2023 New Bengali Story | স্বপ্নগুলোই সার | শওকত নূর

Sharing Is Caring:
BENGALI STORY

স্বপ্নগুলোই সার – শওকত নূর [2023 New Bengali Story]

শেষ দৃশ্যে বটের বিস্ফারিত চূড়ার মতোই মূর্ত হয়েছিল তার মাথা সমেত মুখমণ্ডল। প্রবল ঝড় বইছে তখন।তার চুলগুলো ঝাঁকড়া, সম্ভবত দীর্ঘদিনের অবিন্যস্ত- তেলপানিহীন, লালচে রঙ, পুরু ভ্রু, চাপদাড়ি- বিদ্যুৎ চমকে অপার্থিব গোছের একনজর তা আটকেছিল প্রৌঢ় আরহাম আলীর নজরে। মাঝ বৈশাখের এ ঝড় হঠাৎই উঠে এসেছিল রাত আটটার পর। টানা চলতে থাকে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ। কালবৈশাখী সাধারণত এতটা বেশি সময় স্থায়ী না হলেও ইদানিং তীব্র বায়ুপ্রবাহ, থেকে থেকে তা পড়ে আসা, আবারো হঠাৎ তীব্রতা প্রাপ্তি, মেঘ বাতাসের সম্মিলিত তাণ্ডব গর্জন, সাথে ভারি -মাঝারি- মৃদু বৃষ্টি, শীলাপাত, সব মিলিয়ে স্থায়িত্বের দীর্ঘত্বকে তাৎপর্যময় করে তোলে।

গত ক’দিন ধরে বটের তলায় আস্তানা গেড়েছে লোকটা। অফিস ফেরত আরহাম আলী আজ যখন বৃষ্টি-দৌড় ভিজতে ভিজতে লোকটাকে কোনমতে অতিক্রম করে বাসার প্রবেশদ্বারে পৌঁছে, অজান্তেই সে কৌতূহলী হয়ে ওঠে। আকস্মিক উঠে আসা এই প্রকট কালবৈশাখী- ভারী বৃষ্টি শিলাপতনে, মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমক বজ্রধ্বনিতেও বটের নিচে ওভাবে বসে রইল লোকটা!

ঘণ্টা দেড়েক পার হয়ে গেল একইরূপ দৈব দুর্যোগে। এরপরও কি বসে রইল সে? বাতাসের ঝাঁপটা আর বৃষ্টির ছিটাকে উপেক্ষা করে জানালা খুলে বাইরে দৃষ্টি ছুঁড়ে বিদ্যুৎ চমকে আরহাম আলী দেখতে পেল তার সংক্রান্ত ওই দৃশ্যপট। নির্বিকার বসে আছে সে, যেমনটি সারাদিন থাকে বা আছে ক’দিন ধরে। কোনও ব্যত্যয় নেই।

রাতের খাবারদাবার ও আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেরে প্রায় এগারটা নাগাদ ঘুমাতে গেল আরহাম আলী। তখন ঝড়োবাতাস পড়ে গেলেও বৃষ্টি থামেনি। বৃষ্টির প্রাবল্য বরং আরো বেড়েছে। থেকে থেকে এদিক সেদিক থেকে ভেসে আসছে বজ্রপাতের পূর্ববৎ বিকট আওয়াজ। আরহাম আলীর সারাদিনের কর্মক্লান্ত শরীর এসবকে উপেক্ষা করে তলিয়ে যায় গভীর অচেতনে। যখন তার ঘুম ভাঙে তখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। বৃষ্টি কিংবা বজ্রের শব্দপাত নেই। বৃষ্টিভেজা রাতও যেন এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কতগুলো নিশাচর পাখির কলরব ভেসে এলো ঠিক বটগাছটার ওদিক থেকেই। এদিকটা এ মফস্বল শহরের শেষ প্রান্ত। ঠিক উত্তরে ফসলের মাঠ পেরিয়ে গ্রামাঞ্চল। দূর থেকে ঝাঁকবদ্ধ শেয়ালের চিৎকার ভেসে এসে নৈঃশব্দ্যে হারাল।

প্রায় ঘণ্টা খানেক নির্ঘুম কাটল আরহাম আলীর। শিয়রের ওপাশে থাকা মোবাইল টিপে সময় দেখল সে। এখন সোয়া দুইটা বাজে। হঠাৎ তার মনে কৌতূহল জাগল বটের নিচের ওই লোকটাকে ঘিরে। সে কি এখনও ওভাবেই নির্ঘুম বসে আছে? নাকি ঘুমিয়ে টুমিয়ে গেছে? এখন তো বিজলির চমক নেই, অন্ধকারে দেখা সম্ভব কি তার এ মুহূর্তের অবস্থা অবস্থান? জানালা খুলে ঝটপট বাইরে তাকাল আরহাম আলী। আশ্চর্য হলো অনেকটাই। কিসের আলো জ্বেলে মাথা ঝুঁকে কী করছে লোকটা? কিসের আলো ওটা, মৃদু অথচ তাকে উদ্ভাসিত করে তুলেছে পুরোটাই? করছে কি সে উবু হয়ে? পড়ছে? লিখছে? নাকি অন্য কিছু? কে সে? কী সত্যিকারের পরিচয়?

নানা প্রশ্নবাণে ভীষণ মন খারাপ হলো আরহাম আলীর। ঝড় বৃষ্টিতে এতটা সময় ধরে ভিজেছে লোকটা। বটের তামাম আচ্ছাদন তাকে যে শেষ অবধি রক্ষা করবে না, গোটা আবহ দৃশ্য বিবেচনায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে ক’দিন ধরে সে এখানে অবস্থান করছে, তাতে এই তার এখানে প্রথম বৈরি আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়া। এমতাবস্থায় উবু হয়ে কিছু করা বা লেখা কতটা জরুরি? কেন জরুরি? ভাবতেই তার কেমন গা শিউরে ওঠে : ঝাঁকড়া-জটা চুল, ভারি জীর্ণ পোশাক, বার্ধক্য পীড়িত শরীরে ঘোর বর্ষণ, ঝাঁপটা-ভেজা বাতাসে ভিজে একাকার নির্বাক বসে থাকা – কী ভেবে কিছু প্রয়াস-আলো জ্বালানো, কিছু লিখা! বিবিধ প্রশ্ন মনে জাগে আরহাম আলীর, অথচ নগর জীবন এমন শৃঙ্খলে আবদ্ধ যে এ মুহূর্তে উঠে যাওয়াও সম্ভব নয় তার কাছে। ভাবনাঘোর নিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে আরহাম আলী।

ভোররাতে যখন সে জেগে ওঠে, ঠিক ওদিক থেকেই পরপর দুটো উচ্চস্বর কণ্ঠ ভেসে আসে তার কানে। কেউ কাউকে চিৎকারে ডাকছে, শুধু এটুকুই বোঝা যায়। কিন্তু গভীর মনোযোগে কান পেতেও কাকে বা কী নাম ধরে ডাকা হচ্ছিল, তা আবিষ্কারে সক্ষম হলো না আরহাম আলী। সন্দেহ বশত আবারও জানালা খুলে সেদিকে দৃষ্টি ছুঁড়ল সে। রাতের অন্ধকার খানিকটা ফিঁকে দেখালেও এবারে ওদিকে অর্থাৎ বটের তলায় কোনও মনুষ্য অবয়ব তার নজরে আটকাল না। যে জায়গাটিতে শেষবারেও সে লোকটাকে আলো জ্বেলে উবু হয়ে কিছু করতে দেখেছিল, সেখানটা কেবলই ঝাপসাবহে তার নজরবিদ্ধ হলো। ভাবনাচ্ছন্ন সে ঘুমিয়ে পড়ল আবারও।

লোকটা মারা গেছে। শান্ত স্নিগ্ধ ভোর- রাতের দুর্যোগ আবহাওয়াকে বিদায় জানিয়ে যা নিরাপদ রূপে মূর্ত হয়ে উঠেছিল, তা অশান্ত হয়ে উঠেছে সমবেত লোকজনের কোলাহলে। ভিড়- বৃত্তের মাঝে চোখেমুখে নির্মল প্রশান্তির ছাপ এঁকে শাশ্বত ঘুমে ঢলে পড়েছে সে। বৃষ্টি-ভেজা দেহটি এখনো চুপেচুপে অবস্থায়ই আছে। নানা স্তরের লোকজনের উপস্থিতি ও তাদের কৌতূহলোদ্দীপক নানা গুঞ্জরনকে খানিকটা নিস্তেজতায় নামিয়ে এনেছে নিকটস্থ থানার লোকজনের উপস্থিতি।

লোকটার কোন পরিচয় খুঁজে বার করা সম্ভব হয়নি। মোটা ভারী শার্ট এর নিচে প্যান্ট-কোমরে গোঁজা এক পলিথিন ব্যাগে তিন পাতা কাগজের সন্ধান মিলেছে। তিন পাতার মোট ছ’ পৃষ্ঠাই লেখাপূর্ণ। পৃষ্ঠাগুলোর স্থানে স্থানে বৃষ্টি ভেজার চিহ্নপাত ওগুলো তার মৃত্যু প্রাক্কালের লেখা বলে ধারণা করে দিচ্ছে উপস্থিত জনমনে। নীরবে পাঠ করে যাচ্ছিল ক’জন। অন্যরা নিশ্চুপ শুনছিল গভীর মনোযোগে। আকস্মিক পাঠ থামিয়ে একজন চেঁচিয়ে বলল, উপস্থিত ভাইয়েরা শোনেন।

জি বলেন। সমস্বরে চেঁচাল অনেকে।

গতরাতে বাসার জানালা দিয়ে এই মৃত ব্যক্তিকে তার জীবিত অবস্থায় এই স্থানে সময় সময় নজর করেছিলেন, এমন কেউ কি এখানে আছেন? থাকলে সাড়া দেন।

এতক্ষণ ভীড়ের মধ্যে নীরব দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছিল আরহাম আলী। এবারে ভিড় ঠেলে মাঝ বৃত্তের দিকে এগিয়ে মুখ বাড়িয়ে সে বলল, কেন, কী হয়েছে?

ভাই, যে প্রশ্ন করছি আগে তার উত্তর দেন।

হ্যাঁ, আমি তাকে রাতে জানালা দিয়ে বার কয়েক লক্ষ্য করেছি। ঠিক গতরাতেই।

তাহলে এই যে এই কাগজের লেখাগুলো আপনার উদ্দেশ্যে লেখা, যদি আপনি সত্যি কথা বলে থাকেন।

হ্যাঁ হ্যাঁ, সত্যিই বলছি আমি, মিথ্যা কেন বলব? আমি ঝড়ের আগে, ঝড়ের মাঝামাঝি সময়ে, এবং ঝড়ের পরেও তাকে দেখেছি। ঝড় থামলে দেখেছি কিসের আলো জ্বেলে উবু হয়ে কী করছিল।

হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন। এই যে ছোট্ট এই টর্চলাইট জ্বেলে মনে হয় পলিথিন ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে লিখেছে। ঝড় থামলেও গাছের নিচে বৃষ্টির ফোঁটা তো অবশ্যই ছিল। লেখা জায়গায় জায়গায় ঝাপসা হলেও কষ্ট করে পড়া যায়। দেখি, হু–ম — পড়া যাবে সবই। আচ্ছা নেন ভাই, আপনি। শুধুই লেখা। এখানে তার পরিচয় পাবার মতো তেমন কোন ক্লু মনে হয় নাই। নেন আপনি।

আচ্ছা দিন। তবু আমি মোবাইলে ছবি তুলে মুল কপি রেখে যাচ্ছি।

ঠিক আছে , তা-ই করেন।

2023 New Bengali Story

মোবাইলে পৃষ্ঠাগুলোর ছবি নিয়ে প্রস্থান করে আরহাম আলী। বাসায় ফিরে হাতমুখ ধুয়ে দ্রুত নাস্তায় বসে যায় সে। তার সমস্ত মনোযোগ এখন মোবাইলে ধারণকৃত ওই পৃষ্ঠাগুলো ঘিরে। নাস্তা থেকে উঠেই মোবাইল গ্যালারিতে বন্দী পৃষ্ঠাগুলোর লেখায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে। পৃষ্ঠা-লেখনীর হুবহু বিবরণ নিম্নরূপ :

গতরাতের প্রবল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ক্ষণেও জানালা পথে আমার উদ্দেশ্যে বারংবার দৃষ্টি ছুঁড়েছেন যিনি, এ লেখা তারই উদ্দেশ্যে :

জীবন ও জীবনের ব্যাখ্যা

লোকদৃষ্টিতে আমি একজন উন্মাদ, পথপাগল। কিন্তু আমি জানি, আমি তা নই। আমি নির্যাতিত, নিপীড়িত পথাশ্রয়ী এক মজলুম মাত্র। নিপীড়িত জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি জীবন ও জীবনের ব্যাখ্যায় কিছু কথা রেখে যেতে নিঃশেষিত জীবনের শেষ শক্তিমত্তা ঢেলে কাগজপৃষ্ঠায় কিছু শব্দ বাক্য রেখে যাচ্ছি।

আমরা জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এই ধরায় যে দিনাতিপাত করছি, স্থূল কথায় তা-ই আমাদের যাপিত জীবন। প্রতিদিন নানা শ্রেণির মানুষের ভাষা অভিব্যক্তিতে জীবনের নানা সংজ্ঞাই আপনি পাবেন। কখনো কখনো যাপিত জীবনের সংজ্ঞা ও সত্যিকারের ব্যাখ্যা তাৎপর্য নিয়ে আপনি বিভ্রান্তিতেও জড়াবেন।

কিছু মানুষকে আপনি দেখবেন দৈনন্দিন জীবনকে খুব হালকা ও সাদামাঠা ব্যাখ্যায় নিয়ে আসতে। তাদের ভাষ্যে, পার্থিব জীবন আসলে কিছুই নয়, দুদিনের ছেলেখেলা মাত্র। এখানে দুদিনের স্থায়িত্বে উল্লেখযোগ্য কিংবা তাৎপর্যপূর্ণ কিছুই মানুষের জন্য নেই। এখানে মানুষ মাত্রই নিঃস্ব, পথের কাঙ্গাল। হাত ভরে কিছু নিয়ে আসেনি, নিয়ে যাবেও না। অতএব, যাপিত জীবনকালে হাতে ওঠাবারও নেই কিছু। যা কিছু হাতে তোলার, যা কিছু পরম তাৎপর্যময়, তার সবই আছে ওপাড়ের জীবনে। অথচ এই সাদামাঠা ব্যাখ্যাদানকারী মানুষগুলোরই নিভৃত জীবনে ঢুঁ দিলে আপনি খুঁজে পাবেন আমূল ভিন্ন চিত্র। পাবেন কথায় কাজে আকাশ পাতাল ফারাক। বস্তুত তারাই এ ইহলৌকিক জীবন থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রাপ্তির ধান্দায় ঘুরছেন ফিরছেন, কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধির কল্পচক্রে খুইয়ে দিচ্ছেন চৌদ্দ প্রহর। আপনি যদি প্রশ্ন তোলেন, জীবন যদি কিছুই না হবে তবে আর কাজ করছেন কেন, পাওয়ার পেছনে অহর্নিশ ছুটছেন কেন- হয় তারা রেগে যাবেন, নয়তো আপনাকে নিঃশব্দে, আন্তঃ ক্রোধে এড়িয়ে যাবেন।

আরেকটা শ্রেণির কাছে জীবন উপরোক্ত গোছেরই দ্রুতগামী, সংক্ষিপ্ত। তবে উপরোক্ত শ্রেণির মতো কথা-বিপরীত পথ না নিয়ে তারা কথানুরূপ পথে জীবন থেকে কাজকর্মকেও সাময়িক সংক্ষিপ্ত করে দিয়ে ভাবেন বাস্তব জীবন পর্বটি বুঝি বড় সহজেই পার হয়ে যাবে। কিন্তু অনেকে যখন দেখেন জীবন ষাট, সত্তুর, আশিতে, নব্বইতে গড়িয়ে পড়ছে, আর নিত্য নতুন সমস্যাবর্ত অস্তিত্বে গাছিয়ে যাচ্ছে, তখন জীবনকে বড় ধীরগামী আর একঘেয়ে গণ্যে অতীত কৃত ভুলের অনুশোচনায় নানা কর্মপ্রয়াসে ভুল শোধরাবার চেষ্টায় মাতেন। কিছু সাফল্য কিছু ব্যর্থতায় তারা রোদ ছায়া সম ধিঁকিধিঁকি চলেন। তাদের কাছে জীবন তেতো পানসের যোগসূত্র -ওই এক গোছের।

আরেকটা শ্রেণি আছেন প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ইহজাগতিক জীবনই তাদের ভাষ্যে সবকিছু। জীবন যেন গানের ভাষার মতোই ; খাও দাও স্ফূর্তির নামান্তরই জীবন । তাদের অনেকে স্বীয় অন্যায় অনুসরণে অবাধ্যকে সক্রোধ দু ঘা বসাবেন, পরম বিত্ত বৈভবে গা ভাসাবেন, নিজে অভদ্রতা করেও নিজেকে ভদ্র ঘোষণায় আনবেন, ক্ষমতার দৌরাত্ম্যে ভদ্রকে অভদ্র অভিহিতি দেবেন । জীবনের তথা ইহজাগতিক স্বাদগুলো তারাই ভালো আস্বাদন করে থাকেন।

একটা শ্রেণি সততা সংযমের দোহাইয়ে চিরকাল জীবনকে কৃচ্ছ্র প্রদর্শন করে চলেন। কৃচ্ছ্র -দারিদ্র্যকেই প্রাপ্য ও আদর্শ মেনে অনাড়ম্বরেই নিঃশব্দে চলে যান ধরা থেকে। তারা কারো প্রতি নজরপাতে থাকেন না যেমন, কারো নজরবিদ্ধ হনও না তেমন।

একটা শ্রেণি চিরকালের মার খাওয়া, পোড় খাওয়া। এরা মূলত প্রতিবাদী ও শেষাবধি বিপ্লবী কিংবা মজলুম। এরা মার খেয়ে ওপরের কিংবা শাশ্বত ন্যায়ের প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন, ধৈর্য ধরেন আর মনোযোগে কান পাতেন ওই ধূসর বিবর্ণ নিষ্ফল পরামর্শে : ওয়েট এন্ড সি। ওয়ানডে টাইম উইল কাম টু ইশ্ট্যাবলিশ দ্য জাস্ট এন্ড জাস্টিস। এ্যাবাভ অল, দেয়ার’স দ্য অলমাইটি টু পানিশ দ্য ঈভল ফোর্সেস। দেয়ারফোর, ডোন্ট গেট ফ্রাসট্রেটেড, হ্যাভ পেশেন্স এন্ড হোপ ফর দ্য বেস্ট । কিন্তু ধৈর্য ধরাই বহু বিপ্লবীর জন্য হয়ে দাঁড়ায় সার ; তাদের কথিত সে ন্যায়ের অধ্যায় কখনো উন্মোচিত হয় না। খোদায়ী বিচারেরও সাক্ষাৎ তাদের জীবদ্দশায় মেলে না। নিভৃতে ঝরে যান, যুগে যুগে গেছেন অনেক বিপ্লবী।

এমন অনেক অনেক আছেন, নিষ্পাপ, নির্দোষ, অথচ ভুক্তভোগী – চরম ভোগান্তি কষ্টে, অনাচারে, অবিচারে ধুঁকে ধুঁকে শেষ পথে বিলুপ্ত হন, হয়েছেন। তাদের জন্য চিরকাল থাকে, থাকবে সুপ্রতিষ্ঠিত এক কথার খড়গ: দ্য ইনোসেন্ট সাফার! আপনার কৌতূহল মেটাতে নিরেট সত্যিটি বলছি, আমি তাদেরই একজন।

আমি প্রথমে বাস্তুচ্যুত ও পরে পরিবার পরিজনের নির্মম হত্যাযজ্ঞে হন্তারক কর্তৃক উল্টো ফেঁসে যাওয়া এক হতভাগ্য ফেরারি পথিক। আমার দুর্বলতা আমার দারিদ্র্য ও লোকবলশূন্যতা। অথচ আমি স্বশিক্ষিত। ছদ্মবেশে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি বৎসরাধিক কাল। জীবনে দুঃখের বোঝা এমনই নির্মমভাবে চেপে বসেছে যে আমি ভীষণ ক্লান্ত অবসন্ন, সুস্থতা হারানো শেষ পথের এক পথিক মাত্র। যার কারণে এ ভঙ্গুর দশা, সে আমারই এককালের নিকটাত্মীয়, আমারই প্রতিবেশী নাদেল মাসদাইর। শত অপরাধ অপকর্মে ধরাছোঁয়ার বাইরের এক কালোবাজারি, জবরদখলকারী, আন্ডারগ্রাউন্ড খুনি।

বিরোধপূর্ণ জীবনকালে কোনদিন একদণ্ড শান্তি পাইনি আমি। মনে হয়েছে হৃদপিণ্ডের ভেতরে কেউ যেন একটা সূক্ষ্ম কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়েছে, আর তারই তীক্ষ্ণ ব্যথা নিয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেরিয়েছি আমি জনপদ থেকে জনপদে, স্টেশন বন্দর, হাটে মাঠে ঘাটে, গাঁ থেকে নগরে। হাঁটতে হাঁটতে গত ক’দিন হলো এ গাছের নিচে এসে আশ্রয় করি। রাতে যখন ঝড় উঠে আসে, চারদিকে বৃষ্টি বারী, শিলাখণ্ড, বজ্র বিজলি- ভয়াল তাণ্ডব, অথচ আমার শরীরের শেষ শক্তিটুকুও যেন নিঃশেষিত, তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি হৃদপিণ্ডে সেঁধানো কাঁটাটির চরম এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ – ইহজাগতিক কষ্টের এই বুঝি পরম সীমা। হয়তো ঝরে যাচ্ছি আমি তারই নির্মম কশাঘাতে। যন্ত্রণার তীব্রতায় কখন অচেতন হয়ে পড়ি। অচেতন দশায় যা দেখতে থাকি, হয়তো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য যুক্তিতে তা স্বপ্ন, ঘুমঘোর সুখস্বপ্ন:

স্বপ্নে আমি দেখতে থাকি, যে বিরামহীন উদ্ভ্রান্ত হাঁটা আমাকে এখানে উপনীত করেছে, তারই শেষ লগ্নে আমি এক অপার্থিব সীমারেখা অতিক্রান্তে সীমাহীন এক অপার্থিব প্রান্তরে প্রবেশ করি। আমি দেখতে থাকি প্রান্তর জুড়ে অগুনতি মানুষের সমাবেশ। হটাতই তাদের মধ্যে দেখা পেয়ে যাই উল্লিখিত নাদেল মাসদাইরের। মাসদাইর আমাকে দেখা মাত্রই স্বভাবসুলভ চাউনিতে অগ্নিদৃষ্টি ঝরিয়ে ঝাণ্ডা বাগিয়ে ধেয়ে আসে। আর ঠিক তখনই খাড়া মাথার ওপর থেকে ভেসে আসে গুরুগম্ভীর অশ্রুতপূর্ব শব্দ ধ্বনির এক দৈব উচ্চারণ : ক্ষান্ত হও নাদেল! ওখানেই স্তব্ধ হও তুমি! এবারে তোমার সব পালাই শেষ। এতকাল যে বাতাসটা তোমার অনুকূলে ছিল, এবার তা উল্টা বইবার পালা। জানো তো বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতিপ্রাবল্যে বৈচিত্র্য থাকে। তোমার কর্মযজ্ঞ তোমাকে এবার প্রবাহ-প্রতিকুলে নিয়ে গেছে। পালাবার কোন পথই তুমি আজ খুঁজে পাবে না। অতএব, বৃথা প্রয়াসে বিরত হও!

নাদেল শরীর ঘুরিয়ে দৌড়ে পালাবার প্রয়াস নেয়। আর তখনই চারদিক থেকে বিকট বজ্র ধ্বনির সাথে ধেয়ে আসে রাশি রাশি অগ্নিগোলক। কতগুলো নাদেলের আশপাশেই বর্ষিত হয়। খানিক বর্ষিত হলে নাদেল প্রচণ্ড চিৎকারে মাঠ জুড়ে উন্মত্তের মতো দৌড়াতে শুরু করে। এবারে তার চারপাশে বর্ষিত হতে থাকে ছোট ছোট অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। নাদেলের আর্তচিৎকারে চারপাশ প্রকম্পিত হতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা সময় সে উবু হয়ে আছড়ে পড়ে। আর তখনই বিকট শব্দে ওপর থেকে নিচে ধেয়ে আসে বিশাল এক অগ্নি খণ্ড। একটা প্রকট আর্তচিৎকারের পর নিস্তব্ধতা নামে।

ঘুম ভাঙে কিংবা অচেতন দশা কাটে আমার। আমি জানি, এতক্ষণ যা দেখেছি তা সত্যি নয়, মিথ্যে, ঘুমঘোর সুখস্বপ্ন মাত্র। বাস্তবে নাদেলের কিছুই হয়নি, সে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছে, সুখসাচ্ছন্দ্যে পূর্ববৎ বেঁচে আছে, থাকবেও হয়তো। ঝড় চলাকালে অচেতন দশায় যতক্ষণ তা দেখেছি, ততক্ষণই তা সত্যি জেনেছি। ভেবেছি, জগতে অবিচারের, অন্যায়ের, জুলুমকারীর শাস্তি আছে। এমনটি অগণিত মজলুম শুধু ঘুম-স্বপ্নেই নয়, হয়তো জাগরূক কল্পনাতেও দেখেন, অবিচারে বঞ্চনায় সান্ত্বনা খোঁজেন।

এ মুহূর্তে শরীর মনের সর্ব দুর্বলতম দশায় আমি ভাবনাগুলো ভাবছি আর অস্তিত্বের শেষ সামর্থ্যে
জগতের মানুষের উদ্দেশ্যে কাগজে লিপিবদ্ধ করছি। আমি টের পাচ্ছি আমার সময় এখানেই শেষ। যদি সময়ের সম্প্রসারণ বলতে কিছু থাকত, তবে হয়তো জীবনের ভিন্ন কোন সংজ্ঞাও আমার বিবেচনায় দাঁড়াতে পারত। যেহেতু তার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য, সেহেতু এ যাবৎকালের যাপিত জীবনের চূড়ান্ত ব্যাখ্যায় এ শেষ পথযাত্রীর জন্য তার পোড়া ক্ষত, জীর্ণ, বিধ্বস্ত জীবনের জন্য ঝড়ের ভেতরে অচেতনে দেখা ওই স্বপ্নগুলোই সার!

শওকত নূর | Shawkat Noor

New Travel Story 2023 | লাচুং-নাথালু’র সীমান্ত ছুঁয়ে | জয়ন্ত কুমার সরকার

New Bengali Article 2023 | হুগলী জেল ও কাজী নজরুল ইসলাম | প্রবন্ধ ২০২৩

New Bengali Poetry 2023 | মোঃ ওয়াসিউর রহমান | কবিতাগুচ্ছ

New Bengali Poetry 2023 | বারিদ বরন গুপ্ত | কবিতাগুচ্ছ

bengali story new | indian poems about death | 2023 new bengali story | 2023 new bengali story books for child pdf | 2023 new bengali story books for adults | 2023 new bengali story books | bengali story books for child | 2023 new bengali story books pdf | 2023 new bengali story for kids | 2023 new bengali story reading | short story | short story analysis | short story characteristics | short story competition | short 2023 new bengali story definition | short story english | short story for kids | short 2023 new bengali story generator | bengali story 2023 | short 2023 new bengali story ideas | short story length | long story short | long story short meaning | long bengali story | long 2023 new bengali story | long 2023 new bengali story instagram | 2023 new bengali story writing competition | story writing competition topics | story writing competition for students | story writing competition malayalam | story writing competition india | story competition | poetry competition | poetry competitions australia 2022 | poetry competitions uk | poetry competitions for students | poetry competitions ireland | poetry competition crossword | writing competition | writing competition malaysia | writing competition london | bengali story writing | bengali story dictation | writing competitions nz | writing competitions ireland | writing competitions in africa 2022 | writing competitions for high school students | writing competitions for teens | writing competitions australia 2022 | writing competitions 2022 | writing competitions uk | bengali article writing | bangla news article | bengali story news| article writing on global warming | article writing pdf | article writing practice | article writing topics | trending topics for article writing 2022 | what is article writing | content writing trends 2022 | content writing topics 2022 | Bangla Prabandha | Probondho | Definite Article | Article Writer | Short Article | Long Article | Bangla kobita | Kabitaguccha 2022 | Galpoguccha | Galpo | Bangla Galpo | 2023 new Bengali Story | Bengali Article | Shabdodweep Writer | Shabdodweep | Shabdodweep Founder | Shabdodweep Bengali Writer | Shabdodweep Bengali Story | Updated 2023 new Bengali Story | update 2023 new Bengali Story | 2023 new Bengali Story – top list | 2023 new Bengali Story – best story | 2023 new Bengali Story – top story | Best seller – 2023 new Bengali Story | Best seller 2023 – 2023 new Bengali Story | 2023 new Bengali Story – Best book

Leave a Comment