Best Online Bangla Hasir Golpo | Bengali Story

Sharing Is Caring:

অপরাজিতা – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্য রচনা]

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মোবাইলে কিছু একটা দেখছি,ফোনটা বেজে উঠতেই সব ঘেঁটে গেল। ওপ্রান্ত থেকে পুষ্পিতার ভয়ার্ত গলা, দাদা, আমাকে বাঁচাও, আমি আর পারছি না। কথাবার্তায় যা বোঝা গেল, ওর স্বামী একটা অসভ্য লোক, মুখ খিস্তি,গায়ে হাত তোলা এসব চলছিল, আজ পেটে লাথি মেরেছে।‌ দিনের পর দিন অপমান লাঞ্ছনা আর সহ্য হচ্ছে না। মনে পড়ে, এই তো সেদিন বিয়ে দিলাম। আমাদের পাশের বাড়ি, বোনের সঙ্গে পড়ত পুষ্পিতা, খুব নম্র, শান্ত স্বভাবের। ওর বাবা নেই। দাদা প্রাইভেট সংস্থায়, বেতন কম। চার বোন মা কে নিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। পুষ্পিতা হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করে ছোট একটা নার্সিংহোমে চাকরি করত।‌ সংসারে টিকে থাকার লড়াইয়ে ওরা চার বোন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছিল।‌ ইতিমধ্যে পুষ্পিতার বিয়ে হয়ে যায়। জামাইকে উপরে দেখে ভাল মনে হলেও আসলে তা নয়। কয়েকমাসের মধ্যেই মানসিক টর্চার শুরু হয়। আর আজ একেবারে চরম অবস্থা। পরদিন সকালে, আমরা গিয়ে একরকম জোর করেই পুষ্পিতাকে নিয়ে চলে আসি। তখন পুষ্পিতা সন্তানসম্ভবা। ওরা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিল। পুষ্পিতা অনড়,ও বাড়িতে আর ফিরে যেতে চায় নি। বিয়েটা যাতে না ভাঙ্গে, বোঝানো হয়েছিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ডিভোর্স হয়ে গেল। পুত্র সন্তানের জন্মের পর শুরু হয় একার সংগ্রাম। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হতে থাকে পুষ্পিতার ছেলে। অসম্ভব জেদ, হারতে রাজী নয়, সে একাই মানুষ করবে তার সন্তানকে। ভীষণ ধৈর্য, শত অভাবের মধ্যেও হাল ছেড়ে দেয় নি। রাতে দিনে ডিউটি, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বড় করে তোলে, লেখাপড়া চালিয়ে যায় ছেলের। হায়ার সেকেন্ডারির পর আর পারে না। কম্পিউটার ট্রেনিং নিয়ে এখন চুক্তিভিত্তিক একটা কাজে রয়েছে ছেলেটা। অপরাজিতা পুষ্পিতার লড়াই এখনও জারি কোন এক আলোকবর্তিকা সন্ধানে।

বীরাঙ্গনা – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্য রচনা]

ট্রেজারী বিল্ডিং-এর পাশে বসে মোমো বিক্রি করত মেয়েটা।‌ প্রায়ই খেতাম মোমো,স্বাদ বেশ ভালোই।‌ বয়স বেশি নয়, ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হবে। কিন্তু সংসারের চাপে ভীষণ দুখী মনে হত। বেশ কিছুদিন যাবৎ আর দেখতে পাই না মেয়েটিকে। ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছি।‌ সেদিন ছুটি, একটা কাজে স্কুটিতে ঘুরছিলাম।‌ পাশের পাড়ায় একটা খাবারের দোকানে দেখলাম ওকে, দোকানটার নাম মোমো ম্যাজিক। কৌতূহলে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, মোমো নিয়ে বসে না, এই দোকানে কি কাজ নিয়েছে। চোখাচোখি হতেই হেসে এগিয়ে এল, বলল, আসুন দাদা,বসুন, কি খাবেন বলুন। বসলাম ওর দোকানে। সব শুনে আমি তো অবাক! খুব গরিব ওরা। কলেজে ভর্তির পরই বিয়ে হয়ে যায় অপর্ণার। কয়েকদিন পর বুঝতে পারে, স্বামী মদ্যপ, অসভ্য। প্রতি রাতে নেশা করে অকথ্য গালিগালাজ করত। সেদিন অত্যাচার চরমে, পেটে লাথি মারল। আর সহ্য করেনি অপর্ণা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এক কাপড়ে বেরিয়ে আসে। জেদি অপর্ণা ও বাড়ি ফিরতে রাজি নয়। আত্মসম্মান নিয়ে একাই বাঁচবে সে। শুরু হয় একা টিকে থাকার লড়াই। সন্তানের জন্ম, দেখাশোনা, বড় করে তোলা, সব একাই সামলেছে।‌ অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়েছে, ছেলে এখন ক্লাস ফোরে। মোমো বিক্রি ভাল বুঝে ওখানে না গিয়ে বাড়িতেই দোকান শুরু করেছে, এখন বেশ জনপ্রিয় অপর্ণার মোমো ম্যাজিক। এছাড়াও একটা অনাথ আশ্রমের পাঁচজন দুঃস্থ শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে অপরাজিতা অপর্ণা।‌ ভাবি, এত কষ্টের মাঝেও এত উদ্দীপনা কোথায় পায়,কত বড় মন থাকলে এটা হয়! সত্যিই বীরাঙ্গনা অপর্ণা!

চা দিয়ে রায় চেনা – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্য রচনা]

“বাবলু, চা দে…..”বটতলার চা-দোকানে দূর থেকে হাঁকলেই বাবলু একবার শুধু মুখের দিকে তাকিয়েই মুহূর্তে মনে করে নেয়, লিকার চা চিনি ছাড়া, দুধ ছাড়া চিনি-চা, দুধ দেওয়া চিনি বা চিনি দেওয়া লিকার চা, কোনটা কাকে দিতে হবে। জীর্ণ ঢোলা প্যান্ট ততোধিক ময়লা রঙচটা জামার ট্রেডমার্ক বাবলুর উজ্জ্বল চোখ দুটো ভীষণ মায়াবী। হামেশাই অফিসে চা দিতে আসত বাবলু, বড় অভাবী, প্রায়ই পাঁচ-দশ টাকা দিতাম, তাতে অভাব কি আর মিটত, বড় মায়া হত।‌ চা-বিলাসী রসিক বাঙালি কম নেই বিষ্ণুপুরে, শান্তিদার চায়ের টানে দূর-দূরান্ত থেকে খদ্দের আসত। স্পেশাল চা নয়, একটু কষা হালকা মিষ্টি সাধারণ চা শান্তিদা নিজে তৈরি করতেন, বাবলুও এই চা তৈরি করতে শিখে গিয়েছিল। ভাবতাম, এত শত শত খরিদ্দার, কে কোন চা পছন্দ করেন, মুহূর্তে বুঝে নিয়ে ঠিক চা-টি বাড়িয়ে দিত কি করে বাবলু। এক অন্য কৌশলে চা বানাতেন শান্তিদা, পরে বাবলু। চা দিয়েই বাবলু চিনে নিতে পারত খদ্দেরকে। খদ্দেরকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে ওর আলাদা লাভ, পুজোর পাব্বনি-টা ভাল পেত যে! শান্তিদা আর নেই, বাবলুও প্রয়াত, কিন্তু সেই চা আপন মহিমায় আজও মহীয়ান, শান্তিদার ছেলেরা বজায় রেখেছে মিঠেকড়া অপূর্ব চায়ের স্বাদ, আমরাও এতটাই অভ্যস্ত যে চায়ে চুমুক দিয়েই বলে দিতে পারি এটা শান্তিদার দোকানের চা। সত্যিই চা দিয়ে চেনা যায়,কার চা!

ঠিকানাটা বলতে পারেন – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্য রচনা]

মেট্রো শহরে ঠিকানা খুঁজে পেতে মফস্বলের মানুষ সমস্যায় পড়েন, সংশয়ে ভোগেন। চিকিৎসার কারণে, চাকরীর ইন্টারভিউ, পড়াশোনা কিম্বা অন্য কোন কারণে বড় শহর কলকাতা, দিল্লী, ব্যাঙ্গালোর এসব জায়গায় এখন প্রায় ছুটতে হয় অনেককেই। অজানা শহরে উৎকণ্ঠা হয়, যদি দুষ্ট চক্রের পাল্লায় পড়েন, পকেটমারী, ছিনতাই হয়, নানা অজানা বিপদের আশঙ্কা জাগে মনে। ঠিকানা খুঁজে বের করার ব্যাপারে সুরেশ ওর তুতোভাই নিমাইদার উপর নির্ভর করত, এক কথায় সুরেশের ফ্রেণ্ড-ফিলোজাফার এণ্ড গাইড। নিমাইদার সঙ্গে চাকরীর পরীক্ষা, চিকিৎসার জন্য গিয়েছে অনেক জায়গায়, প্রায়ই বলত সুরেশ, রাস্তায় ঠিকানা খুঁজে পেতে কি ধরণের লোকের কথা বিশ্বাস করা যায়, ও খুব ভাল বুঝত। এ অভিজ্ঞতা পরে আমার খুব কাজে লেগেছে কলকাতায় অবাঙালী কাউকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে ওরা বলতেন, ইঁহা সে সামনেই হ্যায়, বাঁয়ে মোড়কে বগলমে চলা যাইয়ে, মিল যায়েগা।“ হাড়ে হাড়ে বুঝেছি, ওই বগলমে, মোটেই খুব কাছে নয়! তখন ছাত্র সুরেশ, কলকাতায় ইউ.পি.এস.সি.‘র পরীক্ষা দিতে গিয়েছে, সঙ্গে নিমাইদা। সহজেই ঠিকানা খুঁজে পেয়ে গেল, সঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যথারীতি পরীক্ষা দেওয়া হয়ে গেল, কিন্তু বাড়ী ফেরার ট্রেন বা বাস নেই। হোটেলে থাকার অনেক খরচ; নিমাইদা পরিচিত এক ব্যবসায়ীর স্টোর রুমে থাকার ব্যবস্থা করে ফেলল। দুজনে নাইট শোতে সিনেমা দেখতে গিয়েছিল, ফেরার সময় ঠিকানা ভুল, মাঝরাতে সে কি হয়রানি! প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর ঠিকানায় পৌঁছে দেখি বিল্ডিং-এর গেট বন্ধ। কি ঝকমারি, দরজা ঠোকার আওয়াজে পুলিশ ছুটে এল। ভাগ্যিস তখন কেয়ারটেকার নেমে এসেছিল, অনেক অনুনয়-বিনয় করে সে যাত্রা পার পেয়েছিল, বলছিল সুরেশ। সেদিনকার সেই প্রথম কলকাতায় পরীক্ষা দেওয়ার স্মৃতিকথা এখনও মাঝে মাঝেই শেয়ার করে বন্ধু সুরেশ।

ফাঁদ – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্য রচনা]

কাজলীকে সুরেশের মা খুব ভালবাসতেন, খুব ছোটতে এসেছিল তো! ওর মা-ই ওকে যত্ন করেছেন, বড় করেছেন। ওদের চারটির মধ্যে ওই কাজলীকেই মা, শুধু মা কেন সুরেশের পরিবারের সকলেই খুব ভালবাসতেন ওর ঠাণ্ডা স্বভাবের জন্য। ধূসর মোলায়েম চকচকে সারা গা, গলা থেকে চোখের কোল পর্যন্ত কালো রঙ, তাই ওরা নাম দিয়েছিল কাজলী। বড় মায়াময় ওর কাজলপরা চোখগুলো। সুরেশ কথায় কথায় সেদিন বলছিল ওদের পরিবারের কিছু কথা, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুরেশ। ওর মনটাও সরল, তাই আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। মানুষ সহানুভূতি পেলে অনেক সময় মনের আবেগে ভেতরের কথা বলে, বুকের ভিতরটা হালকা হয়। বলছিল সুরেশ, ওদের পরিবারে তখন খুব অভাব ছিল, ওর বাবার খুব সাধারণ একটা সরকারী চাকরী, তার উপরে ওরা তিন ভাই,,দিদি আর বাবা-মা, মোট ছয় জনের সংসার। কষ্ট করেই লেখাপড়া শিখেছে সুরেশ, আমার সহপাঠী তো, দেখেছি খুব কাছ থেকে প্রতিদিন। ওদের কিভাবে ফাঁদে পড়তে হয়েছিল সুরেশের মুখেই শুনি বরং, ভাল লাগবে।, খুব কষ্টে, বড় হয়েছি, বলছিল সুরেশ, রীতিমত লড়াই করে, সংসারে অভাব ছিল, কিন্তু কষ্টে ছিলাম না আমরা। ঘরের জন্য মা নিজেই মুড়ি ভেজে নিতেন। সেজন্য ঝাঁটি-কাঠ কিনতে হতো। বিষ্ণুপুরের পাশের গ্রাম দালানডাঙা থেকে কাঠ দিতে আসত এক মাঝবয়সী মহিলা। লম্বা পাতলা ঢ্যাঙ্গা বলে ওকে ঢেঙি বলত পাড়ার সবাই। তা থেকেই মা ঢেঙিদি বলতেন, আমরা ঢেঙিমাসী বলতাম। প্রায় আসত, কাঠের বোঝাটা মাথা থেকে দুম করে ফেলত উঠোনে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে জল খেত, চা করে দিত মা, তারপর বেশ আয়েশ করে বিড়ি ধরাত। সুরেশ বেশ হেসেই বলছিল, আমরা অবাক হয়ে দেখতাম,কোন মহিলাকে বিড়ি খেতে দেখিনি তো, তাই। কাজলী তখন পূর্ণ গাভী। বাড়ির সব কাজ একা হাতে সেরে সন্ধেবেলায় মা আর পেরে উঠতেন না। সংসারের কাজ ছাড়াও গোয়াল পরিষ্কার একটা বড় কাজ। সুরেশ তখন খুব ছোট, ওর দিদিও করত, মায়ের সঙ্গে থেকে টুকটাক কাজ করে দিত, কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মা আর পারছিল না গরুর চর্চা করতে । তাই, বাড়িতে পালন করবে এই শর্তে গরুগুলো একে একে বিক্রি করা হচ্ছিল। ঢেঙ্গিমাসীর লোভ হয়েছিল বুঝতে পারতাম, কিন্তু মুখে বলতে পারেনি, সুরেশের মা যখন কাজলীকে বিক্রির প্রস্তাব দিল, ঢেঙিমাসী খুব খুশী, প্রস্তাবটা যেন লুফে নিল। এককথায় রাজি, কিছু বেশি টাকাই দিতে রাজি হল। মা যেন এরকমই চাইছিলেন। এত পরিচিত ঘনিষ্ঠ মানুষের ঘরে কাজলী ভালই থাকবে। আমরাও রাজি হলাম। ঢেঙি কিনে নিয়ে গেল কাজলীকে। আসলে মা ঢেঙীমাসীর কথার ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, নিজেও পারছি না, ঢেঙী মানুষটা ভাল, যদি কাজলীকে যত্নে রাখে, তবে যাক। খুব কষ্ট হয়েছিল মা’র, আমাদেরও। চোখে জল দেখেছিলাম মায়ের। কাজলী প্রথমে বুঝতে পারেনি, ওকে গলায় মাথায় হাত বুলিয়ে ঢেঙীমাসী নিয়ে চলে গেল। কাজলীকে দেওয়ার পর থেকে মা কেমন মনমরা হয়ে গেলেন, কথায় কথায় হা-হুতাশ করতেন। মায়ের মনমরা দেখে খুব খারাপ লাগত। আমরা বুঝতে পারছিলাম মায়ের কষ্ট। রাত্রে মায়ের ঘুম হত না, খাওয়া কমে আসছিল। এসব দেখে বাবা ঢেঙীমাসীর কাছ থেকে কাজলীকে ফেরত চাইতে বললেন মা-কে। বলা হোল, কিছুতেই রাজী তো হোলই না, তারপর থেকে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিল ঢেঙিমাসী। বেশি টাকার লোভ দেখানো হল কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। আর ফিরে পেলাম না কাজলীকে। বহুদিন পর সুরেশদের পাশের পাড়ায় রাস্তার ধারে কাজলকে মাঠে চরতে দেখেছিল। বলছিল সুরেশ, জানিস, কাছে গিয়ে গলায় হাত বোলাতে করুণ চোখে তাকিয়েছিল। ঘরে ফিরে মা-কে বলতেই বললেন, তাই! চল আমাকে নিয়ে! তখন সন্ধে হয়ে গিয়েছে। মাকে আশ্বস্ত করেছিলাম পরে দেখতে পেলেই ডাকব তোমায়, এই বলে। বহুকাল কাজলীর আক্ষেপ যায়নি সুরেশের মায়ের মন থেকে। এখন ওর মা নেই, কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়লে কাজলীকেও মনে আসে। বলতে বলতে চোখ ছল ছল করছিল সুরেশের। সুরেশদের এই কাহিনী শুনেছিলাম, ঘটনার প্রায় বছর দশেক পর; ফাঁদে পড়ে ওর মায়ের অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়েছিলাম আমরা, যতই আপন মনে করি না কেন, নিজের স্বার্থের বাইরে গিয়ে ত্যাগ করার মত মানুষ কমই থাকে। ফাঁদে পড়ার এরকম অজস্র উদাহরণ ছড়িয়ে আছে দুনিয়ায়।

এখন ডিজিটাল যুগ, অনলাইন সিস্টেমে সব কাজ হয়। হাতে হাতে মুঠোফোন, অনলাইন কেনাকাটা, ফাণ্ড ট্রান্সফার, বিভিন্ন অ্যাপে টাকা লেনদেন হয়, কম্পিউটার হ্যাকাররা সব শিক্ষিত বুদ্ধিমান, যত আঁটসাট হয় সিকিউরিটির কৃৎকৌশল, তত নতুন কায়দায় ফাঁদ তৈরী করে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে নেয় ওরা, পাসওয়ার্ড জানতে পারলেই বাজিমাৎ। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ যতই সাবধান করুন না কেন, হ্যাকারদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন বারে বারে আর বোকামি করে ফেলেন সরল মানুষ। চাকচিক্য দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নেওয়া, গয়না, টাকাপয়সা হাতানোর ঘটনা হামেশাই খবরে আসে। প্রেমের ফাঁদে পড়ে স্বামী-সন্তান ফেলে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও শিরোনামে আসে। নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধ, সততা, মানবিকতা এসব শব্দ বোকাদের জন্য, চালাক ঠকবাজদের ভাবনাটা এরকমই; যেভাবে হোক অর্থ উপার্জন, নিজে সুখে থাকার বাসনায় মত্ত লোভী মানুষ। পুরাণের গল্পগাথায় এরকম অনেক কাহিনী আমরা জানি। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে অপ্রতিরোধ্য পান্ডবদের পর্যদুস্ত করতে মরিয়া কৌরব সেনাপতি দ্রোণাচার্য বীর সেনাদের দিয়ে চক্রব্যূহ রচনা করেন। চক্রব্যূহে প্রবেশ ও নির্গমনের কৌশল অর্জুন জানতেন। অর্জুনের কিশোর পুত্র অভিমন্যু চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে জানতেন, কিন্তু নির্গমনের কৌশল জানতেন না। যুদ্ধের প্রয়োজনে অর্জুনের অনুপস্থিতিতে সাহসী বীর অভিমন্যু জীবন বাজি রেখে দ্রোণাচার্যের তৈরি ঐ ফাঁদে প্রবেশ করেন, বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে কৌরববাহিনী ছত্রভঙ্গ করে দেন। তখন অন্যায় পথে কৌরব সেনারা পিছন থেকে আক্রমণ করল, অভিমন্যু চক্রব্যূহ ভেদ করতে পারলেন না, নিরস্ত্র অভিমন্যুকে বধ করলেন কৌরব বীরপুঙ্গবের দল। এই চক্রব্যূহের কৌশল অনুসরণ করেই কাবাডি খেলায় বিপক্ষ দলকে ফাঁদে ফেলা হয়। আবার, ফাঁদ পেতেই মাছ ধরেন জেলে, তাই তো মাছে-ভাতে থাকে বাঙালী! ছিপের ফাৎনা নড়ার অপেক্ষায় বসে থাকার অভ্যাস তো কোন ছোটবেলাতেই ছিল আমাদের, টিকিট কেটে ছিপে মাছ ধরার ফাঁদ পেতেও বসেন শখের মৎস্যশিকারি। আসলে ফাঁদ পাতা আছে গোটা দুনিয়ায়, সাবধানতার যত পথ বের হয়, আরও নতুন কায়দায় চলে ফাঁদ পাতা। ফাঁদের কথায় আরও অনেক কিছু কথা মনে আসে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না, অবাক হই, ভাবনাতেও আসেনি যা সেটাই তাই ঘটে যায় অবলীলায়!

নেট দুনিয়ায় সরল সাধাসিদে মানুষকে ফাঁদে ফেলে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করে এক শ্রেণীর বুদ্ধিমান দুর্বৃত্ত। নানান কায়দায় মানুষকে ফাঁদে ফেলতে কৃতকৌশল উদ্ভাবন করে নতুন নতুন। আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল বিগত পাঁচ বছর আগেও, অনলাইন পরিষেবায় মানুষ এত যন্ত্রনির্ভর হয়ে উঠবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লম্ফন গতি, কোথায় নিয়ে যেতে চলেছে মানব সভ্যতাকে! মানুষের সৃষ্টিশীলতা কি এভাবে পথ হারাবে। ইন্টারনেট মাধ্যমে নগ্নভাবে নিজেকে তুলে ধরার কি উদগ্র বাসনা, ফাঁদে ফেলতে নানান রঙিন অ্যাপ, একটা চাইলে হাজারটা সুযোগ। নিজেকে জাহির করা, নিজের সৌন্দর্যকে সবার সামনে তুলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ। নানান ফাঁদে নানান স্বাদে নানান ভঙ্গিমায় মানুষের রূপের পসরা। জাল পাতা আছে আমার আপনার চারিদিকে, কোন কিছুই এখন গোপন নেই, কোন আব্রু নেই। ব্যক্তিগত তথ্য সরকারী নানান কায়দায় অন্তর্জালের সঙ্গে যুক্ত হতে হচ্ছে, নইলে বাঁচার উপায় নেই। আমার চাহিদা কি, কি খেতে পছন্দ করি, কি পরতে ভালবাসি, কি ধরণের ছবি, কি ধরণের লেখা ভালবাসি সব, সবকিছু নিমেষে চোখের সামনে হাজির। এমন সুকৌশলে মানুষের মনের কথা জেনে যাচ্ছে কি করে। টেকনোলজির কি উল্লম্ফন গতি, ফাঁদে ফেলার অন্তর্জাল ছড়িয়ে রয়েছে আমার চারদিকে। নিস্তার নেই। মোবাইল থেকে, ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে পালিয়ে যাবার উপায় কিছু জানা নেই। কত দিন পরিষেবা না নিয়ে থাকবেন। একসময় আত্মসমর্পণ করতেই হয় আমাদের মত গৃহী মধ্যবিত্ত ছা-পোষা মানুষকে। নিজের ঢাক নিজে পেটানোর কি নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ! এসব তো আগে কল্পনাই করা যেত না, মানুষের মনোজগতের উপর ইন্টারনেট এত দ্রুত প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই তো মাত্র দুবছর আগেও কোভিডের সময়, আমরা কখনো ভেবেছিলাম কি, একটা সাত-আট বছরের শিশু দিব্যি নিজে মোবাইলে স্কুলের দেওয়া লিঙ্ক খুঁজে নিয়ে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে, চ্যাট করছে, ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরীক্ষা দিচ্ছে। এটাও ফাঁদ কি সুন্দর বাচ্চা ছেলেটা মোবাইলে ক্লাস করছে, গর্ববোধ হয় বাবা-মায়ের। এত অল্প বয়সে আমরা কিছু জানতাম-ই না। কত এগিয়ে গিয়েছে আমার আপনার ভবিষ্যৎ। না: ! আপাত ক্ষতি কিছু দেখা যাবে না। কিন্তু এত গতি, এত রকেটীয় গতির শেষ কোথায়, কোথায় চলেছি আমরা এই ফাঁদ পাতা দুনিয়ায়। এখন ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং হচ্ছে যখন-তখন, অফিসিয়াল মিটিং কিম্বা দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে জরুরি আলোচনা কিম্বা ফোন-কনফারেন্সে আলোচনা, সশরীরে উপস্থিত না হয়েও সিনিয়ার ডাক্তারের নির্দেশে জটিল অস্ত্রোপচার কিম্বা ভি. সি. তে চাকরীর ইন্টারভিউ। কল্পনার অতীত ছিল আমার মায়ের এভাবে চলে যাওয়া। ক’বছর আগের কথা, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লেগে শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা, ডাক্তারবাবুর পরামর্শে বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হল,পরের দিনই বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে আই. টি. ইউ. বিভাগে। পাঁচদিন ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা হল, বুকে সর্দি জমেছিল। কড়া ডোজের স্টেরয়েড ইনজেকশন শরীরে আর নিতে পারলেন না মা। চলে গেলেন কল্পনার ওপারের জগতে।

ফাঁদ পাতা এই দুনিয়ায় এরকমই কল্পনায় না আসা অনেক কিছুই ঘটে চলে প্রকৃতির আঙিনায়, তারই মাঝে বয়ে চলে মানুষের জীবনপ্রবাহ। মনে হয় পৃথিবীটা কত ছোট হয়ে গিয়েছে। গোটা পৃথিবীটাকেই আমার ঘর মনে হয়। পৃথিবীকে আপন ঘর ভাবার মত মুক্তমনা বিশ্ব নাগরিক বোহেমিয়ান মানুষ পৃথিবীতে কম নেই। ড: ভূপেন হাজারিকার গানের লাইনগুলো মনে আসে, আমি এক যাযাবর, পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর……। দুই দশক আগেও আমরা যা ভাবতে পারতাম না, অজানা পৃথিবীটা এখন হাতের মুঠোয়! অজানা দেশ, অচেনা মানুষ, অচেনা সংস্কৃতি, অপরিচিত পরিবেশ এখন আর দূরে নেই, বিশ্বায়ন সেই দূরত্ব ঘুচিয়েছে। ভৌগোলিক কারণে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব না হলেও ভার্চুয়াল জগতে স্বচ্ছন্দেই ঘোরাঘুরি করতে পারি। এখন খুব সহজেই আমেরিকার ছাতা, জাপানের জুতা, ব্রিটেনের গাউন, থাইল্যাণ্ডের মোবাইল, কিম্বা চিনের ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য ঘরের দরজায় হাজির হচ্ছে। জি.আর.ই. – টোয়েফল দিয়ে কিম্বা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার সংখ্যাটা দুই দশক আগেও অল্প ছিল। ফ্রান্স কিম্বা বস্টনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের ফাঁকে লনে বসে ভিডিও-কলে আপনার ছেলে-মেয়ে আপনাকে দেখছে, কথা বলছে, আপনি যখন-তখন ভিডিও কনফারেন্সে মিটিং করছেন, তখন মনেই থাকে না মাঝখানের দূরত্ব কতটা। দুই দশক আগেই যখন গ্লোবালাইজেশন হয় নি, তখন এসব কল্পনাতেই আসত না। পৃথিবীটাকে এখন সত্যিই একটা বিশ্ব-গ্রাম মনে হয়। বিশাল পৃথিবীর দিগন্ত ব্যাপ্ত আকাশ এক ক্ষুদ্র পরিসরে মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের খবর, ছবি,ভিডিও নিমেষে চলে আসছে হাতের মুঠোয়। মনে হচ্ছে আমরা বৃহত্তর জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্রমে সংকুচিত পরিধির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছি। পৃথিবীর এখন এটাই সংকট। আমরা তো বিশাল পৃথিবীটাকে হাতের তালুর মধ্যে আমলকীর মত হয়ে যাক, ভাবতে পারি না। আকীর্ণ, অনন্ত অফুরান পৃথিবীকে পরিশ্রম করে জয় করতে চাই। যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ কেমন করে ঘুরছে দেখতে চেয়েছেন কাজী নজরুল তার সংকল্প কবিতায়। অজানাকে জয় করার আনন্দ আমরা পেতে চাই কিন্তু কোন ফাঁদে পড়তে চাই না। চাই না বললেই বা ছাড়ছে কে ? কিন্তু সেলফোনে তো বিশ্ব জয় করা যায় না। সেলফোন ক্রমশ: জড়িয়ে ফেলছে জীবনের জটিল ঘুলঘুলাইয়ার ঘূর্ণাবর্তে। পৃথিবীর আবর্তন গতিতে ঘূর্ণায়মান আমরা সবাই। মহাবিশ্বের মহা-ফাঁদে পড়ে আমরা হাঁকপাঁক করছি। এর থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই।

জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar

Valentine Day Speciality | ভালোবাসা দিবস | Top New Bengali Article 2023

Param Gyan O Sadhan Tathya | পরমজ্ঞান ও সাধন তত্ত্ব | New Article 2023

Ananta Bikeler Rupkathara | অনন্ত বিকেলের রূপকথারা | New Bengali Story 2023

Natun Bangla Galpo 2023 | গল্পগুচ্ছ | দেবযানি দত্ত প্রামাণিক | New Bengali Story

New Best Story Blogs | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Best Story Blogs 2023 | Shabdodweep Best Story Blogs | Shabdodweep Writer | Best Story Blogs in India | World’s Best Story Blogs | Best Story Blogs in Online | Online Bangla Hasir Golpo | Free Best Story Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Best Story Blogs in English | Online Bangla Hasir Golpo 2023 pdf | Full Online Bangla Hasir Golpo | New Full Bangla Galpo | Online Bangla Hasir Golpo – Episode | Online Bangla Hasir Golpo Series | Horror Adult Story Video | Horror Adult Story Audio | Full Bangla Galpo Audio | Full Bangla Galpo Video | Online Bangla Hasir Golpo Netflix | Full Bangla Galpo Read | Full Bangla Galpo Download | Shabdodweep Competition

Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023 | Trend Full Bangla Galpo | Recent Full Bangla Galpo | Top Full Bangla Galpo | Popular Full Bangla Galpo | Best Full Bangla Galpo | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Online Bangla Hasir Golpo | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Online Bangla Hasir Golpo Download | Online Bangla Hasir Golpo – audio | Horror Adult Story | Horror Adult Story Collection | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Online Bangla Hasir Golpo – audio | Online Bangla Hasir Golpo – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Online Bangla Hasir Golpo | Online Bangla Hasir Golpo in mp3 | Shabdodweep Magazine

Shabdodweep Web Magazine | Bengali Social Story Writer | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Poetry | Natun Bangla Galpo 2023 | Online Bangla Hasir Golpo book | Horror Adult Story Ebook | Horror Adult Story in Bengali | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Bengali Social Story in pdf | Top Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Natun Bangla Galpo 2023 video series | Online Bangla Hasir Golpo – web series | Natun Bangla Galpo 2023 – Latest version | Bengali Social Story Full Download | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | web video – Natun Bangla Galpo 2023 | web reader – Online Bangla Hasir Golpo

pdf reader – Online Bangla Hasir Golpo | pdf publisher – Natun Bangla Galpo 2023 | Bengali Social Story Translation | Shabdodweep Publisher | Shabdodweep Bengali Social Story | Shabdodweep Publisher 2023 | Shabdodweep Video Publisher | Shabdodweep Audio Book | Bengali Horror Adult Story | Best Selling Horror Adult Story | Shabdodweep Video Book | bengali story | bengali story books for child pdf | bengali story books for adults | bengali story books | bengali story books for child | bengali story books pdf | bengali story for kids | bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short bengali story definition | short story english | short story for kids | Best Selling Online Bangla Hasir Golpo

Leave a Comment