New Read Bangla Galpo Online | Best Story Notebook

Sharing Is Caring:

ফোঁস – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে একটা বাড়ি তৈরি করেছিল, ইসলামপুর শহরের কাছাকাছি। হেঁটে রেল স্টেশন, আবার পাকা জাতীয় সড়কও বেশ কাছেই। এই রকম ভৌগোলিক অবস্থানের এক বর্ধিষ্ণু জায়গায় হরিশ বাবু থাকেন। সম্প্রতি পত্নী বিয়োগ জনিত কারণে বড়ই আতান্তরে পড়েছেন। গ্রামের বাড়িতে দুই ভাই নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তবুও যখন গ্রামের বাড়ি থেকে কেউ এলে, সহজে বাড়ি ফিরতে চায় না। সম্ভবত এখানকার আপাত আরামদায়ক পরিবেশের জন্য।

দাদার খাওয়ার মানুষ বা কোথায়। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর নিজের হাতে সমস্ত গৃহস্থালি, একাই সামলাচ্ছেন। কোনো কালে এসব কাজ করতে হয়নি তার। কিন্তু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত তাকে এক কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাজার থেকে শুরু করে উঠোন ঘর বারান্দা ঝাট পাট এবং সংসারের সব চেয়ে কঠিন রান্না করাও বাসন মাজা চলছে, আনাড়ি হাতে। প্রশস্ত তার বাড়ি ঘর উঠোন, বাগান এবং পুকুর।

প্রায় চৌত্রিশ বছর চাকরি করেছেন একই অফিসে। বাইরের কোন জায়গায় যেতে চায় না। আগেও তো ছিল এই স্বভাব, বর্তমানে আর কোন প্রশ্ন ওঠে না, ঘর ছেড়ে বেরোনোর। আত্মীয় স্বজন ও কন্যারা পীড়াপীড়ি করেও মানুষটাকে দু দিনের জন্য কোথায়ও নিয়ে যেতে পারেনি। বলতে গেলে ঘরকুনো মানুষ। কিন্তু ভদ্রলোক এসব কথা শুনলে ভীষণ রেগে যায়।কারণ তিনি কারোর সাতেও থাকেন না, পাঁচেও না। স্বজন পরিমণ্ডল শঙ্কার মধ্যে থাকলেও তিনি নিজস্বতার মধ্যে গুটিয়ে রাখেন। নিজের তৈরি কুঞ্জ কুটির এখন তার একমাত্র পছন্দ। এই গ্রীষ্মের বৈশাখে কী নেই তার বাগানে! এই বছর আমের ফলন কম হলেও শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে তার আমগাছ গুলো ভরে গেছে নানান প্রজাতির আমে। নিজেই নাম গুলো গড়গড় করে বলে যান, – আলফাঁসো, ল্যাংড়া, ক্ষীর-সাপাত, অমৃত ভোগ, আতাউল আতা, গোলাপ খাস, গোলাপ বাস …। কাঁঠাল গাছের দিকে তাকালে মনে ভরে যায়, একেবারে গাছের গোড়া থেকে ধরেছে কাঁঠাল। লিচু, চোখ চেয়ে দেখার মত। সান বাধানো পুকুরের পাড়ে বসে সকালে বিকালে শুধু দেখে, দুটি খেতে ইচ্ছে করে না ! প্রশ্ন শুনে উদাস হয়ে বলে, – করে, তবে ভালো লাগে না। পুকুরের জল বৈশাখে কমে গেলেও এখনও স্নান যোগ্য। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হলে কী, সম্প্রদায়ের প্রচলিত ‘হাড়িয়া’ কোনো দিন পছন্দ ছিল না, যে পছন্দ করে তার সঙ্গে আড়ি।

পুকুর ভরা কাতলা, রুই, মৃগেল এবং হারিয়ে যাওয়া বিরল মাছের ঝাঁক। কিন্তু নিজে ধরার কায়দা জানেন না। তাহলে পুকুর ভরা মাছ হয়টা কী! বেয়াই মশায়ের প্রশ্নে উত্তর আসে, – হয় হয় খাওয়াতো হয়। পাড়ার লোকের সাহায্য এই খানে একমাত্র ভরসা । মাছ খাওয়ার প্রয়োজন হলে, বাড়িতে অতিথি এলে মাছ তো ধরতেই হবে। খবর দেওয়া হোল মাছ মারা( মাছ ধরা) পরিচিত লোকটাকে। সে তার ইচ্ছে মত সময় করে আসবে। তবে তার নাকি মাছ ধরা শুরু করার আগে একটা শর্ত আছে। কী সেই শর্ত! তাকে দিতে হবে ধরা মাছের সব চেয়ে বড়ো মাছটি। আর এই শর্তে দিব্যি রাজি হয়ে যায় ভদ্রলোক। বেয়াই মশাই বলেন, – আপনার পুকুর, আপনার মাছ, তবু মাছ ধরা লোকটাকে দিতে হবে বড়ো মাছটি! এরকম শর্ত আপনি মেনে নিচ্ছেন! কী আর করবো, না মানলে মাছ তো আর খাওয়া হয়না। বেয়াই মশায়ের মটকা গরম হয়ে যায়। ইচ্ছে করে দুটো গালাগাল দিতে। অতি কষ্টে নিজেকে সামলে ভাবে, – যার পাঁঠা, সে কোন দিক থেকে কাটবে তার ব্যাপার। আমি দু দিনের বৈরাগী, কী আর বলি। যতই নিজেকে সান্ত্বনা দিক, বেয়াই মশাই রেগে লাল। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কী এমন শর্ত আছে! আপনার ওই বেল গাছ, নিশ্চয় ফাল্গুন চৈত্র মাসে প্রচুর বেল হয়েছিল। রোজ তো বেলের পানা খাওয়ার কথা। ‘না না, ওই গৃহিণী যখন ছিল, মাঝে মাঝে করতো আর কী! কথাটা বলতে গিয়ে বড্ড স্মৃতি কাতর হয়ে পড়েন হরিশ বাবু। তো বেল বিক্রি করে কত টাকা পেলেন। মাথা দোলাতে দোলাতে যে কথা শোনালেন, সে কথা বাজারে ছাড়লে ভিন জেলা থেকেও পিল পিল করে শিবের ভক্ত এসে হাজির হবে।

বাগানের বেল গাছে প্রচুর বেল হয়, দেখলে সকলের লোভ হয়। তো ভক্ত কুলের অভাব নাই আমাদের বাংলায়। নারী পুরুষ সবাই শিবের ভক্ত। বলতে গেলে, তেড়েল, মাতাল, খইনি খোর, নাবালক থেকে উঠতি ছোকরা, যুবতী থেকে মাঝবয়সী, – সবাই শিবের ভক্ত চৈত্র মাসের শেষে। এই মাসে নাকি শিবের জন্মদিন। বেল অর্থাৎ পাকা বেল ভক্তদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে একটা। বেলের পানা না পান করলে ভক্তদের উপোস যুতসই হয়না। এসময় তো বেল পাকে আর নবীন পাতার আগমন ঘটে। ভক্তিতে গদগদ ভক্ত যদি দুটো বেলপাতা চায়, বেয়াই মশাই না করতে পারেন না। তখন ভক্ত নিজে বা কাউকে গাছে তুলে দেয়, মহার্ঘ্য পাতার সঙ্গে একটা বেলের প্রার্থনা মঞ্জুর হয়। ভক্তের মেসোমশাই তখন নিজের কাজের চিন্তায় মগ্ন। কখন রান্না হবে, কখন মাছ ধরার লোকটা আসবে,বাজার থেকে সব কিছু নিয়ে আসা হোল কিনা। এই সব আকাশ পাতাল ভাবছেন। অভয় পেয়ে ভক্ত একটা জায়গায় তিনটে বেল ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে গেল, গাছের মালিক বুঝতেই পারলো না। সে ভক্ত বেরিয়ে গেল বটে, খবরটা গ্রামে চাউর হয়ে গেল, হরিশ জ্যাঠার বেলগাছের বেল ভক্তেরা নিয়ে যাচ্ছে, মিলগিরি। সুতরাং পরের দিন সকাল থেকেই বেলগাছের নিচে লম্বা লাইন। লাইন তো লাইন, পাড়ার যুবকেরা বলে, – জেঠু পুলিশ ডাকতে হবে নাকি? হরিশ বাবু একটু উদাস হয়ে হেসে দিলেন। ঘণ্টা দুই পরে বেল গাছটি এমন ন্যাড়া হয়ে গেল মনে হয় এক্ষুনি সে মৃত বাপের শ্রাদ্ধে মন্ত্র পড়তে বসবে। কাহিনী শুনে তাঁর বেয়াই মশাই বাক রুদ্ধ ।

সকাল নয় ভোরবেলা থেকে পাখিরা জাগে, কী মিষ্টি কুজন ভদ্রলোকের বাগান জুড়ে। মনে প্রাণে প্রশান্তি নেমে আসে। সেই সময় থেকে পাড়ার ডেপো ছোকরার দল আম কুড়াতে আসে। আম না পড়লে, পেড়ে বা ঢিল মেরে পকেট নয়, প্যাকেট ভর্তি করে নিয়ে যায়। হরিশ বাবু জানে সব, কিন্তু কোনো দিন বলার সাহস হয়নি, – এই আম গাছে কে রে! অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সারাদিন আমগাছে বাঁদরের মত ঝুলো ঝুলি করে ছোকরা থেকে জোয়ান। বেয়াই বলে, – এতো আম বিক্রি তো করা যায়। উত্তর – আত্মীয় আসে,- আমরা তো খাই, আত্মীয় কুটুম্ব দের দিতে হয়, গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হয়। আপনার তো দেখছি অনেকগুলো গাছ, একটা নয় দুটো গাছের আম রেখে বাকি গাছ দিব্যি বিক্রি করা যায়। হরিশ বাবু ইতস্তত করেন, কী বলবেন। না, কোনো দিন বিক্রির কথা ভাবিনি। গিন্নি যখন ছিল, বিক্রির কথা বলত ।আমি বেচতে চাইতাম না। সেই থেকে ওই রকম চলে আসছে। আম গাছের যে দশা হয়, লিচু গাছের সেই অবস্থা। দিনে না পারলে, রাতের অন্ধকারে সব গাছ সাফ হয়ে যায়। সব কিছু জানে ওই দিনাজপুরের’ বুড়ো বাউল’। তাহলে পর্যবেক্ষণে উঠে এলো, – হরিশ বাবু গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা আশ্রমের সাধু ‘হরিশানন্দ’।

কাহিনী এখনও বাকি আছে। তার বাগানের মাঝখানটিতে একটু ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানে দেখা গেল অনেক গুলো গাছের গুঁড়ি সাজানো। বেয়াই মশাই, আপনি কি কাঠের ব্যবসা করছেন? না না এতো সময় আর ইচ্ছে আমার নেই। ওগুলো ওই রাস্তার ধারে কাঠ চেরাই কলের মালিকের। ওর ওখানে জায়গা নেই, তাই রেখেছে। বেয়াই মশাই প্রশ্ন করে, – আপনার অনুমতি নিয়ে রেখেছে তো। না না ওর জায়গা নেই তাই রেখেছে। বাড়ির মালিকের জবাব। বেয়াই মশায়ের মুখ থেকে একটা অশ্লীল শব্দ বের হতে গিয়ে থেমে গেল। তিনি মনে মনে ভাবলেন, – এই মানুষটিকে কী পাগলা গারদে ঢোকানো যায় না। কলি যুগের এক অবতার বলে মনে হচ্ছে। নিজের জায়গা, ওখানে দুটো কুমড়ো গাছের দানা পুঁতে দিলে দিব্যি কুমড়ো ডাটা আর কুমড়ো খাওয়া যেত।

যুগের ধারার বিপরীতে গেলে বলার কিছু নেই। কিন্তু এই স্বার্থপর মানুষের ভিড়ে একটু নিজ স্বার্থ দেখলে কারোর ক্ষতি তো হয়না। বেয়াই মশায়ের মাথা একবার গরম হয়, পরক্ষণে তাপমাত্রা নামানোর চেষ্টা করে। ভাবতে থাকেন বেয়াই মশাই, দক্ষিণের লোক সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়। কতকগুলো ফর্মুলা মাথায় আসে তার। ফলের মরশুমে বাড়ির মালিকের পাঠিয়ে দিলেন তার গ্রামের বাড়িতে। তারপর বাড়ির দেয়ালে পোস্টার সেঁটে দেওয়া হোল। ‘এই বাগান ও বাড়ি বিক্রি হবে। কেউ কোন গাছে হাত দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ইচ্ছুক ফল ক্রেতারা ফল কেনার জন্য আগাম যোগাযোগ ও অগ্রিম দিতে পারেন।’ সেখানে একটা ভুয়ো ফোন নম্বর দেওয়া হোল, যোগাযোগের জন্য।

হরিশ বাবু তার বেয়াই মশায়ের এই কৌশল বুঝতে পারেননি। দু চার দিন পর গ্রামের বাড়ি থেকে চলে আসার জন্য অস্থির। বিষয়টা হরিশ বাবুর মেজো ভাই জানতো। তিনি তো দক্ষিণের বেয়াই মশায়ের পরামর্শ অনুযায়ী কলকাটি নাড়ছেন। অবশেষে পাঁচদিন পর ঘরে ফিরে হরিশবাবু হতবাক। সকালবেলা থেকে খরিদ্দারের লাইন পড়েছে, বিভিন্ন ফল কেনার জন্য আগাম টাকা দেওয়ার। এখনও দু মাস বাকি গাছে মুকুল আসার। হরিশ বাবু বেকায়দায় পড়ে গেলেন। কারা যে এই কাণ্ড করলো, ভাবতে থাকেন। ভাবলে কী হবে, এলাকার মানুষ জানে তার বাগানের গাছে গাছে বিচিত্র ফলের কী বাহার, তাই পোস্টার দেখে মৌমাছির মত খরিদ্দার সামলাতে হচ্ছে এখন। অগত্যা কয়েকদিনের মধ্যে আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতির বিক্রির ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল। পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে ভালো লোকটা দুদিনেই ‘শয়তান বুড়ো’ রূপে পরিগণিত হোল।

বাগানের মাঝে গাছের কাটা গুঁড়িগুলো এখন দাঁতের কাঁটা। তুলে ফেলা চাই। দুজন লোককে ফিট করে একটা গাড়ি নিয়ে আসা হোল। হরিশবাবু সেদিন গ্রামের বাড়ি গেছেন বিশেষ দরকারি কাজে। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাছের গুঁড়ি তুলতে থাকলো দুজন লেবার। কাঠ চেরাই কলের মালিক এই দেখে তো থ! কার গাছের গুঁড়ি কে বিক্রি করে! বেচারি লুঙ্গি সামলাতে সামলাতে দৌড়ে আসে।

‘কী করেন, কী করেন দাদা!’ দক্ষিণের বেয়াই ঠান্ডা মাথায় বলেন, – কেন বিক্রি করে দিলাম। ‘এ তো আমার গুঁড়ি, আপনে কই বিকচ্ছেন!’
বেয়াই বলেন, – আপনার কাঠ কিছু প্রমাণ আছে, দেখান। ‘প্রমাণ নেই, কাকুর বাগানে রাখছি, আমার জায়গা কম যে!’ – ওসব বললে হবে, কাকুর অনুমতি আছে? উত্তর, – তা তো লই নাই। তবে আর কী, যান চলে বিক্রি হয়ে গেছে। ‘আপনাগো দুটি পায়ে পড়ি, একবার মাফ কইরা দেন বাবু, আর কোনো দিন রাখবো না।’ খানিকটা ছিপে মাছ খেলাবার মত করে শেষে ছেড়ে দেওয়া হোল।

দক্ষিণের জেলা থেকে ছোট মেয়ের শ্বশুর মাঝে মাঝে ফোন করে। একদিন ফোনে তিনি বলেন, – বেয়াই মশাই আমি এখন ফলের ব্যবসা করছি। আপনাদের ওদিকে গেলে একটু সস্তায় পাবো কী। কথাটায় হরিশবাবুর একটু সন্দেহ হোল। দুষ্টু বুদ্ধিটা বেয়াই মশায়ের মাথা থেকে এলো না তো!

একদিন দুপুরে দক্ষিণের বেয়াইয়ের কাছ থেকে মোবাইল মারফত একটা মেসেজ এলো। ‘পৌরাণিক গল্পে দানশীল রাজা হরিশ্চন্দ্রের গল্প পড়েছি। নিজের সব কিছু দান করতে তিনি পিছপা হতেন না। আপনি কী সেই রাজার বংশধর! আর একটা কথা, – রামকৃষ্ণের ‘ফোঁস করতে মানা নেই’ গল্পটা নিশ্চয় পড়েছেন। ভুলে গেলে আর একবার ঝালিয়ে নিন। আর একটা কথা, – হুইল দিয়ে মাছ ধরা শিখুন। না পারলে আমার কাছে ক’ দিন এসে শিখে যান, নইলে আপনার পুকুরটা চুরি হয়ে যাবে।’

বিচিত্র পেশা – কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা

কাজ খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেলে কী চলবে! কথাগুলো বলতো ঠাকুরমা তার বাবাকে। নীলরতনের মনে আছে। এখন আর কেউ নেই, বাবা আর সেই ঠাকুরমা। ঠাকুরমার জেদ কী পরিমাণ ছিল সে ছোট বেলাতে বুঝতে পারতো। শুধু কী জেদ, অসম্ভব ছিল তার ধৈর্য শক্তি। তখন ওদের ছিল কৃষি নির্ভর যাপন। কোনদিন মনে হয়নি সেই কৃষি কাজকে ফেলে অন্য কোন ভাবে জীবিকা নির্বাহ হবে বা হতে পারে। গ্রামীণ জীবনে এলো এক আমূল পরিবর্তন। বদলে গেল খেটে খাওয়া মানুষের পেশা। একটা পেশায় যে সারাজীবন চলে যাবে তার নেই কোন নিশ্চয়তা। বাবা তার গত হওয়ার পর তিন ভায়ের সংসার এখন পৃথক, জীবিত মায়ের দেখাশোনা চলে রোটেশন পদ্ধতিতে । নিজেদের স্ত্রী ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। মাঝে মাঝে মাকে নিয়ে খুব চিন্তা হয় নীলরতন হালদারের। শহর বা শহর তলিতে থাকার মত সঙ্গতি ছিল না তাদের বাবার, মাঝে মাঝে বাবার এই আস্তানা বদল না করার ভাবনাকে অদূরদর্শিতা মনে হলেও কিছু করার ছিল না ওই নিরীহ মানুষটির। ওরা তো জানে বাবা ছিল এক শ্রমজীবী মানুষ।

নয় নয় করে ভায়েরা সব উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিল। এই যোগ্যতা নিয়ে চাকরি পাওয়া যায়, কিন্তু খুবই কঠিন। মন্দ ছিল না তার ব্যাগের দোকানের কাজটা। কিন্তু মালিক দোকান উঠিয়ে দিয়ে চলে গেল তার নিজের রাজ্য বিহারে। অন্য দুই ভাই আবাসনের নিরাপত্তা রক্ষী, চলে যায় তাদের সংসার গরিবানা মতে। কিন্তু নীলরতন এখন কিভাবে চালাবে সংসার! তার একটা দোষ আছে, তা সে নিজেই জানে। কোন পেশা তার বেশিদিন ভালো লাগে না। একটা সরকারি চাকরি হলে তো অন্য ব্যাপার। অস্থায়ী কাজ, অস্থায়ী জীবন! তবু তো বাঁচতে ও বাঁচাতে হবেই। ব্যাগ দোকানের কাজে সে ভালো হাত পাকিয়ে ছিল। সুন্দর করে ব্যাগ তৈরি ও রিপেয়ারিং করতে পারতো। কিন্তু টিকলো না। তার আগে সে একটা পেশা বেছে নিয়েছিল যেটা কেউ মাথায় আনতে পারতো না। খুচরো পয়সা বা ‘রেজগী’ আদান প্রদানের কাজ। সে কাজ আজকের দিনে অচল। কারণ খুচরো পয়সার চল উঠে গেছে নয় নয় করে প্রায় কয়েক দশক। কাজটা ছিল প্রচন্ড পরিশ্রমের । সেই ভোর বেলা উঠে প্রথম বাস ধরে গ্রাম থেকে শহর ও শহর তলির মুদির দোকানে দোকানে খুচরো পয়সা সংগ্রহ। শতকরা দু-টাকা দিয়ে, পাঁচ, দশ, কুড়ি, পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার কয়েন সংগ্রহ করে সেগুলো আবার কাগজে মুড়ে আলাদা আলাদা প্যাকেট করে, বিকেলে ধর্মতলা ও অন্যত্র বাস কন্ডাক্টারদের কাছে শতকরা দশ টাকা রেখে বিনিময় করা। কেবল শহর ও শহরতলি নয়, সপ্তাহে দুটো দিন যেত গ্রামের হাটের দোকানে দোকানে। এই পেশায় মা লক্ষ্মী তার কৃপা করেছিল। সংসার চালিয়ে বিঘে দুই জমি কিনে ফেলে সে। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়ে অনেকটা সামলে ওঠার মুখে তার এই কাজটি গেল। কারণ খুচরো পয়সা দেশ থেকে হারিয়ে গেল, আর ফিরলো না । এখন গোটা গোটা টাকা, পাঁচ, দশ কুড়ি টাকার মুদ্রা বাজারে এসে গেল ও নীলরতনের মত জীবিকাধারি হয়ে গেল বেকার।

উত্তর পঁয়তাল্লিশ বয়স এখন তার। এই দুর্মূল্যের বাজারে সরকারি অনুদানে কী আর সংসার চলে! একটা কাজ তার খুব জরুরী হয়ে পড়লো, কারণ বড়ো মেয়েটা স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে তার সংসারে হাজির। নিজের সন্তান , ফেলে দিতে পারে না অপত্য স্নেহ বশত। বয়স হচ্ছে, ভারী কাজ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। একটা হালকা কাজের সন্ধানে অনেকের কাছে ঘুরতে ঘুরতে একদিন প্রাইমারির সহপাঠী বলরামের সঙ্গে দেখা। বলরাম কাজ করে একজন উকিলের চেম্বারে। অনেক কিছুর খবর সে রাখে। তার মুখ চোখ যেন কথা বলে।

নীলরতন বুঝলো। তবে তার কথা শুনে নীলু হতভম্ব! বলে কী না, ছেলে – আয়ার কাজ করবি, সন্ধান আছে। মহিলা আয়ার কথা সে জানে , কিন্তু ছেলে – আয়া! বলরাম বলে, – ‘তুই সৎ ছেলে আমি জানি,তাই এই কাজটা তোকে দেওয়া দরকার বলে মনে করি। কাজটা আর কিছুই নয়, একটা বৃদ্ধ মানুষকে সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত দেখভাল করতে হবে। তারপর তোর ছুটি।’
‘কোন কাজ যখন জোটাতে পারছো না, কাজটা ধরো।’ স্ত্রী বেহুলা বোঝালো। আগের কাজের অভিজ্ঞতায় সে কলকাতার অলি গলি খুব ভালোভাবে চেনে। চেনে মানুষের স্বভাব আর চরিত্র। আর আজকের গিরগিটি স্বভাবের মানুষের সমাজ ব্যবস্থায় তাদের মত নিরীহরা যে বড়ই অচল সে কথা হাড়ে হাড়ে টের পায়।

সময় নেই, তাই সেদিন বলরাম তার পরিচিত একজনকে সঙ্গে করে নীলুকে পাঠালো ভদ্রলোকের বাড়ি। রবিবার সবাই থাকবে বাড়ি। বড় শহরের কাছাকাছি এক নতুন গড়ে ওঠা আবাসনের তিন তলার ফ্ল্যাট। স্বামী স্ত্রী দুজনেই ব্যস্ত থাকে নিজেদের কর্মস্থলে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা আর তাদের স্কুল পড়ুয়া ছেলে। গৃহিণীর সময় নেই বৃদ্ধ শ্বশুর মহাশয়কে দেখভাল করার। আর বৃদ্ধ মানুষটির পুত্রেরও একই অবস্থা। সপ্তাহ খানেক হল আগের ছেলেটি চলে গেছে, কাজ ছেড়ে। সকালে রান্নার জন্য নিযুক্ত মহিলা রান্না করে চলে যায়, তা খেয়ে অফিসে চলে যায় দম্পতি। তবে কর্তা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যায়, তার স্কুলের গাড়িতে পৌঁছে দিয়ে অফিসের পথে। তখন ফাঁকা ঘরে বৃদ্ধ আর তাঁর দেখভালের জন্য নিযুক্ত ছেলেটি।

বৃদ্ধ মহাশয় বেশ ভদ্র স্বভাবের। শারীরিক ভাবে কিছুটা দুর্বল। বিপত্নীক হয়েছেন বছর দুই হল। নিজে খেতে পরতে পারলেও ওঠা নামা, টয়লেটে যাওয়ার সময় একজনের সাহায্য লাগে। তাছাড়া নিয়মিত দিনে রাতে মিলে সাত রকমের ওষুধ গ্রহণ করেন ।সেগুলো নিজে নিতে পারেন না, সাহায্য করতে হয়। নীলুকে বৃদ্ধের পুত্র সব বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, – ‘দেখুন ভাই, এই হল আপনার কাজ। খুব বেশি পরিশ্রমের নয়, কিন্তু সময় মত ওষুধ দেওয়া আর ওঠা, বসা, বাথ রুমে যাওয়ার জন্য সাহায্য করাটাই আসল কাজ। নীলু ভাবলো , কাজ শক্ত নয়, তবে জটিলও বটে। মনকে বলে, – সাহস করে লেগে পড় ব্যাটা।

এখনকার কাজের লোকের প্রথম বড় বদ অভ্যাস হল, – কত টাকা পারিশ্রমিক দেবে সেইটা জানতে চায়। কতদিন ছুটি দেবে তাও ঠিক করে নেয়। আর ভারী কাজ দেখলে ভয় পায়। কিন্তু নীলু সে পথে গেল না। সে বলে, – আগে আমাকে কাজটা করতে দিন, যদি পছন্দ হয় তো সেভাবেই দেবেন, আপনারা শিক্ষিত মানুষ নিশ্চয় ঠিক পারিশ্রমিক দেবেন। ভদ্রলোক নীলুর কথার উপর আর কোন কথা বলতে পারলেন না। শুধু মনে মনে অবাক হয়ে গেলেন নীলুর স্ট্র্যাটেজি দেখে। বৃদ্ধ মহাশয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে নীলু বেরিয়ে এলো, আগামীকাল থেকে আসবে সেই কথা দিয়ে।

নীলু চলে গেলে ক্লাস সেভেনের ছাত্র এ বাড়ির সন্তান রিভু ঠাকুরদার কাছে জানতে চায়, এই কাকু কী আমাদের বাড়িতে কাজ করতে আসবে ! উত্তর সত্তরের বাদল বাবু বলেন, – হ্যাঁ দাদু ভাই। নীলু কেমন হবে , কেমন ভাবে সামলাবে এসব নিয়ে রথীন বাবু আর তাঁর স্ত্রী নতুন করে ভাবতে এবং আশঙ্কা করতে থাকেন । আগের ছেলেটি কী কাণ্ড করে পালিয়ে গেল সে কথা নীলুকে বলার প্রয়োজন নেই। রীতিমত হেমন্তের দিনে প্রায় ভোরবেলা বেরোতে হল নীলুর। গ্রাম থেকে অটো, ট্রেন চেপে শহরে আসতে বেজে গেল পৌনে আটটা, সকাল।

একদিন দেখা বাড়ির নম্বরটা গুলিয়ে গেল নাকি ! মিনিট পাঁচেক ভুলভুলাইয়া শেষে ঠিক বাড়ির কলিং বেলের সুইচ টিপলো। দরজা খুলে হন হন করে বেরিয়ে গেল পরিপাটি করে খোঁপা দেওয়া একজন মহিলা, উনি রান্নার দিদি। রথীন বাবু এগিয়ে এসে নীলুকে ঘরে আসতে বললো। নীলু তার ভাতের টিফিন ক্যারিয়ার এক ধারে রেখে বৃদ্ধের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। রথীন বাবু প্রথমে ওষুধের নাম লেখা লিস্ট আর ওষুধের বাকসো নিয়ে নীলুকে বোঝাতে চেষ্টা করে কোন সময়ে বাবাকে কোন ওষুধ খাওয়াতে হবে। নীলু এইচ এস পাশ শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেন। তারপর বললেন, – বাবা নিজেই তোমাকে বলে দেবে তাঁর কখন কী প্রয়োজন।

সকাল ন’টার মধ্যে তিনজনে বেরিয়ে গেলে বাদল বাবু আর নীলু। ইতিমধ্যে নীলু দিনের প্রথম ট্যাবলেটটি পরিবেশন করে ফেলেছে বেশ যত্ন করে। ম্যাডাম নীলুকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন কিভাবে দুপুরের আহার শ্বশুর মশায়কে দেবেন। বাদলবাবু নীলুকে তাঁর কাছে বসিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছেন । নীলু সুন্দর করে নিজের ও তার সংসারের কথা বলতে লাগলো তাঁকে। এরই ফাঁকে বাদল বাবু বলেন, – তোমার দুপুরের খাওয়ার কী ব্যবস্থা! নীলু বলে, – সে আপনাকে ভাবতে হবে না, বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছি খেয়ে নেব সময় হলে। ভদ্রলোক যেন নিশ্চিন্ত হলেন। নীলুর যেন আর সময় কাটে না। তবে বুড়ো কর্তার সঙ্গে গল্প মন্দ লাগছে না তার। প্রথম দিনে যে এঁরা নীলুকে পরীক্ষার সামনে ফেলে গেছে তা কিন্তু ধরতে পারেনি সে। সে শুধু দেখলো একটা বড় আলমারিতে এক গোছা চাবি ঝুলছে। একবার দেখার পর ওদিকেই চোখ আর গেল না তার। ঘড়ি ধরে ওষুধ গুলো ধরিয়ে দিচ্ছে বাদল বাবুর হাতে। আজ থেকে তিনি নীলুর কাকু, ওই বলে সম্বোধন শুরু করলো নতুন বাড়িতে।

দুপুরে কাকুর খাবার পরিবেশন করে তাঁকে বসিয়ে দিলেন আহারে। পেটানো চেহারার রথীন বাবু মোটামুটি সহজে চলা ফেরা করতে পারেন, তবে একটা বাড়িতে এই বয়সের মানুষ দিনের বেশির ভাগ সময় একা থাকবেন, এই রিস্ক রথীন বাবু নিতে পারেন না। বিকেল চারটার সময় কলিং বেল, রিভু এসে গেছে স্কুল থেকে। নীলু বলে তোমাকে কী সাহায্য করতে পারি আমি। রিভু হেসে বলে, – ঠিক আছে কাকু, দরকার হলে বলবো। স্কুলের ড্রেস এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে সে বসে গেল কম্পিউটারে গেম খেলতে। নীলু তার জামা, প্যান্ট ইত্যাদি স্কুলের ড্রেস গুছিয়ে রেখে দিল রিভুকে জিজ্ঞেস করে। তার আগে সে বাদল বাবুর এঁটো বাসন নির্দিষ্ট বেসিনে রেখে দিয়েছে আর নিজের আনা দুপুরের ঠান্ডা ভাত তরকারি কাকুর খাওয়ার পর খেয়ে ধুয়ে ব্যাগে গুছিয়ে রেখেছে, ফেরার সময় নিয়ে যাবে।

দুপুরের বিশ্রামের পর বাদলবাবু নীলুকে ডাক দিল। সে কাছাকাছি ছিল এবং ডাক শুনে তাঁর বিছানার কাছে এলো। ‘ হাতটা একটু ধর, টয়লেট যাব। ‘ খুব সন্তর্পণে নীলু তাঁকে ধরে নিয়ে গেলেন। আসলে ঘুম বা বিশ্রামের পর শরীরে একটু জড়তা আসে, নীলু তা জানে। তার মায়ের পরিচর্যা সেই তো বেশির ভাগ করে। এই মুহূর্তে নীলুর বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। জানে না সে, কিভাবে সবটা সামলাচ্ছে তার স্ত্রী একাই। যদিও মেয়ে এবং নাতনিরা সবাই গৃহকর্মে পটু। ……প্রথম দিন, সাড়ে পাঁচটা বাজলো। গৃহিণী অফিস শেষে ফিরে এসেছেন। ঘরের সব কিছু অক্ষত এবং সব বাসন , জামা ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা। আলমারির চাবির কোন রকম পরিবর্তন নেই। তাঁর ভালো লাগলো। ‘ নীলু , তুমি এখন যেতে পারো ভাই। ‘ কাকু, রিভু আর ম্যাডাম কে বলে নীলু সাড়ে ছয়টার ট্রেন ধরবে বলে বেরিয়ে গেল।

রাতের খাবারের টেবিলে সবাই নীলুকে নিয়ে কথা বলছিল। সবারই ভালো লেগেছে, তবে কত দিন এই ভালো লাগা থাকে সেইটাই দেখার। অন্যদিকে নীলুর ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে আটটা। ….. দুমাস পরে নীলু রথীন বাবুদের বাড়িতে অপরিহার্য্য হয়ে গেল। সে তার বরাদ্দ ছুটির দিনে না এলে যেন ওই বাড়ি কেমন ছন্দহীন হয়ে পড়ে। আসলে নীলুর স্বভাব, যে কাজটা করে খুব আন্তরিক ভাবে করে, সে কাজ নিজের হলেও অন্যের হলেও। আর মানুষ চিনে রথীন বাবু নীলুকে যে পারিশ্রমিক দেয়, সে সেই পরিমাণ টাকা কোনদিন রোজগার করতে পারেনি। বৃদ্ধ বাদলবাবু অনেকদিন পর একজন সঙ্গী পেয়েছেন, যার কাছে কথা বলে মন ভরে। নীলুও কেমন একটা মায়াতে যেন জড়িয়ে পড়ে । কতদিন আগে তার বাবাকে হারিয়েছে, আর বাদল বাবু তার বাবার বয়সী হবেন।

…….ইতিমধ্যে রথীন বাবুরা অনেক রকম পরীক্ষা করে নীলুকে যাচাই করেছেন, ঘরপোড়া গরু তো! করতে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু নীলু সবটাতেই উত্তীর্ণ তার অজান্তেই। কারণ টাকা, সোনা, দামী জিনিস ইত্যাদি ফেলে রেখে বা আলমারি খুলে রেখে যে পরীক্ষাগুলো করা হয়েছিল তার কিছুই বোঝেনি নীলরতন। অল্পেতে খুশি যে মানুষ, তার চোখ থাকে উদাসীন। দিব্যি একটা আধ বুড়ো লোক কাজে যাচ্ছে ভোরবেলা, পাড়ার মানুষ ট্যারা চোখে তাকায়। মহার্ঘ এই কাজের বাজারে , কর্মহীন দেশে নীলু দিব্যি ব্যাটিং করে যাচ্ছে! কিন্তু কী কাজ সে করে কেউ জানে না, জানলে পিছনে লাগার মানুষের অভাব হবে না। সবাই জানে গ্রাম থেকে শহরে যায় হাজার হাজার বাড়ির বধূ কন্যারা কাজের তাগিদে, সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে। কিন্তু নীলু যে তাদেরই মত একজন সে কথা তার বন্ধু বলরাম ছাড়া কেউ তো জানে না।

নীলু মাঝে মাঝে ভাবে, তার এই কাজ বা পেশা সত্যি কী ছিল কোনদিন ! সেদিন ট্রেনে করে বাড়ি ফিরতে সহযাত্রীদের গল্পে কান পেতে বুঝেছিল, সে একা নয়। এই রকম কাজ নিয়ে অনেক মানুষের সংসার চলে। অভিজাত নগর সভ্যতায় বয়স্ক মা বাবা এখন অনেকেই থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে। যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে ভরসা করেন না তাঁরা নীলুদের মত মানুষ খুঁজে বেড়ায়। একান্নবর্তী সংসার ভাঙ্গার পর বাংলার সমাজ জীবনে আর নগর সভ্যতার নাগরিক জীবনে এটি এক জ্বলন্ত সমস্যা। নীলু অর্থাৎ নীলাম্বর মাঝে মাঝে ভাবে, কী এক বিচিত্র পেশায় সে বন্দী হয়ে গেল !

কৃষ্ণকিশোর মিদ্যা | Krishna Kishore Middya

New Bengali Novel 2023 | অকপটে অগ্রজকে (পর্ব ৪) | অতনু দাশ গুপ্ত

2023 New Bengali Story | স্বপ্নগুলোই সার | শওকত নূর

Bardhaman District Pancham Dol 2023 | পঞ্চম দোল – বসু পরিবার ও দেবকী বসু

New Bengali Story 2023 | নুরো, জাতভাই হতেই পারে না

New Read Bangla Galpo Online | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous New Read Bangla Galpo Online | Pdf New Read Bangla Galpo Online | New Read Bangla Galpo Online App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bangla Golpo Online Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali

Live Bengali Story in English |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | New Read Bangla Galpo Online 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Golpo Dot Com Series | New Read Bangla Galpo Online Video | Horror – New Read Bangla Galpo Online | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | New Read Bangla Galpo Online Netflix | Audio Bangla Golpo Online Reading | Video Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Bengali Writer | Bengali Writer 2023

Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent New Read Bangla Galpo Online | Top New Read Bangla Galpo Online | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | New Read Bangla Galpo Online Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story

Read Online Bengali Story Collection | New Read Bangla Galpo Online mp4 | New Read Bangla Galpo Online Library | New Bengali Web Story Download | Full Live Bengali Story | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Full Bengali Famous Story | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Collection New Read Bangla Galpo Online

Leave a Comment