আবদুস সালাম – সূচিপত্র [Bengali Story]
আলেয়া – আবদুস সালাম [Aleya]
এক
জেলের কুঠরীতে বসে আছে শ্রাবণী । চোখের কোনে জড়ো হয়েছে কালি। এই কয়দিন খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো হয়নি । ঔজ্জ্বল্য ভরা যৌবনে কে যেন মাখিয়ে দিয়েছে কালি ।
নিজেরই উচ্ছ্বলতা শ্রাবণীকে বিভ্রান্ত করে তুলেছিল। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে সন্দীপ । সংসারে কোনো কিছুরই কমতি নেই । একদম গেরস্ত ঘর বলতে যা বোঝায় ।গ্রামে বসেই শহরের সকল রকম সুবিধা ভোগ করতো । বউমা হিসেবে শ্রাবণী কে পেয়ে বিধবা শাশুড়ি আহ্লাদে আটখানা। প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন শ্রাবণী কে । একদিকে শ্রাবণী যেমন বৌমা অন্যদিকে তেমনি মেয়ে ।সারাদিন মা মেয়ে মিলে নিজেদের উজাড় করে দিতো।
বিশাল জমি জায়গা দেখাশোনা করা, চাষের সময় মাঠে গিয়ে কাজের লোকদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া। এই নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় সন্দীপ কে। সন্দীপ থাকে ঘোর সংসারী হয়ে। আর শ্রাবণী চাই বাহির জীবনে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে। শিমুল পলাশের রঙে নিজেকে রাঙিয়ে মেতে থাকতে চাই। মোড়ল মানুষের বাড়িতে সব সময় লোকজনের আনাগোনা লেগেই আছে । এদিকটা অবশ্য যতটুকু পারে সরযূবালা সামাল দেয়। এনামি বেনামী তে অনেক জায়গার মালিক। জমি জায়গা টিকিয়ে রাখতে উকিল-মোক্তারদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয় । গিন্নি মার স্নেহধন্য উৎপল বাবু এই বাড়ির পারিবারিক উকিল। জমি জায়গার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও পরামর্শের জন্য এই বাড়িতে তার বিস্তর আনাগোনা।
দুই
সারাদিন জঙ্গিপুর বটতলায় মক্কেলকে ঠেঙিয়ে ক্লান্ত মনের জানলা খুলে অবসাদ গুলোকে চাঙ্গা করতে শ্রাবণীর হাতে চা যেন ওষুধের কাজ করে। সাঁঝের বেলায় সন্দ্বীপ বাড়িতেই থাকে। জমিয়ে গল্প করে আটটা -নটা নাগাদ বাড়ি যায়। বিশেষ করে মায়ের স্নেহধন্য বলে সন্দ্বীপ কিছু মনে করে না ।বরং বিনা পয়সায় কিছু আইনি পরামর্শ পেয়ে যায়।
শ্রাবণীর ক্রমবর্ধমান উচ্ছলতায় উৎপল যেন ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ক্রমশঃ দিন দিন যেন শ্রাবণীময় হয়ে উঠছে উৎপল । কোর্ট থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যায় শ্রাবণীর হাতের চা আর জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যেন প্রতিদিনের কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। ওর হাতের এক কাপ চা না খেলে নিজেকে আজ শূন্য মনে হয় উৎপলের ।
শ্রাবণীও সেজেগুজে অনুষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ কলাকার হতেও কুণ্ঠাবোধ করে না , গল্প-গুজবে মেতে ওঠে অবগুণ্ঠন খুলে ।সারা দিনের জমানো ক্লান্তি দূর করে নিতে চেষ্টা করে । সরযূবালাও কাছে এসে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা এনে হাজির করে । সাধ্যমত উৎপল ও সেগুলোকে আইনি পরামর্শ দেয় । উৎপলের নিত্য আসা-যাওয়া সন্দ্বীপের মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক করতো না । সন্ধ্যা হলেই উৎপল এর জন্য প্রহর গুনতে শুরু করে শ্রাবণী । যদি কোনদিন না আসে তবে একরাশ শূন্যতা যেন তাকে ঘিরে ধরে। অযাচিত একটা মিথ্যা প্রেমের ফল্গুধারা যেন বইতে শুরু করে।
সরযূবালা হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন । মাদারল্যান্ড নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় ।উৎপল নিজের কাজ ছেড়ে সন্দ্বীপ এবং সরযূবালাকে আগলে রাখে। এদিকে শ্রাবণী বাড়িতে একা ছটফট করে । এত বড় বাড়ি ফেলে আসতেও পারছেনা । একদিকে শাশুড়ি ঠাকুরণ অন্য দিকে সন্দ্বীপ কি খাচ্ছে না খাচ্ছে তার ঠিক ঠিকানা নেই । তবে ঘন্টায় ঘন্টায় উৎপলের মোবাইলে ফোন করে জানতে পারছে ওদের চলমান পরিস্থিতি । নার্সিংহোমে রাতে একজনের বেশী লোক এ্যালাও করে না । কাছাকাছি রাতে থাকার মতো ঘর দেখার চেষ্টা করেছেন । খুব চিন্তা । কিভাবে উদ্ধার হওয়া যায় । সঙ্গে সঙ্গে উৎপলের মনে পড়ে বাল্যবন্ধু সালাম মাষ্টারের কথা । ও তো মাদারল্যান্ডের কাছেই থাকে । খোঁজ নিয়ে দেখে একদম মাদারল্যান্ড নার্সিংহোমের উল্টো দিকের বাড়ি খানায় বন্ধুর বাড়ি । উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা জানায় । বন্ধুর কথা ফেলতে পারে না, রাজি হয়ে যায় । উৎপল সন্দীপের রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে পেরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ।
সালাম মাস্টার বাড়ি একদম ফাঁকা ।দোতলায় উঠে গেছে । নিচেরটা ফাঁকা পড়ে আছে । ছেলেরা মেয়েরা কেউ থাকে না । বড়ো ছেলে বিবিসির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, দুর্গাপুরে থাকে । মেজো ছেলে ডাক্তার । সেও থাকে না। মেয়েও বিলাসপুরে পড়াশোনা করে ভাড়া দেয়ার কথা মাথায় নেই । সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য বাইরের লোককে বাড়িতে ভরা । মোটেই না পছন্দের কাজ । মাঝে মাঝে মনে হয় ভাড়া দিলে অন্তত একজন বিনি পয়সার নাইট গার্ড পেয়ে যাবেন। অন্যান্য পাড়ার চেয়ে এখানে ভাড়ার অঙ্কটাও বেশী । ইচ্ছে থাকলেও গিন্নি বিস্তর বিরোধিতা করে ।
উৎপল মাস্টার নিচের তলার চাবিটা চেয়ে নেয় । যতদিন থাকবে ততদিন নির্বিঘ্নে থাকতে পারবে টাকা পয়সা কিছুই লাগবে না । তোর বন্ধুর মা মানে আমার বন্ধুর মা । পড়ে আছে তো । নির্বিঘ্নে থাকতে পারে বলে দে তোর বন্ধুকে।
আলাদা ঘরের ভীষণ দরকার প্রচুর লোকজন আসছে । ফোনের পরে ফোন । গ্রামের লোকজন তো পালা করে আসছে ।ঘরটা পাওয়া তে কৃতজ্ঞতায় সন্দীপন একেবারে গদগদ। বিষাক্ত ধর্মীয় বাতাস বইছে এখন । মানবিক দিকটা এখন মানুষ ভুলতে বসেছে সবাই। এই অসময়ে একজন ভিন্নধর্মী লোক কোন দ্বিধা না করে চাবির গোছা তুলে দেন সন্দিপের হাতে। উৎপলের বন্ধুত্ব ও সালাম মাষ্টারের মহানুভবতার কথা কোনদিন ভুলবে না সে।
শ্রাবণী বাড়িতে একলা । সন্দ্বীপের অনুপস্থিতিতে উৎপলের বেড়ে চলেছে ঘনিষ্ঠতা। সন্দ্বীপের অনুপস্থিতিতে বন্ধুপত্নীর দেখভাল তো তাকেই করতে হচ্ছে ।এছাড়া কোর্টে আসার সময় বন্ধু এবং বন্ধু মাতার জন্য বাড়ি তৈরি খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাড়িতে আসতে হচ্ছে রোজ।
শ্রাবণীও শাশুড়ি- স্বামীর খাবার তৈরি করে অপেক্ষা করে থাকে উৎপলের জন্য। এটা যেন উৎপলের প্রতিদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কাজের বোঝাটুকু হাসিমুখে বয়ে চলেছে উৎপল । সন্দ্বীপের অবর্তমানে দুজনে দুজনের কাছাকাছি আসা ও বাড়িয়েছে ।
মাতৃসমা শাশুড়িকে দেখার জন্য শ্রাবণীর মন আনচান করে উঠেছে। সমস্যা হচ্ছে যাওয়ার । উৎপলকে এই কথা জানাতে উৎপল বলে শ্রাবণী তুমি যদি চাও তো চাঁদে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারি, এ তো সামান্য নার্সিংহোম যাওয়া কথা। কালই তোমাকে দেখে নিয়ে আসব।
পরদিন সকালে শাশুড়ি আর স্বামীর জন্য চটপট খাবার তৈরি করে হটপটে ভরে উৎপলের জন্য অপেক্ষা। হালকা ক্রিম রঙের শাড়ীর সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। আজ দারুণ দেখাচ্ছে শ্রাবণীকে ।যেন শ্রাবণের মেঘ ঝরার অপেক্ষা শুধু। উৎপলের বেজে উঠতেই সদর দরজা গেল খুলে । বিন্দুবৎ অপেক্ষা না করে বাইকের পিছনে গিয়ে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করল মেঠো পথ ধরে। হাইওয়ে না ধরে গ্রামের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা মির্জাপুর হয়ে রঘুনাথগঞ্জে উঠেছে সেই রাস্তা ধরে চলতে শুরু করল তার বাইক । এবড়োথেবড়ো রাস্তায় নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা শ্রাবণী ।শত্রুতা করছে বাতাস আর সিল্কের শাড়ি । উৎপল বলে দুই হাতে আমার কোমর চেপে ধর, নইলে পড়ে যাবে।
সাহস পেয়ে কোমর ধরলো জাপটে । তপ্ত নিঃশ্বাস আর যৌবনের চাক্ষুষ অঙ্গের ঘষটানিতে দুজনে যেন মাতোয়ারা। অনাবিল আনন্দে নিজেকে ডুবিয়ে নিতে চাইছে যেন। কেউ মুখ ফুটে কিছু বলছে না। অথচ শরীরের প্রতিটি প্রত্যঙ্গ বিদ্রোহের ভঙ্গিতে বোবা লোকের মতো আকার-ইঙ্গিতে জানিয়ে দিচ্ছে প্রাণের আকুলি-বিকুলি । “বাগিড়া এন্ড সন্স মিষ্টান্ন ভান্ডার” মির্জাপুরের বিখ্যাত মিষ্টির দোকান । সব ধরনের স্পেশাল মিষ্টির নির্ভর যোগ্য প্রতিষ্ঠান । এখান সকালে গরম গরম পুরী আর ল্যাংচা । এর স্বাদই আলাদা। একবার যে খেয়েছে তাকে মনে রাখতেই হবে এর স্বাদ। এখানে দুজনে সেরে নেয় সকালের টিফিনটা । শ্রাবণীও তো কোনদিন এখানের পুরী ল্যাংচা খাইনি শ্রাবণী চেপে বসে বাইকের পিছনে ।সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যেন অব্যক্ত কোনো শক্তির ছোঁয়ায় ধোঁয়া উড়াতে শুরু করেছে।
অনেকদিন না দেখা শাশুড়িকে দেখে প্রাণ ফিরে পেল শ্রাবণী। দুজনে চোখের জলে ভাসালো কিছুক্ষণ। মনের জানালা দিয়ে বাতাস গতি পেলো । মা আপনার অবর্তমানে আমি যে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম । আপনি না থাকলে যে আমি সর্বহারা হয়ে যায় ।ভগবান আপনাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করুন । প্রায় সাত দিন স্বামী প্রেম থেকে বঞ্চিত শ্রাবণী । যতটা পারলো স্বামীকে আর শাশুড়িকে সেবা-যত্ন দিয়ে ভরিয়ে দিল । এতে শাশুড়ি যেমন বৌমাকে পেয়ে খুশি তেমনি সন্দীপও বউকে কাছে পেয়ে খুব খুশি। সালাম সাহেবের ঘরে সব জমানো বিরহের অবসান ঘটিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললো দুজনে ।
এদিকে উৎপলের মন উতলা । কিছুতেই কোর্টের কাজে মন বসাতে পারছে না । মোহুরী সুজয় উৎপলকে বলে কি ব্যাপার উকিল বাবু আপনাকে আজ এত উদাস লাগছে কেন? কিছু হয়েছে নাকি? শরীর ঠিক আছে তো ! উৎপল কিছুই খুলে বলতে পারছে না । কিছু হয়েছে বয়কি। শ্রাবণীর কাছে আসা আজ তার মনে ধরিয়েছে আগুন । অলীক ভাবনার বুনো হরিণ দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করছে । অলীক কল্পনার জাল বিস্তার করে চলেছে মনে । কখন ছুটি হবে কোর্ট? মন যে আজ বাঁধা পড়ে আছে শ্রাবণীর আঁচলে—-
আরে না না কিছু হয়নি। শরীরটা সহযোগিতা করছে নং মোহুরী সাহেব ।শরীরটা খারাপ লাগছে তাই কাজে মন বসাতে পারছি না । অজুহাত দেখিয়ে সুজয়ের কাছ থেকে অব্যাহতি পেলে ও কিছুতেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেনা আজ।
“মন যে আমার হারিয়ে গেছে কোন খানে
কেউ জানে না কেউ জানে মন জানে”——
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যুবরাজ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে সরযূবালার পছন্দমত সন্দেশ, রসমালাই ,আর কিছুই নিমকি নিয়ে নিল। সঙ্গে কিছু ফল আপেল ,বেদানা । সন্দীপ বলে উৎপল এত কিছু আনার কি দরকার ছিল তোমার ! মা তো এগুলো খেতে পারছেনা। ডাক্তার অবশ্য খেতে নিষেধ করেননি ।
আরে যতটুকু পারবেন খাবেন , না হয় তুমি তো আছো। আর এই কয়দিনে তোমার যে কি হাল হয়েছে । তুমিও রোগী বনে গেছ সন্দীপদা ।
সাঁঝালী শীতে বিকেলের সূর্য যেন তাড়াতাড়ি ছুটছে দিগন্তে বিলীন হওয়ার জন্য ।কোথাও দূরে গেলে গরু যেমন বাড়িতে যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবার জন্য উদগ্রীব থাকে তেমনি উৎপলের হয়েছে তেমনি হাল। সূর্যটাও যেন গোধূলির রঙে নিজেকে রাঙিয়ে মেশাতে চাইছে তাড়াতাড়ি অস্তাচলে । প্রকৃতি নিজেকে আজ অপরূপ সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে ।উৎপল বলে আজ তুমি থেকে যাও । আমি বাড়ি দেখছি । আমাকে নিঃসন্দেহে ভরসাকরতে কর পারো । বাড়ি পাহারা আমি দেবো ।আমাকে চাবিটা দিয়ে দাও ।
বৌমা রাত হয়ে যাবে। রাতে যেতে তোমাদের অসুবিধা হবে ।মে সব রাস্তা খারাপ । আমি তো মোটামুটি এখন ভালোই আছি। তোমরা এসো । গাড়িতে স্টার্ট দিলো উকিল সাহেব । ঝড়ের গতিতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো ওরা দুজন । দুজন দুজনের মনের আবেগের কথা বলতে বলতে এসে ঢুকলো বাড়ি।
রাত হয়ে যাওয়ায় কাজের মেয়ে বিমলা বাড়ি চলে গেছে। দরজা খুলতেই একরাশ দমকা হাওয়া খাঁ খাঁ করে ছুটে এল । এত বড় বাড়িতে একলা রাত্রিযাপন । শ্রাবণীর গা শিউরে উঠল । উৎপল বলে শ্রাবণী থাকো । আমি বাড়ি রায় । শ্রাবণী কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায়না উৎপল কে। কি যে হয়েছে আজ কে জানে ।ওরা কি কোন নতুন খেলায় হারিয়ে যাবে আজ । হায়রে নারী মন —কথায় আছে না ” জল জঙ্গল নারী, তিন জানের বরি”—–।
বহুদিনের সুপ্ত কামনার আগুনে উৎপল কে আজ পোড়াবেই । অজানা নেশায় সে যেন আজ মত্ত। নিজেকে সে আজ উজাড় করে দিতে চাই ,সপে দিতে চাই তার মন প্রাণ। উৎপলের আপত্তি অজুহাত কোন কিছুই সে আজ মানতে রাজি নয় ।পুলিশ যেমন থানায় নিয়ে গিয়ে অপরাধী কে জোর করে জবানবন্দি আদায় করে, ইচ্ছে মতো কাগজে সই করিয়ে নেয়। শ্রাবণী ও তেমনি আজ উৎপলকে বন্দী করে ঘরে তুলেছে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে যা খুশি করিয়ে নিতে আজ বদ্ধ পরিকর । আর পেয়ে গেছে সেই সুযোগ ।কামনার আগুনে ঝলসে দেবে আজ । মাতাল মন ভুলে গেছে পত্নীপ্রাণা স্বামী আর শাশুড়ির কথা । আজ সে দিশে হারা । নিজেকে আজ সামলে রাখতে পারছে না কিছুতেই।
তিন
অবৈধ প্রেমের খেলায় মত্ত শ্রাবণী নিখুঁত অভিনয় করে চলেছে । দিন দিন শাশুড়ির অসুখ কমতে চাইছে না। জীবন দায়ী ওষুধগুলো ঠিক মতো খাওয়াচ্ছে না । অবস্থা ক্রমশঃ খারাপ হতে শুরু করে। দিন কয়েক পার হতে না হতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রাণাধিক শাশুড়ি । ভগবান তাঁকে নিয়ে যায় অচিনপুরে ।
অঢেল সম্পত্তি, নামে-বেনামে রাখা ।এই সকল সম্পত্তি কে বৈধ করতে উৎপল ই একমাত্র ভরসা। ক্রমশঃ উৎপল এর উপর নির্ভরতা বাড়ে সন্দীপের। এদিকে শ্রাবণীও বাড়তি সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে ছাড়ছে না । একই টেবিলে সব আলোচনা হওয়ায় বহু কিছু তথ্য তার জানা হয়ে গেছে। নিখুঁত অভিনয় করে চলেছে কুহকিনীর ভূমিকায়। কুটিল ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলেছে মনে মনে। চাষা সন্দীপের ঘর ছেড়ে স্মার্ট উকিল উৎপলের ঘর করতে তার ইচ্ছে জাগে । শাশুড়ি গত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই হাওয়া উল্টোদিকে বইতে শুরু করে । কোন বাধাকে সে বাধা হিসেবে মনে করছে না। স্মার্ট উকিল সাহেব যেহেতু সঙ্গে আছে । অদ্ভুত এক নেশা তাকে আচ্ছন্ন করে নিয়েছে । শুরু হলো ষড়যন্ত্র। শুরু হলো পূর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় দিনগোনা।
আশ্বিন মাস পুজোর গন্ধ আসছে আকাশে-বাতাসে ।সবাই একটু বাড়তি আমোদের জন্য দেশি-বিদেশি এনে রেখেছে বাড়িতে । উকিল বাবু সন্দীপের জন্য এনে দেয় খাঁটি বিলেতি । নেশা কোনদিন করে না সন্দীপ । উকিলের পাল্লায় পড়ে একটু খানি চেখে দেখা। শ্রাবণী উৎপলকে পাওয়ার নেশায় মাতাল ।দু একদিন এভাবে চলতে চলতেই শ্রাবণী সন্দীপের গ্লাসে দিল ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে। উৎপল হয়ে যায় অচৈতন্য। অচৈতন্য তার সুযোগে ওরা নিজেদেরকে বিলীন করে দিতে ছাড়ে না। বন্ধুর সাথে বন্ধুর বাড়িতে চালিয়ে যায় রাসলীলা। চাষা সন্দীপের সান্নিধ্য একদম ভালো লাগছে না শ্রাবণীর । শ্রাবণী একেবারেই নিজের করে পেতে চাই উৎপল কে । উৎপল বলছে এই তো ভালই চলছে । এমনি করেই চলুক না। কোনো টেনশন নেই। এই উত্তর কিন্তু কিছুতেই শ্রাবণী কে সন্তুষ্ট করতে পারছে না ।একেবারেই পেতে কি করতে হবে এই পরামর্শ চাইছে বারবার উৎপলের কাছে । উৎপল যতই নিরস্ত করার চেষ্টা করে ততো ই শ্রাবণী আজ নাছোড়বান্দার মতো গোঁ ধরে বসে আছে।
উৎসবের দিন গুলো সন্দ্বীপের খুব ভাল যাচ্ছে না । মাত্র মাতৃবিয়োগ এর ধাক্কায় তার শরীর ও মন ভেঙে গেছে । যে বটগাছের ছায়ায় নিশ্চিন্তে দিন যাপন করছিলেন , সেই বট গাছ টা আর নেই । কালবৈশাখী ঝড় যেমন ক্ষণিকে সব লন্ড ভন্ড করে দিয়ে যায় তেমনি সরযূবালার মৃত্যু জীবনের সব মানে কে লন্ড ভন্ড করে দিয়ে গেছে।তার মাথার উপর থেকে ছাদ উড়ে গেছে ।
ডাক্তার দেখাতে শহরে যেতেও একমাত্র ভরসা সেই উৎপল । শ্রাবণী মায়াকান্না কাঁদে ।সন্দ্বীপকে সান্ত্বনা দেয় দু তিন দিন কোর্টের কাজে খুব ব্যস্ত থাকবে উৎপল দা । ভুল ওষুধ খাইয়ে সন্দ্বীপ কে দিন দিন দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে ভিতর ভিতর । ঘুমের ওষুধের মাত্রা দিয়েছে বাড়িয়ে । স্বভাবতই দিন দিন নেতিয়ে পড়েছে সে। অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে পাশের ঘরে প্রায় প্রতিদিনই ওরা মেতে উঠছে রাসলীলায়। অন্যান্য ঘরগুলো শাশুড়ির অবর্তমানে খাঁ খাঁ করছে । কাজের মেয়েটাও চলে গেছে ।
রাত বেড়েছে । ডবল ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে গলা শুকিয়ে কাঠ । চোখ জড়ানো অবস্থায় সন্দ্বীপ জল খাব জল খাব বলে চেঁচামেচি করে । এদিকে ওরা রঙ্গলীলায় মগ্ন শুনতে পাই নি । ভাবছে শ্রাবণী হয়তো অন্য কাজে ব্যস্ত আছে । থামতে না পেরে অগত্যা বিছানা ছেড়ে উঠে আসে জল খাওয়ার জন্য।
সন্দীপ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না যেন ।প্রায় বিবস্ত্র হয়ে দুজন দুজনে মিশে আছে। সন্দীপের চিৎকারে যখন নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে তখন ওরা সম্পূর্ণ বিবস্ত্র । যেন দুটো আদিম মানব মানবী । সন্দীপ যেন ভূত দেখছে ।শ্রাবণী এখন সন্দীপের চোখে একটা নষ্ট মেয়ে ছাড়া কিছুই নয় ।
সন্দীপ চোখে সর্ষেফুল দেখছে ।তার সব বিশ্বাসের ইমারত যেন হুড়মুড়িয়ে পড়তে প চলেছে । বিশ্বাস ঘাতকিনীর সাথে সংসার যাপন করার কোন মানেই হয়না । তুমি নষ্টা, তুমি নষ্টা, তুমি বেশ্যা তুমি বেশ্যা—–
শ্রাবণী উৎপল কে পাওয়ার নেশায় বিভোর । কাছে ছিল ফল কাটা ছুরি, ঢুকিয়ে দিল সন্দ্বীপের পেটে ।রক্তাক্ত হয়ে গেল সারা ঘর । দুর্বল সন্দীপ দুচার বার লাফালাফি করে মৃত্যুকে কাছে টেনে নিলো । চোখদুটি আধবোজা অবস্থায় দেখে নিচ্ছিলো তার বিশ্বাসঘাতক প্রাণাধিক স্ত্রীকে। সুযোগ বুঝে উৎপল বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে । চালাক মহিলা চোর চোর বোলে জুড়ে দিল চিৎকার । পাড়ার লোকেরা ছুটে এসে দেখে পড়ে আছে সন্দীপের রক্তাক্ত নিথর দেহটা। ওরা অগত্যা খবর দেয় পুলিশে । হাজির হয় পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠিয়ে দেয় মর্গে।পুলিশের প্রাথমিক অনুমান প্রেম ঘটিত মনে হওয়ায় শ্রাবণী কে ধরে নিয়ে যায় থানায় ।
শ্রাবণী ভেবেছিল উৎপল তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। কেননা এই কাণ্ড তো উৎপলকে ঘিরেই। কিন্তু না চতুর উকিল ত্রিসীমানায় বাড়ায়নি । একজন বিশ্বাসঘাতকের কথায় পাগলিনী হয়েছিল সে।
অনুশোচনায় জেলখানায় বসে বসে ছিঁড়ে চলেছে নিজের মাথার চুল।
আবদুস সালাম | Abdus Salam
New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | রীনা তালুকদার
New Bengali Poetry 2023 | কবিতাগুচ্ছ | তপন মাইতি
The legend of Jagannath | জগন্নাথের কিংবদন্তি
Bharatpur Patachitra | ভরতপুরের পটচিত্র | 2023
আলেয়া | আলেয়া শব্দের অর্থ | আলেয়া কবিতা | আলেয়া খাতুন | আলেয়া বেগম | আলেয়া সমার্থক শব্দ | আলেয়ার আলো বাগধারা | আলেয়া নাটকের বিষয়বস্তু | আলেয়া নাটক | আলেয়া হ্রদ | আলেয়া ভূত | আলেয়া কাকে বলে | আকাশ আলেয়া – সুকুমার রায় | কাজী নজরুল ইসলাম এর আলেয়া | নিদালি আলেয়া | অলৌকিক নয় লৌকিক | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার ২০২২ | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প ২০২২ | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন
Aleya | Aleya 2023 | Aleya pdf book | Aleya video | Short film Aleya | Natok Aleya | Bengali Web series Aleya | Aleya video song | Aleya audio song | Aleya mp3 | Aleya short story | long story Aleya | Full movie Aleya | Aleya – pdf book | Bengali Story – Aleya | Aleya – new story | Viral story – Aleya | Bangla Galpo – Aleya | Shabdodweep story – Aleya | Aleya – story 2023 | Aleya – Netflix 2023 | Aleya – Facebook page | Aleya pvt ltd | Aleya – trend topic | Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Story