প্রবোধ কুমার মৃধা – সূচিপত্র [Bengali Article]
ভালোবাসা দিবস – প্রবোধ কুমার মৃধা [Valentine Day Speciality]
‘ভালোবাসি, ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে
বাজায় বাঁশি।’
ভালোবাসা জল-স্থল-অন্তরিক্ষ, বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। পৃথিবী যে তার সকল বস্তুকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে সেও এই ভালোবাসার টানে। চন্দ্রের আকর্ষণে সমুদ্র আন্দোলিত হয় সেও বুঝি-বা এই ভালোবাসার কারণে। কেন না, ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে’।
প্রেম শব্দটি কানে আসা মাত্রেই আমরা অনেকে ‘রে রে’ করে উঠি। সেটি আমাদের জ্ঞানের অপ্রতুলতা এবং সামাজিক চেতনার অভাব। প্রেমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,
‘সম্ঙ্ মসৃনিত সান্তো মমত্বাতি শয়াঙ্কিতঃ।
ভাবঃ স এব সান্দ্রাত্বা বুধৈঃ প্রেমা নিগদ্যতে।।’
‘যাহার দ্বারা অন্তঃকরণ সম্যকরূপে নির্মল হয়, যাহা অতিশয় মমতাযুক্ত এবং যাহা অতিশয় ঘনীভূত, এইরুপ যে ভাব, তাহাকে পন্ডিতগণ প্রেম কহিয়া থাকেন।’
যুগে যুগে কালে কালে এই প্রেম শত প্রতিকূলতা প্রতিহত করে আপন মহিমার বিজয় নিশান তুলে ধরে অমর হয়ে আছে। অমর হয়ে আছেন শিরি-ফরহাদ, লায়লা-মজনু, রামী-চন্ডীদাস প্রমূখ আরো অনেকে। ভালোবাসা দেশ-কাল, জাতি-ধর্মের গন্ডি মানে না, কোন কিছুরই অপেক্ষায় থেমে থাকে না। দুটি হৃদয়ের মিলন-মাধুর্যে পূর্ণতা পায় দুটি জীবন, তবু ও তার মধ্যে পেয়ে হারাবার অজানা বেদনায় শঙ্কিত হয়ে পড়ে মন। ‘হারাই হারাই সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।’ এটি প্রকৃত ভালোবাসার সহজাত বৈশিষ্ট্য, যা বিরহের রসে জারিত।
‘তাই যত কাছে পাই তত এ হিয়ায়
কি যেন অভাব রহে।’
এই বিরহ এক জনমের নয়, ভালোবাসার আত্মনিবেদন জন্মান্তরের গ্ৰন্থি বন্ধনে আবদ্ধ।
‘তোমারেই যেন ভালো বাসিয়াছি শতরূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।’
কবি রবীন্দ্রনাথ | ভানু সিংহের পদাবলী | বৈষ্ণব পদাবলী | রাধা ও কৃষ্ণ
আবার ভানু সিংহের পদাবলীর তত্ত্ব ভাবনায় নওল কিশোর কবি রবীন্দ্রনাথ বলতে চেয়েছেন যে, আমরা যাকে ভালোবাসি কেবল তারই মধ্যে অনন্তের পরিচয় পাই। এমন কি জীবের মধ্যে অনন্তকে অনুভব করার অপর নাম ভালোবাসা।
বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চতুর্দশ শতকে। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধা-কৃষ্ণের ভালোবাসা। রাধা ও কৃষ্ণ পরষ্পর পরষ্পরকে কাছে পেতে চায়, হিয়ার পরশ লাগি দোঁহের হিয়া কাঁদে। কিন্তু উভয়ের মাঝে ব্যবধান রচনা করে অপার যমুনা বহে। শ্রীকৃষ্ণ হলেন সৎ-চিৎ-আনন্দের মূর্তিমান বিগ্ৰহরূপ পরমাত্মা।শ্রীরাধা তাঁরাই প্রকাশাত্মিকা শক্তিরূপা জীবাত্মা। এই পরমাত্মা ও জীবাত্মার মিলন বিরহের তত্ত্বই বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উপজীব্য।
তাইতো আবার ফিরে যেতে হয় কবির কথায়, ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে।’ এই প্রেমের ভুবনে আছে অনেক কাঁটার জ্বালা, অনেক নির্যাতন, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, কলঙ্ক, ত্যাগ-তিতিক্ষা। তবু প্রেম আপনার নাহি ছাড়ে পথ।
প্রেমের মাস ফেব্রুয়ারি। ‘আসে বসন্ত ফুল বনে’। ধরার চিত্ত হয় উতলা। মন্দ মন্দ মলয় মারুতের সাথে ভেসে আসে সুরভিত কুসুমের গন্ধ। বসন্ত পঞ্চমীর রাগে রঞ্জিত হয় প্রেমিক প্রেমিকার অন্তর, ভালোবাসার পাপড়ি মেলে পাখা। এই ভালোবাসাকে আনুষ্ঠানিক উদযাপন করার দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে। যার নাম দেওয়া হয়েছে “ভ্যালেনটাইন’স ডে” বা বিশ্ব প্রেম দিবস।
ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রকৃত ইতিহাস | প্রেমের দিবস | ভালবাসা দিবস কেন পালন করা হয়?
নাম করণের কারণ
ফিরে যাওয়া যাক উক্ত তারিখ এবং দিবসটির নাম করণের উৎস-ইতিহাস সন্ধানে।
২৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেনটাইন (Saint Valentine) নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী তথা স্বনাম খ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। ধর্মপ্রচারের পাশাপাশি তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠান ও করতেন।
রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিশ্বাস করতেন যে অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিত সৈন্যদের অপেক্ষা অধিক দক্ষ, তাই তিনি আইন তৈরি করে সেনা বাহিনীতে চাকুরিরত যুবকদের বিবাহ বন্ধ করে দেন। ধর্ম যাজক সেন্ট ভ্যালেনটাইন এই আইনের কথা জানতে পেরে এটিকে অন্যায় বলে অভিহিত করলেন, এবং যে সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাদের তিনি গোপনে বিবাহের ব্যবস্থার কাজ চালিয়ে যেতে থাকলেন। কিন্তু অবিলম্বে সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ধর্ম প্রচার করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে কারারুদ্ধ করেন। কারণ তখন রোমে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। ভ্যালেনটাইনের মৃত্যু দন্ডের আদেশ হয়। দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি।
২য় মত হলো, সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ধর্মপ্রচারকের মামলায় অভিযুক্ত করে কারাবাসে পাঠানো হয়। কারাবাস কালে এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে তাঁর চিকিৎসার জাদুতে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। এতেই অনুপ্রাণিত হয়ে মেয়েটির পরিবার সহ অনেকেই খ্রিষ্টধর্ম গ্ৰহণ করেন এবং সেন্ট ভ্যালেনটাইনের সঙ্গে মেয়েটির একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। খবরটি রাজার কানে পৌঁছায়। আইন অমান্য করে ধর্ম প্রচারের অপরাধে ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেনটাইন মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির শেষে লেখা ছিল “লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন”। দিনটি ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে মানুষ তাঁর নামটিকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। পরে ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস প্রেমের জন্য সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘ভ্যালেনটাইন’স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি সারা বিশ্বে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটি “ভ্যালেনটাইন’স ডে” বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রূপে উদযাপিত হয়ে আসছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের ডে সমূহ | ভালবাসা দিবস কত তারিখে?
নির্দিষ্ট ১৪ই ফেব্রুয়ারির এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় এই প্রেম উৎসব। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম আখ্যানে যেমন পূর্বরাগের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়ে গেছে, তেমনি ‘ভ্যালেনটাইন’স ডে’ উদযাপনের আগে অনুষ্ঠিত হয় পর পর কয়েকটি পর্যায়। যেমন – রোজ ডে (Rose Day), প্রোপোজ ডে (Propose Day), চকোলেট ডে (Chocolate Day), টেডি ডে (Teddy Day), প্রমিজ ডে (Promise Day), হাগ ডে (Hug Day), কিস ডে (Kiss Day) এবং সবশেষে বহু প্রতীক্ষিত ভ্যালেনটাইন’স ডে (Valentine’s Day)। টানা এক সপ্তাহের প্রেম পর্ব।
প্রেমের দুনিয়ায় ফুলের বিশেষতঃ গোলাপের বিশেষ একটা ভূমিকা আছে, প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয় বিনিময়ের স্মারক হিসেবে। দুরু দুরু বক্ষে ধাপে ধাপে এই ভালোবাসা আদান প্রদানের প্রক্রিয়াটি পূর্ণতা লাভ করে, হৃদয় হতে উৎসারিত হয় –
‘আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে।’
পরিশেষে শপথ নেয়,
‘মৃত্যুর মাঝে দাঁড়ায়ে জানিব
তুমি আছ আমি আছি।’
এই প্রেম উদযাপনের দিনটি শুধু প্রেমিক প্রেমিকা বা দম্পতিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কিন্তু। যে কেউ এই দিনে প্রিয় জনকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। যেমন পরিবারের সমস্ত সদস্য, যারা আপনার ভালোবাসার বৃত্তের মধ্যে অবস্থান করে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাগত ১৪ই ফেব্রুয়ারি। জয়তু ভ্যালেনটাইন’স ডে।
প্রবোধ কুমার মৃধা | Probodh Kumar Mridha
Bengali Article 2023 | চিরায়ত ধর্মমঙ্গলের স্বাতন্ত্র্য | প্রবন্ধ ২০২৩
Bengali Article 2023 | আশা নিরাশার দোলাচলে বাঁকুড়া জেলার কাঁসা শিল্প
Bengali Article 2023 | শ্রমিক আন্দোলনে সুভাষচন্দ্র বসু | প্রবন্ধ ২০২৩
Bengali Article 2023 | “স্তন কর” বিরোধী নারী আন্দোলন ও নাঙ্গেলির (Nangeli) আত্মত্যাগ
রাধা ও কৃষ্ণ | কবি রবীন্দ্রনাথ | ভানু সিংহের পদাবলী | শিরি-ফরহাদ | লায়লা-মজনু | রামী-চন্ডীদাস | বৈষ্ণব পদাবলী | প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে | আসে বসন্ত ফুল বনে | বিশ্ব প্রেম দিবস | লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন | প্রেমের দিবস | ভালোবাসার রচনা | কিস ডে কবে? | রোজ ডে কবে? | ভালবাসা দিবস কত তারিখে? | ফেব্রুয়ারি মাসের ডে সমূহ | ভালবাসা দিবস কেন পালন করা হয়? | ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ভ্যালেনটাইনস ডে ২০২৩ | প্রবন্ধ ২০২৩
Rose Day | Propose Day | Chocolate Day | Teddy Day | Promise Day | Hug Day | Kiss Day | Valentine Day 2022 | Saint Valentine | Article | Bengali Article | Valentines 2022 | Valentine week 2022 | Valentine’s day date 2023 | Article 2023 | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Story | Shabdodweep Writer | Valentine Day Speciality 2023 | Valentine Day Speciality – new article | Valentine Day Speciality – Bengali Article | New Journal – Valentine Day Speciality | Valentine Day Speciality in pdf | Valentine Day Speciality in USA | Valentine Day Speciality – Video | Valentine Day Speciality in India | Valentine Day Speciality History | History – Valentine Day Speciality