Natun Bangla Galpo 2023 | গল্পগুচ্ছ | প্রদ্যোৎ পালুই

Sharing Is Caring:
Natun Bangla Galpo 2023

স্বীকারোক্তি – প্রদ্যোৎ পালুই [Natun Bangla Galpo 2023]

প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় বসেছিলাম। গ্রাম্য স্টেশন। পাখিদের ডানায়, গাঁয়ের বধূর শঙ্খধ্বনিতে, গরুর পাল নিয়ে রাখালের ঘরে ফেরার মধ্য দিয়ে একটু একটু করে সন্ধ্যা নামছিল। আকাশে শুক্লা পঞ্চমীর বাঁকা চাঁদ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল। আর একটি-দুটি করে নক্ষত্র ফুটে উঠছিল। আলো-আঁধারির গোধূলি বেলায় দখিনা বাতাসে দূর থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীতের হালকা সুর ভেসে আসছিল। এমন মোহময় পরিবেশে মনটা আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠেছিল। বাড়ি ফেরার তাড়া থাকলেও অধৈর্য হয়ে উঠলাম না। শান্ত স্নিগ্ধ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। মননে ধরা দিল এক অনন্যসাধারণ অনুভূতি।

একটু পরে একজন মাঝবয়সী মহিলার আবির্ভাবে আমার অনুভবের ছন্দপতন ঘটল। মহিলা কিছুটা দূরে একটা বেঞ্চে এসে বসল। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি পনেরো-ষোল বছরের ছেলে পাশে এসে দাঁড়াল। তার হাতে ট্রেনের টিকিট। বোঝা গেল, ছেলেটি টিকিট কাউন্টারে লাইন দিয়েছিল। সম্ভবত মহিলার নিতান্ত আপনজন।

কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ট্রেনের ঘোষণা হল। আমি সচকিত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ট্রেন আসতে উঠে পড়লাম। যাত্রীদের ভীড়ে ক্ষনিকের জন্য আবির্ভূত মহিলার কথা মন থেকে হারিয়ে গেল। যেমন করে দৈনিক হারিয়ে যায়, অজস্র ঘটনা, দৃশ্য, কথোপকথন, আর চেনা-অচেনা মানুষজন।

পরদিন অফিস ফেরত প্ল্যাটফর্মে এসে বসেছি একই সময়ে। আমার যাতায়াতের ট্রেন নির্দিষ্ট। তাই সবকিছু নির্ধারিত সময়ে। সেদিনও দেখলাম সেই মাঝবয়সী মহিলাকে। অবশ্য সঙ্গে ছেলেটি নেই। কৌতূহল জাগল। চেনার কৌতূহল। পায়চারি করতে করতে তার কাছাকাছি গেলাম। একটু ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম। চেনা চেনা মনে হল। তবুও সাহস করে এগিয়ে কথা বলতে পারলাম না। একটু অপেক্ষমাণ থেকে মহিলার বেঞ্চের একপাশে বসে পড়লাম। বুঝলাম, সেও আমাকে দেখার চেষ্টা করছে। চাহনি দেখে মনে হল, তারও চেনা চেনা লাগছে। কথা বলব কী বলব না ভাবতে ভাবতে ট্রেন এসে যেতে উঠে পড়লাম। তবে এদিন অজস্র ঘটনার মাঝেও ওই মহিলার মুখটি মন থেকে হারিয়ে গেল না। স্মৃতির ক্যামেরায় সযত্নে তোলা থাকল তার মুখচ্ছবি।

পরদিনও মহিলাটির একই জায়গায় অবস্থান। আমার কৌতূহল বাড়ল। সাহস করে জানতে চাইলাম, “আপনি কী কোথাও কাজ করেন ?”

‘হ্যাঁ, আপনাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে।” মহিলা কিছুটা পরিচিতের মতো উত্তর দিল।

বললাম, “আপনাকেও। আপনি কী ইলোরা খাতুন ?”

চমকে উঠল মহিলা। পরক্ষণে বলল, “হ্যাঁ, আপনি কী সুকান্ত পত্রনবিস ?”

মাথা নেড়ে বললাম, “ঠিকই বলেছ। এতদিন পরে হঠাৎ এখানে এভাবে দেখা হয়ে যাবে, কল্পনাও করিনি।”

“আমারও ঠিক তাই।” উত্তর দিল ইলোরা।

কলেজে একসঙ্গে একই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম দুজনে। তখন ঘনিষ্ঠ পরিচিতি ছিল আমাদের।একে অপরের কাছ থেকে নোটের সাহায্য নিতাম, বইয়ের সাহায্য নিতাম। কোন কোন দিন দোকানে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে টিফিন খেয়েছি। অবশ্য এর বেশি কিছু নয়। তারপর পাশ করে দুজনেই যে যার পছন্দের জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমি আর ওর খোঁজ রাখি নি। খোঁজ রাখতে যে চাই নি তা নয়। কিন্তু রাখতে পারি নি। ও রেখেছিল কি-না জানি না। তবে এর আগে আর কোনদিন কথা বা দেখা হয় নি। কলেজ লাইফের পর হঠাৎ করে দুজনের আজই প্রথম দেখা। তবে কেউ কাউকে ভুলে যাই নি। ইলোরা এখন কেমন আছে, সেকথা জানতে খুব ইচ্ছে হল। বললাম, “ইলোরা, তোমার কেমন কাটছে এখন ?”

কিছুটা ভারাক্রান্ত মুখে দুরের দিকে তাকাল ও। খানিক চুপ করে থেকে বলল, “ভাল নয়। আমার স্বামী পথ দুর্ঘটনায় মারা গেছে একবছর আগে। সেই গ্রাউন্ডে চাকরি পেয়ে গত পরশু জয়েন করেছি। তোমার চাকরি পাওয়ার খবর অবশ্য অনেকদিন আগেই জেনেছিলাম। মাঝে মাঝে তোমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করতাম কি-না, তাই।”

“তুমি খোঁজ রেখেছিলে আমার ?”

“না রেখে পারি নি।”

অবাক হলাম আমি। ইলোরাও কী তবে—–। কোনদিন তো মুখ ফুটে সেকথা বলে নি। অবশ্য এমনই হয়। আমিও তো কোনদিন—-। বললাম, “আচ্ছা।”

একটু থেমে ও বলল, “এজন্য মনের সঙ্গে বার বার লড়াই করে যেতে হয়েছে। সেই লড়াইয়ে নিজে জিতেছি। কিন্তু মন হেরে যায় নি। আজও মনটা তাই একান্ত নির্জনে তোমার কথা মনে করায়। মনে করতে ভাল লাগে। কিছু লাভের আশায় নয়। তবুও কেন জানি না, অবুঝ মন কোন বাধা শুনতে চায় না। তোমার কথা মনে করে কিছুটা স্বস্তি পায় হয়তো।”

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম। মন কী তাহলে এমনই হয়! একবার দুর্বল হয়ে গেলে শত বাধা বিপত্তির মধ্যে দীর্ঘ সময়ের স্রোত পেরিয়েও সে দৃঢ় হয় না। বললাম, “আজ যে কথা অতি সহজে বলে ফেললে সেদিন কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে কথা মুখে আনতে পার নি।”

“তুমিই কী কোনদিন কিছু বলতে পেরেছিলে ?”

“অন্তর আর বাহির যে এক নয় ইলোরা। এই দুয়ের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। সেই ব্যবধানে আটকে থেকে গেছি চিরকাল। তাই মনের কথা কোনদিন বলা হয়ে ওঠে নি।”

মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে ইলোরা সতর্কভাবে বলল, “হয়তো তাই। জীবনে কিছু কথা তো চিরকাল অব্যক্ত থেকে যায়। আমরা তো তবু এতদিন পরে এসেও মনের কথা ব্যক্ত করতে পারলাম।”

আমার ট্রেন ঢুকছে প্ল্যাটফর্মে। বললাম, “আজ তবে এইটুকু থাক। বাকি কথা পরে হবে।” ইলোরা উলটো দিকে যাবে। ওর ট্রেনের দেরি আছে। ওকে ছেড়ে আমি একাই ট্রেনে উঠে পড়লাম। মনটা পড়ে রইল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।

অচেনা মানুষ – প্রদ্যোৎ পালুই [Natun Bangla Galpo 2023]

লেকের ধারে দাঁড়িয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডাকল, “বাবু, তুমি ইখানে বেড়হাইতে আইচ ?”

পিছন ফিরে তাকালাম। এক মাঝবয়সী লোক দাঁড়িয়ে। চিনতে পারলাম না। বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। লোকটি আমার বিস্ময় বুঝতে পেরে বলল, “বাবু, চিনাইতে লারচ ? আমি গগন, গগন মাঝি। তুমি আমার মায়ের পেনশন করহে দিয়েছিলে। মা এখুনো সেই পেনশন পায়। তুমাকে পরথম দেখেই আমি চিনাইছি বটহে।”

চাকরি জীবনে বিভিন্ন জায়গায় কতো মানুষ কতো রকম দাবি-দাওয়া নিয়ে আসে। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে কথা হয়। সমস্যার কথা শোনা হয়। সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিছু সমাধান হয়, কিছু হয় না। কিন্তু সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয়। গগনের কথায় মনে পড়ে গেল, বছর দশেক আগে পাশের ব্লকে কাজ করেছিলাম। তখন কোন একসময় হয়তো গগনের পেনশনের আর্জি মঞ্জুর করানো সম্ভব হয়েছিল। সেকথা আমি মনে রাখি নি। আমার মনে রাখার প্রয়োজন হয় নি। কিন্তু গগন সেকথা স্কুল সার্টিফিকেট গুছিয়ে রাখার মতো করে মনের ফাইলে গুছিয়ে রেখে দিয়েছে। না মনে করতে পেরেও বললাম, “মনে পড়েছে। তা তোমার মা এখন কেমন আছে ?”

“মা ভালহ আছে।”

আমি বললাম, “ভাল।” আর বেশি কিছু না বলে একটু এগিয়ে অন্যদিকে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছি, গগন বলে উঠল, “বাবু, আজ আমাদের ঘরে তুমাকে যেতহে হবেক। মাকে দেখাব। বলব, এই বাবুর জন্যে তুই এখুনো পেনশন পাছুস বটহে।এই বাবুকে পেন্নাম কর।”

আমি কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। এসব কী বলছে গগন ! সরকারি সাহায্য নিয়ম মেনে আমি একটু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম মাত্র। সেখানে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। সরকারি নিয়মে সে পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে তাই পেয়েছে। সেজন্য এত গদগদ হয়ে আমার কাছে আত্মসমর্পণের কিছু নেই। কিন্তু সেকথা কে বোঝাবে গগনকে ! এদেরকে নিয়ম মেনে একটু সাহায্য করলে সাহায্যকারীকে দেবতুল্য মনে করে। তবুও বললাম, “এতটা ভাবার দরকার নেই গগন। আমি কিছু করি নি। তোমার মা নিজের যোগ্যতায় সরকারি সাহায্য পেয়েছে। সেজন্য আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে দেখানোর দরকার নেই। আমার হাতে সময়ও বেশি নেই। আজই বাড়ি ফিরতে হবে।”

“আমাকে পছন্দ হছে নাই বাবু ? গরীব লোক বলহে আমার ঘরে যাবেক নাই বলছ।”

এরপর গগনের আবদার প্রত্যাখ্যান করা মুশকিল হয়ে গেল। বললাম, “তুমি বুঝতে পারছ না গগন, আমার আজ তাড়া আছে। অন্যদিন এলে নিশ্চয়ই তোমার বাড়ি যাব।”

“আমার ঘর কাছেই বাবু। এখুনি যাওয়া যাবেক। মাকে দেখা দিয়েই চলে আইবে বাবু।”

উপেক্ষা করতে না পেরে গগনের পিছু পিছু ওর বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। রাস্তায় ও কোন কথা বলে নি। সম্ভবত কিছুটা আড়ষ্টতা আছে। মিনিট পনেরোর মধ্যে কিছুটা ডাঙ্গা পেরিয়ে গাছতলায় একটা দোচালা কুঁড়েঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গগন বলল, “বাবু, ইটাই আমার ঘর।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কাছাকাছি কোন বাড়িঘর নেই। কয়েকটি গাছের ছায়ায় একটি মাত্র চালাঘর। সেই ঘরের দাওয়ায় একজন বয়স্কা মহিলা বসে আছে। সম্ভবত গগনের মা। জিজ্ঞেস করার আগেই গগন তার মাকে বলল, “মা, দেখ কাকে লিয়ে আইচি ইখানে। তুর পেনশন করে দিয়েছিল এই বাবু। লেকের ধারে দেখতে পেয়ে ডেকে লিয়াইচি। উহাকে পেন্নাম কর। উহার জন্যেই তুই আজ বেঁচে আছুস বটহে।”

সঙ্গে সঙ্গে গগনকে নিরস্ত্র করে বললাম, “এসব কী বলছ গগন ? প্রণাম করার কী আছে ? একদম প্রনাম করতে বলবে না। সরকারি কাজ করেছি মাত্র। সেজন্য প্রণামের কী আছে ? তাছাড়া তোমার মা এত বয়স্ক মানুষ। তিনি আমাকে প্রনাম করবেন, তা কী হয় !”

গগন আর জেদাজেদি করল না। আমার বিস্ময়ের ঘোর কিছুতেই কাটতে চাইছে না। অন্য কাউকে বাড়িতে দেখছি না। গগনের কী তাহলে সংসার নেই ? জানতে চাইলাম, “তোমার বাড়িতে আর কেউ নেই ? মাত্র তোমরা দুজন ?”

এর উত্তরে গগন যা শোনাল সে আর এক গল্প। “গাঁয়ে আমার বউ ছেলা মেয়া সব ছিল বাবু। একবার জ্বর হয়ে গাঁয়ের দুটা ছেলা মরহে গেল। গাঁয়ের লোক ভয় পেয়ে অনেক দূর থিকে গুনিন ডেকহে আনল। সে এসে নিদান দিল, আমার মা ডাইনি। মায়ের লজর লেগে দুটা ছেলা জ্বর হয়ে মরেচে। উহাকে না তাড়ালে সবাই মরবে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে আমার মাকে খুব মারল। নিদান দিল, আমাদের সবাইকে গাঁ ছেড়ে চলে যেতে হবেক। ভয়ে সবাই পালাইয়ে এলাম। নাইলে সবাইকে মেরেই ফেলত বাবু।”

জানতে চাইলাম, “তাহলে তোমার বউ ছেলেমেয়েরা কোথায় ?”

“মাথা গুঁজার ঠাঁই নাই। কুথায় যেয়ে উঠব বাবু। তাই বউ-ছেলামেয়াদেরকে বাপের ঘরে দিয়ে আইচি। সবাই সেখানে যাই কী করে ! তাই ইখানে চলে আইচি।”

আমার বিস্ময় আরও গাঢ় হল। জানতে চাইলাম, “বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এই জনহীন প্রান্তরে একা একা এসে থাক কী করে ?”

গগন শোনাল, “যার কেউ নাই তার উপরওলা আছে বাবু। ইখানে এক সাধু থাকে। তারই এই চালাঘর। ভিক্ষা করে যা পায় সন্ধ্যাবেলা ঘরে এসে রান্না করে। আমাদের দুজনের বিপদের কথা শুনে থাকতে দিইচে। আমি খাটাখাটনি করি। সাধু বাবা ভিক্ষা করে। চলে যায় কুনোরকমে।”

“তুমি এখানে আছ ঠিকই, তবে পুলিশকে খবর দিয়েছিলে ? তোমাকে নিজের গাঁয়ে ফিরে যেতে হবে তো ?”

পুলিশ জানে। গেইছিল আমাদের গাঁয়ে। খবর পেয়ে ইখানে এসে আমাকে ঘরে যেতে বলেছিল। গেছিলাম। সবাই ভয় দেখায়। ডাইনি লিয়ে থাকতে দিবেক লাই। ভয়ে পালিয়ে আইচি বাবু। যদি আবার মারে।”

“না, পুলিশ প্রশাসন আছে। অন্যায়ভাবে মারলে তাদের শাস্তি হবে। তুমি নিজের অধিকার ছাড়বে কেন ? মাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবে। বউ-বাচ্চাদেরও নিয়ে আসবে। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

গগন মাথা নাড়ল। কোন কথা বলল না। বেলা পড়ে আসছে। আর অপেক্ষা করা যায় না। বাড়ি ফিরতে হবে। বললাম, “এবার আসি তাহলে গগন।” ও কোন আপত্তি করল না। আমাকে এগিয়ে দিতে চাইছিল। আমি নিষেধ করলাম। স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন দুঘন্টা লেট। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে। টিকিট কেটে নিয়ে স্টেশনের বেঞ্চে বসে পড়লাম। গগনের কথাগুলো মনে ভিড় করে আসছে। ‘ডাইনি লিয়ে থাকতে দিবেক লাই।’ মনে প্রশ্ন জাগল, সত্যিই কী আমরা এগোতে পেরেছি ! নাকি সবটাই আমাদের উন্নয়নের মুখোশ ?

বরফের মাঝে উষ্ণতা – প্রদ্যোৎ পালুই [Natun Bangla Galpo 2023]

অঞ্জনা আর তার চার বন্ধু একসঙ্গে বেড়াতে গিয়েছে দার্জিলিং। সেক্টর ফাইভে কাজের একঘেয়েমিতে জেরবার হচ্ছিল সকলে। সেই একঘেয়েমি কাটাতে সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়ে এই দার্জিলিং সফর। সময়টা যদিও প্রাক্‌পুজা মুহূর্ত, তবুও কদিন আগের টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং-এ এখন বেশ ঠান্ডা। এমনকি গুঁড়ি গুঁড়ি বরফও পড়তে শুরু করেছে কোথাও কোথাও। অবশ্য ভরা যৌবনে দার্জিলিং-এর এই ঠান্ডাকে জমিয়ে উপভোগ করার জন্যই তারা গিয়েছে সেখানে। ফলে মোটেই হতোদ্যম হয়নি কেউ, বরং যথেষ্ট উৎসাহিত।

একটা গাড়ি ভাড়া করে বিভিন্ন স্পটে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে সকলের। পরের দিন থেকে গাড়ি ভাড়া করবে বলে ঠিক করেছে। প্রথম দিন কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অঞ্জনারা ছড়িয়ে পড়েছে সামান্য এদিক ওদিক। নির্দিষ্ট সময় পরে আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে মিলিত হবে সকলে। ঘুরতে ঘুরতে অঞ্জনা একা একটা পার্কের কাছে গিয়ে পৌঁছেছে। হঠাৎ নজর পড়ল এক যুবকের দিকে। যুবকটির মায়াময় চাহনিতে অঞ্জনার দৃষ্টি আটকে গেল। সে কাছাকাছি না গিয়ে পারল না। যুবকটির জিজ্ঞাসু মন দেখে অঞ্জনার মনে হল ও কিছু জানতে চায়। সে প্রশ্ন করল, “ আপনি কিছু খুঁজছেন ?”

মাথা নেড়ে যুবকটি জানাল, হ্যাঁ।

“কি খুঁজছেন ?”

“আপকো গাড়ী কিরায় মেঁ চাহিয়ে ?”

“গাড়ী ভাড়া দেবেন ? নাম কি আপনার ?”

“সুরজ থাপা।” লজ্জা মেশানো গলায় জানাল যুবকটি।

অঞ্জনা সুরজের সলজ্জ অনুভূতিতে বেশ মজা পেল। বলল, “বাড়ী কোথায় আপনার ?”

“ইধর কলোনি মেঁ।”

“আচ্ছা, এখানেই থাকা হয় তাহলে। তা কি করেন আপনি ?”

সুরজ মনে মনে ভাবল, এত সব জানার দরকার কি। গাড়ি লাগবে কি-না সেটুকু জানিয়ে দিলেই হয়। তবুও জানাল, “ম্যায় গাড়ী ড্রাইভার হুঁ । টুরিস্ট ক্যারি করতা হুঁ।”

“ওহো, তার মানে তুমি নিজেই গাড়ি চালাও ? তাহলে তো খুবই ভালো। একজন পরিচিত মানুষ পাওয়া গেল। তোমাকে নিয়ে আমরা তাহলে এই কদিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারি।” আপনি থেকে তুমিতে সম্পর্ক নামিয়ে আনল অঞ্জনা।

সুরজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।

সুরজের মায়াবী মুখটা অঞ্জনার মনে নাড়া দিয়েছে। সে হাঁড়ির খবর নেওয়ার জন্য রেডি। রুমাল দিয়ে বরফভেজা মুখ মুছতে মুছতে বলল, “ তোমার বাড়িতে আর কে কে আছে ?”

ইতস্তত করে জানাল সুরজ, “ঘর মেঁ মা আউর এক বহিন হ্যায়।”

“বাহ্‌, খুব সুন্দর।”

অঞ্জনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল সুরজ। তা দেখে মুচকি হাসল অঞ্জনা। “আজ আমাদেরকে তোমাদের বাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবে নাকি ?”

সুরজ অবাক হয়ে বলল, “আপকা দোস্ত ?”

“ওদেরকেও তাহলে ফোন করে ডেকে নিচ্ছি। নিয়ে যাবে তো ঠিক ?”

মুচকি হাসল সুরজ। অঞ্জনা হাসি হাসি মুখ করে বলল, “কি, খুব খুশী হয়েছ মনে হচ্ছে ?”

“আপ বহুত জলি হ্যায়, ম্যাডাম।”

“তুমিও এক্সেলেন্ট বয়, মাই ব্রাদার।” সুরজ চুপ করে আছে দেখে অঞ্জনা বলল, “চিন্তা নেই, আজ আর তোমাদের বাড়ি যাব না। আমার বন্ধুদেরকেও ডাকছি না। আমরা তোমার গাড়ি কাল থেকে তিন দিনের জন্য ভাড়া নেব। কাল আমাদের লজে চলে আসবে তোমার গাড়ি নিয়ে। আমরা সব বন্ধু মিলে বেড়াতে যাব।” নিজেদের আস্তানার ঠিকানা দিয়ে অঞ্জনা গাড়ি বুক করতে সুরজ নমস্কার জানিয়ে চলে গেল।

পরদিন ঠিক সকাল সাতটায় গাড়ি নিয়ে লজের সামনে হাজির সুরজ। অঞ্জনা গাড়ির কাছে যেতে সুরজ বিনয়ী গলায় জানাল, “ ম্যাডাম, আইয়ে।”

“থ্যাঙ্ক ইউ। একটু ওয়েট করতে হবে। সকলে এখনও রেডি হতে পারে নি।”

হাসি মুখে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল সুরজ।

সকলে একসঙ্গে সুরজের গাড়ি নিয়ে তিনদিন ধরে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। সুরজের অমায়িক ব্যবহার নজর কেড়েছে সকলের। গাড়ী চালালেও ছেলেটার মধ্যে একটা বিশ্বস্ততা আছে। তিন দিনে অনেক স্পট দেখিয়েছে। ভাড়ার ব্যাপারেও বেশি জোরাজোরি করে নি। মুগ্ধ হয়ে শেষদিন সকলে সুরজের ফোন নম্বর নিয়ে বলল, “মনে রাখবে সুরজ। আমরা বা আমাদের কোন রিলেটিভ এলে তোমার নম্বর দিয়ে দেব। একটু হেল্প করে দিও।”

“কৃতজ্ঞ চিত্তে সুরজ জানাল, “ নো প্রবলেম, ম্যাডাম।” সকলকে নমস্কার জানিয়ে বিদায় নিল সে।

পরদিন সকালে দার্জিলিং ছেড়েছে তারা। সকলে অফিসের কাজে জয়েন করে দিয়েছে। দিন তিনেক পর হঠাৎ একদিন সুরজের ফোনে কল করল অঞ্জনা। তার ফোনে অঞ্জনার নম্বর সেভ করা ছিল। সে ফোন ধরল, “ হ্যালো ম্যাডাম।”

“কেমন আছ সুরজ ?”

“ আচ্ছা হুঁ। আপ ক্যাসে হ্যায় ?”

“ভাল নেই।”

“ কিঁউ, তবিয়ৎ খারাপ হ্যায় ?”

“ না, তা নয়। সারাক্ষণ —, না থাক।”

“ কি সারাক্ষণ, ম্যাডাম ?”

“তুমি কলকাতায় চলে এস। এখানে অনেক কাজ আছে। আমাদের অফিসের গাড়ি চালাবে।”

ভুরু কোঁচকাল সুরজ। “কলকাতা ! ইধর মা, বহিনকো ছোড় কর সম্ভব নেহি হ্যায় ম্যাডাম। আপ দার্জিলিং আ জাইয়ে।”

মনে মনে ভাবল অঞ্জনা, সম্ভব হলে সে চলেই যেত ওখানে। নিজে একটা অফিস খুলে বসত। আর সেখানে কর্মচারী হিসেবে রাখত সুরজকে। কিন্তু ইচ্ছা আর বাস্তবে অনেক ফারাক। সে জানে, সুরজের পক্ষেও কলকাতায় আসা সম্ভব নয়। তবুও আবেগের বসে বলে ফেলেছে। তাই পরক্ষণে সুধরে নিয়ে বলল, “ঠিক আছে, ভাল থেকো।”

“ওকে ম্যাডাম। আপভি আচ্ছা সে রহিয়ে।”

আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিল অঞ্জনা। কাজের মধ্য দিয়ে, বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাইলেও কোথা দিয়ে যেন সুরজের মুখটা ভেসে ঊঠছে তার মনের আয়নায়। সে তার কেঊ নয়। কেবল কদিনের জন্য দেখা। তবুও কেন মনে পড়ছে বার বার ? কেন ভেসে উঠছে ওর মুখ ? কোনও কারণ নেই। তবুও মন তো আসলে এমনই। সে সবসময় কারণ মেনে চলে না। যুক্তিজালে ধরা পড়ে না। চেষ্টা করেও তাকে আয়ত্তে রাখা যায় না। মাসখানেক ধরে সুরজের স্মৃতি তাকে আচ্ছন্ন করে রাখল। ইচ্ছে হল মাঝে মাঝে ফোন করতে। কিন্তু যা সম্ভব নয় তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে কি লাভ ! অঞ্জনা আর একদিনও ফোন করে নি সুরজকে ।

মাসতিনেক পরে হঠাৎ একদিন ফোন এল সুরজের কাছ থেকে। “ম্যাডাম, মেরা সাদি কা দিন ফিক্সড হো গয়া। আপ আইয়ে মেরা সাদি কা দিন।”

অঞ্জনা বলল, “ ঠিক আছে, চেষ্টা করব।” ফোন কেটে দিয়ে অঞ্জনা সুরজের নম্বরটা ব্লক করে দিল।

প্রদ্যোৎ পালুই | Pradyut Palui

Bengali Novel 2023 | স্টেশন কান্তার (১ম পর্ব) | উপন্যাস ২০২৩

Fathers Day History | পিতৃ দিবসের ইতিহাস ও বাঙালি আবেগ | 2023

Advantages & Disadvantages of Tattoo | ট্যাটুর উপকারিতা এবং অপকারিতা | Bengali Article 2023

Is it possible to remove tattoo | ট্যাটু রিমুভ কি সম্ভব? | 2023

স্বীকারোক্তি | স্বীকারোক্তি সমার্থক শব্দ | স্বীকারোক্তি ও স্বীকৃতি | দোষ স্বীকারোক্তি | স্বীকারোক্তি পত্র | স্বীকারোক্তি নামা | স্বীকারোক্তি লেখার নিয়ম | স্বীকারোক্তি পত্র নমুনা বাংলা | স্বীকারোক্তি কবিতা | স্বীকারোক্তি- সম্পর্কিত খবর | স্বীকারোক্তি – বিষয়ের খবর | অকাব্যিক স্বীকারোক্তি | নেশাখোরের স্বীকারোক্তি | শব্দদ্বীপের লেখক | শব্দদ্বীপ | সেরা বাংলা গল্প | গল্প ও গল্পকার | সেরা সাহিত্যিক | সেরা গল্পকার | বাংলা বিশ্ব গল্প | বাংলা গল্প | বাংলা ম্যাগাজিন | ম্যাগাজিন পত্রিকা | শব্দদ্বীপ ম্যাগাজিন | অচেনা মানুষ | অচেনা মানুষ কবিতা | অচেনা মানুষের গল্প | অচেনা পাখি | নাটক গ্রামের | নীড় ভাঙ্গা ঢেউ | অন্য কোথাও নাটক | মেয়েদের নাটক | বরফের মাঝে উষ্ণতা | বরফ | বরফের মাঝে মৌনি | বরফের উষ্ণতা | শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস | বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি | বরফের মাঝে কাঁধে মাথা | উষ্ণায়নের আসল বিপদ | বরফের কেলাস গঠন | বরফের তাপমাত্রা কত | বরফের সংকেত লিখ | বরফের কত অংশ পানিতে ভাসে | কাকে বরফ খাদক বলা হয় | বরফের ঘনত্ব কত | পানির নীচে নতুন বরফ আবিষ্কার | হিমালয়ে অব্যাহতভাবে বরফ | উত্তর মেরুর বরফ গলছে | বরফের দেশে অবাক জীবন | বরফদেশের বাড়ি ‘ইগলু’ | সোনমার্গে পড়ছে বরফ | বরফের চাদরে মোড়া দার্জিলিং | পাহাড়ের উপর বরফ | বরফে মোড়া গ্যাংটক | বরফ যুগ | উষ্ণতা পরিমাপক | চলছে তুষারপাত | গরম বরফ বিক্রির ঘটনা | দার্জিলিংয়ে তুষারপাত | শীত বরফে জীবন যাপন | বরফ রানী

Shabdoweep Founder | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Shabdodweep Writer | Shabdodweep Poetry | Natun Bangla Galpo 2023 | Natun Bangla Galpo 2023 book | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top Writer – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poet – Natun Bangla Galpo 2023 | Poet list – Natun Bangla Galpo 2023 | Top poetry – Natun Bangla Galpo 2023 | Best seller – Natun Bangla Galpo 2023 | Full pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | Free download pdf – Natun Bangla Galpo 2023 | Audio book – Natun Bangla Galpo 2023 | Video book – Bangla Kabita 2023 | Video poetry – Bangla Kabita 2023 | Audio poetry – Natun Bangla Galpo | New Poetry book | Shabdodweep poetry book | Shabdodweep International Web Magazine | International Bengali poetry | Bengali Poetry publisher | Shabdodweep Publisher | Shabdodweep Publisher 2023 | Shabdodweep Video Publisher | Shabdodweep Audio Book | Shabdodweep Video Book | Shabdodweep Mp3 poetry | Audio Poetry mp3 | Audio Poetry wmv | Video poetry mp4 | Natun Bangla Galpo 2023 video series | Natun Bangla Galpo 2023 – web series | Natun Bangla Galpo 2023 – Latest version | Natun Bangla Galpo 2023 pdf book | web video – Natun Bangla Galpo 2023 | web reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf reader – Natun Bangla Galpo 2023 | pdf publisher – Natun Bangla Galpo 2023 | Best web series – Natun Bangla Galpo 2023 | new pdf book – Natun Bangla Galpo 2023 | New story book – Natun Bangla Galpo 2023

Leave a Comment