্যন্ত এতো নাটক পাগল ছিল সৌভিক তার জন্যে বাবার কাছে কম তো বকুনি খায়নি।। গ্রুপই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান, সাধনা। চাকুরী পাওয়ার পর ভাটা পড়লো। সময়ের অভাবে মহড়ায় উপস্থিতির হার কমতে, কমতে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু মাঝে, মাঝেই নেশাটা আজও চাগার দিলেই সব কাজ ফেলে হলে ঢুকে পড়ে সৌভিক।
সেদিন নাটকটা চলছিল বেশ। কলাকুশলীরা সকলেই গ্রুপ থিয়েটারের নামকরা শিল্পী। শক্ত বাঁধুনি ও রীতিমতো ওয়ার্কশপ করা নাটক। দর্শকের সংখ্যাও বেশ ভালই ছিল হলে। নীচের রোগুলোতো সম্পূর্ণ ভর্তি দর্শকে। নায়িকার প্রবেশ ঘটলো তৃতীয় দৃশ্যে। আর নায়িকাকে নিজের চোখে দেখেই চমকে উঠলো সৌভিক। পোস্টারে নায়িকার নাম ছিল শ্রাবণী দত্ত। কিন্তু নায়িকাতো তার বহু চেনা, এ কাকে দেখছে, নায়িকা তো তার পূর্ব পরিচিত। বহুবছর আগে তাদেরই পাড়ায় বাস করতো। সৌভিকের বোনের সঙ্গে হরিমতি গার্লস হাই স্কুলে এগারো ক্লাসে পড়তো এ। সেই সুবাদে বোনের সঙ্গে তো প্রায়ই দিন বাড়ি আসতো। সৌভিকের সাথে মাঝে, মাঝেই চোখাচোখি হতো। একটু, একটু কথা হতো পড়াশুনার ব্যাপারে। নায়িকার বাড়িও যেত মাঝে মধ্যে বোনের বই আনতে, বই পৌঁছে দিতে।। মাঝে, মাঝে রাস্তায় দেখা হতো যাতায়াতের পথে। একটু, একটু করে ভালোও লাগতে শুরু করলো একদিন। কারণ বোনের বান্ধবীটি যথেষ্ট সুন্দরী ছিল। কেউ কোনদিন জানতেও পারেনি তারা ক্রমশই পরস্পর পরস্পরের কাছে এসেছিলো। ক্রমেই মন দেওয়া – নেওয়ার পালাটাও সাঙ্গ হলো বয়সের ধর্মে। সৌভিক তাকে নিয়ে কতদিন একাডেমি, নন্দনে, কফি হাউসে বসেছে, সেখানে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেছে দুজনে।। বোনের বান্ধবীটির নাম ছিল স্বপ্না মন্ডল। স্বপ্নার মা- বাবার ব্যবহারও ছিল অমায়িক। ভীষণ নরম মনের মানুষ ওঁরা। ভদ্রলোকের সাথে রাস্তায় দেখা হলেই কাছে এসে বাবা সম্বোধন করে কথা বলতেন। দুই ভাইবোন স্বপ্নারা । ভাইটা তখন ক্লাস এইটে পড়ত। নাকতলা হাই স্কুলে।
স্বপ্নার বাবা ছিলেন প্রাইভেট বাসের ড্রাইভার। এখানে রায়পুরে ওদের একতলা পাঁচ ইঞ্চি ইটের গাঁথনির উপর এসবেষ্টরের দেওয়া চালের বাড়ি। সেখানে ওদের চারজনের সংসার। বাড়িতে সামনে একফালি অবশিষ্ট জমি তাতে একটা কলমের ছোট আমগাছ,অনেকগুলো পেঁপে গাছ ও দুটো নারকেল গাছ ছিল। তাছাড়া স্বপ্নার মা মাসিমা নিতে হাতে কতরকম সবজি চাষ করতেন। স্বপ্না মাঝে, মাঝেই সেসব আমাদের বাড়ি নিয়ে আসতো। ওদের বাড়ির আম প্রতিবারই মাসিমা পাঠাতেন। সত্যি সে আমের স্বাদ ছিল অপূর্ব।
হঠাৎ একদিন রুটে বাস চলাকালীন এক্সিডেন্টে স্বপ্নার বাবার একটা বুকের পাঁজর ও ডান পাটা মারাত্মক ভাবে ইনজুরি হলো। শেষে গ্যাংগ্রিন হয়ে পাটাই বাদ চলে গেল। সাথে চাকুরিও। কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পেলেন ঠিক কিন্তু তাতে আর কতটুকু উপকার হয়। বাবার চিকিৎসা, চারজনের সংসারে চারটে পেট ভরতেই শেষ হলো সেই টাকা। ক্রমশঃ সংসারের অভাব, অনটন, অসহনীয় দারিদ্র নির্মমভাবে ওদের আষ্টেপিষ্টে ঘিরে ধরলো। একদিন ধারে, ধারে গলা পর্যন্ত ডুবে গেলো। বাড়ি এসে পাওনাদারের চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করলো। শেষে বাধ্য হয়ে একদিন ওরা বাড়ি বিক্রি করে ধারদেনা শোধ করে ওদের গ্রামের বাড়ি গোবরডাঙ্গায় চলে গেলো।
তারপর দীর্ঘ সাত, আট বছর বাদে আজ একাডেমিতে স্বপ্নাকে নতুন নামে, অভিনেত্রীর ভূমিকায় দেখতে পেলো সৌভিক। সৌভিক বিরতির সময় মেকাপ রুমে গিয়ে স্বপ্নার সাথে দেখা করলে সৌভিককে দেখে প্রথমে ঠিকমত চিনতে না পারলেও পরে বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে স্বপ্না স্থান, কাল ভুলে সৌভিকের দুটি হাত ধরে চিৎকার করে উঠল
— শুভুদা তুমি! কতদিন পরে তোমার সাথে দেখা হলো। কেমন আছো গো? বাড়ির সকলে? আমার প্রিয় বান্ধবী বনানী কেমন আছে?
তারপর চাপা স্বরে বলল –
— তোমায় কি দারুণ দেখতে হয়েছে। আর দুদিন দেখা হলে তোমায় ছেড়ে আর থাকতেই পারবো না। বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো স্বপ্না। ঠিক আগের মত আজও স্বপ্নার প্রাণখোলা, নির্মল হাসিটা আছে। আর সেটা বহুদিন পরে কানে যেতেই সৌভিকের ভালো লাগার সাথে,সাথে বুকের ভেতর ঠিক আগের মত তোলপাড় করতে শুরু করলো। এই মুহূর্তে অতীতের কত হারানো কথা, কত ঘটনাই মনে পড়ে গেল। যে কথাগুলো, ঘটনার স্থান, কাল, সময় শুধুমাত্র তারা দুজনেই জানে। কাউকেই কোনদিন বলতে পারেনি,এযে একান্ত আপনার, বলা যায় না।
সৌভিক জিজ্ঞাসা করলো –
— তোমরা কি এখনও গোবরডাঙায় থাকো…?
বেশ কয়েক মিনিট দাড়িয়ে কথা বললো দুজন। এরমধ্যে দুজন দুজনের ফোন নম্বর বিনিময় করেছে। ঠিকানাও জেনেছে। কত কথা জেনেছে সৌভিক আর কষ্টও পেয়েছে। স্বপ্না এখন বিবাহিতা। স্বামী সুখে সুখী না। নি:সন্তান তাও জেনেছে। এরপর থেকেই দুজনের মধ্যে ফোনাফোনি হয়। মাঝে, মাঝেই দুজনের দেখাও হয় থিয়েটার হলে, লেকে, সেই পুরানো কফিহাউসে। আবার নতুন করে দুটি মানুষের মধ্যে পুরানো সম্পর্কের অঙ্কুরোদগম হলো। আগের মতো একান্তে নানান বিষয়ে আলোচনার শুরু। ক্রমশই দুজনের সম্পর্ক ও চোখের দৃষ্টি ঠিক আগের মতোই আবেগঘন, তৃষ্ণার্ত, গাঢ় হলো।
এখন প্রতি রবিবার ও ছুটির দিন ওরা দুজন ঠিক আগের মতো ঘুরে বেড়ায় এখানে, ওখানে। আর অলীক কল্পনার স্বপ্ন দেখে চারিচক্ষু জুড়ে। মাস তিনেকের মধ্যেই এমন অবস্থা হলো দুজন দুজনকে ছাড়া আর থাকতেই পারে না। ঠিক ছয়মাস বাদে একদিন ছুটির দিনে সৌভিক শুয়ে দেশ পত্রিকা পড়ছে। হটাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। ফোন অন করতেই ওপাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠে কথা ভেসে এলো।
— সৌভিক বাবু বলছেন ? আপনি আমায় চিনবেন না। কিন্তু আমি আপনাকে চিনি। আমি জানি আপনি স্বপ্নাকে খুব ভালোবাসেন। স্বপ্না আপনার সব কথা আমাকে বলেছে। ও আমাকে ডিপ্রাইভ করেছে বা করছে আজ দুইবছর ধরে । আমি স্বপ্নার হাসবেন্ড রবিন দত্ত বলছি। আপনাকে কিছু কথা জানিয়ে রাখা আমার কর্তব্যের মধ্যে পরে মনে করেই ফোন করা। ডিস্টার্ব করলাম বলে ক্ষমা করবেন।
সৌভিক বিরক্ত হয়ে বলে –
— না,না আপনি কি বলবেন বলুন না। হ্যাঁ, স্বপ্না আমার পূর্ব পরিচিত । আমরা একই এলাকায় থাকতাম। ও আমার বোনের ক্লাসমেট ছিল। এখন ও বিবাহিত।
ফোনের অপ্রান্ত থেকে ভদ্রলোক বললেন –
— হ্যাঁ, সবই ঠিক জানেন কিন্তু যেটা জানেন না সেটা হলো – ভ্যাটকা দাস বলে একজনের সাথেই ওর গভীর সম্পর্ক। ঐ মাতালটা ওকে দূরে, দূরে কলশো ধরে দেয়,একসাথে সেখানে যায়,সেখানেই রাতে থাকে। আমি ঠুঁটো জগন্নাথের মতো নিরুপায় ভাবে চেয়ে, চেয়ে দেখি। কারণ আমি কর্মহীন, আমার সেরিব্রাল স্ট্রোকে এক সাইড প্যারালাইজড। এখন ট্রিটমেন্ট ও ফিজিওথেরাপি করে, করে একটু, আধটু হাঁটাচলা করতে পারি তাই বাড়িতে বসেই কটা টিউশনি করি। কিন্তু সর্বতো ভাবেই আমি ওর উপর নির্ভরশীল। এবার যা বোঝার বুঝে নিন। আপনাকেও আমার মতো ঠকাচ্ছে। আপনি সাবধান হন। নাহলে আপনাকেও ভবিষ্যতে কাঁদতে হবে।
সৌভিক এতই বিরক্ত হয় যে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে বলে ওঠে –
— স্টপ ইট রাস্কেল। আর একবার স্বপ্নার নামে বাজে কথা বললে …
ওপ্রান্ত থেকে করুন হাসি ভেসে আসলো –
— জানি, জানি আপনি এখন আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। কাছে থাকলে হয়তো দু’ঘা লাগিয়েও দেতেন। যেমন মাঝে,মাঝে প্রতিবাদ করলেই ভ্যাটকা দাস দেয়। আপনি অবিবাহিত, ব্যাচেলার মানুষ। খুব স্বাভাবিক ভাবেই পূর্ব পরিচিতা সুন্দরী স্বপ্নার প্রেমে পাগল, হাবুডুবু খাচ্ছেন। আমি তো স্বপ্নার হতভাগ্য স্বামী। আমি চাই না আমার মত আপনার কপালটাও পুড়ুক। আপনার সর্বনাশ হোক। আমি আপনার সব খবর নিয়েছি। আপনি ভাই ভুলে যান ওকে। ভ্যাটকা দাসের কবল থেকে স্বপ্নার কোনদিন মুক্তি নেই। ওকে ভ্যাটকা দাস অক্টোপাশের মতো জড়িয়ে ধরেছে। আমি ওদের ফোনিক অডিও ক্লিপিং পাঠাবো সময় মতো আপনি মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আপনাকে বাঁচাতেই এ অন্যায় কাজটা করতে হবে আমাকে। আর কাজটা রাতে ছাড়া করাও সম্ভব নয়। রাতে চুরি করে ওদের দুজনের ফোনের গোপন কথাবার্তাগুলো রেকর্ডিং করে আপনাকে পাঠাবো। তাহলেই সব ধরতে পারবেন। ভালো থাকুন, শুভরাত্রি। মোবাইলের কানেকশনটা কুট করে কেটে গেল।
সৌভিক স্থাণুবত ঘরেই মধ্যে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সৌভিক তখনও নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না। তাই ফালতু লোকের ফালতু কথা ভেবেই রবিন দত্তের নংটা ব্লক করে দিলো। মন বলছে লোকটা সব মিথ্যা বলছে। কারণ স্বপ্না তো বলেছে ওর স্বামী ভীষণ সন্দেহবাতিক। ওকে ভীষণ অবিশ্বাস করে এবং সন্দেহের বশে একদিন মারধরও করতো।
এক রবিবারে পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো সৌভিক মোহরকুঞ্জে বসে অপেক্ষা করছে। বেশ দেরি করে স্বপ্না এলো। তার পোশাক-আশাক অগোছালো, মুখ শুকনো, চুলগুলো আবিনস্ত। যেন একটা ঝড় বয়ে গেয়ে ওর উপরে। সৌভিক বললো –
— একি তোমার এমন অবস্থা কেন? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? কোন বিপদ হয়েছে ?
স্বপ্না কোন কথা না বলে সৌভিকের পাশে বসে কাঁধে মাথা রেখে ফোঁপাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর রুমালে চোখ মুছে বললো –
— তোমার আমার সম্পর্কটা বাড়িতে ওরা জেনে গেছে। আমার বর আমাকে এতো কুৎসিত কথা বলেছে মনে হচ্ছে রাতেই সুইসাইড করি। রবিন বলেছে – আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। আমাকে চরিত্রহীনা, বাজারের মেয়েমানুষ বললো। তুমি বলোতো শুভূদা স্বামীর প্রেমবঞ্চিত কোন মহিলা তার হারানো প্রেমিককে ফিরে পেয়ে যদি ভালোবাসে কিংবা তাকেই অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চায় সেটা কি অপরাধ? পরকীয়া যদি বৈধ হয় তাহলে আমার ভালোবাসা কেন অবৈধ? আমি কি তোমায় প্রচন্ড ভালোবেসে, শুধু তোমাকে আঁকড়ে ধরে সুখী হতে পারি না? স্বপ্না কাঁদতে, কাঁদতে গায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে।
সৌভিক তার প্রাণপ্রিয় স্বপ্নার এই দুঃখ,কষ্ট আর কাতরতায় অস্থির হয়ে পড়লো। ক্রোধে, রাগে কেঁপে, উঠলো। একে স্বপ্নার চোখের জলে তার হৃদয় বেদনায় উত্তাল হচ্ছে তারপর তার প্রাণপ্রিয় প্রেমিকার অপমান তার গায়ে চাবুকের বারি মারছে। এই মুহূর্তে তাকে নিয়ে নতুন সংসার পেতে স্বপ্নার সব দুঃখ, দুর্দশা থেকে মুক্তি দেওয়ার অদম্য বাসনায় বলল –
— তুমি ডিভোর্স একসেপ্ট করো। তারপর আমি তোমায় বিয়ে করে ট্রান্সফার নিয়ে চলে যাবো। আমিও তোমায় ছেড়ে আর থাকতে পারছি না। আমি তোমার নতুন ঘর, সংসার আর সন্তানে ভরিয়ে তুলতে চাই স্বপ্না।
স্বপ্নার দুচোখ তখন জ্বলজ্বল করে উঠলো আনন্দে। নিশ্চিন্ত সুখের আশায়, আহ্লাদে উৎফুল্ল হয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে মোহর কুঞ্জের বনবিতানে সৌভিকের মুখটা নিজের নরম দুই স্তনের মধ্যে চেপে ধরে ঘোষতে লাগলো পরম সুখানুভূতিতে … ।
সেই দিনই সন্ধ্যায় সৌভিকের প্রাণের বন্ধু প্রণবের মামাতো বোনের বিয়েতে সৌভিকের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে স্বপ্নারও নিমন্ত্রণ ছিল। পরে জানতে জেনেছিল স্বপ্না আবার প্রণবের সেই বোনের কলেজের বন্ধু হওয়ার সুবাদে তারও নিমন্ত্রণ। আর সেটা জানার পর সৌভিক-স্বপ্না একসাথেই বিয়েবাড়ি যাবে বলে পূর্ব থেকেই সিধান্ত নিয়েছিল। সন্ধ্যার একটু পড়েই ওরা দুজন এলো বিয়ে বাড়িতে। সেখানে পৌঁছেই স্বপ্না সহসাই সব দুঃখ, শোক, অশান্তি ভুলে হৈচৈ চিৎকার চেঁচামেচিতেই মেতে উঠলো। কখনো গাইছে কখনো নাচ করছে। কখনো তরতর করে তিনতলায় উঠে যাচ্ছে। কে বলবে একটু আগেই মেয়েটা মনে প্রচন্ড হাহাকার ছিল? অসহ্য পারিবারিক যাতনায় সারাটা বিকেল কেঁদেছিল ? প্রতি মুহূর্তে শিউরে উঠছিল সব হারানোর ভয়ে ?
স্বপ্নার এই পরিবর্তন দেখে সৌভিকের ভালো লাগলো এবং নিশ্চিন্তও হলো। কিছুক্ষণ পড়েই হঠাৎ সৌভিক দেখলো ভ্যাটকা দাস নামের সেই লোকটা এলো বিয়েবাড়িতে দই,মিষ্টি, আরও নানান সামগ্রী মুটের মাথায় চাপিয়ে। তাকে দেখেই দৌড়ে গেল স্বপ্না। দাদা এসেছে ,দাদা এসেছে বলে যেন অতিরিক্ত, লোক দেখানো ছেলেমানুষি শুরু করল। সৌভিককে অবাক চোখে তাকাতে দেখে বলল – মানুর বিয়েতে দাদাকে মিষ্টি, আইস্ক্রিম আর কিছু,কিছু জিনিসের অর্ডার ধরিয়ে দিয়েছি শুভূদা । দাদা তো বই থেকে বাঘের ছাল অবধি সকল প্রকার জিনিসের অর্ডার সাপ্লাই করে থাকেন।
কয়েকদিন আগেই রবীন্দ্রসদনে স্বপ্নার একটা নাটকের অনুষ্ঠানে ভ্যাটকা দাসের সঙ্গে সৌভিকের আলাপ করিয়ে দিয়েছিল স্বপ্না। বলেছিল –
— জানো শুভূদা ভ্যাটকাদা যেভাবে আমার আপদে, বিপদে পাশে দাঁড়ায় আমার নিজের মার পেটের দাদা হলেও দাঁড়াতো কিনা সন্দেহ। আমার দুর্দিনে দাদা বারবার এসেছেন, বলেছেন – তোমার কোন চিন্তা নেই। তোমার ভ্যাটকাদা না মরলে তুমি জানবে – তুমি কোনদিন একা হবে না পৃথিবীতে। আমার সাহায্যের হাত তোমার মাথায় চিরদিন থাকবে। কথাগুলো শুনে ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় সেদিন মাথা নত হয়ে গেছিল সৌভিকের।
খাওয়া শেষে ডাইনিং হল থেকে বেরিয়ে এসে স্বপ্না বললো –
— শুভূদা তুমি রওয়ানা হয়ে যাও। সাড়ে আটটা বাজে। আমি ভ্যাটকাদার গাড়িতে চলে যাবো। দাদা- ত আমার ওদিকেই থাকেন আমাকে নামিয়ে দেবেন বলেছেন। সৌভিক আর দেরি না করে নিশ্চিন্ত মনে প্রণবের সাথে এগোয় বাড়িমুখো। দুজনে মহানায়ক মেট্রো স্টেশনের নেমে ষ্টেশন লাগোয়া কফির স্টল থেকে কফি খেয়ে একটু গল্প করে দুজনে হাঁটা শুরু করলো। গড়িয়া পর্যন্ত যেতে এখান থেকে বাসে কিংবা অটোতে যেতে হবে। (যখনকার ঘটনা তখনও কবি সুভাষ পর্যন্তই মেট্রো সার্ভিস চালু হয়নি) মেট্রো স্টেশনের গেট পেরিয়ে এসে চারপা এগিয়ে না আসতেই স্টেশনের কেক প্যাস্ট্রির স্টলের সামনে দৃষ্টি যেতেই একটা দৃশ্য দেখে সৌভিক চমকে উঠলো। ভ্যাটকা আর স্বপ্না হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগোচ্ছে। ভ্যাটকাদার হাতটা স্বপ্না এমন বিশ্রিভাবে জড়িয়ে ধরেছে ওর বুকটা স্পর্শ করে আছে। আর একটা হাতে বড় একটা খাবারের প্যাকেট। হয়তো বিয়েবাড়ি থেকে গিফট প্যাক দিয়েছে।
সৌভিক একটু পিছিয়ে এসে প্রণবকে আড়াল করে বললো – চল আজ ভীষণ ক্লান্ত। ভালো লাগছে না অটোতে উঠে পড়ি। ওরা রাস্তা পেরিয়ে এসে অটোয় উঠলো।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ছাদে পায়চারি করা সৌভিকের চিরকেলে অভ্যাস। প্রায় রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ নীচে নেমে শুতে যাওয়ার আগে কি মনে হলো মোবাইলে হোয়াটসআপটা খুলতেই একটা অডিও ক্লিপিং দেখতে পেল রবিন দত্তর।যা একটু আগেই পাঠানো হয়েছে। আগের দিনও পাঠিয়ে ছিলো সেটা ওদের স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া। কিন্তু আজকের ক্লিপিংটা শুনে দুঃখে, কষ্টে তার দুই চোখে জলে ভরে উঠল। রাতে ঠিক মতো ঘুম হলো না। পরেরদিন কিছুতেই অফিসে কাজে মন বসাতে পারছিল না সৌভিক। টিফিনে আফ-ডে ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল …।
বাড়ি এসে সৌভিক বারবার রবিন দত্তর পাঠানো কালকের অডিও ক্লিপিংটার শুনেছে সেখানে ভ্যাটকাদা আর স্বপ্নার কথাগুলো শুনেছে আর স্বপ্নার মিথ্যা ছলনার অভিনয়ের কথাই চিন্তা করছে – স্বপ্না কালকে যে কথাগুলো বললো সম্পূর্ণ বানানো ও মিথ্যা। একটু চিন্তা করলেই তো বোঝা যেত।। সত্যিই তো যার বাড়িতে এত অশান্তি ও সংসার ভাঙ্গ, ভাঙ্গ অবস্থা সে বিয়ে বাড়িতে এসে এতো উচ্ছল, হই-হুল্লোড়, আনন্দ কিছুতেই করতে পারে না। আসলে এটা একটা ছক ছাড়া আর কিছুই নয়। অডিওতে শুনলো তো – কাল ভ্যাটকা মাতালটার সঙ্গে সারাদিন ফস্টি-নস্টি করেছে, সোহাগের সময় মাতালটা নিশ্চয় বুঝিয়েছে সৌভিকের আর দরকার নেই, আর কাজে লাগবে না। উপরন্তু আমাদের এই গোপন প্রেম অভিসার, মেলামেশা, রাত্রি দেরটা অবধি চ্যাট করাটা জেনে যেতে পারে। রবিনও বলেও দিতে পারে।
স্বপ্না বলে – ম্যাসেঞ্জারে রেস্ট্রিক্টেড করে দিয়েছি।
সেদিন অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে ভ্যাটকা বলে কিছু খাই চলো ক্ষিদে পেয়েছে। স্বপ্না মৃদুস্বরে বলে – তোমার খিদে মেটাতে, মেটাতেই আমি দেউলিয়া হয়ে গেলাম। সেদিন বই আনতে সারাদিন সিঁথির মোড়ে কাটালাম তোমার সাথে, কিছুক্ষণ সুখী করতে পারতে তো। তুমি তো এক্সপার্ট। তোমার সব কিছুই অনন্যাই পাবে? দোকান থেকে খাবারের প্যাকেট নিয়ে মাতাল ভ্যাটকা ও স্বপ্না বেরিয়ে এসে ওটো ধরলো। সেই মুহূর্তেই সৌভিকের জগৎ -সংসার সব কিছুই লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সমস্ত স্বপ্নগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে লুটিয়ে পড়লো পথের ধুলায়।
সৌভিক ভাবে নারী সত্যি ছলনাময়ী। এরা অনেকটা গেরওয়াজ পায়রার মতো একবার উড়লেই কোন ছাদে গিয়ে বসবে ধারণা করা সম্ভব নয়। সত্যি যদি অশান্তি হতো তবে কি আর এতো রাতে বাড়ি ফিরতে পারে, নাকি। যাওয়ার পথে দোকানে ঢুকে সময় নষ্টও করতে পারে না। সৌভিকের মনটা বেদনায় ভরে যায় তাহলে আসল উদ্দেশ্য আমাকে সরিয়ে দেওয়া। সেটা মুখে বললেই যথেষ্ট ছিল। সেই কথা বলতেই নিচে ডেকেছিলাম অবকাশ পেলাম না। প্রতি মুহূর্তে আমাকে মিথ্যা বলে গেল। রবিন দত্ত যা বলে ছিল ফোনে সব মিলে যাচ্ছে। সেদিন ওর কথা বিশ্বাস না করে ওকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। বিমান দাকেও ফোন ধরতে বারণ করেছিলাম অবশ্য স্বপ্নার কথামতই। সৌভিক আজ বুঝতে পারছে সব জায়গায় কেন স্বপ্না ভ্যাটকার জন্যে আমন্ত্রণ চায় নির্লজ্জের মতো। তাহলে কি শুধু শরীর নয় টাকাও পায়?
সৌভিক আর ভাবতে পারে না। স্বপ্নার সাথে মেশার জন্যে অনেক কিছু মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। হয় ভগবান এরাই কিন্তু সমাজে বুক ফুলিয়ে ভ্যাটকাদের হাত ধরে চলে আগামীতেও চলবে। সৌভিকরা ভালোবেসে বিরহে, মানসিক অন্তদ্বন্দ্বে মরবে। যে হেতু এরা কোনদিন মাতাল,দুশ্চরিত্র হতে পারবে না। সৌভিক আর চিন্তা করতে পারেনা। ভাবে যাক গে যে বিচার করার সেই করবে। ভালো তো বাসি, ভুলতেও সহজে পারবো না। যাক ভ্যাটকাকে নিয়ে সুখে থাকুক, ভালো থাক। এটাই হোক আমার প্রার্থনা। সৌভিকরা কেন যে বোঝে না মদো-মাতাল, বারবনিতার ঘরে যাওয়া মানুষ না হলে স্বপ্নাদের পছন্দ হওয়ার প্রশ্নই নেই।
আজ দুদিন সৌভিক অফিসে যায়না। ঠিক মতো খায়না,দায়না। সারাদিনে কবার যে রবিন দত্তের অডিও ক্লিপিংটা শোনে হিসাব নেই। শোনে আর এর ক্ষেপে ওঠে –
— বেঈমান,সব বেঈমান সব প্রতারক। পৃথিবীতে প্রেম বলে কোন কিছু নেই। আছে অর্থেই লোলুপতা, দৈহিক প্রশান্তি,অবৈধ জীবন যাপন।
দিনকে দিন ক্ষেপে উঠছে সৌভিক। পাড়ার লোকেদেরও আজকাল চোখে পড়ছে।পাড়ায় ফিসফিসানি শুরু হয়েছে। চিৎকারটা এখন বেশ বেড়েছে, চতুর্দিকে থুতু ছিটাচ্ছে, কখনো আপন মনে সমানে বকছে,কখনো অকারণে হাসছে, আবার কখনো চুল ছিড়ছে, অদৃশ্য কাউকে দেখে তেড়ে যাচ্ছে।
কেমন যেন পাগলাটে ভাব। সৌভিকের মায়ের কান্নাকাটিতে পাড়ার ছেলেরা শেষে একদিন ধরে বেঁধে বারুইপুরের মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে এলো।
তিনমাস বাদে আজ বাড়ি এসেছে সৌভিক। চোখ স্বাভাবিক নয়,সবার প্রতি একটা সন্দেহ। সবসময় ঘরের মধ্যে চুপচাপ বসে থাকে। দিনে চোদ্দবার চা খাচ্ছে সেইসাথে বান্ডিল,বান্ডিল বিড়ি পুড়ে যাচ্ছে। অফিসে কোনদিন যায় কোনদিন যায় না। সেখানে ডাক্তারি সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বলেছে যতদিন ছুটি জমা আছে ততদিন মাইনে পাবে তারপর নিয়ম অনুসারে মেসি মাইনে বন্ধ হয়ে যাবে। ডাক্তারবাবুরা বলেছেন ও একজন সাইক্রিয়াটিক পেশেন্ট। সমানে মেডিসিন খেয়ে যেতে হবে আর মাসে একবার চেকআপও করে যেতে হবে। যতদিন ওষুধ খাবে ততদিন সুস্থ । ওষুধ বন্ধ হলেই বিপদ পূর্ব পাগলামিতে ফিরে যাবে।
প্রণব সৌভিকেই এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে দেখা করে একদিন স্বপ্নাকে বলেছে সব। উত্তরে তাচ্ছিল্য ভরে স্বপ্না বলেছে –
— আমি কি করবো প্রণবদা? প্রেম তো সবাই করে। বাব্বা, কিন্তু কেউ এমন পাগল হয়ে ওঠে তো শুনিনি। তাছাড়া আমার তো স্বামী – সংসার আছে। না, না ফালতু ঝামেলায় আমি জড়াবো না। এরকম প্রেমট্রেম মানুষের জীবনে আকছার হয়ে থাকে তা বলে কি সেটাকে সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে?
প্রণব অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল স্বপ্নার দিকে তাকিয়ে। সেই মুহূর্তে একটা উপযুক্ত শব্দ বেরিয়ে আসতে চাইছিল মুখ থেকে … প্রণব অনেক কষ্টে প্রাণপণ শক্তিতে মুখের মধ্যেই চেপে রেখে দিল শব্দটাকে…।
প্রবীর কুমার চৌধুরী | Prabir Kumar Chowdhury
Love and nature | প্রেম ও প্রকৃতি | Bengali Article 2023
Do not let the towel sink | গামছাটা ডুবতে দিও না | Bangla Galpo 2023
Aleya | আলেয়া | আবদুস সালাম | Bangla Galpo 2023
Sunglass and our friendship | সানগ্লাসেই সৃষ্টি আমাদের বন্ধুত্ব | Bangla Galpo 2023
Read Porokia Bangla Galpo | New Read Online Bengali Story | Porokia Bangla Galpo Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best New Bengali Web Story 2023 | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Porokia Bangla Galpo in India | World’s New Porokia Bangla Galpo Blogs | New Bengali Web Story in Online | Online Porokia Bangla Galpo | Full Read Online Bangla Golpo | New Bengali Web Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Live Bengali Story in English | Live Bengali Story pdf | Full Bangla Golpo Read Online | New Porokia Bangla Galpo Collection | Porokia Bangla Galpo – Episode | Golpo Dot Com Series | Horror Adult Story Video | Horror Live Bengali Story | Bangla Golpo Read Online Audio | Bangla Golpo Read Online Video | Porokia Bangla Galpo Netflix | Full Bangla Galpo Read | Porokia Bangla Galpo Download | Shabdodweep Competition | Bangla Golpo Read Online Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Porokia Bangla Galpo | Recent Porokia Bangla Galpo | Top Live Bengali Story | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Bangla Golpo Read Online 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Read Online | New Bangla Golpo Read Online | Porokia Bangla Galpo in pdf | Golpo Dot Com Download | Bengali Famous Story – audio | Horror Adult Story | Read New Porokia Bangla Galpo | Live New Porokia Bangla Galpo – video | New Bengali Web Story APK | New Bengali Web Story Download | Live Bengali Story mp3 | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Porokia Bangla Galpo – audio | Top Porokia Bangla Galpo | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bangla Golpo Read Online | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bangla Golpo Read Online | Shabdodweep Writer