বারিদ বরন গুপ্ত – সূচিপত্র [Bengali Article – Goddess Dakshina Chandi]
দক্ষিণাচন্ডী এক বিরল দেবী – বারিদ বরন গুপ্ত [Goddess Dakshina Chandi]
পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমায় মন্তেশ্বর ব্লকের অন্তর্গত কুসুম গ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ! বলতে গেলে নদী কেন্দ্রিক সভ্যতা পত্তনের যুগে এই জনপদ গড়ে উঠেছিল! প্রাচীন যুগে এর অদূরেই ছিল মামুদপুর নদী বন্দর! আর এই নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলগুলো বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। আর এই জনপদের অদূরেই ছিল হাতিপোতা ডাঙ্গা যা প্রাচীন সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক ঐতিহ্য বহন করছে! আর এই হাতিপোতা ডাঙ্গা অনতিদূরে ছিল সোনাতলী ঘাট, যা, নন্দন ঘাটের সাথে সংযুক্ত ছিল! আর আছেন কুসুমেশ্বর শিব যা পাল যুগের ঐতিহ্য স্মরণ করাচ্ছে! শুধু তাই নয় এই জনপদে কয়েকশো বছর ধরে বিরাজ করছেন বিরল দেবী দক্ষিণা চন্ডী, যা একদিন পূর্বস্থলী দোগাছিয়ার রায়চৌধুরী পরিবারের গৌরবের সাক্ষী হয়ে সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায়ের সাধনায় এই জনপদে হয়ে উঠেছিলেন তান্ত্রিক দেবী দক্ষিণা চন্ডী, অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্ব থেকে যা আজও এই দেবী গ্রাম্য দেবী হিসেবে স্বমহিমায় বিরাজমান!
এই জনপদের প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বেশকিছু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের দিকে চোখ রাখতেই হয়! কুসুমেশ্বর শিবের কথা তো আগেই বলেছি যা পাল যুগের ঐতিহ্য বহন করছে! পাল যুগের শেষের দিকে অর্থাৎ রামপালের সময়কালে এখানে দ্বোরপবরধন বা বর্ধন নামে এক সামন্ত রাজার কথা জানতে পারা যায়, যিনি রামপাল কে বরেন্দ্র উদ্ধারে সাহায্য করেছিলেন একথা সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত গ্রন্থ থেকে জানা যায়! ডক্টর পঞ্চানন মন্ডল মনে করেন পাল যুগের কৌশম্বি পরবর্তীকালে কুসুমকলি বা কুসুম গ্রাম নামে পরিচিত লাভ করে! সেন যুগে এই অঞ্চলগুলো দীর্ঘ নগরীর সাথে সংযুক্ত হয় বলে মনে করা যেতে পারে! তবে একথা সত্য যে খড়ি নদীর অববাহিকায় বানেশ্বর ডাঙ্গা সাঁওতাল ডাঙ্গা এবং এই জনপদের অদূরেই হাতিপোতাডাঙ্গার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এর ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি এইসব অঞ্চলের ইতিহাস প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন! এই অঞ্চলে আদিম জনগোষ্ঠী বনচারী জীবন থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজের রূপান্তর ঘটিয়েছিল! পাল ও সেন যুগে কৃষি এবং শিল্প উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছিল! শোনা যায় এই অঞ্চলগুলি থেকে পাঠ, ধান, আখের গুড় এবং তাঁত বস্ত্র নিয়মিত নন্দন ঘাট বন্দর হয়ে দাঁইহাট হুগলি ত্রিবেণী তাম্রলিপ্ত প্রভৃতি বন্দরে পৌঁছে যেত! যাই হোক মুঘল যুগে এই অঞ্চল ইসলাম সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে! এ অঞ্চলে ছিল সম্ভ্রান্ত আয়মা পরিবারের বাস, শোনা যায় মিঁয়া এবং কাজী পরিবারের বর্ধমান এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমিদারি ছিল! আরো শোনা যায় মিঁয়া পরিবার ছিল শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক! মধ্যযুগ এই মিঁয়া পরিবারের এক সুযোগ্য সন্তানকে মল্লিক সংগীত জগতে সুনাম অর্জন করেছিলেন! তার স্মৃতিচারণায় জানা যায় তিনি এই অঞ্চল থেকে নদীপথে কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন! তারপর তো ইতিহাস!
এই অঞ্চলের প্রাচীনত্ম এবং ঐতিহ্য নিয়ে এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে বলে শেষ করা যাবে না! এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে।এবার ফিরে আসি দেবী দক্ষিণাচন্ডীর উৎপত্তি এবং বিবর্তন নিয়ে! প্রত্যেক বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে খুব ধুমধামের সাথে এই দেবীর বার্ষিক আরাধনা হয়! সময়ের সাথে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে দেবী দক্ষিণা চন্ডী আজও আপন মহিমায় কুসুম গ্রাম জনপদে বিরাজ করছেন।
এই বিরল দেবীর উৎপত্তির ইতিহাসে সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায় এবং রেজ বংশোদ্ভূত জনৈক কার্তিক চন্দ্র রেজের নাম জড়িয়ে আছে! উল্লেখ্য যে কার্তিক চন্দ্র রেজ ছিলেন পূর্বস্থলীর দোগাছিয়ার সম্ভ্রান্ত জমিদার রায়চৌধুরী পরিবারের এক বিশ্বস্ত দেওয়ান! তারপর তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনকালে তিনি উচ্চপদস্থ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন বলে জানা যায়! উল্লেখ করা যায় যে পূর্বস্থলী রায় চৌধুরী পরিবারের এস্টেটের দেওয়ান থাকাকালীন কার্তিক চন্দ্র রেজ এই দক্ষিণাচন্ডী শিলা মূর্তি হস্তগত করেন! দোগাছিয়া থেকে সামান্য দূরে খড়ি নদীর সাবেক খাতছিল, তখন অবশ্য খড়ি দামোদর নামে পরিচিত ছিল, যেখানে গঙ্গার সাথে খড়ির মিলন ক্ষেত্র ছিল, এখনো দামোদার পাড় গ্রাম তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে,ষোড়শ শতকে সেখানেই ছিল এই দক্ষিণচন্ডী মন্দির! এখন সেই জায়গা বর্তমানে দক্ষিণ চন্ডিপুর নামে পরিচিত! আরো জানা যায়, ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রায়চৌধুরী পরিবার মদনমোহন, গোপীনাথ, কৃষ্ণচন্দ্র এবং রাধামাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন! তারপরে রায় চৌধুরী পরিবার বৈষ্ণব ভাবাদর্শে প্রভাবিত হন! সেই পরিপ্রেক্ষিতে রায়চৌধুরীর পরিবার দেবী দক্ষিণা চন্ডী পূজার আনুষঙ্গিক উপাচার এবং নিদান সমস্যার জন্য হয়তো তাদের বিশ্বস্ত দেওয়ান কার্তিক চন্দ্র রেজের হাতে এই দেবীকে সমর্পণ করেন। এরপর রেজ মহাশয় দোগাছিয়া থেকে এই বিরল দেবীকে এনে কিছুদিনের জন্য মাইচ পুকুরে রাখেন! উল্লেখ্য যে কার্তিক চন্দ্র রেজ মহাশয় সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন! রেজ মহাশয় জানতেন যে সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায় ছাড়া দক্ষিণচন্ডীর আরাধনা কারো পক্ষে সম্ভব নয়! তাই তিনি এই বিরল দেবীর আরাধনার ভার সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায় হাতেই অর্পণ করেন! উল্লেখ্য তন্ত্রসাধক কৌলাশ মুখোপাধ্যায় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন!
আরো উল্লেখ করা যায় যে কৈলাস মুখোপাধ্যায় ছিলেন এই জনপদের এক নামী তন্ত্রসাধক! তিনি এই অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ন-পুকুর পাড়ে আউসে ডাঙ্গায় তার সাধন ক্ষেত্র গড়ে তোলেন! তখন আউসেডাঙ্গা ছিল ঘন জঙ্গলপূর্ণ! এখানেই তিনি পঞ্চমুন্ডির আসন পেতে নিত্য কালী সাধনা করতেন! শোনা যায় পরবর্তীকাল ওখানেই এই দেবী নব রূপে উদ্ভাসিত হয়ে দক্ষিণচন্ডী রূপে এই অঞ্চলে অভিভূত হন! শোনা যায় কৈলাস মুখোপাধ্যায় আজীবন এই আউসা ডাঙ্গায় দেবীর আরাধনায় মত্ত ছিলেন! এখানেই তিনি দেবীর ধ্যান মন্ত্র এবং পূজার বিধি তৈরি করেন বলে জানা যায়।
“অষ্টভূজা চতুর্মুখং অষ্ট প্রহরণ ধারিনীং!
মহাদেবিং মহা মায়া দনুজদর্প নিসুদিনীম!!
রণ চন্ডী মহাঘোরাং যোগিনী কোটি পরিবৃতাম!
রক্ত বস্ত্র পরিধানাং শ্মশান লয়ে বাসিনিম!!
অধস্তাম পদাম্বুজে শত দল সুশোভিনীং
কুসুম্বে কুসুমেশ্বর শিব সহিতাম বিরাজিতাম
অভয়ং বরদনৈশ্চব দক্ষিণা চন্ডিকায়াং বিচিন্তয়েত!!
উল্লেখ করা যায় যে অষ্টাদশ শতকের শেষ লগ্নে, বাংলায় ১১৭৯ খ্রিস্টাব্দে কুসুমেশ্বর শিবগৃহে এই দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়! বর্তমানে এই কুসুমেশ্বর শিব গৃহই দেবীর গর্ভ গৃহ! এই কুসুমেশ্বর শিব নিয়ে এক অলৌকিক কাহিনী জড়িয়ে আছে! শোনা যায় কালাপাহাড় যখন হিন্দু দেবদেবী এবং মন্দির ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠেন তখন কুসুমেশ্বর শিব ও রেহাই পায়নি, শিবকে ধ্বংস করতে এলে দেবাদিদেব ভূমিতে অন্তর্হিত হয়ে যান! তারপর সাধক কৈলাস মুখোপাধ্যায় কে স্বপ্নাদেশ দেন! সাধক মুখোপাধ্যায় কুসুমেশ্বর শিবের ঘরে এসে দেখেন অষ্ট ধাতুর অদ্ভুত এক খরগো! সেই অষ্ট ধাতুর খর্গ আজ ও কুসুমেশ্বর শিব হিসেবে আপন মহিমায় বিরাজমান! এই গর্ভগৃহে দেবীর সেবাইত মুখোপাধ্যায় এবং তাদের দৌহিত্র ব্যানার্জি এবং চ্যাটার্জীরা দীর্ঘকাল ধরে দেবীর নিত্য সেবা এবং আরাধনায় মগ্ন আছেন! এই দেবীর পৌরোহিত্যে দীর্ঘকাল ধরে যুক্ত আছেন চক্রবর্তী বংশীয় পুরোহিতরা!
এই দেবী দক্ষিণা চন্ডী পূজায় আজ আর্য এবং অনার্যের আপস মীমাংসার সূত্র চোখে পড়ল। আমি আগেই বলেছি যে অনার্যরা অত সহজে তাদের দেবীকে ছাড়তে চায়নি! আমার মনে হয় বর্ধমান জেলায় আর্যীকরন হওয়ার আগে একটা আপস মীমাংসা সূত্র কার্যকরী হয়েছিল! সেই সূত্র আমি দেখেছি ক্ষীরগ্ৰামের যোগাদ্যা আরাধনায়, মন্তেশ্বরের চামুন্ডা আরাধনায়, জামালপুরের বুড়রাজের আরাধনায়, করন্দার কন্ধেশ্বরীর আরাধনায়, তারা শুশনার মা তারার আরাধনায়! আজকে চাক্ষুষ দেখলাম কুসুমগ্ৰামে দেবী দক্ষিণাচন্ডীর আরাধনার ক্ষেত্রে। অধিবাসের দিন দেবী পুরোপুরি মুখোপাধ্যায় বংশের হাতে থাকেন! দ্বিতীয় দিন পূজার পর দেবী ক্ষত্রিয়দের দখলে চলে যায়। অর্থাৎ কাত্তিক রেজ বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা দেবীকে মূল গর্ভ গৃহ থেকে মাইচতলা হয়ে সাধনতলায় দেবীর অধিষ্ঠানে নিয়ে যান! বর্তমানে শরিকি বিবাদের জেরে অর্থাৎ রেজ এবং রায় পরিবারের দেবীর সম অধিকারকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ জামানায় কোর্ট কাছারি পর্যন্ত হয়ে গেছে। শোনা যায় কোর্ট থেকে সেই অনার্য রীতিই বহাল আছে। সরিকি বিবাদ এর জেরে যদিও বর্তমানে রেজ এবং রায় পরিবার দ্বিতীয় দিনের দেবীর পরিভ্রমণে আর অংশগ্রহণ করেন না সেই কাজ মুখোপাধ্যায় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের হাতেই অর্পিত হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় দিনে দেবী পুরোপুরি অনার্যদের হাতে চলে যায়। দেবীকে বাগদী বাউরি দুলে প্রভৃতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা চতুর্দোলা করে গ্রাম পরিভ্রমণ করেন, বিভিন্ন রয়ে রয়ে দেবীর পূজাপাঠ হয়, ছাগ, মেষ ,শুয়োর ইত্যাদি বলিদান সম্পন্ন হয়!
এই দেবীর বর্তমানের পুরোহিত শুভ্রাংশু চক্রবর্তী আমায় জানালেন যে পূজার আগের দিন অর্থাৎ সপ্তমীর দিন দেবীর অধিবাস! এই দিন গর্ভগৃহে ফুলমাল্য নৈবেদ্য সহকারে দেবীকে জাগরিত করা হয়! এই দিন দেবীর উদ্দেশ্যে গর্ভ গৃহে ছাগ বলিদান উৎসর্গ করা হয়! পূজার দিন অর্থাৎ শুক্লা অষ্টমী তিথিতে সকাল সাতটা থেকে একটা পর্যন্ত দেবীর উদ্দেশ্যে পূজা হোম আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এরপর চারটে পর্যন্ত দেবীর বিশ্রাম পর্ব চলে! চারটের পর মুখোপাধ্যায় বংশোদ্ভূত সেবাইতরা বর্তমানে দেবীকে গ্রাম পরিভ্রমণ করান! সন্ধ্যার আগেই দেবীকে মূল গর্ভগৃহ সন্নিকটে সাধন তলায় নিয়ে আসা হয়! এখানেই রয়েছে দেবীর বাৎসরিক পূজার মন্দির! এখানে পূর্বনির্ধারিত আনুষঙ্গিক পূজা এবং ক্রিয়া-কলাপের পর দেবীর উদ্দেশ্যে প্রথমে মহিষ বলিদান, পরে শুকর মেষ এবং ছাগ বলিদান হয় সম্পন্ন হয়। এটিও প্রাচীন অনার্য গোষ্ঠীর এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য! এরপর দেবীকে আবার মূল গর্ভ গিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়! এরপর সামান্য বিশ্রাম নিয়ে দেবী মুখোপাধ্যায় এবং দৌহিত্রদের অর্থাৎ চ্যাটার্জি ব্যানার্জিদের গৃহে দেবীর ভোগ আরতি হয়! এরপর দেবী মূল গৃহে ফিরে যান!
তৃতীয় দিন অর্থাৎ সকাল সাতটা থেকে অনার্য বংশোদ্ভূতরা চতুর্দোলায় করে দেবীকে গ্রাম পরিভ্রমণ করান! গ্রামের নির্দিষ্ট স্থানে দেবীর পূজা সম্পন্ন হয়! এদিনও অনার্য রীতি মেনে ছাগ, মেষ, শুয়োর বলিদান হয়! সন্ধ্যার আগেই দেবীকে আবার মূল গর্ভে গিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়! এই ভাবেই দেবীর বাৎসরিক আরাধনা সম্পন্ন হয়! দেবী চণ্ডী অনার্য দেবী! দীর্ঘকাল এই দেবী অনার্য গোষ্ঠীর অধিকারেই ছিল! প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে এই দেবীর কোন উল্লেখ নেই! আচার্য সুকুমার সেনের মতে চন্ডী শব্দটি অনার্য চান্ডী (Chandi)থেকে এসেছে। Uraon, birhor প্রভৃতি অনার্য গোষ্ঠীর দেবী এই চান্ডী! মনে করা হয় এই অনার্য গোষ্ঠীগুলি নিরুপদ্রব পশু শিকারের উদ্দেশ্যে এই চান্ডী দেবীর আরাধনা করেছিল! বিহারের ছোটনাগপুর-এর কোলহান অঞ্চলে এই আদিবাসীদের সন্ধান মেলে! খুব সম্ভবত এসব অঞ্চলের বিরহোর, ওরাও প্রভৃতি উপজাতিগোষ্ঠীর কৌমদেবী ছিলেন চান্ডী! বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক শরৎচন্দ্র রায় ছোট নাগপুরের কোলহান অঞ্চলে ক্ষেত্র গবেষণায় ওরাও বিরহোর প্রভৃতি অনার্য গোষ্ঠীর দেবী চাণ্ডীর আরাধনার কথা উল্লেখ করেছেন! খুব সম্ভবত এসব গোষ্ঠী তারপর উড়িষ্যা বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে! তারপরেই প্রাচীন রাঢ়ের অন্যান্য উপজাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এই দেবীর আরাধনা শুরু হয়! বর্ধমান হলো প্রাচীন-রাঢ়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র! বর্ধমানের পুরা তাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মনে করা যেতে পারে যে এইসব অঞ্চলের ইতিহাস সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন! এখানে দীর্ঘদিন অনার্য গোষ্ঠীগুলি আপন সংস্কৃতির মধ্যেই বেঁচে ছিল! তারা চন্ডী মনসা শীতলা ধর্ম প্রভৃতি দেব দেবীর উপাসনা টোটেম সংস্কৃতির মধ্যেই আবদ্ধ রেখেছিল! বর্ধমানে আর্যীকরন সম্পন্ন হয় সেন বা সেন পরবর্তী যুগে! খুব সম্ভবত ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যেই
দেবী চণ্ডী ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির মধ্যে এসে যায়! তুর্কি আক্রমণের পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ প্রাকচৈতন্য যুগে সমাজে যে টানা পোড়ন চলেছিল সেই নিরিখে সমাজের নতুন বিন্যাস শুরু হয়েছিল , সেই সময় পর্বে দেবীচণ্ডী সহ অন্যান্য অনার্য দেবদেবী বৃহত্তর সমাজ সংস্কৃতির আঙিনায় জায়গা করে নেয়! রচিত হতে থাকে মঙ্গল কাব্যের মাহাত্ম্য!
দেবী চণ্ডী এক ভয়াল দেবী! তবে তিনি একদিকে যেমন প্রতিহিংসা পরায়ন তেমনি অন্যদিকে মঙ্গল কারী জননী! কুসুম গ্রামের দেবী দক্ষিণাচন্ডী কালো কষ্ঠিক পাথরের প্রায় সোয়া এক ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট চতুর্মুখা, অষ্টভুজা! এই বিরল মূর্তি বঙ্গে খুব একটা দেখা যায় না! মূর্তিটি পাল যুগের শেষ পর্বের শিল্প ভাস্কর্যের নিদর্শন বলে মনে হয়! আমি ক্ষেত্র গবেষণায় মন্তেশ্বর ব্লকের দেনুর গ্রামে বিক্রম চন্ডী, কষা গ্রামের মুখার্জিদের মঙ্গলচন্ডী, এবং দুয়ারী গ্রামের মল্লিকদের মঙ্গলচণ্ডীর মূর্তি দেখেছি, এই মূর্তিগুলি সবই প্রায় পাল যুগের শেষ পর্বের শিল্প ভাস্কর্যের নমুনা! পাল যুগের শেষ পর্বে বৌদ্ধ হিন্দু ধর্মের সমীকরণের যে রূপরেখা তৈরি হয়েছিল তা এই দেবী মূর্তিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে! বৌদ্ধ তান্ত্রিকদের উগ্র হিংস দেবীর সঙ্গে হিন্দু পুরাণের মঙ্গল কামিনী স্নিগ্ধ রূপের সংমিশ্রণ যুব ধর্মের প্রভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই শিল্পকর্মের মধ্যে! মূর্তি নির্মাণে শিল্পীর অন্তর্দৃষ্টি এবং যুগ সচেতনতা যথেষ্ট কাজ করেছিল বলে আমার মনে হয়! আরো উল্লেখ্য যে শিল্পী তার নিপুণ ছেনিতে এই দক্ষিণা চণ্ডীর প্রথম রূপে দেবীর উগ্রতাকে যেমন তুলে ধরেছেন, আবার তেমনি দ্বিতীয়রূপে দেবীর কল্যাণকামী স্নিগ্ধ মাতৃরূপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন! এখানেই শিল্পীর সার্থকতা, তাই কুসুম গ্রামের দক্ষিণা চণ্ডী মূর্তিটি উগ্র ও স্নিগ্ধ দুই রূপেই উল্লাসিতা!
Mode FIELD STUDY-19, on 4th and 5 th August 2023
Goddess Dakshina Chandi Sources: Sandeep Mukherjee, Subroto Mukherjee, Sudeep Mukherjee, Sanjeev Mukherjee, Mukherjee, Bappaditya Banerjee, Buddhadeep Chatterjee and Shubhro Mukherjee
বারিদ বরন গুপ্ত | Barid Baran Gupta
New Travel Story 2023 | লাচুং-নাথালু’র সীমান্ত ছুঁয়ে | জয়ন্ত কুমার সরকার
New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩
New Bengali Article 2023 | মূল্যহীন, তবুও : পুস্তক প্রসঙ্গে
Bengali Article 2023 | ভৃগুর শক্তিপীঠ ও বড়োমা :: বিল্লপত্তন থেকে বড়বেলুন
bengali article writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | writing competition hong kong | writing competition game | writing competition essay | writing competition australia | writing competition prizes | writing competition for students | writing competition 2022 | Goddess Dakshina Chandi Follows | Goddess Dakshina Chandi Path | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | Goddess Dakshina Chandi Photo | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali article rewriter | article writing | bengali article writing ai | bengali article writing app | bengali article writing book | Goddess Dakshina Chandi – Online Article | bengali article writing description | bengali article writing example | article writing examples for students | Viral Video – Goddess Dakshina Chandi | Goddess Dakshina Chandi Source | bengali article writing format | Goddess Dakshina Chandi News | bengali article writing generator | article writing global warming | article writing igcse | Ebook Goddess Dakshina Chandi | bengali article Goddess Dakshina Chandi | article writing jobs for students | article writing jobs work from home | article writing lesson plan | Goddess Dakshina Chandi Puja | article writing on global warming | bengali article writing pdf | article writing practice | Goddess Dakshina Chandi Ebook | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Goddess Dakshina Chandi Idol | Definite Article | Bengali Article Writer | Short Bengali Article | Long Article | Goddess Dakshina Chandi in pdf | Trending topic – Goddess Dakshina Chandi | Galpoguccha | Article Goddess Dakshina Chandi | Goddess Dakshina Chandi History | Goddess Dakshina Chandi in mp3 | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder