Modern Story Reading – জয়ন্ত কুমার সরকার – সূচিপত্র
শীতের আমি শীতের তুমি – জয়ন্ত কুমার সরকার [রম্যরচনা]
উত্তরের হিমেল হাওয়া, কুয়াশার অবগুণ্ঠন ভেদ করে হেঁটে যাওয়া শীতার্ত পথিকের কম্পিত হৃদয়, পর্ণমোচী বৃক্ষের পাতাখোসা, ধীর স্রোতা নদীর কুলকুল শব্দ, টিনের চালে, ঘাসের ডগায়, সবুজ পাতায় জমা রূপালী মুক্তো বিন্দু, শীতের নীরব প্রকৃতির এমনই সব বিমূর্ত সৌন্দর্য রচনা করে। শীতের হলুদ সর্ষে ক্ষেত অলির গুঞ্জনে মুখরিত হয়, আশ্চর্য নিস্তব্ধতায় মগ্ন হয় স্নিগ্ধ পৃথিবী। একটু পরেই কুয়াশার চাদর ভেদ করে প্রভাকর অংশুমালী যখন উঁকি দেন, ঝলমলে আলোর কিরণের এক অপার্থিব সৌন্দর্যের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর কোণায় কোণায়। প্রকৃতির এই মনোরম সৌন্দর্য শীতের সকাল ছাড়া দেখা যায় না।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ আর শীত ছাড়া অন্য ঋতুর অনুভূতি থাকে খুব কম সময়ের জন্য। শারদীয়া দুর্গোৎসব কালীপুজো-ভাইফোঁটার পর শীতের আগমন বার্তা দিতেই যেন হেমন্তের আবির্ভাব; তবে অনাড়ম্বরে অবহেলায় আগমন হলেও শরতের মত হেমন্তেরও স্বতন্ত্র রূপ ও গুণ আছে। প্রকৃতির বর্ণচ্ছটার সঙ্গে নবান্নের আমেজ, ফসলের মাঠে কৃষকের মুখে হাসি বাংলার ঘরে ঘরে ছড়ায় সুখের আবেশ, মাঠঘাট প্রান্তরে চুঁইয়ে নামে হালকা কুয়াশা, উঠোনে এসে পড়ে শিউলির অকৃপণ সৌন্দর্য, দোলনচাঁপার হৃদয়গ্রাহী সুগন্ধ আর ঘাসের ডগায় শিশিরের সকরুণ মিনতি নিয়ে আসে হেমন্ত। প্রকৃতিতে সব ঋতুরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, কোন ঋতুর প্রকৃতি রুদ্র, কোন ঋতু স্নিগ্ধ, শান্ত সুস্থির, হেমন্ত সুস্থির ঋতু হলেও প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা এমন হৃদয়গ্রাহী মনোলোভা দৃশ্য ভাবাই যায় না। উৎসব আড়ম্বরতার শেষে প্রকৃতি যেন মানুষকে একটু জিরিয়ে নিতে বলছে, তাই হেমন্ত আড়ম্বরহীন। বর্ষা শেষে বোনা আমন ধান শরতে বেড়ে হেমন্তে পরিপক্কতা লাভ করে। ফসল তোলার ধূম পড়ে যায় চাষীর ঘরে; মাঠে মাঠে কাস্তে হাতে কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ধান কাটা, আঁটি বেঁধে খামারে তোলা, ঝাড়াই-মাড়াই করে মরাই ভর্তি করার অনাবিল আনন্দ অনুভব করে গ্রামের সব কৃষক পরিবার। হেমন্তে বাংলার আবহমান এই ফসল তোলার লোক উৎসব হল নবান্ন। নতুন চালের পায়েস, পিঠা, ক্ষীর পরিবারের আত্মীয়স্বজন,বন্ধু, পড়শিদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে বড় কৃষক পরিবারে। তাই বাংলার প্রকৃতিতে প্রাচুর্যময়ী হেমন্ত যেন কল্যাণময়ী নারীর অকৃত্রিম স্নেহ আর ভালবাসার স্পর্শ। গরমের হাঁসফাঁস থেকে স্বস্তি পেতে শীতের অপেক্ষায় থাকি আমরা। শারদীয়া শেষে হেমন্তের আঘ্রাণ শেষ হতে না হতেই শীতসুন্দরী গুটি গুটি পায়ে উঁকি দেন প্রকৃতির দোরগোড়ায়। প্রকৃতি রুক্ষ হলেও শীতের আলাদা একটা ভাললাগা আছে। আবার শীত একটু বাড়তেই জুবুথুবু হয়ে পড়ি আমরা।
আসলে শীতকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে হয়। প্রকৃতির এক দুর্মূল্য উপহার এই শীত। শীত মানেই মায়াবী একটা সকাল, মিষ্টি একটা সূর্য, বিশাল একটা আকাশ,এলোমেলো উত্তুরে বাতাস আর শিশিরে ভেজা অপরূপ গোলাপের পাপড়ি। শীত মানেই পরিযায়ী পাখির আনাগোনা, মেলা-উৎসব আর পশম-উলের যুগলবন্দী। শীতের শেষ লগ্নে আসে পৌষ সংক্রান্তি, নানান মুখরোচক পিঠের আয়োজন। সরু চাকলি, পাটিসাপটা, পুরপিঠে, দুধশিউলি, ক্ষীরপিঠে, নলেনগুড়ের পায়েস আরও কত কিছু, আছে ক্ষেতভরা নতুন শাকসবজি। শীত এলেই তো ছাদবাগানে ফুলের সমারোহ, ইনকা গাঁদা চন্দ্রমল্লিকা ডালিয়া জিনিয়া সূর্যমুখীর রঙিন বাহার। সর্দিকাশি, হাঁপানির টান বাড়লেও শীতেই তো মেরী ক্রিসমাস, নিউইয়ার্স ইভ, সরস্বতী পুজো, রান্না-পান্তা, বনভোজনের আয়োজন। প্রকৃতির ঋতুরঙ্গ বৈচিত্র্যময়।
শীতের পোশাক ঝলমলে হয়
শীতের কামড় ভীষণ
শীতপোশাকের অভাব যখন
শীত দুঃখের কারণ।
বৈচিত্র্যময় পোশাকের ঋতু হল শীত। শীত ঋতুরাণী হলেও শীতের প্রকৃতি রুক্ষ ও কর্কশ, শীতের এই রুক্ষ চেহারা ঢাকা পড়ে রঙবেরঙের শীতপোশাকের আড়ালে। শীত একটু একটু বাড়তে থাকে আর একে একে মাফলার, টুপি, গরম জামা, সোয়েটার,জ্যাকেট বের হয় বাক্স-তোরঙ্গ, সুটকেস থেকে। বহু পুরানো রঙচটা সোয়েটার, ফেলতে না পারা বিবর্ণ জাম্পার কিম্বা সুতো ওঠা রঙচটা জামা চাপা পড়ে যায় চকচকে শীতপোশাকের আড়ালে, রংচঙে জ্যাকেটের নিচে চাপা পড়ে বিবর্ণ সোয়েটার, তাপ্পিমারা হাফশার্ট যা একসময় যত্নে তোলা থাকত টিনের নড়বড়ে সুটকেসে যা ছিল গরিবের আভিজাত্য। সুমনের স্ত্রী ছেলেকে এতগুলো শীতপোশাক পরপর পরিয়ে দেন যে আসল চেহারা বোঝাই যায় না, সব পোশাক গুলোই তো প্রকৃত মাপের অনেকটা বড়, ঢোলা শীতপোশাকের ভিতর রোগা পাতলা আসল ছেলেটাকে তখন খুঁজেই পাওয়া যেত না, চেনাই যেত না ওকে। সুমন বলত, “ছেলেটাকে অতগুলো সোয়েটার গরম জামা মাঙ্কি-ক্যাপ পরিও না, গরমে হাঁসফাঁস করবে যে।” স্কুলের তাড়ায় স্নানের সময় সাত-আটটা খুলতে বিরক্তির একশেষ হত প্রতিদিন। সুমনের বাবার কথা খুব মনে পড়ে। ওর বাবার সাধারণ অফিস পোশাক ছিল বরাবর ধুতির উপরে গেঞ্জি, তার উপর কলার দেওয়া ঢোলা ফুলহাতা শার্ট। শীতে তার উপরে চাপত হাফহাতা একটা সোয়েটার, কাঁধে নিতেন পাটকরা একটি পুরাতন শাল। শীত চলে গেলেও শালটা দোল উৎসব পর্যন্ত থাকত বাবার কাঁধে। বাবার পরে এই শালটা এখন সুমনের কাছে। প্রতি বছর বের করে, সুতো ওঠা বিবর্ণ শালটা গায়ে দিলে বাবার অনুভূতিটা টের পায় সুমন, মনে হয় বাবার কাছেই রয়েছে, মনে হয় এই তো সেদিন, বাবার কাঁধে ঘুরত শালটা, বড় আরামদায়ক, ওম নিতে বড় ভাল লাগে শালটার, তাই সুমন যত্ন করে কেঁচে তুলে রাখে সেই বাক্সটায় যেটায় ওর বাবার শীতপোশাক থাকত। মায়ের জন্য উলের একটা সোয়েটার বুনে দিয়েছিল সুমনের এক সহপাঠিনী, আমৃত্যু সেই সোয়েটারটা মা পরতেন, এখনও মায়ের সেই ট্রাঙ্কে পুরানো চাদরের সঙ্গে পরম যত্নে রাখা আছে ঘিয়ে রঙের পুরানো সোয়েটারটা, সময় পেলে ট্রাঙ্কটা খুলে, মায়ের সঙ্গে থাকে সুমন কিছুক্ষণ, মায়ের গন্ধ অনুভব করে।
শীতের হাত থেকে বাঁচতে যে কোন পোশাক এ সময় পরা যায়। আবার, একদিকে যখন শীতপোশাকের বৈচিত্র্য আত্মহারা হয় আধুনিক সভ্যতা, তখন অন্যদিকে, হাড়কাঁপানো শীতে গরীবগূর্বো ফুটপাতবাসীর কাছে শীতের এত বৈচিত্র্য কোন স্পর্শই অনুভব করতে পারে না। শীতের প্রচণ্ড কামড় ওরা সহ্য করতে পারে না, একটু উষ্ণতার জন্য জড়সড় হয়ে ছেঁড়া চট কম্বল খুঁজে বেড়ায়। শৈত্যপ্রবাহে মৃত্যুর খবর ব্যথিত করে আমাদের। তাই শীত অন্য সবার কাছে রঙিন বৈচিত্র্যময় ঝলমলে ঋতু হলেও ওদের কাছে শীত এক অভিশাপ। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য।
জয়ন্ত কুমার সরকার | Jayanta Kumar Sarkar
Bengali Article 2023 | ভৃগুর শক্তিপীঠ ও বড়োমা :: বিল্লপত্তন থেকে বড়বেলুন
স্বামী বিবেকানন্দের যোগ ভাবনা | Top Best 4 Yoga by Swami Vivekananda
Bengali Article 2023 | সুভাষচন্দ্রের আত্মজীবনীঃ বিভিন্ন মনীষী প্রসঙ্গ
History of Bengali Poetry | কবিতা কি ও কেন এবং তার ইতিহাস
Modern story reading pdf | Top Bangla Golpo Online Reading | New Read Online Bengali Story | Top Best Story Blogs | Best Story Blogs in pdf | Sabuj Basinda | High Challenger | Famous Bangla Golpo Online Reading | Shabdodweep Read Online Bengali Story | Shabdodweep Writer | Bangla Golpo Online Reading pdf | Famous Story – Read Online Bangla Galpo | Pdf Read Online Bangla Galpo | Read Online Bangla Galpo App | Full Bangla Golpo Online Reading | Bengali Modern Story Reading Blogs | Best Story Blogs in Bengali | Modern story reading free |Bangla Golpo Online Reading Ebook | Full Bangla Galpo online | Read Online Bangla Galpo 2023 | New Bengali Web Story – Episode | Modern story reading for adults | Read Online Bangla Galpo Video | Story – Read Online Bangla Galpo | New Bengali Web Story Audio | New Bengali Web Story Video | Read Online Bangla Galpo Netflix | Audio Story – Read Online Bangla Galpo | Video mp4 – Modern Story Reading | Shabdodweep Competition | Story Writing Competition | Modern story reading online | Bengali Writer 2023 | Trending Bangla Golpo Online Reading | Recent story Read Online Bangla Galpo | Top Story Read Online Bangla Galpo | Popular New Bengali Web Story | Best Read Online Bengali Story | Read Online Bengali Story 2023 | Shabdodweep Bangla Golpo Online Reading | New Bengali Famous Story | Bengali Famous Story in pdf | Read Online Bangla Galpo Download | Bangla Golpo Online Reading mp3 | Horror Adult Story | Read Online Bengali Story Collection | Read Online Bangla Galpo mp4 | Read Online Bangla Galpo Library | Modern story reading online free | Full Modern Story Reading pdf | Bengali Famous Story 2023 | Shabdodweep Bengali Famous Story | Modern story reading ks2 | Bengali Famous Story in pdf | Live Bengali Story – audio | Bengali Famous Story – video | Bengali Famous Story mp3 | Modern story reading books | Bengali Literature | Shabdodweep Magazine | Shabdodweep Web Magazine | Live Bengali Story Writer | Shabdodweep Writer | Story Collection – Read Online Bangla Galpo | Modern Story Reading Ebook